জীবনযুদ্ধে হার না মানা ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমা সেনাবাহিনীর মেজর পদবিতে উন্নীত হয়েছেন।
হুইলচেয়ারে শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আসেন তিনি। সেখানে বাহিনীর সব ফরমেশন কমান্ডারদের উপস্থিতিতে এক আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে তাকে র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, পক্ষাঘাতগ্রস্ত কানিজ ফাতেমা আজ শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয়, পুরো দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারীসমাজের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলাকালে দুর্ঘটনায় পড়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায় সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তার।
আইএসপিআর জানিয়েছে, কানিজ ফাতেমা দেশ সেবার একবুক স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তবে দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে তার পক্ষে সেনাবাহিনীর কঠোর ও সুশৃঙ্খল স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।
কিন্তু এই অকুতোভয় নারী, ভাগ্যের কাছে হার না মেনে দেশের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কানিজ ফাতেমার এই অদম্য উদ্দীপনাকে সম্মান জানিয়ে সব বাধা উপেক্ষা করে ৬৯ বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের সঙ্গে ২০১৩ সালে বিশেষ বিবেচনায় কমিশন দেয়।
পরবর্তী সময়ে কানিজ ফাতেমা হুইলচেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করলেও নিজের অদম্য মানসিক শক্তি এবং সহকর্মীদের সহায়তায় দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে পালন করে আসছেন। তার ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে পদে পদে।
সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে নিয়মিত বাহিনীতে সর্বপ্রথম নারী অফিসার নিয়োগ দেয়া শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সাল থেকে নারী সৈনিকের সংযোজন, নারী অফিসারদের ইউনিট কমান্ড দেয়া, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অফিসারদের নিয়োগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশে নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে।
আরও পড়ুন:অর্থপাচার মামলায় এসএম গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীমসহ আট জনের বিরুদ্ধে আরও পাঁচ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে বুধবার তাদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এই পর্যন্ত ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে এই মামলায়। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৮ জুলাই দিন ঠিক করেছেন বিচারক।
আদালতে যে পাঁচ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা হলেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন হোসাইনী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার কনস্টেবল মিনহাজুল আবেদীন, গুলশান থানার এএসআই বুলবুল হক আনাছ, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থানার এএসআই নুরে আলম ও বাগেরহাট সদর মডেল থানার এএসআই তারক চন্দ্র দাস।
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।
আলোচিত এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দেলোয়ার হোসেন, মোরাদ হোসেন, সামসাদ হোসেন, আনিছুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, কামাল হোসেন ও জাহিদুল ইসলাম। তারা জি কে শামীমের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত।
জি কে শামীমকে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আটক করে র্যাব। এ সময় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরের ডলার, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর, অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ উদ্ধার হয়। এ ব্যাপারে র্যাব বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং, মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করে।
আরও পড়ুন:ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে করা মামলায় পুলিশ সদর দপ্তরের সাপ্লাই শাখার এআইজি (এসপি পদমর্যাদা) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। বুধবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আদালতের সূত্রমতে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মোহাম্মদ হানিফ গত ১৩ জুন আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে মামলায় উল্লেখ করা অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবার আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে মামলার আসামি মহিউদ্দিন ফারুকীকে অব্যাহতি দেয়।
এক নারী ১৫ মার্চ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালে মহিউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে ওই নারীর ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়। তারা আগস্টে একটি রেস্টুরেন্টে দেখা করেন। মহিউদ্দিন ফারুকী ওই নারীকে জানান, তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না। তাকে বিয়ে করলে তিনি স্ত্রীকে তালাক দেবেন।
ওই নারী প্রথমে তার প্রস্তাব নাকচ করেন। পরে মহিউদ্দিন ফারুকী তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। ৩০ সেপ্টেম্বর মহিউদ্দিন ফারুকী ওই নারীর বাসায় যান। পরে নানা অজুহাতে তিনি ওই বাসায় যাতায়াত করতে থাকেন। এরপর ৯ অক্টোবর মহিউদ্দিন ফারুকী ওই নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান।
এজাহারে আরও বলা হয়, ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ওই নারীর জন্মদিনে মহিউদ্দিন ফারুকী তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা করান। পরে বেশ কয়েকবার তারা শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। সে বছরের ১৭ মার্চ ওই নারী মহিউদ্দিন ফারুকীকে তার প্রেগন্যান্সির কথা জানান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চিকিৎসক ওই নারীকে ভিটামিন ও আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিলে ১৮ মার্চ মহিউদ্দিন ফারুকী তার জন্য কিছু ওষুধ নিয়ে আসেন। সেসব ওষুধ খেয়ে রাতে তার পেটে ব্যথা হয়। সকালেও সেসব ওষুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন ফারুকী।
পরে মহিউদ্দিন ফারুকী স্বীকার করেন ওষুধগুলো গর্ভপাতের। ২০২১ সালের ১৬ এপ্রিল ওই নারী আবারও গর্ভবতী হন। ২৮ এপ্রিল মহিউদ্দিন ফারুকীকে খবর দিলে তিনি ক্ষিপ্ত হন। ওই নারী তাকে বিয়ে করতে চাপ দিলে ৬ জুন তারা বিয়ে করেন।
তবে বিভিন্ন বিষয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ভালো না থাকায় ভ্রূণ হত্যার অভিযোগে ওই নারী মহিউদ্দিন ফারুকীর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আরও পড়ুন:আত্মসমর্পণের পর জামিন পাননি ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাজা পাওয়া চার কর্মকর্তা। আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
গ্রাহকদের ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় আদালত ডেসটিনি গ্রুপের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় দেয়। তখন চার আসামি পলাতক থাকায় তাদের নামে পরোয়ানা জারি হয়।
বুধবার ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলমের উপস্থিতিতে আসামিরা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন- ডেসটিনি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর সাকিবুজ্জামান খান (অব.), সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেস্ট এভিয়েশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মোল্লা আল আমিন, সুনীল বরণ কর্মকার ও হেড অব ফাইন্যান্স কাজী মোহাম্মদ ফজলুর করিম।
এ মামলায় গত ১২ মে রায় দেন ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম।
রায়ে অন্য আসামিদের পাশাপাশি মেজর সাকিবুজ্জামান খানের (অব.) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা জরিমানা হয়। মোল্লা আল আমিনের চার বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা, সুনীল বরণ কর্মকারের ৮ বছর কারাদণ্ড ও ৫ কোটি টাকা জরিমানা এবং কাজী মোহাম্মদ ফজলুর করিমের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয় আদালত।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যা মামলায় প্রধান আসামি স্কুলছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
শ্রীপুরের নগরহাওলা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুধবার সন্ধ্যায় নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘নগরহাওলা গ্রাম থেকে জিতুকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। এ বিষয়ে কাল সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।’
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে এদিন ভোরে জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক জানান, সকালে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে তোলা হয়। শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় আদালত।
যা ঘটেছিল
হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা ছেলেদের ফুটবল ও মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। শনিবার স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল ছেলে শিক্ষার্থীরা।
‘অভিযুক্ত ছাত্রও দ্বিতীয় তলায় ছিল। হঠাৎ সে নেমে মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় উৎপলকে উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই আজ (সোমবার) সকালে উৎপলের মৃত্যু হয়।’
অধ্যক্ষ জানান, উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করছিলেন।
দায়িত্বের অংশ হিসেবেই উৎপল শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন ও তাদের নানা অপরাধ বা নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিচার করতেন বলে জানান অধ্যক্ষ। তার ধারণা, অভিযুক্ত ছাত্রকেও উৎপল কোনো কারণে শাসন করেছিলেন। সেই ক্ষোভ থেকে ওই কিশোর তার ওপর হামলা করেছে।
নিহতের ভাই ও মামলার বাদী অসীম কুমার সরকার বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ওই শিক্ষার্থী মেয়েদের ইভটিজিংসহ নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে অভিযুক্ত। তাকে শাসন করায় আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে সে। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিহত শিক্ষক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি থাকায় নিয়মকানুন মানাতে শিক্ষার্থীদের শাসন করতেন। তিনি ওই শিক্ষার্থীকেও শাসন করায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের প্রাথমিক ধারণা।’
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে ক্যাম্পাসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এই পাঁচ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। পরে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী সংহতি জানিয়ে তাদের পাশে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন।
অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন- তরিকুল ইসলাম, চৌধুরী শামীম আফফান, মোস্তফা কামাল রনি, মেহেদী হাসান ও নাঈম পারভেজ।
অনশনে বসা পাঁচজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে তরিকুল, আফফান ও রনি ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ এবং নাঈম ও মেহেদী ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
শিক্ষক উৎপল কুমারের হত্যাকারী গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা অনশনস্থলের পেছনে একটা ব্যানারও স্থাপন করেছেন। তাতে লেখা- ‘দেশ গড়ার কারিগর উৎপল কুমার স্যারের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমরণ অনশন।’
ব্যানারের এক পাশে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ছবি এবং অন্য পাশে খুনের দায়ে অভিযুক্ত ছাত্রের ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। তাদের হাতে ধরা রয়েছে বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্লাকার্ডও।
অনশনরত তরিকুল বলেন, ‘শিক্ষকরা জাতির মেরুদণ্ড। স্টাম্পের আঘাতে তাদেরই মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। যে প্রজন্ম শিক্ষককে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে, সেই প্রজন্মের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। উৎপল স্যারের হত্যাকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।’
আরও পড়ুন:জেকেজি হেলথ কেয়ারের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফুল চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা ও জাল সনদ দেয়ার অভিযোগের মামলায় রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেছে আদালত।
আগামী ১৯ জুলাই রায় দিতে দিন ঠিক করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজাদ রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালতে বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ঠিক করেন বিচারক। মামলাটিতে ৪০ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য দেন।
এর আগে ২০ এপ্রিল আদালতে সাক্ষ্য দেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভুইয়া। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে। ১১ মে আসামিরা আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
মামলায় বলা হয়, জেকেজি হেলথকেয়ার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই ২৭ হাজার মানুষকে রিপোর্ট দেয়। করোনার জাল সনদ দেয়ার অভিযোগে ২০২০ সালের ২৩ জুন অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে তেজগাঁও থানায় মামলা হলে দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
করোনার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার এ মামলায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারপারসন ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীসহ আটজনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট চার্জশিট জমা দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
চার্জশিটে থাকা অন্য আসামিরা হলেন- আবু সাঈদ চৌধুরী, হুমায়ূন কবির হিমু, তানজিলা পাটোয়ারী, বিপ্লব দাস, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। তারা একই প্রতিষ্ঠানের কর্মী। চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে প্রতারণার মূল হোতা হিসেবে দেখানো হয়। বাকিরা জালিয়াতিতে তাদের সাহায্য করেছেন।
একই বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শেষে এ মামলার রায় দিতে ১৯ জুলাই দিন ঠিক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। আর আহতদের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সিসিবি (চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ) ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এই রিট দায়ের করা হয়।
রিটের পক্ষের আইনজীবীরা হলেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব, অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান ও অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, স্মার্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিএম কন্টেইনার বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২০ জনকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটে বলা হয়, ৪ জুন শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে প্রায় অর্ধশত নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
খবরে প্রকাশ, স্মার্ট গ্রুপের বিএম কন্টেইনার নামক কোম্পানির দাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে ঘোষণা দেয়া ছাড়াই মজুদ করার কারণে আগুনে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফায়ার সার্ভিসের কাছে মজুদকৃত রাসায়নিক পদার্থগুলোর প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকায় অনেক উদ্ধারকর্মী নিহত এবং আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ এর আগেও তাজরিন গার্মেন্ট কারখানায় আগুন, রানা প্লাজা ভবন ধসে হাজারো প্রাণ ঝরেছে। বিদেশি ক্রেতার চাপে পোশাক কারখানায় অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থায় অগ্রগতি হলেও অন্যান্য কারখানায় সঠিক অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে এসব কারখানায় নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিজান জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। বিদেশি ক্রেতাদের কোনো চাপ না থাকায় সংশ্লিষ্ট কারো নজর নেই। তাছাড়া অগ্নি নির্বাপক বাহিনী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থে সৃষ্ট আগুন নিয়ন্ত্রণে অক্ষম।
রিটে কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা বলা হয়েছে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী জীবনের অধিকার একটি মৌলিক অধিকার। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ সরাসরি লংঘন করেছেন।
রিট পিটিশনে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই কোটি টাকা এবং আহত প্রত্যেককে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সে সঙ্গে আহতদের বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য