দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সপ্তাহব্যাপী বুস্টার ডোজ কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে রোববার টিকাকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল কম। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে প্রচারণা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষকে তৃতীয় ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ হিসাবে দিনে ২০ লাখ মানুষকে বুস্টার দিতে হবে। কিন্তু প্রথম দিন শনিবার ১২ লাখের মতো মানুষ টিকা নেন। দ্বিতীয় দিনেও অধিকাংশ টিকাকেন্দ্রে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে বলে মানুষ টিকা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংক্রমণের প্রকোপ বাড়লেও দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে টিকায় আস্থা বাড়লেও বুস্টার ডোজ নিতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে।
প্রচারের অভাবকে দায়ী করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। একই সঙ্গে মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করে তুলতে বাড়ানো হবে প্রচার-প্রচারণা। তবে সময় বাড়ছে না এই ক্যাম্পেইনের।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ নিতে আসেন আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা। তিনি জানান, দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দিন তাকে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তখন ভিড় ছিল খুব। তবে বুস্টার ডোজ নিতে কোনো ধরনের ঝমেলা পোহাতে হয়নি।
এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মো. দাউদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘রোববার বেলা ২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৪৮ জনকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। আগের দিনও এমন সংখ্যক মানুষ টিকা নেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে টিকা নিচ্ছেন না। তারা মনে করছেন টিকা নেয়ার আর দরকার নেই। এ ছাড়া অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। এ অবস্থায় টিকা নেয়ার পর বিশ্রামের সুযোগ পাবে না বলে অনেকেই টিকা নিচ্ছেন না।
‘আমার কেন্দ্রে প্রথম দুই ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বুস্টার নিয়েছেন। বর্তমানে এখানে যারা আসছেন, তারা অধিকাংশই অন্য কেন্দ্র থেকে আসা। টিকাকেন্দ্রে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে ক্যাম্পেইন বেশি বেশি হওয়া দরকার।’
শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন টিকা নিতে এসেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার বলেন, ‘বুস্টার ডোজ দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। তালিকাভুক্ত টিকাগ্রহীতাদের মোবাইলে মেসেজ দেয়া হয়েছে। রোববার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজসহ ৮০ জনকে ফাইজার, ১৬৫ জনকে মর্ডানা এবং ২৫ জনকে সিনোভ্যাক টিকা দেয়া হয়েছে। মোট ২৭২ জন টিকা নেন। আগের দিন ২৩৩ জন টিকা নেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। টিকাগ্রহীতার ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশকে বুস্টার ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়া সাড়ে চার কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় আছেন। বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ক্যাম্পেইন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক বলেন, ‘ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। অনেকেই নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
‘রোগের প্রকোশ বেশি থাকলে মানুষ সেই বিষয়ে সচেতন বেশি হন। তখন সেবা নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। করোনার সংক্রমণ আবার বাড়লে তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নিতে আসবেন।’
বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ছে না জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘লক্ষ্য পূরণ না হলেও বাড়বে না ক্যাম্পেইনের মেয়াদ। ১০ জুনের মধ্যে এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়ানো হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ১৬ হাজার ১৮১ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৬২৩টি স্থায়ী কেন্দ্র ও ১৫ হাজার ৫৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্র। স্থায়ী কেন্দ্রগুলোয় সাত দিন ও অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোয় দুই দিন টিকাদান কার্যক্রম চলবে। একযোগে ৪৫ হাজার ৫৩৫ জন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত আছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার পর চার মাস পার হয়েছে, ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের নাগরিকদের সবাই বুস্টার ডোজ পাবেন।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে লিফটে ওঠা নিয়ে বিরোধ ও মারধরের ঘটনায় রোগীর স্বজন মামলা করেছেন চিকিৎসক ও লিফটম্যানের বিরুদ্ধে।
চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহানের আদালতে মঙ্গলবার মামলার আবেদন করেন বিবি আয়েশা নামের নারী।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আবুল হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দুপুরে মামলার আবেদন করা হয়। আদালত সন্ধ্যায় তা গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।’
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান ও লিফটম্যান মোহাম্মদ রাজু।
মামলায় বলা হয়, বিবি আয়েশা তার স্বামী রেজাউল ইসলাম, সন্তান ও দুই স্বজনকে নিয়ে রোববার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে আয়েশার অন্তঃসত্ত্বা ননদ ভর্তি আছেন। তারা হাসপাতালের সিড়ি দিয়ে মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠেন। সিড়িতে মেরামত কাজ চলায় তারা এক পর্যায়ে লিফটে ওঠার চেষ্টা করেন।
লিফটম্যান রাজু দরজা খুলে জানান, এই লিফটি শুধু চিকিৎসকদের ব্যবহারের জন্য। এখানে নেয়া যাবে না। লিফটের ভেতরে তখন কিছু সাধারণ মানুষ থাকায়, বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রেজাউল। তখন গালাগাল করলে রেজাউল তার প্রতিবাদ করেন। এক পর্যায়ে চিকিৎসক মিজানুর সহ অন্য এক জন মিলে রেজাউলকে টেনে লিফটের ভেতরে নিয়ে মারধর করেন।
পরে ডা. মিজানুর রহমানের নির্দেশে ১০ থেকে ১২ জন রোগীর পাঁচ স্বজনকে ধরে পাঁচ তলায় নিয়ে যান। সেখানে ৩২৬ নম্বর কক্ষে তাদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। পুলিশ সংবাদ পেয়ে এক সময় তাদের উদ্ধার করে।
বাদীর আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিকিৎসক মিজানুর রহমান ও লিফটম্যান রাজুর বিরুদ্ধে মামলাটি আদালত নিয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের শনাক্ত করে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ জুনের শুরু থেকেই ধারাবাধিকভাবে বাড়ছে। এই সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী দেশে নতুন করে শনাক্ত হওয়া ওমিক্রন ধরনের নতুন দুটি উপ-ধরন ‘বিএ.৪’ ও ‘বিএ.৫।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআররি) করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইসিডিডিআর,বি-র ওয়েবসাইটে মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
আইসিডিডিআর,বি বলছে, ওমিক্রন ধরনের উপ-ধরন ‘বিএ.৪’ ও ‘বিএ.৫’ আগের উপ-ধরনগুলোর তুলনায় দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে। এর ফলে দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ দেখা দিয়েছে। তবে নতুন উপ-ধরনগুলোতে সংক্রমিত রোগী আগেরগুলোর তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে কম। মৃত্যুও কম হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত একটি গ্রাফে দেখা যায়, কিভাবে সার্স-কভ-২ ধরনগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়েছে। এর মাধ্যমে নতুন ধরনের উত্থানের চিত্র দেখা যায়।
‘বিএ.৫’ উপ-ধরনে সংক্রমিত ৪০ জন রোগীর ক্লিনিক্যাল ডাটা ও টিকাদানের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ২৪ জন নারী রয়েছেন। তাদের ৩৯ জনের মধ্যে করোনার মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে এবং একজনের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। তাদের মধ্যে মাত্র একজনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। এদের মধ্যে ১১ জন দ্বিতীয়বারের মতো এবং সাতজন তৃতীয়বারের মতো করোনায় আক্রান্ত হন।
আক্রান্তদের ভ্যাকসিনেশনের ইতিহাসে দেখা যায়, তাদের মধ্যে ৩৮ জন অন্তত করোনার এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। আর ১৬ জন বুস্টার বা তিনটি ডোজ গ্রহণ করেছেন। ২১ জন দুই ডোজ টিকা এবং একজন এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। তাদের কারো কোনো ভ্রমণ ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
উপ-ধরন দুটি সর্বপ্রথম যথাক্রমে ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফ্রেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছিল।
পর্যবেক্ষণের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশে ওমিক্রন ধরন প্রথম শনাক্ত হয় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর। প্রাথমিকভাবে, বেশিরভাগ করোনা পজিটিভ কেস ছিল ‘বিএ.১’ (২০২২ সালের জানুয়ারির প্রথম দুই সপ্তাহ)। পরে উপ-ধরন ‘বিএ.২’ ২০২২ সালের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমিত হয় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘বিএ.১’ প্রতিস্থাপন করে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ ঘটায়। এ বছরের ৯ এপ্রিল থেকে ১৩ মে’র মধ্যে খুব কম করোনা শনাক্তের হার এবং পজিটিভ নমুনার উচ্চ সিটি মানের কারণে কোনো সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায় গত ১৯ মে ঢাকায় প্রথম সন্দেহভাজন ওমিক্রন উপ-ধরন ‘বিএ.৫’ সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়।
গত ছয় সপ্তাহে (১৪ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত) ‘বিএ.৫’ সবচেয়ে প্রভাবশালী উপ-ধরন হয়ে উঠেছে। এই সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ৫২টি করোনা পজিটিভ ঘটনায় মধ্যে ৫১টি ‘বিএ.৫’ উপ-ধরন ও একটি ‘বিএ.২’ উপ-ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ওমিক্রণ ‘বিএ.৫’ উপ-ধরনে সংক্রমিতদের মধ্যে জটিলতা অনেক কম পাওয়া গেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমানোর জন্য জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে আইসিডিডিআর,বি। একইসঙ্গে করোনার টিকা গ্রহণ, মাস্ক পরা, সামাজিত দূরত্ব বজায় রাখার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন:ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন এলাকায় কোরবানির বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর গুলশানস্থ নগরভবনে মঙ্গলবার দুপুরে ডিএনসিসির ১৪তম সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা প্রতিদিনের বর্জ্য প্রতিদিন অপসারণ করছে। তাই কোরবানির বর্জ্য সরাতে ২৪ ঘণ্টা নয়, ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল আছে। বর্জ্য অপসারণে যুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেশ কিছু ওয়ার্ডে কোরবানির জায়গাও নির্ধারণ করা আছে।’
কোরবানির পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কাউন্সিলর এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে কঠোর নির্দেশনা দেন মেয়র আতিক।
তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢুকতে হবে। মাস্ক ছাড়া কেউ হাটে ঢুকতে পারবে না। ছয়টি পশুর হাটে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল পেমেন্টের সুযোগ থাকায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা খুব খুশি।
‘নিরপাদ ও সহজ লেনদেন, তাৎক্ষনিক ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ, ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সুবিধা এবং ছিনতাই, মলম পার্টির খপ্পর থেকে রক্ষায় স্মার্ট হাট চমৎকার উদ্যোগ।’
ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়া, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আরও পড়ুন:অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের রয়েছে বিস্ময়কর নানান ক্ষমতা। এগুলো পোষকের দেহের গন্ধ পরিবর্তনের ক্ষমতাও রাখে। আর এই পরিবর্তিত গন্ধে আকৃষ্ট হয় মশার মতো প্রাণী। অনেক দূর থেকেও এরা ঠিকঠাক খুঁজে নিতে পারে আক্রমণের নিশানা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রীষ্মকালে জিকা ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত রোগ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে রোগ দুটির জন্য দায়ী ভাইরাসের বিশেষ ভূমিকা আছে। এই ভাইরাস কেবল আক্রান্তকে কাবু করেই ক্ষান্ত হয় না, তার দিকে আরও মশাকে আকৃষ্ট করতেও সাহায্য করে।
পিআর-রিভিউ জার্নাল সেল-এ প্রকাশিত এক গবেষণার বরাতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল নেচার। এতে বলা হয়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ সৃষ্টিকারী দুটি ভাইরাস তাদের পোষকের দিকে আরও বেশি মশা আকৃষ্ট করতে কিছু উপাদান নির্গত করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, জিকা ও ডেঙ্গু সৃষ্টিকারী ভাইরাসগুলো নিজেদের সুবিধার জন্য তাদের পোষকের দেহের গন্ধে পরিবর্তন ঘটাতে পারে। গবেষকেরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। পরিবর্তিত এই গন্ধ রক্তপিপাসু মশাকে করে তোলে আরও আগ্রাসী।
এর মাধ্যমে নতুন নতুন মশার মাধ্যমে আক্রান্তের দেহ থেকে নিরোগ দেহে ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায় ভাইরাস। গবেষণা নিবন্ধের সহলেখক সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট গং চেং বলেন, ‘কেবল জিকা ও ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে নয়, মশাবাহিত অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ভাইরাস একই ধরনের কৌশল ব্যবহার করতে পারে।’
আক্রান্তের শরীরে উৎকট গন্ধ
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের রোগ-নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ জেমস লোগান বলেন, ‘কিছু রোগ তাদের পোষকের গন্ধ বদলাতে পারে। ভাইরাস এবং অণুজীব নিজেদের সুবিধার জন্য বিবর্তিত হয়ে এমনটা করে থাকে।
‘উদাহরণস্বরূপ মোজাইক ভাইরাসে সংক্রামিত শসাগাছ থেকে এক ধরনের উপাদান নির্গত হয়, যা কীটপতঙ্গকে আকৃষ্ট করে। এসব পতঙ্গের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদকে সংক্রামিত করে ভাইরাস। ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবীগুলো তাদের পোষকদের শরীরের গন্ধ পরিবর্তনের মাধ্যমে মশাকে কাছে টানতে প্রলুব্ধ করে।’
জিকা এবং ডেঙ্গু ভাইরাসগুলোও মশাকে আকৃষ্ট করতে একই কৌশল বেছে নেয় কি না তা দেখতে চেং এবং তার সহকর্মীরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালান। এ জন্য সংক্রামিত এবং নিরোগ ইঁদুরগুলোকে আলাদা ঘরে রেখেছিল তারা।
তারপর দুটি কক্ষের ইঁদুরের শরীরের গন্ধ মশা-ভর্তি চেম্বারে ছড়িয়ে দেয়া হয়। দেখা গেছে এরপর ৬৫-৭০ শতাংশ মশা সংক্রামিত ইঁদুরের ঘরের দিকে হামলে পড়েছে।
প্রতিটি ঘরের বাতাসের রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংক্রামিত ইঁদুরগুলো থেকে নির্গত গন্ধ মাত্রা ছিল বেশি উৎকট। এর মধ্যে অ্যাসিটোফেনন নামে একটি বায়ুবাহিত উপাদানও পাওয়া গেছে।
গবেষকরা দেখেছেন, জিকা বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ইঁদুর সুস্থ ইঁদুরের তুলনায় ১০ গুণ বেশি অ্যাসিটোফেনন তৈরি করে। আর এই উপাদান তাড়িত করেছিল মশাদের।
ত্বকে অ্যাসিটোফেনন উৎপন্নকারী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার স্বাভাবিক। তবে তাদের সংখ্যা সাধারণত ত্বকের কোষ থেকে নিঃসৃত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রোটিনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু বা জিকায় আক্রান্ত ইঁদুরের দেহে এই প্রোটিন তৈরির জন্য দায়ী জিনটির সক্রিয়তা কমে যায়।
সংক্রামিত ইঁদুরের ত্বকে অ্যাসিটোফেনন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে, যা ইঁদুরগুলোর গন্ধকে বেশি উৎকট করার পাশাপাশি রক্তপিপাসু মশাকে আকৃষ্ট করে।
গবেষকরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির বগলের ঘাম নিয়েও পরীক্ষা করেছেন। এতে দেখা গেছে, যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশি অ্যাসিটোফেনন তৈরি হচ্ছে। মশাও তাদের দিকে বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে।
গবেষণায় সংক্রামিত ইঁদুরকে ভিটামিন ‘এ’ খাইয়ে (সাধারণত ত্বকের অবস্থার চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হয়) বেশ ভালো ফল মিলেছে। দেখা গেছে এতে অ্যাসিটোফেননের পরিমাণ কমে আসে।
মালয়েশিয়ায় ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমাতে ভিটামিন এ-এর ব্যবহার পরীক্ষার উদ্যোগও নিয়েছেন গবেষকরা।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে স্থাপনাবিহীন সরকারি হাসপাতালে ৭ চিকিৎসক এক যুগ ধরে চাকরি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চিকিৎসক থাকলেও হাসপাতাল নির্মিত না হওয়ায় উপজেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, জায়গা বরাদ্দ না পাওয়ায় হাসপাতালের স্থাপনাও নির্মাণ করা যায়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে জানা যায়, ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে ২০ শয্যাবিশিষ্ট দুটি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ এ জন্য জায়গাও নির্ধারণ করে। তবে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কারণে হাসপাতাল দুটি নির্মাণ করা যায়নি। এরপরও সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭ জন চিকিৎসককে।
ওই সাত চিকিৎসক হলেন, ফতুল্লা সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার মধুছন্দা হাজরা মৌ, মেডিক্যাল অফিসার আশরাফুল আলম, জুনিয়র কনসালট্যান্ট মিরানা জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অবস) আনোয়ার হোসেন খান।
এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ফাহিম হাসান, মেডিক্যাল অফিসার রাফিয়া মাসুদ ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট ফারজানা রহমান।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসপাতাল না থাকলেও চিকিৎসকদের নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে তাদের সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে মধুছন্দা হাজরা ঢাকায় একটি হাসপাতালে কাজ করছেন।
‘মিরানা জাহান ছুটিতে আছেন। আনোয়ার হোসেন খান জেলা সিভিল সার্জন অফিসের একটি বিভাগে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। অন্যরা বিভিন্ন উপজেলা হাসপাতালে কর্মরত আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিয়োগপ্রাপ্তরা কাজ করছেন, কিন্তু সমস্যা তাদের কাছ থেকে যাদের সেবা পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছেন না। এর কারণ হলো জায়গা বরাদ্দ হয়নি, তাই স্থাপনাও নির্মাণ করা যায়নি। ফলে ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায়নি।’
২০১০ সালে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত ছিলেন মো. আলাউদ্দিন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেনালের হাসপাতালে প্রশাসনিক বিভাগে কর্মরত আছেন।
আলাউদ্দিন জানান, তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফতুল্লায় ২০ শয্যবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণে ডিআইটি মাঠের জায়গা নির্ধারণ করেন। কিন্তু জায়গাটি রাজউকের হওয়ায় তা অধিগ্রহণ হয়নি। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জে হাসপাতালের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জায়গাটি অধিগ্রহণ করতে গেলে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয়রা আমাদের উপর হামলা করেন। পরে পুলিশ ও র্যাব গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তাই দুটি হাসপাতালের কোনোটির জায়গাই আমরা পাইনি। এ ছাড়া আরও কিছু জটিলতা ছিল হাসপাতাল নির্মাণের ক্ষেত্রে।’
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহমিদা পারভীন বলেন, ‘আমরা হাসপাতালের স্থাপনা করতে পারিনি। মন্ত্রণালয় কিভাবে চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্যও নেই। বিষয়টি আমাদের মতিঝিল অফিস দেখেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিস বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি তেমন কিছুই জানি না। বিষয়টি সির্ভিল সার্জন অফিসের, সুতরাং তারাই দেখছেন।’
হাসপাতাল না থা থাকায় বিপাকে স্থানীয়দের পাশাপাশি শ্রমিকরাও
সম্প্রতি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ হারান ধলেশ্বরী নদীর তীরঘেঁষা ফতুল্লার বক্তাবলী গ্রামের রোজিনা বেগম। নিজের শিশুসন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই বিদ্যুতায়িত হন।
আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিতে নিতে জীবনের আলো নিভে যায় ওই নারীর।
তাকে আগলে ধরে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে আহাজারি করছিলেন স্বজনরা।
জানতে চাইলে তার বোন রেনু বেগম বলেন, ‘রোজিনাকে নিয়া গ্রাম থেকে রিকশা নিছি। এরপর ঘাটে আইসা নদী পার হইছি। পরে আবার অটোরিকশা নিয়া চাষাড়া আসছি। সেখান থেকে রিকশা কইরা সদর হাসপাতালে। এতো কষ্ট কইরা বইনরে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার কয় মারা গেছে। আমার বইন নাকি আর নাই।’
তার মতো স্বজন হারানোর ব্যাথা ভুলতে পারেননি মাসদাইরের শেখ সোহেল আলী।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার এক আত্মীয় ও বন্ধুর বুকে ব্যথা শুরু হয়। তাকে নিয়ে ফতুল্লা থেকে শহরের খানপুর হাসপাতালে যাই। জানতে পারি সেটি করোনা রোগীদের হাসপাতাল। পরে তাকে নিয়ে যাই সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু পথেই আমার বন্ধু মারা যান।’
সোহেল আলী বলেন, ‘রোগীদের নিয়ে যে কতটা ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটি খুব ভালো করেই জানে ফতুল্লাবাসী। অথচ এখানে একটি হাসপাতাল হলে অনেকের প্রাণ বেঁচে যেত।’
হাসপাতালে নিতে নিতে জীবনের আলো নিভে যায় পোশাক শ্রমিক রোজিনা বেগমের। ছবি: নিউজবাংলা
ফতুল্লার শিল্প অঞ্চল বিসিকের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক রিফাত সুলতানা জানান, বিসিকে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ৩০০টি কারখানা আছে। এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করে। প্রতিদিনই তাদের কেউ না কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল নেই।
তাদের নিয়ে রাস্তার জ্যাম ঠেলে নিয়ে যেতে হয় সদর হাসপাতালে। এতে ভোগান্তির শেষ নেই যেন।
একই কথা বলেন পোশাক কারখানার নারী শ্রমিক আকলিমা খাতুন। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিসিকে অনেক লোক কাম করে। আমাগো কোনো সমস্যা হইলে ফার্মেসি থেকে ওধুষ কিনে খাই। এখানে সরকারি একটি হাসপাতাল হইলে ভলো হইতো। মানুষ সহজে চিকিৎসা পেত। গর্ভবতীদের জন্য বেশি ভালো হইতো।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সিদ্ধিরগঞ্জ। এখানেও কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই। এলাকাটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তখন আহতদের নিতে হয় সদরে, নয়তো ঢাকায়। এতে অনেক সময় রোগীদের হাসপাতালে নিতে নিতেই মানুষ মারা যায়। আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন স্থানীয় সাইদুল ইসলাম।
আদমজী ইপিজেডের শ্রমিক রহমান বলেন, ‘সরকারি কোনো হাসপাতাল না থাকায় পরিবারের কেউ অসুস্থ্য হইলে তারে নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। আমরা কাজ করি অল্প বেতনে। ঘরভাড়া, খাওয়া খরচ তারপর যদি হাসপাতালে অনেক টাকা বিল আসে তাহলে আমরা বাঁচবো কিভাবে। একটি সরকারি হাসপাতাল থাকলে সবার জন্য ভালো হতো।’
নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মশিউর রহমান বলেন, ‘এ দুটি এলাকায় স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেক পোশাক শ্রমিক বাস করেন। সেখানে কাছাকাছি কোনো সরকারি হাসপাতাল না থাকায় প্রায় ২০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
‘সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্যা সমাধানে আবেদন করা হবে।’
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম করোনামুক্ত হয়েছেন।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান রোববার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘আজ (রোববার) বিএনপি মহাসচিব ইসলাম আলমগীর ও তার স্ত্রীর করোনা নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তাদের দুজনেরই রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে।’
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন মির্জা ফখরুল। এরপর ২৫ জুন দ্বিতীয়বারের মতো করোনা আক্রান্ত হন তিনি। একইসঙ্গে তার স্ত্রীর নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টেও পজিটিভ ফল আসে।
অবশ্য করোনা প্রতিরোধী তিনটি টিকাই নেয়া আছে মির্জা ফখরুলের।
সারা দেশে প্রতি বছর ১০ লাখ ৬ হাজার টন ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু মিনিপ্যাক বা স্যাশে বর্জ্য রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টন, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এমন শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, প্লাস্টিক স্যাশে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এই গোলটেবিল বৈঠকে ‘প্লাস্টিক স্যাশে: স্মল প্যাকেট উইথ হিউজ এনভায়রনমেন্ট ডেস্ট্রাকশন’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
দেশে কী পরিমাণ মিনিপ্যাক ব্যবহার হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা-তথ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার বেশ কিছু এলাকা এবং উত্তরবঙ্গের জেলা রংপুরকে বেছে নেয়া হয়।
এসডোর গবেষণা অনুসারে, সমীক্ষাকৃত অঞ্চলের ৯৭ শতাংশ অংশেই মিনিপ্যাক বা স্যাশের ব্যবহার রয়েছে। আর মিনিপ্যাক মুক্ত আছে মাত্র ৩ শতাংশ এলাকা।
দেশে যে পরিমাণ মিনিপ্যাক বর্জ্য তৈরি হয় তার মধ্যে খাবারের স্যাশে ৪০, প্রসাধনী ২৪, ওষুধ ৮, গৃহসামগ্রী পরিষ্কারের পণ্য ৭, রান্নার মসলা ৭, পানীয় ৭ এবং অন্যান্য বর্জ্য ৭ শতাংশ।
খাবারের স্যাশের মধ্যে রয়েছে- চিপস, টমেটো সস, জুস, গুঁড়োদুধ, কফি ইত্যাদি। ওষুধের স্যাশের মধ্যে রয়েছে স্যালাইনের প্যাকেট ও মেডিসিন স্ট্রিপ। কসমেটিক স্যাশের মধ্যে আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনার। রান্নার উপাদানকে মসলা প্যাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। আকারে ছোট হলেও পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব বিশাল।
‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে বিশেষ করে স্যাশে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
এসডোর উপদেষ্টা মোখলেসুর রহমান প্লাস্টিক স্যাশের ভয়াবহ দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মানুষ মিনি প্যাকেটের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই জনগণের মধ্যে আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই মিনি প্যাকেটগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। উৎপাদকদেরও উচিত এসব স্যাশে উৎপাদন বন্ধ করে রিফিল সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে যখন বাজারে স্যাশে ছিল না এবং মানুষ কেনাকাটার জন্য রিফিল সিস্টেম ব্যবহার করত। আর সে জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল, উৎপাদন ও বিপণনের ওপর অধিক শুল্ক আরোপ করতে হবে।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা প্লাস্টিক স্যাশের পরিবর্তে সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প প্রচার করতে এবং একটি আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেম্বলি (ইউনিয়া ৫.২) ইতোমধ্যে একটি আন্তঃসরকারি কমিটি গঠন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে লিগ্যালি বাইন্ডিং প্লাস্টিক কনভেনশন নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘বাংলাদেশসহ ১৭৫টি দেশ এই বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তাই আমাদের উচিত নিজেদেরকে এর জন্য প্রস্তুত করা এবং দেশব্যাপী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য