বাংলাদেশে লন্ডন-আমেরিকার মতো নির্বাচন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে তিনি এমন আশাবাদ করেন।
শেখ সেলিম বলেন, ‘২০২৩ সালে দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। ইয়াজ উদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচন এ দেশে হবে না। লন্ডন-আমেরিকায় যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও সেভাবে হবে।’
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি যতই সরকার পতনের কথা বলে, ততই সরকারের মেয়াদ বাড়ে। ২০১৩ সাল থেকে তারা সরকার পতনের কথা বলে আসছে। গণতন্ত্র হত্যা করে বিএনপি এখন গণতন্ত্র উদ্ধারের কথা বলে।
‘ক্যান্টনমেন্টে সৃষ্ট রাজনৈতিক দল কখনো গণতান্ত্রিক হতে পারে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপির আসা-না আসায় কিছু যায়-আসে না। ভাসানীর ন্যাপ নির্বাচনে আসেনি। নির্বাচন না করে দল কোথায় হারিয়ে যায় তার উদাহরণ ন্যাপ। বিএনপির অবস্থাও ন্যাপের মতো হবে।’
শেখ সেলিম বলেন, ‘যদি কেউ অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়ার চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র করে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এটা আমরা সংসদে আইন আকারে পাস করেছি। কেউ জিয়ার মতো করবে- তা আর হবে না।
‘এ দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন জিয়া। তিনি পাকিস্তানের এজেন্ট ছিলেন। তার বাবা-মায়ের কবরও পাকিস্তানে। বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে জিয়ার বিচার করা হতো।’
আওয়ামী লীগ ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকবে উল্লেখ করে ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘যতদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকবেন, ততদিন জনগণ কষ্টে থাকবে না। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।
‘দেশে তেল-গ্যাসসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আমেরিকায়ও দ্রব্যমূল্য ৭০ ভাগ বেড়েছে। মানুষের কষ্ট হয় বুঝতে পারি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। তারপরও শেখ হাসিনা জিনিসের দাম জনগণের নাগালের মধ্যে রেখেছেন। ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো।’
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার অর্থবহ হবে না। আর তা হতে হবে সংসদীয় ব্যবস্থায়। সে জন্য নির্বাচন দরকার। এবার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন আমরা হাতছাড়া না করি। এই সুযোগ হারিয়ে গেলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।’
হাইকোর্ট অডিটোরিয়ামে শনিবার বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখন যারা রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছেন তাদের আমরাই সমর্থন দিয়েছি। ছাত্ররা, রাজনীতিবিদরা- আমরা সবাই। এই প্রত্যাশায় সমর্থন দিয়েছি, ১৫ বছর আওয়ামী লীগ যে জঞ্জাল সৃষ্টি করে গেছে তারা সেগুলো সরিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই তরুণ-যুবকদের যে চাওয়া- নতুন বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশ যেন আমরা তৈরি করতে পারি।’
তরুণদের ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিন মাসের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার অনেক কাজ করেছে। এই সরকারকে সময় দিতে হবে। সংস্কারের জন্য অনেক কমিশন করেছে, ফ্যাসিবাদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই সুযোগ আমাদের হাতছাড়া করা যাবে না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথার কারণে ফ্যাসিবাদীরা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাচ্ছে। কোনো কোনো মিডিয়া সেটিকে আবার প্রমোট করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অবাক হয়ে যাই, এই মিডিয়া! তারা এই সরকারের কোনো সাফল্য দেখতে পায় না। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, সরকার তিন মাসে অনেক কাজ করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনেকে জিজ্ঞাসা করেন- ‘আপনারা এত নির্বাচন-নির্বাচন করেন কেন।’ আমি বরাবরই গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মানুষ। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সংস্কার বা উদ্যোগ কখনও সম্ভব হতে পারে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই সম্ভব।
“সমস্যা ওই জায়গায়, দেশে গণতন্ত্র চর্চা না হওয়ায় যে সংস্কৃতি, সেটি গড়ে উঠেছে। প্রত্যেকের মধ্যে একটা স্বৈরাচারী ও কর্তৃত্ববাদী চিন্তা-ভাবনা একেবারে বাসা বেঁধে আছে। আমরা দ্রুত অসহনশীল হয়ে যাই। গণতন্ত্র মানেই সহনশীলতা।”
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ কিছু কিছু জায়গায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। দুর্ভাগ্য, কিছু মিডিয়া তাদের প্রমোট করছে। এটি জনগণের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। এ ধরনের প্রচারণা চালানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি।’
আরও পড়ুন:শিক্ষাঙ্গনগুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ছাত্রলীগকে আর ফিরতে দেয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে শনিবার ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’ শিরোনামে আয়োজিত সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ হয়েছে, অনুষ্ঠানে সে ব্যাখ্যা দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে কিছু লোক প্রশ্ন তুলেছেন, সমালোচনাও করেছেন।
তিনি ছাত্রলীগের গত ১২ বছরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম তুলে ধরে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ওই সময় শফিকুল আলম বলেন, ‘এই গবেষণাই প্রমাণ করে ছাত্রলীগ কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ কতটা উগ্র ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ছাত্রলীগকে আর ফিরতে দেয়া যাবে না। ক্যাম্পাস সন্ত্রাসীমুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য দরকার সুস্থ ধারার কার্যক্রম পরিচালিত করা।’
শফিকুল বলেন, নতুন করে রাষ্ট্র মেরামত করতে হলে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করতে হবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ২৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত ৩১ দফা নিয়ে সেমিনার করবে বিএনপি।
আগামী ২৩ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে এ সেমিনার হচ্ছে।
সেমিনারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্যরাসহ
যুগপৎ আন্দোলন ও নির্বাচন বর্জন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্টজনরা অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমি সেমিনারের বিষয়ে শুনেছি।’
যুগপৎ আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে গত বছরের ১৩ জুলাই সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ ঘোষণা করে বিএনপি।
গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শক্তিগুলোর প্রতি বিএনপির প্রতিশ্রুতি ছিল এই ৩১ দফা।
এর আগে ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ ঘোষণা করেন।
তারও আগে ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে খালেদা জিয়া ‘ভিশন-২০৩০’ উপস্থাপন করেন, তবে তার রাজনৈতিক ঘোষণাটি মূলত আসে আগেই ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত সেই সম্মেলনে খালেদা জিয়া জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় এলে তার দল জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতা নিরসনে প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক ক্ষমতা দূর করতে সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
তিনি বলেছিলেন, ‘জাতীয় সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বিএনপি।’
বিএনপির ৩১ দফায় এসব সংস্কারের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন:বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের সমালোচনা করে দেশে বৈষম্যহীন বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিুর রহমান।
শুক্রবার সকালে নীলফামারীর বড় মাঠে জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।
ডা. শফিকুর বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছরে দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। সব ধরনের, সব বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
‘তারা জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলো সিলগালা করে দিয়েছিল। ঘরে বসেও জামায়াতের নেতাকর্মীরা শান্তি পায়নি। ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দেয়া হয়েছে। শীর্ষ নেতাদের নামে যুদ্ধাপরাধীর মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে বিচারের নামে খুন করা হয়েছে।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ১০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পরই ঝাল মিটিয়েছিল আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর। তারা তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ৫৭জন চৌকস, সাহসী ও দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করে। হত্যা করেছিল নির্মমভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের।’
তিনি বলেন, ‘রাতে বাতি নিভিয়ে দিয়ে ঘাতকদের পিলখানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ সুষ্টি করা হয়েছিল। ঘাতকদের পরিচয় জাতিকে জানতে দেয়া হয়নি। সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদকারীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।’
জামায়াত আমির বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামী। মিথ্যা মামলায় তাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে যুদ্ধাপরাধীর অভিযোগে হত্যার অভিযোগ করেন ডা. শফিকুর।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের শাসনামলে ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল। যুদ্ধপারাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যে মামলা হয়েছিল, সেখানে একটি মামলাও তাদের বিরুদ্ধে ছিল না।
‘এছাড়া শেখ মুজিব সরকার সে সময় যাচাই-বাচাই করে ১৯৫ জনের যে তালিকা করেছিল তাদের মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের সীমানার ভেতরের কোনো নাগরিক ছিল না।’
ডা. শফিকুর বলেন, ‘৫ আগস্ট যখন পরিবর্তন এলো আমরা সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসীকে অনুরোধ করেছি ধৈর্য্য ধরার জন্য। দেশবাসী আমাদের কথা শুনেছে।
‘আওয়ামী লীগ নির্দয় হতে পারে, খুনি হতে পারে। কিন্তু দেশের ১৮ কোটি মানুষ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক।’
জামায়াত আমির বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন পালাবেন না। তিনি চলে গেলেন তার প্রিয় দেশে। তারা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা তাদের সম্মান করি। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে অনুরোধ করব- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫০টির অধিক মামলা হয়েছে। আমাদের বিচারালয় যখন তাকে চাইবে তখন তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেবেন।’
জামায়াত প্রধান বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আমরা দুর্নীতি করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেবো না। আমরা ঘুষ খাবো না, কাউকে খেতেও দেবো না। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই- যে সমাজে লেখাপড়া করার পর ‘আমরা শিক্ষিত বেকার’ শব্দটি আমাদের কানে আসবে না।
‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে সমাজের উন্নয়নে নারীরা অবদান রাখতে পারেন। নারীরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ও মর্যাদার সঙ্গে জাতি গঠনে অবদান রাখবেন।’
নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টিম সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল প্রমুখ।
আরও পড়ুন:‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভা করেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হওয়া শোভাযাত্রায় বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এটি কাকরাইল মোড়, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, শোভাযাত্রায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ঢল নেমেছে। এর আগে নয়াপল্টন ও তার আশপাশের এলাকার অলিগলিতে নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। শোভাযাত্রায় অংশ নিতে ঢাকার আশপাশের জেলাগুলো থেকেও এসেছেন নেতা-কর্মীরা। আর ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে শোভাযাত্রায় অংশ নেন নেতা-কর্মীরা।
কামান, ধানক্ষেত, কৃষক ও কমান্ডো সাজে নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রা মাতিয়ে রাখেন। এছাড়া ঢাক-ঢোল, ট্রাক নিয়ে ও বিভিন্ন রঙের টি-শার্ট পরে তারা শোভাযাত্রাকে বর্ণময় করে তোলেন। বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় শোভাযাত্রা-পূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শোভাযাত্রায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:বিদেশের মাটিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অসম্মানসূচক আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিস্টদের এই ধৃষ্টতামূলক কাজ বাংলাদেশ ও জনগণের মর্যাদার ওপর মারাত্মক আঘাত।
শুক্রবার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এই নিন্দা জানান।
পোস্টে তারেক রহমান লিখেছেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্র্যান্সে যাওয়ার পথে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী দুষ্কৃতকারী উদ্ধত্যমূলক আচরণ করে। বিদেশের মাটিতে নিজ দেশের সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে এহেন শিষ্টাচারবর্হিভূত আচরণ শুধু অনভিপ্রেতই নয়, বরং দেশ ও জনগণের আত্মমর্যাদার ওপর প্রচণ্ড আঘাত।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের হিংস্র রূপের প্রকাশ এখনও দেশ-বিদেশে অনেক স্থানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রবাসে আওয়ামী নেতাকর্মীরাও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের অবয়ব ধারণ করে সুযোগ পেলেই গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে।
আইন উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আবারও প্রমাণ হলো যে এরা বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, বিভাজন, সংকীর্ণতা, অনৈক্য, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হরিলুট এবং বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারসহ অসৎ অনাচারের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার হত্যা ও গুমের রাজনীতির বিশ্বাস থেকে সরে আসেনি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এরা গণতন্ত্রে স্বীকৃত মানবাধিকার, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও জনগণের নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। গণতন্ত্রের সঙ্গে শত্রুতা আওয়ামী লীগের চিরদিনের বৈশিষ্ট্য।
রক্তাক্ত পন্থায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে পরাজিত করতে না পেরে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় শেখ হাসিনার ক্রোধ যেমন থামছে না, তেমনই দেশ-বিদেশে তার সমর্থকরাও প্রচণ্ড হাতাশা নিয়ে সুযোগ পেলেই গণতন্ত্রকামী মানুষদের হত্যা করছে বা শারীরিকভাবে আঘাতসহ নানাভাবে হয়রানির কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
জেনেভা এয়ারপোর্টের সামনে ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে অশোভন আচরণ শেখ হাসিনার তৈরি করা সেই দুঃশাসনেরই অভিব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, পতিত শেখ হাসিনা দেশের রাজনীতিকে জটিল করে তুলতে বাইরে থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লুটপাটের সুবিধাভোগীরা বিদেশে গভীর চক্রান্তে মেতে উঠেছে। গণতন্ত্রের সপক্ষের ব্যক্তিবর্গকে হেনস্থা করাসহ বাংলাদেশের ভেতরেও অন্তর্ঘাত সৃষ্টির গভীর চক্রান্তজাল বুনে যাচ্ছে তারা। লুটপাটের স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য উদগ্রীব ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশ-বিদেশে নানা এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বরাবরই ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন অপরাধপ্রবণ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতা হারানোর মনোবেদনায় এরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না বলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেছে নেয়।
বিএনপির এই দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা বলেন, আত্মপ্রত্যয়হীন, যুক্তিবিমুখ, মানবতাবিরোধী আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সন্ত্রাসী দোসরদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। এদেরকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন ও বিচার বিভাগকে অবহিত করতে গণতন্ত্রকামী প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী দৈত্যকে জনগণই বোতলবন্দি করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে এসব আওয়ামী কুচক্রীকে বিচারের আওতায় আনতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ স্বাধীনতা বিপন্ন করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিএনপির উদ্যোগে র্যালির আগে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের শত্রু-মিত্র চেনার দিন। আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের শত্রু চিহ্নিত করার দিন।
‘আগেও বলেছি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকলে আর কেউ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।’
সমবেত নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘রাজধানী ঢাকার রাজপথে আজ লাখো জনতার এই মিছিল বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে ৭ নভেম্বরের অন্তর্নিহিত শিক্ষায় দীক্ষিত করার মিছিল আজ।
‘লাখো জনতার আজকের এই মিছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত অসংখ্য ছাত্র-জনতা এবং হাজারো শহীদের স্বপ্নের একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ী মিছিল।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য