রাজধানীর শাজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন সুমন সিকদার ওরফে মুসা ওমানে আটক হয়েছেন।
তাকে দেশে ফেরত আনার জন্য ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ওমান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
পুলিশের একটি দলের চলতি সপ্তাহেই ওমান যাওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশে এনসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মহিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুসা ওমানে আটক হয়েছেন। ওমানে ইন্টারপোলের এনসিবি শাখার সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি এবং অ্যাম্বাসির সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা রাখি।’
ওমানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি নেই। দুই দেশের সম্পর্ক ও বিভিন্ন চুক্তির ভিত্তিতে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ‘ওমানে মুসা বেশ কয়েক দিন ধরেই সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে ছিলেন।’
মুসা ওমানে কত তারিখে আটক হয়েছেন, তা জানা নেই বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তার।
মহিউল বলেন, ‘মুসা দুবাই থেকে ওমানের যাওয়ার আগেই ওমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তার ব্যাপারে তথ্য দেয়া ছিল। আমরা জানিয়ে রেখেছিলাম। দুবাই থেকে ওমান আসার পরপরই তিনি আটক হয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের একটি টিমের ওমানে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে।’
গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু।
এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হন গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা ২৪ বছর বয়সী কলেজছাত্রী প্রীতি।
এ ঘটনার পরের দিন টিপুর স্ত্রী ফারজানা ইসলাম ডলি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার পর ২৬ মার্চ রাতে বগুড়া থেকে শ্যুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। ২৮ মার্চ তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত।
হত্যায় মুসার ভূমিকা কী
টিপু হত্যার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গত ২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে র্যাব। এতে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন জানান, দীর্ঘদিন ধরে টিপু ও তার হত্যার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্কুল-কলেজের ভর্তি বাণিজ্য, বাজার নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনেক পুরোনো বিষয়।
তিনি জানান, দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরম্পরায় ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মিল্কী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মিল্কী হত্যার তিন বছরের মধ্যে একই এলাকার বাসিন্দা রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, বোচা বাবু হত্যা মামলায় ওমর ফারুক, নাসির ও সালেহ চার্জশিটভুক্ত আসামি আর কাইল্লা পলাশ মামলাটির একজন সাক্ষী। এই মামলার বিচারকাজ প্রভাবিত করতে একই মামলার আরেক আসামি মুসার সঙ্গে ওমর ফারুক, নাসির, সালেহ ও কাইল্লা পলাশ যুক্ত হয়ে টিপু হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তিনি জানান, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পর এই হত্যায় টিপুর সম্পৃক্ততা প্রমাণে নানাভাবে চেষ্টা করে আসছিল ওমর ফারুক, পলাশসহ একটি পক্ষ। এরপরও জাহিদুল ইসলাম টিপু মামলা থেকে অব্যাহতি পান। পরবর্তী সময়ে গ্রেপ্তার ওমর ফারুক ও অন্য সহযোগীরা স্বার্থগত দ্বন্দ্বের কারণে টিপুর অন্যতম সহযোগী রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবুকে ২০১৬ সালে হত্যা করেন।
দুবাই বসে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
র্যাব জানিয়েছে, বোচা বাবু হত্যা মামলার মূল আসামিরা টিপুকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে মামলাটিকে প্রভাবিত ও বাদীকে ভয় দেখানো যাবে বলে মনে করেন। সে অনুযায়ী বোচা বাবু হত্যা মামলার আসামি ওমর ফারুক টিপু হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করার জন্য সন্ত্রাসী ও শুটার মুসাকে দায়িত্ব দেন ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। মুসা ও তার ভাই সালেহও বাবু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোট ১৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। এতে ৯ লাখ টাকার জোগান দেন ওমর ফারুক। বাকি ৬ লাখ টাকা দেন মুসা, সালেহ ও নাসির। গ্রেপ্তার মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য ফারুক ও মুসাকে ফোনে কয়েকজন সন্ত্রাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের চূড়ান্ত সমন্বয়ের জন্য মুসা গত ১২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যান। দুবাইয়ে যাওয়ার সময় মুসা ৫ লাখ টাকা নিয়ে যান এবং হুন্ডির মাধ্যমে মুসাকে আরও ৪ লাখ টাকা পাঠানো হয়। বাকি ৬ লাখ টাকা দেশে হস্তান্তর করার চুক্তি হয়।
দুবাই পৌঁছে মুসা শুটার ভাড়া করাসহ ব্যাকআপ টিম দিয়ে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজান। হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংগঠিত হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। আর নজরদারির কাজ দেয়া হয় ওমর ফারুক, নাসির ও পলাশকে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ থেকে নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েক দিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাতেন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর নাছির চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে জানান। পরবর্তী সময়ে টিপু গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখেন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসী ফ্রিডম মানিককে জানান। এরপর আনুমানিক রাত সাড়ে ১০ টার দিকে আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে কন্ট্রাক্ট পাওয়া কিলার টিপুকে হত্যা করে।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ৯ বছরের এক শিশুকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার রাত আটটার দিকে দুই জনকে আসামি করে মামলাটি করেন শিশুর মা। শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসার ছাত্রী। আল মাহি নামে এক যুবকের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ২৯ জুন রাতে শিশুটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, আড়াইহাজার উপজেলার ছনপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আল মাহি ও আব্দুর রশিদের ছেলে মোহাম্মদ আছলাম।
এজাহারে বলা হয়েছে, শিশুটি ২৯ জুন রাত আটটার দিকে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল আসামি আল মাহির বাড়িতে। সেখানে অবস্থান করছিল আছলাম নামের এক ছাত্র। পড়ার রুমে শিশুকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে মাহি ও আছলাম। পরে তাকে কোরআন শরীফ ছুঁয়ে কসম করানো হয় ঘটনা কাউকে না জানাতে।
শিশুটি রাত সাড়ে নয়টার দিকে বাড়িতে ফিরে মাকে ঘটনা জানায়। এরপর বাবাসহ অন্য আত্মীয়রা বিষয়টি জানতে পারেন।
ওসি আজিজুল হক বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে প্রথমে স্থানীয়ভাবে শালিস হয়। সেখানে তারা নিজেরা মিমাংসার চেষ্টা করেন। মিমাংসা না হলে শিশুর মা থানায় মামলা করেন। এর আগেই আসামিরা পালিয়ে গেছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে।’
শিশুর মা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনার পরদিন স্থানীয় কয়েকজন আমাদের বাড়িতে মিমাংসা করতে এসেছিলেন। কিন্তু আমি বিচার চাই, তাই মামলা করেছি।’
আরও পড়ুন:ফরিদপুরের সালথায় পাঁচ টাকার লোভ ধরিয়ে সাত বছরের এক শিশুকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার দুপুরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে মেডিক্যাল পরীক্ষার ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্তের নাম দেলোয়ার হোসেন কুমকুম, বয়স ৫০ বছর।
সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাভলু জানান, শিশুটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মাদ্রাসায় যাওয়া-আসার সময় দেলোয়ার শিশুটির হাতে পাঁচ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বাড়ির পাশে একটি গরুর ফার্মে নিয়ে ‘ধর্ষণ’ করে।
এভাবে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার শিশুটিকে ‘ধর্ষণ’ করা হয়েছে জানিয়ে ওই চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিশুটি নিজে আমাকে ঘটনাটি জানায়। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেলে শুক্রবার রাতে দেলোয়ারকে ধরে মারধর করে ছেড়ে দেয়।’
শিশুটির মা বলেন, ‘স্থানীয় মাতুব্বরেরা ঘটনা মীমাংসা করে দিতে চাইলে তাতে প্রথমে রাজি না হওয়ায় আমার গলায় দেলোয়ার ছুরি ধরে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে ভয়ে আমি মীমাংসা করতে বাধ্য হই, তবে এখন আমি চাই মামলা করতে।’
পরে এ খবরটি স্থানীয় সংবাদকর্মী ও চেয়ারম্যানের মাধ্যমে থানা পুলিশ জানতে পেরে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা। পরে শিশুর বয়ান রেকর্ড করে পুলিশ। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় অভিযুক্ত দেলোয়ারকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেন, ‘শিশুকে ধর্ষণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন কুমকুম মিয়াকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ফরিদপুরের বিএসএমএমসি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও মামলা করা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
আরও পড়ুন:সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নাট্যকার-গবেষক ও শিক্ষক অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর উত্তরার বাসায় হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয়ের ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে সে মামলায়।
শুক্রবার উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর স্ত্রী বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা হক।
মামলার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (অপারেশন) পার্থ প্রতিম।
তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর উত্তরার বাসায় হামলার অভিযোগে তার স্ত্রী অধ্যাপক ফাহমিদা হক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করেছেন।’
এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় ৫ নম্বর সেক্টরে ৬এ রোডের একটি মসজিদ থেকে শতাধিক মুসল্লি বেরিয়ে রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলা চালায়।
বাসার সামনে মোটরসাইকেল রাখা ও দোকান বসতে না দেয়াকে কেন্দ্র করে হামলা হয় বলে পুলিশ জানায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রতন সিদ্দিকী জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।
রতন সিদ্দিকী ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সিংগাইরে চায়না আক্তার নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাবার বাড়িতে গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা পুলিশের।
শনিবার বেলা ৩টার দিকে সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের বেরুন্ডী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সিংগাইর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনোহর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চায়না আক্তার সিংগাইর পৌরসভার গোবিন্দল এলাকার জাফর মিয়ার স্ত্রী। শনিবার দুপুরে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছিলেন চায়না। সেখানে একটি বসতঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তাকে দেখে থানায় খবর দেন স্বজনরা।
‘তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়ার জেরে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামি আমিন মোহাম্মদ হিলালীর নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে শুক্রবার রাতে বের হওয়ার পর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের মাধ্যমে করা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হিসেবে দুদকের করা মামলার ছয় নম্বর আসামি আমিন মোহাম্মদ হিলালী। তিনি আশালয় হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
আমিন মোহাম্মদ নিখোঁজ হওয়ার কথা উল্লেখ করে তার ভাই রফিকুল ইসলাম হিলালী শুক্রবার রাত ১টায় উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেছেন, ‘আজ (শনিবার) র্যাব, ডিবি, পিবিআই, কয়েকটি থানা ও দুদকে যোগাযোগ করা হলে সবাই জানিয়েছেন যে ভাই তাদের হেফাজতে নেই।’
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১১ নম্বর সেক্টরে আমার বাসা। ভাই আমার বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে তিনি অফিসে যাওয়ার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। আমার বাসা থেকে অফিস কাছাকাছিই। হেঁটে যেতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগে। কিন্তু তিনি অফিসে যাননি।
‘শুক্রবার রাত ৮টা ২২ মিনিটে ড্রাইভারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ভাই ড্রাইভারকে ১০ মিনিট পর অফিসে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু ড্রাইভার অফিসে গিয়ে দেখেন যে ভাই অফিসে যাননি। তখন ড্রাইভার ফোন দিয়ে দেখেন ভাইয়ের নম্বরটি বন্ধ। ড্রাইভার বিষয়টি আমাকে জানানোর পর থানায় গিয়ে জিডি করলাম।’
রফিকুল ইসলাম জানান, ৮টা ২৯ মিনিটে আমিন মোহাম্মদ হিলালীর শেষ লোকেশন ছিল ১২ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর রোডে। এ জায়গাটির অবস্থান তার অফিস থেকে ২ মিনিটের হাঁটা দূরত্বে।
আপনারা কাউকে সন্দেহ করছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। কারণ আমাদের জানামতে তার কোনো শত্রু নেই। কারও সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদও হয়নি।’
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইয়াসিন গাজী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমিন হিলালী নিখোঁজ হয়েছেন মর্মে গত রাতে তার ভাই থানায় এসে জিডি করেছেন। এখনও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি।’
অর্থ আত্মসাৎ মামলা যেভাবে
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামির তালিকায় আমিন মোহাম্মদ হিলালী ছাড়াও রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ডের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে তারা প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরবর্তীতে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন এবং পরবর্তীতে নিজেরা ওই এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। অবৈধ ও অপরাধলব্ধ আয়ের অবস্থান গোপনের জন্য ওই অর্থ হস্তান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেন তারা।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার মুরাদনগরে নারী মানবাধিকারকর্মীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মুরাদনগর থানায় শনিবার সকালে মামলার পর বিকেলে উপজেলার ত্রিশগ্রাম থেকে জামাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশিম জানান, শনিবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালতের পরিদর্শক মজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কুমিল্লার ৮ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ ওমর ফারুক আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
গ্রেপ্তার ৩০ বছরের জামাল হোসেনের বাড়ি উপজেলার ত্রিশগ্রামে। মামলার এজাহারভুক্ত ৭ নম্বর আসামি তিনি।
২৮ জুন রাতে নবীপুর (পশ্চিম) ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ইউপি চেয়ারম্যানের সালিশে ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল এইড ফাউন্ডেশনের কর্মী মরিয়ম বেগমকে মারধরের অভিযোগ ওঠে।
মরিয়ম বলেন, ‘নবীপুর (পশ্চিম) ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেনের সামনে তার ভাতিজা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার দেলোয়ার হোসেন দলবল নিয়ে আমার ওপর চড়াও হয়।’
এ ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, দোকানের সামনে কয়েকজন মানুষের জটলা। এর মধ্যে থেকে তিন ব্যক্তি বোরকা পরা এক নারীকে ধরার চেষ্টা করলে তিনি ওই দোকানের ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় দেলোয়ারের লোকজন তার বোরকা ধরে টানাটানি করতে থাকলে তাদের বাধা দেন জাকির। একপর্যায়ে দেলোয়ার ও তার লোকজন দোকান থেকে ওই নারীকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যান।
শনিবার সকালে মুরাদনগর থানায় আটজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেছেন মরিয়ম।
আসামিরা হলেন উপজেলার উত্তর ত্রিশগ্রামের মেম্বারের ছেলে ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন, তার ছোট ভাই সুমন সরকার, রাসেল মিয়া, সুধন মিয়ার ছেলে হাবিব মিয়া, হাসু মিয়ার ছেলে হেলাল মিয়া, তবদল মিয়ার ছেলে রনি মিয়া, লতু মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন।
যদিও ঘটনার পর থানায় গেলেও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।
ওসি আবুল হাশিম বলেন, ‘একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসমিরা পলাতক। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে স্থানীয় এক কাউন্সিলরের বাসা থেকে তার পুত্রবধূর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মধ্যম সরাইপাড়ার আমিন ভবন থেকে শনিবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
২২ বছর বয়সী নিহত রেহনুমা ফেরদৌস সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আমিনের ছেলে নওশাদ আমিনের স্ত্রী। রেহনুমার বাবা তারেক ইমতিয়াজ ইমু আলকরন ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি।
পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকালে বাসার খাটে মরদেহটি পেয়েছি। নিহতের গলায় ওড়না প্যাঁচানো ছিল, তবে শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শ্বশুরবাড়ির লোকের দাবি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
‘এখনও রেহনুমার পরিবার থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলে দাবি রেহনুমার পরিবারের।
তার বাবা তারেক বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ বিভিন্ন কারণে তারা আমার মেয়েকে মানসিক নির্যাতন করত। কয়েকবার পারিবারিকভাবে বৈঠক করে এটা সমাধানের চেষ্টা করেছি আমরা।
‘এমনকি গত ঈদের তিন দিন পর সর্বশেষ বৈঠকটা করেন সাবেক সিটি মেয়র নাছির ভাই। তার পরও ওরা আমার মেয়েকে নির্যাতন করত। এটা পরিকল্পিত হত্যা, আমরা মামলা করব।’
এ বিষয়ে কাউন্সিলর নুরুলকে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য