নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাবো নোমা কনজ্যুমার ফ্যাক্টরিতে কাজ করার সময় মেশিনের মধ্যে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ২৮ বছর বয়সী ওই শ্রমিকের নাম রাজু দেওয়ান।
দুর্ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে। গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
নিউজবাংলাকে বিয়য়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া।
নিহতের সহকর্মী হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা নোমা কনজ্যুমার ফ্যাক্টরির ডিটারজেন্ট পাউডারের মিকচার মেশিনে কাজ করি। বিকেলে পাউডার মেশানোর সময় রাজু অসাবধানতাবশত মেশিনের মধ্যে পড়ে যায়। এতে তার দুই পা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, নিহত রাজুর বাড়ি নওগাঁ জেলায়। তিনি রূপগঞ্জের তারাবো এলাকায় স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ইনচার্জ বাচ্চু বলেন, ‘গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।’
রাজধানীর আফতাবনগর পশুর হাটে গিয়ে এমন এক দৃশ্য দেখা গেল যা দেখার আগে ভাবাও যায় না।
কোরবানির পশুকে বড় করতে আপেল, আঙুর, বেদানা খাওয়ানোর বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে আগেই। তাই বলে কেউ কোমল পানীয় খাওয়ায়, এটি জানতে পারার পরও কেমন যেন খটকা লাগছিল।
কিন্তু হাটে ঝিনাইদহের খামারি আব্দুল মতিনকে নিজ হাতে তার আনা পশুকে বোতলভর্তি সেভেন-আপ পান করাতে দেখা গেল।
পরে এও জানা গেল, এবারই প্রথম নয়। আগেও গরুটি পান করেছে কোমল পানীয়।
কেন গরুকে সেভেন-আপ দিলেন আব্দুল মতিন? এই প্রশ্নে তিনি বললেন বদহজম দূর করার কথা।
তবে এক প্রাণী চিকিৎসক বলছেন, ‘গরুর বদহজম হলে কোনোভাবেই এসব জিনিস খাওয়ানো ঠিক হবে না।’
বৃহস্পতিবার সকালে আফতাবনগর হাটে ঘুরতে ঘুরতে দেখা যায় সবুজ রঙের একটি বোতল থেকে দুই ব্যক্তি জোর করে একটি পশুকে কিছু পানীয় পান করাচ্ছেন।
জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, ‘আসলে সেভেন-আপ খাওয়াচ্ছি।’
গরু কি সেভেন-আপ খায়?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না। ওর বদহজম হইছে। খাওয়াদাওয়া কম করছে তাই। সেভেন-আপ খাইলে বদহজমটা সেরে যায়।
গরুটি কি আজকেই সেভেন–আপ খেয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মতিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘না, এর আগেও খাওয়াইছি। বদহজম হইলেই আমরা সেভেন-আপ খাওয়াই।’
ঝিনাইদহ থেকে আসা মতিন সেভেন-আপ খাওয়ানো সেই গরুটির দাম চাইছেন ৬ লাখ টাকা। তবে সাড়ে তিন লাখ হলে ছেড়ে দেবেন।
গরুটির সম্ভাব্য ওজন ধারণা করা হচ্ছে ১৪ মণ। ক্রেতা অবশ্য সর্বোচ্চ দাম বলেছেন ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।
গরুর কেনাবেচা নিয়ে মতিন বলেন, ‘বাজার তেমনটা শুরু হয় নাই। মোটামুটি চলছে, দামদর করছে। আজ রাইতে কেমন হবে না হবে, সেইটা বুঝা যাবে।
‘বাজার ভালো হবার আশা করে বইসে আছি। সাড়ে তিন লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দিব।’
গরুকে সেভেন-আপ জাতীয় পানীয় দেয়া ঠিক না বলে মনে করেন প্রাণী চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাবিবুর রহমান মোল্লা।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বদহজম হলে অনেক মেডিসিন আছে বাজারে সেগুলো খাওয়াতে হবে, সেভেন-আপ নয়। ডাক্তার দেখার পর সিদ্ধান্ত নেবেন কী ধরনের মেডিসিন দেবেন। সে ক্ষেত্রে বদহজমের হিস্ট্রি লাগবে।’
ঢাকার প্রত্যেকটি পশুর হাটে প্রাণী চিকিৎসকদের দল রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খামারিদের উচিত তাদের কাছে শরণাপন্ন হওয়া।’
কী কী কারণে গরুর বদহজম হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় কাঁঠালের খোসার ভেতরের অংশ খাওয়ানো হয়। যার ফলে গরুর বদহজম হতে পারে। এ ছাড়া জোর করে পাইপ দিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়। এটিও একটি কারণ।’
সেভেন-আপ খাওয়ানোর ঘটনা আগে শুনছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি এলাকা রয়েছে যেখানে সেভেন-আপ খাওয়ানোর কথা শুনেছি। তবে মানুষ এখন অনেক সচেতন হয়েছে।’
দক্ষিণের ২১ জেলার যাত্রীদের ঈদযাত্রায় এবার বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে পদ্মা সেতু। যাদের সেতু দেখতে যাওয়ার মতো সময় হয়ে ওঠে না, তারা বাড়ির পথ ধরলেই দেশের তুমুল আলোচিত স্থাপনাটি দেখতে দেখতে যাবেন। তাই এবার এই পথে যাত্রীর চাপ বেশি।
সেতু ঘিরে আগ্রহ এতটাই বেশি যে, যারা মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট ব্যবহার করে বাড়ি যেতেন, তারাও বাড়তি পথ ঘুরে যাচ্ছেন মাওয়া হয়ে।
আগামী রোববার সারা দেশে একসঙ্গে উদযাপিত হবে ঈদ। তিন দিনের ছুটি শুরু শনিবার থেকে। সঙ্গে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির এক দিন যোগ হওয়ায় মোট ছুটি চার দিনের। কেউ কেউ ঈদ শেষে সপ্তাহের বাকি কর্মদিবস ছুটি জোগাড় করেছেন। এর সঙ্গে আবার পরের সপ্তাহের দুই দিন ছুটি যোগ করে সেটিকে নিয়ে গেছেন টানা ৯ দিনে।
এর ফলে বৃহস্পতিবার বিকেলে অফিস শেষেই বাড়ির পথে ভিড় বেড়েছে।
গুলিস্তান বিআরটিসি বাস টার্মিনালে গিয়ে সে সময় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল। এই পথে এর আগে এত যাত্রী দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা।
এত ভিড় কেন? এই প্রশ্নের জবাবটা মোটেও কঠিন নয় মো. রুবেলের কাছে। তিনি রাজধানীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আগে বাড়ি ফিরতেন লঞ্চে। এবার আর সদরঘাটের পথ ধরেননি।
জানালেন পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে বলে আনন্দে ভাসছেন। তাই লঞ্চ বাদ দিয়ে বেছে নিয়েছেন মাওয়ার রাস্তা।
রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে লঞ্চে বাড়ি যেতাম। পদ্মা সেতু এখনও দেখা হয় নাই। বাড়িও যাব পদ্মা সেতুও দেখব, আহা ঈদ।
‘তাছাড়া রাত ৯টায় লঞ্চে উঠলে ভোরে বরিশাল পৌঁছাই। এখন পদ্মা সেতু দিয়ে বরিশাল যেতে চার ঘণ্টার মতো লাগে। সময়ও বাঁচল, পদ্মা সেতুও দেখলাম।’
রুবেলের মতো অনেকেই লঞ্চ কিংবা আরিচা ঘাট ব্যবহার না করে বেছে নিয়েছেন মাওয়া ঘাটের রাস্তা।
মেহেদী হাসানের বাড়ি ফরিদপুর ভাঙ্গা। তুলনামূলক কম সময়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করতেন মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট। ফেরি পার হয়ে যেতেন বাড়িতে।
এবার কেন সে পথে যাচ্ছেন না?
মেহেদী বলেন, ‘এখন পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে মাওয়া হয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সময় অনেক কম লাগে। তাছাড়া প্রথম পদ্মা সেতু দেখব বাড়ি যাওয়ার সময়।
তবে যাত্রীদের যত আগ্রহ, তা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত বাহন নেই বাসস্ট্যান্ডে। আবার মাওয়ার পথে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারলে একেবারে না থেমেও পদ্মা সেতুতে উঠে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে তো হবে। এর আগের সংক্ষিপ্ত পথটুকু পাড়ি দিতেই লাগছে দীর্ঘ সময়।
ইমাদ পরিবহনের সুপারভাইজার শাহীন বলেন, ‘ধোলাইপাড়ে, হানিফ ফ্লাইওভার ও গুলিস্তানে প্রচণ্ড জ্যাম। আগে এই মাওয়া হয়ে যারা বাড়ি যেত না, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে তারাও এখন এই রাস্তা বেছে নিয়েছে। জ্যামের কারণে বাস আসতে কিছুটা দেরি করছে। তাই বাস ছাড়তেও কিছুটা দেরি হচ্ছে ‘
বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. মেহেদী বলেন, ‘একটা করে বাস আসছে আর টিকিট বিক্রি করছি। বাস না আসলে টিকিট বিক্রি করছি না। জ্যামের কারণে বাস আসতে দেরি করছে। যাত্রীদের সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর সদরঘাটে ঈদযাত্রার সেই চিরচেনা রূপ ফিরেছে আবার। লঞ্চের টিকিট পেতে দৌড়ঝাঁপ-ধাক্কাধাক্কি, ডেকে জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা দেখা গেছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। বেশ কয়েক দিনের যাত্রী খরার পর বৃহস্পতিবার অফিস ছুটির পর দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চযাত্রীদের ভিড়ে সদরঘাট ধারণ করে অন্যরূপ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বদলে যায় লঞ্চঘাটের চিত্র। ফলে ফাঁকা কেবিন আর কম যাত্রী নিয়েই ঢাকা ছাড়ছিল দক্ষিণের লঞ্চগুলো। ঈদযাত্রা শুরুর কয়েক দিনে সেই চেহারা বদলায়নি। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে বৃহস্পতিবার সকালেও দেখা যায়, যাত্রীর চাপ কম থাকায় অনেকটা আরামদায়কভাবে বাড়ি ফিরছেন যাত্রীরা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে যাত্রীর চাপ। সন্ধ্যায় জনারণ্যে পরিণত হয় রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল।
আসন্ন ঈদুল আজহার ছুটিতে দক্ষিণাঞ্চলের বাড়িতে ফেরা হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো ছাড়তে শুরু করে। শুক্রবারসহ ঈদের আগে ও পরের দিনগুলোতে যাত্রীর এমন চাপ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন লঞ্চমালিকরা। যাত্রীদের এ চাপ সামাল দিতে ঢাকা-বরিশাল রুটে থাকছে স্পেশাল সার্ভিস। নির্ধারিত ট্রিপের অতিরিক্ত হিসেবে শুক্রবার ভোর ৬টায় ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে সুরভী-৮।
লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিলাসবহুল ১০টি বড় লঞ্চ যাত্রী নিয়ে বরিশাল যাবে।
লঞ্চঘাটে মূলত বৃহস্পতিবার বিকেল ঘনিয়ে সন্ধ্যা নামার মুহূর্তে যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। যাত্রীদের বেশির ভাগই বরিশালগামী লঞ্চে ভিড় করছেন। পটুয়াখালী, বগা, ইলিশা রুটের যাত্রীরাও আসতে শুরু করেছেন।
একাধিক লঞ্চের সুপারভাইজার ও টিকিট কাউন্টার থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, লঞ্চগুলোতে ডেকের যাত্রীসংখ্যাই বেশি ৷ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলো লঞ্চে বাড়ি যাচ্ছে বেশি। সড়কপথের চেয়ে তুলনামূলক ভাড়া কম ও যাত্রাপথ আরামদায়ক হওয়াতেই যাত্রীদের এমন চাপ। শেষ মুহূর্তে টিকিট বিক্রির চাপে লঞ্চসংশ্লিষ্ট কেউ কথা বলারই সময় পাচ্ছেন না।
মানামি লঞ্চের চালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এবারের ঈদে আজকেই সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয়েছে। তবে গত ঈদের মতো যাত্রী এখনও দেখছি না। আশা করছি ভালোভাবে বরিশাল পৌঁছাতে পারব।’
রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা মো. আনোয়ার পরিবার নিয়ে পটুয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘এমভি এ আর খান লঞ্চের টিকিট পেয়েছি। তবে ঘাটে অনেক মানুষের ভিড়। লঞ্চে ঠিকভাবে উঠতে পারলেই হয়। একা হলে সমস্যা ছিল না, পরিবার নিয়ে এত ভিড়ের মধ্যে লঞ্চে উঠতে অনেক কষ্ট।’
এমভি পূবালী-১ লঞ্চে করে রাজধানীর বসিলার বাসিন্দা সোহেল রানা বরগুনায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ঘাটে ভিড় এবং যাত্রী বেশি থাকলেও সময়মতো লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে। আর ভিড় ঠেলে লঞ্চে উঠতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
অন্যদিকে ভিড়ের কারণে অনেকে আবার নির্ধারিত লঞ্চে উঠতে পারেননি। তাই পরবর্তী লঞ্চের জন্য টার্মিনালে অপেক্ষা করছেন। পরিবার নিয়ে এই অপেক্ষাটা অনেকের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশন অভিমুখী এমভি কর্ণফুলী-১২ লঞ্চের যাত্রী ছিলেন সজীব হোসেন। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে লঞ্চে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ঘাটে প্রচুর যাত্রীর চাপ। লঞ্চে টিকিট কেটেও উঠতে পারলাম না। এখন পরের লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছি। এখনও যে ভিড় তাতে সেটিতেও উঠতে পারব কি না সন্দেহ।’
তবে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় থাকলেও পর্যাপ্তসংখ্যক লঞ্চ যাত্রার জন্য তৈরি আছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাটের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মো. শহীদ উল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদযাত্রার জন্য ১৫০টির বেশি লঞ্চ প্রস্তুত আছে। বিকেলে ৫০টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। আর ৭০টি লঞ্চ প্রস্তুত আছে যাত্রী নিতে। ভিড় থাকলেও যাত্রীদের জন্য লঞ্চ সংকট হবে না।’
সদরঘাট নৌপুলিশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কায়ুম আলী সরদার বলেন, ‘যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। ঈদযাত্রায় জননিরাপত্তার কোনো ঘাটতি যেন না থাকে সেদিকে আমাদের নজর আছে। অপরাধীরা মানুষের ভিড় দেখে যেন কোনো ধরনের অপরাধ না করতে পারে সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি আছে।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাটের বুড়িগঙ্গা পাড়ের নৌকার মাঝিরা। যাত্রী আনা-নেয়া থেকে শুরু করে নদীর ওপার থেকে আসা মালামাল এপারে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।
সদরঘাটের ওয়াইজঘাট, তেলঘাট, লালকুঠিঘাট ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
বুড়িগঙ্গাপাড়ের নৌকায় মাঝিদের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। নদীর দুই পাড়ের মানুষের চলাচলের জন্য তারা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নৌকা চালান। কোনো মাঝি সকালে আসেন, আবার কোনো মাঝি দুপুরে বিশ্রাম নেন। কেউবা রাতের শেষভাগ পর্যন্ত নৌকা চালান।
রাজধানীর সদরঘাটের নৌকা চলাচল করে এমন তিনটি ঘাট হলো— ওয়াইজঘাট, তেলঘাট ও লালকুঠিঘাট। তিন ঘাটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং যাতায়াতে বেশি লোক হয় ওয়াইজঘাট এলাকায়।
এই ঘাট থেকে প্রতিদিন বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে নাগর মহল, খাজা মার্কেট, আলম মার্কেট, ব্রিজ মার্কেটসহ আশপাশের ছোট-বড় বিভিন্ন অংশে চলাচল করে ১৫০টির বেশি নৌকা। প্রতিটি নৌকায় মাঝিরা ছয় থেকে আটজন লোক নিয়ে নদী পারাপার হতে দেখা যায়। জনপ্রতি নদী পারাপারে ৫ টাকা ভাড়া নির্ধারণে এক নৌকায় ৪০ টাকা ভাড়া আসে।
বুড়িগঙ্গা পাড়ের মাঝিরা জানান, কিছু নৌকা আছে যারা শুধু রিজার্ভে নিয়ে যাত্রী পারাপার করেন। আবার কিছু নৌকার মাঝি রয়েছেন, যারা শুধু মালামাল পরিবহন করেন নদী পারাপারে। আর বেশির ভাগ মাঝি ৫ টাকা করে ছয়জন হোক কিংবা আটজন হোক তাদের নিয়ে নদী পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।
বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩০০ ছোট-বড় নৌকা চলাচল করে। লোক আনা-নেয়ার পরিধি ভেদে একেকজন মাঝি দৈনিক ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করেন। ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত যাত্রীদের সঙ্গে অতিরিক্ত মানুষের চলাচল করায় সামনের দিনগুলোতে আয়ের পরিধি আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।
বুড়িগঙ্গাপাড়ের মাঝিদের এখন কোনো ঘাটের মহাজন কিংবা কোনো ব্যক্তিকে দিতে হচ্ছে না খাজনা থেকে শুরু করে অন্যান্য চাঁদা। তবে এ ক্ষেত্রে নদী পারাপারে প্রতিবার জনসাধারণকে দিতে হচ্ছে ঘাটের ইজারাদার আসা-যাওয়ার পথে ২, ৪, ৫ টাকা থেকে শুরু করে মালামাল পরিবহনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
নিয়মিত নৌকায় চলাচল করে কেরানীগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এখনকার দিনে ৫ টাকায় নদী পারাপার হওয়াটা হয়তো কল্পনার বিষয়। মাঝেমধ্যে মনে হয় এইটুকু পথ পাড়ি দিতে আমরা ৫ টাকা দিচ্ছি মাঝিদের। আমাদের মধ্যে এটা সত্যি অন্য রকমের অনুভূতি কাজ করে।
‘এখানকার মাঝিদের জীবন-জীবিকা সম্পূর্ণটাই নির্ভর করছে বুড়িগঙ্গার দুই পাড়ের মানুষের ওপর। তবে মাঝেমধ্যে মাঝিদের তাড়াহুড়ো, অসচেতনতা কিংবা মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী পারাপারে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই থাকে সব সময়। এগুলো দেখার জন্য নেই কোনো কর্তাব্যক্তি কিংবা সংশ্লিষ্ট কেউ।’
এসব বিষয়ে ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা কথা বলতে রাজি নন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইজারাসংশ্লিষ্টদের একজন বলেন, ‘নৌকার মাঝিরা এখন নিজেদের মতো করে চলতে পারেন। তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের নেই। তারা নিজেরা নৌকা চালান এবং নিজেদের আয়ের টাকা নিয়ে বাড়িতে ফেরেন।’
আরও পড়ুন:ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করার পর বাসের টিকিট পেতে যে দুর্ভোগের শঙ্কা ভাবা হচ্ছিল, হয়েছেও তা।
ঈদুল ফিতরে টার্মিনালে গিয়েই টিকিট কেটে বাড়ির পথ ধরা গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে টিকিটের জন্য।
সব রুটে বাসে আগাম টিকিট কাটা হয় না। যেমন গুলিস্তান থেকে দক্ষিণের পথে বিআরটিসি কাউন্টারে গিয়েই কাটা হয় টিকিট। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই টিকিটের চাহিদা বেড়েছে, তবে ঈদ যাত্রা শুরুর পর যে চাপ দেখা গেছে, সেটি এতদিন দেখা যায়নি।
মো. ইমরান। বাড়ি বরিশাল। পরিকল্পনা করেছিলেন মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটা হয়ে উঠেনি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় লঞ্চের বদলে সড়ক পথে যাচ্ছেন তিনি।
তার সঙ্গে দেখা গুলিস্তানে বিআরটিসির বাসের কাউন্টারে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও টিকিট না পেয়ে ভীষণ বিরক্ত। রাগটা গিয়ে পড়েছে সড়ক বিভাগের ওপর, যারা মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ করেছে।
নিউজবাংলাকে ইমরান বলেন, ‘আজকেও নিউজ দেখলাম বাস দুর্ঘটনার। বাস-ট্রাক প্রতিদিন দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে। তাহলে তাদেরকেও বন্ধ করে দিক। সব দোষ হয়েছে বাইকারদের। কে, কবে, কী করছে- তার দায়ভার আমাদের নিতে হচ্ছে। ইচ্ছা ছিল এবারের ঈদে পদ্মা সেতু হয়ে বাইকে বাড়ি যাব। সেটা আর হলো না। এখন কাউন্টারে এসেও টিকিট পাচ্ছি না।’
ইচ্ছার বাইরে ফরিদপুরে বাসে করে যেতে হচ্ছে লিমন মোল্লাকে। তারও পরিকল্পনা ছিল বাইকে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘বাস মালিক সমিতির ইচ্ছায় বাইক বন্ধ হয়েছে। সরকার তাদের খেদমত করতেছে আমাদের বাঁশ দিয়ে। এত মানুষের ভিড় হতো না যদি বাইক চলত।’
দীর্ঘ অপেক্ষায় ভোগান্তি
দূরপাল্লার বিরতিহীন বাসের টিকিট না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে বেছে নিচ্ছেন লোকাল বাস।
ফরিদপুর ভাঙার যাত্রী ইয়াসিন মোল্লা বলেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট পাই নাই। এখন লোকাল বাসে করে বাড়ি যাব। অবশ্য আমাদের রুটের লোকাল বাসেও সমস্যা নাই। রাস্তা ভালো তাই।’
অনেকে বাসের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। বাস আসলেই তাদের টিকিট দেয়া হচ্ছে। যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি হচ্ছে এবং বাসের স্বল্পতা ও রয়েছে।
বরিশালের যাত্রী মো. সোহান বলেন, ‘বিআরটিসি বাসের আসায় বসে আছি। সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। বাস আসলে টিকিট দিচ্ছে। তবে বাস পর্যাপ্ত না হওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।’
বিআরটিসি কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. মেহেদী বলেন, একটা করে বাস আসতে আর টিকিট বিক্রি করছি। বাস না আসলে টিকিট বিক্রি করছি না। জ্যামের কারনে বাস আসতে দেরি করছে। যাত্রীদের সামলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।
যেসব বাসে আগাম টিকিট দেয়া হচ্ছে, সেখানেও কোনো টিকিট নেই। শনিবার পর্যন্ত বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে কাউন্টার থেকে।
দোলা পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. রাব্বি বলেন, ‘আগামীকাল পর্যন্ত সিট ফাকা নাই। শনিবার বিকেলে ফাঁকা আছে। আমরা অগ্রিম টিকিট দিচ্ছি। সকাল থেকেই যাত্রীদের ভিড় লেগে আছে। গতকাল এত চাপ ছিল না। আজকে হুট করে চাপ বাড়ছে। আগামীকালও এমন চাপ থাকবে।’
টুংগীপাড়া এক্সপ্রেসও সিট ফাকা নেই। পরিবহনটির টিকিট বিক্রেতা মো. রয়েল বলেন, ‘সব সিট বিক্রি হয়ে গেছে। যদি গাড়ি ভাড়ায় তাহলে সিট পাওয়া যাবে। না হলে সিট পেতে শানিবার বিকেল।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর রায়েরবাজারে ছুরিকাঘাতে আহত ২৩ বছরের রবিন ওরফে বক্কর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের বোন সোমা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই মোহাম্মদপুর একটি জুসের কোম্পানিতে চাকরি করত। সে পরিবার ও একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এলাকায় থাকতেন।
‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা এক সময় আমার ভাইয়ের সঙ্গে চলাফেরা করত। মেয়ে সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। বন্ধু আলামিন রায়েরবাজার বটতলা পুলপারে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ৩/৪ জন মিলে আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে।’
সোমা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার বাবা দেলোয়ার হোসেন মামলা করেন।’
এর আগে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছুরিকাঘাতের এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় রবিনকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিলশাদ নামে সিএনজি চালকের মাধ্যমে বিকেলে সোয়া ৬টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে তার চিকিৎসা দেয়া হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিনের পেটে, পিঠে চার থেকে পাঁচটি ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে। তার অতিরিক্ত রক্তখন হয়েছে।
রবিনের বন্ধু বাবু জানান, রবিনসহ তারা তিনজন রায়েরবাজার বটতলা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী মিঠুর ছেলেসহ ৫/৬ জন তাদের পথ রোধ করে। সেখান থেকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাশের রাস্তায়, সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার আগের দিন ওই এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। এর কারণেই এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তার বন্ধুরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রবিন চিকিৎসা নেয়া অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কে পশুবাহী ট্রাকচাপায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. রতন হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি ঢাকা এসপিবিএন ১-এ কর্মরত ছিলেন।
আদাবর থানার উপপরিদর্শক মাধব চৌধুরী জানান, সকালে পশুবাহী একটি ট্রাক ওই কনস্টেবলের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশপাশের মানুষ তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
তিনি জানান, পশুবাহী ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি শনাক্ত ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য