× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Floods cause more damage to roads agriculture and fish
google_news print-icon

বন্যায় বেশি ক্ষতি সড়ক-কৃষি-মাছের

বন্যা
বন্যায় ডুবে যায় সিলেটের বিভিন্ন এলাকার সড়ক। ছবি: নিউজবাংলা
পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাবে, বন্যায় নগরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের হিসাবে নগরে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা।

সিলেটে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়ক, কৃষি ও মাছের। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবাদিপশু ও গ্রামীণ অবকাঠামোরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১০০ কোটি টাকার মতো। তবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ১১ মে থেকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এখন পানি কমে এলেও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার অনেকাংশ এখনও প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে।

পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাবে, বন্যায় নগরে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের হিসাবে নগরে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক হিসাব করে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনে জমা দেয়া এসব তথ্য থেকে ক্ষয়ক্ষতির একটি প্রাথমিক চিত্র পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া হিসাবে, জেলায় বন্যায় ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর জমির বোরো, ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আউশের বীজতলা ও ১ হাজার ৪৭১ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সব মিলিয়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেটের উপপরিচালক মো. কাজী মজিবর রহমান।

বন্যায় বেশি ক্ষতি সড়ক-কৃষি-মাছের

পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে সিলেটে নদীরক্ষা বাঁধ রয়েছে ৫২টি। এর দৈর্ঘ্য ১৫ হাজার ৯০০ মিটার। বন্যায় ৩৮টি বাঁধের ২৮ দশমিক ৬০ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারের পাশপাশি সবগুলো বাঁধ উঁচু করার সুপারিশ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ।

বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। সিলেট নগর ও জেলার ১৩টি উপজেলার সড়ক ও রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এ খাতে প্রায় ৪০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এর মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ৭২ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। সওজ সিলেট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ভেঙে যাওয়া সড়কগুলো জরুরি মেরামতের জন্য ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রয়োজন। আর স্থায়ী মেরামতের জন্য প্রয়োজন ৭৫ কোটি টাকা।

এদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংখ্যা ১২০টি। বন্যায় এসব সড়কের প্রায় ২৭৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৮টি। টাকার অঙ্কে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৪৮ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা।

বন্যায় বেশি ক্ষতি সড়ক-কৃষি-মাছের

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টি ওয়ার্ডের প্রায় ২৫০ কিলোমিটার সড়ক বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া কুশিঘাটের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের রিটেইংনিং দেয়ালের মাটি সরে গেছে। নদীপাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা ট্রাক টার্মিনালেও। সিসিকের পাম্প হাউস ডুবে প্লাস্টার নষ্ট হয়েছে।

সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করছি। প্রতি ওয়ার্ডে গিয়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের মৎস্য খাতও। জেলা মৎস্য অফিসের হিসাবে, পানিতে ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘি, খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীর সংখ্যা ১৫ হাজার ১৬৩। ভেসে গেছে ২ হাজার ৩০৫ টন মাছ, ২ দশমিক ১৩ টন পোনা। এ ছাড়া খামারের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকার। সব মিলিয়ে বন্যায় এখানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২২ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গবাদিপশু, খড়-ঘাসসহ এ খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭০ টাকা।

পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১১ হাজার ৬৪০টি নলকূপ, ক্ষতিগ্রস্ত ল্যাট্রিনের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৪১৫টি। ৬ হাজার ৫০০ মিটার পানি সরবরাহের লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে তাদের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ জানা যায়নি।

বন্যায় বেশি ক্ষতি সড়ক-কৃষি-মাছের

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, জেলার ছয় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডুবে প্রাথমিকে ১ কোটি ৫১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ৩ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।

এ ছাড়া বন্যায় সিলেটের গ্রামীণ অবকাঠামোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ভেঙে গেছে অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি। তবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা যায়নি।

অন্য দিকে নগরের সুরমার তীরঘেঁষা কাজিরবাজার এলাকায় রয়েছে অর্ধশতাধিক অটো রাইস মিল। বন্যার পানিতে এসব রাইস মিলের গুদামে পানি উঠে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি উঠে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালীঘাটের ব্যবসায়ীরা। তাদের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘সিলেটে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা আমরা করছি। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছি। কীভাবে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যায় সে নিয়েও আলোচনা চলছে।’

গত ২১ মে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে সিলেট-৪ আসনের সাংসদ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

গত ২২ মে সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক এক সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুল মোমেন দ্রুত সময়ের মধ্যে নগরের প্লাবিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাসাবাড়ির তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ক বিস্তারিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আরও পড়ুন:
পানি নেমে যাচ্ছে সিলেট নগরের
সুনামগঞ্জে কমছে পানি, বাড়ছে দুর্ভোগ
কুশিয়ারায় জলে বন্দি ১৫০ পরিবার
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেটের ৫৮২ কিলোমিটার সড়ক
সিলেটে বানের জলে ১৯ হাজার খামারের মাছ

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
Aricha Kazirhat ferry service stopped due to shipping crisis

নাব্য সংকটে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ

নাব্য সংকটে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শুক্রবার রাত থেকে আরিচা-কাজিরহাট রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করায় ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় যানবাহনের সারি। ছবি: নিউজবাংলা
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, নাব্য সংকটের কারণে সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন যমুনার ডুবোচরে ফেরি ধাক্কা খেয়েছে। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় শুক্রবার রাত থেকে এই নৌপথে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে নাব্য সংকট কাটিয়ে দ্রুত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।

নৌপথে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথ। কিন্তু যমুনা নদীতে এই নৌপথে নাব্য সংকটের কারণে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় আরিচা ফেরি ঘাট এলাকায় বাড়ছে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যা। ভোগান্তিতে পড়েছেন জরুরি পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কার্যালয় জানায়, মানিকগঞ্জের আরিচা ও পাবনার কাজিরহাট নৌপথে বড় পাঁচটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। সম্প্রতি যুমনা নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নাব্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে মাঝেমধ্যেই নদীর ডুবোচরে ফেরি আটকে যাচ্ছিল। পরে ফেরি চলাচলের চ্যানেলে ড্রেজিং শুরু করা হয়।

ঝুঁকি নিয়ে কিছুদিন ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল। কিন্তু এখন নদীতে পানির পরিমাণ কমে যাওয়ায় নাব্য সংকট প্রকট হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় জান-মালের নিরাপত্তায় সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

পণ্যবাহী ট্রাকচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘নাটোর থেকে পণ্য নিয়ে শুক্রবার সকালে আরিচা ফেরি ঘাটে পৌঁছাই। ঘাটে এসে শুনি শুক্রবার রাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে ফেরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পাটুরিয়া ফেরি পারাপারের জন্য ট্রাক ঘাট এলাকা থেকে বের করি।’

আরিচা দিয়ে ফেরি পারাপার হলে যাতায়াতে খরচ কম হয় বলে জানান তিনি।

আরেক ট্রাকচালক হাসেম আলী বলেন, ‘আরিচা-কাজিরহাট রুটে ফেরি বন্ধ থাকায় আমাদের ভোগান্তি বেশি হয়। তার মধ্যে ঘাটে এসে যখন শুনি ফেরি বন্ধ তখন মেজাজ খারাপ বেশি হয়। কারণ আবার যানজট ঠেলে পাটুরিয়ায় যেতে হবে।

‘বেশ কয়েকদিন ধরেই নদীতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল দ্রুত ড্রেজিং করা। তা-না হলে আরিচার প্রবেশ মুখে কাউকে দিয়ে বলে দেয়া যে আরিচা ফেরি বন্ধ।’

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা ফেরি ঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ জানান, যমুনা নদীতে নাব্য সংকটের কারণে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথের ফেরি চলাচল বন্ধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে ফেরি চলাচলের চ্যানেলসহ আশপাশে ড্রেজিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, নাব্য সংকটের কারণে সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন যমুনার ডুবোচরে ফেরি ধাক্কা খেয়েছে। তারপর নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে নাব্য সংকট বেশি দেখা দিয়েছে। পরে শুক্রবার রাত থেকে আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে সাময়িকভাবে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে নাব্য সংকট কাটিয়ে দ্রুত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।

আরও পড়ুন:
নৌকায় উঠে কলেরা থেকে বাঁচার চেষ্টা, মোজাম্বিকে ডুবে ৯০ জনের মৃত্যু
অবশেষে পদ্মায় ভাসল ডুবে যাওয়া ‘রজনীগন্ধা’
৬ দিন পর নিখোঁজ ফেরি মাস্টারের মরদেহ উদ্ধার
আবারও ভাসবে ‘রজনীগন্ধা’, তবে হুমায়ন কোথায়
পাটুরিয়ায় ফেরিডুবি: যানবাহন উদ্ধারে প্রত্যয় হামজা রুস্তম

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Two children died after drowning in Chakaria pond

চকরিয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

চকরিয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু প্রতীকী ছবি।
শিশু দুটি শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে মসজিদের পুকুরে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে লোকজন মসজিদের পুকুরে পানির গভীর থেকে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুকুরে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

শনিবার দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অলির বাপের পাড়া বাইতুল ইজ্জত জামে মসজিদের পুকুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া শিশু দুটি হলো- ওই এলাকার স্বপন মিয়ার ছেলে ও সিকদারপাড়া জয়নাল আবেদীন দাখিল মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদাত হোসেন সামির এবং মো. শাহাব উদ্দিনের ছেলে ও সাহারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র আল ফয়েজ মিশকাত।

এলাকাবাসী ও নিহত পরিবার সূত্র জানায়, শিশু দুটি শনিবার দুপুরে বাড়ির পাশে মসজিদের পুকুরে গোসল করতে যাওয়ার কথা জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পরও বাড়িতে না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা ওদের খুঁজতে বের হন।

খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে লোকজন মসজিদের পুকুরে নেমে সন্ধান চালান। এক পর্যায়ে সেখান থেকে ডুবন্ত অবস্থায় শিশু দুটিকে উদ্ধার করা হয়। পরে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক ওদের মৃত ঘোষণা করেন।

পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন:
ধলেশ্বরীতে মেয়েকে সাঁতার শেখাতে গিয়ে বাবা-মেয়ে নিখোঁজ
পাবনায় শাপলা ফুল তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বৃষ্টির পানিতে ডুবে রাজধানীতে শিশু নিহত
ধলাই নদীতে পড়ে নারী নিখোঁজ
তাড়াশে পানিতে ডুবে দুই বোনের মৃত্যু

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Production stopped at Matarbari power plant due to coal shortage

কয়লা সংকটে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ

কয়লা সংকটে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন মজুমদার জানান, জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে কয়লা আনা হয়ে থাকে। গত আগস্ট মাসে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এদিকে কয়লার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কায়লা সংকটের কারণে বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মনোয়ার হোসেন মজুমদার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ইউনিট কমিশনিংয়ের জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে কয়লা আনা হয়ে থাকে। গত আগস্ট মাসে জাপানি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

প্রকল্পের একটি ইউনিট ২০২৩ সালের জুলাই ও অপর ইউনিট ডিসেম্বরে চালু হয়। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এখন পর্যন্ত জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয়েছে ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। সেই মজুদ পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

‘ওই অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাইয়ে। সেই আদেশটি পরে উচ্চ আদালতে স্থগিত করা হলেও দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তবে সব প্রক্রিয়া শেষ করে নভেম্বরের শেষ দিকে কয়লা আমদানির চেষ্টা চলছে। কয়লা এলেই উৎপাদন শুরু হবে।’

আরও পড়ুন:
মাতারবাড়ী ঘিরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন স্বপ্ন
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক ধর্মঘট

মন্তব্য

বাংলাদেশ
17 murders in 54 years in riotous Mautupi village two chairman

দাঙ্গাবাজ মৌটুপী গ্রামে ৫৪ বছরে ১৭ খুন, হোতা দুই চেয়ারম্যান

দাঙ্গাবাজ মৌটুপী গ্রামে ৫৪ বছরে ১৭ খুন, হোতা দুই চেয়ারম্যান ভৈরব উপজেলার মৌটুপী গ্রামে দুই পরিবারের বিরোধে বাড়িঘরে ভাংচুরের খণ্ডচিত্র। ছবি ও কোলাজ: নিউজবাংলা
কর্তা বংশ আর সরকার বংশ- প্রভাবশালী দুই পরিবারের আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের বাড়িঘর ভাংচুর, আগুন, লুটপাট আর হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের গ্রামটিতে। আসামি গ্রেপ্তার বা কোনো ঘটনা ঘটলে পুলিশও গ্রামটিতে যাওয়ার সাহস পায় না। পুরো গ্রাম জিম্মি দুই পরিবারের কাছে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে একটি সাদেকপুর। এই ইউনিয়নের একটি দাঙ্গাবাজ গ্রাম মৌটুপী। সাত হাজার মানুষের ওই গ্রামে রয়েছে দুটি প্রভাবশালী পরিবার- কর্তা বংশ আর সরকার বংশ।

সাদেকপুর ইউনিয়নে দুই বংশের নেতারাই বার বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আসছেন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার বংশের লোক। এর আগে তার বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক তিনবার ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।

সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি তোফাজ্জল হক কর্তা বংশের লোক। দুই বংশের দুই চেয়ারম্যান এখন তাদের নিজ নিজ বংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে দুই বংশের ১৭ জন খুন হয়েছেন। এতে কমপক্ষে শতবার সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বার বার মারামারি-সংঘর্ষে আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক হাজার মানুষ।

দাঙ্গাবাজ মৌটুপী গ্রামে ৫৪ বছরে ১৭ খুন, হোতা দুই চেয়ারম্যান
মৌটুপী গ্রামে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই পক্ষের অবস্থান। ছবি: নিউজবাংলা

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে কাইয়ূম মিয়া নামে সরকার বাড়ির এক ব্যক্তি খুন হন। আহত হন অন্তত ৫০ জন। এর কয়েক দিন আগে ইকবাল মিয়া নামে একই বংশের এক যুবক খুন হন।

গত ঈদুল আজহার পরদিন নাদিম মিয়া নামে কর্তা বংশের এক ব্যক্তি খুন হন। এর আগে ২০০৫ সালে সরকার বাড়ির সরকার সাফায়েত উল্লাহ চেয়ারম্যানের আপন দুই ভাই ওবাইদুল্লাহ ও হেদায়েত উল্লাহ ও তার এক চাচা সায়দুল্লাহ মিয়া কর্তা বংশের লোকজনের হাতে খুন হয়।

আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জের ধরে এভাবে আরও বেশকিছু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষ-ভাংচুর লেগেই আছে। এসব খুন-সংঘর্ষের ঘটনায় এখনও অর্ধশত মামলা আদালতে চলমান। আসামির সংখ্যা দুই বংশের কয়েক শ’ হবে।

তাৎপর্যের বিষয় হলো, দুই বংশের নেতৃত্ব দেয়া দু’জন বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান কেউ এলাকায় থাকেন না। নিজেদের বাড়িঘর থাকলেও তারা ভৈরব শহরে বসবাস করেন। আর প্রভাব বিস্তারের জন্য নেপথ্যে থেকে এলাকায় ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে রাখেন।

একাধিক খুনের মামলার আসামি সরকার বংশের ‘মাথা’ মো. সাফায়েত উল্লাহ সরকার ও কর্তা বংশের ‘কর্তা’ তোফাজ্জল হক। তারা কখনও আদালত থেকে জামিন নেন, আবার কখনও নেন না। পুলিশের ভাষায় তারা পলাতক।

মামলার আসামি গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মৌটুপী গ্রামে যায় না। ঝগড়া-সংঘর্ষ হলেও পুলিশ তাৎক্ষনিখ ওই গ্রামে যেতে চায় না। কারণ দাঙ্গাবাজ গ্রামে যেতে পুলিশও ভয় পায়। কখনও গেলেও ব্যাপক আয়োজন করে অর্ধশত পুলিশ সদস্যকে দল বেঁধে যেতে হয়। নয়তো উল্টো পুলিশকেই হামলার শিকার হতে হয়।

দাঙ্গাবাজ মৌটুপী গ্রামে ৫৪ বছরে ১৭ খুন, হোতা দুই চেয়ারম্যান

স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বহুবার চেষ্টা করেও দুই বংশের বিরোধ মীমাংসা করতে পারেননি। বিশেষ করে দুই চেয়ারম্যান মীমাংসায় সম্মতি দেন না। তারা মামলা জিইয়ে রাখতেই যেন বেশি আগ্রহী। এলাকায় তারা মামলাবাজ হিসেবে চিহ্নিত। কারণ মামলা হলেই তাদের অর্থ-বাণিজ্য জমে ওঠে। কোনো পক্ষ কোনো ঘটনায় মামলা করলে আসামি করার ভয় দেখিয়ে তারা লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। আবার চার্জশিট থেকে নাম প্রত্যাহারের নামেও চলে তাদের ‘বাণিজ্য’। তবে তারা দু’জনই এসব কথা অস্বীকার করেছেন।

মৌটুপী গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা অন্য বংশের লোক হয়েও এসবের বাইরে থেকে বাঁচতে পারি না। কোনো না কোনো বংশকে সমর্থন করতে হয়।

‘গত ৫৪ বছরে এই গ্রামে কমপক্ষে দেড় ডজন খুন হয়েছে, আহত হয়েছে হাজারের উপরে। মামলা হয়েছে শত শত। এসব বিরোধের হোতা দুই বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান সাফায়েত উল্লাহ ও তোফাজ্জল হক।’

একই গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মৌটুপী গ্রামে দুজন নেতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে যুগের পর যুগ ধরে ঝগড়া-বিবাদ ও খুনোখুনি চলছে। এই দু’জনই ঝগড়ার হোতা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে মৌটুপী গ্রাম নীরব হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে কর্তা বাড়ির নাদিম খুন হলে সরকার বাড়ির অন্তত দুশ’ বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পালিয়ে যায় সরকার বাড়ির শত শত পরিবারের লোকজন। পরে সরকার বংশের ইকবাল খুন হলে কর্তা বংশের শতাধিক বাড়িঘর লুটপাট হয়।

‘গত বৃহস্পতিবার তারা বাড়ি এলে আবারও সংঘর্ষ বাধে। খুন হন কাইয়ূম। মানুষ বলছে, দুই চেয়ারম্যানকে পরবাসে পাঠালে গ্রামের বিরোধ থামবে, নতুবা নয়।’

এ বিষয়ে সরকার বংশের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার মো. সাফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কর্তা বাড়ির বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হক এই বিরোধ লাগিয়ে রেখেছে। তারা আমার দুই ভাই ও চাচাকে হত্যা করেছে। গত শুক্রবারের সংঘর্ষের নায়ক সে, আমি নই। গ্রামের যেকোনো মীমাংসায় আমি রাজি। কিন্ত তোফাজ্জল হক মীমাংসায় রাজি নয়। গ্রামের দাঙ্গার জন্য সে-ই দায়ী।’

অপরদিকে কর্তা বংশের বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হক বলেন, ‘৫৪ বছর আগে সাফায়েতের বাবা আমার বংশের কফিল উদ্দিনকে গলা কেটে হত্যা করে। ক’দিন আগে খুন করল আমার ভাই নাদিমকে। আরও কয়েকজনকে খুন করেছে। আমি গ্রামে থাকি না, থাকি ভৈরব শহরে। অথচ একাধিক ঘটনায় সাফায়েত আমাকে মামলার আসামি করেছে। তাহলে কিভাবে মীমাংসা করব।’

এ বিষয়ে ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ হাসমত উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে গ্রামের দুই চেয়ারম্যানের বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তার চলছে জানলাম। স্থানীয় জনগণ মৌটুপীকে দাঙ্গাবাজ গ্রাম বলে ডাকে।

‘আমি দুই মাস হলো এই থানায় যোগদান করেছি। এরই মধ্যে একজন খুন হলো মৌটুপী গ্রামে। এ নিয়ে দুই বংশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা দমন ও নিয়ন্ত্রণে আমি চেষ্টা করছি।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Special train for agricultural products from Chapainawabganj suspended

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষিজাত পণ্যের জন্য বিশেষ ট্রেন স্থগিত

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষিজাত পণ্যের জন্য বিশেষ ট্রেন স্থগিত কৃষিপণ্য নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ছবি: ইউএনবি
ট্রেনটির প্রতি শনিবার কৃষিপণ্য পরিবহন করার কথা ছিল। ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছানোর আগে নাচোল ও আমনুরা জংশনসহ ১৩টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করার কথা ছিল।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষিপণ্য কম খরচে ঢাকায় পরিবহনের লক্ষ্যে চালু করা বিশেষ ট্রেন স্থগিত করা হয়েছে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, শুক্রবার রাতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করে।

গত ২৬ অক্টোবর থেকে কৃষিপণ্য নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-ঢাকা রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

ট্রেনটির প্রতি শনিবার কৃষিপণ্য পরিবহন করার কথা ছিল। ঢাকার তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছানোর আগে নাচোল ও আমনুরা জংশনসহ ১৩টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করার কথা ছিল।

প্রথম দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে কোনো ধরনের কৃষিপণ্য ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় বিশেষ ট্রেনটি।

বিশেষ ট্রেন চালুর পর চাষিদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি জানিয়ে সুজিত বলেন, ‘তারা ট্রেনে করে কৃষিপণ্য পরিবহনে আগ্রহী নয়। কর্তৃপক্ষ এটি স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা
ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় কাটেনি, ২ ট্রেনের যাত্রা বাতিল
১১ ঘণ্টা পর খুলনার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহে ট্রেন চলাচল শুরু
চলন্ত ট্রেন থেকে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন, ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Allegation of embezzlement of about crores against upazila agriculture officer

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে  কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সুমন কুমার সাহা ২০২৩ সালের ১৭ মে থেকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় কর্মরত। ছবি: নিউজবাংলা 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ, ময়মনসিংহ, পার্টনার, রাজস্ব ও অনাবাদি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা। 

প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে বিল ভাউচার, কোথাও কোথাও নামমাত্র বাস্তবায়ন, কোথাও আবার কৃষকের ফসলি জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রদর্শনী দেখিয়ে বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে এক কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি কর্মকর্তার দাবি, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সব উপকরণ বিতরণ করেছেন তিনি।

যদিও তার এমন দাবি নাকচ করেছেন সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।

তাদের ভাষ্য, কোনো প্রদর্শনীর বরাদ্দের পরিমাণ জানেন না তারা।

অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার নাম সুমন কুমার সাহা, যিনি ২০২৩ সালের ১৭ মে থেকে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় কর্মরত।

এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে উপজেলার পাঁচটি প্রকল্পে প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।

কোন প্রকল্পে কী ধরনের অনিয়মের অভিযোগ

বেশ কিছু প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রোপা আমন/বোরো ধানের প্রদর্শনী, বীজ গ্রাম প্রদর্শনী, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী, পার্টনার প্রকল্প, বসতবাড়িতে সবজি চাষ ও একক ফল বাগান, মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী ও গ্রুপ গঠন।

রোপা আমন/বোরো ধানের প্রদর্শনী

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ফ্রিপ প্রকল্পের রোপা আমন বীজ উৎপাদনের প্রদর্শনী করেন তাড়াইলের বাঁশাটি গ্রামের কামরুল ইসলাম। এর বিপরীতে তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৩৩ শতক জমির জন্য পাঁচ কেজি বীজ, ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি টিএসপি ও ১০ কেজি এমওপি সার পান। এসব উপকরণের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য এক হাজার টাকা।

ওই কৃষক জানান, তার মতো এমন শত শত কৃষককে এ পরিমাণ সামগ্রীই দেয়া হয়। অথচ তার অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় ১০ হাজার টাকার উপকরণ।

ফ্রিপ প্রকল্পের অধীনে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৪০৬টি প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে তাড়াইল উপজেলায়। এগুলোতে বরাদ্দের পরিমাণ ৭৯ লাখ ৮২ হাজার ৬০০ টাকা।

এ প্রকল্পের অর্ধেকেরও বেশি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহার বিরুদ্ধে।

কামরুলের মতো আরেক কৃষক ঘোষপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম। রাজস্ব খাতের অর্থায়নে একটি বোরো ধানের প্রদর্শনী করেন তিনি।

এ কৃষক উপকরণ হিসেবে পাঁচ কেজি বীজ ধান, ১০ কেজি ইউরিয়া, ১০ কেজি এমওপি, ১০ কেজি টিএসপি সার ও একটি সাইনবোর্ড পান। এসব উপকরণের সর্বোচ্চ বাজারমূল্য এক হাজার টাকা।

রফিক বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে যেগুলো দেয়, এতে আমাদের কিছুই হয় না। কৃষি অফিসের প্রদর্শনী করে আমাদের নিজেদের হাত থেকে আরও অনেক খরচ হয়।’

এ প্রদর্শনীতে রফিকের অনূকূলে ১২ হাজার টাকার উপকরণ বরাদ্দ দেখায় উপজেলা কৃষি অফিস।

তাড়াইল উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বোরো ধান, আউশ, আমন ও সরিষার ১০০টি প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে। রাজস্ব খাতের এসব প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ টাকা।

১০০ প্রদর্শনীর মধ্যে প্রায় ৫০টি বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ পাওয়া যায় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বীজ গ্রাম প্রদর্শনী

এডিবির অর্থায়নে ফ্রিপ প্রকল্পের বীজ গ্রামের প্রদর্শনী করেন তাড়াইল উপজেলার আড়াইউড়া গ্রামের শামীম, কাইয়ুম, শফিক, বাদল ও কামরুল। প্রদর্শনী এলাকার জমির পরিমাণ পাঁচ একর দেখানো হলেও তা এক থেকে দেড় একর।

সাইনবোর্ডে ধানের জাত বিনা-১৭ লেখা থাকলেও খানিকটা জায়গা ছাড়া বাকি জমিগুলো অন্যান্য কৃষকের। তারা সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ধানের চাষ করেন।

বীজ গ্রামের নির্দেশনার কোনো কিছুই মানা হয়নি প্রদর্শনীতে। মূলত প্রদর্শনীতে নাম থাকা কৃষকদের কিছু বীজ, সার, ড্রাম দিয়ে বীজ গ্রাম প্রদর্শনী বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে।

কৃষকদের ভাষ্য, তারা সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার উপকরণ পান। অথচ এ প্রদর্শনীর ব্যয় ধরা হয় দেড় লাখ টাকা।

কৃষকদের মধ্যে শামীমের নামে ময়মনসিংহ প্রকল্পেরও একটি একক ধানের প্রদর্শনী রয়েছে। বীজ গ্রামের পশ্চিম পাশের জমিটি আবার ময়মনসিংহ প্রকল্পের প্রদর্শনী। সে জমিতে শামীম চাষাবাদ করেন।

শামীমের নামে ফ্রিপ ও ময়মনসিংহ প্রকল্পের প্রদর্শনী থাকার পরও তার স্ত্রী ফরিদার নামে দেয়া হয়েছে অনাবাদি প্রকল্পের একটি সবজি বাগান প্রদর্শনী।

শামীম-ফরিদা দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানায়, বরাদ্দকৃত অর্থ বা উপকরণের তেমন কিছুই পাননি তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, একই পরিবারের সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন প্রদর্শনী বরাদ্দ দিয়ে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম করেন কৃষি কর্মকর্তা।

ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) উৎপাদন প্রদর্শনী

তাড়াইল উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ প্রকল্পের দুটি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনী বরাদ্দ আসে, যার একটি পান জাওয়ার ইউনিয়নের বেলংকা গ্রামের আবদুল হেকিম।

তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবেমাত্র ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, তবে সেখানে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। তা ছাড়া ভার্মী কম্পোস্ট স্থাপনের যেসব নির্দেশনা আছে, সেগুলোও মানা হয়নি।

বাড়িতে এ কৃষককে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মোবাইল ফোনে কথা হলে আবদুল হেকিম জানান, ছয় মাস ধরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে অবস্থান করছেন তিনি। কিছুদিন আগে ঘর নির্মাণের সময় বাড়িতে এসেছিলেন। আবার ১৫ দিন পর এসে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করবেন তিনি।

কৃষি অফিস থেকে কী পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত একটা ঘর ছাড়া আর কিছুই পাইনি।’

যে ঘরটি পেয়েছেন তাতে কী পরিমাণ খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘরটি করতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে ধারণা তার।

এ কৃষকের প্রদর্শনীতে ব্যয় ধরা ছিল দুই লাখ টাকা। এর বিপরীতে একটি শেড তৈরি করা হয়। বাকি অর্থ ব্যয় করেননি কৃষি কর্মকর্তা।

দুটি ভার্মি কম্পোস্টের অপরটি পান সেকান্দরনগর গ্রামের বাসিন্দা রানা মিয়া। মোটামুটি সব প্রকল্পেরই একটি করে প্রদর্শনী পান তিনি। এর মধ্যে ফ্রিপ প্রকল্পের একটি ভার্মি কম্পোস্ট ও বস্তায় আদা চাষ প্রদর্শনী, ময়মনসিংহ প্রকল্পের একটি ভার্মি কম্পোস্ট, অনাবাদি প্রকল্পের একটি সবজি বাগান রয়েছে তার বাড়িতে।

রানা জানান, সার উৎপাদনের জন্য ঘর নির্মাণ করে তাকে কিছু কেঁচো দিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা। এর বাইরে আর কিছুই জানেন না তিনি।

এ কৃষকের প্রকল্পের জায়গাতে ঘর পাওয়া গেলেও সেখানে কেঁচো উৎপাদন শুরুই হয়নি।

রানা মিয়ার দাবি, তাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ জানা নেই বলে দাবি করেন এ কৃষক।

প্রকল্পের প্রতিটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনীতে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও কৃষকেরা তার অর্ধেকও পাননি।

দুই কৃষকের বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনীর ঘরের কাজ সবে শেষ করা হলেও সাইনবোর্ডে স্থাপনের তারিখ দেয়া আছে চলতি বছরের ৩০ জুন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, এ দুটি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনী স্থাপন না করে আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছিলেন কৃষি কর্মকর্তা, কিন্তু উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হলে তড়িঘড়ি করে বাস্তবায়ন করেন তিনি।

কৃষি অফিসের এ কর্মকর্তা আরও জানান, একই অর্থবছরে ময়মনসিংহ প্রকল্পের আরও ছয়টি ভার্মি কম্পোস্ট প্রদর্শনীর বরাদ্দ আসে তাড়াইল উপজেলায়। এগুলোরও বেশির ভাগ নামমাত্র বাস্তবায়ন করার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

পার্টনার প্রকল্প

তাড়াইলের নন্দীপুর গ্রামের মাসুদা বেগম, নায়না, রিনা, শিবলী আর জাহানারা বেগম মিলে করেন কমিউনিটি বীজ উৎপাদন প্রযুক্তি প্রদর্শনী।

তারা জানান, প্রত্যেককে পাঁচ কেজি করে বীজ, পাঁচ কেজি করে ইউরিয়া সার, দুটি করে ড্রাম আর দুটি কীটনাশকের বোতল ছাড়া কিছুই দেয়া হয়নি। তারা যেগুলো পেয়েছেন, সেগুলোর বাজারমূল্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। অথচ তাদের অনূকূলে বরাদ্দ দেখানো হয় ৫০ হাজার টাকা।

তাদের মধ্যে জাহানারা বেগমের নামে একটি রোপা আমন বীজ উৎপাদন প্রদর্শনী রয়েছে। সে প্রকল্পে একটি সাইনবোর্ড ছাড়া কিছুই পাননি জাহানারা।

শুধু তাড়াইল উপজেলাতেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে আটটি পার্টনার ফিল্ড স্কুলের জন্য আট লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। সেগুলোর বেশির ভাগ নামমাত্র বাস্তবায়নের পাশাপাশি কৃষকদের খাবার ও নাশতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বসতবাড়িতে সবজি চাষ ও একক ফল বাগান

বাড়ির পাশে এক খণ্ড জমিতে অনাবাদি প্রকল্পের অধীনে মাচায় সবজি চাষ করেন তালজাঙ্গা ইউনিয়নের আড়াইউড়া গ্রামের ফরিদা বেগম। তার বাগানে টাঙানো ছিল কৃষি অফিসের সাইনবোর্ড।

ফরিদার বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে।

এ কিষাণী জানান, একটি সাইনবোর্ড, চারটি ফট (ফেরোমন ট্র্যাপ) আর কিছু কীটনাশক পেয়েছেন। এ ছাড়া বাগানের সবকিছুই তার নিজস্ব খরচে করা।

তার অভিযোগ, হাঁস-মুরগি বাগানের অনেক কিছু নষ্ট করে ফেলেছে। একটি নেট আবদার করেও পাননি। এমন পরিস্থিতিতে নিজের খরচে বাঁশ, নেট, মাচা তৈরি করেছেন এ নারী। অথচ তার অনূকূলে কৃষি অফিসের স্টক রেজিস্টারে বীজ ও চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার বরাদ্দ ও পরিবহন খরচ দেখানো হয়েছে।

একই ইউনিয়নের বাঁশাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম বিগত কয়েক বছর ধরে রাস্তার পাশের একটি জমিতে লাউ, কুমড়া চাষবাদ করেন। বছরখানেক আগে জমিটিতে কুমড়া লাগিয়েছিলেন। কুমড়া শেষ করে এখন চাষ করেছেন লাউ।

তিনি জানান, কয়েক দিন আগে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসে তাকে বললেন, ‘আপনাকে একটা সাইনবোর্ড দিই।’ তিনিও তার কথায় রাজি হলেন।

সাইফুল জানান, সাইনবোর্ড লাগিয়ে তিনি পড়েন বিপদে। সারাক্ষণ লোকজন তাকে কী পেয়েছেন, তা জিজ্ঞাসা করেন।

ফরিদার মতো সাইফুলও ময়মনসিংহ প্রকল্পের একটি সাইনবোর্ড আর চারটি ফেরোমন ট্র্যাপ ছাড়া আর কিছুই পাননি। তার অনূকূলেও কৃষি অফিসের স্টক রেজিস্টারে বীজ ও চারা, রাসায়নিক সার, জৈব সার, পরিবহন খরচ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

ফ্রিপ প্রকল্পের একক ফল বাগানের প্রদর্শনী করেন দড়ি জাহাঙ্গীরপুর এলাকার রহিমা আক্তার। সেখানে গিয়ে কথা হয় তার স্বামী আবুল খায়েরের সঙ্গে।

খায়ের জানান, এ প্রদর্শনীতে ৪০টি আমের চারা, কিছু সার আর অল্প কিছু কীটনাশক পান। তার অনূকুলে ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তিনি সব মিলিয়ে পান ৪০টি আমের চারাসহ সাড়ে ৪ হাজার টাকার উপকরণ।

প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ জানা ছিল না এ কৃষকের।

মসলাজাতীয় ফসল উৎপাদন প্রদর্শনী

বস্তায় আদা চাষের প্রদর্শনী করেন ঘোষপাড়া এলাকার শামসুল আলম রানা। কৃষি অফিস থেকে তার নামে ৪৪ হাজার টাকার উপকরণ বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি পান ৫ কেজি আদা আর ২০০ সাদা বস্তা।

তার অভিযোগ, কৃষি অফিস থেকে আদার যেসব বীজ পান, সেগুলো পচা। আর বস্তাগুলো ছেঁড়া। পরে নিজ উদ্যোগে সবকিছু কিনে বস্তায় আদা চাষ করেন তিনি।

তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্যাটার্নভিত্তিক একক প্রদর্শনী করেন বেলংকা গ্রামের জিয়াউর রহমান।

তিনি এ প্রদর্শনীতে পান পাঁচ কেজি বীজ ধান, এক বস্তা ডিপ সার, ১০ কেজি পটাশ আর ১৫ কেজি জৈব সার।

এ কৃষকের ভাষ্য, প্রকল্পে বরাদ্দের পরিমাণ জানা নেই তার। কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী স্বাক্ষর করেন তিনি।

প্রকল্পটিতে প্রথমে ধানের প্রদর্শনী শেষে একই জমিতে একটি সরিষা এবং একটি ধানের প্রদর্শনী পাবেন তিনি। অর্থাৎ পরপর তিনটি প্রদর্শনী থাকবে তার নামে।

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের ৫০টি প্রদর্শনীতে সাত লাখ ৩১ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এগুলোরও কয়েকটি নামমাত্র বাস্তবায়ন করে বাকি অর্থ নিজের কাছে রেখে দেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

গ্রুপ গঠন

কৃষকদের নিয়ে গ্রুপ গঠনেও বরাদ্দের টাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তা সুমন সাহার বিরুদ্ধে।

বেশ কয়েকজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, এখানে প্রতিটি গ্রুপ গঠনে পাঁচ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের বিকাশ নম্বরে ৪৫০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপে ৩০ জন সদস্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ পুরুষ কৃষক ও ১০ নারী কৃষক।

চলতি অর্থবছরে ৬৩টি গ্রুপ গঠনে তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এখান থেকেও প্রায় পৌনে ৩ লাখ টাকা তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গ্রুপ গঠন প্রকল্পে ১ হাজার ৮৯০ জন কৃষকের খাতা, কলম ও নাশতার জন্য বরাদ্দ ছিল।

প্রান্তিক চাষিদের ক্ষোভ

তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন সাহার ওপর ক্ষুব্ধ ঘোষপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল গাফফার।

বাবার আমল থেকে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল ও নিজেকে কঠোর পরিশ্রমী দাবি করা এ কৃষকের অভিযোগ, ‘যারা নিজেরা জমি চাষাবাদ করেন না, চাষাবাদ কীভাবে করতে হয়, সেটাও জানেন না, সারা দিন প্যান্ট পরে ঘোরাফেরা করে, তারাই প্রদর্শনী পায়। অথচ সারা জীবনেও কৃষির কোনো প্রদর্শনী পাইনি।

‘নিজ খরচে যেগুলো চাষাবাদ করি, সেগুলোতে কোনো সমস্যা হলে কৃষি কর্মকর্তাদের ডেকেও পাই না।’

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দামিহা এলাকার এক কৃষকের অভিযোগ, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা ও অফিসের সঙ্গে যাদের নিয়মিত যোগাযোগ, ঘুরেফিরে সব প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ তারাই পেয়ে থাকেন।

আবদুল গাফফারের মতো তারও অভিযোগ, প্রকৃতপক্ষে যারা কৃষক এবং কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের কারও খোঁজখবরও নেন না কর্মকর্তারা, কিন্তু যারা নিয়মিত অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেন, প্রদর্শনী পান তারাই।

তিনি বলেন, ‘কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও আরেক সমস্যা।’

কী সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পরবর্তীতে (পরবর্তী সময়ে) আর কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’

বরাদ্দের পরিমাণ জানেন না, দাবি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিলুফা আক্তার জানান, প্রথমে কৃষক নির্বাচন করে স্লিপ দিয়ে তাকে উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠানো হয়। তারপর সেখান থেকে স্টক রেজিস্টারে স্বাক্ষর রেখে কৃষকের নামে বরাদ্দকৃত সব উপকরণ বুঝিয়ে দেয়া হয়।

দিলুফার ভাষ্য, কোন কৃষকের বরাদ্দের পরিমাণ কত, তা জানেন না তিনি। যা করার সবকিছু উপজেলা অফিস থেকেই সমন্বয় করা হয়।

একই বক্তব্য আরেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মিলনের।

তিনি জানান, তারা শুধু কৃষক নির্বাচন করে উপজেলা কৃষি অফিসে পাঠান। এর বাইরে কোনোকিছুতে তাদের হাতে নেই।

তাড়াইল উপজেলা কৃষি অফিসের সর্বজ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম। বিগত ৩৫ বছর ধরে কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এখন তার অবসরে যাওয়ার পালা।

এ কর্মকর্তার দাবি, তিনি জানেন না কোন প্রদর্শনীতে বরাদ্দের পরিমাণ কত।

তার ভাষ্য, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাদের সেটা জানান না। জানতে চাওয়ার সুযোগও নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ফ্রিপ, ময়মনসিংহ, পার্টনার, রাজস্ব ও অনাবাদি প্রকল্প থেকে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা।

কীভাবে আত্মসাৎ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের মোট প্রদর্শনীর প্রায় অর্ধেকের মতো বাস্তবায়ন করেননি সুমন। যেগুলো বাস্তবায়ন করেছেন, সেগুলোতে নামেমাত্র কিছু উপকরণ দিয়ে কৃষকদের বঞ্চিত করা হয়েছে।’

ফাঁকা রেজিস্টার খাতায় স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং কৃষকদের যেখানে স্বাক্ষর নেয়া হয়, সেই রেজিস্টার খাতাটি মূলত ফাঁকা থাকে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা সই করার পর অফিস সহকারী দিয়ে সেখানে বরাদ্দের পরিমাণ লিখে নেন কৃষি কর্মকর্তা। এর ফলে কোন খাতে বা কোন প্রদর্শনীতে কৃষকের অনূকূলে বরাদ্দের পরিমাণ কী, তা জানার সুযোগ থাকে না।

এ কর্মকর্তার বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায় স্টক রেজিস্টার দেখে।

অভিযুক্ত কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য

প্রকল্পে অনিয়মের সব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তাড়াইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘কৃষক শনাক্ত করা থেকে শুরু করে সকল কিছু বাস্তবায়ন করেন উপ-সহকারী কর্মকর্তারা। যদি কোনো উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনিয়ম করে থাকেন, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই সবকিছু বাস্তবায়ন করা হয়। তারা সকল মালামাল বুঝে নিয়ে স্টক রেজিস্টারে সই করে থাকেন।’

মালামাল বুঝে নেয়ার আগে ফাঁকা খাতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের সই নেয়ার বিধান আছে কি না, জানতে চাইলে সুমন চুপসে যান। এরপর একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এমনটার সুযোগ নেই।’

কী বলছেন জেলা কৃষি কর্মকর্তা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই কর্মকর্তার (সুমন সাহা) বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তাকে শোকজ করা হয়েছে। সেই সাথে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

‘তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে তার অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন:
‘বাপো, হামার বয়স্ক ভাতার ট্যাকা মেরে দিসে দোকানদার’
বন্যায় ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় যমুনা পাড়ের কৃষকরা
পরিচালকের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা ও এতিমখানার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
ঝালকাঠির দুই উপজেলায় জয়ী বাচ্চু ও মনির
আনসার সদস্যকে মারধর, চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীর কারাদণ্ড

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Mysterious death of 18 buffaloes in breeding farm

প্রজনন খামারে ১৮ মহিষের রহস্যজনক মৃত্যু

প্রজনন খামারে ১৮ মহিষের রহস্যজনক মৃত্যু সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খামারের মাঠ ও শেডে মহিষগুলোর মৃত্যু হয়। ছবি: নিউজবাংলা
খবর শুনে খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাহেব আলী। 

বাগেরহাটের ফকিরহাটে দেশের একমাত্র মহিষ প্রজনন উন্নয়ন খামারে বৃহস্পতিবার ১৮টি মহিষের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খামারের মাঠ শেডে মহিষগুলোর মৃত্যু হয়।

কর্তৃপক্ষের দাবি, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মহিষগুলোর মৃত্যু হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিনের মতো সকালে ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারের অভ্যন্তরে লেকের পুকুর সংলগ্ন মাঠে নেয়া হয় পূর্ণবয়স্ক মহিষগুলোকে। কিছুক্ষণ পরই মহিষগুলো ছটফট করতে শুরু করে। একপর্যায়ে ১৮টি মহিষ মারা যায়। তখন খুব দ্রুত অবশিষ্ট মহিষগুলোকে শেডে নিয়ে আসা হয়।

মহিষ প্রজনন খামারের কর্মী আক্তার হোসেন বলেন, ‘সকাল ছয়টায় প্রজনন কেন্দ্রের শেড থেকে মহিষগুলোকে বাইরে বের করা হয়। ১০টার দিকে হঠাৎ দেখতে পাই কিছু মহিষ মাঠের ভেতর ছটফট করছে। সাথে সাথেই কিছু মহিষ মারা যায়। দ্রুত সুস্থ মহিষগুলোকে শেডে ফিরিয়ে নিয়ে যাই।’

মৃত্যুর কারণ জানতে বাগেরহাট জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. মনোহর চন্দ্র মন্ডলের নেতৃত্বে কয়েকটি মহিষের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। মহিষগুলোর প্রয়োজনীয় অঙ্গ পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

সেখান থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে বলে জানান ডা. মনোহর চন্দ্র মন্ডল।

তিনি বলেন, ‘মহিষের মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত প্রজনন খামারে ছুটে আসি। এসে দেখতে পাই বেশ কিছু মহিষ মারা গেছে। মহিষগুলোর বিভিন্ন অর্গান স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছে।

‘তিনটি মহিষ এখনও অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। মহিষের মৃত্যুর সঠিক কারণ আমরা এখনও জানতে পারিনি। অর্গান স্যাম্পল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মহিষের মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’

স্থানীয় রাজু নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘খামারের ভেতরে যে পুকুর রয়েছে ওই পুকুরে খামারের কিছু কর্মচারী মাছ চাষ করেন। ওই মাছের জন্য রাখা পচা খাবার খেয়ে এই মহিষগুলো মারা গেছে। আর দীর্ঘদিন ধরে এখানের যারা দায়িত্বে আছেন, তারা তাদের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন, যার কারণে পচা মানহীন খাবার খেয়ে মাঝে মাঝেই মহিষ অসুস্থ হয়।’

মহিষের মৃত্যুর বিষয়ে মহিষ প্রজনন উন্নয়ন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আহসান হাবীব বলেন, ‘মহিষগুলোকে শেড থেকে মাঠে নেয়ার পর কিছু মহিষ রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পর্যন্ত ১৮টি মহিষের মৃত্যু হয়েছে, দুটি মুমূর্ষ অবস্থায় রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

খবর শুনে খামার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. সাহেব আলী।

আরও পড়ুন:
সেপটিক ট্যাংকে নেমে প্রাণ গেল ২ শ্রমিকের
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজেয় শ্যামের মৃত্যু
হোটেলের বারান্দা থেকে পড়ে ওয়ান ডিরেকশন ব্যান্ডের পেইনের মৃত্যু
চলে গেলেন মতিয়া চৌধুরী
অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেনের মৃত্যু

মন্তব্য

p
উপরে