জায়গা স্বল্পতার সমস্যা মেটাতে অস্থায়ীভাবে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন।
আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে বাস টার্মিনালটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন সিটি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক লাইভে তিনি বিষয়টি জানান।
জেলা বাস মালিক গ্রুপের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় পাঁচ বছর আগেও অভ্যন্তরীণ রুটে ৯০টি বাস ছিল। বর্তমানে সেই বাসের সংখ্যা ১৯০টি এবং দূরপাল্লার রুট মিলিয়ে এই টার্মিনালে বাস আছে তিন শতাধিক। তবে এত বাস রাখার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই এই কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে।
জায়গা না পেয়ে বাস রাখা হয় টার্মিনাল সংলগ্ন বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সামনের সড়কে। এতে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে সড়ক। বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল।
পাশাপাশি বাস মালিক ও শ্রমিকরা রয়েছেন চুরির আতঙ্কে। খোলা জায়গায় বাস রাখায় বিভিন্ন সময় ব্যাটারিসহ নানা যন্ত্রাংশ চুরির মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ।
সাদি পরিবহনের চালক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাস টার্মিনালের যে বর্তমান অবস্থা, তাতে বাস রাখা অনেক কষ্টের। বাস একবার টার্মিনালের মধ্যে ঢুকালে বের করতে জান-পরান বের হয়ে যায়। জরুরি ট্রিপ থাকলে তো ভোগান্তির শেষ নাই। তাই বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর বাস রাখতে হয়। টার্মিনালে যে জায়গা রয়েছে, তার থেকে দ্বিগুণ জায়গা প্রয়োজন। তাহলে ভোগান্তি কমে যাবে।’
তুফান মেল পরিবহনের চালক সুমন বলেন, ‘রাস্তার ওপরে গাড়ি রাখলে নানা সমস্যা হয়। অনেক বাসের ব্যাটারি চুরি হইছে। বাইরে বাস রাখাটা রিস্ক। শুনছি ট্রাক টার্মিনালের জন্য যে জায়গা করছিল ওই জায়গায় বাস স্ট্যান্ড নেবে। বাস স্ট্যান্ডের চাইতে ট্রাক টার্মিনালের জায়গা বড়। সব বাস রাখাও সম্ভব হবে। এইটা হইলে ভোগান্তি মনে হয় কমবে।’
বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে বলেন, ‘দিন দিন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাসের সংখ্যা বাড়ছেই। পদ্মা সেতু চালু হলে নতুন অনেক কোম্পানির বাস এই টার্মিনালে থাকবে। এখন যে বাস রয়েছে সেই বাসগুলোকেই জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। টার্মিনালের সামনে যানজটও অনেক বেড়েছে।
‘জনগণের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, বাস মালিকরাও ভোগান্তিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় মেয়র সেরনিয়াবাত জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে কাশিপুরে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ট্রাক টার্মিনালে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
কিশোর জানান, যন্ত্রাংশের দোকানগুলোও সেখানে স্থানান্তর করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই বাস টার্মিনাল ট্রাক টার্মিনালে স্থানান্তর হবে।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, ‘বর্তমানে যেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রয়েছে সেখানে বাস রাখার জন্য জায়গার স্বল্পতা রয়েছে। মেয়র মহোদয় ট্রাক টার্মিনালে বাস টার্মিনাল স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অস্থায়ীভাবে সেখান থেকেই বাস চলাচল করবে। বাসগুলো আর ঝুঁকি নিয়ে বাইরে কোথাও রাখতে হবে না। সব বাসই ট্রাক টার্মিনালে রাখা সম্ভব।
‘তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের প্ল্যান অনুযায়ী বর্তমানে যেখানে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রয়েছে সেখানে নগর ভবন এবং গড়িয়ারপারে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণের কথা রয়েছে। গড়িয়ারপারে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল স্থায়ীভাবে স্থানান্তর হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।’
আরও পড়ুন:কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানে জঙ্গি হামলার ৬ বছরেও মামলার রায় ঘোষণা হয়নি। এ মামলার ২৪ আসামির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে এনকাউন্টারে ১৯ নিহত হয়েছেন। বাকি পাঁচ আসামি কারাগারে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলছেন, আসামিরা অন্যান্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। তাদের অনুপস্থিতিতে শুনানিতে দেরি হচ্ছে।
পুলিশ সুপার বলছেন, পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সফলভাবে তদন্ত শেষে মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে।
২০১৬ সালের ৭ জুলাই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে মাঠে প্রবেশপথের সবুজবাগ সংযোগ সড়কে মুফতি মোহাম্মদ আলী জামে মসজিদের সামনের তল্লাশি চৌকিতে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।
সেই হামলায় নিহত হন সেখানে দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ কনস্টেবল আনছারুল হক ও জহিরুল ইসলাম। নিজ ঘরে জানালা ভেদ করে আসা গুলিতে নিহত হন সবুজবাগ এলাকার গৃহবধূ ঝর্ণা রাণী ভৌমিক।
সেদিন গুরুতর আহত হন ১২ পুলিশ সদস্য এবং চারজন মুসল্লি। নিহত হন আবির হোসেন নামে এক হামলাকারীও।
স্থানীয় বাসিন্দা ননী ভৌমিক বলেন, ‘সেদিনের কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে উঠে।’
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
কিশোরগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাঈদ ইমাম নিউজবাংলাকে জানান, ‘আসামিরা অন্যান্য মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তাই তাদেরকে বিভিন্ন কারাগারে রাখা হয়েছে । এই মামলার আসামিদের উপস্থিতির জন্য বিচারে দেরি হচ্ছে।’
মামলাটি এখন কোন পর্যায়ে আছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অভিযোগ গঠন শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালত সাক্ষীর জন্য প্রস্তুত। তবে আসামিদের প্রায় সবাই ঢাকার হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার মামলারও আসামি এবং এদের মধ্যে ১৯ জন ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছেন । তাই বাকি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।’
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ‘দেশ কাপাঁনো এই জঙ্গি হামলা আমাদের জন্যও বিশেষ বার্তা ছিল। আজকে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কবস্থা গ্রহণ করে এদের নির্মূল করতে পারছি।’
তিনি জানান, ওই ঘটনায় নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। আহতদেরও চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নিহত ওই গৃহবধূর এক সন্তানকেও চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রখর রোদে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কে যানজট না থাকলেও ভোগান্তিতে পড়েছেন ঈদে বাড়িমুখী যাত্রীরা। যানবাহন সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মহাসড়কে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে দুটি মহাসড়কে ঢল নামে দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষের। তাদের ভোগান্তি কমাতে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। দুটি মহাসড়কে সকাল থেকে স্বাভাবিক গতিতে যানচলাচল করছে।
নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় দুপুরের দিকে স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে গাড়ির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেন বেসরকারি চাকরিজীবী মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, ‘রৌদে মরিচের মতো শরীরটা জ্বলতাছে। তার উপর গাড়ি পাই না। যাও পাইছি ভাড়া অনেক বেশি। রাস্তায় এতো কষ্ট সহ্য হয়। প্রতি ঈদেই কষ্ট। কবে এই কষ্ট থেকে মাফ পামু জানি না।’
একই জায়গায় দাঁড়িয়ে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন মশিউর নামের নোয়াখালীর যাত্রী। বলেন, ‘দুপুরে অফিস থেকে বাসায় গিয়ে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়া বাড়ি যেতে রওনা হয়েছি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যাচ্ছে, গাড়ির দেখা নাই। গাড়ি আসছে না কেন, তাও বলছেন না কাউন্টারের লোকজন। রোদের মধ্যে বাচ্চাগুলোর অবস্থায় খারাপ হয়ে গেছে।’
এক পর্যায় তিনি রিকশা নিয়ে ঢাকার ভাড়া বাসায় ফিরে যান।
বাড়ি যেতে সড়কে নেমে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। সাইনবোর্ড এলাকায় ৭২ বছর বয়সী আলেয়া বেগমের মাথায় পানি ঢালছিলেন তার স্বজনরা।
আলেয়া বেগম বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ থেকে মিরপুরে মেয়ের বাড়িতে যাই ঈদ করতে। সিএনজি কইরা এই পযর্ন্ত আইছি। ওহন গাড়ি পাই না, যা পাই ভাড়া বেশি। গরমে তো শেষ হইয়া গেলাম। পুরুষ মাইনষে তো গাড়িতে দৌড় দিয়ে উঠতে পারে, আমরা কি পারি?’
কিশোরগঞ্জের যাত্রী আব্দুল্লাহ আল মাহী বলেন, ‘বেলা ১২টায় শিমরাইল বাস কাউন্টারে আসলাম। এখন সাড়ে ৩টায়ও গাড়ি আসে নাই। রাস্তা তো ফাঁকা, তাইলে সমস্যা কি তাদের। ভাড়া নিল টিকিট প্রতি একশ টাকা বেশি। এভাবে হয়।’
বাস কাউন্টারের মোহাম্মদ মিঠু বলেন, ‘১ ঘণ্টা পর পর গাড়ি ছাড়া হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে যাত্রীর চাপ অনেক বেড়ে গেছে, এ জন্য সমস্যা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাত্রীদের গাড়িতে ওঠাতে।’
সাইনবোর্ড এলাকার আরেক টিকেট কাউন্টারের শহিদ মিয়া বলেন, ‘কাউন্টারে আগের দামেই টিকিট বিক্রির কথা। অনেকে বাড়িয়ে বিক্রি করছি, কারণ যাত্রী বাড়লে ভাড়াও বেড়ে যায়। যাত্রী কমে গেলে আবার কম রাখা হয়।’
সকাল থেকে রাজধানী থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে কোথাও যানজট দেখা যায়নি। তবে কিছু কিছু মোড়ে ঢাকামুখী যানবাহনের বাড়তি চাপ রয়েছে।
কাচঁপুর হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক কেএম মেহেদী হাসান নিউজবাংলাকে জানান, ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি ফেরার চাপ পড়েছে সড়কে। রাস্তায় গরমে মানুষ অস্তির হয়ে পড়ছে। শিল্পকারখানা ছুটি হলে এ চাপ আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘আমরাও রাস্তায় আছি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাব, বরাত, রূপসী, ভূলতা এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাচঁপুর, মদনপুর, লাঙ্গলবন্দ, মোগড়াসহ মেঘনা পযর্ন্ত পুলিশের ১৬২ সদস্য কাজ করছেন। দুই মহাসড়কের কোথাও যানজট নেই। তবে সড়কে নানা রকম ভোগান্তি আছে। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সেসব সমাধানের ব্যবস্থা নিবো।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহগুলোর মধ্যে আটজনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক।
এই আটজন হলেন আকতার হোসেন, আবুল হাশেম, বাবুল মিয়া, মনির হোসেন, মো. সাকিব, মো. রাসেল, মো. শাহাজান ও আব্দুস সুবহান প্রকাশ আব্দুর রহমান।
সুমন বণিক বলেন, ‘বুধবার রাতে আমরা ডিএনএ পরীক্ষার ফল হাতে পেয়েছি। প্রথম দফায় আটটি অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই মরদেহগুলোর মধ্যে পাঁচটি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, দুটি আঞ্জুমানে মুফিদুলে এবং একটি কক্সবাজারে রয়েছে। আমরা এই আটজনের পরিবারকে খবর দিয়েছি, তারা এসে মরদেহ নিয়ে যেতে পারবে।’
নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন (জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি) প্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপো সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী এলাকায়। বাংলাদেশে এর মালিকানা স্মার্ট গ্রুপের। গ্রুপের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমানই ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পরিচালক হিসেবে রয়েছেন তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান।
এই ডিপোতে গত ৪ জুন রাত ৯টার দিকে আগুন লাগে। রাত ১১টার দিকে প্রথম বড় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
একে একে ছুটে যায় চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট। নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা থেকেও পরে যোগ দেয় কয়েকটি ইউনিট। ৫ জুন সকাল পর্যন্ত আগুন নেভাতে আসা ইউনিটের সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫টি। কিন্তু কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক পদার্থের কারণে দফায় দফায় বিস্ফোরণে বাড়ে আগুনের ভয়াবহতা।
৮৭ ঘণ্টা পর ৮ জুন দুপুরে বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন নেভে। আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনার প্রথম দুই দিনে ৪১টি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চারজন। বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময় দেহাবশেষ পাওয়া গেছে ছয়জনের। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫১ জন হিসাব করা হচ্ছে।
প্রথম দুই দিনে উদ্ধার ৪১ মরদেহের মধ্যে পরিচয় পাওয়া যায় ২৫ জনের। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনজন। ৬ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয় ছয়টি। এরপর প্রথম দফায় ডিএনএ পরীক্ষায় পরিচয় মেলে আটটি মরদেহের। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত পরিচয় শনাক্ত হয়নি আরও ১৫ জনের।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ ঈদের আগে-পরে নৌপথে ফেরি বা লঞ্চে করে পারাপার নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় বিপাকে পড়েছেন ঘরমুখী বাইকচালকেরা।
সেতু পারাপারের সুযোগ পেতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার পর নিরাপত্তাকর্মী, সেতু কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের তোপের মুখে অনেক বাইকার বাড়ি ফিরে গেছেন। কেউ কেউ আবার ট্রলারে করে ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন।
এর আগে ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিনই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। সেতু দিয়ে ঈদের আগে আর বাইক চলাচলের সুযোগ দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত গিয়ে ফেরি দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে আবার বাইকে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন বাইকাররা। কিন্তু গত ৬ জুলাই নৌপথে দুই চাকার যানটি বহন নিষিদ্ধ করা হয়।
বলা হয় আগামী ১০ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঈদের পর আরও পাঁচ দিন লঞ্চে বা ফেরিতে করে বাইক পরিবহন করা যাবে না।
এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত আন্তজেলায় মোটরসাইকেল চালাতে হবে। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না। এসব সিদ্ধান্ত বাইকচালকদের অসন্তুষ্ট ও হতাশ করে।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন মোটরসাইকেলচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুতে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা করে টোল নির্ধারিত থাকলেও নৌকায় করে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা করে নদী পাড়ি দিতে হচ্ছে।
মোটরসাইকেলচালক ইমরান হোসেন যাবেন মাদারীপুরের কালকিনিতে। তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল ঈদে মোটরসাইকেলে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দেব। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে সেটি পূরণ হলো না। এখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে নৌকায় করে পাড়ি দিতে হচ্ছে উত্তাল পদ্মা।
‘অন্যের দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। আরও অনেক গাড়িই তো অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, সেগুলো কি বন্ধ করা হয়েছে।’
মোটরসাইকেলচালক মো. ইমরানের বাড়ি মাদারীপুর। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় তিনি অনেক খুশি। কিন্তু মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় কিছুটা আফসোসও হচ্ছে তার।
তিনি বলেন, ‘বাইক নিয়ে পদ্মা সেতু হয়ে বাড়ি যেতে পারছি না, তাই খারাপ লাগছে। এতে সড়কে বিভিন্ন জায়গায় ভোগান্তিতে পড়তে হলো। এখন ট্রলারে করে বাইক নিয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে ওপারে যাব।’
ইলা হাওলাদার বলেন, ‘আমি ও আমার হাজব্যান্ড ঈদের ছুটিতে যাব পদ্মার ওপারে। কিন্তু সেতুতে মোটরসাইকেল চলবে না, ফেরিতে চলবে না। আমাদের ওপারে যেতেই হবে, তাই বিকল্প ব্যবস্থা না পেয়ে ট্রলারে করে নদী পাড়ি দিচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নিখোঁজের পাঁচ দিন পর এক সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উপজেলার যদুবয়রা গ্রামের নতুন ব্রিজের নিচ থেকে বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে হাসিবুর রহমান রুবেলের ভাসমান মরদেহটি উদ্ধার করে পুলিশ।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে কুষ্টিয়ার গড়াই সড়ক সেতুর নিচে ভাসমান মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয়রা। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ‘সাংবাদিক রুবেল জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। একই সঙ্গে ঠিকাদারি কাজও করতেন বলে জানা গেছে।’
রুবেলকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন সাংবাদিক রুবেলের ছোট ভাই মাহবুব রহমান। তিনি বলেন, ‘তার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল- এমন খবর পরিবারের কারোর কাছে নেই। আমি ভাই হত্যার বিচার চাই।’
কুমারখালী থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
মাহবুব বলেন, ‘প্রতি রাতেই আমরা একসঙ্গে খেতাম। ৩ তারিখে রাত ১১টা বেজে গেলেও যখন আসেনি, তখন সাংবাদিকদের জানিয়ে জিডি করি।’
কুষ্টিয়া মডেল থানায় করা ওই জিডিতে উল্লেখ করা হয়, রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড়ে অবস্থিত দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার অফিসে কাজ করছিলেন রুবেল। এ সময় তার মোবাইলে একটি কল এলে তিনি অফিস পিয়নকে বাইরে থেকে আসছি বলে বের হয়ে যান। এর পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে ওই সাংবাদিকের খোঁজ পেতে মানববন্ধন করেন পরিবারের সদস্য ও সাংবাদিকরা।
ঈদুল আজহার আগে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কোচ মেরামতের কথা জানিয়েছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সংশ্লিষ্টরা।
৮৮টি কোচ মেরামত হয়েছে ঈদ ঘিরে। এর মধ্যে ৭২টি ব্রডগেজ ও ১৬টি মিটার গেজ কোচ। এসব কোচ হস্তান্তর করা হয়েছে রেলের পাকশী ও লালমনিরহাট ট্রাফিক বিভাগে।
কারখানার জেনারেল ওভার হোলিং (জিওএইচ) শপের মিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন আমরা কাজ করি, তখন আন্তরিকতার অভাব থাকে না। বিশেষ করে ঈদ ঘিরে আমরা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করি। এই সময়ে শুধু সেবার বিষয়টি মাথায় থাকে।’
একই বিভাগের আরেক শ্রমিক রাশেদ আলম বলেন, ‘আমরা খুশি আমাদের শ্রমের ফলে ৮৮টি কোচ ব্যবহার উপযোগী হয়েছে। এসব কোচে ঘরে ফিরতে পারবে মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবে।’
তসু উদ্দিন নামে অন্য শ্রমিক বলেন, ‘জনবল দিন দিন কমে যাচ্ছে। সংকটের দিকে যাচ্ছে কারখানাটি। দক্ষ শ্রমিকরা চলে যাচ্ছে। নতুন শ্রমিক আসছে না। আমি মনে করি, আমরা অবসরে যাওয়ার আগে, নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া জরুরি। তাহলে কারখানা উপকৃত হবে। সচল থাকবে।’
ঈদ ঘিরে কারখানার ক্যারেজ শপ (উপকারখানা), পেইন্ট শপ, হেবি রিপিয়ারিং শপ, জিওএইচসহ ২৯টি শপে ছিল কর্মযজ্ঞ।
জিওএইচ শপের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, ৬৫টি কোচ মেরামতের লক্ষ্য থাকলেও ৮৮টি কোচ মেরামত করে বিভিন্ন রুটে পাঠিয়েছে রেল কারখানা। যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে দিন-রাত শ্রম দিয়েছেন কারখানাসংশ্লিষ্টরা।
তিনি আরও জানান, ২ হাজার ৮৫৯ জনবলের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ৭২৮ জন, যা প্রয়োজনের মাত্র ২০ শতাংশ। এই জনবল দিয়ে যাত্রীবাহী কোচ, মালবাহী ওয়াগন মেরামত ছাড়াও তৈরি হচ্ছে ১২ হাজার ধরনের রেলওয়ের যন্ত্রাংশ।
সৈয়দপুর রেলওয়ের বিভাগীয় তত্ত্ববধায়ক সাদেকুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, মেরামত হওয়া কোচগুলো চলাচল করবে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে।
সাদেকুর রহমান বলেন, ‘জনবল সংকটের মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ানোর বিষয়ে আন্তরিকতাই মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। তারাই এর নেপথ্যের মূল কারিগর।’
জনবল সংকট পূরণে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার-গোপালপুর রোডের মবুল্লাহপুর তিন রাস্তার মোড়ে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ২৫ বছরের হাসিবুল বাশারের বাড়ি বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের কোটরা মহব্বতপুর গ্রামে। বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন তিনি।
ওসি বলেন, ‘এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটতে পারে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্তব্য