পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মিলিয়ে তিনটি নির্বাচনে টানা জয় পাওয়া বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু যখন চতুর্থ জয়ের স্বপ্নে বিভোর, সে সময় তার ১৬ বছরের কাজের মূল্যায়ন করছেন কুমিল্লাবাসী।
বিশেষ করে সিটি করপোরেশন হওয়ার পর দুই মেয়াদে তিনি নগরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন, কতগুলো পারেননি, সেগুলো নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।
মেয়র পদে সাক্কুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামা আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাত ও স্বেচ্ছাসেবক দল থেকে পদত্যাগ করা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলছেন, নগর পরিচালনায় সাক্কু ব্যর্থ হয়েছেন। তবে সাক্কু বলছেন, তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার প্রায় সব বাস্তবায়ন হয়েছে, যেগুলো এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, সেগুলোর জন্যই আবার ভোট দেয়া প্রয়োজন।
নিউজবাংলাকে সাক্কু বলেন, ‘আমি গতবার যখন মেয়র হইছি, তখন যে ইশতেহার দিয়েছিলাম তার ৭০ ভাগ কমপ্লিট করেছি। বাকি ৩০ ভাগ এবার বাস্তবায়ন করব। আর এই ৩০ ভাগ বাস্তবায়ন করতে পারলে নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে।’
১৬ বছরে কেন পারেননি নগরীর চেহারা পাল্টাতে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন পৌরসভার মেয়র ছিলাম তখন বাজেট ছিল কম। তারপর পরপর দুই মেয়াদে সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলাম, তখন আমি ৭০ ভাগ কাজ করছি।’
ভোটের প্রচারে নেমে সাক্কুকে প্রধানত যানজট ও জলাবদ্ধতা ইস্যুতে আক্রমণ করছেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। তিনি বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, সাক্কু কুমিল্লা নগরী থেকে যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সড়কের চেয়ে উঁচু করে ড্রেন নির্মাণ করেছেন। এত অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
‘আমি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার পাবে জলাবদ্ধতা দূর করা। সেই সঙ্গে যানজট নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করব। আমি বিশ্বাস করি, যে সমস্যা সৃষ্টি হয় তার সমাধানও আছে। শুধু প্রয়োজন পরিকল্পিত এবং স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা। আমি সেই সমস্যার সমাধান করব।’
যেসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন নেই
২০১৭ সালের নির্বাচনে সাক্কু যে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন ২৭টি সমস্যার সমাধান করবেন। কিছু স্কুল-কলেজ করবেন।
ইশতেহারে ২৭টি সমস্যার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান দুটি সমস্যা ছিল নগরীর যানজট ও জলাবদ্ধতা দূর করবেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, এই দুটি ক্ষেত্রে সাক্কু কোনো সফলতার দাবি করতে পারবেন না। বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান সড়কে, বাড়িতে পানি উঠে যায়।
সচেতন নাগরিক কমিটির কুমিল্লা শাখার সাবেক সভাপতি ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব বদরুল হুদা জেনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানজট নিরসনে দৃশ্যত মনিরুল হক সাক্কু ব্যর্থ। কারণ দীর্ঘ সময় পেয়েও তিনি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে নগরীর জলবাদ্ধতা দূর করতে পারেননি।’
তিনি বলেন, ‘নগরীর পানি নিষ্কাশন হয় সদর দক্ষিণ উপজেলার কান্দিখাল ও ডাকাতিয়া নদীর শাখা দিয়ে। সেই সব খালের ওপর বাসস্থান গড়েছেন অনেকে। ফলে পানি নিষ্কাশনের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। এসব নিয়েও সাক্কু ব্যর্থ হয়েছেন।’
ইতিহাসবিদ আহসানুল কবির বলেন, ‘নগরীর যানজট নিরসনে মনিরুল হক সাক্কু ব্যর্থ। তবে তার ব্যর্থতার দায়ভার সরকারি অন্য সংস্থাগুলোকেও নিতে হবে।
‘যেমন যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ, জেলা প্রশাসনের ভূমিকাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে কে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছে তা সবাই জানে। তাই সাক্কুর ব্যর্থতার পাশাপাশি খতিয়ে দেখা উচিত আর কাদের ব্যর্থতায় নগরী থেকে যানজট দূর হয়নি।’
যানজট ও জলাবদ্ধতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নগরীর রেসকোর্স, ঠাকুরপাড়া শিক্ষা বোর্ডের পেছনের এলাকা, নজরুল অ্যাভিনিউ, কাশারিপট্টি, মুরাদপুর, শাসনগাছা, চর্থার মানুষজন।
নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ড রেসকোর্স কাঠেরপুল এলাকার ফারুখ আহমেদ ও কামাল হোসেন বলেন, ‘ড্রেনের কাজ হলো, খাল পরিষ্কার হলো, তবুও বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় রেসকোর্স। অনেকেই শুধু জলাবদ্ধতার জন্য রেসকোর্স থেকে বাসা বদলে অন্য এলাকায় চলে যান। গত ১৫ বছরেও এই সমস্যার সমাধান হয়নি।’
নজরুল অ্যাভিনিউর বাসিন্দা অঞ্জন দে বলেন, আকাশে মেঘ করলে আমরা ভয় পাই। নিচতলা আমাদের বাসা। পানি জমে যায়। কমপক্ষে ৬ ঘণ্টা থেকে এক দিন পর্যন্ত পানিবন্দি থাকি।’
মলি রানি বলেন, ‘গত ১০ বছরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে আমাদের ঘরে পানি প্রবেশ করে। অনেক আসবাব নষ্ট হয়েছে। আমাদের এই সমস্যার সমাধান করতে পারেননি মনিরুল হক সাক্কু।’
কুমিল্লা নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড হাউজিং এস্টেট। এই এলাকায় নিচতলায় থাকতে চায় না মানুষ। কারণ জানতে চাইলে আমিরুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে ড্রেন ও খালের পানিতে একাকার হয়ে যায় এলাকা। ঘরে প্রবেশ করে পানি। এটা মেয়র সাক্কুর চরম ব্যর্থতা।’
জলাবদ্ধতা নিয়ে এক প্রশ্নে সাক্কু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি পুরোপুরি ব্যর্থ না। জলাবদ্ধতার জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি, তা অদূর ভবিষ্যতে দেখতে পাবেন।’
যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের যে ঘোষণা সাক্কু দিয়েছিলেন, সেখানেও কোনো অগ্রগতি কম। নগরীর শাসনগাছায় একটি ফ্লাইওভার হলেও ইশতেহারে উল্লেখ করা বাকি দুটি ফ্লাইওভারের কাজ হয়নি।
সাক্কু বলেন, ‘যানজটের জন্য সিটি করপোরেশন একা দায়ী না। তবুও আমি এবার বিজয়ী হলে বেশ কিছু স্থায়ী পরিকল্পনা হাতে নেব যেন নগরীতে আর যানজট না হয়।’
নগরীর দক্ষিণে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের কথাও ইশতেহারে উল্লেখ করেছিলেন সাক্কু। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকৃতপক্ষে নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নয়, ক্ষমতাও নেই। যেটি করার নয়, সেটি করার প্রতিশ্রুতি এখন গলার কাঁটা হয়েছে সাক্কুর। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হয়নি তার।
লালমাই ও ময়নামতি এলাকার অধিবাসী ত্রিপুরাদের জন্য মাতৃভাষা স্কুল করার ওয়াদাও পূরণ হয়নি। তবে সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুভাশিস ঘোষের উদ্যোগে ত্রিপুরাদের ভাষা ককবরক শেখাতে একটি স্কুল হয়েছে।
নগরীর দক্ষিণাঞ্চলে মেয়েদের দুটি মাধ্যমিক স্কুল করার ঘোষণাও ছিল সাক্কুর। বলেছিলেন, নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ করবেন। দুই মেয়াদেও হয়নি সেসব স্কুল।
প্রত্যেকটির ওয়ার্ডে একটা করে পাঠাগার করার ঘোষণাও ছিল বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতার। কিন্তু সেগুলো করা যায়নি। সদর দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিশ্রুত উন্নয়নের ছোঁয়াও লাগেনি।
কী কী হয়েছে সাক্কুর আমলে
সাক্কু নগর পরিচালনার দায়িত্বকালে নগরীর প্রধান সড়কের পাশে ড্রেন নির্মিত হয়েছে। ফুটপাতে টাইলস বসিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। সড়কে বসেছে নতুন বাতি। নগরীর ধর্মসাগরের ওয়াকওয়েতে টাইলস বসানো হয়েছে। শিশুপার্কে এসেছে নতুন রাইড।
নগরীর পূর্বাঞ্চলে একটি বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। নগরীর পুকুরের রিটার্নিং ওয়াল করা হয়েছে।
নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেড়েছে তিনটি। মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান পাকা করা হয়েছে, সিটি করপোরেশন অংকন শালা ও শিল্পচর্চা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা হলেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন করা হয়েছে। সড়কের মোড়ে মোড়ে শিল্পকর্ম করা হয়েছে।
গোমতী নদীর আলেখাঁর চর থেকে বিবিরবাজার স্থলবন্দর পর্যন্ত সড়কটি পাকা ও প্রশস্ত করা হয়েছে সাক্কুর মেয়াদে।
আরও পড়ুন:জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে ২৭,২৪৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। বিগত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের একই মাসে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ২১,৯১৬ কোটি টাকা। জুলাই-২০২৫ মাসে বিগত জুলাই-২০২৪ মাসের তুলনায় ৫,৩৩৩ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জুলাই ২০২৫ মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৪.৩৩%।
জুলাই’২৫ মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক থেকে। এ খাত থেকে আদায় হয়েছে ১১,৩৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায়ের পরিমান ছিল ৮,৫৭১ কোটি টাকা। জুলাই ২০২৫ মাসে স্থানীয় পর্যায়ের মূসক আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ৩২.৪৫%।
আয়কর ও ভ্রমন কর খাতে জুলাই’২৫ মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬,২৯৫ কোটি টাকা যা জুলাই’২০২৪ মাসের একই খাতে আদায়কৃত ৫,১৭৫ কোটি টাকার চাইতে ১,১২০ কোটি টাকা বেশি। আয়কর ও ভ্রমন করের ক্ষেত্রে জুলাই ২০২৫ মাসের আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১.৬৫%।
২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জুলাই মাসে আমদানি ও রপ্তানি খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৯,৬০২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জুলাই’২৪ মাসে এই খাতে আদায় ছিল ৮,১৭০ কোটি টাকা, প্রবৃদ্ধির হার ১৭.৫২%।
রাজস্ব আদায়ের এ ধারা ভবিষ্যতে অব্যাহত রাখার জন্য আয়কর, মূল্য সংযোজন কর এবং কাস্টমস শুল্ক-কর আদায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নানাবিধ কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
সম্মানিত করদাতাগণ আইনের যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করে যথাযথ পরিমান কর পরিশোধের মাধ্যমে দেশ গড়ার কাজের অন্যতম অংশীদার হবেন মর্মে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশাবাদী।
কুমিল্লা নাঙ্গলকোটে ইউপি সদস্য আলাউদ্দিনকে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে ঢাকার হাতিরঝিল রেল মগবাজার রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। শুক্রবার দিনগত রাতে অভিযানটি শেষ করে র্যাব।
গ্রেফতারকৃত আসামী শেখ ফরিদ (৪৫) নাঙ্গলকোট উপজেলার বক্সগঞ্জ আলীয়ারা গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।
শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে কুমিল্লা অশোকতলা এলাকায় র্যাব অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন
র্যাব ১১ এর কুমিল্লার কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলম।
মেজর সাদমান জানান, নাঙ্গলকোটের আলিয়ারা গ্রামে দুই পরিবারের মধ্যে বংশপরম্পরায় একটি বিরোধ চলে আসছিল। গেল গেল ২৫ জুলাই গরুর ঘাস খাওয়া কে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
সেদিন দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ ২৫ জন আহত হয়।
এ ঘটনার রেশ ধরে গেলো ৩ আগস্ট দুপুরে আলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন তার চাচাতো ভাইয়ের জানাজার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা তাকে একটি সিএনজিতে তুলে নিয়ে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করে।
পরে এ ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহতের ছেলে বাদী হয়ে নাঙ্গলকোট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করায় নির্ধারিত সময়ের আগেই খোলা হয়েছে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব জলকপাট। সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টা ২ মিনিটে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রের ১৬টি জলকপাট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়।
কর্ণফুলি পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, রাতে লেকের পানির উচ্চতা ১০৮.০৫ ফুট ছুঁয়ে গেলে বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কর্ণফুলি নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, “প্রথমে সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় পানি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পরের দিন মঙ্গলবার সকাল ৯টায় জলকপাট খোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার রাতেই জলকপাট খুলে দিতে হয়। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট বর্তমানে সচল রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার কিউসেক পানি লেক থেকে কর্ণফুলিতে গিয়ে পড়ছে। সবমিলিয়ে পানি নিঃসরণের হার এখন প্রতি সেকেন্ডে ৪১ হাজার কিউসেক।
ভাটি এলাকার জনসাধারণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পানি প্রবাহ বাড়লেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে, এবং প্রয়োজনে আমরা আগেভাগেই ব্যবস্থা নেব।”
স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আগেই অবহিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরের কালীগঞ্জে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে শপথ গ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী আয়োজিত ‘লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক ভাবগম্ভীর পরিবেশে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে নিহত শহীদদের স্মরণে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দেশের অব্যাহত শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ। তিনি উপস্থিত সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করান। দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, দুর্নীতি ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউএনও তনিমা আফ্রাদ বলেন, "জুলাই পুনর্জাগরণ কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের চেতনার বাতিঘর। সেই শহীদদের আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আজকের এই সম্মিলিত শপথ হোক দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করার একটি নতুন অঙ্গীকার। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিক পর্যন্ত সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারে।"
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম উর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন, উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেতৃবৃন্দ সহ উপজেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ।
বক্তারা জুলাইয়ের শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, তাদের দেখানো পথ অনুসরণ করে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের এই সফল আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিকে এক নতুন মাত্রা দেয়। এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি কালীগঞ্জের মানুষের মধ্যে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আয়োজকরা।
ফেনীতে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নতুন এক আতঙ্ক। বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেতে মানুষের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছিল নানা প্রজাতির সাপ। এখন ঘরে ফিরলেও সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এরই মধ্যে পরশুরামে বিষধর সাপের কামড়ে রোকেয়া আক্তার রিনা (৫০) নামে এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিকাল ৫টার দিকে ফেনীর পরশুরামের পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিনা পৌর এলাকার সলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম শহীদের স্ত্রী। তার এক ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে রান্না করার জন্য রান্নাঘরে গেলে সেখানে একটি অজ্ঞাত বিষধর সাপ রিনাকে কামড় দেয়। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। এরপর ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে রিনা রান্না ঘরে যায়। এ সময় রান্নাঘরের একটি গর্ত থেকে বিষধর একটি সাপ বের হয়ে তার পায়ে কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার কোনো চিকিৎসা না হওয়ায় ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার রেদোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছিল।
টানা ৩ দিনের বৃষ্টিতে বেনাপোল বন্দর এলাকায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তরের অনেক স্থানে হাটু পানি জমায় মারাত্বক ভাবে ব্যহত হচ্ছে পণ্য খালাস প্রক্রিয়া। যানবাহন ও নিরাপত্তাকর্মীদের চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ায় বন্দরের ৯.১২.১৫.১৬ ও ১৮ নম্বর সেড থেকে লোড আনলোড বন্ধ হয়ে আছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্দরে হাটু পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। কয়েক বছর ধরে এ দূর্ভোগ হলেও নজর নাই বন্দর কর্তৃপক্ষের। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলকর্তৃপক্ষ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় পানি নিষ্কাসনে বাধা গ্রুস্থ্য হচ্ছে।
তবে এসব শেড ও ওপেন ইয়ার্ড অধিকাংশই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তৈরী হয়নি। বন্দর সড়কের উচ্চতার চেয়ে পণ্যগারগুলো নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানি নিষ্কাষনের অভাবে পণ্যগার ও ইয়াডে জলবদ্ধতা তৈরী হয়। এতে পানিতে ভিজে যেমন পণ্যের গুনগত মান নষ্ট হয় তেমনি চলাচলের বিঘ্ন ঘটছে। তবে আজ সকাল থেকে সেচ যন্ত্র চালিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক শামিম হোসেন জানান, বন্দরের জলবদ্ধতা প্রতি বছরে তৈরী হয়। বিশেষ করে রেল বিভাগ কালভাট না রেখে মাটি ভরাট করায় সমস্যার সন্মুখিন হতে হচ্ছে। বন্দরের পানি নিষ্কাসন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে দ্রুত এ অবস্থা কাটিয়ে তুলতে পাশ্ববর্তী হাওড়ের সাথে বন্দরের ড্রেন তৈরীর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রেরক: রাশেদুর রহমান রাশু, বেনাপোল যশোর ।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত রোববার (৬ জুলাই) মালুমঘাট বাজার থেকে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে এক যুবক পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়া সে যুবক সাজ্জাদ হোসেন (২০) কে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত তিনটায় কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেল (ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট) অভিযান পরিচালনা করে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশ। রাত প্রায় তিনটায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই হোটেলের একটি কক্ষ থেকে তাকে আটক করা হয়।
চকরিয়া থানা পুলিশের বিশেষ নজরদারি ও কক্সবাজারের গোয়েন্দা পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আসামি সাজ্জাদ হোসেন কে আটক করতে সক্ষম হয় কক্সবাজার ডিবি পুলিশ।
এবিষয়ে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, পলাতক আসামি সাজ্জাদ কে কক্সবাজার ডিবি পুলিশ আটক করেছে। প্রাথমিকভাবে সদর মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চকরিয়া থানায় নিয়ে আসা হবে। তার বিরুদ্ধে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা করা হয়েছে।
মন্তব্য