‘একটাই পৃথিবী: প্রকৃতির ঐকতানে টেকসই জীবন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালন হলো বিশ্ব পরিবেশ দিবস। দিবসটিতে পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রা এবং প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ টেকসই জীবনযাপনে উৎসাহিত করতে বিশ্বব্যাপী নানামুখী কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন এবং দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একাত্ততা প্রকাশ করে বেসরকারিখাতের সবচেয়ে বড় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ‘বনায়ন’ তার ৪২তম বছরে পদার্পন করে ৫০ লাখ গাছের চারা বিতরণ শুরু করেছে।
উদ্যোগটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশ জুড়ে ২০টির বেশি নার্সারিতে সযত্নে চারা তৈরি করেছে প্রকল্পটি।
বাংলাদেশ সরকারের বৃক্ষরোপণের আহ্বানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ১৯৮০ সালে ‘বনায়ন’ তার যাত্রা শুরু করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাস্তুতন্ত্র পুনঃস্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে এই পর্যন্ত সাড়ে ১১ কোটির বেশি বনজ, ফলজ, ও ঔষধি জাতীয় গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ এবং দেশব্যাপী ১১৯টি জীব-বৈচিত্র্য কেন্দ্র স্থাপন করেছে ‘বনায়ন’।
‘বনায়ন’ এর এই কার্যক্রম সরাসরি জাতিসংঘ প্রণীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি-১৩) ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন’ এবং (এসডিজি-১৫) ‘লাইফ অন ল্যান্ড’ অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
এ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বৃক্ষাচ্ছাদনের সরকারি লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে যাচ্ছে প্রকল্পটি।
এর আওতায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, রাজশাহী, লালমনিরহাট, নাটোর, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, যশোর, চট্টগ্রাম, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী (ভাসানচর)সহ ১৮টিরও বেশি জেলায় গাছের কার্যক্রম বিস্তার করেছে 'বনায়ন'।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজায়নের বিস্তৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অবদান রাখায় ‘বনায়ন’ ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে অসংখ্য স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
এগুলোর মধ্যে পাঁচবার প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার এবং একবার প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে।
এ ছাড়া রয়েছে, গ্রিন লিডারশিপ বা সবুজ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে এন্টারপ্রাইজ এশিয়ার কাছ থেকে ‘এশিয়া রেসপন্সিবল এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, এসডিজি অন্তর্ভূক্তিকরণ ক্যাটাগরিতে ‘বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ উল্লেখযোগ্য।
স্মরণকালের ভয়াবহ তাপদাহে ধুঁকছে ইউরোপ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকছে যে ফ্রান্সের একটি অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের আয়োজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের গিরন্ড জেলার বন্দর শহর বোর্দোতে আপাতত কনসার্ট এবং বড় জনসমাবেশ করা যাবে না।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কায় করছে দেশটির আবহাওয়া অফিস।
ফ্রান্সের আবহাওয়া অফিস বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যতীত স্থানগুলোতেও অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ব্যক্তিগত উদযাপন যেমন বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হবে।
স্থানীয় কর্মকর্তা ফ্যাবিয়েন বুসিও ফ্রান্স ব্লু রেডিওকে বলেন, ‘প্রত্যেকই এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে তীব্র তাপের সময়কাল আরও বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, তারা জনগণকে সতর্ক করেছে। এই আবহাওয়ার যেন কেউ বাইরে না বের হয়।
গিরন্ডের আবহাওয়া কর্মকর্তা মেটিও ফ্রান্স বলেন, তীব্র গরমে ধুঁকছে ফ্রান্স। উত্তর আফ্রিকা উড়ে আসা গরম বাতাসের কারণে এমনটা ঘটেছে।
‘প্যারিসে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে। এটি খরা দাবানলের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তুলুসের বাসিন্দা জ্যাকলিন বননড। তিনি বলেন, ‘আমি বয়স ৮৬। এখানেই আমার জন্ম। মনে হচ্ছে এটিই আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ তাপপ্রবাহ।’
গ্রিড অপারেটর আরটিই জানিয়েছে, এয়ার-কন্ডিশনার এবং ফ্যানের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ফ্রান্সকে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে বাধ্য করছে।
একই দশার মধ্যে আছে স্পেন, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যও।
শতাব্দীর উষ্ণতম তাপদাহ অনুভূত হচ্ছে স্পেনে। সপ্তাহান্তে তাপমাত্রা সর্বোচ্চে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া পরিষেবা-অ্যামেট। আঞ্চলিক সরকার জানিয়েছে, কাতালোনিয়ায় ২০ হাজার হেক্টর জমি দাবানলে পুড়ে গেছে।
ইতালির বৃহত্তম নদী পো-এর বিশাল অংশে পানি এতটাই কম যে, স্থানীয়রা বালির বিস্তৃতির মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে পারছে। এমনকি যুদ্ধকালীন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পুনরুত্থিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ ইংল্যান্ডে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লন্ডনে তৃতীয় স্তরের তাপ-স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি হয়েছে।
চরম তাপ ইউরোপে সীমাবদ্ধ না
গেল সপ্তাহে রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশকে বাড়ির ভেতরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ভারতের দিল্লিতে চলতি গ্রীষ্মের ২৫ দিনে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে নির্গত হচ্ছে। এ ধরনের গ্যাস সূর্যের তাপকে আটকে রাখে, ফলে গ্রহটি উষ্ণ হয়ে ওঠছে।
বিএনপি বন্যার্তদের পাশে নেই, বরং বন্যা নিয়ে তারা অপরাজনীতি করছে বলে মনে করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
রাজধানীর হাতিরঝিলে সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
হাতিরঝিলের প্লাটিনাম পার্কে যুবলীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শেখ পরশ।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য বিরাট হুমকি। আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই বাংলাদেশ রেখে যেতে বৃক্ষরোপণ তথা উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশের বিকল্প নেই। পরিবেশ সুরক্ষায় যুবলীগ সব সময় মাঠে থাকবে। যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।’
বন্যা নিয়ে রাজনীতির সমালোচনা করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি-জামাত বন্যার্তদের পাশে না থাকলেও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে অপরাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মন সঙ্কীর্ণ, তারা আত্মকেন্দ্রিক। এর আগে তারা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছে। এখন তারা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তির রাজনীতিতে ব্যস্ত। মানুষের পাশে দাঁড়াবার কোন কার্যকর উদ্যোগ তাদের দেখি না।
‘কিছু করার মুরোদ নেই কিন্তু ক্ষমতায় যেতে তারা মরিয়া। বিএনপির নেতারা ভোগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তারা পুরনো স্বভাব বদলাতে না পেরে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। আমাদের গর্বের পদ্মা সেতু নিয়ে তারা বিদেশিদের সাথে ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। সেই চক্রান্ত পেছনে ফেলে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
বন্যার্ত মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে মারা যাওয়া সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরী ও নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা যুবলীগের নেতা আবির আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব এ কে এম রহমত উল্লাহ। তিনি পরিবেশ সুরক্ষায় রাজধানীর তিনটি থানা এলাকার জন্য ১০ হাজার গাছ উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
আরও পড়ুন:বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বৃষ্টির পানি; কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি কখনও বা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ওইসব এলাকায়। শিগগিরই এ বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা নেই।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় এ মাসজুড়ে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাত তেমন কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না সিলেটে। মঙ্গলবার সিলেটে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। এর পর আবার শুরু হবে। বিভাগজুড়ে অতি ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে।
‘আসাম, মেঘালয়েও বন্যা হচ্ছে। এ কারণ ও অতি ভারি বৃষ্টি মিলিয়ে, পরিস্থিতি খারাপ। সিলেটে ২৯ জুন পর্যন্ত মাঝামাঝি ধরনের ভারি বৃষ্টি থেকে অতিভারি বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।’
ঢাকায় বৃষ্টির পূর্বাভাস নিয়ে আবাহওয়াবিদ মনোয়ার বলেন, ‘ঢাকায় অতিভারি বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনিতে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হবে।’
সোমবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ীভাবে ঘন্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ২৪২ মিলিমিটার। এ সময়ের মধ্যে সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২২ মিলিমিটার।
আরও পড়ুন:দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে ১১টি জেলা। এসব এলাকায় ৯টি নদীর ১৯টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও উত্তরের জেলাগুলোতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। অতি ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ পার্বত্য তিন জেলার নদ-নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণাধীন পানির সমতল স্টেশন ১০৯টির মধ্যে ৭৬টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ২৯টিতে এবং অপরিবর্তিত রয়েছে চারটিতে।
এত অল্প সময়ে বেশি পরিমাণ বৃষ্টি জলবায়ু পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছে এফএফডব্লিউসি।
যেসব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর
এফএফডব্লিউসির তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি নুনখাওয়া, হাতিয়ে, চিলমারী ও ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বাহদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও পোড়াবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
সুরমা নদীর পানি সিলেট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ ও শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে।
খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুরাতন সুরমা নদীর পানি দেরাই পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমেশ্বরী নদীর পানিও কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে।
নদনদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস
এফএফডব্লিউসির তথ্যমতে, দেশের সব প্রধান নদনদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানগুলোতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
এর ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, ধরলা, দুধকুমারসহ সব প্রধান নদনদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ভারতের মেঘালয়ে ভারি বর্ষণের প্রবণতা কমে এসেছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে হবিগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তিস্তা নদীর পানি সমতলে বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে।
এ ছাড়া লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার নদনদীগুলোর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন:দেশে নদী দূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিক বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২৮৩ কোটি ডলার। এ পরিস্থিতি নিরসনে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়া হলে, নদী দূষণের কারণে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আগামী ২০ বছরে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
রোববার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘দূষণে বিপর্যস্ত ঢাকার নদ-নদী: সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নদী দূষণের সাথে সম্পর্কিত পরিবেশগত, স্বাস্থ্যগত এবং অর্থনৈতিক বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২৮৩ কোটি ডলার। এ পরিস্থিতি নিরসনে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ না নেয়া হলে, নদী দূষণের কারণে মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আগামী ২০ বছরে ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।’
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কমিশনের সরেজমিন পরিদর্শনের তথ্য থেকে জানা যায়, বুড়িগঙ্গা নদীর ২৫৮টি পয়েন্ট দিয়ে গৃহস্থালি পয়ঃবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়ছে। তুরাগ নদের ২৬৯টি এবং বালু নদের ১০৪টি ও টঙ্গী খালের ৬২টি পয়েন্ট দিয়ে কঠিনবর্জ্য এবং পয়ঃবর্জ্য নিঃসরিত হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক দূষণ পয়েন্ট রয়েছে।’
মতবিনিময় সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশের বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে নদী রক্ষা কমিটিকে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। নদী-নালা, খাল-বিল রক্ষা করে দেশকে রক্ষা করতে হবে।’
সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা আর একদিনও সময় নষ্ট করতে চাই না। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন তথ্য চাইলে সে তথ্য কেন দেয়া হয় না সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সেন্টার ফর গর্ভনেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান, সমন্বয়ে ছিলেন কমিশনের উপপ্রধান এম এম মহিউদ্দিন কবীর মাহিন।
আরও পড়ুন:বর্ষা মৌসুমে ভাটি এলাকায় থইথই পানি থাকে আর এই সুযোগে যেকোনো অপরাধী নৌকা বা ট্রলারযোগে পালিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ পায়।
বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতে ছড়িয়ে পড়েছে ডাকাত আতঙ্ক। যাদের পরিবার-পরিজন সুনামগঞ্জে তাদের অনেকেই জানাচ্ছেন ডাকাত আতঙ্কের কথা। বেশ কয়েকটি ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে।
রাত ১১টার দিকে নিজের চাচার বাসাসহ ৩টি বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সিলেটের একটি হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার সাদিকুর রহমান। তিনি জানান, রাত ১১টার দিকে আমার চাচার বাসাসহ আশপাশের ৩ বাসায় ডাকাতি হয়, কিন্তু এই সময় প্রশাসনের কোনো নম্বরে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
বন্যার মধ্যে সুনামগঞ্জে বেশ কয়েকটি ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে।
রাত ১২টায় সাদিকুর তানভীর নামের স্থানীয় এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সাহায্য চান। তিনি লেখেন, সুনামগঞ্জে আমাদের পাড়া ময়নার পয়েন্টে ডাকাত আক্রমণ করেছে। সুনামগঞ্জ জেলা এসপি, ওসি সদর, সেনাবাহিনীর টোল ফ্রি নম্বর সব বন্ধ। সুনামগঞ্জের কেউ এই স্ট্যাটাস দেখে থাকলে প্লিজ ৮/১০ জন মিলে কিছু করুন। (লোকেশন: ময়নার পয়েন্ট, ব্যারিস্টার ইমনের বাসার গলি)
কেউ এই স্ট্যাটাস দেখলে প্লিজ সম্মিলিতভাবে কিছু করুন। অবশ্যই একা যাবেন না। অথবা স্থানীয় পুলিশকে জানাতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
ডাকাতদল, ময়নার পয়েন্ট, নিসর্গ ১৪/১ বাসায় অলরেডি প্রবেশ করেছে বাসার গেট ভেঙে। আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুন।
সুনামগঞ্জের আরেকজন ইশতিয়াক আলম জানান, শহরের হাজিপাড়া-নতুনপাড়া-বাঁধনপাড়া-মরাটিলা-ময়নার পয়েন্ট। সুনামগঞ্জ শহরের হাওর পাড়ের এই বেল্টে ডাকাতের হানা পড়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি বাসায় ডাকাতির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বৈশাখী মৌ নামের একজন জানান, সুনামগঞ্জের দক্ষিণ নতুনপাড়া ডাকাতের নৌকা লাগাইছে এমন খবরে মানুষগুলো চিল্লাচিল্লি করতেসে চোর চোর বলে। জানি না কী হবে! এই বিপদে মানুষ কেমনে এগুলা করে! কেউ আশপাশে থাকলে প্লিজ হেল্প! জরুরি কোনো নম্বরে যোগাযোগ করতে পারতেসি না, সব বন্ধ।
সিলেটে অবস্থান করা সুনামগঞ্জের নতুনপাড়ার উর্মি দে জানান, আজ কিছু সময় নেটওয়ার্ক ছিল- এই সময়ে খবর নিয়ে জানতে পারছি, কিছু কিছু জায়গায় ডাকাতি হয়েছে। এবং পাড়ায় পাড়ায় ডাকাতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে শুনে শুনে পোস্ট দিচ্ছে যাচাই-বাছাই না করে। তাই সত্যতা আছে আবার গুজবও আছে, তবে এই বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সবার নম্বর বন্ধ।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের লোকজন সারা রাত বাইরে ডিউটি করেছে। মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে ডাকাতির কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আমরা পাইনি।’
আরও পড়ুন:চলতি মাসের ১১ তারিখ থেকে যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায় এর সর্বোচ্চ মাত্রা সিলেটে রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৩০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ ড. মো. আব্দুল মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। শ্রীমঙ্গলে কম, সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পরিমাণে কিছুটা কম হলেও সেখানেও ভারি বর্ষণ হয়েছে। আজকেও সিলেট, সুনামগঞ্জ এলাকায় বৃষ্টিপাত হবে। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে ভারি বর্ষণেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১১ তারিখ থেকে সারা দেশে টানা যে বৃষ্টি হচ্ছে- এই কয়েক দিনের মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে। গত কয়েক দিনে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে আগামী দুই দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে।’
ঢাকার আবহাওয়া পরিস্থিতি জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন বৃষ্টিপাত হয় নাই। মাত্র ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পুরো ঢাকা বিভাগেই বৃষ্টিপাত কম। উত্তর অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ রেকর্ড করা হচ্ছে।’
রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।’
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ‘রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।’
এদিকে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
ঢাকায় বাতাসের গতিবেগ দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় (১০-১৫) কিমি, যা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ায় ঘণ্টায় (৩০-৪০) কিমি বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য