বান্দরবানের থানচিতে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস খাদে পড়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তিনজন কর্মচারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ছয়জন।
উপজেলার জীবননগর এলাকার ঢালুতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, জীবননগর সড়কের ঢালে পর্যটকবাহী একটি কালো রঙের এক্সনোয়াহ মাইক্রোবাস রাস্তার পাশে গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই এক পর্যটকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরও ৮ পর্যটক আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যান।
ঘটনাস্থলে নিহত কর্মচারীর নাম মঞ্জুরুল ইসলাম। হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান কর্মচারীর নাম হামিদুল ইসলাম ও রাজিব মিয়া। আহত ব্যক্তিদের থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের উদ্ধারে কাজ করছে বিজিবি ও স্থানীয়রা।
আহতরা হলেন, বুয়েটের নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী ওয়াহিদ, জয়নাল, মিলন, মঞ্জুর, আব্দুল মালেক ও চালক ফারুক।
বুয়েটের আহত আরেক কর্মচারী মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘হতাহতরা সবাই বুয়েটের নিরাপত্তা শাখার কর্মচারী। ঢাকা থেকে বান্দরবান বেড়াতে এসেছিলাম। থানচিতে যাওয়ার পথে জীবননগর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি খাদে পড়ে গেছে। গাড়িতে আমরা ৯ জন ছিলাম চালকসহ।’
এ বিষয়ে জানতে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অফিশিয়াল কোনো ট্যুর ছিল বলে আমার কাছে তথ্য নেই। এখন আলাদা করে কেউ গেছে কি না, সেটা বলতে পারছি না।
‘আমাদের কাছেও দুর্ঘটনার একটা ইনফরমেশন এসেছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।’
দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি জানিয়ে থানচি থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সত্যব্রত চাকমা জানান, গাড়িটি বান্দরবান থেকে থানচি যাচ্ছিল। আহত পর্যটকদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার (এসপি) জেরিন আখতার বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনার খবর শুনেছি। আমাদের লোক ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।’
হতাহতের বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে আগামী ডিসেম্বর মাসে তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রাভেল এজেন্টস অফ বাংলাদেশ (আটাব)।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়।
আগামী ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ মাহবুব বলেন, ‘বাংলাদেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে আটাব ৪৫ বছর যাবত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
‘এরই ধারাবাহিকতায় আটাব বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম এক্সপো নামক পর্যটন মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে।’
তিনি জানান, বিদেশি মুদ্রা অর্জনে দেশের পর্যটন সেবার মান উন্নয়ন ও বিক্রির বাজার সৃষ্টি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফ্যাম ট্যুর, পর্যটন শিল্পের প্রচার-প্রসার, ঐতিহ্যবাহী খাদ্য প্রদর্শন, বিভিন্ন দেশের অ্যাম্বাসি, হাইকমিশনগুলোর সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপন, ট্রাভেল এজেপি, ট্যুর অপারেটর, এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে দৃঢ় ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়ক হবে এই মেলা।
মেলার উদ্দেশ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের পর্যটনের প্রচার ও প্রসার দরকার। বাংলাদেশের বৈচিত্রময় পর্যটন খাত ও সেবাগুলো বিশ্ববাজারে উপস্থাপন করা। দেশি-বিদেশি ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে বিজনেস টু বিজনেস সম্পর্ক বৃদ্ধি, খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সুষ্ঠু বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করার জন্যই এ মেলা আয়োজন করা।’
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ, সহ-সভাপতি আফসিয়া জান্নাত সালেহ, অর্থসচিব আব্দুর রাজ্জাক, পাবলিক রিলেশন সেক্রেটারি আতিকুর রহমান, কালচারাল সেক্রেটারি তোয়াহা চৌধুরীসহ আটাবের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:ঈদে বাড়ি ফিরতে টিকিটের জন্য কোনো হাহাকার নেই, না বাস, না ট্রেন, না লঞ্চে। ঈদুল ফিতরের সেই অভাবনীয় সহজ-সরল ঈদযাত্রার এই দৃশ্য দেখা যাবে কি এবার?
একেবারে সাধারণ যে জবাব, সেটি হলো ‘না’। টিকিটের জন্য হাপিত্যেস আবার দেখা যাবে এবার। এর কারণ হলো, ঈদে বাইকে করে বাড়ি ফেরার পথ বন্ধ করেছে সরকার।
সরকারের যে নির্দেশ, তাতে এই কথাটি বলা নেই বটে, তবে বলা আছে, ঈদের আগে-পরে সাত দিন এক জেলা থেকে বাইকে অন্য জেলায় যাওয়া যাবে না। এতে কার্যত ঈদে শহর থেকে গ্রামমুখী বাইকের যাত্রার পথ বন্ধ।
গত ঈদে রাজধানীসহ বড় শহর থেকে লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরেছেন বাইকে করে। এতে বাসে যাত্রীর চাপ ছিল না। ট্রেন-বাসে দেখা যায়নি উপচে পড়া ভিড়। আর যাত্রীদের একটি বড় অংশ দুই চাকার দ্রুতগামী যানে বাড়ি যাওয়ার কারণে সড়কে সেভাবে অন্য বছরের মতো যানজটও দেখা যায়নি।
তবে এই বিষয়টি আবার পরিবহন ব্যবসায়ীদের ক্ষতির কারণ হয়েছিল। তারা খুব করে চাইছিল, এবার ঈদযাত্রায় বাইকের ব্যবহার যেন বন্ধ করা হয়। তাদের সে চাওয়া পূরণ হয়েছে। আর তাতে ভোগান্তির শঙ্কা বাড়ার পাশাপাশি তীব্র জনক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
গত এক দশকে দেশে বাইকের ব্যাপক চল হওয়ার পর মহাসড়কে ব্যাপক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তবে ভোগান্তির যাত্রা এড়াতে এই ঝুঁকি নিতেও পিছপা হচ্ছে না হাজারো মানুষ।
ঢাকা থেকে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম থেকে শুরু করে দক্ষিণের জেলা বরিশাল, বাইকে চড়ে যাত্রা করে এমন অনেকের খোঁজ পেয়েছে নিউজবাংলা। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, সিলেট, কক্সবাজার যেতেও দুই চাকার যানে চড়ার মানুষ ভূরিভূরি।
বাড়ি যাওয়ার টিকিট কোথায়
এবারও মোটর সাইকেলে করে ঈদযাত্রার মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কুড়িগ্রামের তামজিদ হাসান তুরাগ। বাইকে যাবেন ভেবে বাসের টিকিটের জন্য চেষ্টাও করেননি। এখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কুড়িগ্রামের নন এসি টিকিট ৮০০ টাকা হলেও ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। টিকিট পাব কি পাব না; যার ফলে বাড়ি যাওয়ার আশা অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে।’
বাইকাররা কেন বাইকে বাড়ি যাচ্ছেন সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণপরিবহনে মানুষ আস্থা হারিয়েই বাইকে করে গ্রামের বাড়ি ছুটছেন। কার স্বার্থে কেন এই সিদ্ধান্ত তা আমার মাথায় আসছে না।’
কয়েক বছর ধরেই মোটরসাইকেলে চেপে ঈদ করতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ যান স্থপতি হাসানুর রহমান। এ বছরও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা ননসেন্স সিদ্ধান্ত। ঢাকা সিটিতে অসংখ্য বাইকার। অনেকেই আবার রাইড শেয়ারিং করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বাইকে খুব সহজেই মুভমেন্ট করা যায়। যেটা গণপরিবহনে আট ঘণ্টার পথ, মানুষ সেটা পাঁচ ঘণ্টায় যাতায়াত করছেন, জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ হুট করে এ রকম সিদ্ধান্ত নিলে কীভাবে হবে?’
নিজের অভিজ্ঞতা টেনে তিনি বলেন, ‘আমি তিন-চার বছর ধরে ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াই না। বাইক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আসল কেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কে নিল? কী স্টাডি করে নিল? আই ডোন্ট নো?’
দুইজনের সিঙ্গেল ফ্যামিলি তারা বাইক নিয়ে চলে যেতেন। এখন তাদের টিকিটের জন্য দৌড়াতে হবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী অপূর্ব রায়ের বাড়ি ময়মনসিংহ। বাইকই পছন্দ তার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা একটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। ঈদের টাইমে এমনিতেই যানবাহনে রাশ থাকে। গতবারের ঈদে অনেকেই বাইকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলে যেতে পেরেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি রোড ট্যাক্স থেকে শুরু করে সবকিছু দিই৷ আমি কেন আমার বাহন নিয়ে চলাচল করতে পারব না। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি যখন আমাকে লাইসেন্স দিছে, তখন তো কোথাও বলে দেয়া হয় নাই, তুমি এখানে চালাতে পারবা, ওখানে পারবা না। হুটহাট করে এভাবে জানিয়ে দিলেই তো হয় না। অবশ্যই সরকারের এটা নিয়ে আবার ভাবা উচিত।’
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাকিব আব্দুল্লাহর বাড়ি নেত্রকোণায়। টিকিটের ঝামেলা এড়াতে তিনিও বাইকে ভরসা করেন ঈদে। নিউজবাংলাকে দেয়া তার প্রতিক্রিয়া এমন, ‘এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য শুধু মোটরসাইকেল একা দায়ী নয়।’
এবার পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি যাবেন বলে বাড়তি উচ্ছ্বাস ছিল বরিশালের কাজী গালিবের। আশা ছিল, সেতুতে বাইকে যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, সেটি ঈদে অন্তত উঠে যাবে। কিন্তু যেটি হয়েছে, সেটি তার আকাঙ্ক্ষার পুরো বিপরীত। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত। সব দুর্ঘটনা যে বাইকাররা করছে, তা তো না। বাইকে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে সরকার স্পিড মিটার বসাতে পারত।’
দুই বিশেষজ্ঞের দুই মত
পরিবহন বিশেষজ্ঞ এম শামসুল হক মনে করছেন, সরকার একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘দুই চাকার যান মহাসড়কে অনিরাপদ। তাই সরকারের উচিত গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো।’
তবে শামসুলের মতোই আরেক পরিবহন বিশেষজ্ঞ মো. হাদিউজ্জামান বলছেন, সরকারের সিদ্ধান্ত সময়োচিত হয়নি। তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তটা আরও দুই মাস আগে জানানো উচিত ছিল। তিনি বলেন, এই সুযোগে আনফিট বাস মহাসড়কে নেমে দুর্ঘটনার শঙ্কা বাড়াবে।
এই দুই বিশেষজ্ঞই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যারা প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এদের মধ্যে হাদিউজ্জামান বর্তমান পরিচালক আর শামসুল হক সাবেক।
হাদিউজ্জামান বলেন, ‘ঈদযাত্রায় প্রায় ১৫ লাখ মোটরসাইকেল ঢাকা ছাড়বে। প্রতিটিতে দুইজন যাত্রী হলে ৩০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ত এসব বাহনে৷ এতগুলো মানুষের বিকল্প বাহন কী হবে?’
যাত্রীর চাপ বেশি থাকলে মহাসড়কে স্বল্প যাত্রার বাস ভিড় করতে পারে বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞ। এসব গাড়ির ফিটনেস নিয়ে সংশয় আছে তার। বলেন, ‘এসব বাস মহাসড়কে নেমে পড়লে দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। যার ফলে বাইক বন্ধের এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।’
বাইক নিয়ে সরকারের নীতিমালা পরস্পরবিরোধী বলেও সমালোচনা করেন অধ্যাপক হাদি। বলেন, ‘আমাদের উচিত ছিল মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহন সমৃদ্ধ করা। আমরা তা করি নাই। যার ফলে মোটরসাইকেলের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। মোটরসাইকেলের নিবন্ধন ফি কমানো হয়েছে, উৎপাদনকে উৎসাহিত করেছি, কিন্তু বাইকের জন্য সার্ভিস লেন করিনি।’
প্রতিটি মহাসড়কের পাশে সার্ভিস লেন করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘আলাদা লেন করলে দুর্ঘটনা কম হবে।’
অধ্যাপক সামছুল হক অবশ্য সরকারের সিদ্ধান্তকে শতভাগ সমর্থন করছেন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই চাকার যান মহাসড়কে আনফিট অনিরাপদ। প্রত্যাশা এক জিনিস আর রেসপনসিবিলিটি অন্য জিনিস। তাই সরকার সাহসী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গতবারের ঈদযাত্রায় গণপরিবহনের বদলে বাইক যাত্রাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না তিনি। বলেন, ‘মানুষ ব্যক্তিগত সিস্টেমে চলে গেল। উপজেলা শহরে গণপরিবহনের সংখ্য কম। সেখানেও মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক মাত্র। অথচ আমাদের উচিত ছিল গণপরিবহন পপুলার করা।’
এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা ইমোশনাল হয়ে কাজ করি৷ সরকারের উচিত হবে গণপরিহনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।’
আরও পড়ুন:আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার মতো সুবিস্তৃত সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, বিশ্ব ঐতিহ্যে ঠাঁই করে নেয়া স্থাপত্য ষাট গম্বুজ মসজিদসহ অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্র। এর পরও এতদিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুই বিভাগ খুলনা ও বরিশালে ছিল পর্যটকখরা।
তবে পদ্মা সেতু সেই অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে চলেছে। ঢাকা থেকে দক্ষিণের কুয়াকাটা পর্যন্ত এখন সড়কপথে এক সুতায় গাঁথা। সুদীর্ঘ যাত্রাপথ এখন অতীত।
পদ্মা সেতু চালুর কারণে পর্যটকরা এখন দক্ষিণাঞ্চলমুখী হবেন বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। তবে তারা বলছেন, শুধু সড়কপথের উন্নয়ন নয়, দেশি-বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে আবাসন, স্থানীয় যোগাযোগ ও মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থাও করতে হবে। থাকতে হবে পর্যটকবান্ধব নিরাপদ পরিবেশ।
এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। দেশে পর্যটনের সামগ্রিক মানোন্নয়নে ২০২০ সালে শুরু করা ‘মাস্টার প্ল্যান’ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হবে। এতে প্রাধান্য পাচ্ছে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সারা দেশে ১ হাজার ১০০ ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকশন পয়েন্ট আইডেন্টিফাই করেছি। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাট্রাকশন পয়েন্টের আর্কিটেকচারাল ডিজাইন আমরা করব। আমরা ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানও করব।
‘একই সঙ্গে আমরা একটি অ্যাকশন প্ল্যান করব, যাতে নির্ধারণ করা হবে কোনটা তাড়াতাড়ি হবে, কোনটা মধ্যমেয়াদি হবে আর কোনটা দীর্ঘমেয়াদি হবে। সেটা নির্ধারণ করে আমরা কাজ শুরু করব। এটা কমপ্লিট হওয়ার পর আমরা দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলকে আমরা প্রায়োরিটি দেব, কারণ ওখানে যাওয়াটা আগে কষ্টসাধ্য ছিল। এখন সেটা সহজ হয়েছে। কুয়াকাটা, পিরোজপুরসহ বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চলকে আমরা অগ্রাধিকার দেব। ওখানে কিছু নতুন ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকশন তৈরির জন্য কাজ করছি। এর মধ্যে আছে সোনাদ্বীপ, আরেকটা সোনারচর। ১০-১৫ দিন আগে আমরা দেখে এসেছি। কীভাবে এগুলো ডেভেলপ করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছি।’
শুধু পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটক বাড়বে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী।
তবে পর্যটন ব্যবসায়ী ও প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশন (পাটা) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব মো. তৌফিক রহমান মনে করছেন, দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্রিক সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এতদিন মূল সমস্যাটা ছিল যাতায়াত। আরেকটা বড় সমস্যা থাকার ভালো ব্যবস্থাপনা নেই। এটা নিয়ে ভাবতে হবে। ভালো খাবারের জায়গাও নেই। ট্যুরিস্ট অ্যাট্রাকশনের জন্য এসব ক্ষেত্রেই সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।’
পর্যটকদের আগ্রহ বাড়াতে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রস্তুত আছেন বলে জানান পাটা বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব মো. তৌফিক রহমান।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি খুলনা গিয়েছিলাম। সেখানে ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন মোংলাকেন্দ্রিক ট্যুরিজম বাড়বে বলে তারা ধারণা করছেন। ঢাকা থেকে সাড়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টায় মোংলা চলে যাওয়া যাবে। তবে মূল অ্যাট্রাকশন থাকবে সুন্দরবন।’
তিনি বলেন, ‘পর্যটকদের জন্য নতুন করে কোনো প্রস্তুতি নেই। মোংলা এলাকায় বর্তমানে যে ধরনের ফ্যাসিলিটি আছে, সেটা নিয়েই ব্যবসায়ীরা অপেক্ষা করছেন। পর্যটকের ফ্লো ভালো হলে অনেকেই বিনিয়োগ করবেন। ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত আছেন।’
আরও পড়ুন:কাঁঠাল নিয়ে জমজমাট আয়োজন হয়েছে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে। কাঁঠাল ঘিরে হয়েছে গান-আলোচনা সভা ও প্রতিযোগিতাও।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সাংসদের উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো হয়ে গেছে এই কাঁঠাল উৎসব। সেখানে ২ মিনিটে কাঁঠালের সর্বোচ্চসংখ্যক কোয়া খেয়ে বিজয়ী হয়েছে কলেজের কর্মচারী বিলকিস বেগম। পুরস্কারেও পেয়েছেন আস্ত এক কাঁঠাল।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে শুক্রবার সকাল ১০টায় শুরু হয় এই উৎসব। এর স্লোগান দেয়া হয় ‘কাঁঠালের বহু ব্যবহারে, প্রাণ-প্রকৃতি সুস্থ রাখে’।
উৎসবে যোগ দেন চার উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মচারীসহ অনেকে।
দিনভর নানা আয়োজনে মুখর ছিল কলেজ প্রাঙ্গণ। কাঁঠালকথন, কাঁঠালরঙ্গ, আবৃত্তি, গান, সম্মাননা ও আলোচনা সভা শেষে রাখা হয় কাঁঠাল খাওয়ার প্রতিযোগিতা।
৫৫ প্রতিযোগী তাতে অংশ নেন।
মাত্র ২ মিনিটে ৫৯ কোয়া কাঁঠাল খেয়ে একটি কাঁঠাল, একটি বই ও শুভেচ্ছা উপহার জিতে নেন কলেজের কর্মচারী বিলকিস বেগম। একই সময় ৪৯ কোয়া খেয়ে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার কর্মচারী নয়ন রায় দ্বিতীয় ও ৪৬ কোয়া খেয়ে কলেজছাত্র মো. আফিফ তৃতীয় স্থান লাভ করেন। তাদেরও দেয়া হয় শুভেচ্ছা উপহার।
কাঁঠাল উৎসব দেখতে এসে জাহানারা খাতুন জানান, ‘এখানে এসে কাঁঠাল ফল সম্পর্কে নানা অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। জানতে পেরেছি এর ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে। প্রতি বছরই এমন আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছি।’
কাঁঠালের পরিচিতি রক্ষা ও গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতেই এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক আসমা হেনা চুমকি।
আরও পড়ুন:আষাঢ়ের আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। রোদের উত্তাপে হাঁসফাঁস চারপাশ। এমন গরমেই দুষ্টু ছেলেমেয়ের দল হানা দেয় কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার লালমাই পাহাড়ে। সেখানে গাছে গাছে ঝুলে আছে হলুদ চাপালিশ!
পাকা এই চাপালিশ ভেঙে অ্যালুমিনিয়াম পাত্রে কোষগুলো নিয়ে শুকনো মরিচ পোড়ায় কিশোর-কিশোরীর দল। হাল্কা মিষ্টি আর টক স্বাদের চাপালিশে ঝাল মিশিয়ে মুখে পুরে নেয় তারা। তারপর ওঠে তৃপ্তির ঠেকুর। দুপুরে উদরপূর্তির জন্য এর চেয়ে ভালো আয়োজন কি হতে পারে?
চাপালিশ দেখতে কাঁঠালের মতোই। কাঁচা অবস্থায় সবুজ। আর পাকলে হলুদ হয়ে ওঠে। আকারে ছোট এই ফলটির ভেতরে কাঁঠালের মতোই ছোট ছোট কোষ থাকে। কোষের ভেতরে থাকা এর বীচিগুলোও অনেকে আগুনে পুড়িয়ে খায়। কিছুটা চিনা বাদামের স্বাদ পাওয়া যায় এতে।
টক মিষ্টি স্বাদের এই চাপালিশকে স্থানীয়রা চামল বা চাম্বল নামেই চেনে। লালমাই পাহাড়ে শত বছর আগে প্রাকৃতিকভাবেই গড়ে উঠেছিল চাপালিশের বন। ঘন সবুজ পাতার আড়াল থেকে উঁকি মারা পাকা চাপালিশ যে কারও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আষাঢ় মাসেই চাপালিশ পাকতে শুরু করে। ৯০-এর দশকে লালমাই পাহাড়ে যে পরিমাণ চাপালিশ গাছ ছিল, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই।
কোটবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ জানান, পুরো লালমাই পাহাড়ে বর্তমানে অর্ধশতাধিক চাপালিশ গাছ আছে। এক সময় এই সংখ্যাটি ছিল হাজারেরও বেশি। কাঠের জন্য কিংবা জমি প্রশস্থ করতে গত কয়েক বছরে স্থানীয়রা বহু চাপালিশ গাছ কেটে ফেলেছে।
ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘পাশের সেনানিবাসের ভেতর বর্তমানে বেশকিছু চাপালিশ গাছ রয়েছে।’
কোটবাড়ি এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পার্শ্বে হাতিগড়া এলাকায় চাপালিশ বিক্রি করেন চা দোকানীরা। দোকানের সামনে ঝুড়িতে রাখা থাকে ফলটি। কেউ আবার ক্রেতা আকর্ষণের জন্য এটিকে দোকানের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।
চা দোকানী খায়ের মিয়া বলেন, ‘প্রতিটা ২০ টাকা করে বেচি। আষাঢ়-শাওন মাসে কাঁঠালের সাথে চামলও পাকে। শহর থেকে আসা মানুষেরাও শখ করে কিনে নিয়ে যায়। একটা গাছে ২ থেকে ৩ মন চাপালিশ ধরে।’
খায়ের জানান, লালমাই পাহাড়ে একসময় এত পরিমাণ চাপালিশ হতো যে, এগুলো খেতে শত শত বানর এসে ভিড় জমাতো। চাপালিশ কমার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকাটিতে এখন বানরের সংখ্যাও কমে গেছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, ‘চাপালিশ একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। আবাসস্থল ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণের জন্য চাপালিশের বিস্তৃতি নাই বললেই চলে। সরকারের উচিত পরিকল্পিত বনায়নের অংশ হিসেবে চাপালিশ বৃক্ষের আবাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা। এর কাঠ যেমন মূল্যবান, তেমনি এর ফল বন্যপ্রাণী ও মানুষের খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।’
মেহেরুন্নেসা মনে করেন, জলবায়ু সংকটে থাকা এই পৃথিবীকে আবাসযোগ্য রাখতে বৃক্ষনিধন দমনের পাশাপাশি ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচী হাতে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চাপালিশের চাষ একটি চমকে দেয়ার মতো বিষয় হতে পারে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সারাদেশে যেসব এলাকায় চাপালিশ গাছ জন্মে, তার মধ্যে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় অন্যতম। বিলুপ্তপ্রায় এই গাছটির কাঠ ও ফল মূল্যবান। পাখি ও বনের পশুর জন্যও চাপালিশ উন্নত খাবার। এই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি আসবাব বছরের পর বছর টিকে থাকে। এই গাছ রক্ষায় বন বিভাগের জরুরী উদ্যোগ নেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
কুমিল্লা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা কোটবাড়িতে উদ্ভিদ উদ্যান করেছি। সেখানে চাপালিশের বীজ থেকে চারা করে গাছের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। যে কেউ চাইলে আমরা বীজ কিংবা চারা দিয়ে সহযোগীতা করবো।’
আরও পড়ুন:বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গতকাল, রোববার সকাল থেকে হাজার হাজার মানুষ পার হচ্ছেন, সঙ্গে উচ্ছ্বাস-আনন্দের ছড়াছড়ি। পদ্মা সেতু দেখতে ঢাকা থেকে অনেকেই যাচ্ছেন। বিকেল পর্যন্ত ঢাকা থেকে অনেকেই গিয়েছেন সেতু দেখতে। অনেকে সেতু পার হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফেরত আসছেন।
পরিবহন ব্যবসায়ীরা বলছেন, যোগাযোগ সুবিধার কারণে আগামী কয়েক দিন অনেক মানুষ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দেখতে যাবেন।
গুলিস্তান থেকে বসুমতি পরিবহনের একটি বাসে পদ্মা সেতু দেখতে যাচ্ছেন জামাল উদ্দিন। কয়েকজন বন্ধু মিলে যাচ্ছেন তারা।
নিউজবাংলাকে জামাল বলেন, ‘গতকাল সেতু দেখতে যাইনি, কারণ অনেক ভিড় হবে এটা জানতাম। তাই আজকে যাচ্ছি। মাওয়া ঘাটের ইলিশ খাওয়াও হবে, সেতু দেখাও হবে।’
আরাম পরিবহনের যাত্রী মো. সুমন বলেন, ‘যাচ্ছি সেতু দেখতে। এই সেতু নিয়ে কত কিছুই না হলো, তাই সেতু দেখার লোভ সামলাতে পারছি না। সারা দিন মাওয়া ঘাটে থেকে বিকেলে ফিরব।’
ঢাকা থেকে মাওয়াগামী স্বাধীন পরিবহনের টিকিট চেকার মো. মজিবর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটে সেতু দেখতে অনেকেই যাচ্ছেন। বাসে আজকে যাত্রীদের ভালোই ভিড়। তবে গতকাল থেকে আজকে লোক কম। অনেকে পরিবার নিয়ে গেছেন ব্রিজ দেখতে।’
আরাম পরিবহন গুলিস্তান থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যাচ্ছে। আরাম পরিবহনের কন্ডাক্টর সুজন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকে মাওয়া ঘাটে নেমে যাচ্ছেন, আবার অনেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাচ্ছেন। তবে আমরা কাউকেই সেতুতে নামতে দিচ্ছি না। সেতুর ওপরে যারা গেছেন, তারা নিজেদের গাড়িতে গেছেন।’
রাজধানীর গুলিস্তানের বিআরটিসি কাউন্টারেও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে সকাল থেকে। বেশির ভাগই নতুন সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য এসেছেন।
তাদের একজন রামিজ উদ্দিন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এক কাজে দুই কাজ করতে বাড়ি যাচ্ছি। ব্রিজ দেখাও হলো, ব্রিজের ওপর দিয়ে বাড়ি যাওয়াও হলো। তবে ব্রিজে একটু নামতে পারলে আরও ভালো লাগবে, কিন্তু সেটা তো সম্ভব না।’
সপরিবারে ঘোরাঘুরি
সাধারণের জন্য খুলে দেয়ার পর গণপরিবহন ছাড়া অন্য প্রায় সব গাড়িই পদ্মা সেতুতে থামতে দেখা গেছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি তুলেছেন ছবি।
মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবার নিয়ে পদ্মা সেতু দেখতে আসেন তোফাজ্জল হোসেন। গাড়িটি দাঁড় করিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে পরিবারের ১৪ সদস্য সেতু ঘুরে দেখেন; তোলেন দলবদ্ধ ছবি।
নিউজবাংলাকে তোফাজ্জল বলেন, ‘যেদিন সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দিয়েছে, আমরা সেদিনই ঠিক করেছি প্রথম দিনই সেতু দেখতে আসব। এ জন্য আমার মা, খালা, ফুপুসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। সারা দিন ঘুরে আবার কুমিল্লা ফিরে যাব।’
সাধারণদের নিয়ম ভাঙার এ খেলা বন্ধ করতে সাইরেন বাজিয়ে সেতুর উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে টহল গাড়ি। থেমে থাকা গাড়ি বা মানুষকে দাঁড়াতে দেখলেই ছুটে যাচ্ছেন প্যাট্রলম্যান। কখনও অনুরোধ করে, আবার কখনও গলা চড়িয়ে সরিয়ে দিচ্ছেন নিয়মকে থোড়াই কেয়ার না করা লোকজনকে।
সেতুর প্যাট্রলম্যান সাদ্দাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি গাড়ি নিয়ে শুধু ছুটেই যাচ্ছি। পাবলিক কোনো কথা শোনে না৷ এক জায়গার মানুষের গাড়ি সরাচ্ছি, অন্য জায়গায় আবার দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।
‘কেউ কেউ আবার অনুরোধও শুনছেন না। তখন বাধ্য হয়ে আমি তাদের গাড়ির কাগজ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে নিচ্ছি আর বলে দিচ্ছি সেতু থেকে নেমে যাওয়ার পর আমি এগুলো ফেরত দেব। কথা না শুনলে কী আর করতে পারি বলেন? এখানে নিয়ম ভাঙলে জরিমানার বিধান রাখা হয়নি।’
নিয়ম ভাঙার প্রসঙ্গ টানলে তিনি বলেন, ‘দেখেন আমরা তো কত অনিয়মই করি। এতদিনের ইচ্ছা স্বপ্নের সেতুতে এসে দাঁড়াব। নিজের স্বপ্নপূরণে একটু অনিয়ম করা দোষের কিছু না।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু বিশ্বের দ্বিতীয় খরস্রোতা নদীর দুই পাড়কে যুক্ত করেছে বটে, তবে স্রোতের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নদীর নিচে শক্ত মাটির অনুপস্থিতি। বিশ্বের অনেক জায়গায় এ রকমই প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখে গড়ে উঠেছে কিছু সেতু। কোথাও খরস্রোতা নদী, কোথাও সুউচ্চ পাহাড়, কোথাও সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। প্রকৌশলীদের দক্ষতায় দুর্গম সব স্থানেও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেক সেতু। এ রকমই পাঁচ সেতুর কথা।
দানিয়াং-কুনশান সেতু, চীন
চীনের দানিয়াং-কুনশান সেতুটিকে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটির দৈর্ঘ্য ১৬৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সেতুটি চীনের দুটি বড় শহর সাংহাই এবং নানজিংকে যুক্ত করেছে।
সেতুটি বেইজিং-সাংহাই হাই-স্পিড রেলওয়ের অংশে দানিয়াং এবং কুনশানকেও সংযুক্ত করেছে, যা বেইজিং পশ্চিম স্টেশন এবং সাংহাই হংকিয়াও স্টেশনকে সংযুক্ত করে।
কমপক্ষে ১০ হাজার কর্মী চার বছরে এটির নির্মাণ শেষ করেন। সেতুটির ৯ কিলোমিটার অংশ ইয়াংচেং হ্রদের ওপর বিস্তৃত। বড় এই অংশে সেতুটিকে সাপোর্ট দিচ্ছে ২ হাজার পিলার।
পুরো অবকাঠামোয় সাড়ে ৪ লাখ টন স্টিল ব্যবহার করায় এটি প্রবল টাইফুন এবং ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ সহ্য করতে পারে অনায়াসেই। পিলারগুলো এতটাই মজবুত যে তিন লাখ টন ওজনের নৌযানের ধাক্কাতেও কিছুই হয় না এই সেতুর।
সেতুতে উচ্চগতিসম্পন্ন ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা আছে। ট্রেনের গতি ২৫০-৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত তোলা যায়।
দ্য মিলিউ ভিয়াডাক্ট, ফ্রান্স
এই সেতুটিকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু সেতু হিসেবে বিবেচনা করা হতো। উচ্চতার দিক থেকে এটি আইফেল টাওয়ারকেও ছাড়িয়ে গেছে।
এটি একটি মাল্টি-স্প্যান কেব্ল-স্টেড ব্রিজ, যা টার্ন নদীর গর্জ উপত্যকার ওপর দিয়ে গেছে। সেতুটি ১ লাখ ২৭ হাজার কিউবিক মিটার কংক্রিট এবং ২৬ হাজার ২০০ টন রিইনফোর্সিং ইস্পাত দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টন প্রি-স্ট্রেসড স্টিল কেব্লে পুরো সেতুটি ঢাকা।
এই সেতুর নকশার অন্যতম আকর্ষণ এটির স্প্যানগুলো অসামঞ্জস্যপূর্ণ ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। অতি উচ্চতার কারণে সেতুটি বাঁকানো। তাই পিলারগুলোকে প্রশস্ত এবং শক্তিশালী করে ডিজাইন করতে হয়েছে।
আকাশি কাইকিও সেতু, জাপান
জাপানের আকাশি কাইকিও সেতু বিশ্বের দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতুগুলোর একটি। এটি ৩ হাজার ৯১১ মিটার দীর্ঘ। এটির সাপোর্ট টাওয়ারগুলো মাটি থেকে প্রায় ২৯৮ মিটার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে।
স্টিল ট্রাস স্ট্রাকচারে ডিজাইন করা পাইলনগুলো তারের স্যাডলকে টেনে সেতুর বেশির ভাগ লোড সাপোর্ট করে। পাইলনের মধ্যে দূরত্ব ১ হাজার ৯৯১ মিটার। এটিতে এমন দুই-স্তরের গার্ডার সিস্টেম আছে, যা সেতুর কাঠামোকে রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৫ পর্যন্ত ভূমিকম্প এবং ২৮৬ কিলোমিটার বেগের ঝোড়ো বাতাস থেকে রক্ষা করতে পারে।
এই বিশেষ সেতুতে বেশ কিছু উদ্ভাবনী প্রকৌশল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার একটি হলো এটির প্রতিটি টাওয়ারে ২০টি টিউনড মাস ড্যাম্পার (টিএমডি)। টিএমডিগুলো সেতুকে বাতাসের দোলা থেকে রক্ষা করে।
যখন বাতাস সেতুটিকে একদিকে দেয়, তখন টিএমডিগুলো বিপরীত দিকে দোলে। এতে সেতুর ভারসাম্য বজায় থাকে।
আকাশি কাইকিও সেতুটি ‘পার্ল ব্রিজ’ নামেও পরিচিত। রাতে ২৮টি বিভিন্ন প্যাটার্ন এবং আলো সেতুটিকে আলোকিত করে।
ইনচিওন ব্রিজ, দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচিওন ব্রিজ ১৩ কিলোমিটার লম্বা একটি সেতু। কেব্লে ঝোলানো ব্রিজের অংশটিকে কোরিয়ার দীর্ঘতম বিশ্বের দশম বড় ঝোলানো ব্রিজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার কেন্দ্রের মূল স্প্যান ৮০০ মিটার।
সেতুটির মূল উদ্দেশ্য হলো সোংদো এবং ইনচিওন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন। শক্তিশালী ইঞ্জিনিয়ারিং সফটওয়্যার মিডাস সিভিল ব্যবহার করে সেতুটির নকশা এবং কাঠামো বিশ্লেষণ করা হয়।
এই সেতু ৭২ এমপিএস বায়ুসহ ঝড় এবং রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে। সেতুটি ইনচিওন বন্দরের কাছে অবস্থিত। নিচে ৮০ মিটার উচ্চতাসহ ইউ আকৃতির ডিজাইন করা। এতে প্রধান দুটি টাওয়ারের মাঝ দিয়ে নিরাপদে জাহাজ পার হতে পারে। ইনচিওন ব্রিজের নিচের স্তম্ভ ৬ হাজার টন পর্যন্ত ওজন সহ্য করতে পারে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে স্থিতিশীল সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মাত্র আট মাসে সেতুর নির্মাণ শেষ হয়।
রুস্কি আইল্যান্ড সেতু, রাশিয়া
রুস্কি আইল্যান্ড সেতুটিকে বিশ্বের দীর্ঘতম কেব্ল সেতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটির মোট দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ১০০ মিটার। টাওয়ারগুলোর মধ্যে দূরত্ব এক হাজার ৪ মিটার।
এই সেতুর নকশা নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ এটি এমন একটি এলাকায় অবস্থিত যেখানকার আবহাওয়া চরম বৈরী।
ব্লাদিভোস্টকের আবহাওয়া মাইনাস ৪০ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করে। তাই এটির নির্মাণ ছিল শক্ত চ্যালেঞ্জের।
এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকৌশলীরা মিডাস সিভিল সফটওয়্যার ব্যবহার করেন, যা তারের অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে অজানা লোড ফ্যাক্টরগুলোর কাঠামোগত বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।
কেব্ল সিস্টেমের জন্য কমপ্যাক্ট পিএসএস সিস্টেম নামে একটি উন্নত সিস্টেম ব্যবহার হয়েছে এটি নির্মাণে। এই সিস্টেমটি একটি কম্প্যাক্ট ডিজাইনের জন্য ব্যবহার করা হয়। ছোট ব্যাসের সঙ্গে খাপ খাওয়ার পাশাপাশি সেতুর কাঠামোতে বাতাসের গতি কমাতে সাহায্য করে এটি।
চরম তাপমাত্রার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য উচ্চ-ঘনত্বের পলিথিন (এইচপিডি) দিয়ে তৈরি প্রতিরক্ষামূলক কাভার ব্যবহার হয়েছে। এটি সেতুর কেবল-স্টেয়েড সিস্টেমের তারগুলোকে ঢেকে রাখে।
মন্তব্য