সারি সারি টেবিলের ওপর প্লেটে প্লেটে সাজানো লিচু। বোঁটা ছাড়ানো, ডাল-পাতা বিহীন। একেকটি প্লেটে লিচুর সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি। দরদাম করছিলেন নানা বয়সী নারী-পুরুষ। প্রতিটি টেবিলের পেছনেই পিঁড়িতে বসে থাকা বিক্রেতাদের প্রায় সবাই নারী।
ঠাকুরগাঁও রোড মুন্সিরহাট এলাকায় রাস্তার পাশে ব্যতিক্রম এই লিচুর বাজারটি প্রতি বছরই বসে। এবারও দোকান নিয়ে বসেছেন নাসরিন আক্তার, নার্গিস বেগম, আয়েশা বানু, লিপি আক্তারসহ ২০ জনেরও বেশি নারী।
বিক্রেতাদের মধ্যে নাসরিন বেগম বলেন, ‘প্রতি বছর ঢাকার কারওয়ান বাজারের মতন আমরা এখানে পুরুষদের সঙ্গে টক্কর দিয়া ব্যবসা করি। প্লেটে করে থোকা থেকে ছুটে যাওয়া লেচু বেচি। এক ধামা লেচু ৫০০ টাকায় কিনে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকাও বেচি। এবারে শিলাবৃষ্টি আর কালবৈশাখীতে সব ঝইড়া গেছে। তাই লেচু কম, দামও বেশি।’
নাসরিন জানান, গত বছর যে প্লেট ভর্তি লিচু তিনি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন, এবার তার দাম চাইছেন ৮০ টাকা করে। ৭০ টাকার নিচে এবার বাজারে কোনো প্লেট নেই। তবে লিচুর মানভেদে দামেও কিছু তারতম্য রয়েছে।
মানের কারণেই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী নার্গিস বেগম এক প্লেট লিচু বিক্রি করছেন ১৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘আজ বাজারের সেরা লেচু আমার। তাই দাম বেশি। আমার কাছে কম দামেরও লেচু আছে। এগুলো কিছুটা ছেঁড়া-ফাটা। ভালো লেচুর দাম বেশি।’
বিক্রেতা লিপি জানান, সেই কাকডাকা ভোরে তার স্বামী কয়েকটি লিচু বাগানে যান। এসব বাগান থেকে তিনি ঝরে পড়া লিচু কিনে আনেন। এগুলোই পরে প্লেটে সাজিয়ে বিক্রি করেন লিপি।
তিনি বলেন, ‘এবার লেচুর আমদানি কম, ব্যবসায়ী বেশি। কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করতে পারতেছি না।’
লিচু কিনতে আসা খগেন বর্মণ বলেন, ‘প্রতি বছর এখানে নারীরা লিচু বিক্রি করেন। আমরা যারা বাজারে বেশি দামে লিচু কিনতে পারি না তারা এখানে কম দামে কিনি। আমি ৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসেছি এখানে লিচু কিনতে।’
আরেক ক্রেতা ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এই বাজারটা গরীবের বাজার। এবার একটু দাম বেশি হলেও বাগানের ছোটা লিচুটা কম দামেই পাই। তাই নাতিদের জন্য ১০০ টাকায় লিচু নিলাম ২ প্লেট। অনেক দরদাম করেই নিতে হলো। লিচু ৭০ এর কমে কেউ বিক্রি করছে না।’
মুন্সিরহাট বাগানবাড়ি এলাকার ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, লিচু ভাঙ্গার কাজ চলছে। ফলন নিয়ে হতাশ বাগান মালিক মালিকেরা। তাদেরই একজন আজিজুল হক জানান, গত বছর যে বাগান থেকে তিনি আড়াই লাখ লিচু পেয়েছেন এবার পেয়েছেন মাত্র ৩০ হাজার।
তিনি বলেন, ‘দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি আর কাল বৈশাখী আমাদের পথে বসিয়েছে।’
বাগান মালিক আব্দুল মালেক জানান, জেলার সব উপজেলায় কম বেশি শিলাবৃষ্টি হলেও মুন্সিরহাট গোবিন্দনগর এলাকায় ২৫০ একর জমির বাগান সবেচেয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, ‘জেলায় মোট ৯০০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবার শিলাবৃষ্টিতে লিচু ও আমের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মুন্সিরহাট, গোবিন্দনগর এলকার বাগানগুলো বেশি আক্রান্ত হয়েছে। তাই এ অঞ্চলে লিচুর দাম বেশি।’
এর আগে ভ্রাম্যমাণ লিচু বাজারটির ব্যবসায়ী নুরজাহান বেগমের কণ্ঠেও হতাশার সুর শোনা গেছে। নিউজাংলাকে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণীঝড় পাথরে বাগানের সব লেচু ঝইড়া গেছে। এবার তাই ব্যবসা হইতেছে না। প্রতিবার পিঁড়ি নিয়ে বইসা আধবেলায় এক হাজার টাকা কামাইতাম। এবার সারাদিন বইসাও ৫০০ টাকা কামাইতে পারতাছি না।’
আরও পড়ুন:অফিসে নারী কর্মীকে যৌন হেনস্তার খবর মাঝেমধ্যেই আসে। বিষয়টি কখনও কখনও গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ভারতে এই যৌন হেনস্তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার সুপারিশ রয়েছে নতুন বিধিতে। কিন্তু নারী ‘বস’ যদি একই দোষে দোষী হন তাহলে?
‘দণ্ড সংহিতা বিল’ নিয়ে এই প্রশ্ন তুললেন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংসদ সদস্য (এমপি) নীরজ শেখর। মঙ্গলবার সংসদের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নতুন তিন বিল নিয়ে আলোচনার সময়ই কমিটি সদস্য এ প্রশ্ন তোলেন।
হিন্দুস্তনা টাইমস বলছে, এমপির প্রশ্ন শুনে অন্য এমপিরা পরামর্শ দিয়েছেন, লিঙ্গ নির্বিশেষে একই শাস্তি দেয়া হোক এমন ‘বসদের’।
কেন্দ্রের আনা দণ্ড সংহিতা বিলে পুরুষ বসদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। দোষী হলে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি ১০ বছরের কারাদণ্ডের সুপারিশও আছে এতে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী চন্দ্র শেখরের ছেলে নীরজ জানতে চান, নারী বসের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে সাজার কী ব্যবস্থা থাকছে?
তাকে সমর্থন করেন দিলীপ ঘোষ-সহ একাধিক এমপি। দিলীপ-নীরজদের মতে, সময় বদলাচ্ছে দ্রুত। বহু সংস্থার কর্তা এখন নারী। তাহলে অভিযোগের তীর কেন শুধু পুরুষদের দিকে উঠবে? নারী বসরা কেন ছাড় পাবেন?
বাংলাদেশের দক্ষিণের এক জেলায় সাহারিয়া কনকের জন্ম। বাংলাদেশ থেকে কানাডার ভৌগলিক দূরত্ব ও সাংস্কৃতিক ফারাক কতটা, তা প্রযুক্তির এ যুগে এসে হয়তো সহজেই সবার বোধে এসে যায়। তবে এই ভৌগলিক, আর্থ সামাজিক দূরত্ব আর অনেকখানি বন্ধুর পথ পেরিয়ে বাঙালি একজন নারী দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করতে যোগ্য হয়ে ওঠেন তা নিয়ে ধারণা পাওয়া খুব সহজ কিছু নয়।
সেই যোগ্য বাঙালি নারী হলেন আমাদের আজকের আলোচিত সাহারিয়া কনক। তিনি কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পুলিশে অধীনে (অন্টারিও মিনিস্ট্রি অফ সলিসিটির জেনারেল) রিজিওনাল বিসনেস এনালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন।
বরিশাল থেকে ঢাকা, ঢাকা থেকে জাপান, এরপর জাপান থেকে কানাডা। সাহারিয়ার সব পথ একরৈখিক করেছে শিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেছে, সমৃদ্ধ হয়েছে তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। তবে অভিজ্ঞতা সবসময় সুখকর ছিল না। নিরলস চেষ্টায় তিনি পৌঁছেছেন তার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে।
সাহারিয়া নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন সেসব উদ্দীপক গল্প।
বরিশাল শহরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই মেধাবী মানুষটির। স্কুলের শিক্ষা শেষে বিএম কলেজে, এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এই পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বৈবাহিক সূত্রে ২০০১ সালে বাংলাদেশ থেকে জাপানে যান তিনি।
সাহারিয়া জানান, তার স্বামী সেই সময়ে এনভারনমেন্টাল ইঞ্জনিয়ারিংয়ে জাপানে পিএইচডি করছিলেন। বৈবাহিক কারণে জাপানে গেলেও নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন নিজের উচ্চ শিক্ষা এবং ক্যারিয়ার তৈরির বিষয়ে। সাহারিয়ার স্বামী ড.আনিসুর রহমান এ ব্যাপারে তার পাশে থেকেছেন সবসময়, এটি এ সফল নারীর পরম পাওয়া।
জাপানে যেখানে ছিলেন সাহারিয়া, সেখানে ভার্সিটির সোশ্যাল সাইয়েন্স ডিপাটরমেন্টে জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিসিয়েন্সি ছাড়া কোনো রিসার্চ করার সুযোগ ছিল না মাস্টারস লেভেলে! আর সরাসরি পিএইচডি প্রোগ্রামে এনরোলমেন্ট হওয়ার মতো রিসার্চ ব্যাকগ্রাউন্ডও তার ছিল না। অবশ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্সকালীন সময়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রজেক্টে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে তার দুই বছরের অভিজ্ঞতা ছিল।
অনেক প্রচেষ্টার পরে প্রফেসর ডক্টর ইউসিয়াকি ইগুনির তত্ত্বাবধানে তার রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শেখার সুযোগ মেলে সাহারিয়ার। কোনো বেতন বা স্কলারশিপ ছাড়াই দুই বছর টানা কাজ করার পর জাপান সোসাইটি ফর প্রোমোশন অফ সায়েন্সে বেশ বড় রিসার্চ প্রোজেক্ট ফান্ড/অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন তিনি। এই ফান্ড দেয়া হয় রিচার্স ফেলোশিপ ফর ইয়াং সায়েন্টিস্ট-এর আওতায়। সাহারিয়া এর আওতায় সংসার,পুত্র সবসামলে বাংলাদেশের মাইক্রোফিন্যান্স নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ২০০৭ সালে অক্টোবরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পোস্ট ডক্টরেট ফেলো হিসেবে তিনি চাকরি করেন।
সাহারিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জাপানের পার্থক্য যা দেখেছি; দুর্দান্ত সিস্টেমেটিক, ট্রান্সপারেন্ট এবং কমিটেড সোশ্যাল কালচার। কিন্তু বাংলাদেশের মতো হাইলি পপুলেটেড, কারণ জাপানে ৭৫% পাহাড়ি বন ঘেরা এরিয়া, বাকি ২৫% ফ্লাট ল্যান্ড। জাপান বিশ্বের থার্ড লার্জেস্ট ইকোনমি এবং সেকেন্ড ডেভোলপড দেশ হলেও তা এশিয়য়ার অন্তৰ্ভুক্ত। তাই ফ্যামিলি নর্মস, ভ্যালুস, সামাজিকতায় অনেক মিল আছে আমাদের কোর ভ্যালুর সাথে জাপানিজ কালচারেরসব থেকে পজিটিভ ইনফ্লুয়েন্স ছিল আমার ক্ষেত্রে, তাদের বিনয়, ওয়ার্কম্যানশিপ, অনেস্টি এবং সিম্পল লাইফ স্টাইল।’
এখানেই থেমে থাকেননি সাহারিয়া, ২০০৫ সালে কানাডায় নাগরিকত্ব নিলেও ২০০৮ সালের নভেম্বরে জাপান থেকে কানাডার অন্টারিও প্রদেশে অভিবাসন করেন তিনি। সে পথও কতটা বন্ধুর ছিল তা উঠে আসে সাহারিয়ার কথায়।
তিনি বলেন, ‘এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে নতুন করে ক্যারিয়ার আর জীবন শুরু, যা সব অভিবাসীর মতোই কঠিন। এ যেন কাজী নজরুলের ইসলালের ভাষায়- দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হে। লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার!
‘নতুন দেশ, নতুন কালচার সবকিছু নতুন করে জানা শেখা। সাড়ে ৪ শ’র বেশি কালচারাল অরিজিন কানাডায় বসবাস করে। তা ছাড়া ভৌগোলিক বিশালত্ব- অন্টারিও বাংলাদেশের থেকে ৭.৫ টাইমস বড়! এখানে ১০০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে প্রতিদিন জব করা খুবই স্বাভাবিক। তাই কালচারাল শিফট ছিল সিগনিফিকেন্ট।’
সাহারিয়া বলেন, ‘২০০৮ সালের নভেম্বরে যখন এসেছি, তখন ওয়ার্ল্ড রিসেশন চলছে; যার প্রভাব কানাডায় প্রকট ছিল। জব মার্কেট খুবই ভালনারবল। কিন্তু আমি আশাহত না হয়ে গভর্নমেন্ট-এর নিউ-কামার ট্রেনিং শুরু করি, যা আমাকে এই দেশ সম্পর্কে, জব নিডস এবং আমার স্কিল এসেসমেন্ট এ সাহায্য করবে বলেই বিশ্বাস ছিল।
‘কারণ কানাডা গভর্নমেন্ট বিনা খরচে প্রতিটি নিউ ইমিগ্র্যান্টকে (এন্ট্রির পরে প্রথম তিন বছর সবাইকে নিউ ইমিগ্র্যান্ট হিসাব করে যার যে ধরেন সাপোর্ট দরকার, তার এসেসমেন্টে সাহায্য করার বিভিন্ন সরকারি ফান্ডেড নন প্রফিট অর্গানিজশন আছে প্রতিটি শহরে) বিভিন্ন স্কিল ট্রেনিং এবং কালচারাল এসিমিলেশন- এর অপশন রেখেছে, যা সবাইকে এই দেশে অভিসংযোজিত হতে সাহায্য করে।’
দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে এ রকম একটি অর্গানাইজেশন নিউ-কামার সেন্টার অফ পিল-এ রিজিউম কভার লেটার রাইটিং অ্যান্ড কানাডিয়ান ইন্টারভিউ স্কিল বিল্ডআপের তিন মাসের ট্রেনিং শেষ করে ওখানেই ভলান্টিয়ার পজিশনে মাইগ্রেশন সেটেলমেন্ট অফিসে জয়েন করি। কানাডিয়ান জব এক্সপেরিয়েন্স নেয়ার জন্য দীর্ঘ ৮ মাস বিনা বেতনে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত সোমবার থেকে শুক্রবার কাজ করেছি।
‘এরপর ২০০৯ সালের অক্টোবরে ওই অর্গানিজশনের ডিরেক্টরের রেফারেন্সে একটি প্রাইভেট অর্গানিজশনে অ্যাডমিন কোঅর্ডিনেটর পজিশন ইন্টারভিউ পাই। মোট ১০জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল ইন্টারভিউয়ের জন্য। এদের মধ্যে একমাত্র আমি নির্বাচিত হয়ে ওখানে জয়েন করি, যদিও বাসা থেকে বেশ দূরে এবং ড্রাইভিং করতে হতো তিনটা ব্যস্ত হাইওয়েতে। এটা এ কারণেই উল্লেখ করছি, এখানে প্রতিদিন নিউ-কামার অবস্থায় অনেকেই এটা করতে সাহস করবে না। কিন্তু আমি আমার জাপানের অভিজ্ঞতা, ওদের পরিশ্রমের সেই পজিটিভিটি মাথায় রেখে জবটা একসেপ্ট করে ওখানে ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত কাজ করেছি।’
সাহারিয়া বলেন, ‘এরই মধ্যে অনেক জবে অ্যাপ্লাই করেছি, কোথাও কোথাও ইন্টারভিউ পেলেও সফল হয়নি। এটা মনে হয়েছিল যে, এখানকার এডুকেশন না থাকায় ইন্টারভিউ পেলেও ঠিকমত কম্পিট করতে পারছি না; নিজেকে আরেকটু এনরিচ করতে হবে ড্রিম জব পাবার জন্য। তাই ২০১৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটারলু-এর প্রফেশনাল মাস্টার্স ডিগ্র-এমপিএস (মাস্টার অফ পাবলিক সার্ভিস)- এ ভর্তি হই। ২০১৪ এর অল কোর্স ওয়ার্ক শেষ করেই দ্য অন্টারিও মিনিস্ট্রি অফ ফাইন্যান্স-এ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার হিসেবে জয়েন করি।
‘২০১৫ মার্চে এমপিএস- এর রিচার্স পেপার শেষ করে ডিগ্রি লাভের পর পাবলিক সার্ভেন্ট অফ কানাডা হিসেবে রেগুলার পজিশনে দ্য অন্টারিও মিনিস্ট্রি অফ চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ুথ সার্ভিসে রিচার্স অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করি। কিন্তু ততদিনে স্বপ্নের পরিধি বড় হচ্ছিল। এখানে প্রভিন্সিয়াল গর্ভমেন্টে এ প্রতিটি পজিশনের জন্য আলাদা সিভিল সার্ভিস কম্পিটিশন, তাই ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের এ সময়ে আমি অন্তত ৩০ ইন্টারভিউ দিয়েছি, কিন্তু জব অ্যাপ্লাই করেছি ১০০-এরও বেশি।’
সাহারিয়া বলেন, ‘ওয়াটারলু-এর মাস্টার্স ডিগ্রি খুবই সহায়ক ছিল। জব সার্চিং প্রসেস ফর গর্ভমেন্ট, এই ডিগ্রি আমাকে যথাযথভাবে প্রস্তুত করেছে কানাডার পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন বাংলাদেশে। আব্বা ছিলেন আমার জীবনের আদর্শ পুরুষ। আমার শৈশব এর সব থেকে স্মৃতিময় সময় ছিল, আব্বা যখন তার ইউনিফর্ম পরে কাজ শেষে বাসায় ফিরতেন হাতে বিভিন্ন ধরেনর ফল আর চকলেট নিয়ে। সেই ক্ষণ ছিল স্বপ্নের মতো।’
বাবার কাছ থেকে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক কিছুই তার শোনা, সাহারিয়ার প্রয়াত বাবা যেমন পুলিশ বাহিনী নিয়ে গর্বিত ছিলেন তেমনি কিছু ব্যাপারে তার দুঃখ ছিল অপিরিসীম। বাংলাদেশ পুলিশ সুযোগ-সুবিধায় সুরক্ষিত নয় ও জনগণের বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ। উদাহরণ স্বরূপ আরও বলা যেতে পারে,পুলিশ বাহিনীর জনগনকে মানবিক সেবা দিয়ে যে সম্মান পাওয়ার কথা তাতে ব্যাপক ঘাটতি, কিংবা আসামির স্বীকারোক্তি আদায়ের অমানবিক পদ্ধতি ও বাংলাদেশের স্বাক্ষী সুরক্ষা আইনের অষ্পষ্টতা নিয়েও তার বাবার মনে কষ্ট ছিল।
কানাডার পুলিশ জনগণের আস্থা অর্জন করে তাদের প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠেছে, বাংলাদেশে যেটি এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে । কানাডায় সর্বস্তরের পুলিশ বাহিনীর স্বচ্ছতা, রেস্পেক্ট এবং সর্বোপরি জনগণের আস্থা বা গ্রহণযোগ্যতা অপরিসীম। এসব সাহারিয়ার অবচেতন মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল। তাই কানাডার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অংশ হওয়া ছিলো তার স্বপ্নের দ্বিতীয় ধাপ। এই লক্ষকে সামনে রেখে সাহারিয়া সিটি, মিউনিসিয়াপলিটি এবং প্রভিন্সিয়াল পুলিশ -এ জব সার্চ এবং অ্যাপ্লাই শুরু করেন।
অবশেষে ২০১৮ এর এপ্রিলে ৬ মাসের ৫ লেভেল এর বাছাই পর্ব শেষে ফার্স্ট লেভেল অফ সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স পার হয়ে অন্টারিও মিনিস্ট্রি অফ সলিসিটর জেনারেলের অধীনস্থ অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পুলিশে রিজিওনাল বিসনেস এনালিস্ট হিসেবে যোগ দেন তিনি।
বাংলাদেশের বরিশালের এই সাহারিয়াই প্রথম বাংলাদেশি কানাডিয়ান যিনি ওপিপি নীতিনির্ধারণী লেভেলে হায়ার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
বরিশালে একসঙ্গে তিন ছেলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এক গৃহবধূ। গৌরনদী উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শুক্রবার রাতে তিনি মা হন।
বর্ষা আক্তার নামের ২৩ বছর বয়সী ওই গৃহবধূ উপজেলার যুগীহাটি গ্রামের ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি পলাশ মোল্লার স্ত্রী।
তিন সন্তানের জন্ম হওয়ায় ওই পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে। এদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ায় শিশুদের দেখতে হাসপাতালে উৎসুক জনতা ভিড় করছেন।
বর্ষার শাশুড়ি রোজিনা বেগম জানান, বর্ষাকে শুক্রবার বিকেলে গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর সুইজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
ওই রাতেই চিকিৎসক শিউলির তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিন ছেলের জন্ম দেন বর্ষা। শনিবার সকালে তিন সন্তানের নাম রাখা হয়েছে আবু বকর, মিজানুর রহমান ও ওমর ফারুক।
এদিকে এক নবজাতক অসুস্থ হওয়ায় তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অপর দুই সন্তান ও তাদের মা সুস্থ আছেন।
সুইজ হাসপাতালের পরিচালক শেখ রুপা খানম দাবি করে বলেন, ‘গৌরনদীর কোনো হাসপাতালে এ প্রথমবার একসঙ্গে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়েছে। হাসপাতালের পক্ষ থেকে তিন বাচ্চার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
আরও পড়ুন:মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শেখ শাকিল মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে সদর থানায় মামলা করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ভুক্তভোগীর মা হাসপাতালের কর্মচারী। রাতে হাসপাতালে কাজের পালা থাকলে বাড়িতে একা না রেখে মেয়েকে প্রায় নিজের সঙ্গে রাখতেন মা।
মঙ্গলবার রাতেও হাসপাতালে ছিল কিশোরী। রাত ১২টার দিকে ওই কিশোরীকে ডেকে প্রেমের প্রস্তাব দেন শাকিল। এতে অস্বীকৃতি জানালে টেনে হাসপাতালের ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করেন।
পরে কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান শাকিল। ভুক্তভোগীর মা বিষয়টি জানতে পেরে একই হাসপাতালে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও অভিযুক্ত শাকিলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মুন্সিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনাটি আমাদের জেলা কমিটির নজরে এসেছে। শহর ছাত্রলীগকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তার (শাকিল) এ ঘৃণিত কাজের দায়ভার ছাত্রলীগ নেবে না। শুনেছি, তিনি ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আদৌ কমিটি হয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে।’
মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, ‘কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় শাকিল নামের একজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:দেশে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য, বাল্যবিয়ে, শিশু মৃত্যু, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় প্রসব- এমন নানা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তবে একইসঙ্গে বেড়েছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্মদান। পাঁচ বছরে তা বেড়েছে ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস)-২০২২ এর প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেচে।
রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) আয়োজনে মঙ্গলবার এই জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
তাতে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার ৩৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। সে হিসাবে ৫ বছরে এই বৃদ্ধির হার ১১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের ফলাফলে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশে মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশু স্বাস্থ্যের উল্লেখযোগ্য উন্নতির চিত্র পাওয়া গেছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০২২ সালে শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
নিপোর্ট-এর মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু এবং ইউএসএইড বাংলাদেশের পরিচালক (পপুলেশন, হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন) ক্যারি রাসমুসেন।
জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, বিগত যেকোনো সময়ের তুলনায় দরিদ্র নারীর স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের হার বেড়েছে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নারীদের তুলনায় বিত্তবান নারীদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের মাত্রা ছয়গুণ বেশি ছিল। ২০২২ সালে এসে দরিদ্র নারীদের তুলনায় বিত্তবানদের সেবা গ্রহণ দ্বিগুণ হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ধারাবাহিক তিন বছরের গড় অনুযায়ী, ৫ বছরের নিচে জীবিত শিশু জন্মের পর মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৪৩ থেকে ৩১-এ নেমে এসেছে। এক বছরের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জন এবং এক মাসের কম বয়সের শিশুমৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২০ জন।
পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে অর্থাৎ সঠিক বৃদ্ধি ঘটছে না এমন শিশুর হার ৩১ থেকে ২৪ শতাংশে নেমেছে। তবে কম ওজন নিয়ে জন্মানো শিশুর হারে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় প্রসবের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ প্রসবই দক্ষ সেবাদানকারীর সহায়তায় হয়েছে। এ ছাড়া ৬৫ শতাংশ প্রসব কোনো না কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫১ শতাংশ।
৮৮ শতাংশ নারী অন্তত একবার একজন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে গর্ভকালীন বা এএনসি সেবা নিয়েছেন। ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৮২ শতাংশ। তবে করোনাকালে চারবারের অধিক গর্ভকালীন সেবা বা এএনসি গ্রহণকারীর সংখ্যা ৪৭ শতাংশ থেকে কমে ৪১ শতাংশে নেমে এসেছিল।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, জন্ম বিরতিকরণ সামগ্রী ব্যবহারের হার ২ শতাংশ বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার ৩ শতাংশ বেড়ে ৫৫ শতাংশ হয়েছে।
২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী কিশোর বয়সে সন্তান জন্ম দেয়ার হার কমেছে। ২০১৭ সালে এ হার ছিল ২৮ শতাংশ। ২০২২ সালে তা কমে ২৩ শতাংশ হয়েছে।
অল্প বয়সে বিয়ের হারও ধীরে ধীরে কমছে। ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়ার হার ২০১১ সালে ছিল ৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা কমে ৫৯ শতাংশ হয়। আর ২০২২ সালে তা ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
প্রাথমিক ফলাফলে বলা হয়, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। ৯৯ শতাংশ বাড়িতে বিদ্যুৎ আছে, ৯৮ শতাংশ ঘরে কারও না কারও মোবাইল ফোন আছে। ৬০ শতাংশ বাড়িতে উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা আছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪৩ শতাংশ।
মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গৃহস্থালি কাজে নারীর অবদান যুক্ত হতে যাচ্ছে। ঘরের কাজের আর্থিক মূল্যায়ন আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে জিডিপিতে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (বিআইডিএস) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ তথ্য জানান।
মন্ত্রী মান্নান সাংবাদিকদের জানান, একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে নারীদের অবদান আন্ডার রিপোর্টেড। এটা জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গত সভায়ও তিনি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনীতিতে ঘরের কাজ বা গৃহস্থালি কাজের অবদান স্বীকার করতে হবে। এটা করা গেলে আমাদের জিডিপি আরও বাড়বে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে হবে না। কিন্তু তারপরের বাজেট থেকে নারীদের অবদান যুক্ত করে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব ধরা হবে।
‘ঘরের কাজের আর্থিক মূল্যায়ন আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে জিডিপিতে কীভাবে যুক্ত করা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করতে বিআইডিএস নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার ভাষায় বলেছেন- এটা এমন এক চাকরি, যার কোনো কর্মঘণ্টা নেই। বিশ্রাম নেই, ছুটি নেই, বেতন নেই, পেনশন নেই। এগুলো মূল্যায়ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ খুব বেশি। আমরাও তার সঙ্গে শতভাগ একমত।
‘আমাদের জিডিপি যা দেখাচ্ছি বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি। কারণ আমাদের অর্ধেক জনশক্তির কাজ জিডিপিতে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না।’
নারীর শ্রম জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে মন্ত্রী মান্নান বলেন, ‘সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত শ্রম জরিপে কৃষিতে পুরুষের তুলনায় নারীর অবদান বেশি বলে তথ্য উঠে এসেছে। নারীদের শুধু মাঠে গিয়ে কাজ নয়; ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব করে দেখা গেছে, কৃষিতে পূরুষের তুলনায় নারীদের অবদান বেশি। অদূর ভবিষ্যতে দুটি একত্র হবে। এবং একটি সুষম অর্থনীতিতে যা হওয়ার কথা তা যথাযথভাবে এই খাতে প্রতিফলিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘মায়ের ভালবাসার মূল্যায়ন করা তো সম্ভব নয়। কিন্তু মায়ের রান্না, ধান বানা, পানি গরম করা, কাপড় ধোয়ার মতো কাজগুলোর তো মূল্যায়ন করা সম্ভব।’
এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা যে জিডিপি তৈরি করি, তাতে আমাদের দেশীয় কোনো পদ্ধতি বা মডেল অনুসরণ করা হয় না। সিস্টেম অফ ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জিডিপির হিসাব করা হয়। সারাবিশ্বেই ও পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সব দেশ একরকমই করে থাকে।’
গৃহস্থালিতে শ্রমের আর্থিক মূল্যমানের পরিমাপ সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সাধারণত বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বিনিময় না হলে তা জিডিপিতে আসে না। এজন্য আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী বলেছেন যে একটি স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট করা যায়। যেমন ঘরে একজন নারী যতক্ষণ কাজে সময় দিচ্ছেন, সেই সময়টা যদি বাইরে দিতেন, সেই কাজের মূল্য কত পেতে পারতেন। এ রকম একটি ছায়া অ্যাকাউন্ট করে নারীদের কাজের শ্যাডো প্রাইসিং বা মূল্যায়ন করা যায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও ওয়াশিংটনে শুক্রবার দুই বিচারকের পরস্পরবিরোধী রায়ে দেশটিতে গর্ভপাতের পিলের ব্যবহার নিয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিবিসি শনিবার এক প্রতিবেদনে জানায়, টেক্সাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিযুক্ত এক বিচারক বহুল ব্যবহৃত গর্ভপাতের পিল মাইফপ্রিস্টোনের দীর্ঘদিনের অনুমোদন আটকে দিয়েছেন।
গত ২০ বছর ধরে পিলটি ব্যবহারের অনুমোদন ছিল এবং এটি বেশির ভাগ গর্ভপাতের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়।
টেক্সাসের বিচারকের ওই রায়ের ঠিক এক ঘণ্টা পর ওয়াশিংটনে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নিযুক্ত বিচারক এক আদেশে বলেন, পিলটি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
দুই বিচারকের এমন রায়ের পর পিল ব্যবহারের অনুমোদনের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৬৭ পৃষ্ঠার রায়ে টেক্সাসের আমারিলোর বিচারক ম্যাথু ক্যাকসম্যারিক মাইফপ্রিস্টোন ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদন স্থগিত করেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে সাত দিন সময় পাবে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ জানিয়েছে, তারা এ রায়কে চ্যালেঞ্জ করবে।
বিচারক ক্যাকসম্যারিকের রায়ে লাখো নারীর মাইফপ্রিস্টোনের প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টেক্সাসের বিচারকের রায় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিতে পারে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য