দায়িত্ব নেয়ার তিন মাসে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এমন কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যা এর আগের কমিশন করে দেখাতে পারেনি।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠার পর ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয়া, অন্য একটি এলাকায় নৌকা মার্কার এক প্রার্থীর ভোট ছিনিয়ে নেয়ার বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর সেখানে নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেই প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ এসেছে।
আওয়ামী লীগের এই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নির্বাচন কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই নিয়েছে। কেউ অভিযোগ করার পর তদন্তের ওপর নির্ভর করেনি কমিশন।
একটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে একজনকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠার পর সেখানে নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয়ার দুই দিন পর দায়িত্ব পাওয়া নির্বাচন কমিশন এখনও ‘ভোটের খাতা’ খুলতে পারেনি। নতুন এই কমিশনের প্রথম পরীক্ষার ফলাফল দেখতে ভোটারদের অপেক্ষা করতে হবে চলতি মাসের মাঝামাঝি ১৫ জুন পর্যন্ত। সেদিন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এবং বেশ কিছু পৌরসভা ও ইউনিয়নে ভোটের তারিখ রয়েছে।
এই নির্বাচনের ভোটের প্রচার চলাকালে এখন পর্যন্ত সহিংসতার কোনো তথ্য আসেনি গণমাধ্যমে। ভোটে প্রচারে বাধার যে অভিযোগগুলো গত কয়েক বছরে বড় হয়ে এসেছিল, সেগুলোও শোনা যায়নি সেভাবে।
যেসব এলাকায় ভোট হতে যাচ্ছে, তার মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন কমিশন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেটি এর আগের কমিশন অগ্রাহ্য করেছিল। ভোটকেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিত কারও উপস্থিতি যেন না থাকে, সেটি পর্যবেক্ষণে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ এসেছে।
আগের নির্বাচন কমিশনগুলো যখন অভিযোগ না পেলে কিছু করার নেই বলে ব্যাখ্যা দিত, সেখানে বর্তমান কমিশন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে নিজ উদ্যোগে তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক, সাবেক নির্বাচন কমিশনার, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতারা কমিশনের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিরোধী দল বিএনপি কমিশনের এসব উদ্যোগকে লোকদেখানো বলে সন্দেহ প্রকাশ করছে। অন্যদিকে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ‘দু-একটি নির্বাচন দেখে’ প্রতিক্রিয়া জানানোর পক্ষে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় আওয়ামী লীগের তিনজন সংসদ সদস্যকে সাবধানও করে দিয়েছে কমিশন। এরা হলেন শরীয়তপুর-১ আসনের ইকবাল হাসান, ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকী ও ঝিনাইদহ-১ মো. আব্দুল হাই।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
‘তারা জনগণের বিশ্বাস আনতে পারবে’
আউয়াল কমিশনের বর্তমান পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন ফেমার প্রধান মুনিরা খান। তার প্রত্যাশা, এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন উপহার দেবে বর্তমান কমিশন।
নিউজবাংলাকে মুনিরা বলেন, ‘প্রাথমিক কাজে স্বচ্ছতা আনার মাধ্যমে তারা জনগণের বিশ্বাস আনতে পারবে।’
তবে ভালো কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রথম দুই-একটা নির্বাচন ভালো হয়৷ শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে না। নতুন কমিশন এভাবে কমিটমেন্ট রেখে কাজ করতে পারলে জনগণ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী অংশগ্রহণে উৎসাহী হবে, ভোট দিতে উদ্ধুদ্ধ হবে।’
বিদায়ী সাবেক নির্বাচনের কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘আমি পজিটিভভাবেই দেখছি।’
এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে ইসি জনগণের আস্থা ফেরাতে পারবে বলে মনে করেন কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কমিশন নিজে কখনও তো অনাস্থার জায়গা তৈরি করে না। জনগণের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি একেকজনের একেক রকম। যে যেভাবে নেয়।’
‘রাঘব বোয়াল ধরতে হবে’
সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের দৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনের কিছু কাজ প্রশংসনীয়। তবে তার মতে অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে ভবিষ্যতে।
আওয়ামী লীগ নেতার প্রার্থিতা বাতিলসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ আছে আমরাও এর প্রশংসা করি। তবে এগুলো চুনোপুটি। রাঘব বোয়ালের ক্ষেত্রে পারবে কি না।’
তিনি বলেন, ‘তাদের সাহসী ভূমিকা নিতে হবে, বলিষ্ঠতা প্রদর্শন করতে হবে৷ তাহলে তারা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে।’
কমিশনের কোথায় আরও বলিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ আছে- এই প্রশ্নে বদিউল বলেন, ‘আরপিও অনুযায়ী, দলের অঙ্গ সংগঠন থাকতে পারবে না, বিদেশি শাখা থাকতে পারবে না৷ এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। হলফনামার তথ্য যাচাই করছে না।’
কমিশনের বেশ কিছু পদক্ষেপ অর্থহীন বলে মনে করেন এই এনজিও কর্মী। কমিশন যে সংলাপগুলো করছে, সেগুলো পর্দার অন্তরালে সংলাপ করার পরামর্শ দেন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নিয়ে কমিশনের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন আছে সুজন সম্পাদকের। তিনি বলেন, 'এই বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তবে দুই কমিশনার তো আগেই রায় দিয়ে দিয়েছেন।’
তিন দলের তিন মত
নির্বাচন কমিশনের এখন পর্যন্ত যত পদক্ষেপ দৃশ্যত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গেছে। তবে ক্ষমতাসীন দল এই কমিশনের প্রশংসা করছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝিনাইদহে একটি পৌরসভার নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এর ব্যাখ্যা দিয়েছে। আমার মনে হয়েছে, এই ইসি নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করছে। এতটুকু বলতে পারি, অন্তত করার চেষ্টা করছে।’
কমিশন দায়িত্ব নেয়ার আগে থেকেই তাদের বিরোধিতা করছে বিএনপি। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির আগের দুই সংলাপে অংশ নিলেও এবার তাতে যোগ দেয়নি দলটি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো ভোটে না যাওয়ার কথাও বলছে তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ধারণা, এসব কমিশনের কৌশল। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুই-চারটি ঘটনা দিয়ে বাকি সব ঢাকার চেষ্টা। জনগণও ঠুলি পড়ে বসে নাই। তারা সব দেখতে পায়। জনগণ সরকার গঠন করাতে পারে, জনগণই আবার নামাতে পারে। তাই বলি, ট্রিরিক্স করে লাভ হবে না।‘
বিএনপির মতোই জাতীয় পার্টিও নির্বাচন নিয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারছে না- এমন বক্তব্য বারবার দিয়ে আসছেন দলটির নেতারা।
বর্তমান কমিশনের পদক্ষেপের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় হাজার হাজার শত শত। একটা-দুইটায় কী করল, সেটা কোনো ব্যাপার হতে পারে না। চট্টগ্রামে যে ভোট স্থগিত করেছে, সেটা চক্ষু লজ্জার কারণে। এসব কোনো ঘটনা না। এগুলোর সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো তুলনা হতে পারে না। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে দুই-একটা নির্বাচন হোক, তারপর বোঝা যাবে যে, কী হবে।’
কঠোর অবস্থান থেকে সরবে না নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসার সুযোগ নাই।’
তিনি বলেন, কেবল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নয়, জাতীয় নির্বাচনে এমন কঠিন পদক্ষেপ থাকবে। সুষ্ঠু ভোট আয়োজনে আইন অনুযায়ী কমিশন যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন:শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, ‘পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ একটি অমিত সম্ভাবনাময় দেশ। ষড়ঋতুর এ দেশকে প্রকৃতি যেমন দুহাত ভরে তার বৈচিত্র্যময় সম্পদ ঢেলে দিয়েছে, তেমনি এদেশের মেহনতি মানুষ তাদের আপন শৈল্পিক কারুকার্যের মাধ্যমে অনন্যসাধারণ সামগ্রী প্রস্তুত করে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম ও খ্যাতি বৃদ্ধি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘মাটি, বায়ু, পানি, পরিবেশ, কারিগরদের দক্ষতা প্রভৃতি স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণে ছোট এ ভূখণ্ডের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পণ্যকে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এর গুণগত মান ও টেকসই সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে বাংলাদেশ ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির মাল্টিপারপাস হলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) আয়োজিত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা ও নরসিংদীর অমৃত সাগর কলাসহ ১৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের নিবন্ধন সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ডিপিডিটির মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা দেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা, ফরিন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত মাশফী বিনতে শামস ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জিআই পণ্যের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এখনই কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশের বাংলাদেশ মিশনসমূহ, দেশের সকল আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্রীয়ভাবে এসব পণ্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মেলায় জিআই পণ্যসমূহ প্রদর্শন করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডিপিডিটি, বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব পণ্যের উন্নয়ন ও প্রসারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে।’
নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কোনো খালি বাস্কেট নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ ভরা বাস্কেট। আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই, শুধু প্রয়োজন এর সদ্ব্যবহারের। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা, কারিগরি সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব সম্পদ ও পণ্যের প্রচার-প্রসার ঘটাতে হবে।’
জ্যেষ্ঠ শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জিআই হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে এমন ৫০০টি পণ্যের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। একটু দেরিতে হলেও আমরা এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় আমরা ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন প্রণয়ন করি এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জিআই পণ্যকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং একই সঙ্গে এর পেটেন্ট দিতে হবে। জিআই পণ্যের প্রচার-প্রসারে বিভিন্ন উৎসব, পালাপার্বণ ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এসব পণ্যকে আমরা উপহার হিসেবে প্রদান করতে পারি। তাছাড়া এসব পণ্য সম্পর্কে টিভিসি (বিজ্ঞাপন), ডকুমেন্টারি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।’
অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল শাড়িসহ বাংলাদেশের মোট ১৪টি ঐতিহ্যবাহী পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সনদ প্রদান করা হয়।
সেগুলো হলো যথাক্রমে- গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম, কুমিল্লার রসমালাই, কুষ্টিয়ার তিলের খাজা, বাংলাদেশের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মণ্ডা, যশোরের খেজুরের গুড়, রাজশাহীর মিষ্টি পান এবং জামালপুরের নকশিকাঁথা।
এ নিয়ে ডিপিডিটি কর্তৃক জিআই সনদপ্রাপ্ত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩১টিতে।
আরও পড়ুন:প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচন ব্যর্থ হলে ৭ জানুয়ারি (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন) যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি ব্যর্থ হবে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘দেশের নির্বাচনে আবেগ-অনুভূতির জন্য কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এই নির্বাচনে ব্যর্থ হলে বিগত সংসদ নির্বাচনে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তা ক্ষুণ্ন হতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।’
সভায় দেশের সব জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি যুদ্ধকে ‘না’ বলতে বৃহস্পতিবার সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
থাইল্যান্ডে জাতিসংঘের কনফারেন্স সেন্টারে (ইউএনসিসি) এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসক্যাপ) ৮০তম অধিবেশনে দেয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান বলে বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সব ধরনের আগ্রাসন ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে এবং যুদ্ধকে ‘না’ বলতে হবে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ মহাসচিবের ‘শান্তির জন্য নতুন এজেন্ডা’র পক্ষে।”
ভাষণে সব ধরনের যুদ্ধ, আগ্রাসন ও নৃশংসতা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুধু হতাহতের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, বিশেষত নারী ও শিশুরা এর বলি হচ্ছে। অথচ আলোচনায় আসতে পারে শান্তি।
তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনি যুদ্ধ ও গণহত্যা চলছে। এটি অবশ্যই বন্ধ হতে হবে। যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার উদ্যোগ ও শাসনামলে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’র কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আঞ্চলিক বিরোধ ও উত্তেজনা নিষ্পত্তি করতে হবে।’
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে চলমান দাবদাহ আরও ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, ‘দেশের ওপর চলমান তাপপ্রবাহ আজ (২৫ এপ্রিল, ২০২৪) হতে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।’
৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস
আবহাওয়া অধিদপ্তর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ নিয়ে জানায়, খুলনা বিভাগসহ দিনাজপুর, নীলফামারী, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার বিষয়ে পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পূর্তিতে বুধবার প্রাণ হারানো শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন হতাহত শ্রমিক, তাদের পরিবার, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ সদস্যরা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ঘটে যাওয়া ওই দুর্ঘটনায় পাঁচটি পোশাক কারখানার এক হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান। পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সহস্রাধিক শ্রমিক।
ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শ্রমিক ও সংগঠনগুলোর সদস্যরা।
সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বুধবার সকাল থেকে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয়।
একে একে নিহত শ্রমিকের পরিবার, আহত শ্রমিক, পুলিশ ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ফুলের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়ে ওঠে বেদি। ওই সময় নিহত শ্রমিকদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ, র্যালি ও মানববন্ধন করা হয়।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারানো শ্রমিকদের অনেক স্বজন প্রিয়জনের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
সমাবেশে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ১১ বছর পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়ে তা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান বক্তারা।
একই সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডেরও দাবি জানান তারা।
আরও পড়ুন:দেশজুড়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির জনজীবন। বিদ্যুতের লোডশেডিং সেই অস্বস্তি-অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়লেও সারাদেশে লোডশেডিং কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আগের তুলনায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশের (পিজিসিবি) ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) তথ্যের উল্লেখ করে বার্তা সংস্থা ইউএনবি জানায়, বুধবার (দেশে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে। আগের দিন মঙ্গলবার তা ছিল ১ হাজার ৪৯ মেগাওয়াট।
এনএলডিসির তথ্যে আরও দেখা যায়, মঙ্গলবার রাত ১টায় লোডশেডিং ছিল ১ হাজার ৪৬৮ মেগাওয়াট। তবে বুধবার দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ঘাটতির মাত্রা কমে সকাল ৭টায় ৫৪২ মেগাওয়াটে নেমে আসে। আবার বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। বিকেল ৩টায় লোডশেডিং বেড়ে দাঁড়ায় ৮২১ মেগাওয়াট।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও পিজিসিবির তথ্য বলছে, ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে বুধবার বিকেল ৫টায় দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। সে হিসাবে সন্ধ্যার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৭২৭ মেগাওয়াট।
ওদিকে বুধবার সন্ধ্যায় চাহিদার পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং সরবরাহের পূর্বাভাস ছিল ১৬ হাজার ৫৩০ মেগাওয়াট।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে লোডশেডিং এড়াতে গিয়ে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে।
বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া সংবাদে জানা যায়, এই গ্রীষ্মে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে লোডশেডিংয়ের মাত্রা গ্রামীণ মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোবাংলার সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ৩ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে দেশে গ্যাস উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ৩ হাজার ৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট।
বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিশেষ করে যেগুলো প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে, সেগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ২ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯ মিলিয়ন ঘটফুট গ্যাস সরবরাহ পেয়েছে।
আরও পড়ুন:সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিন বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার তারা শপ্রথ গ্রহণ করবেন।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারককে তাদের শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করেছেন।
আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত বিচারপতিগণ হলেন- বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি মো শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।
বৃহস্পতিবার শপথ
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার বলা হয়, আপিল বিভাগে নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণ করবেন। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি তাদেরকে শপথ পাঠ করাবেন।
মন্তব্য