দেশে করোনা সংক্রমণ রোধে সপ্তাহব্যাপী বুস্টার ডোজ কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে রোববার টিকাকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল কম। কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে প্রচারণা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১ কোটি ৪৪ লাখ মানুষকে তৃতীয় ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ হিসাবে দিনে ২০ লাখ মানুষকে বুস্টার দিতে হবে। কিন্তু প্রথম দিন শনিবার ১২ লাখের মতো মানুষ টিকা নেন। দ্বিতীয় দিনেও অধিকাংশ টিকাকেন্দ্রে উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এসেছে বলে মানুষ টিকা নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ হারিয়েছেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে সংক্রমণের প্রকোপ বাড়লেও দেশে করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে টিকায় আস্থা বাড়লেও বুস্টার ডোজ নিতে ঢিলেঢালা ভাব দেখা যাচ্ছে।
প্রচারের অভাবকে দায়ী করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। একই সঙ্গে মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করে তুলতে বাড়ানো হবে প্রচার-প্রচারণা। তবে সময় বাড়ছে না এই ক্যাম্পেইনের।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ নিতে আসেন আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা সোহেল রানা। তিনি জানান, দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার দিন তাকে দীর্ঘ সময় লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তখন ভিড় ছিল খুব। তবে বুস্টার ডোজ নিতে কোনো ধরনের ঝমেলা পোহাতে হয়নি।
এই কেন্দ্রের সমন্বয়ক ডা. মো. দাউদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘রোববার বেলা ২টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে ৬৪৮ জনকে বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে। আগের দিনও এমন সংখ্যক মানুষ টিকা নেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় অনেকেই ইচ্ছাকৃতভাবে টিকা নিচ্ছেন না। তারা মনে করছেন টিকা নেয়ার আর দরকার নেই। এ ছাড়া অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা। এ অবস্থায় টিকা নেয়ার পর বিশ্রামের সুযোগ পাবে না বলে অনেকেই টিকা নিচ্ছেন না।
‘আমার কেন্দ্রে প্রথম দুই ডোজ নেয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বুস্টার নিয়েছেন। বর্তমানে এখানে যারা আসছেন, তারা অধিকাংশই অন্য কেন্দ্র থেকে আসা। টিকাকেন্দ্রে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে ক্যাম্পেইন বেশি বেশি হওয়া দরকার।’
শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে হাতেগোনা কয়েকজন টিকা নিতে এসেছেন।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার বলেন, ‘বুস্টার ডোজ দেয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। তালিকাভুক্ত টিকাগ্রহীতাদের মোবাইলে মেসেজ দেয়া হয়েছে। রোববার প্রথম, দ্বিতীয় ও বুস্টার ডোজসহ ৮০ জনকে ফাইজার, ১৬৫ জনকে মর্ডানা এবং ২৫ জনকে সিনোভ্যাক টিকা দেয়া হয়েছে। মোট ২৭২ জন টিকা নেন। আগের দিন ২৩৩ জন টিকা নেন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, দেশে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু হয় গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর। এ পর্যন্ত বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৬৭ লাখ মানুষ। টিকাগ্রহীতার ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশকে বুস্টার ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়া সাড়ে চার কোটি মানুষ বুস্টার ডোজের অপেক্ষায় আছেন। বিশাল জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ ক্যাম্পেইন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের করোনা ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব শামসুল হক বলেন, ‘ধীরে ধীরে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়বে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেছে। অনেকেই নিজের ইচ্ছামতো চলাফেরা করছেন, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানছেন না।
‘রোগের প্রকোশ বেশি থাকলে মানুষ সেই বিষয়ে সচেতন বেশি হন। তখন সেবা নেয়ার প্রবণতা বাড়ে। করোনার সংক্রমণ আবার বাড়লে তখন বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকা নিতে আসবেন।’
বিশেষ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ছে না জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘লক্ষ্য পূরণ না হলেও বাড়বে না ক্যাম্পেইনের মেয়াদ। ১০ জুনের মধ্যে এই কর্মসূচি শেষ হবে। তবে মানুষের আগ্রহ বাড়াতে প্রচার-প্রচারণা আরও বাড়ানো হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে মোট ১৬ হাজার ১৮১ টিকাকেন্দ্রে বুস্টার ডোজ টিকা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ৬২৩টি স্থায়ী কেন্দ্র ও ১৫ হাজার ৫৫৮টি অস্থায়ী কেন্দ্র। স্থায়ী কেন্দ্রগুলোয় সাত দিন ও অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোয় দুই দিন টিকাদান কার্যক্রম চলবে। একযোগে ৪৫ হাজার ৫৩৫ জন টিকাদান কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে যুক্ত আছেন। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার পর চার মাস পার হয়েছে, ১৮ বছর ও এর বেশি বয়সের নাগরিকদের সবাই বুস্টার ডোজ পাবেন।
আরও পড়ুন:চিকিৎসকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার বয়স ৩২ বছর। এটাকে দুই বছর বাড়িয়ে চিকিৎসকদের বিসিএস পরীক্ষার বয়স ৩৪ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় বঞ্চিত হয়ে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের কারণে চিকিৎসকরা গেল বুধবার তাদের বেতন-ভাতা নিয়ে ধর্মঘট করেছিলেন। তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বর্তমান সরকার আন্তরিক। অন্তর্বর্তী সরকার শিগগিরই কিছু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তাদের এসব দাবি পূরণ করার চেষ্টা করবে।’
সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা গতকালের আন্দোলন থেকে সরে এসছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তবে এখনও কিছু ইন্টার্ন চিকিৎসক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অনুপস্থিত রয়েছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করছি, সবাই যেন নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন।’
চিকিৎসক এবং রোগীদের সুরক্ষার জন্য আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইনটি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উঠবে। এক সপ্তাহের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ার কাজটি শেষ হবে বলেও জানান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান।
আরও পড়ুন:অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করা হয়েছে ঝালকাঠির সিভিল সার্জন এইচএম জহিরুল ইসলামকে।
একই আদেশে দেশের আরও ২৮ জেলার সিভিল সার্জনকে ওএসডি করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সনজীদা শরমিন এতে সই করেছেন।
ঝালকাঠিতে ২১ তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা ডা. এইচএম জহিরুল ইসলাম ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ঝালকাঠি ১০০ শয্যা সদর হাসপাতারে তত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
প্রজ্ঞাপনে ওএসডি করা ২৯ সিভিল সার্জনকে আগামী ৬ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ নির্দেশ মান্য না করলে ৯ মার্চ তারা স্ট্যান্ড রিলিজ হয়ে যাবেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডায় নতুন ধরনের বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক দুগ্ধ শ্রমিক।
গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু থেকে এটি নতুন ও ভিন্ন ধরনের ভাইরাস।
দেশটির ফেডারেল স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্থানীয় সময় সোমবার এ তথ্য জানান।
ওই ব্যক্তির অসুস্থতাটিকে হালকা বলে মনে করা হয়েছিল। তার শরীরে প্রধান লক্ষণ ছিল চোখের লাল ভাব ও জ্বালা।
এমন অসুস্থতা সাধারণত বেশির ভাগ দুগ্ধবতী গরুর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) জানায়, আক্রান্ত ওই ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হননি, তবে সুস্থ হয়েছেন।
এর আগে হাঁস-মুরগির সংস্পর্শে আসা এক ডজনেরও বেশি মানুষের শরীরে নতুন এ ধরন দেখা গেছে। তবে এই প্রথম কোনো গরুর মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ল।
নেভাডা অঙ্গরাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, নেভাডার পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলের চার্চিল কাউন্টির একটি খামারে আক্রান্ত ওই দুগ্ধ শ্রমিকের সন্ধান পাওয়া যায়।
সিডিসির কর্মকর্তারা জানান, এ ব্যক্তি থেকে ভাইরাসটি অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই।
সংস্থাটি নিয়মিতই বলছে, ভাইরাসটি সাধারণ মানুষের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।
বর্তমানে প্রাণী ও কিছু মানুষের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বার্ড ফ্লু বিজ্ঞানীদের কাছে ‘টাইপ এ এইচ৫এন১’ ইনফ্লুয়েঞ্জা নামে পরিচিত। তবে এটির বিভিন্ন ধরন রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানান, ২০২৩ সালের শেষের দিকে গবাদি পশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বার্ড ফ্লু। পরের বছরের মার্চে বি৩.১৩ নামে পরিচিত একটি সংস্করণ নিশ্চিত করা হয়েছিল। এটি ১৬টি অঙ্গরাজ্যের ৯৬২টি গবাদি পশুকে সংক্রামিত করে। আর এসব আক্রান্তের বেশির ভাগই ক্যালিফোর্নিয়ায় হয়েছিল।
ডি১.১ নামে পরিচিত নতুন ধরনের ভাইরাসটি ৩১ জানুয়ারি নেভাডার গবাদি পশুর শরীরে শনাক্ত করা হয়। ডিসেম্বরে শুরু হওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংগ্রহ করা দুধে এটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৬৮ জন বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত হন। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই গরু বা হাঁস-মুরগির সংস্পর্শে কাজ করতেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষের চিকিৎসাসেবায় বর্তমানে আটজন চিকিৎসক রয়েছেন।
তাদের মধ্যে প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তাসহ নিয়মিত চিকিৎসক ছয়জন ও খণ্ডকালীন চিকিৎসক দুজন।
প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন যাবত পাঁচ মেডিক্যাল অফিসারের পদ শূন্য থাকায় ন্যূনতম সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারের নিম্নমানের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা কয়েক প্রকার ওষুধেই সীমাবদ্ধ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা সময় এ নিয়ে হয় আলোচনা-সমালোচনা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, হেলথ কেয়ারে সেন্টারে বর্তমানে কর্মকর্তা আছেন ১০ জন এবং কর্মচারী ১৬ জন। তাদের মধ্যে ছয়জন নিয়মিত, সাতজন মাস্টার রোলে।
তিনজন কর্মচারীর পদ শূন্য থাকায় ঘাটতি মেটাতে অন্য শাখা থেকে তিনজন কর্মচারীকে এনে জোড়াতালি দিয়ে চলছে কাজ। তা ছাড়া সেখানে কোনো নার্সের পদ নেই; নেই কোনো বিশেষায়িত ইউনিট, কোনো ডেন্টাল ইউনিট।
হেলথ কেয়ারের ডেন্টাল বিভাগে ১৪ বছর আগে সর্বশেষ একজন খণ্ডকালীন নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক ছিলেন। ২০১১ সালে তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে তার জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি কোনো নতুন চিকিৎসক। বিভাগটির ডেন্টাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিও এখন প্রায় অকেজো।
সেন্টারে সাত প্রকার অ্যান্টিবায়োটিক, গ্যাসের ওষুধ, চর্মরোগের মলম ও প্যারাসিটামল বিনা মূল্যে প্রদান করা হলেও চাহিদার তুলনায় তা অপ্রতুল। দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তুলনায় বহিরাগত রোগীর সংখ্যা সেখানে বেশি থাকে। তা ছাড়া লিফট বন্ধ থাকায় হাঁটা-চলায় অক্ষম রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হেলথ কেয়ার সেন্টারের নিচ তলার টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, কোনোটার দরজা ভাঙা। হেলথকেয়ারের বাইরেই রয়েছে ময়লার ভাগাড়, যেখানে বিভিন্ন আবাসিক হলের ময়লা ফেলা হয়।
দিনের বেলা কখনও সেন্টারটির বারান্দা মোটরসাইকেল রাখার পার্কিং হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যায়। তা ছাড়া হেলথ কেয়ার সেন্টারের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা কয়েক বছর আগে থেকেই নারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক আবাসনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী হাসান তপু বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে (হেলথ কেয়ার সেন্টারে) গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে যেতে বলা হয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ কেয়ার সেন্টারে জরুরি চিকিৎসার সব ব্যবস্থা থাকার কথা। সেখানে ডাক্তার নেই, ওষুধ নেই। পুরো ব্যবস্থাপনাই অগোছালো।’
অ্যাম্বুলেন্সের সমস্যা ও সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহিরুজ্জামান নিলয় বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না। তা পাওয়া খুব জটিল প্রক্রিয়া।
‘ডাক্তারের সিগনেচার থেকে শুরু করে আরও অনেক নাটক। তার ওপর অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর ভাঙা; সাইরেন ঠিক নেই, বাজেই না। অ্যাম্বুলেন্স তো নয়, যেন লক্করঝক্কর কোনো গাড়ি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. মো. সাঈদুর রহমান (শওকত) বলেন, ‘আমাদের হেলথ কার্ড রেডি। ভিসি মহোদয় ও অ্যাডভাইজার (উপদেষ্টা) মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই এটা আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের হাতে পৌঁছে দেব।’
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ব্যক্তিগতভাবে কোনো ওষুধ কেনে না। সরকারি কিছু ক্রয় নীতিমালা আছে। ওষুধের গুণগত মান ও মূল্য দেখেই এসব ওষুধ কেনা হয়।
হেলথ কেয়ার সেন্টারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘একটা সময় কেবল ৮-১০টা টেস্ট করা হতো, যা এখন করা হয় ২৮টা। তার মধ্যে ১৫টা টেস্টই করা হয় নামমাত্র মূল্যে।
‘ডেঙ্গু টেস্ট, ইউরিন টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি। বাকি টেস্টগুলোর দামও বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে অনেক কম। ছাত্রদের জন্য প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ছাড়। তা ছাড়া এক্সরের জন্য রয়েছে ডিজিটাল মেশিন।’
অ্যাম্বুলেন্সের কাঠামোগত ত্রুটি ও সময়মতো না পাওয়ার বিষয়ে নিয়ে ডা. সাঈদুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গাড়ি পরিবহন শাখার অন্তর্ভুক্ত। দুইটা অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটা সবসময় থাকে; একটা রিজার্ভ থাকে। অ্যাম্বুলেন্স কে নিচ্ছে, সবই রেকর্ড থাকে। অ্যাম্বুলেন্স ভাঙা কি না, জ্বালানি আছে কি না, সব দেখে পরিবহন শাখা।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, ‘হেলথ কেয়ারের ডাক্তার সংকটের ব্যাপারে আমরা অবগত। সমস্যাটি সমাধানের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তা নিরসনে কাজও শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডাক্তার নিয়োগের ব্যাপারটি সময়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই এই সমস্যা দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে ওষুধের ব্যাপারটি খতিয়ে দেখে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:দীর্ঘ ১৭ দিন পর বাসায় ফিরেছেন যুক্তরাজ্যে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
স্বাস্থ্যের যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় চিকিৎসকরা আপাতত তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে তিনটা) বেগম খালেদা জিয়াকে তারেক রহমান তার বাসায় নিয়ে যান।
এর আগে তারেক বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রিকলেন মসজিদে তার প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে অংশ নেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, শুক্রবার রাতের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসবে। সবকিছু ভালো থাকলে তাকে রিলিজ দেওয়া হতেও পারে। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক প্রফেসর পেট্রিক কেনেডি ও জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে থাকবেন।
খালেদা জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি জানিয়ে তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘উনার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ উনার বয়সটা একটা বিবেচ্য বিষয়।
‘তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তখন তাকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে আরও হয়তো দ্রুত সুস্থ করা যেত। এখন আমাদের চিকিৎসকদের বক্তব্য হচ্ছে আগে হলে হয়তো উনার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত।’
ডা. জাহিদ আরও জানান, বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, প্রেশার, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ সব রোগের জন্য ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা চলছে। আপাতত ওষুধের মাধ্যমেই এটি অব্যাহত থাকবে। এর বাইরেও আরও কোনো চিকিৎসা করা যায় কি না, সে লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হসপিটালের মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা এখানে মেডিক্যাল বোর্ডের সভায় অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে দ্য ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন বাসা থেকে খাবার এনে দেওয়া হতো। ছেলে তারেক রহমান, পুৃত্রবধূ জুবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই কন্যা জাফিয়া ও জাহিয়া রহমান বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়মিত দেখাশোনা করতেন।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ প্রতিদিন হাসপাতালে উপস্থিত থাকতেন।
গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। সেদিন হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ নামের হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
বাসসকে এমন তথ্য নিশ্চিত করেন লন্ডনের বসবাসরত বাংলাদেশি সাংবাদিক শাহেদ শফিক।
ডা. জাহিদকে উদ্ধৃত করে শাহেদ শফিক বলেন, ‘বেগম জিয়ার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি। বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার নতুন করে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে।
‘শুক্রবার সেসব রিপোর্ট পাওয়া যাবে। রিপোর্টে যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে তার ছুটি হতে পারে। এরপর তিনি বাসায় ফিরবেন।’
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক বলেন, পরবর্তী সময়ে বাসা থেকে নিয়মিত চিকিৎসা নেবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সার্বক্ষণিকভাবে অধ্যাপক পেট্রিক কেনেডি ও জেনিপার ক্রসের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন থাকবেন তিনি।
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘গত ১৭ দিনে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। দুই-একটি রিপোর্ট এখনও আসেনি। কয়েকটি পরীক্ষা ‘দ্য ক্লিনিকে’ করা যায় না। সেগুলো বাহিরের হাসপাতাল থেকে করাতে হয়।
‘তবে খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই বেটার আছেন।’
খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে না আসার কারণ জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ‘ম্যাডামের লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। কারণ, বয়সটা এখানে সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। তা ছাড়া জেলে রেখে তাকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।’
ডা. জাহিদ আরও বলেন, ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকের ডাক্তাররা বলছেন, আরও অনেক আগে ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে আসা গেলে তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা যেত। তাকে দ্রুত সুস্থ করা যেত।
‘এখন ওষুধের মাধ্যমে উনার যে চিকিৎসা চলছে, তা অব্যাহত রাখার জন্য সব চিকিৎসকরা একমত এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে।’
ওই সময় যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:কল্পনা করুন, আপনি বছরের পর বছর ধরে একটি নির্দিষ্ট পথে হাঁটছেন। এ পথ আপনি ভালোভাবে চেনেন, পথও আপনাকে চেনে।
হঠাৎ সেই পথ বদলে নতুন একটি কঠিন রাস্তায় হাঁটা শুরু করলেন, যার জন্য আপনি প্রস্তুত নন। এ নতুন রাস্তা সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা নেই। কোথাও ভাঙা আছে, ডাকাত আছে, ময়লা পানি জমে আছে ইত্যাদি।
যেহেতু আপনি শুনেছেন কেউ একজন এ পথে গিয়েছে, আপনিও যাওয়া শুরু করলেন প্রস্তুতি ছাড়াই। ব্যাপারটাতে অনেক ঝুঁকি আছে, যা আপনি না নিলেও পারতেন।
আপনার শরীরও ঠিক তেমন। ওজন কমানোর প্রয়াসে, দীর্ঘদিনের কার্বোহাইড্রেটভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস থেকে হঠাৎ কিটো ডায়েটে চলে যান, এর নানান রকম কঠিন ঝুকি আছে। স্বাস্থ্য কমাতে জীবনটাই যদি হারিয়ে ফেলেন, সেটা কি ভেবে দেখেছেন?
কিটো ডায়েট মূলত উচ্চ ফ্যাট, কম কার্বোহাইড্রেট এবং মাঝারি প্রোটিননির্ভর খাদ্যাভ্যাস। এটা শরীরের জন্য কার্যকর হতে পারে, কিন্তু পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া এটি বিশাল ক্ষতির কারণও হতে পারে। একটু দেখা যাক ক্ষতিটা কীভাবে হতে পারে।
আপনি যখন কিটো ডায়েট শুরু করবেন, শরীরে কার্বোহাইড্রেট আকস্মিকভাবে হ্রাস পায়। শরীর তখন গ্লুকোজের পরিবর্তে কেটোন ব্যবহার করতে শুরু করে। এ রূপান্তরের প্রথম ধাপেই শরীরে দেখা দেবে ‘কিটো ফ্লু’। মানে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং পেশির টান, শরীর যেন বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
শরীর শুধু শক্তির জন্যই নয়, হজমের প্রক্রিয়াতেও দীর্ঘদিনের অভ্যাসে অভ্যস্ত। কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি মানে হলো কম ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্য, ফাঁপা পেট বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যার জন্ম দেয়। আপনার পরিপাকতন্ত্র, যা এতদিন ফলমূল, শস্য, আর শাকসবজি থেকে পুষ্টি পেয়েছে, হঠাৎ তা থেকে বঞ্চিত হয়ে হজমের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে।
কিটো ডায়েটের সীমাবদ্ধ খাবারের তালিকা শরীরে ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং বি ভিটামিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি ঘটায়। দীর্ঘদিন এভাবে চললে শরীর দুর্বল হতে শুরু করে। হাড়ের ক্ষয়, ক্লান্তি আর ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে ওঠে।
কিটো ডায়েটের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো কিডনির ওপর চাপ। যদি প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে কিডনি অতিরিক্ত নাইট্রোজেন বের করতে হিমশিম খায়। যারা আগে থেকেই কিডনি সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
আর হৃদরোগ? উচ্চ স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ যদি সুষম না হয়, তবে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে।
কিটো ডায়েট শুধু শারীরিক নয়, মানসিক দিক থেকেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। আমরা সামাজিক জীব। খাবার নিয়ে আমাদের উৎসব আর বন্ধনের অনুভূতি জড়িত। কিটো ডায়েটের কঠোর নিয়ম এ সামাজিক সংযোগে একটি অদৃশ্য দেয়াল তুলে দেয়। এতে মানসিক চাপ, খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা, এমনকি খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হতে পারে।
শরীর আর মন শুধু বর্তমানের সঙ্গে নয়, অতীতের অভ্যাসের সঙ্গেও যুক্ত। যখন দীর্ঘদিনের অভ্যাসকে হঠাৎ বদলে দেওয়া হয়, তখন শরীরের প্রতিক্রিয়া হতে পারে ধীরে ধীরে।
কিটো ডায়েট বন্ধ করার পর হঠাৎ কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ শুরু করলে ওজন দ্রুত বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। শরীর পানি আর কার্বোহাইড্রেট ধরে রাখে, যা অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে জমা হয়।
তাহলে সমাধান কী? এ পথ ধরতে হলে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। কিটো ডায়েট হোক বা অন্য কোনো বড় পরিবর্তন, শুরু করার আগে শরীর আর মনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন জরুরি। ধীরে ধীরে কার্বোহাইড্রেট কমানো, সুষম ফ্যাট গ্রহণ করা এবং শরীরের সংকেতগুলো বোঝার মতো ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো ধীরে ধীরে এগিয়ে নিতে হবে সম্পূর্ণ রুপান্তরের আগে।
খাবার শুধুই শরীরের জন্য জ্বালানি নয়, এটি জীবনের অংশ। প্রতিটি পরিবর্তনে, বিশেষত এমন একটি চ্যালেঞ্জিং ডায়েটে, আপনার শরীর ও মনের চাহিদাকে সম্মান করা জরুরি।
জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখাই আসল বুদ্ধিমত্তা। আর এ ভারসাম্য আসে ধৈর্য আর সচেতনতার মাধ্যমে।
লেখক: হলিস্টিক হেলথ কোচ
ইমেইল: [email protected]
আরও পড়ুন:
মন্তব্য