পার্বত্য চট্টগ্রামে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও বন কেটে কৃষিজমিতে রূপান্তর না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে বুধবার আরণ্যক ফাউন্ডেশনের এক সেমিনারে এ আহ্বান জানানো হয়।
সংস্থাটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ এবং প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশক আগেও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাদের প্রথাগত চাষাবাদ পদ্ধতি জুম চাষ ব্যাহত হচ্ছে। তরুণ সমাজকে জুম চাষে আগ্রহী না হয়ে ফলের বাগানে বেশি আগ্রহী হতে দেখা গেছে। জুম চাষ কমে যাওয়ায় মাটির উর্বরাশক্তিও কমে যাচ্ছে। ফলে স্থানীয়রা জুম চাষের নতুন জমির সন্ধানে ছুটছেন।’
তারা বন বিভাগের রিজার্ভ ফরেস্ট বা সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে বলে জানানো হয় সেমিনারে।
জরিপের উদাহরণ টেনে সেমিনারে বলা হয়, রাইংখ্যংছড়ির সংরক্ষিত বনের ফারুয়া নামক স্থানে প্রায় তিন হাজার পরিবার বসতি স্থাপন করেছে, যেখানে জনসংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি। সরকার সে স্থানকে ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে।
এভাবে বনের জমি কৃষিজমিতে রূপান্তর হতে থাকলে বনের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ বনের প্রতিবেশ সেবা সম্পূর্ণরূপে ব্যাহত হবে বলে মত প্রকাশ করেন বক্তারা।
সেমিনারে বলা হয়, উন্নয়নের জন্য সড়ক ও অন্যান্য স্থাপনা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিভিন্ন ফল ও কফি উৎপাদনের উৎকৃষ্ট স্থান মনে করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ফলের চারা বিতরণ করে তা লাগানোর জন্য উৎসাহিত করছে। স্থানীয়রা পাহাড়ের গাছপালা কেটে সেখানে দেশি-বিদেশি ফলের গাছ লাগাচ্ছে। লোভী ব্যবসায়ীরা ঝিরির পাথর উত্তোলন করে পানির প্রবাহ ও পানি ভূগর্ভে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে।
এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকায় বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা।
তাই প্রতিবেশ সেবা পুনরুদ্ধারে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এ জন্য ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রেস্টোরেশন বা স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততায় বন ও প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার প্রয়োজন বলে জানান বক্তারা।
আরণ্যক ফাউন্ডেশন এরই মধ্যে একটি স্টাডি হাতে নিয়েছে বলে জানানো হয়। সংরক্ষিত বনের বর্তমান অবস্থা জেনে সেখানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে কী ধরনের ব্যবস্থা নিলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরির কাজ করছে সংস্থাটি।
এ কাজটি করার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রোগ্রিন কর্মসূচি সহায়তা করছে।
আরণ্যক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রাকিবুল হাসান মুকুলের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরণ্যক ফাউন্ডেশনের ফরেস্ট ল্যান্ডস্কেপ রেস্টোরেশন স্পেশালিস্ট ড. মহা. আব্দুল কুদ্দুস।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বন সংরক্ষক ও ইনস্টিটিউশন অফ ফরেস্টার্স বাংলাদেশের সভাপতি ইশতিয়াক উদ্দিন আহমদ।
আরও উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ; এফএও বাংলাদেশের এনভায়রনমেন্ট, ফরেস্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ ইউনিটের টিম লিডার ড. ক্রিস্টেফার জনসন এবং বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সিনিয়র এনভায়রনমেন্টাল স্পেশালিস্ট ড. ইশতিয়াক সোবহান।
আরও পড়ুন:দেশের উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। অন্যান্য অঞ্চলেও ক্রমেই কমছে তাপমাত্রা। আগামী পাঁচ দিনে সারাদেশে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে আগামী পাঁচ দিন তাপমাত্রা কমতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।’
সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পেতে পারে। আর দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার বায়ুমান বর্তমান সময়ে মাঝে মাঝেই অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঘরের বাইরে গেলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সংবেদনশীল ব্যক্তিকে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বায়ুমানের তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। জনগণকে এ তথ্য দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করা হয়েছে।
ইটভাটা, শিল্প-কারখানার মালিক ও সাধারণ মানুষকে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দু’বার পানি ছিটানো, পুরনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করা।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের কিছু অংশে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর ফলে সুনামি সতর্কতা জারি করেছে দেশটির জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা (এনডব্লিউএস)।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার হামবোল্ট কাউন্টির ফার্নডেল শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উপকূলীয় অঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
প্রাথমিকভাবে ৬ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প হিসেবে জানালেও পরে এটিকে ৭.০ মাত্রায় উন্নীত করে ইউএসজিএস। সমূদ্রপৃষ্ঠের ৬০০ মিটার গভীরে কম্পনের উৎসস্থল চিহ্নিত করা হয়।
ভূমিকম্প আঘাত হানার কয়েক মিনিট পর এনডব্লিউএসের সুনামি সতর্কতার আওতায় পড়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তত ৫৩ লাখ মানুষ। এরপর ওই এলাকা ও সানফ্রান্সিসকো উপকূল থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ডেল নর্টে, হামবোল্ট ও মেন্ডোসিনো কাউন্টিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম।
উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্বল্প মাত্রার আফটারশক হয়েছে।
হামবোল্ট কাউন্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের পর ওই অঞ্চলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত হিমেল বাতাস, সন্ধ্যা থেকে সকাল জুড়ে ভারি শিশির কণা। দিনভর সূর্যের আলো থাকলেও তেমন তেজ নেই। আকাশে খণ্ড খণ্ড মেঘের মেলা।
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের প্রকৃতিতে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। ক্রমেই নামছে তাপমাত্রা। বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আবহাওয়া অধিদপ্তর হালকা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়ে বলছে, ডিসেম্বরে তাপমাত্রা এক অংকের ঘরে নেমে যাবে। ডিসেম্বর মাসে মৃদু ও মাঝারি মাত্রার একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
উত্তরের পাহাড় ছুঁয়ে বয়ে আসা হিমশীতল বাতাস আর ভারি কুয়াশার কারণে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় টানা পাঁচদিন ধরে তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রিতে বিরাজ করলেও শনিবার তা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। দিনের তাপমাত্রাও থাকছে ২৮/২৯ ডিগ্রির ঘরে।
তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। গ্রামগজ্ঞের হাটবাজারগুলোতে সন্ধার পর লোকসমাগম কমে যাচ্ছে। শহরের মানুষজনও তাড়াতাড়ি ঘরমুখী হচ্ছে। অপরদিকে পাড়া-মহল্লা এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে শীতের রকমারি পিঠা-পুলির দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে।
শনিবার ভোর সকাল ৬টায় জেলার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগার কার্যালয়। এর আগে চারদিন ধরে এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার কোল ঘেঁষা জনপদ পঞ্চগড়ে বরাবরই দেশের অন্যান্য জেলার আগে শীতের আগমন ঘটে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতের দাপট বেশি হয়ে থাকে। তবে নভেম্বর থেকেই শুরু হয় শীতের আমেজ। শীতকে কেন্দ্র করে পর্যটকের ভিড় বাড়তে থাকে তেঁতুলিয়ায়। এ সময় আকাশ কিছুটা পরিষ্কারর থাকায় দেখা মেলে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার বর্ণালী লাবণ্য।
এদিকে শীতের আগমনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়েছে লেপ-তোষক কারিগরদের। বিক্রি বেড়েছে মৌসুমি শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানে শীতের কাপড় তুলতে শুরু করেছেন।
জেলায় ভারি কোন শিল্প-কারখানা না থাকায় পাথর শ্রমিকসহ নদী-কেন্দ্রিক মানুষের কাজের ক্ষেত্র কমে গেছে। মহানন্দা নদীর হিম জলরাশি থেকে কষ্ট করে পাথর সংগ্রহ করছে শ্রমজীবী মানুষ।
তাপমাত্রার এই পরিবর্তনে জেলায় শীতজনিত রোগব্যাধি বাড়তে শুরু করেছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বাড়েছে।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিচালক রাজিউর রহমান জানান, শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি বাড়ছে। লোকবল, চিকিৎসক সংকট ও বেডের অভাবে শিশু রোগীদের মেঝে রেখেই চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। বিশেষ মেডিক্যাল টিম গঠন করে চিকিৎসা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করেছে। আজ (শনিবার) সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সামনের দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। আগামী ডিসেম্বর মাসে একাধিক মুদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মো. সাবেদ আলী জানান, শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সব মানুষের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। শীত মোকাবিলা করতে আগাম প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি উপজেলায় দু’হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত বরাদ্দসহ খাদ্য সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:দু’দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। রোববার সকাল ৬টা ও ৯টায় এখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবারও এখানে একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
শ্রীমঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র সহকারী মো. আনিসুর রহমান বলেন, ‘চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে শ্রীমঙ্গলে।’
তিনি বলেন, ‘নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই এখানে কিছুটা বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। দিনের বেলায় সূর্যের তাপে কিছুটা গরম অনুভব হলেও সন্ধ্যা নামলেই প্রচুর শীত অনুভূত হচ্ছে। সকালবেলা কুয়াশা পড়ছে। একইসঙ্গে বইছে হিমেল বাতাস।
‘তবে শিগগিরই জেঁকে বসবে শীত। আগামি তিন দিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। রাত ও দিনে তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।’
এদিকে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সর্দি-কাশি, অ্যাজমাসহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম ভূইয়া বলেন, ‘খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া চলতি আবহাওয়ার সময় শিশু ও বয়স্করা ঘর থেকে বের না হওয়া উত্তম। বিশেষ প্রয়োজনে বের হতে হলে অবশ্যই গরম কাপড় পরতে হবে।’
এছাড়া ধুলাবালি থেকে রেহাই পেতে মাস্ক ব্যবহারের ওপর জোর দেন তিনি। সর্দি, কাশি, জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি কম হলেও আউটডোরে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলমান জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ২৯ শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে তীব্র মতবিরোধের কারণে তা ১২তম দিনে গড়িয়েছে। সূত্র: বাসস
সম্মেলনের মূল আলোচনা বর্তমানে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে জলবায়ু অর্থায়নের জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ নিয়ে তীব্র বিতর্কের মাঝে থমকে আছে। শনিবারের মধ্যে একটি নতুন খসড়া প্রস্তাবনা আসার কথা থাকলেও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ও তা বণ্টন নিয়ে অবস্থান এখনও পরিষ্কার হয়নি। এটি সম্মেলনটির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার কপ২৯ সম্মেলনে উপস্থাপিত নতুন খসড়া প্রস্তাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়নের বার্ষিক লক্ষ্য ২৫০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। তবে এই লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বার্ষিক অর্থায়নের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় উন্নয়নশীল দেশগুলো।
বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই প্রস্তাবনাকে ‘অপ্রতুল’ ও ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘যারা ইতোমধ্যে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন, তাদের জন্য ঋণের বদলে অনুদান জরুরি। অন্যথায় তাদের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়বে।’
মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রতিনিধি টিনা স্টেগ এই খসড়াকে ‘লজ্জাজনক’ অভিহিত করে এই প্রস্তাবনাকে বৈশ্বিক জলবায়ু সুবিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেন।
জলবায়ু অর্থায়নে প্রস্তাবিত টেক্সটকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘এই খসড়া টেক্সট জলবায়ু সংকট মোকাবেলা করা দেশগুলোর জন্য অসম্মানজনক। আমাদের জন্য বাস্তব অর্থনৈতিক সহায়তা প্রয়োজন, যা আমাদের অভিযোজন এবং ক্ষয়-ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সবুজ অর্থনীতিতে ন্যায্য রূপান্তরে সহায়তা করবে।’
প্রস্তাবনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কথা বলা হলেও এর মধ্যে উন্নত দেশগুলোর জন্য বছরে ২৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাকি অর্থায়ন আসবে বেসরকারি বিনিয়োগ ও অন্যান্য উৎস থেকে। তবে আফ্রিকা, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) এবং জি৭৭+চায়না গোষ্ঠীর মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো এই প্রস্তাবকে অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে আরও বেশি, নির্দিষ্ট ও প্রাপ্তিযোগ্য সহায়তার দাবি করেছে।
বেসরকারি সংস্থা ও পরিবেশ আন্দোলনকারীরা খসড়া প্রস্তাবনা প্রত্যাখ্যান করতে বলছেন। তারা দাবি করছেন, যে কোনো আর্থিক সহায়তা প্রক্রিয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত।
শুক্রবার রাতে কিছু পরিবেশ আন্দোলনকারী সম্মেলনস্থলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখানে তারা স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপ (এসআইডিএস) দেশগুলোর জন্য আরও তহবিল দাবি করেন।
বেশ কিছু উন্নয়নশীল দেশ অভিযোজন ও লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের জন্য আরও অর্থায়নের জোর দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এই তহবিলগুলোকে ‘অত্যন্ত জরুরি’ উল্লেখ করে বলেন, ‘এই তহবিলগুলোকে যথাযথভাবে অনুদান হিসেবে দেয়া না হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো আর্থিক চাপে পড়বে এবং তাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ব্যাহত হবে।’
সম্মেলনে চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) নিজেদের সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চীন ঘোষণা করেছে, তারা বছরে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে যা তাদের জলবায়ু পরিকল্পনাগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হবে।
ইউএই আরও ১৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার নতুন তহবিলের ঘোষণা দিয়েছে, যা তাদের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে।
অতিরিক্ত দিনে গড়ানোর কারণে বাকুতে কপ২৯ সম্মেলন কেন্দ্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, যা সম্মেলনের কার্যক্রম ব্যাহত করছে।
আয়োজক দেশ আজারবাইজান পরিবহন ও অন্যান্য সেবা কমিয়ে দিয়েছে। ফলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন অধিবেশন ও আলোচনায় যোগ দিতে পারছেন না। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি ও আন্দোলনকারীরা এই অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তা দ্রুত নিরসনের দাবি জানিয়েছেন।
কপ২৯ সম্মেলনের চূড়ান্ত ফলাফল জলবায়ু অর্থনৈতিক সহায়তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, যা বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বাঁচা-মরার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের ন্যায্য হিস্যার জন্য লড়াই করছে এবং প্রত্যাশা করছে এ সম্মেলন থেকে তাদের জন্য একটি কার্যকর সমাধান বের হবে। তাই সবার চোখ এখন আজারবাইজানের দিকে, কপ২৯ কী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারবে এবং জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে সেটিই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন:অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নিজেদের মধ্যে পলিটিকাল ইস্যু থাকতে পারে, কিন্তু নদীর পানির হিস্যা নীতি ছিল। ভারতের কোনো যুক্তিই নেই আমাদের পানি না দেয়ার। এটা নিয়ে ভারতকে চাপ দিতে হবে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘উজানে যৌথ নদীর পানি প্রত্যাহার: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি, বাংলাদেশ।
ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভারতে যখন পানির চাপ থাকে তখন আমাদের এদিকে স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়। আবার ওখানে যখন পানির স্বল্পতা থাকে তখন গেটগুলো বন্ধ করে দেয়।
‘তারা ইচ্ছেমতো এটা করছে। আর সেজন্য আমরা পানি পাচ্ছি না। এতে করে আমাদের চাষাবাদে সমস্যা হচ্ছে। দিন দিন মরুভূমির মতো হয়ে হচ্ছে। গ্রাউন্ড ওয়াটার লেভেল নেমে যাচ্ছে। আমরা আর কত সহ্য করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যে কাজগুলো করছি সেগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং। এগুলোতে জনগণের সাপোর্ট প্রয়োজন। শুধু ফারাক্কা নয়; অভিন্ন আরও যে ৫৪টি নদী আছে, সেগুলো থেকে যাতে ন্যায্য হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি পায় সেজন্য আমরা কাজ করব।’
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির সমন্বয়ক মোস্তফা কামাল মজুমদারের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান, আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন আহমাদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য