প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০১ সালে প্রথমবার পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সরকারি নথিপত্রেই লিপিবদ্ধ আছে। সে সময় এ সেতুতে অর্থায়নের জন্য জাপানি সংস্থার সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার ভিত্তিতে কোন স্থানে সেতু হবে তার সমীক্ষাও হয়েছিল।
২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্তত দু’জন নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ফিল্ম আর্কাইভের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালের ৪ জুলাই (বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৪০৮ বঙ্গাব্দের ২০ আষাঢ়) প্রথমবারের মতো মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রমুখ।
ভিত স্থাপন শেষে সেদিন মাওয়া প্রান্তে এক সুধী সমাবেশেও বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে সেদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে, সেখানেও ছাপা হয়েছে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাণী। যার কপি আছে নিউজবাংলার হাতে।
সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত তৎকালীন খাদ্য মন্ত্রী আমির হোসেন আমু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করার জন্য জাপানিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন। তারা অর্থায়নের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিলে তিনি সমীক্ষাও শুরু করেন এবং স্থান নির্বাচন করেন। প্রধানমন্ত্রী পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে কেবিনেটে আলোচনা করেন। সে আলোচনা মোতাবেক তিনি ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেখানে মন্ত্রিসভার সদস্য, স্থানীয় নেতাকর্মী এবং দাতা সংস্থার লোকজনও উপস্থিত ছিলেন।’
১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। সে মেয়াদে তার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯৮ সালে ফরিদপুরের একটি জনসভায় প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণে কথা বলেন। এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে জাপানিদের সঙ্গে অর্থায়নের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা সাপেক্ষে সমীক্ষা হয়।’
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০১ সালে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সরকারি নথিপত্রে লিপিবদ্ধ আছে। সে সময় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য একটি সরকারি চিঠি জারি করা হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (একান্ত ব্যক্তিগত সহকারি-২) হিসেবে আমি সেই চিঠি নথিবদ্ধ করি।’
‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন’ মর্মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবিকে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার হিসেবে অভিহিত করেন বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা, আর পরবর্তী বিএনপি-জামাত সরকার স্থান নির্বাচনের নামে কালক্ষেপন করে মেয়াদ পার করেছে।’
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রথম পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন বলে দাবি করেন।
কিন্তু সরকারি নথিপত্র, ফিল্ম আর্কাইভ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের স্মারক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনাই ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে প্রথমবার পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ প্রকল্পে জাপানিদের অর্থায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু তার কয়েকদিন পরই সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ কাজ আর এগোয়নি।
পরবর্তীতে ২০০৮-এর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সহকারি প্রেস সচিব আমরাফ সিদ্দিকী বিটুর একটি কলাম থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই ফেব্রুয়ারি মাসে পদ্মা সেতুর জন্য ডিজাইন কনসালট্যান্ট নিয়োগ করে। কনসালট্যান্ট সেপ্টেম্বর ২০১০-এ প্রাথমিক ডিজাইন সম্পন্ন করে এবং সেতু বিভাগ প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহবান করে। ২০১১ সালে সরকার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তি করে।
কিন্তু কথিত দুর্নীতির অভিযোগে অর্থায়ন থেকে পিছিয়ে যায় বিশ্বব্যাংক। এ পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের আবেদন বিশ্বব্যাংক থেকে ফিরিয়ে নেয় সরকার। যদিও পরবর্তীতে দুর্নীতির অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়।
নানা অভিযোগ ষড়যন্ত্র চাপ উপেক্ষা করে ২০১২-এর ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু হবে। ২০১২ সালের ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে’ বলে জানিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যাসহ জাতির সামনে বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সংসদে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, নিজস্ব অর্থায়নেই হবে পদ্মা সেতু। পরের বাজেটেই সেতুর জন্য অর্থ বরাদ্দ করার কথা বলেন তিনি। ২০১৫-এর ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
ভায়াডাক্ট ছাড়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে গৌরবের মালিক বাংলাদেশ। এর মধ্যেই সেতুটি উদ্বোধনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে সরকার। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সংগ্রামের ফসল পদ্মা সেতুর নাম বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নামানুসারে করার দাবি উঠলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। বরং তার সিদ্ধান্তে সেতুর নাম ‘পদ্মা সেতু’ উল্লেখ করে গেজেট প্রকাশ হয়েছে।
আরও পড়ুন:গাইবান্ধার সাঘাটায় ১৭ বছরী বয়সী কিশোর সম্রাট হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। অনলাইন জুয়া খেলতে ক্যামেরা বন্ধক নেয়ার জেরে তাকে খুন করে তারই বন্ধু রিফাত। পরিকল্পিতভাবে ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রিত কোমলপানীয় পান করে অজ্ঞান হয়ে গেলে বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয় সম্রাটকে।
শুক্রবার রাত ১টার দিকে উপজেলার পশ্চিতবাড়ি গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে সাঘাটা থানা পুলিশ। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল ওই বন্ধুর বাড়িতে ক্যামেরা আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সম্রাট।
সম্রাট উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের আফজাল হোসেনের ছেলে। অন্যদিকে অভিযুক্ত ১৭ বছরের রিফাত সাঘাটা উপজেলার পশ্চিম বাটি গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, সম্রাট ও রিফাত একে অপরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দুজনে একই বিদ্যালয়ের একই ক্লাসের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি অনলাইন জুয়া খেলে টাকা খোয়ায় সম্রাট। জুয়ায় হেরে সে তার ক্যামেরাটি দশ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধু রিফাতের কাছে বন্ধক রাখে। কয়েকদিন পর রিফাতের কাছে ক্যামেরা ফেরত নিতে যায় সে। সেখানে গিয়ে সম্রাট জানতে পারে, রিফাতও জুয়ায় হেরে বন্ধক নেয়া ক্যামেরা বগুড়ায় কারও কাছে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। পরে এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়।
পরবর্তীতে গত ১৭ এপ্রিল পরিকল্পিতভাবে সম্রাটকে ক্যামেরা নিতে নিজ বাড়িতে ডাকেন রিফাত। ওইদিন বিকেলেই সম্রাট বন্ধু রিফাতের বাড়িতে ক্যামেরা নিতে গিয়ে সেদিন থেকেই নিখোঁজ হয়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সন্তানকে না পেয়ে পরের দিন নিখোঁজ সন্তানের সন্ধান চেয়ে সাঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে সম্রাটের পরিবার। রিফাতের ডাকে সম্রাট বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
জিডির পর শুক্রবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সম্রাটকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে সাঘাটা পুলিশ। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বন্ধু সম্রাটকে খুন করে সেপটিক ট্যাংকে গুম করে রাখার কথা স্বীকার করে সে।
পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ১টার দিকে পশ্চিতবাড়ি গ্রামের এক পুলিশ সদস্যের বসতঘরের পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে সম্রাটের মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্ধক রাখা ক্যামেরা বিক্রি করা নিয়ে দুই বন্ধুর দ্বন্দ্বের জেরে এক বন্ধু অপরজনকে হত্যা করে। অভিযুক্ত রিফাত পরিকল্পিতভাবে তার বন্ধু সম্রাটকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ৭/৮টি ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে পান করায়, যা খেয়ে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ে সম্রাট। পরে ঘুমন্ত সম্রাটকে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রিফাত পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত রিফাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। সম্রাটের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’
আরও পড়ুন:নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক নির্বাচন নয়। কারণ বর্তমান সরকার দলীয় রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরাকর নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। কাজেই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনৈতিক কোনো ফ্লেভার নেই।
তিনি বলেছেন, তারপরও যাতে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন, সেটার অপশনও রাখা হয়েছে, অর্থাৎ ভোট ফ্লেক্সিবল করা হয়েছে। ইচ্ছে করলে স্বাধীনভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন; রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রয়োজন নেই। আবার চাইলে অনেকে রাজনৈতিক পরিচয়েও নির্বাচন করতে পারবেন, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হলরুমে হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলার প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির উদ্দেশে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের অনেক সমর্থক-প্রার্থী আনঅফিশিয়ালি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সুতরাং এটা বলার সুযোগ নেই যে, নির্বাচন অংশগ্রহণ মুলক নির্বাচন হচ্ছে না।’
ইসি আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে এবং কোনোমতেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি না হয়। অন্যায়ভাবে কেউ যাতে কোনো প্রার্থীকে প্রচারে ও ভোটদানে বাধা দিতে না পারে। সবাই যাতে সমানভাবে নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা করতে পারে এবং ভোটরা যাতে স্বাধীনভাবে তার ভোট দিতে পারে। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কার কোন আত্মীয় অংশ নিল বা কে অংশ নিল না- সেটা আমাদের বিষয় নয়; সেটা রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক বিষয়, কিন্তু আমাদের নির্বাচনি আইনে যদি কোনো ব্যক্তি ওই এলাকার ভোটার হয় এবং তার বিরুদ্ধে যদি কোনো আইনি ঝামেলা না থাকে, তাহলে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন। আমাদের আইনে আত্মীয়তার সঙ্গে কোনো সর্ম্পক নেই।’
এ সময় জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার সুজন সরকার ও জেলা নির্বাচন অফিসার আমিনুর রহমান মিঞাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রাজধানী ঢাকায় শনিবার চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দেশের বিভিন্ন স্থানে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। শনিবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় টানা চার দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে জেলায় এটি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
জেলার দামুড়হুদায় গ্রামে মাঠে কাজ করার সময় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমানবলেন, ‘কয়েকদিন থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এদিন এখানে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অঞ্চলে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।’
দিন ও রাতের তাপমাত্রায় খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় অতিষ্ঠ এই অঞ্চলের জনজীবন। দিনের বেলায় একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। শহর-গ্রামের রাস্তাঘাট ফাঁকা।
শ্রমজীবী মানুষগুলো বেশি বিপাকে পড়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে তারা কাজে বেরুতে পারছে না। ধান কাটার মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু সূর্যের প্রখর তাপের কারণে শ্রমিকরা মাঠে যেতে সাহস পাচ্ছে না।
দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে ভ্যানচালক করিম আলী বলেন, ‘জীবনে আমি এত তাপ দেখিনি। ছেমায় গিয়িও শান্তি নেই। যে তাপ পড়চি তাতে মানুষ রাস্তায় বের হচ্চি না। আমাদের ভাড়াও কমি গিচে।’
এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে বলায় জনসাধারণকে সচেতন করতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করছে জেলা প্রশাসন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
পাবনা প্রতিনিধি জানান, অসনীয় গরমে অতিষ্ঠ পাবনার জনজীবন। শনিবার জেলার ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা পাবনা জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ।
শনিবার দুপুরে পাবনা শহরের রূপকথা রোডে চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় এক ব্যক্তি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হন। তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত সুকুমার দাস পাবনার শহরের শালগাড়িয়া জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, কয়েকদিন ধরেই পাবনায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এর আগে চলতি বছরে জেলায় এতোটা বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি। ঈশ্বরদীসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে তীব্র গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। তীব্র এই তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। জীবন-জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। বাইরে বের হওয়ার সময় অনেকেই ছাতা নিয়ে বের হচ্ছেন।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের বালুচরে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে প্রবাসীকে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি করেছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
উপজেলার চরপানিয়া এলাকায় শনিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন নিহতের স্ত্রী-সন্তানসহ শতাধিক মানুষ।
পরিবারের এক সদস্যের ভাষ্য, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় সৌদি আরব প্রবাসী মুজিবুরকে (৪৫)। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও ঘটনায় জড়িত খাসকান্দি এলাকার জহির হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। জহির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে ফাঁসি দিতে হবে।
চরপানিয়া এলাকার একটি ক্ষেত থেকে গত ১০ মার্চ প্রবাসী মুজিবুরের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায় অভিযুক্ত জহির হোসেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গাড়ির চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওডালা এলাকায় শনিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো দুজন হলেন ঝালকাঠি সদর উপজেলার খেজুরা এলাকার সুরেশ ডাকুয়া (৩৫) ও তার ছেলে লোকেশ ডাকুয়া (৯)। এ ঘটনায় আহত লোকেশ ডাকুয়ার মা নিপু রায় (৩০) বলে জানিয়েছেন কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে স্বামী-সন্তানসহ নারায়ণগঞ্জে ‘বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী’ মন্দিরে পূজা করতে যান তারা। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে স্বামী স্ত্রী ও সন্তান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কেওঢালা এলাকা পার হচ্ছিলেন। এ সময় একটি গাড়ি তাদের চাপা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আহত অবস্থায় তিনজনকে স্থানীয়রা একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে লোকেশকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। সুরেশ ও নিপু রায়কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে সুরেশ ডাকুয়ার মৃত্যু হয়।
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘নিপু রায় ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। নিহত দুইজনের মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
এ ঘটনায় মামলাসহ গাড়ি ও চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:নওগাঁয় সামাজিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে ১৯৭১ সালের অসহায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ স্মরণে ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রায় ফুটে উঠেছে নওগাঁয় রোড ধরে ভারতে পাড়ি দেয়া শরণার্থীদের দুর্দশার চিত্র।
ঐতিহাসিক ২০ এপ্রিলের এ দিনে ‘রোড টু বালুরঘাট’ স্মরণ করল নওগাঁবাসী। প্রায় ৬০ মিনিটে ৩ কিলোমিটার পদযাত্রায় যুদ্ধকালীন নওগাঁ রোডের শরণার্থীদের যুদ্ধ বিভীষিকা ও অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে পাঁচ শতাধিক মানুষ নওগাঁ রোডে এ প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নেন। শহরের তাজের মোড় শহিদ মিনার পাদদেশ থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল মুক্ত মঞ্চ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
একুশে পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে শরণার্থীদের প্রতীকী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন উপদেষ্টা মইনুল হক দুলদুল, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যক্ষ বিন আলী পিন্টু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সাইমা ফেরদৌসী, নাইস পারভীন, বিষ্ণু কুমার দেবনাথ, গুলশানারাসহ অনেকে।
এ সময় বক্তারা জানান, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরোচিত অত্যাচার-নিপীড়ন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে বিশেষ করে ২০ এপ্রিল এই দিনে পায়ে হেঁটে নওগাঁর সড়ক পথে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হিসেবে ভারতের বালুরঘাটে আশ্রয় নেন। চলার পথে সেই সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকের মৃত্যু হয়। সে সব শরণার্থীদের ক্লান্তি ও দুর্ভোগ স্মরণে একুশে পরিষদ নওগাঁ ‘রোড টু বালুরঘাট’ প্রতীকী পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি অ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী বলেন, ‘আমরা অনেকেই একাত্তরের ইতিহাস ভুলে গেছি। ৫৩ বছরের আগে কী ঘটেছিল। লাখ লাখ মানুষ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে দেশ ছেড়েছিল দেশকে মুক্ত করার জন্য। চলার পথে সে সময় পাকহানাদার ও দোসরদের আক্রমণে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। নওগাঁর মূল ইতিহাস ও ঐতিহ্যবাহী এ জেলার সব তরুণ প্রজন্ম ও শিক্ষার্থীদের জানানোর লক্ষ্যেই আয়োজনটি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে জোর করে ধান কাটা বন্ধে উদ্যোগ নেয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলায় পুলিশের এক উপপরিদর্শক তথা এসআইসহ চারজন আহত হয়েছেন।
উপজেলার হাদিরা ইউনিয়নের পলশিয়া গ্রামে শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘পলশিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের কাজিম মন্ডল একদল সন্ত্রাসী নিয়ে একই গ্রামের সানু মিয়ার ডুব বিলের দুই বিঘা পাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেন। সানু মিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে গোপালপুর থানার এসআই সাইফুল ইসলাম একজন কনস্টেবল নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। পুলিশ দেখে সস্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়।
‘তারা রামদা, লাঠি ও লোহার রড নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথা ফেটে যায়। কনস্টেবল শফিকুল ইসলামসহ সানু মিয়ার দুই আত্মীয় আহত হয়। আহতরা সবাই গোপালপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।’
গোপালপুর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলামের মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দেয়া হয়েছে।’
গোপালপুর থানার ওসি ইমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা হয়েছে। হামলার অভিযোগে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য