চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্যের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া নয় পুশিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যার মধ্যে ৭ জন শিল্প পুলিশ এবং ২ জন সীতাকুণ্ড থানার।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনেরও ৯ কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। সব মিলিয়ে ২২ জন ফায়ার কর্মীর আহতের সংবাদ জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগুন লাগার খবরে প্রথমে সাড়া দেয় আমাদের কুমিরা স্টেশনের সদস্যরা। কিন্তু বিস্ফোরণের ফলে ৯ জন আহত হন৷ তাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিস্ফোরণে সীতাকুণ্ড পুলিশের কনস্টেবল তুহিনের পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন হয়ে গেছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ছাড়াও আরও ৮ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’
ওই পুলিশ সদস্যের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম রাশিদুল হক।
তিনি রাতে নিউজবাংলাকে বলেন, 'কনস্টেবল মোহাম্মদ তুহিন হোসেনের ডান পায়ের গোড়ালি গুরুতর আঘাত লেগে থেঁতলে গেছে। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তার কাজে সেখানে দায়িত্বে ছিলেন তিনি৷ বিস্ফোরণেই সে আহত হয়।'
সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী কনটেইনার ডিপোতে আগুন লেগে এরই মধ্যে চার জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট কাজ শুরু করেছিল। পরে আশেপাশের জেলা থেকে পাঁচটি ইউনিট যোগ দেয়। তবে কনটেইনার ডিপোতে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান।
আগুনে বেশ হতাহতের আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এরই মধ্যে দুই শতাধিক আহতকে বিভিন্ন মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধদের চিকিৎসায় সব ডাক্তারকে হাসপাতালে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
আরও পড়ুন:ছয় মাস আগে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শ্বশুরের দ্বারা ধর্ষিত এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে শ্বশুরকে আটক করেছে মিঠামইন থানা পুলিশ।
শুক্রবার রাত ১১টায় উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের পাতারকান্দি এলাকা থেকে অভিযুক্ত ওই শ্বশুরকে আটক করা হয়।
মিঠামইন থানার ওসি কলিন্দ্র নাথ গোলদার নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভুক্তভোগীর মা পরিস্কার বানু জানান, দুই বছর আগে উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের পাতারকান্দি গ্রামের একাব্বর মিয়ার ছেলে দিদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার কন্যা শামসুন্নাহারের। বিয়ের কিছুদিন পর দিদার কাজ করতে চলে যান চট্টগ্রাম। ছুটি নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে বাড়িতে আসতেন।
ফাঁকা বাড়িতে একাই থাকতেন শামসুন্নাহার। এই সুযোগে ৬ মাস আগে ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন শ্বশুর একাব্বর। পরে ভুক্তভোগী মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার স্বামীকে জানালে তিনি বাড়িতে আসেন।
বাড়ি এসে বাবার সঙ্গে রাগারাগি করে শামসুন্নাহারকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে চলে যান দিদার। আর এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করেন স্ত্রীকে এবং কিছুদিনের মধ্যেই আবারও চট্টগ্রাম চলে যান তিনি।
এরপর শামসুন্নাহারের সঙ্গে ধীরে ধীরে যোগাযোগ কমাতে থাকেন দিদার। এক পর্যায়ে তিনি শামসুন্নাহারকে বলেন, ‘তুমি আমার বাবার সঙ্গে খারাপ কাজ করেছো। এখন তোমার সঙ্গে কিভাবে যোগাযোগ রাখি। আর কীভাবেই বা আমার বাড়িতে নিই।’
এ অবস্থায় বেশ কিছুদিন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সম্প্রতি দিদার ফোন করে শামসুন্নাহারকে জানান, স্ত্রীকে আর ঘরে নেবেন না তিনি।
এই অপমান সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে বাবার বাড়িতে গলায় উড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করেন শামসুন্নাহার।
শামসুন্নাহারের মা বলেন, ‘এখন থানায় আছি। মামলা করার জন্য এসেছি। এখানেও একাব্বরের লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য চাপ দিচ্ছে।’
মিঠামইন থানার ওসি কলিন্দ্র নাথ গোলদার বলেন, ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় একাব্বরকে আটক করা হয়েছে। মরদেহ থানায় রয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
আরও পড়ুন:নাম জাফরুল হাসান। পেশায় ডিপ্লোমা চিকিৎসক। কিন্তু তার চেহারার সঙ্গে অনেক মিল মোহাম্মদ তামিম নামে এক চিকিৎসকের। তাই ডা. তামিমের নাম ব্যবহার করেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট পৌর শহরের এম কে ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ক্লিনিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে আসছিলেন জাফরুল।
বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত জাফরুলকে আটক করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে প্রতারণার কথা স্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা করার জন্য চুনারুঘাট থানায় তাকে হস্তান্তর করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আনজুম প্রিয়া।
আদালত সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার বাসিন্দা জাফরুল হাসান টাঙ্গাইলের প্রফেসর সোহরাব উদ্দিন আইএমটি অ্যান্ড ম্যাটস থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন। কিন্তু চুনারুঘাটে এসে তিনি নিজেকে ডা. তামিম পরিচয় দিতেন এবং বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার অ-৮৮০০২ ব্যবহার করে রোগী দেখে আসছিলেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিসে একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. উমর ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত আনজুম প্রিয়া জানান, জাফরুল কোনোভাবে ডা. তামিমের কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন। তামিমের বাড়ি নওঁগা জেলায় এবং তিনি বিষয়টি জানতেন না। তবে দুজনের চেহারায় মিল রয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতে কোনো জরিমানা বা কারাদণ্ড না দিয়ে নিয়মিত মামলার জন্য চুনারুঘাট থানায় ভুয়া ডাক্তার জাফরুলকে প্রেরণ করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:গাজীপুর মহানগরের মোগরখাল এলাকা থেকে এক পোশাক শ্রমিকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে ওই এলাকার আফজালের কলোনি বাড়িতে নিজ কক্ষ থেকে পোশাক শ্রমিকের মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত রনি বাবু জামালপুর জেলার মল্লিকপুর গ্রামের মোতাহার হোসেনের ছেলে। তিনি বিভিন্ন পোশাক কারখানায় সাব-কনট্রাক্টে প্যান্ট ওয়াশের কাজ করতেন।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান।
বাড়ির ম্যানেজার হেলাল জানান, সকালে ভাড়া চাওয়ার জন্য রনির রুমের দরজায় টোকা দিলে তা নিজে থেকেই খুলে যায়। পরে ঘরে প্রবেশ করে মেঝেতে রনির রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে বাড়িওয়ালা জানানো হয়।
বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দিলে দুপুর ১টায় বাসন থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় তারা।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিআইডি ও পিবিআই এর সদস্যরা।
বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান বলেন, ‘নিহত রনি আরও কয়েকজনের সঙ্গে সাবলেটে ওই ঘরে ভাড়া থাকতেন। তারাও বিভিন্ন কারখানার পোশাককর্মী। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রনিকে গলা কেটে হত্যা করার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেছে। কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।’
এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।
আরও পড়ুন:খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্র প্রমিজ নাগের মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুরাইয়া ইসলাম মিমকে।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাবুপুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে শুক্রবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৬ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বজলুর রশীদ।
এর আগে সোনাডাঙ্গা থানায় বৃহস্পতিবার রাতে সুরাইয়ার নামে মামলাটি করেন প্রমিজের চাচাতো ভাই প্রীতিশ কুমার নাগ।
খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গার গোবরচাকা এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে বুধবার সন্ধ্যায় প্রমিজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
প্রমিজ নাগ খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাচিয়া গ্রামে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, একই বিশ্ববিদ্যলায়ের লেখাপড়ার সুবাদে প্রমিজ ও সুরাইয়ার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুরাইয়া প্রায়ই প্রমিজের বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। এক পর্যায়ে বিয়ে করার জন্য প্রমিজের ওপর চাপ দেয়া শুরু করেন সুরাইয়া। দুজন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় প্রমিজ তাতে রাজি হননি। এ নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে সুরাইয়া প্রমিজকে নির্যাতন করতেন।
বাদীর অভিযোগ, সুরাইয়ার নির্যাতন ও প্ররোচণায় প্রমিজ আত্মহত্যা করেছেন।
কেএমপি সোনাডাঙ্গার সহকারী পুলিশ কমিশনার আতিক বলেন, ‘প্রমিজের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ও শরীরে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তার ঘরে বেশ কিছু স্থানে রক্তের দাগ রয়েছে ও সিসিটিভির ফুটেজে মরদেহ উদ্ধারের আগে ওই ঘর থেকে তার ওই বান্ধবীকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে দেখা গেছে।’
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সেখানে প্রমিজের বাবা-মাকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, কেউ একজন তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করছিলেন। তাকে ৫০ হাজার টাকা দেয়ার কথা লেখা আছে। তাই পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করে আমরা এটি শুধুমাত্র আত্মহত্যা হিসেবে নিতে পারছি না।’
প্রমিজের বন্ধু আজগর রাজ বলেন, ‘সুরাইয়ার সঙ্গে প্রমিজের সম্পর্কের বিষয়টি আমাদের বিভাগের সবাই জানত। কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসে কথা-কাটাকাটির পর তিনি প্রমিজকে মারধরও করেছিলেন।’
একই কথা জানিয়েছেন প্রমিজের চাচাতো ভাই দীপংকর নাগও। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে ওই তরুণী প্রমিজকে উপহারও পাঠিয়েছেন। সেগুলোর মূল্য ফেরত চাচ্ছিলেন প্রমিজের কাছ থেকে। প্রমিজ বাড়িতে এসব কথা শেয়ার করে টাকাও চেয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর উদ্বোধন পরবর্তী জনসভায় যোগ দিতে পটুয়াখালী থেকে জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ ৩০ হাজার বেশি মানুষ রওনা হয়েছে। এর মধ্যে বিকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে দোতলা ও তিনতলা বিশিষ্ট ৮টি যাত্রীবাহী লঞ্চে যাচ্ছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
বাকিরা সড়কপথে বাসসহ অন্যান্য পরিবহনে যাচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন।
বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা গেছে, লঞ্চে পদ্মা সেতুর উদ্দেশ্যে যারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে পিকনিকের আমেজ বিরাজ করছে। উচ্চ শব্দে ডিজেসহ বাউল শিল্পীদের গান বাজনায় সবার মধ্যে আনন্দ ঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।
একটি লঞ্চে অবস্থান করছেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. সোহেল। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণের আশির্বাদ। আবেগ অনুভূতি আর বিশ্বাসের প্রতীক। সেই পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের স্বাক্ষী হিসাবে জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আমরা জেলা যুবলীগ লঞ্চযোগে রওনা হয়েছি। এটি আলাদা এক অনুভূতি। লঞ্চে আমরা সাধারণত ঢাকা পটুয়াখালী যাতায়াত করি। কিন্তু আজকের যাত্রাটা ভিন্ন। সবার মধ্যে পিকনক পিকনিক ভাব বিরাজ করছে। নাচ গানে মাতোয়ারা সবাই।’
জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর শিকদার বলেন, ‘সমাবেশে যাচ্ছি মনেই হচ্ছে না। সবার মধ্যে অন্যরকম আনন্দ। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত পুরো লঞ্চ। পাশ দিয়ে যে লঞ্চ যাচ্ছে তারও একই অবস্থা। মনে হচ্ছে, আমরা কোনো পিকনিকে আছি। আশা করি, এভাবেই হাসি খুশিতে মেতে থাকবে সবাই।’
বাউল শিল্পী বশির সরকার জানান, বিভিন্ন স্থানে তিনি ভাড়ায় গান গাইতে যান। কিন্তু পদ্মা সেতু অভিমুখে যাত্রা করা একটি লঞ্চে তিনি ফ্রিতেই গান গাইছেন। তার দলের মোট ৬ সদস্যের সবাই অন্যরকম এক আনন্দ নিয়ে গান গাইছেন, বাদ্য বাজাচ্ছেন।
বশির সরকার বলেন, ‘গানের তালে সবাই নেচে নেচে উল্লাস প্রকাশ করছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলগমীর হোসেন বলেন, ‘ইতিহাসের স্বাক্ষী হিসাবে আমরা জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ কালকের সমাবেশে যোগ দিতে রওনা হয়েছি। ইতোমধ্যে ৮টি উপজেলার বিভিন্ন স্টেশন থেকে ৮টি লঞ্চ পদ্মা পাড়ের উদ্দেশে ছেড়ে এসেছে। প্রতিটি লঞ্চে অবস্থানরত সবার জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যালাইনসহ প্রচুর পরিমাণে শুকনো খাবারও আমরা মজুদ রেখেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি জানান, শুক্রবার বিকাল থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত প্রতিটি লঞ্চে কারো যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে সিনিয়ররা নজর রাখছেন। এ ছাড়া কোনো বিশৃঙ্খলা যেন না হয়, সেজন্য মূল সংগঠন ছাড়াও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া আছে।
কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একটি আনন্দঘন পরিবেশে পিকনিকের পরিবেশ নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা রাত্রিযাপন করে সকালে জনসভা স্থলে হাজির হবো।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘিরে আশপাশের এলাকায় সবুজায়নও এগিয়েছে সমান তালে। নদীর দুই পাড় ও এক্সপ্রেস ওয়ের দুই পাশে রোপণ করা হয়েছে লাখো গাছের চারা। কয়েক বছরে এসব চারা বড় হয়ে সবুজের আবহ তৈরি করেছে পুরো এলাকায়।
পদ্মা পারের জনপদ ছিল অনেকটা রুক্ষ। সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে নানা প্রকারের বনজ, ফলদ, ঔষধি আর সৌন্দর্যবর্ধক বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ।
শরীয়তপুরে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় বনায়ন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংযোগ সড়কের পাচ্চর থেকে টোলপ্লাজা পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৫০টি বনজ ও সৌন্দর্যবর্ধক ফুলের গাছ। এই জেলার দুটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রোপণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৪০টি ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ। এ ছাড়া সার্ভিস এরিয়া, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, শেখ রাসেল সেনানিবাসসহ প্রকল্প এলাকায় রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আরও ৫২ হাজার গাছের চারা।
পদ্মা সেতু প্রকল্প ও এক্সপ্রেস এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বনায়ন প্রকল্পের আওতায় আম, জাম, কাঁঠাল, তেঁতুল, নারকেল, পেয়ারা, লিচু, সেগুন, জারুল, শিলকড়ই, রাজকড়ই, গামার, তেজপাতা, দারুচিনি, নিম, বহেড়া, অর্জুন, হরীতকী, বকুল, পলাশ, দেবদারু, কৃষ্ণচূড়া, শিমুলসহ ৬১ ধরনের ফলদ, বনজ, ঔষধি গাছসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ রয়েছে।
ইতোমধ্যে সার্ভিস এরিয়া ও পুনর্বাসন (আরএস) এলাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে কৃষ্ণচূড়া, বকুল, কাঞ্চন, সোনালু, মহুয়া, বহেড়া, অর্জুন, পলাশ, শিমুলসহ অন্তত দেড় লাখ ফলদ ও ঔষধি গাছ।
পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের মহাসড়কের দুই পাশজুড়েও দৃষ্টিনন্দন ফুল-ফলগাছ চোখে প্রশান্তি এনে দেয়।
মাদারীপুর ও শরীয়তপুর বন বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের শরীয়তপুরের জাজিরা থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাচ্চর গোলচত্বর পর্যন্ত ছয় লেনের এক্সপ্রেস হাইওয়ের মাঝখানের অংশে নানা ধরনের গাছ রোপণ করা হয়েছে।
‘এর মধ্যে রয়েছে পাতাবাহার, মসুন্ডা, সোনালু, বোতল ব্রাশ, এরিকা পাম্প, উইপিং দেবদারু, রঙ্গনসহ বিভিন্ন ধরনের বাহারি ফুলের ছয় হাজারসহ ৫৬ প্রজাতির প্রায় দেড় লাখ গাছ। বন বিভাগের কর্মীদের পরিচর্যা আর প্রকৃতির মহিমায় সড়কের ঢালে ফলদ ও বনজ গাছের চারাও বেড়ে উঠছে।’
মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উপাধ্যক্ষ পরিবেশবিদ ড. বশীর আহম্মেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাছ যেমন একদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, অন্যদিকে মানুষের মনের খোরাকও মেটায়। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে গেলে মনটা ভরে যায়। চোখ ধাঁধানো ফুলের সমারোহ। তবে রাস্তার ক্ষতি যেন না হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। ছোট ছোট গাছ, ফুল ও হালকা ফলের গাছ থাকলে তেমন ক্ষতি হবে না, বরং এতে মন জুড়িয়ে যাবে।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ফ্রেন্ডস অফ নেচার’-এর নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের আইল্যান্ডে যে গাছ লাগানো হয়েছে, তা সত্যি অসাধারণ। মহাসড়কের এই ১০ কিলোমিটার পথে চলার সময় মনে হয় না বাংলাদেশে আছি। মহাসড়কের মাঝে আইল্যান্ডে ফুলের গাছ, দুই পাশে ফলের গাছ। এমন সৌন্দর্যময় প্রকৃতি দেশে আর কোথাও আমার চোখে পড়েনি। তবে পরিচর্যার অভাবে অনেক স্থানে গাছ মরে গেছে। সেগুলোও কর্তৃপক্ষের নজরে রাখতে হবে।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুর দক্ষিণ শিবচর প্রান্তে বন বিভাগের মাধ্যমে গত দুই বছরে সবুজায়নের প্রকল্প হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের চারা লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। ভ্রমণপিয়াসু দর্শনার্থীর ভিড় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
সড়ক ও জনপদ বিভাগের মাদারীপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের মাঝে ছোট গাছ লাগালে তেমন ক্ষতি হয় না। ফুল ও ছোট ফল গাছের শাখা-প্রশাখা তেমন বাড়ে না। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের মাঝে প্রায় ১২ ফুট চওড়া জায়গা আছে, সেখানে কোন ধরনের গাছ লাগানো উচিত তা গবেষণা করেই বন বিভাগ লাগিয়েছে।’
আরও পড়ুন:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল ও কটূক্তি করে ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করার অভিযোগে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের সুলতাননগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ২৫ বছর বয়সী রুবেল মিয়া ও ১৫ বছর বয়সী মিজানুর রহমান আলালের বাড়ি সুলতাননগর গ্রামেই।
করিমগঞ্জ থানার ওসি শামছুল আলম সিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওসি জানান, গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য