পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে তিনটি নির্বাচনে টানা জয় পাওয়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু যখন চতুর্থ জয়ের স্বপ্নে বিভোর, সে সময় তার ১৬ বছরের কাজের মূল্যায়ন করছেন কুমিল্লাবাসী।
বিশেষ করে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দুই মেয়াদে তিনি নগরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন, কতগুলো পারেননি, সেগুলো নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
মেয়র পদে সাক্কুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলছেন, নগর পরিচালনায় সাক্কু ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সাক্কু বলছেন, তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার প্রায় সব বাস্তবায়ন হয়েছে, যেগুলো এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলোর জন্যই আবার ভোট দেয়া প্রয়োজন।
নিউজবাংলাকে সাক্কু বলেন, ‘আমি গতবার যখন মেয়র হইছি, তখন যে ইশতেহার দিয়েছিলাম তার ৭০ ভাগ কমপ্লিট করেছি। বাকি ৩০ ভাগ এবার বাস্তবায়ন করব। আর এই ৩০ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে।’
১৬ বছরে কেন পারেননি নগরীর চেহারা পাল্টাতে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন পৌরসভার মেয়র ছিলাম তখন বাজেট ছিল কম। তারপর পরপর দুই মেয়াদে সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলাম, তখন আমি ৭০ ভাগ কাজ করছি।’
ভোটের প্রচারে নেমে সাক্কুকে প্রধানত যানজট ও জলাবদ্ধতা ইস্যুতে আক্রমণ করছেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, সাক্কু কুমিল্লা নগরী থেকে যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সড়কের চেয়ে উঁচু করে ড্রেন নির্মাণ করেছেন। এত অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
‘আমি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার পাবে জলাবদ্ধতা দূর করা। সেই সঙ্গে যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করব। আমি বিশ্বাস করি, যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তার সমাধানও আছে। শুধু প্রয়োজন পরিকল্পিত এবং স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। আমি সেই সমস্যার সমাধান করব।’
যেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
২০১৭ সালের নির্বাচনে সাক্কু যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ২৭টি সমস্যার সমাধান করবেন। কিছু স্কুল-কলেজ করবেন।
ইশতেহারে ২৭টি সমস্যার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান দুটি সমস্যা ছিল নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, এই দুটি ক্ষেত্রে সাক্কু কোনো সফলতার দাবি করতে পারবেন না। বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়কে, বাড়িতে পানি উঠে যায়।
সচেতন নাগরিক কমিটির কুমিল্লা শাখার সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা জেনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে দৃশ্যত মনিরুল হক সাক্কু ব্যর্থ। কারণ দীর্ঘ সময় পেয়েও তিনি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নগরীর জলবাদ্ধতা দূর করতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘নগরীর পানি নিষ্কাশন হয় সদর দক্ষিণ উপজেলার কান্দিখাল ও ডাকাতিয়া নদীর শাখা দিয়ে। সেই সব খালের ওপর বাসস্থান গড়েছেন অনেকে। ফলে পানি নিষ্কাশনের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। এসব নিয়েও সাক্কু ব্যর্থ হয়েছেন।’
ইতিহাসবিদ আহসানুল কবির বলেন, ‘নগরীর যানজট নিরসনে মনিরুল হক সাক্কু ব্যর্থ। তবে তার ব্যর্থতার দায়ভার সরকারি অন্য সংস্থাগুলোকেও নিতে হবে।
‘যেমন যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ, জেলা প্রশাসনের ভূমিকাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে কে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে তা সবাই জানে। তাই সাক্কুর ব্যর্থতার পাশাপাশি খতিয়ে দেখা উচিত আর কাদের ব্যর্থতায় নগরী থেকে যানজট দূর হয়নি।’
যানজট ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নগরীর রেসকোর্স, ঠাকুরপাড়া শিক্ষা বোর্ডের পেছনের এলাকা, নজরুল অ্যাভিনিউ, কাশারিপট্টি, মুরাদপুর, শাসনগাছা, চর্থার মানুষজন।
নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড রেসকোর্স কাঠেরপুল এলাকার ফারুখ আহমেদ ও কামাল হোসেন বলেন, ‘ড্রেনের কাজ হলো, খাল পরিষ্কার হলো, তবুও বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় রেসকোর্স। অনেকেই শুধু জলাবদ্ধতার জন্য রেসকোর্স থেকে বাসা বদলে অন্য এলাকায় চলে যান। গত ১৫ বছরেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।’
নজরুল অ্যাভিনিউর বাসিন্দা অঞ্জন দে বলেন, আকাশে মেঘ করলে আমরা ভয় পাই। নিচতলা আমাদের বাসা। পানি জমে যায়। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা থেকে এক দিন পর্যন্ত পানিবন্দি থাকি।’
মলি রানি বলেন, ‘গত ১০ বছরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আমাদের ঘরে পানি প্রবেশ করে। অনেক আসবাব নষ্ট হয়েছে। আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি মনিরুল হক সাক্কু।’
কুমিল্লা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড হাউজিং এস্টেট। এই এলাকায় নিচতলায় থাকতে চায় না মানুষ। কারণ জানতে চাইলে আমিরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ড্রেন ও খালের পানিতে একাকার হয়ে যায় এলাকা। ঘরে প্রবেশ করে পানি। এটা মেয়র সাক্কুর চরম ব্যর্থতা।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে এক প্রশ্নে সাক্কু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি পুরোপুরি ব্যর্থ না। জলাবদ্ধতার জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, তা অদূর ভবিষ্যতে দেখতে পাবেন।’
যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের যে ঘোষণা সাক্কু দিয়েছিলেন, সেখানেও কোনো অগ্রগতি কম। নগরীর শাসনগাছায় একটি ফ্লাইওভার হলেও ইশতেহারে উল্লেখ করা বাকি দুটি ফ্লাইওভারের কাজ হয়নি।
সাক্কু বলেন, ‘যানজটের জন্য সিটি করপোরেশন একা দায়ী না। তবুও আমি এবার বিজয়ী হলে বেশ কিছু স্থায়ী পরিকল্পনা হাতে নেব যেন নগরীতে আর যানজট না হয়।’
নগরীর দক্ষিণে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করেছিলেন সাক্কু। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকৃতপক্ষে নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়, ক্ষমতাও নেই। যেটি করার নয়, সেটি করার প্রতিশ্রুতি এখন গলার কাঁটা হয়েছে সাক্কুর। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হয়নি তার।
লালমাই ও ময়নামতি এলাকার অধিবাসী ত্রিপুরাদের জন্য মাতৃভাষা স্কুল করার ওয়াদাও পূরণ হয়নি। তবে সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুভাশিস ঘোষের উদ্যোগে ত্রিপুরাদের ভাষা ককবরক শেখাতে একটি স্কুল হয়েছে।
নগরীর দক্ষিণাঞ্চলে মেয়েদের দুটি মাধ্যমিক স্কুল করার ঘোষণাও ছিল সাক্কুর। বলেছিলেন, নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ করবেন। দুই মেয়াদেও হয়নি সেসব স্কুল।
প্রত্যেকটির ওয়ার্ডে একটা করে পাঠাগার করার ঘোষণাও ছিল বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতার। কিন্তু সেগুলো করা যায়নি। সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিশ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি।
কী কী হয়েছে সাক্কুর আমলে
সাক্কু নগর পরিচালনার দায়িত্বকালে নগরীর প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন নির্মিত হয়েছে। ফুটপাতে টাইলস বসিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। সড়কে বসেছে নতুন বাতি। নগরীর ধর্মসাগরের ওয়াকওয়েতে টাইলস বসানো হয়েছে। শিশুপার্কে এসেছে নতুন রাইড।
নগরীর পূর্বাঞ্চলে একটি বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। নগরীর পুকুরের রিটার্নিং ওয়াল করা হয়েছে।
নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেড়েছে তিনটি। মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান পাকা করা হয়েছে, সিটি করপোরেশন অংকন শালা ও শিল্পচর্চা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। সড়কের মোড়ে মোড়ে শিল্পকর্ম করা হয়েছে।
গোমতী নদীর আলেখাঁর চর থেকে বিবিরবাজার স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি পাকা ও প্রশস্ত করা হয়েছে সাক্কুর মেয়াদে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে চালবোঝাই আরও দুটি জাহাজ।
এক দিনের ব্যবধানে দুটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছায়।
এবার এসেছে ৪৮ হাজার ৭৫০ টন আতপ ও সিদ্ধ চাল। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসে ২৬ হাজার ২৫০ টন এবং ভারত থেকে আসে ২২ হাজার ৫০০ টন চাল।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাইলো জেটি ও কাফকো-সংলগ্ন জেটিতে এই দুই জাহাজ নোঙর করে বলে শনিবার দুপুরে নিশ্চিত করেন খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা।
পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজটি শুক্রবার চট্টগ্রাম সাইলো জেটিতে বার্থিং করেছে জানিয়ে তিনি জানান, জাহাজ এমভি মারিয়ম গত ১১ মার্চ ২৬ হাজার ২৫০ টন আতপ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রবেশ করে।
অন্যদিকে ১২ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রবেশ করে ভারতের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি তানাইস ড্রিম। জাহাজটি শুক্রবার কাফকো সংলগ্ন জেটিতে বার্থ করে।
এ জাহাজ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টন বাসমতি নয় এমন সিদ্ধ চাল আনা হয়েছে।
পাকিস্তানের জাহাজ এমভি মারিয়মে আসা চালের নমুনা সংগ্রহ শেষে ভৌত বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে মন্তব্য করে জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা জানান, এ চালের খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে আসা জাহাজ এমভি তানাইস ড্রিমের চালগুলোর নমুনা সংগ্রহ করা শেষ হয়েছে।
এর আগে বুধবার ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা ৩৮ হাজার ৮৮০ টন চাল বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে ১৭ হাজার ৮০০ টন আতপ চাল এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ২১ হাজার ৮০ টন সিদ্ধ চাল কেনা হয়েছে।
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে আরও ৬ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজের ধাক্কায় বাল্কহেড থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজ এক নৌযান শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রাণ হারানো নৌযান শ্রমিকের নাম ওমর আলী (৫৫), যার বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মধ্যম পাটুলী গ্রামে।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোরে একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় বাল্কহেড থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন ওমর আলী। তিনি ‘নাফিজ তাসিম’ নামের একটি বাল্কহেডে সুকানি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুব আলম বলেন, ‘শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলের অদূরে নদীতে তার লাশটি ভেসে উঠলে স্থানীয়রা আমাদের খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের নামাশুলাই এলাকায় শনিবার সকাল আটটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায় ও ঘটনাস্থলেই চালক ও এক নারীসহ দুইজন যাত্রী নিহত হন। এ ছাড়া আরও একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জানান, খবর পেয়ে নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ট্রাক ও অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ট্রাকচালক পালিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে থাকা আলামত জব্দের অনুমতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট আমলি আদালতের বিচারক রাশেদ হোসাইন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আইসিটির তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন এ আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার এসএম মইনুল করিম।
ব্যারিস্টার মইনুল করিম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘মামলার তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের জিম্মায় আগের মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে আলামতগুলো আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় জব্দের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
তিনি জানান, এর আগে এ হত্যা মামলায় রংপুরে এসে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। আলামত জব্দের অনুমতির মাধ্যমে মামলার তদন্তে আরেক ধাপ অগ্রগতি হলো। প্রয়োজনে জব্দকৃত আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করে শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হবে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলামত জব্দের আবেদনের পক্ষে তারা বলেছেন। এর মাধ্যমে এ মামলার তদন্ত গতি পাবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরদিন তাজহাট থানায় মামলা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতি ভূষণ রায়। এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পরে ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০ থেকে ৩৫ জনের অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করে মামলা করেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই মো. রমজান আলী।
পরে তিনি সম্পূরক এজাহারে আরও সাতজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন।
মামলা দুটির তদন্ত করছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। কিন্তু মামলার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন:ঈদ বোনাস, ২৫ শতাংশ উৎপাদন বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ইসমক্স সোয়েটার নামে একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শ্রমিকরা শুক্রবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তেলিপাড়া এলাকায় ইসমক্স সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা সকাল আটটায় কাজে যোগ না দিয়ে ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
সকাল ১০টা থেকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। অনেকেই হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, তেলিপাড়া এলাকায় ইসমক্স সোয়েটার কারখানায় প্রায় এক হাজার ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন। দীর্ঘদিন কাজ করলেও তাদের ওভার টাইম বিল, নাইট বিল, মাতৃকালীন ছুটি, বাৎসরিক টাকা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া তাদের প্রোডাকশন রেট সঠিকভাবে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় ঈদ বোনাস, ওভারটাইম বিল, জিএমের পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন তারা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে।
আরও পড়ুন:ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের কচুবনিয়া এমপি বদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদকে।
জেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেওয়া হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসারের চিঠিতে বলা হয়, ‘টেকনাফ উপজেলার কচুবনিয়া এমপি বদি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলী আকবর সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আজকে থেকে এ আদেশ কার্যকর করা হবে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন মিয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদ কর্তৃক উক্ত বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন হয়রানির করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় গণমাধ্যম নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলাকে ধন্যবাদ জানাই সত্য নিউজ করার জন্য।এ ছাড়া যেকোনো স্কুলে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য শিক্ষকদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নতুন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান আরজু বলেন, ‘এমপি বদি কচুবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলী আকবর সাজ্জাদকে বরখাস্ত করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের চিঠি হাতে পেয়েছি। ফলে তিনি এখন আর বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নন। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।’
এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসব অভিযোগ সামনে আসার পরপরই কর্তৃপক্ষ আমলে নিলে এ রকম ঘটনা ঘটত না। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে কিন্তু অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে তিনি আরও সাহস পেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর ‘টেকনাফে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়।
কক্সবাজার জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গিয়ে গোপন ও প্রকাশ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অভিযোগকারী তিন ছাত্রী ও অভিভাবকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের একজন বলে, “স্যার আমাদের বলেন, ‘তোমরা স্কুলে আসার সময় দুই ঘণ্টা আগে আসবা।’ খালি ক্লাসরুমে প্রবেশ করায় দরজা বন্ধ করে আমাদের সবসময় যৌন হয়রানির করত। স্যার আমাদের বলত যে, ‘তোমাদের পরীক্ষায় ভালো নম্বর দিয়ে পাস করিয়ে দিব এবং তোমরা প্রতিজ্ঞা করবা, তোমাদের সঙ্গে যা ঘটছে জীবনেও তা কারও কাছে কিছু বলা যাবে না।’ পরে এগুলো বলে আমাদের স্পর্শকাতর স্থানে হাতে হাত দেয়।”
এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে যায় না। মেয়ের মার থেকে জানতে চাইলাম কেন হঠাৎ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিছে। বিষয়টি মাও জানে না। ১০ বছরের ছোট্ট মেয়ে। তাই ভয়ে আমাদের জানায়নি, কিন্তু ওদের বান্ধবীরা একদিন মেয়ের মাকে বিষয়টি অবগত করল যে, আপনার মেয়েকে হেড স্যার যৌন হয়রানির করে আসছে। তাই উনি স্কুলে যাচ্ছে না।
‘আমি বিষয়টি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের জানাই। তারা আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে বলেন। পরে আমি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করি।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারীতে বাসের ধাক্কায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী দুজন সহোদর। অপরজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক।
দুর্ঘটনায় আহত হন আরও একজন শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রামমুখী পূরবী বাস বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সহোদরদ্বয় হলো ওয়াকার উদ্দীন আদিল (১২) ও উম্মে হাবিবা রিজভী (১৫)। তারা জামিজুরির জসিম উদ্দিনের সন্তান এবং দোহাজারী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। অপরজন অটোরিকশার চালক রুহুল আমিন (৪৫)।
এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর নাম কাজী ফাহমিদা ওয়াশিমা তুশিন (১৫), যে নবম শ্রেণির ছাত্রী।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুবরঞ্জন চাকমা বলেন, এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার পলাতক।
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাদের একজনের ভাষ্য, সড়ক প্রতিরোধক নির্মাণ না করায় প্রতিনিয়ত অনেক মায়ের বুক খালি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য