সব রাজনৈতিক দলকে সাহসী হয়ে ভোটে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বলেছেন, ভোটকে তারা অস্বচ্ছ হতে দেবেন না। ভোটের দিন কোনো অস্বচ্ছতার চেষ্টা হলে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপে এসব কথা বলছিলেন সিইসি। বেলা ১১টায় তার সভাপতিত্বে এই সংলাপ শুরু হয়৷
গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশন ধারাবাহিক যে সংলাপ করছে, তার অংশ হিসেবে এই আয়োজন হয়।
দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান কমিশন এমন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এর আগে দেখা যায়নি। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ক্ষমতাসীন দলের এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে কমিশন। যদিও পরে হাইকোর্ট সেই আদেশ স্থগিত করায় সেই প্রার্থীর ভোটে লড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ভোট ছিনিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়ার পর সেখানে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একজন প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর সেখানেও ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইন লঙ্ঘন করে প্রচার চালানোর অভিযোগ ওঠার পর ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতৃত্ব দেয়া বিএনপি এই কমিশন সম্পর্কে আগের অবস্থানেই আছে। এই কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে না যাওয়ার যে ঘোষণা তারা দিয়েছে, সেটি পরিবর্তন হয়নি এখনও।
সিইসি সব দলের অংশগ্রহণে ভোটের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়, তাহলে প্রকৃত অর্থে সেটা নির্বাচন হয় না। ২০০টা বা ২৫০টা সিট যদি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হয়ে যায়, তাহলে হয়তো সরকার গঠন হবে, কিন্তু সেটার লেজিটিমেসি (বৈধতা) অনেক কমে যাবে।
‘বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’
অস্বচ্ছ করার চেষ্টা হলে ভোট বন্ধ
নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করার জন্য যদি ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করা হয়, সে নির্বাচনকেও ব্ল্যাক আউট বা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেন সিইসি।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূটকৌশল করতে পারবেন না। যদি নির্বাচনকে আড়াল করার জন্য ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউট করে, তাহলে আমাদের তরফ থেকে স্পষ্ট করে বক্তব্য থাকবে, সেটা টলারেট করা হবে না।’
সিইসি বলেন, ‘কমিশন বিশ্বাস করে, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই বিভাজনকে ভুলে গেলে চলবে না। কমিশনকে সাহায্য করবে সরকার, দল নয়।’
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে চান সিইসি। তিনি বলেন, ‘ইভিএম আমাদের জন্য খুবই সুবিধাজনক একটি জিনিস। ... কারণ, ওখানে গিয়ে আমি ১০টি ভোট দিতে পারব না। আরেকজন ৫০টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দিতে পারবে না। কারণ আগে আইডেন্টিফাইড হতে হবে, পরে বায়োমেট্রিকস মিলতে হবে।’
পর্যবেক্ষকরা যা বললেন
দেশের ৩২ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রধানদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এখানে ২০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত হন।
সংলাপ শেষে মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভুইয়া বলেন, ‘নির্বাচনে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত করতে হবে।’
ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ভোট অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে ভোটে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে।’
কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যত চেষ্টা করুক, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো ইচ্ছা প্রকাশ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
সংলাপে অংশ নেয়া আব্দুল আলীম বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য আপনারা প্রার্থিতা বাতিল করার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটা চালু রাখতে হবে।’
নির্বাচন কমিশন ইমেজ সংকটে রয়েছে বলে মনে করেন লুৎফুর রহমান ভুইয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া। তিনি বলেন, ‘আগের রাতে ভোট হয়ে যায়৷ তাহলে তো জনগণ আস্থা পাবে না৷’
মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক নির্বাচনের সময় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইন্টারনেট বন্ধ না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বিগত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। তাই নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহী করতে দেশব্যাপী ভোটার উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নেয়া উচিত।’
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সম্মানী দেয়ার প্রস্তাব করেন মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবেদ আলী। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষকদের কার্ড দ্রুত দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি৷ যদি সম্ভব হয় দুদিন আগে দেন।
এ ছাড়া ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা না করার পরামর্শ ছিল অনেকের৷
এক দিনে সব জায়গায় ভোট না করার পরামর্শ দেন ডরপের চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার। ভিন্ন ভিন্ন দিনে ভোট করার গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘পর্যবেক্ষকদের মান বাড়াতে হবে। তাদের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালুর দিনে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের স্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়নি। অনেকে পদ্মা সেতু দেখতে সড়কপথে রওনা দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন লঞ্চসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা প্রধান মাধ্যম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রোববার রাত ৮টায় গিয়ে যাত্রীদের কোলাহল দেখা যায়নি। অন্যান্য দিন এমন সময়ে ডেকে যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও লঞ্চ অনেকখানি ফাঁকাই দেখা যায়। কেবিনেরও বেশির ভাগ ভাড়া হয়নি।
টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, অধিকাংশ লঞ্চেই আশানুরূপ যাত্রী নেই। ডেকের ধারণক্ষমতার অর্ধেক ও পূর্ণ হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, লঞ্চ কী করে চলবে আর তাদের চাকরিইবা থাকবে কি না এই নিয়ে শঙ্কা জেগেছে এরই মধ্যে। তবে কেউ কেউ বলছেন, বরিশালের মানুষ নৌপথে শুয়ে-বসে যাত্রা করে অভ্যস্ত। তারা সড়কপথে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া যাবে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কিছুদিন এমন মন্দা থাকতে পারে লঞ্চে।
পারাবত লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শাহজালাল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা লঞ্চে যাওয়ার তারা লঞ্চেই যাবে। প্রথম দিন হয়তো সেতু দেখতে গিয়েছে। সেতুর উদ্বোধন হবে তাই অনেক লঞ্চ ও বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে আসতে পারেনি।’
‘লঞ্চে ৩৫০-৪০০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও আজ দেড় শতাধিক যাত্রী হয়েছে। ঢাকা থেকে সর্বশেষ ট্রিপেও আমরা তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম।’
রেডসন-৫, এমভি কুয়াকাটা-১ ও ২-এর সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম রাজু নিউজবাংলাকে জানান, ‘রমজানের ঈদের পর থেকেই যাত্রী কম। ইদানীং তো আরও কম। সেতু হয়েছে এখন যাত্রী কমই থাকবে।’
পটুয়াখালীগামী পূবালী-৫ লঞ্চের মালিক আলী আজগর বলেন, ‘আজ লঞ্চে যাত্রী নেই বললেই চলে। ডেক একদম ফাঁকা। কেবিন তো ভাড়াই হয়নি। ঘাটে লঞ্চ নেই তাই এই অবস্থা। লঞ্চ বেশি হলে যাত্রীসংকটে ভুগতে হতে পারে।’
এমভি পারাবত-১৮ লঞ্চের মালিক ও সমিতির মহাসচিব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যাত্রীর চাপ কমা-বাড়ার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এটা ঈদের সময় বলা যাবে। সেতু চলাচলের আজ প্রথম দিন। অনেকে শখের বসেও হয়তো দেখতে গেছেন।’
লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধাগুলো উল্লেখ করে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ পথে খাবার ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুধু লঞ্চেই রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাসগুলো সরাসরি গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো সময় খাবার বা পানি পাওয়া সম্ভব না। লঞ্চে যাত্রীরা এ সুবিধা পাবেন।’
সড়কপথে ভাড়া বেশি পড়বে বলেও যাত্রীরা লঞ্চ বেছে নেবেন বলে বিশ্বাস করেন এই লঞ্চ মালিক। বলেন, ‘লঞ্চ ভাড়া ৩৫০ টাকা আর সেখানে বাস ভাড়া পাঁচ শতাধিক৷ এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে লঞ্চেই যাত্রীরা দক্ষিণাঞ্চলে যাবেন।’
সুন্দরবন লঞ্চের মালিক ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়েছে এখন সবাই দৌড়ে হয়তো চলে যাবেন। কিন্তু সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে যাত্রীরা লঞ্চেই ফিরে আসবেন। কেননা লঞ্চে সড়কপথের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি।’
যাত্রী কম থাকলেও লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভাড়া ডেকে ৩৫০, ৩৭০; এমনকি কোনো কোনো লঞ্চে ৪০০ টাকাও রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর ডেমরার শান্তিবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে মো. আব্বাস আলী নামের এক নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার বেলা দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাকে মৃত বলে জানান।
নিহতের সহকর্মী সুলতান মিয়া বলেন, ‘আমরা ডেমরার শান্তিবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলায় রড বিছানোর কাজ করছিলাম। এ সময় অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে যান আব্বাস। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।’
তিনি জানান, আব্বাসের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানায়। তার বাবার নাম আবুল হোসেন। বর্তমানে ডেমরার শান্তিবাগ এলাকায় থাকতেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি ডেমরা থানাকে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর ওয়ারীতে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় এক নারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
শনিবার রাত পৌনে ১টার দিকে তিনি মারা যান।
ওই নারীর নাম রুপা বর্মণ। তার বয়স ৩০ বছর।
নিহতের স্বামী সুনীল চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘ওয়ারী এলাকায় গত ১৬ জুন রাস্তা পারাপারের সময় একটি ওষুধ কোম্পানির পিকআপ ভ্যান আমার স্ত্রীকে ধাক্কা দেয়। গুরুতর অবস্থায় একটি স্থানীয় হাসপাতাল, পরে কিডনির সমস্যা দেখা দিলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত পৌনে ১টায় সে মারা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বাড়ি পুরান ঢাকার ওয়ারীর দয়াগঞ্জ এলাকায়। আমাদের এক মেয়েসন্তান রয়েছে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘ওই নারীর মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত ছাত্রকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।
পুলিশ রোববার দুই দিনের রিমান্ড শেষে সাত আসামিকে আদালতে হাজির করে। আসামিদের পক্ষে জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নওশের আলী।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা ইসলাম উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আসামিদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান সাব্বির, অন্তর সরকার, নাজমুল হক, হাসিবুর রহমান, তুষার আহমেদ বাপ্পি, শফিকুল আলম খন্দকার ও ফরহাদ হোসেন শান্ত। পুলিশ গত বুধবার রাতে একটি মেসে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে তাদের।
এর আগে বৃহস্পতিবার সাত শিক্ষার্থীকে আদালতের মাধ্যমে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
মামলায় বলা হয়েছে, গত ১২ মে সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক নেতাকর্মী রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। তারা একটি লেগুনা গাড়ি ভাঙচুর করে। বাধা দিলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। যাত্রাবাড়ী থানার এসআই সাব্বির এ ঘটনায় মামলা করেন। সে মামলাতেই গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে জবির সাত শিক্ষার্থীকে।
আরও পড়ুন:রাজধানীতে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই কমেছে বলে দাবি করেছেন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। নগরীর পানি নিষ্কাষণের দায়িত্ব ওয়াসার হাত থেকে দুই সিটি করপোরেশনে ন্যস্ত হওয়ায় এই সুফল পাওয়া গেছে বলেও মনে করেন তিনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আশা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে হস্তান্তরিত হতে যাওয়া অচল স্লুইস গেটগুলো সচল করা যাবে। তখন জলাবদ্ধতা সমস্যার আরও উন্নতি হবে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এর আওতাভুক্ত এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন রেগুলেটর/আউটলেট স্ট্রাকচারগুলো হস্তান্তর করতে এক সমঝোতা স্মারক সই এসব কথা বলেন দুই জন।
মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার নিকট থেকে দুই সিটি করপোরেশনের কাছে খাল হস্তান্তরের পর সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খনন-পুনঃখনন ও সংস্কার করা হচ্ছে। অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়া অনেক জায়গা ও খাল উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর জলাবদ্ধতা অনেক কম হয়েছে। আমরা দেখেছি ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যেত। আজ কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই।’
২০২০ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার ২৬টি খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার হাত থেকে নিয়ে দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়।
ঢাকার চারপাশে নদ-নদীর যে সেতুগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে যেগুলো নৌযান চলাচলের উপযোগী নয়, সেগুলো ভেঙে ফেলার কথাও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘সেসব সেতু চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সেগুলো ভেঙে নৌ-যান চলাচল উপযোগী করে নির্মাণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নৌ-রুট চালু করতে পারলে ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক অনেকটাই কমে আসবে।’
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘ঢাকায় বৃষ্টির পানি সরে যাওয়ার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। আগে বৃষ্টির পানি খাল দিয়ে নদীতে চলে যেত কিন্তু এখন এসব খাল ও নদী প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন রাজধানীর খালগুলো সংস্কার ও সৌন্দয্যবর্ধনে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে, তা সত্যিই আশাব্যঞ্জক। সিটি কপোরেশনের কার্যকলাপ আমাদেরকে আমার আলো দেখাচ্ছে।’
স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘ঢাকা সিটির দুই মেয়র সমন্নয়ের মাধ্যমে ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ অনেক ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। আমি আশাবাদী যে, খুব শিগগির ঢাকা একটি বাসযোগ্য ও আধুনিক শহরে রূপান্তরিত হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র তাপস বলেন, ‘ওয়াসা থেকে আমরা যখন খালগুলো পেয়েছি, তখনই আমরা এই স্লুইস গেটগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য বলেছিলাম। আজকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
‘আমরা এরই মাঝে এই স্লুইচ গেটগুলো মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গেই এগুলো যথারীতি মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আমরা আগামীকাল থেকেই শুরু করব।’
প্রত্যেকটা স্লুইস গেট অচল রয়েছে বলেও জানান মেয়র।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার চার ধাপ আগানোর বিষয়টিও তুলে ধরেন মেয়র। বলেন, ‘আমরা সিরিয়া, করাচির নিচে ছিলাম, ত্রিপোলিরও নিচে ছিলাম।
‘বাসযোগ্যতার সামষ্টিক সূচকে ২০২১ সালে ঢাকা শহরের অর্জিত পয়েন্ট ছিল ৩৩.৫ নম্বর। এবছর আমরা ৩৯.২ নম্বর পেয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা চার ধাপ উন্নতি করেছি। আমরা আগে ছিলাম সর্বনিম্ন থেকে তিন নম্বরে, এখন আমরা সাত নম্বরে উন্নীত হয়েছি।’
মেয়র বলেন, ‘২০২১ সালে এই সূচক যখন প্রকাশিত হলো, তখন আমরা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হয়েছি। যদিওবা আগাগোড়া ঢাকা শহর দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থানে ছিল। কিন্তু ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা, জনগণের প্রত্যাশা যে মেয়রেরা দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্হে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। আজকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে, দৃঢ়তার সাথে এ বিষয়ে বলতে চাই যে, আমরা বদলে দিয়েছি। নগর বাসযোগ্যতার সূচকে উন্নতি করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কাজ করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’
আরেক বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াসা থেকে খালগুলো সিটি করপোরেশনে নিকট হস্তান্তরের ফলে আমরা নগরবাসীকে এর সুফল দিতে পেরেছি। খাল উদ্ধার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে খাল খনন ও বর্জ্য অপসারণ করে চলেছি। এর ফলে ঢাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকাংশে সমাধান হয়েছে।
‘নগরবাসীর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পয়ঃবর্জ্যের লাইন খালে পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যানজট নিরসনে খালগুলোকে রক্ষা করে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করে আমাদেরকে ন্যাচার-বেজড সলিউশন করতে হবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানও উপস্থিত ছিলেন।
এই সমঝোতার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ঢাকা সমন্বিত বন্যা প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৩৭টি রেগুলেটর/ড্রেনেজ আউটলেট স্ট্রাকচার এবং বুড়িগঙ্গা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত ১৮টি ড্রেনেজ আউটলেট ট্রাকচার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হলো।
আরও পড়ুন:৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
তাদের দাবি, ত্রুটিপূর্ণ আসন বিন্যাসের কারণে ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিতে যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েছে। তাই আরও বেশিসংখ্যক প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার দাবি জানান তারা।
রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মানববন্ধনে কর্মসূচির একজন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. শরীফুল বলেন, ‘৪৪তম বিসিএসে ত্রুটিপূর্ণ আসন বিন্যাসের কারণে যোগ্য প্রার্থীরা বাদ পড়েছে। ভালো নম্বর পেয়েও প্রিলিতে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। কিছু শিক্ষার্থী ছিল, যারা অসাধু উপায় অবলম্বন করে পাশাপাশি সিটে বসেছে, দেখে দেখে লিখে আমাদের চেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে এবং প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু অনিয়ম করে অনেকেই বেশি নম্বর পেয়েছে, তাই এবার কাট মার্কস অনেক বেশি। এ জন্য আরও বেশিসংখ্যক (অন্তত ১৫ হাজার) শিক্ষার্থীকে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ দেয়ার জন্য দাবি জানাই।’
গত ২২ জুন ৪৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে পিএসসি। এতে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৫ হাজার ৭০৮ জন।
কোন ক্যাডারে কত নিয়োগ
এই বিসিএসে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে শিক্ষা ক্যাডারে। এ ক্যাডারে ৭৭৬ জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া প্রশাসন ক্যাডারে ২৫০, পুলিশে ৫০, পররাষ্ট্রে ১০, আনসারে ১৪, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী মহাহিসাবরক্ষক (নিরীক্ষা ও হিসাব) পদে ৩০, সহকারী কর কমিশনার পদে ১১, সহকারী নিবন্ধক (সমবায়) পদে ৮ ও সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট/ট্রাফিক (রেলওয়ে) নিবন্ধক পদে ৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
একই সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক বা তথ্য কর্মকর্তা বা গবেষণা কর্মকর্তা পদে ১, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) পদে ৭, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক পদে ২, সহকারী পোস্টমাস্টার পদে ২৩, সহকারী নিয়ন্ত্রক (বাণিজ্য) পদে ৬, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (পরিবার পরিকল্পনা) পদে ২৭ এবং সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে ৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
প্রফেশনাল ক্যাডারে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী পদে ১, সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী পদে ৮, সহকারী সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী পদে ৬, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক পদে ১, সহকারী বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী পদে ২ (তথ্য) ও সহকারী বন সংরক্ষক পদে ৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
আরও পড়ুন:ব্যাংককে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে দেখে দেশে ফিরেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
সোমবার রওশন এরশাদও দেশে ফিরছেন। দেশে ফেরার সময় তাকে স্বাগত জানাতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘যারা দেখা করতে ইচ্ছুক তারা বিরোধীদলীয় নেতার অনুমতি নিয়ে এবং তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে যোগাযোগ করবেন।’
২৩ জুন থাইল্যান্ড যান জি এম কাদের। তার সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল সেখানে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের সঙ্গে দেখা করা ৷ গত বছরের ৫ নভেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক নিয়ে যাওয়া হয় রওশন এরশাদকে। তিনি থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ফুসফুসের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। সোমবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে বেগম রওশন এরশাদ দেশে ফিরবেন।
রওশন এরশাদকে দেখে রোববার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের বিমানে দেশে ফেরেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান।
এ সময় জি এম কাদের বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে।’
মন্তব্য