ঢাকার আশপাশের চারটি নদ-নদীই ভয়াবহ দূষণের শিকার। আর এ জন্য এককভাবে ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র ও বৃষ্টির পানি নদীতে ফেলার ব্যবস্থা করেছে ওয়াসা। এভাবে নদ-নদীর এই দূষণ মানবাধিকার লঙ্ঘন।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস সামনে রেখে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
কমিশন চেয়ারম্যান একই সঙ্গে জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আগেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী এবং টঙ্গী খাল দূষণমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন কাজ করছে।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, নদী দূষণে যদি কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয় তাহলে সেটি হবে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকা শহরে যত মলমূত্র আছে, তার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই এই চারটি নদীতে যায়। এটা কীভাবে যায়? ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এটা ঠিক করা।
তিনি বলেন, রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র, বৃষ্টির পানি ইত্যাদি নদীতে গিয়ে পড়ছে। ওয়াসার দায়িত্ব ছিল টয়লেটের ময়লাসহ পানি এবং গোসলখানাসহ অন্যান্য লাইনের পানি আলাদাভাবে বের হওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটা তারা করেনি, বরং সবকিছু একই লাইন দিয়ে নদীতে সংযোগ দিয়েছে, এ কারণে নদী দ্রুত দূষণের শিকার হয়েছে।
ড. চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পানির অপর নাম জীবন। অথচ এখন এই পানিই আমাদের জন্য মরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মার্চে আমি ঢাকার উত্তরে নদী সফরে গিয়ে খুঁজেছি, কোথায় গেলে এমন একটি নদী পাব যেখানে মানুষ গোসল করছে।
‘রাজধানী থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে গোসল করার মতো একটি নদী পাওয়া গেল, নাম সুচিয়া নদী। সেখানে দেখলাম, কিছু মানুষ গোসল করছে, কেউবা মাছ ধরছে। জানা গেল, আকিজ ফ্যাক্টরি বর্জ্য ফেলায় সেটিও দূষিত হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ঢাকার চারপাশ মিলে প্রায় চার কোটি মানুষ বসবাস করেন। এই চার কোটি মানুষের জন্য কোনো একটি নদী বা জলাশয় নেই, যেখানে কেউ গোসল করতে পারে। এটাও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন।
‘ঢাকার চারপাশে এসব নদীতে ঝিনুক নেই, মাছ নেই, নেই কোনো মাছরাঙা পাখি বা চিল। এখন নদীতে পাওয়া যাচ্ছে সাকার ফিশ। এসব নদীতে সাকার ফিশ বাঁচতে পারে, কারণ তারা পানি থেকে অক্সিজেন নেয় না। জলের ওপরে সাকার ফিশ ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় বাঁচতে পারে। এ থেকে নদীগুলোর অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়।’
পরিবেশ দূষণের কারণেই মানুষ ডায়রিয়া-কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে। দূষিত এসব পানি এখন কলেরার উৎস বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আগেই আমরা নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করব। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ। অনেকেই এটাকে অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আমি বলব, ৯ মাসে যদি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যায়, তাহলে এই ৯ মাসে আমরা কেন নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে পারব না?’
নদী রক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান পরিবেশ ধ্বংসে জড়িত জনপ্রতিনিধিদের পদ থেকে অপসারণসহ প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) ১০ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এইচআরপিবি প্রেসিডেন্ট আইনজীবী মনজিল মোরশেদ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভূইয়া।
আরও পড়ুন:বন্যায় ফসলের ক্ষতি মেনে নিয়েই চলে রংপুর অঞ্চলের চাষাবাদ। ক্ষতি কমাতে কৃষকদের থাকে তাই এক ধরনের প্রস্তুতি। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। পানির নিচে তলিয়ে থাকা ফসল নিয়ে হতাশার পাশাপাশি চিন্তিত তারা পরের ধাপের চাষাবাদ নিয়ে।
কৃষিবিদসহ বিশ্লেষকরা রংপুর অঞ্চলের চলতি বন্যায় ক্ষতির শিকার কৃষকদের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহায়তা বাড়ানোর কথা বলছেন। একই সঙ্গে তারা নদী, খাল সংস্কারসহ স্থায়ী সমাধানে জোর দিচ্ছেন। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় এ বছর কয়েক দফায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নের বলদমারা এলাকার কৃষক আব্দুল বাতেন। তিনি দুই বিঘা জমিতে চিনাবাদাম এবং দুই বিঘা জমিতে তিল ও কাঁচা মরিচ আবাদ করেছিলেন। আগাম বন্যায় তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আগের বচর সাতবার বন্যা হইচে, এবার একবার হইল, আরও তো হইবে। একবারের বানোত কিছু কি আছে, সোউগ তো তলে গেইছে। বচরে বচরে (প্রতি বছর) এমন করি ফকির হয়া যাইতেছি। তিন মাস আবাদ করি, বন্যা-খরাত খাই, এবার বুঝি সেডাও হবান্নয়।’
অভিন্ন আক্ষেপ চরাঞ্চলের সব কৃষকের। তারা তিল, কাউন, চিনাবাদাম, কাঁচা মরিচ, ভুট্টা ও শাকসবজি চাষ করে সংসার চালান। একবার ফসল তুলতে পারলে সেটি দিয়েই সামাল দেন একাধিকবারের ক্ষতি। বন্যার সময় তাদের আগাম প্রস্তুতিও থাকে। কিন্তু আকস্মিক বন্যা তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারীর বহু চরে পানির নিচে কৃষকের ফসল। কিছু জায়গায় পানি কমলেও ফসল রক্ষার সুযোগ নেই। নষ্ট হয়েছে বীজতলাও।
চরশৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক আহাদ আলী বলেন, ‘সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি করি। যে টাকা হয়, তা দিয়ে চার সন্তানকে লেখাপড়া করাই। সব আবাদ পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সংসার চালাতে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি।’
কৃষক আব্দুল করিম, সফুর আলী, নজিবর রহমানসহ কয়েকজন জানান, রংপুরে প্রতি বছর কয়েক দফায় বন্যা হয়। এবার আগাম বন্যায় এমন ক্ষতি হয়েছে, যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না।
শুধু কুড়িগ্রাম নয়, অভিন্ন পরিস্থিতি গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও রংপুর গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের।
যে ক্ষতিতে বাড়ছে চিন্তা
রংপুরের আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৮ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলায় ফসল নষ্ট হয়েছে ৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমির। এর মধ্যে পাট ৩ হাজার ৮৫৬, আউশ ধান ২ হাজার ৫০৬ ও আমন বীজতলা ৩১২ হেক্টর। শাকসবজি ও অন্যান্য মিলে রয়েছে আরও ২ হাজার ১০১ হেক্টর।
গাইবান্ধা জেলায় ফসল নষ্ট হয়েছে ৪০৫ হেক্টর জমির। এর মধ্যে পাট ১৩৩, আউশ ধান ৫৬, আমন বীজতলা ৫৬ এবং শাকসবজি ও অন্যান্য মিলে ১৬০ হেক্টর জমির ফসল।
লালমনিরহাট জেলায় ফসল নষ্ট হয়েছে ২০২ হেক্টর জমির। এর মধ্যে পাট ১৭ হেক্টর, আউশ ধান ২০ হেক্টর, আমন বীজতলা ৭৯ হেক্টর এবং শাকসবজি ও অন্যান্য মিলে ৮৬ হেক্টর।
এসব এলাকায় তালিকার বাইরে আরও ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে আছে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ। সে হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এমদাদ হোসেন সেখ বলেন, ‘কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সিদ্ধান্ত আসেনি।’
সহায়তা ও সমাধান
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম বলে মনে করেন কৃষকরা।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হয়। তাদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমি আবাদ করার মতো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়।’
রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেন বলেন, ‘বন্যার পর ফের আবাদ করতে অনেক কষ্ট। সরকার যেটুকু সহযোগিতা করে, তাতে পোষায় না। আবার এসব সহযোগিতা সবার জোটেও না।’
কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে পুনর্বাসনে সরকার যে সহযোগিতা করে, তা যথেষ্ট হয়। সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণ দিলে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য ৩৩ শতাংশ বেশি দরে সরকার কিনলে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।’
নদী গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৪২টি ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার।
‘অল্প বৃষ্টি বা পানিতেই বন্যা হচ্ছে এই অঞ্চলে। স্থায়ী পরিত্রাণের জন্য নদীগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। নদী খনন করতে হবে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলে এমন বৃষ্টিতে বন্যা হবে না। আর কৃষি বিমা চালু করে সরকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের সহায়তা করতে পারে।’
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রণোদনার পরিমাণ বাড়াতে হবে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে তারা যখন আবাদ শুরু করবেন, তখন ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সার, কীটনাশক ও বীজ বিনা মূল্যে দিতে হবে। বন্যার কথা চিন্তা করে ফসল উৎপাদনের সময়ে পরিবর্তন আনতে হবে।
‘বন্যায় আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আগেই উঁচু স্থান লিজ নিয়ে চারা রোপণ করতে পারে। পানি নেমে গেলে এসব বীজ ক্ষতিগ্রস্তদের বিতরণ করলে কৃষকের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে প্রতি বছর ১০ লাখ ৬ হাজার টন ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু মিনিপ্যাক বা স্যাশে বর্জ্য রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টন, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এমন শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, প্লাস্টিক স্যাশে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এই গোলটেবিল বৈঠকে ‘প্লাস্টিক স্যাশে: স্মল প্যাকেট উইথ হিউজ এনভায়রনমেন্ট ডেস্ট্রাকশন’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
দেশে কী পরিমাণ মিনিপ্যাক ব্যবহার হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা-তথ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার বেশ কিছু এলাকা এবং উত্তরবঙ্গের জেলা রংপুরকে বেছে নেয়া হয়।
এসডোর গবেষণা অনুসারে, সমীক্ষাকৃত অঞ্চলের ৯৭ শতাংশ অংশেই মিনিপ্যাক বা স্যাশের ব্যবহার রয়েছে। আর মিনিপ্যাক মুক্ত আছে মাত্র ৩ শতাংশ এলাকা।
দেশে যে পরিমাণ মিনিপ্যাক বর্জ্য তৈরি হয় তার মধ্যে খাবারের স্যাশে ৪০, প্রসাধনী ২৪, ওষুধ ৮, গৃহসামগ্রী পরিষ্কারের পণ্য ৭, রান্নার মসলা ৭, পানীয় ৭ এবং অন্যান্য বর্জ্য ৭ শতাংশ।
খাবারের স্যাশের মধ্যে রয়েছে- চিপস, টমেটো সস, জুস, গুঁড়োদুধ, কফি ইত্যাদি। ওষুধের স্যাশের মধ্যে রয়েছে স্যালাইনের প্যাকেট ও মেডিসিন স্ট্রিপ। কসমেটিক স্যাশের মধ্যে আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনার। রান্নার উপাদানকে মসলা প্যাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। আকারে ছোট হলেও পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব বিশাল।
‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে বিশেষ করে স্যাশে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
এসডোর উপদেষ্টা মোখলেসুর রহমান প্লাস্টিক স্যাশের ভয়াবহ দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মানুষ মিনি প্যাকেটের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই জনগণের মধ্যে আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই মিনি প্যাকেটগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। উৎপাদকদেরও উচিত এসব স্যাশে উৎপাদন বন্ধ করে রিফিল সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে যখন বাজারে স্যাশে ছিল না এবং মানুষ কেনাকাটার জন্য রিফিল সিস্টেম ব্যবহার করত। আর সে জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল, উৎপাদন ও বিপণনের ওপর অধিক শুল্ক আরোপ করতে হবে।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা প্লাস্টিক স্যাশের পরিবর্তে সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প প্রচার করতে এবং একটি আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেম্বলি (ইউনিয়া ৫.২) ইতোমধ্যে একটি আন্তঃসরকারি কমিটি গঠন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে লিগ্যালি বাইন্ডিং প্লাস্টিক কনভেনশন নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘বাংলাদেশসহ ১৭৫টি দেশ এই বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তাই আমাদের উচিত নিজেদেরকে এর জন্য প্রস্তুত করা এবং দেশব্যাপী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া।’
আরও পড়ুন:খাল-নদী সংস্কারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করেছে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের খনন। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
নগরীর শহীদ নগর এলাকায় বুধবার বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের পুনর্খনন কাজের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের খাল-নদীগুলো সংস্কার করতে হবে। সংস্কারে কারও ব্যক্তিগত ক্ষতি করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। তবে যারা খাল-নদী দখলের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন, আমাদের কাজে তারা মনঃক্ষুণ্ন হতেই পারেন।
‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নগরী ঢাকা। এর পরিবেশ ঠিক করতে হবে আমাদের। ঢাকার পরিবেশ সুন্দর করার মাধ্যমে আমাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকাকে উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য খাল এবং নদীগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।’
মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সিএস ম্যাপ অনুযায়ী আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনর্খনন কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশের খনন হবে। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে বেষ্টনী দেব।
‘আদি বুড়িগঙ্গা, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ, চকবাজার ও পুরান ঢাকা ঘিরে কীভাবে একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করা যায়, সে চেষ্টা চলছে। নদীর প্রবাহ ও নদী পুনরুদ্ধার করে একটি বাসযোগ্য নগরী উপহার দেয়া হবে।’
দক্ষিণ সিটির নিজস্ব অর্থায়নে বুড়িগঙ্গায় খননকাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সাড়ে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী অর্থবছরে আরও বেশি বরাদ্দ রাখা হবে। আনন্দের বিষয় যে আমরা কাজটি শুরু করতে পেরেছি।’
পরে নগরীর ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মেয়র। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ ও সক্ষমতা তৈরিসহ ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সুপারিশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। ওয়াশ খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাজ ধীরগতিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজেট বরাদ্দ কম হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
বাজেটে হাওর এবং পার্বত্য এলাকায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে, তবে চর এবং উপকূলীয় এলাকায় বরাদ্দ বাড়েনি। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। ওয়াশ খাতের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
নিরাপদ পানি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইনটিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, অ্যান্ড ওয়াটার পভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াটার এইডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর হোসেন ইশরাত আদিবসহ ওয়াশ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি আর সিলেটে হতে পারে ভারি বৃষ্টি।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার সকালে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঢাকা আবাহওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর সিলেটেও বৃষ্টি হবে। ওই অঞ্চলে মোটামুটি ভারি বৃষ্টিই হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলে মূলত বেশি বৃষ্টি হবে। সেই তুলনায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম থাকবে। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে।’
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, এ ছাড়া রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ীভাবে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৬ শতাংশ। সোমবার সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে মোংলায় ১৩১ মিলিমিটার।
যানবাহনের প্রচলিত অ্যাসিড ব্যাটারির মেয়াদকাল ছয় মাস থেকে এক বছর। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অথচ একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চলে পাঁচ থেকে ছয় বছর। এটি যানবাহন চালানোর খরচ কমিয়ে দেয়। পরিবেশও বাঁচায়।
এমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির থ্রি হুইলার বাজারে আনছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাঘ মোটরস’। আগামী জুলাইয়ে উৎপাদনে যাবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি জানান, দেশে এটি হবে প্রথম ইকো থ্রি-হুইলার ট্যাক্সি। এর নাম রাখা হচ্ছে ‘বাঘ’। গাজীপুরের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের তেলের বিকল্প নিয়ে ভাবতেই হবে। শুধু থ্রি-হুইলারই নয়, আগামী তিন বছরে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনও যুক্ত হবে বাঘ মোটরসের বহরে।’
গত মার্চে এ বাহনটিকে চলাচলের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। উচ্চ নিরাপত্তা ফিচার, কম খরচ ও উন্নত প্রযুক্তির এই গাড়ির দাম ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাঘ মোটরস জানিয়েছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের থ্রি হুইলারে তেমন গরম অনুভূত হয় না।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ মোটরস প্রথম কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি নিজস্ব প্যাটেন্ট দিয়ে, নিজস্ব ডিজাইনে নিজস্ব প্রকৌশলে দেশে গাড়ি উৎপাদন করছে। বর্তমানে দেশে অন্যরা যেসব গাড়ি উৎপাদন করছে, সেগুলো প্রযুক্তিসহ সব কিছুই অন্য দেশের। এখানে শুধু উৎপাদন হচ্ছে। আর আমাদের পেটেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজস্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ পরিবহন শতভাগ পরিবেশবান্ধব, কোনো দূষণ নাই, সৌরশক্তিতে চলে, গ্রিন এনার্জি ব্যবহার হয়। এমন হাজারটা কারণ আছে, যাতে মানুষ আমাদের এই বাঘ ইকো মোটরসের ইকো ট্যাক্সি ব্যবহার করবে।’
অ্যাসিড ব্যাটারির কারণে দেশে প্রায় ২ কোটি লিটার অ্যাসিড নির্গত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। ফলে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন উৎসাহিত করার সময় এসেছে।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ইকো থ্রি-হুইলারের ডিজাইন-ড্রইং করে পেটেন্ট করেছি। এটা পৃথিবীর প্রথম সোলার ইকো থ্রি-হুইলার, যেটা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে চলে। এটির পারমিশন পেতে আমাদের প্রায় ৩০ মাস সময় লেগেছে।’
এটির দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটা সিএনজি অটোরিকশার দাম এখন প্রায় ১৮ লাখ টাকা, সেখানে আমরা একটা ইকো থ্রি-হুইলার ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় দিচ্ছি। আমাদের একটা ব্যাটারি ৬ বছর পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হয় না। প্রচলিত যেসব অ্যাসিড ব্যাটারি আছে, ছয় বছরে সেখানে ১২টি ব্যাটারি প্রয়োজন হয়।’
২০২০ সালের এপ্রিলে বাঘ মোটরস ১১টি যান তৈরি করে। ডুয়াল পাওয়ার-ব্যাটারি এবং সৌরচালিত এ থ্রি-হুইলারে যাত্রীর নিরাপত্তায় বেশ কিছু ফিচার যুক্ত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে যাত্রীর সিটের সঙ্গে ‘প্যানিক বাটন’ রাখা রয়েছে। এই বাটনে চাপ দিলে গাড়ির গতি মুহূর্তেই ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এরপর ২০ মিনিটের জন্য গাড়িটি অচল হয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সতর্কবার্তাও পাঠাবে। এতে কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সির কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় করতে পারবে।
এতে থাকবে নিরাপত্তা ক্যামেরা, যা একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে যুক্ত থাকবে। সব ধরনের ভিডিও রেকর্ড ও সংরক্ষণ থাকবে সার্ভারে। থাকবে এমবেড করা রিয়াল-টাইম জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, যা থ্রি-হুইলারের রিয়াল-টাইম অবস্থান দেখাবে। চুরি ঠেকাতে থাকবে আলাদা প্রযুক্তিও।
গাড়িগুলোতে উচ্চমানের ইস্পাত ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সাধারণত বাস-কারে ব্যবহৃত হয়।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গাড়ি শতভাগ মেটাল বডির তৈরি। পুরো বডিই মোটরগাড়ির মতো করে তৈরি, যা যাত্রীকে অধিক নিরাপত্তা দেবে। ব্রেক ও লাইট ছাড়া পুরো গাড়ির দুই বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি থাকবে। গাড়িতে ওয়াইফাই সিস্টেম থাকবে, মোবাইল চার্জিং সিস্টেম থাকবে, জিপিএস থাকবে, মনিটর থাকবে।’
২০২৫ সালের পর বিশ্বে কোনো ডিজেলচালিত গাড়ি তৈরি হবে না। ২০৩০ সাল থেকে তৈরি হবে না কোনো অকটেন গাড়িও। সব গাড়িই বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে পরিণত হবে।
নিজস্ব রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে একটি ট্যাক্সি সার্ভিস হিসেবে কাজ করবে এই ইকো ট্যাক্সি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও এটি কেনা যাবে।
সাধারণ সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার এবং হিউম্যান-হলারের চেয়ে বড় চাকা থাকবে বাঘ ইকো ট্যাক্সিতে। পাশাপাশি অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম (এবিএস)-সহ একটি হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমও থাকবে। গাড়ির ছাদে থাকবে সোলার প্যানেল। এতে ব্যবহৃত একটি ৪৮০ ওয়াটের সোলার প্যানেল দিনের বেলায় ৪০ শতাংশ চার্জ হবে ব্যাটারিতে। যার ফলে অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার যেতে পারবে গাড়িটি।
প্রতি কিলোমিটারে এটি চলার খরচ হতে পারে ১ দশমিক ৩৩ টাকার মতো। সম্পূর্ণ চার্জে ১৫০০ ওয়াটের গাড়িটি ৯০ কিলোমিটার চলতে পারে। এতে চালকের দিনে খরচ হবে ১২০ টাকা। ব্যাটারির চার্জ শেষ হলেও চিন্তা নেই। ৬০ ভোল্টের ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগবে।
বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব চার্জিং পয়েন্টও বসানো হবে। চার্জিং পোর্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-সহ একটি মাইক্রো চিপ ইনস্টল করা থাকবে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পোর্টটি খোলা হবে। গাড়ির মালিক নির্দেশ দিলেই চার্জ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:স্মরণকালের ভয়াবহ তাপদাহে ধুঁকছে ইউরোপ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকছে যে ফ্রান্সের একটি অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের আয়োজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের গিরন্ড জেলার বন্দর শহর বোর্দোতে আপাতত কনসার্ট এবং বড় জনসমাবেশ করা যাবে না।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কায় করছে দেশটির আবহাওয়া অফিস।
ফ্রান্সের আবহাওয়া অফিস বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যতীত স্থানগুলোতেও অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ব্যক্তিগত উদযাপন যেমন বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হবে।
স্থানীয় কর্মকর্তা ফ্যাবিয়েন বুসিও ফ্রান্স ব্লু রেডিওকে বলেন, ‘প্রত্যেকই এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে তীব্র তাপের সময়কাল আরও বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, তারা জনগণকে সতর্ক করেছে। এই আবহাওয়ার যেন কেউ বাইরে না বের হয়।
গিরন্ডের আবহাওয়া কর্মকর্তা মেটিও ফ্রান্স বলেন, তীব্র গরমে ধুঁকছে ফ্রান্স। উত্তর আফ্রিকা উড়ে আসা গরম বাতাসের কারণে এমনটা ঘটেছে।
‘প্যারিসে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে। এটি খরা দাবানলের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তুলুসের বাসিন্দা জ্যাকলিন বননড। তিনি বলেন, ‘আমি বয়স ৮৬। এখানেই আমার জন্ম। মনে হচ্ছে এটিই আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ তাপপ্রবাহ।’
গ্রিড অপারেটর আরটিই জানিয়েছে, এয়ার-কন্ডিশনার এবং ফ্যানের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ফ্রান্সকে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে বাধ্য করছে।
একই দশার মধ্যে আছে স্পেন, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যও।
শতাব্দীর উষ্ণতম তাপদাহ অনুভূত হচ্ছে স্পেনে। সপ্তাহান্তে তাপমাত্রা সর্বোচ্চে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া পরিষেবা-অ্যামেট। আঞ্চলিক সরকার জানিয়েছে, কাতালোনিয়ায় ২০ হাজার হেক্টর জমি দাবানলে পুড়ে গেছে।
ইতালির বৃহত্তম নদী পো-এর বিশাল অংশে পানি এতটাই কম যে, স্থানীয়রা বালির বিস্তৃতির মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে পারছে। এমনকি যুদ্ধকালীন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পুনরুত্থিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ ইংল্যান্ডে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লন্ডনে তৃতীয় স্তরের তাপ-স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি হয়েছে।
চরম তাপ ইউরোপে সীমাবদ্ধ না
গেল সপ্তাহে রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশকে বাড়ির ভেতরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ভারতের দিল্লিতে চলতি গ্রীষ্মের ২৫ দিনে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে নির্গত হচ্ছে। এ ধরনের গ্যাস সূর্যের তাপকে আটকে রাখে, ফলে গ্রহটি উষ্ণ হয়ে ওঠছে।
মন্তব্য