ঈদুল আজহা উপলক্ষে জুনেই সারা দেশে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবার টিসিবির পণ্য পাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক পরিবার দুই লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি মসুর ডাল সাশ্রয়ী মূল্যে কিনতে পারবেন। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ উপকৃত হবে।’
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বুধবার তিনি এ তথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন এমপি মোকাব্বির খান। জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
একই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঢাকাসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। এই অধিদপ্তর প্রত্যেক মাসে সারা দেশে ৩০০-এর অধিক বাজার পরিদর্শনমূলক অভিযান পরিচালনা করছে।
‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখাসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে ৪২টি বাজার মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিন চারটি করে সপ্তাহে ২৮টি টিম ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়লে পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে টিসিবি ঢাকাসহ সারা দেশে তিন হাজার ডিলারের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ট্রাক সেলের মাধ্যমে খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করছে। বর্তমানে ট্রাক সেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তেল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি চলছে।
‘ভোক্তাপর্যায়ে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক পার্থক্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে পাকা রসিদের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো অনিয়ম পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
আলোয় উদ্ভাসিত গোটা পদ্মা সেতু। সারি সারি বৈদ্যুতিক বাতির আলো খরস্রোতার পদ্মার বুকে মিশে তৈরি করেছে মোহনীয় পরিবেশ। দূর থেকে মনে হয়, দীর্ঘ আলোকরেখা মেলবন্ধন ঘটিয়েছে পদ্মার দুটি তীরের।
প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতুর এই যৌবনচ্ছটা দেখতে রাতভর জেগে মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত। অসংখ্য মানুষ মোবাইল ফোনে ধারণ করছেন উদ্বোধনের ঠিক আগের রাতের ঐতিহাসিক দৃশ্য।
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। এরপর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্মোচন করবেন পদ্মার দুই তীরের বিস্ময় জাগানিয়া সংযোগ।
সেতুর উত্তর থানার বিপরীত দিকেই অনুষ্ঠিত হবে সুধী সমাবেশ। সেখানে সাড়ে তিন হাজার আমন্ত্রিত অতিথির সামনে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাঁকজমকপূর্ণ সেই উদ্বোধন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চূড়ান্ত। এখন শুধু মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষা।
সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মার দুই প্রান্তই সেজেছে বর্ণিল রূপে। চার দিক রঙিন করে তুলেছে ব্যানার-ফেস্টুন আর উৎসবের বর্ণিল আলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু এলাকায় আসবেন আকাশ পথে হেলিকপ্টারে। আর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক ধরে, যা এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত। সেই সড়কটিতেও করা হয়েছে বর্ণিল আলোকসজ্জা।
সেতু এলাকায় রয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে মূল সেতু পর্যন্ত নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে কড়া প্রহরা। পুরো এলাকাটিকে ঘিরে ফেলা হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া চার বন্ধু এসেছেন, সেতু উদ্বোধনের আগের আয়োজন দেখতে। তবে সুধী সমাবেশস্থলের নিরাপত্তাকর্মীদের বাধায় তারা আশপাশে থাকতে পারেননি। চলে এসেছেন শিমুলিয়া ফেরিঘাটে।
তাদের একজন অনিক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগেও এসেছি। কিন্তু ভোরে তো পদ্মা সেতু খুলে যাচ্ছে। এ এক অন্যরকম আনন্দ।’
পরিবারের অনুমতি মিললে নিজেই গাড়ি চালিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার ইচ্ছে অনিকের। বললেন, ‘বাসায় বলব। মায়ের অনুমতি পেলে পদ্মা সেতু পাড়ি দেব। ওই প্রান্তের এক্সপ্রেসওয়েটাও এখনও দেখা হয়নি।’
এই ক্ষণে সবচেয়ে বেশি উৎফুল্ল স্থানীয়রা। দিনের পর দিন তারা দেখেছেন পদ্মার বুকে অহংকারের স্থাপনা গড়ে ওঠার দৃশ্য, তবে উদ্বোধনের মুহূর্তটি যোগ করেছে একেবারেই ভিন্ন মাত্রা।
স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই আনন্দ বুঝবেন না। এইটা ক্যামনে বুঝাই আপনাদের। কত দিনের স্বপ্নপূরণ হইতাছে আপনেরা বুঝবেন না।’
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী আয়োজনের প্রস্তুতির ব্যস্ততার ফাঁকে শুক্রবার দুপুরে হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ির মহড়া। বেলা ২টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে গাড়িবহরটিকে মাওয়া প্রান্তের দিকে আসতে দেখা যায়। শনিবার সেতু উদ্বোধনের পর এ বহরে করেই টোল প্লাজায় টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে সড়কে, জলে, অন্তরীক্ষে থাকবে নানা আয়োজন।
পদ্মা নদী পারাপারের যাত্রীবাহী বেশ কিছু লঞ্চ নিয়ে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে শুক্রবার দুপুরে একটি নৌ মহড়া দেখেছেন স্থানীয়রা। এই মহড়ায় অংশ নেয়া লঞ্চগুলোতে উড়ছিল লাল সবুজের পতাকা। শনিবার যখন প্রধানমন্ত্রী সেতু পাড়ি দেবেন, তখন পদ্মার জলে দেখা যাবে এই মহড়া।
আকাশেও ছিল জাতীয় পতাকাশোভিত সারি সারি হেলিকপ্টার। উড়তে দেখা যায় যুদ্ধবিমান। সবই শনিবারের জমকালো উদ্বোধনী আয়োজনের প্রস্তুতি বলে জানা গেছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, শনিবার ৩১টি বিমান ও হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে ফ্লাইং ডিসপ্লের আয়োজন করেছে বিমানবাহিনী। যেখানে অংশ নেবে যুদ্ধ বিমান মিগ-২৯।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুধী সমাবেশ শেষে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন তিনি।
শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তও এখন আলোকচ্ছটায় বর্ণিল। এই প্রান্তে আট কিলোমিটার এলাকাজুড়ে করা হয়েছে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো এলাকা। জনসভাস্থল বাংলাবাজার ঘাট সংলগ্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
আরও পড়ুন:শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবার বাসিন্দা খাদিজা আক্তার। এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন ২০১৪ সালে পিনাক-৬ লঞ্চডুবির ভয়াবহ স্মৃতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর জাজিরা প্রান্তের বাংলাবাজার এলাকায় জনসভায় বক্তব্য দেবেন। সেই জনসভার মঞ্চ দেখতে শুক্রবার বিকেলে এসেছিলেন খাদিজা। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
খাদিজা বলেন, ‘যে দিন লঞ্চ ডোবে, সেই দিন আমি ওই লঞ্চে উঠতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু পেছন থেকে আমার ভাই ডাক দেয়ায় আমি লঞ্চে উঠতে পারিনি। পরের লঞ্চে উঠি। ওই লঞ্চটি (পিনাক-৬) ডুবে যাওয়ার সময় আমাদের লঞ্চটি পেছনেই ছিল। সেই দিন চোখের সামনে লঞ্চটি ডুবে যায়। হারিয়ে যায় কত মানুষ। ওই দৃশ্য মনে পড়লে এখনও ভয় লাগে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পদ্মা সেতু হয়ে গেল। দেখেই মনডা আনন্দে ভরে যায়। আমরা এখন সেতুর উপর দিয়ে যেতে পারব। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
শরীয়তপুর থেকে এক দিন আগেই সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছেন মো. আলী। তিনি বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন। এই সেতুর ফলে আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।’
ঝিনাইদহ থেকে এসেছেন মুক্তিযোদ্ধা নূর বক্স। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানে আসবেন, তাই আমি এসেছি। এই সেতু পেয়ে আমাদের আনন্দের সীমা নেই। আমি তিন দিন আগেই এসেছি। প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এখানে থাকব।’
তিনি বলেন, ‘এই সেতুর ফলে দেশ স্বাধীনের পর দ্বিতীয় বড় আনন্দ হচ্ছে আমাদের।’
স্থানীয় বাসিন্দা নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমরা কখনও ভাবিনি সেতু দেখে যেতে পারব। স্বপ্নের সেতু এখন সত্য (বাস্তব) হয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে আমরা নতুন জীবন পাইলাম।’
২০১৪ সালের ৪ আগস্ট বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটের মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে যায়। সেই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসাবে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নিখোঁজ হন ৬৪ জন, যাদের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া পদ্মায় বিভিন্ন সময় ট্রলার, স্পিডবোট ডুবে অনেক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/ অবাক তাকিয়ে রয়ঃ/ জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’
গল্পটা মাথা তুলে দাঁড়াবার, গল্পটা বিশ্বকে বিস্মিত করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয়ার। গল্পটা পদ্মা সেতুর। এই গল্প বাংলাদেশের আকাশস্পর্শী অহংকারের।
আর তাই প্রমত্তা পদ্মার উপর দিয়ে নির্মিত সেতুটি খুলে দেয়ার আগেই বিশ্বব্যাপী এটি পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশের ‘মর্যাদা ও সক্ষমতার প্রতীক’ হিসেবে। স্বপ্নের সেই সেতুর বহুল প্রতীক্ষিত উদ্বোধন আজ।
দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ এনে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে সেতু নির্মাণ, শুরু হয় রাজনৈতিক বাদানুবাদ। উত্তাল-অস্থির সেই সময়ে অনমনীয় দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর প্রায় এক দশক পর তার হাতেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের সেতুটি।
২৫ জুন শনিবার ঘড়ির কাঁটা সকাল ১০টা নির্দেশ করতেই উদ্বোধন হবে পদ্মা সেতু। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তবে এর একদিন পর যান চলাচল শুরু হবে পদ্মা সেতুতে।
জমকালো আয়োজন চূড়ান্ত
সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মার দুই পার এখন উচ্ছ্বাস মুখরিত। জমকালো আয়োজনে সেতু খুলে দেয়ার অপেক্ষায় সারা দেশ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সমাবেশে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ পড়েনি আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেতু নিয়ে নানা সমালোচনা করে আসা রাজনৈতিক দল বিএনপির সাত নেতাকেও।
বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার। বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ির ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের দিকে ছয়টি স্প্যান ও জাজিরা প্রান্তের দিকের ছয়টি স্প্যান সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে।
রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
স্বপ্নের শুরু
বিচ্ছিন্ন জনপদ হয়ে থাকা দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে রাজধানীর সঙ্গে যুক্ত করতে পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। তবে সেটি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান তৎপরতা শুরু হয় ২৫ বছর আগে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে জাপান সফরে যান তিনি। সে সময়ের ঘটনা স্মরণ করে বুধবার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা নদী এবং রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। জাপান সরকার দুটি নদীর ওপরই সেতু নির্মাণে রাজি হয়। যেহেতু পদ্মা অনেক খরস্রোতা, বিশাল নদী, তাই পদ্মা নদীতে সমীক্ষা শুরু করে।’
সমীক্ষা শেষে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তকে পদ্মা সেতু নির্মাণের উপযুক্ত স্থান হিসেবে নির্বাচন করে জাপান। সেই সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন শেখ হাসিনা। এর ঠিক ১১ দিন পর, অর্থাৎ ওই বছরের ১৫ জুলাই শেষ হয় আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ। পরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
পদ্মা সেতুকে মাওয়া প্রান্ত থেকে সরিয়ে আরিচায় নেয়ার চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াত জোট। তবে শেষ পর্যন্ত হয়নি পদ্মা সেতু।
আবারও ঘুরে দাঁড়ানো
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। আবারও শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণে তোড়জোর।
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ২০১১ সালের মধ্যে শেষ করা হয় সেতুর মূল নকশা প্রণয়নের কাজ। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল সেতুর দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিক এক বছর পর ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল সেতুতে রেলপথ যুক্ত করে প্রকল্প সংশোধন করা হয়।
তার ১৭ দিন পর অর্থাৎ ২৮ এপ্রিল সেতু নির্মাণে অর্থায়নের বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে সই করে সরকার। ওই বছরের ২৪ মে সই হয় আইডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয় ৬ জুন।
চোখ রাঙানোর সাহস
২০১২ সালের জুনে এসে পাল্টে যায় সব হিসাব-নিকাশ। ওই বছরের ২৯ জুন দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে এগিয়ে আসা দাতা সংস্থাগুলো বাতিল করে ঋণচুক্তি।
অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ। ঠিক পাঁচ দিন পর ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। শুরুতে সেই কথা অনেকে গ্রহণ করতে পারেননি। ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা।
পরে অবশ্য বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ কানাডার আদালতে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিন নামে দেশটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এই প্রতিষ্ঠানটিই পদ্মা সেতুর পরামর্শকের কাজ পাওয়ার কথা ছিল। তবে সেই মামলা টেকেনি, দেশটির একটি আদালতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দেয়।
স্বপ্ন হলো সত্যি
২০১৪ সালের ৭ জুলাই শুরু হয় বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটির নির্মাণকাজ। দেশের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় সেতুটি। তিন বছরের বেশি সময় পর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। পদ্মার দুটি তীরকে সংযুক্ত করতে প্রয়োজন হয় ৩ হাজার ২০০ টন ওজনের ৪১টি স্প্যান।
পদ্মা সেতুর পিলারে প্রতিটি স্প্যান বসানোর খবর জায়গা করে নেয় সংবাদপত্রের শিরোনামে। প্রমত্তা পদ্মায় সেতুটি যত দৃশ্যমান হয়েছে, বেড়েছে মানুষের আগ্রহ। সবশেষ ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যানটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মার বুকে রচিত হয় বাংলাদেশের গৌরবগাথা।
প্রকৃতির বাধা
খরস্রোতা পদ্মা জয়ের কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানো, রাজনৈতিক বাদানুবাদ পেরিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতেই সামনে আসে প্রমত্তা পদ্মাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চ্যালেঞ্জ।
২০১৫ সালের শেষ দিকে সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। তিনটি করে ছয়টি পাইলের নিচের দিকে কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছেন প্রকৌশলীরা। এর প্রধান কারণ নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর।
তখন ওই দুটি পিলারের ছয়টি পাইলের ওপরের কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে আরও ২১টি পিলারের পাইলিংয়ের সময় তলদেশে কাদামাটি পাওয়া যায়। নদীর তলদেশে পাথর না থাকায় পাইলিংয়ের কাজ ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। ফলে নকশা বদলে পাইলিংয়ের উপরিভাগে করতে হয়েছে স্ক্রিন গ্রাউটিং। স্ক্রিন গ্রাউটিং বা অতিমিহি সিমেন্টের স্তরের মাধ্যমে পাইলের উপরিভাগে ওজন বহনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়।
পিলার নির্মাণ করতে গিয়ে ৯৮ থেকে ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত পাইলিং করতে হয়েছে। পৃথিবীতে আর কোনো সেতু নির্মাণে এতটা গভীর পাইলিং করতে হয়নি। ফলে এটি একটি বিশ্ব রেকর্ড।
পদ্মা সেতুর পাইলগুলোও তিন মিটার ব্যাসার্ধের। অন্য কোনো সেতুর পাইলের ব্যাসার্ধও এত নয়। পদ্মা সেতুর প্রতিটি পাইল ৫০ মিলিমিটার পুরু স্টিলের পাইপে মোড়া।
আর এ কাজটি করার জন্যই জার্মানি থেকে আনা হয় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হাইড্রোলিক হ্যামার। জার্মানির মিউনিখে তৈরি ৩৮০ টন ওজনের হ্যামারটি সর্বোচ্চ শক্তি তিন হাজার কিলোজুল। এর সাহায্যে পিটিয়ে পাইলের স্টিলের পাইপগুলো নদীতে পোঁতা হয়।
তিন হাজার ২০০ টন ওজনের স্প্যানকে পদ্মার বুকে নিয়ে পিলারে বসানোর কাজটিও সহজ ছিল না। এ জন্য চীন থেকে নিয়ে আসা হয় বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শক্তির ভাসান ক্রেন ‘তিয়ান-ই’-কে। পদ্মা সেতুর নির্মাণের প্রতি মুহূর্তকে তাই বলা হয় চ্যালেঞ্জিং।
জনসাহসে মাথা উঁচু
দীর্ঘ এক দশক পর যখন সেতুটির সফল বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে, তখন তার পুরো কৃতিত্বটা দেশের জনগণকেই দিলেন সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ হাসিনা। দেশের মানুষের সাহসের কারণেই পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বলে বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। শুধু ধন্যবাদ নয়, আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। কারণ যেদিন আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব, অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু মানুষের শক্তিতে আমি বিশ্বাস করি।
‘মানুষের কাছ থেকে যে অভূতপূর্ব সাড়া আমি পেয়েছিলাম, এটাই কিন্তু আমার সাহস এবং শক্তি। সেটুকু আপনাদের জানিয়ে রাখি। তাই দেশের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের সহযোগিতার, তাদের সাহসে, এই জনমানুষের সাহসে আজ পদ্মা সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
পদ্মা সেতুর ব্যয়
২০১১ সালে সেতুর দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে সংশোধিত ডিপিপিতে পদ্মা সেতুর ব্যয় ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।
প্রথম ডিপিপিতে সেতুর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে তিনটির নিচ দিয়ে নৌ চলাচলের ব্যবস্থা রেখে নকশা করা হয়। পদ্মার স্রোতের কথা ভেবে পরে ৩৭টি স্প্যানের নিচ দিয়েও নৌযান চলাচলের সুযোগ রাখার বিষয়টি যুক্ত করা হয়। যুক্ত হয় রেল সংযোগ।
কংক্রিটের বদলে ইস্পাত বা স্টিলের অবকাঠামোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেতু নির্মাণে পাইলিংয়ের ক্ষেত্রেও বাড়তি গভীরতা ধরা হয়। বেড়ে যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ব্যয়ও।
২০১৬ সালে যখন ব্যয় বাড়ানো হয়, তখন মূল সেতু নির্মাণ, নদীশাসনসহ সব কাজের ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়ে যায়। এর মধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ৯ টাকা কমে যায়। ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার নদীশাসনের কাজ নতুন করে যুক্ত হয়। মূল সেতু, নদীশাসন ও সংযোগ সড়কে যে পরিমাণ অর্থে ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল, তা থেকে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যায়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয় জমি অধিগ্রহণের কারণে।
সবমিলিয়ে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়ে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
প্রধানমন্ত্রী নিজে জানিয়েছেন, এর মধ্যে মূল সেতু তৈরিতে খরচ হয়েছে, ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই টাকার মধ্যে আবার ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাসলাইনের জন্য খরচ হয়েছে এক হাজার কোটি টাকা।
এছাড়া নদী শাসনে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, অ্যাপ্রোচ সড়কে এক হাজার ৯০৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা, পুনর্বাসনে এক হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, ভূমি অধিগ্রহণে ২ হাজার ৬৯৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন ২১ জুন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু হওয়ায় ভীষণ খুশি ৬৫ বছর বয়সী নূর মোহাম্মদ শেখ। তবে যৌবনে এই পদ্মা সেতু না পাওয়ার আক্ষেপ রয়েছে মাদারীপুর শিবচরের এই বাসিন্দার। তার আক্ষেপ, সেতুটা আরও আগে হলে অনেক সহজ হতো তার জীবন, কষ্ট কমে যেতো।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশস্থল দেখতে আসেন নূর মোহাম্মদ শেখ। সেখানেই কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গে।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নূর মোহাম্মদ শেখ বলেন, ‘এই সেতুটা আরও আগে কেনো হলো না, যৌবন বয়সটা থাকতে হইলে জীবনডা আরও সুন্দর হইতো, ব্যবসা-বাণিজ্য কইরা খাইতে পারতাম।’
পেশায় কৃষক নূর মোহাম্মদ। তার দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এক ছেলে ঢাকায় চাকরি করেন, আরেক ছেলে বাড়িতে থাকেন, করেন কৃষিকাজ। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।
সংসারে স্বচ্ছলতা আছে। তবে একটা সময় প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছেলেরা বড় হওয়ার পর নূর মোহাম্মদের পরিশ্রম কমেছে।
শেষ বয়সে এসে হলেও সেতুর দেখা পেয়েছেন। শেষ হয়েছে দীর্ঘ অপেক্ষার। ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
সেতু হওয়ায় কারণে প্রায় এক যুগের ব্যবসা দৃশ্যত হারাতে চলেছেন বাংলাবাজার ঘাট সভাস্থল সংলগ্ন দোকানি আমজাদ বেপারি।
ফেরি আগের মতো আর চলবে না, তাই ক্রেতা কমবে। তারওপর সরকারি জমিতে দোকান হওয়ায়, যেকোনো সময় সরাতে হতে পারে অন্যত্র। দোকান সরালেও ব্যবসা ছাড়বেন না বলে জানান তিনি।
নিউজবাংলাকে আমজাদ বেপারি বলেন, ‘একটা জিনিস ফরিদপুর থেইক্কা কিনতে লাগে ৯০ টাকা, ঢাকাত্তে এইডা আনমু ৮০ টাকায়। একজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার করে বাসে উইঠা ঢাকা যামু, মাল আইনে বেইচা টাকা ফিরত দিয়া দিমু। লাভ আগের চেয়ে বেশিই হইব।’
সেতু চালুর পর নিজেদের ভাগ্য নতুনভাবে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন আমজাদ বেপারির মতো লাখো মানুষ। রাত পোহালেই স্বপ্নের সেই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে।
দুই পারেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে পুরো সেতু, দুই পাড়ের জনসভাস্থল ও তৎসংলগ্ন এলাকা।
সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মার দুই পার এখন উচ্ছ্বাস-মুখরিত। জমকালো আয়োজনে সেতু খুলে দেয়ার অপেক্ষায় সারা দেশ।
শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজন করা সে সমাবেশে।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ পড়েনি আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেতু নিয়ে নানা সমালোচনা করে আসা রাজনৈতিক দল বিএনপির সাত নেতাকেও।
১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার। ১১ টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ির ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের দিকে ছয়টি স্প্যান ও জাজিরা প্রান্তের দিকের ছয়টি স্প্যান সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে।
রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমত্ত পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনকে বাংলাদেশের জন্য এক গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক দিন হিসাবে অভিহিত করেছেন।
তিনি শনিবার এই সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে শুক্রবার দেয়া এক বাণীতে বলেন, ‘দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও সমর্থনের ফলেই আজকে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও গণমানুষের আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।’
প্রমত্ত পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী চ্যালেঞ্জিং ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে নিয়োজিত সর্বস্তরের দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, পরামর্শক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, নিরাপত্তা তদারকিতে নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও নির্মাণ শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের অবদান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য অভিবাদন জানান।
সেতুর দুই প্রান্তের জনগণ জমি প্রদানের মাধ্যমে এবং নানাভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এ মাহেন্দ্রক্ষণে দেশবাসীকে তিনি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। খবর বাসসের
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে। কানাডা আদালত বিশ্বব্যাংকের উত্থাপিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে রায় দেয়। সকল দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় ।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিলে জনগণের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পাই। জনতার শক্তি হৃদয়ে ধারণ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আজ আমরা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দুর্নীতিমুক্ত বীরের জাতি হিসেবে বাঙালি নিজেদের বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত- ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’- এই চিরপ্রেরণার বাণীতে উজ্জীবিত হয়ে আমরা প্রমাণ করেছি আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। বিপুল সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের বহুমুখী উন্নয়নে এই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পে অগ্রসর এ অঞ্চলের উন্নয়নে নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। টুঙ্গীপাড়াস্থ জাতির পিতার সমাধিসৌধ, সুন্দরবন এবং কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ নানা প্রত্মতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থানসমূহে পর্যটকের আগমন বৃদ্ধি পাবে। নদী বিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সম্পদ আহরণ এবং দেশব্যাপী দ্রুত বাজারজাতকরণে পদ্মা সেতু বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত পায়রা সমুদ্রবন্দর, বৃহৎ নদীসমূহের উপর নির্মিত সেতু, রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ মংলা সমুদ্রবন্দরের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহারে পদ্মা সেতু যোগাযোগ ব্যবস্থায় সূতিকাগার হিসেবে কাজ করবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই অঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ বেনাপোল, ভোমরা, দর্শনা প্রভৃতি স্থলবন্দরের মাধ্যমে আন্তদেশীয় বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। এ সেতুর মাধ্যমে দুই প্রান্তে বিদ্যুৎ, গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবারসহ পরিষেবাসমূহের সংযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদন ১.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিবছর ০.৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু অনন্য অবদান রাখবে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন বিশ্ব দরবারে দেশ ও জনগণকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে।
স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন উপলক্ষে শুক্রবার দেয়া এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে। খবর বাসসের
বাংলাদেশের আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ উত্তাল পদ্মার বুকে জাতির গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি বলেন, এসব অর্জনের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সাহসিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ সেতুর বাস্তবায়ন সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি ও দক্ষতার নিদর্শন হিসেবে বিশ্বদরবারে আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছে।’
আবদুল হামিদ বলেন, পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফল। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি পদ্মা সেতুর মতো দেশের সকল মেগা প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন কামনা করেন।
আরও পড়ুন:১৯৮৮ সাল থেকে হাওর এলাকায় পানি ধারণক্ষমতা ৮৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় এবার সিলেট এলাকায় বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে উঠে এসেছে একটি গবেষণা প্রতিবেদনে।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আয়োজনে এ তথ্য জানানো হয়।
‘হাওর এলাকার ভূমি ব্যবহারের কয়েক দশকের পরিবর্তন ও এবারের বন্যার ব্যাপকতা’ বিষয়ে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয় এতে। ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট- আইপিডি ছিল এর আয়োজক।
সংলাপে গবেষণার সারাংশ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।
তিনি বলেন, ‘পূর্ববর্তী বছরগুলো থেকে বর্তমানে বন্যার ভয়াবহতা আরও বেশি হওয়ার কারণ অতিবৃষ্টি ও নদী-নালার নাব্য সংকটের পাশাপাশি জলাভূমির ভরাট করে বাড়িঘর ও বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ।’
তিনি জানান, হাওর এলাকার জলাভূমি ১৯৮৮ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ কমে যায় এবং ২০০৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরও ৩৭ শতাংশ কমে গিয়ে এখন প্রায় ১৩ শতাংশ এলাকা অবশিষ্ট আছে।
এর বিপরীতে হাওর এলাকায় নির্মিত এলাকা (বিল্ট আপ এরিয়া) ২০০৬ সালে ২ দশমিক ২ গুণ ও ২০২০ সালে ৩ দশমিক ৮ গুণ বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি হাওর এলাকায় পতিত জমি, কৃষিজমি ও বনজ এলাকাও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
তিনি বলেন, ‘হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মধ্যে ১৯৮৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে শুষ্ক মৌসুমের জলাভূমির পরিমাণ সিলেটে ৭৫ শতাংশ, সুনামগঞ্জে প্রায় ৮০, নেত্রকোণায় প্রায় ৯০, কিশোরগঞ্জে প্রায় ৮৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় ৭০, হবিগঞ্জে প্রায় ৯০ ও মৌলভীবাজারে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে।’
পরিকল্পনাবিদ ইনজামাম উল হক রিফাত বলেন, ‘হাওর এলাকার জলাভূমির আশঙ্কাজনক পরিবর্তন এখনই রোধ না করা গেলে এই এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বন্যার আশঙ্কা আরও ব্যাপকতর হবে।’
আইপিডির পরিচালক ও পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের বন্যার জন্য দায়ী আন্তদেশীয় নদীর অতিরিক্ত পানির প্রবল চাপ, পলি জমাটের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা সংকট ও নদী-জলাশয়ের পানি ধারণক্ষমতা কমে যাওয়া। আমাদের উৎকণ্ঠার জায়গা, হাওর এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম টেকসই হচ্ছে কি না।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরহাদুর রেজা বলেন, ‘এবারের বন্যার কারণ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সর্বোচ্চ কতটুকু বৃষ্টি হতে পারে তার একটা সম্ভাব্য প্রজেকশন ও হাওর এলাকার পানি ধারণ করার সক্ষমতা জানা থাকলে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগ মোকাবিলা করা আমাদের জন্য সহজতর হবে।
‘হাওর এরিয়ার জন্য সেখানে কতটুকু রোড দরকার, ডিমান্ড অ্যানালাইসিস এবং ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেটেড পদ্ধতিতে মাস্টার প্ল্যান তৈরির করে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি সেখানকার জীবন-মানের উন্নয়ন সম্ভব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য