আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা।
তেজগাঁওয়ের এফডিসিতে শনিবার দুপুরে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন সম্ভব’ শীর্ষক ছায়া সংসদে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না এলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, পাবে না। আমি মনে করি এই নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠে আনতে হবে এবং সেটার দায়িত্ব সরকারি দলের নিতে হবে।
‘বিএনপিকেও আমার অনুরোধ থাকবে যে এই নির্বাচন বর্জন করে, বয়কট করে সমস্যার সমাধান হবে না। এটাকে আপনারা আলোচনা করে ঠিক করবেন, কীভাবে নির্বাচনে যাবেন।’
এ সময় বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী নির্বাচন কমিশন একটি চ্যালেঞ্জিং প্রতিষ্ঠান উল্লেখ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতায় নির্বাচন কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। নির্বাচন কমিশনের এতে হাত দেয়া উচিত হবে না। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনা করে এই বিষয়ে সমঝোতায় আসবে।’
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে না পারলে সিইসির পদত্যাগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। পদত্যাগ কাপুরুষোচিত বিষয়। এটি আমার পছন্দ না।’
ইভিএমের প্রতি সমর্থন দিয়ে সাবেক সিইসি বলেন, ‘কর্মজীবনের শুরু থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন থেকে দেখেছি বিভিন্ন সময় ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হতো। ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের সেই কালচারটা ইভিএমের মাধ্যমে বন্ধ হয়েছে। আরও অন্তত ২০ বছর আমাদের ইভিএমে থাকা উচিত।’
ইভিএমের সুফল উল্লেখ করে করে নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা ইভিএমে প্রাধান্য দিয়েছি কারণ এটার মাধ্যমে কারচুপি করা যায় না, একজনের ভোট আরেকজনে দেয়া যায় না। নির্ধারিত সময়ের আগে ও নির্ধারিত সময়ের পরে আর নতুন করে ভোট দেওয়া যায় না এবং ভোটগুলো সংরক্ষিত থাকে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কেন্দ্রে ভোট গণনা করা যায়। প্রার্থী ও তাদের এজেন্টরা ৫-৭ মিনিটের মধ্যে রেজাল্ট পেয়ে যায়। সেটি কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যায় না।’
আল হেলাল শুভ, ঢাকা
জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের মতবিনিময় সভায় আবারও প্রকাশ্যে উঠে এসেছে দলীয় বিভেদ-বিভক্তি আর কোন্দল। দলে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে অভিযোগ করে পদবঞ্চিত নেতারা পার্টির নেতৃত্ব রওশন এরশাদকে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার গুলশানের এক হোটেলে পার্টির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন রওশন এরশাদ। সভায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের উপস্থিত ছিলেন না।
রওশন বলেন, ‘দীর্ঘ ছয় মাস থাইল্যান্ডের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। পার্টির কেউ খোঁজ নেয়নি। অথচ যাদেরকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তারাই আমার নিয়মিত খোঁজ রেখেছেন। মসজিদ, মাজারসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে দোয়া প্রার্থনা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজ পল্লীবন্ধু এরশাদ নেই। তাই জাতীয় পার্টি এলোমেলো হয়ে গেছে। উনি থাকলে পার্টি অন্যরকম হতো।
‘যাদের দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদেরকে ফিরিয়ে নিতে হবে। যারা চলে গেছে তাদেরকেও ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুন প্রজন্মকে দলে আনতে হবে। দলকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমকক্ষ বানাতে হবে। নতুবা রাজনীতির টিকে থাকতে পারব না।’
সভায় বক্তারা জাতীয় পার্টিতে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে বলে অভিযোগ করে পার্টির নেতৃত্ব রওশন এরশাদকে নেয়ার আহ্বান জানান।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘পার্টি শক্তিশালী করার প্রয়োজনে যা যা করার দরকার তা-ই করব। এরশাদ তিলে তিলে এই দলটা গড়েছেন। সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে।’
প্রয়াত এরশাদকে স্মরণ করে রওশন বলেন, ‘এরশাদ ওপারে ভালো আছেন। কারণ তিনি ইসলামের খাদেম ছিলেন। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেছিলেন, পবিত্র শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করেন। মসজিদ, মন্দিরসহ সব উপাসনালয়ের পানি ও বিদুৎ বিল মওকুফ করেছিলেন।’
সভায় জাপার সাবেক এমপি নূরুল ইসলাম মিলন বলেন, পার্টির কর্মীরা আজ অসহায়, তাদের খোঁজ কেউ নেয় না। আপনাকে (রওশন এরশাদ) দলের দায়িত্ব নিতে হবে। পার্টির লাখো কর্মী আপনার অপেক্ষায় আছে।’
প্রফেসর দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘আপনার নামের পাশে এরশাদ আছে। বাংলার মানুষ আপনাকে নেতৃত্বে দেখতে চায়। যে লোক কএনাদিন জেল খাটেনি, রাজপথে এরশাদ মুক্তির আন্দোলন করেনি তার কাছে এরশাদের জাতীয় পার্টি নিরাপদ নয়।’
সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধা বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে শুধুই বিশৃঙ্খলা, দ্বিধাবিভক্তি। কেন্দ্রে শুধু পদ আমদানি হয়। মুরগির মতো দলীয় পদ বিক্রি হচ্ছে।’
সভায় জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের আজ দুঃসময় চলছে। আপনার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল করলে আমাকে বাধা দেয়া হয়। আপনি যখন সংকটাপন্ন অবস্থায় থাইল্যান্ডে যান, তার পরের দিন তারা কক্সবাজারে দলবেঁধে আমোদ-ফূর্তি করেছে।’
কাজী মামুন রওশন এরশাদের জীবদ্দশায় সাদ এরশাদকে পার্টির চেয়ারম্যান করার দাবি জানান।
জাপার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘কাউন্সিলে কথা ছিল আপনার দলীয় পতাকা আপনি ব্যবহার করবেন। সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন আপনি। আপনার পরামর্শে দল পরিচালিত হবে। কোনো কথা রাখা হয়নি।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন রওশন পুত্র রাহগীর আল মাহি (সাদ এরশাদ), রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসিহ, জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান হবি, ক্বারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, জাপার সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য এমএ সাত্তার, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, নরুল ইসলাম নুরু, ইকবাল হোসেন রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, আশরাফ সিদ্দিকী প্রমুখ।
আরও পড়ুন:সরকার অতিমাত্রায় ভারতপ্রেমী হওয়ায় দেশটির অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারছে না। সে কারণে ভারতের পানি আগ্রাসন ও সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতেও পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির, চরমোনাই পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
সরকার যদি ভারতপ্রীতি না ছাড়ে, নিজেদের দাবি আদায়ে দৃঢ় না হয়, তবে সামনের দিনে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
শনিবার বিকেলে ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদসহ ১৫ দাবি আদায়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে গণমিছিলের আগে জমায়েত করে দলটি। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রেজাউল করীম বলেন, ‘আমাদের তিন মাসের কর্মসূচির আজকে শেষ বিক্ষোভ। ঈদের পর আপনারা যদি আমাদের দাবি কবুল না করেন, যদি সরকারের কানের তুলা না খোলে, আমরা তুলা খোলার জন্য পরামর্শভিত্তিক কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব।’
চরমোনাই পির বলেন, ‘ভারতে বিজেপি নেত্রী রাসুল (সা.) এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠলেও আমাদের সরকার ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে পারেনি। তাদের কাছে নবীর ভালোবাসার চেয়েও ভারতের ভালোবাসা বেশি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীকে কেন্দ্র করে আমাদের সভ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। শত শত নদীর গতিপথ ধরে বিকশিত হয়েছে জীবন, গড়ে উঠেছে জীবিকাপ্রবাহ। অথচ দেশের সরকারগুলোর ভুল নীতি, ভারতীয় পানি আগ্রাসন ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশটাকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে। বন্যায় সয়লাব করে জীবন-জীবিকা ধ্বংস করছে।
‘দেশে ২৪ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ছিল, এখন চার হাজারে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার পর শুকিয়ে গেছে ১৫৮টি নদী।’
ভারতের সঙ্গে যৌথ ৫৪টি নদীসহ দেশের প্রধান পানির প্রবাহগুলোকে ভারত ফারাক্কা, গজলডোবার মতো বাঁধ দিয়ে মেরে ফেলেছে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পানি আটকে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ধ্বংস করছে, বর্ষার সময়ে পানি ছেড়ে ফসল নষ্ট করছে, মানুষ হত্যা করছে বলেও অভিযোগ করেন রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারগুলো ভারতের অন্যায্য পানি প্রত্যাহার ও বাঁধ নির্মাণ বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে সমাধান করতে পারেনি। বছরের পর বছর ভারত অব্যাহতভাবে পানি আগ্রাসন চালিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করছে, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিনষ্ট করছে। অথচ সরকারগুলো কোনো ধরনের প্রতিকার করতে পারেনি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে।’
আওয়ামী লীগ সরকার এক যুগের বেশি সময় ধরে জনমতকে উপেক্ষা করে ক্ষমতায় আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। দলটি মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। খুন-গুমের রাজনীতি করছে বলেও বক্তব্যে অভিযোগ করেন।
বলেন, ‘দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করতে মাদকের সয়লাব ঘটাতে মদের লাইসেন্স দিচ্ছে, শিক্ষা থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে সরিয়ে দিচ্ছে। দুর্নীতি, দলীয় কর্মী তোষণের কারণে দ্রব্যমূল্য জনতার নাগালের বাইরে চলে গেছে। মানুষ দুর্ভিক্ষের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে, আর সরকার উন্নয়ন দেখিয়ে লুটতরাজ সমাপ্তির উৎসব করেছে।’
এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য গণ-আন্দোলনের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন চরমোনাই পির।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
জমায়েত শেষে গণমিছিলটি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে পল্টন মোড় হয়ে শান্তিনগর গিয়ে শেষ হয়।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় বিএনপি খেই হারিয়ে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীতে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়ায় সারা দেশের মানুষ যখন উল্লসিত, বিএনপি তখন খেই হারিয়ে ফেলেছে। এখন কী বলবে বিএনপি? পদ্মা সেতু নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের মানুষ ধিক্কার দিচ্ছে। এ অবস্থায় বিএনপি খেই হারিয়ে উল্টাপাল্টা বক্তব্য দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যা হওয়ার পর সেখানে বিএনপির কেউ যায়নি। তারা বলেছে, ত্রাণ দেয়া তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য নয়। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন দুর্যোগে আওয়ামী লীগ দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নেত্রী ছুটে গেছেন দুর্গতদের পাশে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বন্যা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সরকার ও দল ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দল ও সরকারের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে এবং সাপের কামড়ে কয়েকজন মারা গেছে সেটা সত্য। কিন্তু অনাহারে কোনো মানুষ মৃত্যুবরণ করেনি।’
পদ্মা সেতুর ব্যাপারে যারা বাংলাদেশে থেকে বিরোধিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সরকার আইনি কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি রায় আছে। পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের খুঁজে বের করার জন্য কমিশন গঠন করতে বলা হয়েছে।’
হাইকোর্টের রায়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কী করা যায় সরকার বিবেচনা করবে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন:সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে ‘গুরুতর’ অভিযোগ তুলেছেন সংগঠনের একই শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আমার অপরাধ ছিল আমি তার কুপ্রস্তাব মেনে নেইনি। ভেঙে গেল ৭ বছরের ভাই-বোনের সম্পর্ক। একমাত্র ছাত্রী হলে ছাত্রলীগ থেকে ৩০০ মেয়ে সিট পেলেও আমাকে সে হলে উঠতে দেয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়ার পর শুক্রবার রাতে এই নেত্রী নিজের টাইমলাইনে এক পোস্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলে ধরেন।
ফৌজিয়া বলেন, ‘আমার জন্য তার অনেক বড় ভাইরা বললেও তিনি কানে তোলেননি। কারণ তার তো আর আমাকে কর্মী হিসেবে প্রয়োজন নেই। এখন তিনি নেতা, প্রয়োজন মেটাতে পারলেই কেবল প্রয়োজন বোধ করবেন। বাংলাদেশের এমন কোনো হল আছে কি যেখানে কোনো গেস্ট গিয়ে একদিন থাকতে পারে না? কিন্তু এই আমি প্রিয়ন্তী হলে একদিন গিয়েছিলাম দেখতে যে হলে থাকার কেমন অনুভূতি। কিন্তু এই আকতার জানতে পেরে প্রভোস্ট ম্যামকে চাপ দিয়ে সেই রাতেই আমাকে হল থেকে বের হতে বাধ্য করে।’
‘আমার কি অপরাধ ছিল? ১৪ সাল থেকে প্রতিদিন আট-দশ ঘন্টা ইভেন আরও বেশি পরিশ্রম করে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর কমিটিতে এসেছি। আমাকে হলে উঠতে দেওয়া হয়নি। এর পেছনের প্রধান কারণ হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকতার। আমার দীর্ঘ আরাধ্য ও প্রতীক্ষার হল থেকে, আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছে।’
প্রিয়ন্তী ফেসবুকে আরও লিখেন, ‘দীর্ঘ ৭ বছর তার পিছনে হেঁটেছি। আপনি তার কয় দিনের কর্মী সেটা আগে ভাবুন। আমার মাদারীপুরের তিনজন ক্যান্ডিডেট ছিল। কিন্তু তার মধ্যে থেকে তাকে বেছে নিয়েছিলাম নেতা হিসেবে। তার জন্য কত কিছু করছি যা লিখে বলা সম্ভব না। আল্লাহ মনের আশা পূরণ করলেন, কিন্তু তারপর থেকে আকতার ভাইয়ের আসল রূপ বের হতে থাকলো।
‘লেখক দাদার বাসা থেকে যেদিন ফুল দিয়ে নিচে নামলাম তার সাথে, সেদিন সকল পোস্টেড নেতার সামনে বসে আমাকে আর জিনিয়া আফ্রিনকে উদ্দেশ করে বলল- কোন হাইকমান্ডের ফোনে সে হল কমিটি দিবে না; দরকার হয় সে সাবেক হয়ে যাবে। সে নেতা হয়ে গেছে। তার নামের আগে সাবেক লেখা থাকবে তার সমস্যা নেই। আগে তার কর্মী হতে হবে, তাকে নেতা মেনে ধারণ করতে হবে। তবেই সেই হলের নেত্রী বানাবে। আমরা অবাক হয়ে রইলাম। হলের কথা কই থেকে আসলো? নেতা হল ১০ দিন মাত্র তখন। সেদিনের পর থেকে তার বিভিন্ন আবদার রাখতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তার সাথে আমার দীর্ঘ ৭ বছরের রাজনীতিকে সে মুহুর্তেই অস্বীকার করেছে।’
এ বিষয়ে ফৌজিয়া জাফরিন প্রিয়ন্তী নিউজবাংলাকে বলেন, কুপ্রস্তাব বলতে বুঝাতে চেয়েছি, তাঁর মতো করে চলতে হবে। সে যেখানে যেতে বলবে সেখানে যেতে হবে, যা করতে বলবে তা করতে হবে। আমি তো রাজনৈতিক প্রোগ্রাম কোনো কিছুই বাদ দিতাম না। কিন্তু এর বাইরে সে কী বুঝাইছে আশা করি আপনাদের এটা আর ডিটেইলস-এ বলতে হবে না।’
এদিকে এ পোস্ট দেয়ার পর থেকে চাপের মুখে পড়েছেন বলে জানান এই নেত্রী। বলেন, ‘পোস্ট দেওয়ার পর আকতার হোসাইন আমাকে কল দিয়ে বলেন- যা করলি অনেক ভালো করলি। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি আমার সঙ্গে অন্যায় করেননি? তখন তিনি বলেন- হ্যাঁ, আমি অন্যায় করেছি। কিন্তু তুই এটা এ সময়ে তুলে না ধরলেও পারতি।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনকে কল দেয়া হলেও তিনি সংযোগ কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল বোসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার এক শোকবার্তায় তিনি এ শোক প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুকুল বোস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী মুকুল বোসের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মুকুল বোস। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
মৃত্যুকালে মুকুল বোস স্ত্রী, এক ছেল ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি মুকুল বোসকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়।
আরও পড়ুন:এখন অন্ধকার যুগে বাস করছেন বলে মনে করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিচতলায় জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আয়োজনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির অসুস্থ নেতা-কর্মীদের সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দুদু বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র না থাকলে মানুষের অধিকার থাকে না, তখন মগের মুল্লুকের মতো যা মনে চায়, তা-ই করা যায়। আর এই সরকার তাই করছে।
‘সে জন্য এই শাসনব্যবস্থাকে উল্টিয়ে দিতে হবে, পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এখন একটা অন্ধকার যুগে বাস করছি। এই অন্ধকার থেকে দেশকে সভ্যতায় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি, গণতন্ত্র-স্বাধীনতার মুক্তির দাবি করছি। আমাদের চাওয়ার সবচেয়ে বড় জায়গা হচ্ছে মহান রাব্বুল আলামিন। তার কাছে আমরা চাইব। কিসের জন্য চাইব? গণতন্ত্র, স্বাধীনতার মুক্তি চাইব। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ যারা অসুস্থ আছেন তাদের রোগ মুক্তি চাইব।’
কৃষক দলের সাবেক এই আহ্বায়ক বলেন, ‘দেশে এত পরিমাণ দুর্নীতি, হামলা-মামলা অত্যাচার চলছে যে এর আগে কোনদিন এরকমটা হয় নাই। আমাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাস্তায় নামতে হবে। তাহলে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে।’
সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে জানিয়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি দুদু বলেন, ‘বাংলাদেশের সবাইকে এক জায়গায় দাঁড়াতে হবে, সেটা হবে গণতন্ত্রের পক্ষে। গণতন্ত্র না থাকলে দুর্নীতি হয়, গণতন্ত্র না থাকলে হামলা-মামলা নির্যাতন হয়।
‘অতীতে যেমন শহীদ জিয়া ও বেগম খালেদা জিয়া দেশকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরিয়ে এনেছিলেন, তেমনি বর্তমান তারেক রহমানের নির্দেশে এই অন্ধকার থেকে এই দেশ ও জাতিকে আলোয় ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মাদ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব মাওলানা নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় দোয়া মাহফিলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সেলিম রেজা,কৃষক দলের সাবেক নেতা শাহজাহান মিয়া সম্রাট, মিয়া মোহাম্মাদ আনোয়ার, ওলামা দলের নেতা শাহ মোহাম্মাদ মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোসের মৃত্যু হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় শনিবার ভোরে ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বিষয়টি জানিয়েছেন।
মুকুল বোসের বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমরা দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে জানাচ্ছি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুকুল বোস চেন্নাই অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোর ৫টা ২০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন।’
আওয়ামী লীগে একসময়ের প্রভাবশালী নেতা মুকুল বোস। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ছিল তার।
এক-এগারোর পর সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিতি পান মুকুল বোস। এরপর দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন তিনি।
এক-এগারো পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটিতে মুকুল বোস পদ হারান। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনের পর গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটিতেও জায়গা পাননি মুকুল।
দলের ২০তম কাউন্সিলের পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি মুকুল বোসকে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য