সিলেটের জৈন্তাপুরে অপহরণ চক্র নিয়ে ফেসবুকে ওসির সতকর্তার পোস্টকে পুলিশের অসহায়ত্বের প্রকাশ হিসেবে দেখছেন আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের নেতারা। ওই পোস্ট দেখার পর থেকে এলাকায় আতঙ্কও বেড়েছে।
তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, পুলিশ ওই চক্রকে ধরতে সচেষ্ট ও তৎপর। ওই পোস্ট কেবলই সতর্ক করার জন্য, ভয়ের কোনো কারণ নেই।
‘ওসি জৈন্তাপুর সিলেট’ নামের ফেসবুক আইডি থেকে মঙ্গলবার ওই পোস্ট দিয়েছেন থানার ওসি গোলাম দস্তগীর গাজী।
তাতে লেখা হয়েছে, ‘একটি অপহরনকারী চক্র জৈন্তাপুর থানা এলাকায় অবস্থান করতেছে। পুরুষ ও মহিলা নিয়ে চক্রটি গঠিত। তাদের টার্গেট স্কুল / কলেজের মেয়েদের অপহরণ করে পাচার করে দেওয়া। এমতাবস্থায় স্কুল /কলেজের সম্মানিত শিক্ষকগনকে এই ব্যাপারে ছাত্রছাত্রীদের সতর্কত করার অনুরোধ জানাচ্ছি। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী স্কুল /কলেজেগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমাদের পুলিশিং তৎপরতা অব্যাহত আছে। এই ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য জৈন্তাপুরবাসীকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’ (মূল পোস্টে বানান অপরিবর্তীত)।
এ বিষয়ে আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজই হচ্ছে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা। কোনো এলাকায় যদি অপরাধ বেড়ে যায় তাহলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা হিসেবেই ধরা হয়।
‘জৈন্তাপুরে সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এর সঙ্গে জড়িতদের এখন পর্যন্ত ধরতে পারেনি। উল্টো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ওসি সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন। ওসির এমন স্ট্যাটাসে পুলিশের অসহায়ত্বই প্রকাশ পাচ্ছে। একইসঙ্গে মানুষজনও এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে।’
তবে ওসি গোলাম দস্তগীর জানিয়েছেন, মানুষকে সচেতন করতে এই স্ট্যাটাস দিয়েছেন। অপহরণকারীদের ধরতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কেউ যেন আতঙ্কিত না হন সেই প্রচারও আমরা চালাচ্ছি। পুলিশ তার কাজ করছে। মানুষকে সচেতন করাও আমাদের কাজ। মানুষ সচেতন হলে অপরাধ অনেকটা কমে আসে। পুলিশের কাজ তখন অনেকটা সহজ হয়ে যায়। তাই মানুষকে সচেতন করতেই এমন স্ট্যাটাস দিয়েছি।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. লুৎফুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অপহরণকারীদের ধরতে আজ থেকে পোষাকে ও সাদা পোষাকে আমাদের সাতটি টিম জৈন্তাপুরে কাজ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই উপজেলায় অপহরণের একাধিক অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমাদের গোয়েন্দা টিমও মাঠে কাজ করছে।’
ওসির স্ট্যাটাসে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাস আমিও দেখেছি। মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যেই এটি দেয়া হয়েছে। এতে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নেই। পুলিশ যে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে, সেটিও স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন ওসি। ফলে ওই স্ট্যাটাস পড়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
তবে উদ্দেশ্য মানুষকে সচেতন করা হলেও এমন স্ট্যাটাসে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মত জৈন্তাপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শাহেদ আহমদের।
তিনি বলেন, ‘তার (ওসির) উদ্দেশ্য খারাপ নয়। তবে এতে মানুষের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক অপহরণের ঘটনা ঘটায় এলাকায় এমনিতেই আতঙ্ক রয়েছে। ওসির এই স্ট্যাটাসে আতঙ্ক আরও বেড়ে যেতে পারে।’
শাহেদের আশঙ্কার সত্যতাও পাওয়া গেল কয়েক অভিভাবকের সঙ্গে আলাপ করে।
জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকার নেছার আহমদ বলেন, ‘আমার একটি মেয়ে স্কুলে পড়ে। এলাকায় শুনেছি অপহণকারীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। পুলিশ ফেসবুকে এমনটি জানিয়েছে। ফেসবুকে ওই স্ট্যাটাস দেখার পর থেকে মেয়েকে নিয়ে ভয়ে আছি। তাকে স্কুলে একা ছাড়তে ভয় করছে।’
উপজেলার ফতেহপুর এলাকার আতাউর রহমানের মেয়ে স্থানীয় স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
ওসির ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ার পর থেকেই ভয়ে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অপহরণকারীচক্র নিশ্চয়ই খুব দক্ষ। তাই পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না। না পেরে ফেসবুকে সবাইকে সতর্ক থাকার কথা বলেছে।
‘মেয়ের স্কুল তো বন্ধ করা যাবে না। তবে এখন আর একা স্কুলে ছাড়ি না। নিজে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করি।’
ওসির ওই স্ট্যাটাসের নিচে কমেন্টবক্সে অনেকেই সচেতন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আবার অনেকে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
মেহেদী হাসান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেখানে লিখেছেন, ‘আপনারা অপহরণকারী চক্রের নাম প্রকাশ করে গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম না দিয়ে উল্টো সাধারণ মানুষকে সতর্কবার্তা দিচ্ছেন! অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারের জন্য চিরুনী অভিযানের ঘোষণা দিলেই তো হয়। নাকি এক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা ব্যর্থ?!’
এ প্রসঙ্গে সচেতন নাগরিক কমিটি সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশের কাজ অপরাধী ধরা। সেটি না করে যদি তারা মানুষকে সচেতন আর সতর্ক করার কাজে নেমে পড়েন তাহলে এটা তাদের অসহায়ত্ব হিসেবেই প্রকাশ পাবে।’
‘মানুষকে সচেতন করা অবশ্যই ভাল কাজ। তবে খেয়াল রাখতে হবে সচেতন করতে গিয়ে যেন মানুষকে আতঙ্কিত করে ফেলা না হয়। অপহরণের যে অভিযোগগুলো এসেছে তার সুরাহা না করে মানুষকে সচেতন হওয়ার কথা বলা হলে তো পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।’
এ পর্যন্ত অপহরণের কতগুলো ঘটনা ঘটেছে জানতে চাইলে ওসি গোলাম দস্তগীর জানান, গত মাসে দুই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে। আর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে একটি।
জৈন্তাপুর থানা সুত্রে জানা গেছে গত ২০ মে চিকনাগুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরদিন তার পরিবার থানায় অভিযোগ করে। এরপর ২৯ মে সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির আরেক ছাত্রী স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। তাদের এখনও পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ৭ মে সিলেট ক্যান্টমেন্ট বোর্ড স্কুলের এক ছাত্রী জৈন্তাপুর থেকে নিখোঁজ হয়। এরপর অপহরণের অভিযোগে থানায় সাধারন ডায়েরি করে ওই ছাত্রীর পরিবার। ২৪ মে তাকে টাঙ্গাইল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের অভিযোগে আটক করা হয় এক তরুণকে।
ওসি জানান, ওই ঘটনাটি অবশ্য অপহরণ নয় বলে পরে জানা গেছে। মেয়েটি স্বেচ্ছায় ওই তরুণের সঙ্গে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, সবশেষ গত মঙ্গলবার সেন্ট্রাল জৈন্তা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে দুই নারী অপহরণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রীর বাবা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল আমার মেয়ে। ছৈয়া এলাকার রাস্তায় দুজন অপরিচিত নারী তাকে একটি কাগজ পড়ে দেয়ার জন্য বলে। কাগজটি মেয়ে হাতে নেয়ার জন্য এগিয়ে গেলে তারা ওই কাগজ তার মুখে গুঁজে একটি ইজিবাইকে তুলে নেয়। পরে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে আমার মেয়ে লাফ দিয়ে নেমে পালিয়ে আসে।’
ওসি গোলাম দস্তগীর জানান, এ খবর জানার পরই মূলত অপরণকারীদের ধরতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবার কোনো লিখিত অভিযোগ না দিলেও থানা পুলিশ তদন্ত করছে।
আরও পড়ুন:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার আসামি সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবেদন বাতিল করেছে আদালত।
দুই পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার মুখ্য বিচারিক আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দিকী জামিন আবেদন বাতিল করেন।
অবন্তিকার আইনজীবী সৈয়দ নুরুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
একদিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
এদিকে অবন্তিকার সহপাঠী রায়হান সিদ্দিক আম্মানের দুই দিনের রিমান্ড শেষে আজ তাকে কুমিল্লার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে আম্মানকে কুমিল্লা জেল হাজতে নিয়ে যায় পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আত্মহত্যা নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী অবন্তিকাকে ১৫ মার্চ রাতে মৃত ঘোষণা করেন কুমিল্লা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক।
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা নামের ওই ছাত্রী জবির আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী।
কুমিল্লা সদর হাসপাতালের রাত্রিকালীন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মো. জুবায়ের বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তার (অবন্তিকা) গলায় একটি দাগ দেখতে পাই। তার দেহ নিথর অবস্থায় ছিল। আমরা তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।’
মৃত্যুর আগে জবির এ ছাত্রী ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন, যাতে তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন বলে জানান। আত্মহত্যার জন্য সহপাঠী আম্মান ও জাবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে দায়ী করেন এ শিক্ষার্থী।
অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় আম্মান ও দ্বীন ইসলামকে পুলিশ আটক করার কথা শনিবার রাতে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
জবির এ ছাত্রী কুমিল্লা নগরের শাসনগাছা এলাকার প্রয়াত জামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার বাবা কুমিল্লা সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। তার মা তাহমিনা শবনম কুমিল্লা পুলিশ লাইনস উচ্চ বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক।
কুমিল্লায় ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বেলা তিনটার দিকে অবন্তিকার প্রথম জানাজা ও বেলা পৌনে চারটার দিকে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন:‘কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন জরুরি।
‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতে নারীদের কথা বলার জায়গাটা তৈরি করে দিতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গাগুলোতে নারীদের নিয়ে আসতে হবে।’
আন্তর্জাতিক নারী দিবস সামনে রেখে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
তিনি বলেন, ‘নারী পরিচয়ের আগে আমার বড় পরিচয় হলো আমি একজন মানুষ। নারী-পুরুষ ভেদাভেদ তৈরি, নারীকে হেয় করা, শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল মনে করা হয় আজও।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের মূল্যায়ন সম্পর্কে সাদেকা হালিম বলেন, ‘সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এমন হয়েছে যে সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়; যদিও বাংলাদেশের সংবিধানে নারী ও পুরুষ সমান। কিন্তু বাস্তবে কোনো দেশই খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে নারীকে পুরুষের সমান ভাবা হয়।’
‘সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীত্ব নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে। সেটা পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, ভাগ-বাটোয়ারার ক্ষেত্র, এমনকি ধর্মীয়ভাবেও। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীকে সমান অধিকার দেয়া হয়েছে।’
‘এমনকি নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয় নিয়েও রাজনীতি করা হয়। সন্তান জন্মের পর পরই সন্তানের অধিকার কিভাবে হবে সেটা আমরা ধর্মীয়ভাবে নির্ধারণ করি। বাবা ও মায়ের অধিকার কতটুকু, আমাদের সিভিল ল’তে কতটুকু, শরিয়া ল’তে কতটুকু- এসব বিষয় অনেকটাই পুরুষকেন্দ্রিক। পুরুষকে সব সময় প্রাধান্য দেয়া হয়। পুরুষরাই এ সমাজে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে।’
এই উপমহাদেশে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘ভারত উপমহাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন যে এখন হয়েছে তা নয়। অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশে নারীরা কিন্তু ইউরোপের নারীদের আগেই ভোটাধিকার পেয়েছিল। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় নারীরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, রানি হয়েছে, ট্যাক্স সংগ্রহ করেছে।
‘আধুনিক রাষ্ট্রে পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে নারীদের কাজের পরিধি বেড়েছে, কিন্তু নারীদের পণ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার কাজকে কাজ হিসেবে আমরা দেখিনি। নারীরা স্ত্রী, মা বা মেয়ে হিসেবে যে ভূমিকা পালন করে সেটিকেও অবমূল্যায়ন করা হয়।
‘কোনো নারী চাকরি করলেও তাকে আমরা প্রশ্ন করি তার স্বামী কী করে। সে যদি স্বামীর থেকে বেশি বেতন পায়, তাহলে পুরুষও হীনম্মন্যতায় ভোগে।’
সমাজের সাধারণ নারীদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে জবি উপাচার্য বলেন, ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তো নারীদের অনেকেরই হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টর, চিংড়ি মাছের ঘের, কল-কারখানায় নারীরা কাজ করছে। এটি ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু নারীর সামাজিক মর্যাদা কি বেড়েছে? এটা খুবই জটিল একটি বিষয়।
‘চরম দারিদ্র্যের শিকার নারীরা কোনো কিছু ভাবে না, বা ভাবার সুযোগ পায় না। তারা জানে তাদেরই কাজ করতে হবে, ক্ষুধা মেটাতে হবে। তারাই শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। সাধারণ নারীরা অনেক পরিশ্রমী। সামাজিক সমালোচনা গ্রাহ্য না করে তারা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে।’
নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে সাদেক হালিম বলেন, ‘আমরা নারীর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে পারিনি। বাংলাদেশে বা প্রবাসে যে পরিমাণ নারী কাজ করে সেখানেও আমরা দেখি যে নারীরা নিরাপদ নয়। এমনকি খুব নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে তারা ধর্ষণের শিকার হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। এবারকার কেবিনেটে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নারী মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এটা ইতিবাচক দিক।
‘সংখ্যার দিক থেকে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেশি, কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন বা সামাজিক মর্যাদার জায়গায় গুণগত মানের দিক থেকে কতটা বদলেছে সেটি বড় বিষয়। যখন নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আসবে, নেতৃত্ব দেবে, তখনই বদলাবে সমাজ।’
আরও পড়ুন:দেশের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী শিশুদের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য বই বিতরণ করে আসছে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কেবল তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা।
এতদিন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, আচিক ও সাদ্রি- এই পাঁচটি ভাষায় বই বিতরণ হলেও প্রথমবারের মতো এবার গারো শিক্ষার্থীদের জন্য আচিক ভাষায় পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। মাতৃভাষায় পাঠ্যবই পেয়ে আনন্দিত সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার গারো শিশুরা।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত আচিক ভাষার পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, মধ্যনগরে ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাঙালভিটা মিশন প্রাইমারি স্কুল, কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাইটাকোনা মিশন প্রাইমারি স্কুল ও ইছামারী মিশন প্রাইমারি স্কুল- এই পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠরত গারো শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড় শতাধিক। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৮৪ জন গারো শিক্ষার্থীর মধ্যে আচিক ভাষার পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে।
কাইটাকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তূর্ণা মানকিন বলেন, ‘আজকে শিক্ষার্থীদের মাঝে আচিক ভাষায় প্রণীত বই বিতরণ করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। মনে নতুন আলোর সঞ্চার হলো। আমরা আমাদের অর্থাৎ গারো আদিবাসীর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার একটা উপায় পেয়েছি।’
এতে আচিক ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই ধারণা লাভ করতে পারবে বলে জানান তিনি।
বাঙালভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়ূস দাজেল বলেন, ‘আমি নিজেও একজন গারো। দেরিতে হলেও এই প্রথম শিশুদের হাতে মাতৃভাষায় সরকারি পাঠ্যবই তুলে দিতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি।’
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় গারোদের মাতৃভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মানবেন্দ্র দাস বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর গারো শিশু শিক্ষার্থীদের হাতে সরকারি পাঠ্যবই পৌঁছে দিতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। আমার নিজ খরচে জেলা শহর থেকে এসব বই এনে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেছি।’
আরও পড়ুন:গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদ মোল্লা নামে এক প্রকৌশলীর বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন এক নারী। স্ত্রীর স্বীকৃতি না দিলে এখানেই আত্মহত্যা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত আহাদ মোল্লা কোটালীপাড়া উপজেলার সিতাইকুন্ড গ্রামের মোস্তফা মোল্লার ছেলে। তিনি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের প্রকৌশলী বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে ওই নারী প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বাড়ির উঠোনে একটি গাছের নিচে অবস্থান নিয়েছেন।
ওই নারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রেম করার পর ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর আমার সঙ্গে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ঢাকায় বসবাস করতে থাকি। এ খবর দুই পরিবারে জানাজানি হলে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুনরায় সামাজিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়।
‘কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ের কিছুদিন পর হঠাৎ করে আহাদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সে কোনো যোগাযোগ করছে না। নিরুপায় হয়ে স্ত্রীর দাবি নিয়ে আহাদের বাড়িতে এসে উঠেছি। সে আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিলে এ বাড়িতেই আত্মহত্যা করব।’
এদিকে ওই নারী বাড়িতে এসে ওঠার খবর পেয়ে প্রকৌশলী আহাদ মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন অন্যত্র চলে যান।
প্রতিবেশী নেয়ামুল ফকির ও খলিল শেখ বলেন, ‘আহাদ মোল্লার সঙ্গে ওই নারীর সামাজিকভাবে যে বিয়ে হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। বিয়ের পর আহাদ মোল্লা তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করত। এখন তাদের মাঝে কী হয়েছে তা আমাদের জানা নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আহাদ মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তাদের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। আর আহাদ মোল্লা ঢাকায় থাকায় তার সঙ্গে একাধিক বার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গঠিত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে সোমবার এই নীতিমালা দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আদালত এই নীতিমালার ওপর শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ঠিক করেছে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত।
দাখিল করা নীতিমালায় বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবরেটরি কোনো লেখা বা চিহ্ন বা অন্য কোনো উপায়ে শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনোরকম বিজ্ঞাপন দিতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মী, টেকনিশিয়ান কর্মীদের নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে ট্রেনিং দেবে এবং নৈতিকতা ও পেশাগত আচরণ বিষয়ে ট্রেনিং দেবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো এ সংক্রান্ত সব ধরনের টেস্টের ডাটা সংরক্ষণে রাখবে। হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ মেডিক্যাল সেন্টারগুলো ডিজিটাল ও প্রিন্ট মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা এবং কন্যাশিশুর গুরুত্ব তুলে ধরে বিভিন্ন মেসেজ প্রচার করবে।
এর আগে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ রোধে নীতিমালা তৈরি করতে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করেছিলেন।
রুলে অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় রোধে নীতিমালা বা নির্দেশনা তৈরি করতে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং অনাগত শিশুর লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণে নীতিমালা তৈরি করতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
হাইকোর্টের ওই রুলের পর নীতিমালা তৈরির জন্য কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এর আগে ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি গর্ভের শিশুর লিঙ্গ পরিচয় জানার উদ্দেশ্যে পরীক্ষা ও লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।
শারীরিক বৈশিষ্ট্যে ওরা আর দশটা মানুষের মতোই। আছে স্ত্রী-সন্তান। তারপরও নিজেদেরকে ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় দিয়ে ওরা চাঁদাবাজি করে আসছিল। অবশেষে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে।
শনিবার রাজধানীর টেকনিক্যাল মোড় এলাকা থেকে এই প্রতারক চাঁদাবাজ চক্রের আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- হোসেন ওরফে শিলা হিজড়া, হৃদয় ওরফে পিয়া হিজড়া, আমিনুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, ইয়াহিয়া, নয়ন, বেলাল ও মিজানুর রহমান।
মিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে হিজড়া সেজে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি করে আসছিল। আর পাপ্পু হিজড়া নামের একজন ওদের গুরুমাতা হিসেবে কাজ করে।
‘পাপ্পু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এদেরকে ঢাকায় এনে হিজড়া সাজিয়ে চাঁদাবাজিতে যুক্ত করে। বিনিময়ে প্রতিজনকে প্রতিদিন ৬শ’ টাকা করে দেয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কারও বাড়ি লক্ষ্মীপুর, কারও সিরাজগঞ্জ আবার কারও বাড়ি পাবনা। কাউকে আবার আনা হয়েছে ময়মনসিংহ থেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার ৮জনের মধ্যে কয়েকজন বিবাহিত এবং তাদের স্ত্রী-সন্তান আছে।’ ট্রান্সজেন্ডার সেজে একদল চাঁদাবাজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে টেকনিক্যাল মোড়ে তাওহীদ আলী নামের এক মোটরসাইকেল আরোহীর গতিরোধ করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ধস্তাধস্তি করে তার কাছ থেকে ২০০ টাকা কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে মিরপুর মডেল থানা পুলিশের একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘জেন্ডার-বেইজড ভায়োলেন্স বেঞ্চ বুক লঞ্চ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সেখানে দেয়া বক্তব্যে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা একটি বদ্ধমূল সমস্যা এবং এর প্রভাব অনেক বেশি বিস্তৃত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির ‘প্রোমোটিং পিস অ্যান্ড জাস্টিস অ্যাকটিভিটি’।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়াও পরিবার, সম্প্রদায় এবং সামগ্রিকভাবে জাতিকে প্রভাবিত করে। এ সহিংসতা কেবল শারীরিক ক্ষতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি গভীর মনস্তাত্ত্বিক ক্ষত সৃষ্টি করে, পারিবারিক কাঠামোকে ব্যাহত করে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের অগ্রগতিতে বাধা দেয়।’
আইনমন্ত্রী জানান, বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা এবং প্রশমনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আদালত এ ধরণের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে, যাতে তারা প্রতিকার পায় এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করতে পারে। এমন প্রেক্ষাপটে, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা বিষয়ক মামলার জটিল বিষয়গুলোর সহজ সমাধানে বিচার বিভাগীয় বেঞ্চ বুক দুটি বিচারকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সব স্তরের মানুষের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক পরিসরে আইনি, প্রশাসনিক এবং নীতিগত সংস্কার করেছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে সু-দৃষ্টি দিয়েই তার সরকার ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করেছে। ২০১২ সালে পর্নোগ্রাফি (নিয়ন্ত্রণ) আইন এবং মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করেছে। এই আইনগুলো সহিংসতা এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্তিশালী স্তম্ভ হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’
নারী ও শিশুরা মানব পাচারের প্রধান লক্ষ্যবস্তু। এ ঘৃণ্য অপরাধ দমনে কৌশলগতভাবে সাতটি বিভাগীয় সদরে সাতটি মানবপাচার বিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকার দেশব্যাপী ১০১টি বিশেষায়িত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি উল্লেখযোগ্য নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দূরদর্শী পদক্ষেপগুলো নারী ও শিশুদের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য