যশোরের বাঘারপাড়ায় পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে শিশু তমা, সুমাইয়া ও হোসাইন মারা গেছে। একসঙ্গে তিন শিশুকে হারিয়ে শোকের মাতম এখন পরিবারে। এ ঘটনায় শুধু পরিবার নয়, স্বজন-এলাকাবাসীরাও বাকরুদ্ধ।
একসঙ্গে তিন শিশুর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর মাইকে প্রচার না করলেও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই ঢল নামে মৃতদের বাড়িতে।
বাড়ির উঠানে, ভিটায় ভিড় করছেন লোকজন। ভেজা চোখে অনেকেই নির্বাক। মাতম করছেন পরিবারের লোকজন, স্বজনরা কাঁদছেন, কাঁদছেন বাড়িতে আসা লোকজনও।
সোমবার দুপুরে বাঘারপাড়ায় বাসুয়াড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীরামপুর এলাকায় পুকুরে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে তিন শিশু মারা যায়। তারা হলো, ওই এলাকার হারুন মোল্যার মেয়ে ৮ বছরের তমা, কামরুল ইসলামের ৯ বছরের মেয়ে সুমাইয়া এবং সাঈদ মোল্যার ৮ বছরের ছেলে হোসাইন।
ভ্যান তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করে সংসার চালান সুমাইয়ার বাবা কামরুল ইসলাম। একমাত্র সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ তিনি। বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘আমার মেয়েটা ছিল একেবারেই শান্ত প্রকৃতির, হাসি ছাড়া কথা বলত না, লেখাপড়ায় ছিল খুবই মনোযোগী, এমন লক্ষ্মী মেয়েকে হারিয়ে আমি কীভাবে বাঁচব?’
বলেই বুক চাপড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন কামরুল।
সুমাইয়ার মা গুনজার বেগম বলেন, ‘সুমাইয়া স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস থ্রিতে পড়ত। সকালে স্কুলে গিয়েছিল না খেয়ে। স্কুল থেকে ফিরেই বলে মা ভাত দাও। তাকে বলি গোসল করে আয়, ভাত দিচ্ছি। পরে চাচাতো বোন তমার সাথে গোসল করতে যায়। গোসল করতে গিয়ে আর ফেরেনি তমা।’
আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে ক্যানসারে হারিয়েছি ১০ বছরের ছেলে মিঠুনকে। এখন মেয়েডারে হারালাম। এখন কাকে নিয়ে বাঁচব।’
দুই হাত তুলে তিনি বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ, আমার প্রাণডা লইয়া তুমি আমার সোনারে ফিরায়ে দাও।’
স্থানীয় এক যুবক জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তমা, সুমাইয়া ও হোসাইন স্কুল থেকে ফিরে গোসল করতে নামে। তিনজনই একসাথে ডুব দিয়ে আর ওঠেনি। দীর্ঘক্ষণ ধরে তারা তিনজন না উঠলে ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক শিশু নাহিদ সুমাইয়ার মাকে বলে তারা ডুবে গেছে। সুমাইয়ার মায়ের চিৎকারে তারাও পুকুরে নেমে খুঁজতে থাকেন। পরে জাল ফেলে তাদের উদ্ধার করা হয়।
তিন শিশুকেই বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তিন শিশুর বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় তাদের মরদেহ উঠানে একটি খাটের ওপর রাখা হয়। সেই খাট ঘিরেই মাতম করছেন স্বজনরা।
তার পাশে এলাকার কয়েকজন খাটিয়া ধোয়ামোছার কাজ করছেন। আবার কয়েকজন তমার বাবা হারুন মোল্লাকে ঘিরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
আহাজারি করতে করতে হারুন মোল্যা বলেন, ‘দিনমজুর করেই সংসার চালাই। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যেও ভালোই দিন কাটছিল। সারা দিন কাজ শেষে বাড়ি ফিরে মেয়ের মুখ দেখার পর শান্তি পেতাম, এখন আমি কাকে দেখে মনকে সান্ত্বনা দেব?’
তমার মা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘এভাবে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, আদরের ধন হারানোর বেদনা যে কত কঠিন, সেটা যে হারায়, একমাত্র সেই বোঝে।’
এরপরই বিলাপ করতে শুরু করেন তিনি।
মৃত আরেক শিশু হুসাইনের বাবা সাঈদ মোল্যা বলেন, ‘এমন ফুলের মতো তিনটা শিশুর এভাবে ঝরে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া সত্যিই কঠিন। এভাবে যেন আর কোনো বাবার বুক খালি না হয়।’
বাসুয়াড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান সরদার ঘটনাটিকে অত্যন্ত দুঃখজনক জানিয়ে মৃতদের পরিবারকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
মাগরিবের নামাজের পর ইউনিয়নের দক্ষিণ শ্রীরামপুর ঈদগা মাঠে তিন শিশুর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বাঘারপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ভিক্টোরিয়া পারভীন সাথী বলেন, ‘এটি খুবই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। স্বজনদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’
উপজেলা পরিষদ থেকে তিন শিশুর পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দিন জানান, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত না করেই দাফন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে ভারত ও পাকিস্তান থেকে চালবোঝাই আরও দুটি জাহাজ।
এক দিনের ব্যবধানে দুটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছায়।
এবার এসেছে ৪৮ হাজার ৭৫০ টন আতপ ও সিদ্ধ চাল। এর মধ্যে পাকিস্তান থেকে আসে ২৬ হাজার ২৫০ টন এবং ভারত থেকে আসে ২২ হাজার ৫০০ টন চাল।
চট্টগ্রাম বন্দরের সাইলো জেটি ও কাফকো-সংলগ্ন জেটিতে এই দুই জাহাজ নোঙর করে বলে শনিবার দুপুরে নিশ্চিত করেন খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা।
পাকিস্তানি পতাকাবাহী জাহাজটি শুক্রবার চট্টগ্রাম সাইলো জেটিতে বার্থিং করেছে জানিয়ে তিনি জানান, জাহাজ এমভি মারিয়ম গত ১১ মার্চ ২৬ হাজার ২৫০ টন আতপ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রবেশ করে।
অন্যদিকে ১২ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে প্রবেশ করে ভারতের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি তানাইস ড্রিম। জাহাজটি শুক্রবার কাফকো সংলগ্ন জেটিতে বার্থ করে।
এ জাহাজ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টন বাসমতি নয় এমন সিদ্ধ চাল আনা হয়েছে।
পাকিস্তানের জাহাজ এমভি মারিয়মে আসা চালের নমুনা সংগ্রহ শেষে ভৌত বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়েছে মন্তব্য করে জ্ঞানপ্রিয় বিদূর্শী চাকমা জানান, এ চালের খালাস কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অন্যদিকে ভারত থেকে আসা জাহাজ এমভি তানাইস ড্রিমের চালগুলোর নমুনা সংগ্রহ করা শেষ হয়েছে।
এর আগে বুধবার ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি করা ৩৮ হাজার ৮৮০ টন চাল বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। জি-টু-জি চুক্তির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে ১৭ হাজার ৮০০ টন আতপ চাল এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ভারত থেকে ২১ হাজার ৮০ টন সিদ্ধ চাল কেনা হয়েছে।
গত ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে আরও ৬ হাজার টন সিদ্ধ চাল আমদানি করা হয়।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে লাইটার জাহাজের ধাক্কায় বাল্কহেড থেকে নদীতে পড়ে নিখোঁজ এক নৌযান শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রাণ হারানো নৌযান শ্রমিকের নাম ওমর আলী (৫৫), যার বাড়ি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মধ্যম পাটুলী গ্রামে।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রাম সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ওই শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভোরে একটি লাইটার জাহাজের ধাক্কায় বাল্কহেড থেকে নদীতে পড়ে গিয়ে নিখোঁজ হন ওমর আলী। তিনি ‘নাফিজ তাসিম’ নামের একটি বাল্কহেডে সুকানি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গজারিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুব আলম বলেন, ‘শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলের অদূরে নদীতে তার লাশটি ভেসে উঠলে স্থানীয়রা আমাদের খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশটি উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের নামাশুলাই এলাকায় শনিবার সকাল আটটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ভাষ্য, ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায় ও ঘটনাস্থলেই চালক ও এক নারীসহ দুইজন যাত্রী নিহত হন। এ ছাড়া আরও একজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল হাসান জানান, খবর পেয়ে নিহত ব্যক্তিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ট্রাক ও অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ট্রাকচালক পালিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে থাকা আলামত জব্দের অনুমতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।
ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট আমলি আদালতের বিচারক রাশেদ হোসাইন বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
আইসিটির তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন এ আবেদন করেন। তার পক্ষে শুনানি করেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার এসএম মইনুল করিম।
ব্যারিস্টার মইনুল করিম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রংপুরে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
‘মামলার তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের জিম্মায় আগের মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে আলামতগুলো আছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় জব্দের অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। আদালত শুনানি শেষে তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন।’
তিনি জানান, এর আগে এ হত্যা মামলায় রংপুরে এসে সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত দল। আলামত জব্দের অনুমতির মাধ্যমে মামলার তদন্তে আরেক ধাপ অগ্রগতি হলো। প্রয়োজনে জব্দকৃত আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করে শিগগিরই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হবে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্যানেল আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, শুনানিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আলামত জব্দের আবেদনের পক্ষে তারা বলেছেন। এর মাধ্যমে এ মামলার তদন্ত গতি পাবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পরদিন তাজহাট থানায় মামলা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিভূতি ভূষণ রায়। এরপর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পরে ১৮ আগস্ট পুলিশের সাবেক আইজিপিসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩০ থেকে ৩৫ জনের অজ্ঞাতনামা আসামির কথা উল্লেখ করে মামলা করেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই মো. রমজান আলী।
পরে তিনি সম্পূরক এজাহারে আরও সাতজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন করেন।
মামলা দুটির তদন্ত করছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রংপুরের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। কিন্তু মামলার তদন্তে অগ্রগতি না থাকায় বাদী অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন:ঈদ বোনাস, ২৫ শতাংশ উৎপাদন বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের তেলিপাড়া এলাকায় ইসমক্স সোয়েটার নামে একটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শ্রমিকরা শুক্রবার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। অবরোধের কারণে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে কাজ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তেলিপাড়া এলাকায় ইসমক্স সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা সকাল আটটায় কাজে যোগ না দিয়ে ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন।
সকাল ১০টা থেকে শ্রমিকদের অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন শত শত যাত্রী। অনেকেই হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের অভিযোগ, তেলিপাড়া এলাকায় ইসমক্স সোয়েটার কারখানায় প্রায় এক হাজার ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন। দীর্ঘদিন কাজ করলেও তাদের ওভার টাইম বিল, নাইট বিল, মাতৃকালীন ছুটি, বাৎসরিক টাকা দেওয়া হয় না। এ ছাড়া তাদের প্রোডাকশন রেট সঠিকভাবে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় ঈদ বোনাস, ওভারটাইম বিল, জিএমের পদত্যাগসহ ১৪ দফা দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছেন তারা।
গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২-এর পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ বোনাসসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করে।
আরও পড়ুন:ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের কচুবনিয়া এমপি বদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদকে।
জেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেওয়া হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসারের চিঠিতে বলা হয়, ‘টেকনাফ উপজেলার কচুবনিয়া এমপি বদি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলী আকবর সাজ্জাদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। আজকে থেকে এ আদেশ কার্যকর করা হবে।’
বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শাহীন মিয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আলী আকবর সাজ্জাদ কর্তৃক উক্ত বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে যৌন হয়রানির করার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জাতীয় গণমাধ্যম নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলাকে ধন্যবাদ জানাই সত্য নিউজ করার জন্য।এ ছাড়া যেকোনো স্কুলে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে জন্য শিক্ষকদের সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলার নতুন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান আরজু বলেন, ‘এমপি বদি কচুবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলী আকবর সাজ্জাদকে বরখাস্ত করার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারের চিঠি হাতে পেয়েছি। ফলে তিনি এখন আর বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নন। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।’
এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসব অভিযোগ সামনে আসার পরপরই কর্তৃপক্ষ আমলে নিলে এ রকম ঘটনা ঘটত না। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানালে কিন্তু অদৃশ্য কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর ফলে তিনি আরও সাহস পেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
গত বছরের ২৫ নভেম্বর ‘টেকনাফে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে নিউজবাংলায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ নভেম্বর যৌন হয়রানির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়।
কক্সবাজার জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. সাজ্জাদকে আহ্বায়ক করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি সরেজমিনে গিয়ে গোপন ও প্রকাশ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও অভিযোগকারী তিন ছাত্রী ও অভিভাবকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের একজন বলে, “স্যার আমাদের বলেন, ‘তোমরা স্কুলে আসার সময় দুই ঘণ্টা আগে আসবা।’ খালি ক্লাসরুমে প্রবেশ করায় দরজা বন্ধ করে আমাদের সবসময় যৌন হয়রানির করত। স্যার আমাদের বলত যে, ‘তোমাদের পরীক্ষায় ভালো নম্বর দিয়ে পাস করিয়ে দিব এবং তোমরা প্রতিজ্ঞা করবা, তোমাদের সঙ্গে যা ঘটছে জীবনেও তা কারও কাছে কিছু বলা যাবে না।’ পরে এগুলো বলে আমাদের স্পর্শকাতর স্থানে হাতে হাত দেয়।”
এক ছাত্রীর অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে যায় না। মেয়ের মার থেকে জানতে চাইলাম কেন হঠাৎ স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিছে। বিষয়টি মাও জানে না। ১০ বছরের ছোট্ট মেয়ে। তাই ভয়ে আমাদের জানায়নি, কিন্তু ওদের বান্ধবীরা একদিন মেয়ের মাকে বিষয়টি অবগত করল যে, আপনার মেয়েকে হেড স্যার যৌন হয়রানির করে আসছে। তাই উনি স্কুলে যাচ্ছে না।
‘আমি বিষয়টি স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের জানাই। তারা আমাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে বলেন। পরে আমি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করি।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দোহাজারীতে বাসের ধাক্কায় দুই স্কুল শিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী দুজন সহোদর। অপরজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক।
দুর্ঘটনায় আহত হন আরও একজন শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রামমুখী পূরবী বাস বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অটোরিকশাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত সহোদরদ্বয় হলো ওয়াকার উদ্দীন আদিল (১২) ও উম্মে হাবিবা রিজভী (১৫)। তারা জামিজুরির জসিম উদ্দিনের সন্তান এবং দোহাজারী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। অপরজন অটোরিকশার চালক রুহুল আমিন (৪৫)।
এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থীর নাম কাজী ফাহমিদা ওয়াশিমা তুশিন (১৫), যে নবম শ্রেণির ছাত্রী।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুবরঞ্জন চাকমা বলেন, এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করা হলেও চালক ও হেলপার পলাতক।
এদিকে এ ঘটনার জের ধরে বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাদের একজনের ভাষ্য, সড়ক প্রতিরোধক নির্মাণ না করায় প্রতিনিয়ত অনেক মায়ের বুক খালি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য