নদীর নাম গড়াই। একদিকে রাজবাড়ী জেলা, অন্যদিকে মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রাম। তবে এ পারে মহেশপুর গ্রামেও রাজবাড়ী জেলার কিছু অংশ আছে। নদীভাঙনের ফলে এমন হয়েছে।
এই ভৌগোলিক খামখেয়ালি সুযোগ করে দিয়েছে একদল বিকাশ প্রতারক চক্রকে। নদীর পারে ধান ও পাট ক্ষেত আর উঁচু বালুর ঢিবিতে তারা গড়ে তুলেছে তাদের ‘অফিস’।
সারি সারি মোবাইল নিয়ে তারা বসে পড়ছে এসব ‘অফিসে’। কল করছে দেশের নানা প্রান্তে। ফাঁদে ফেলছে বিকাশ কিংবা আর্থিক সেবা দেয়া কোনো প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের।
‘আপনার মোবাইলে টাকা গেছে’ অথবা ‘আপনার পিন কোডটি আমাদের বলুন’– এসব বলে তারা সূচনা করছে ডিজিটাল ধাপ্পাবাজির। এ অঞ্চলের শতাধিক যুবক জড়িয়ে পড়েছে এসব প্রতারণা চক্রে। গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব প্রতারকচক্র অল্পদিনেই পাকা বাড়িঘরসহ বিলাসবহল গাড়ির মালিক হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মাগুরা জেলা সদর থেকে শ্রীপুর উপজেলা ১৪ কিলোমিটার। আর শ্রীপুর থেকে আরও সাত কিলোমিটার গেলে দরিয়াপুর ইউনিয়ন। এরপরই মহেশপুর গ্রাম।
গ্রামটির একটা অংশ গড়াই নদী ঘেঁষে। এখানে বেশির ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অল্প কিছু মানুষ সরকারি চাকরি করেন। নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি। তবে গ্রামটির নদীর চরাঞ্চলে গেলে খটকা লাগবে। এখানকার মানুষের ভাগ্যের চাকা যেন হঠাৎ করে ঘুরে গেছে। টিনের ভাঙা ঘরগুলো মাত্র এক বছরে হয়ে গেছে পাকা দালান। চলছে দোতলার কাজ। দামি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন বেশ কিছু উঠতি যুবক, যাদের বয়স ১৬ থেকে ২৫ বছর।
স্থানীয়রা বলছেন, এসব দালানবাড়ি কেমন করে হলো তাদের জানা নেই। তবে এসব বাড়ির ছেলেরা কাজ করে। সেই কাজ হলো মোবাইলে টাকা আনে। নদীর পারে তাদের ‘অফিস’। এরা উঠতি বয়সী হলেও যারা এদের নেতৃত্ব দেয়, তাদের বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। গ্রামের লোকেরা বলেন, ‘এরা বসে বসে কথা কয়, আর টাকা চলে আসে।’
স্থানীয়রা জানেন, অন্যের মোবাইলের টাকা এরা হতিয়ে নিচ্ছেন। তবে বিষয়টা নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না। প্রাণনাশের হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখায় প্রতারকচক্র।
মাগুরা গোয়েন্দা পুলিশের সূত্র মতে, প্রতারকচক্রের দুটি গ্রুপ আছে মহেশপুর ও চর মহেশপুর গ্রামে। স্থানীয়রা এটার নাম দিয়েছে ‘টোপ মারা’। আর যারা জড়িত, তারা ‘টোপ পার্টি’ নামে পরিচিত। প্রতারণায় জড়িত শতাধিক তরুণ। যাদের বাড়ি একই এলাকায়। প্রতারকরা পুলিশের নজরদারিতে আছে।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, প্রতারকচক্র এ গ্রাম থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী গ্রামেও। মহেশপুর থেকে গোয়ালদহ, চর গোয়ালদহ, চর মহেশপুর, চৌগাছী, চর চৌগাছী, ঘষিয়াল, শ্রীকোল ইউনিয়নের বরিশাট গ্রাম এবং নয়নশার ঘাট এলাকায়ও অর্ধশতাধিক তরুণ এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে বলে তথ্য আছে।
মহেশপুর গ্রামের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৫০ সিসি ইঞ্জিনের ৫ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল চালাচ্ছে এখানকার কলেজপড়ুয়া ছেলেপেলে, যাদের পরিবারের আয় অত্যন্ত কম, পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
ওই ব্যবসায়ী জানান, দামি মোটরসাইকেল কিনে এরা সারা গ্রাম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ কিছু বলছে না। কারণ প্রায় প্রতিটি বাড়ির কেউ না কেউ এতে জড়িত। আবার যারা গ্রামের সচেতন ব্যক্তি, তারা ভয়ে মুখ খুলছে না।
তিনি আরও জানান, এদের প্রতারণায় নিয়োজিত কর্মীদের একাধিক গ্রুপ। প্রথম গ্রুপটির কাজ বিকাশ, নগদ, রকেট কিংবা অন্য মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট পর্যায়ে ঘোরাঘুরি করে তথ্য সরবরাহ করা। এজেন্টের কাছে যেসব গ্রাহক টাকা পাঠান, তাদের তথ্য এজেন্টরা ছবি তুলে দিয়ে দেন প্রথম পর্যায়ের কর্মীদের হাতে।
এরপর যাদের নামে অর্থ আসে, তাদের কাছে ফোন দেয় আরেকটি গ্রুপ। এরা নির্জন জায়গায় এ কাজ করেন। এ ক্ষেত্রে মহেশপুর চরাঞ্চল উপযোগী জায়গা। এ জন্য রাজবাড়ী এলাকা থেকে চক্রের সদস্যরা নৌকাযোগে মহেশপুর চরে আসে।
মোবাইল ব্যাংকিং-এর গ্রাহক যারা টাকা পায়, তাদেরই মূলত এরা টার্গেট করে নানা ফাঁদ পাতে। ১০ জনের মধ্যে একজন টোপে (ফাঁদে) পা দিলেই এরা সফল। কারণ দিনে শতাধিক মানুষকে এরা ফাঁদে ফেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এই প্রতারণায় শতাধিক কিশোর ও তরুণ জড়িত থাকলেও এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে তিন-চার জন। এদের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ জন তরুণ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। চক্র আকারে এরা ছড়িয়ে পড়েছে মাগুরা জেলার নানা প্রান্তে।
ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেতে পারে- এমন শঙ্কায় এদের নাম-ঠিকানা সরাসরি প্রকাশ করছে না পুলিশ।
নিউজবাংলার পক্ষ থেকে মহেশপুরে এ রকম একটি গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা একজনের বাড়িতে যাওয়া হয়। বুধবার বিকেল ৩টায় তার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। বারবার মোবাইলে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তরুণের বাড়িতেও কাউকে পাওয়া যায়নি। ছাদে কাপড় শুকাতে দেখা গেলেও বাড়িটি ফাঁকা পাওয়া যায়।
প্রতিবেশীরা জানান, তারা সকালেও ছিল। এখন কেউ নাই।
এই গ্রুপ প্রধান কী করেন, জানতে চাইলে প্রতিবেশীরা কিছু জানেন না বলে জানান।
২০২০ সালের ৩০ আগস্ট শ্রীপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়। এতে ১০ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্তরা দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক আইডি হ্যাক করছে এবং বিকাশ কোম্পানির গ্রাহকের টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে শ্রীপুর থানা পুলিশ উদ্ধার করে ৯টি কম্পিউটার, ১০টি মোবাইল ফোনসেট, সাতটি হার্ডডিস্ক ও একটি ইন্টারনেট মডেম।
মামলার পরই প্রতারকচক্র সতর্ক হয়ে যায়। মামলাটি এখনও নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
পুলিশ বলছে, মহেশপুর এলাকাটির ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছে প্রতারকচক্র। মাগুরা, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার সীমানা হওয়ায় এ এলাকায় থানার পুলিশের নজরদারি কম থাকে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন দপ্তর থেকে মোবাইলে প্রতারণার অভিযোগ আসে। তবে তা দেশের নানা প্রান্তে ঘটায় শ্রীপুর থানায় কেউ মামলা দিতে আসে না। এ জন্য প্রতারকচক্র বরাবর ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
দরিয়াপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আব্দুর সবুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর মহেশপুর এলাকায় একবার গিয়েছি চরাঞ্চলে নদীভাঙন দেখতে। কিন্তু চরে মনে হলো কিছু যুবকের হাট বসেছে। তাদের কাছে অনেক মোবাইল দেখেছি। তারা কথা বলছিল। পরে শুনেছি, এরা নানা অপকর্মে জড়িত। বিকাশের টাকা এরা হাতিয়ে নেয় বলে শুনেছি।
‘উপজেলার আইনশৃঙ্খলা সভায় এটা আমি তুলেছি। প্রশাসন বলেছে, তারা এটা নিয়ে কাজ করছে। আমি চাই বিপথগামী তরুণরা সঠিক পথে আসুক। এসব প্রতারণার কোনো প্রমাণ হাতেনাতে যদিও আমি পাইনি, তবু যদি এটা প্রমাণিত হয়, তবে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা প্রিটন সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখানে মে মাসে এসেছি। এলাকায় মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিকাশ প্রতারকচক্রের তথ্য আমি পেয়েছি। স্থানীয়রা যদি সহযোগিতা করে, তবে এদের নির্মূল করা সম্ভব। পুলিশের পক্ষ থেকে শতভাগ চেষ্টা আছে এদের প্রতিরোধ করার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা কাজ করছি।’
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য