স্বাধীন সাংবাদিকতার বাধা দূর করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
এ সময় তিনি জানান, সাইবার ক্রাইমের মতো বিষয়গুলো প্রতিরোধ করতেই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমকর্মী আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ডেটা সুরক্ষা আইন-বিষয়ক সংলাপে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) বিষয়ভিত্তিক এই সংলাপের আয়োজন করে। বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ইতিমধ্যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের একটা কিছু পরিবর্তন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে যদি কোনো অন্তরায় থাকে তা দূর করা হবে। আমরা জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করেছি।
‘আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিবকে আহ্বায়ক করে এ-সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে কমিটি আইনটি সংশোধন নিয়ে কাজ করছে। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর এ-সংক্রান্ত আইনের বেস্ট প্রাকটিসকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। তখন এ আইন নিয়ে আর কারও প্রশ্ন থাকবে না।’
আইনমন্ত্রী এই আইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, চুরির সংজ্ঞা সাধারণত কোনো বাড়িতে চোরের ফিজিক্যালি উপস্থিতিতে চুরি করা। কিন্তু এখন চোর ফিজিক্যালি উপস্থিত না হয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে করছে। এ প্রক্রিয়ায় কেউ যদি ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে সেটি কি অপরাধ নয়?
মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। প্রযুক্তিরও অগ্রসর হচ্ছে। এ প্রযুক্তির নানা অপব্যবহার হচ্ছে। তাতে কিছু দৃশ্যমান অসুবিধা তো তৈরি হচ্ছেই। সেই অসুবিধাগুলো মোকাবিলা করে দেশের মানুষকে স্বস্তিতে রাখতে এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই আইনের অন্যতম ধারা হচ্ছে ২১। যেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশ, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, জাতীয় পতাকা নিয়ে কোনো কটূক্তি, অসম্মান কিংবা বিদ্বেষ ছড়ানো যাবে না। কেউ করলে সেটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।’
এ ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়গুলোও স্পষ্ট করা হয়েছে আইনে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ল এনফোর্সমেন্ট কমিটিতে আছি। সেখানে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে, জাতীয় পতাকাকে অশ্রদ্ধা করা হচ্ছে, এমনকি ধর্মনিরপেক্ষতার বাংলাদেশেও ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। আবার আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে এমন কিছু বলা হচ্ছে, যা দেখলে-শুনলে সুস্থ মস্তিষ্কের যে কারও মাথা-কান গরম হয়ে যাবে।
এ ধরনের অবজ্ঞাকারীদের কি প্রতিকার দরকার পড়ে না? মূলত তাদের প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্যই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে।’
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনে জামিন অযোগ্য ধারা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘জামিন অযোগ্য মানেই তার জামিন হবে না, বিষয়টি এমন নয়। যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে তাদের তো জামিন হচ্ছে। যদি তাই হতো তাহলে হত্যা মামলায় কখনও কারও জামিন হতো না। কিন্তু দেখেন সেখানেও কিন্তু জামিন হচ্ছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখন চাইলেই ডিজিটাল সিকিউরিটি একটা মামলা নেয়া হবে না। এই মামলা নেয়ার অনেক প্রসেস আছে; তার সুরাহা হয় কোর্টে। তাছাড়া আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যথাসম্ভব এই মামলা কম নেয়ার। কেবল ধারাতে পড়লেই সেটি নেয়া যাবে কি না তার সিদ্ধান্ত হবে কোর্টে।’
ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ আইনে যাতে মামলা কম হয় সে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান আইনমন্ত্রী।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হয় এমন আইন করবে না সরকার
স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব বা বাধাগ্রস্ত হয় এমন কোনো আইন শেখ হাসিনার সরকার করবে না, করতে পারে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে সাংবাদিকদের যে আপত্তি বা পর্যবেক্ষণ রয়েছে সেগুলো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার উদ্যোগ নেবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে অধিকার আদায় করতে হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। এখানে সাংবাদিকদের তা করতে হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবিধানিকভাবেই সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের এই মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করে গেছেন। এখন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি পাল্টে দেবেন, তা হতে পারে না।’
আনিসুল হক বলেন, ‘শুধু গণমাধ্যমকর্মী আইন কেন, বাংলাদেশে এমন কোনো আইন হবে না যেটা স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের পথ বাধাগ্রস্ত করে।’
তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগের আইনকে যুগোপযোগী করার প্রয়োজন রয়েছে। এখন বিশ্বায়ন হচ্ছে। নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। সেগুলোরও দ্রুত পরিবর্তন আসছে। আগে ফ্যাক্স ছিল পরে মোবাইল ফোন এসেছে, নতুন করে সংশোধন হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। আগের সংবাদপত্রের সার্কুলেশন ছিল বিপুল পরিমাণ। কোথাও কোথাও কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত সার্কুলেশন ছিল। এখন তা কমে ৩০/৩২ হাজারে নেমে এসেছে। অন্যদিকে এখন যুগ অনলাইনের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহু অ্যাপস এসেছে। এখানে শুধু সাংবাদিক সাংবাদিকতা করে না, সাংবাদিকতায় নেই এমন অনেকেও এসব মিডিয়া ব্যবহার করে প্রচার-প্রচারণা চালান।
কিন্তু তাদের প্রচার-প্রচারণা সব সময় সঠিক হয় না। কোনো কোনও ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় পতাকা ও জাতির জনকের অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটা গুরুতর অপরাধ। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, রাষ্ট্র কর্তৃক তাদের নিয়ন্ত্রণের বিষয় আছে। সেই সব বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতেই গণমাধ্যম আইন সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।
আরও পড়ুন:প্রচ্ছায়া লিমিটেডের আট পরিচালকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দেশ ত্যাগে যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তারা হচ্ছেন: প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বুশরা সিদ্দিক, শেহতাজ মুন্নাসী খান, শহিদ উদ্দিন খান, শাহিন সিদ্দিক, শফিক আহমেদ শফিক, পারিজা পাইনাজ খান, নওরিন তাসমিয়া সিদ্দিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারজানা আনজুম।
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এই আদেশ দেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাঁর ছোট বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকী ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের নামে প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারহোল্ডারগণ যাতে সপরিবারে গোপনে দেশ ত্যাগ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি দেশত্যাগ করে বিদেশে পালিয়ে গেলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র প্রাপ্তিতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। তাছাড়া সার্বিক অনুসন্ধানকাজে বিঘ্ন সৃষ্টিসহ সমূহ ক্ষতির কারণ রয়েছে। এজন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাত্রা রোধে আদালতের আদেশ দেয়া একান্ত প্রয়োজন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
মন্তব্য