রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো. কাওছার নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার বেলা ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর চিকিৎসক বলা ৩টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের সহকর্মী নাসিরউদ্দিন নাসির বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর আফতাবনগর এলাকায় একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করার সময় কাওছার মেশিনের কাছে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।’
তিনি জানান, নিহতের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার আমড়াগাছিয়া পাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে। বর্তমানে তিনি কামরাঙ্গীরচরে থাকতেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।’
পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে ২১ জেলার নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ চালু হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ভোগান্তি যেমন কমেছে, তেমনি বাড়ি ফেরার সময়ও কমেছে কয়েক ঘণ্টা।
এতে চাপ বেড়েছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমে গেছে গাবতলী থেকে পাটুরিয়া হয়ে দক্ষিণবঙ্গমুখী বাস চলাচল।
বুধবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও ঈদযাত্রায় তা তেমন একটা বাধা তৈরি করতে পারেনি। পরিবার-পরিজন নিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বাসের অপেক্ষায় রয়েছেন অনেকে।
টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বসেছে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। সতর্ক আছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) টিমও।
দক্ষিণবঙ্গগামী সাকুরা পরিবহনের বুকিং মাস্টার আলামিন হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদযাত্রায় যাত্রীর চাপ ভালোই আছে। কোনো গাড়িতে সিট খালি যায় নাই। গাড়ির বুকিং ফুল গেছে। তবে গাড়ির ট্রিপ কমে গেছে। কারণ পদ্মাসেতু হওয়ার কারণে বেশিরভাগ যাত্রী সায়েদাবাদ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যেতে চাচ্ছে।
‘পদ্মা সেতু দিয়া সময় কম লাগতেছে। কিন্তু পাটুরিয়া-আরিচা দিয়ে ফেরি খালি থাকলেও সময়টা বেশি লাগায় যাত্রী পদ্মা সেতু দিয়ে যেতে আগ্রহী বেশি। সায়েদাবাদ থেকে যাত্রীর চাপ বেশি।’
সাকুরা পরিবহনের বুকিং মাস্টার মতো একই সুরে কথা বলেন দক্ষিণবঙ্গগামী সোহাগ পরিবহনের বুকিং মাস্টার ফয়সাল আহমেদ।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন কোনো টিকিট নেই৷ যারা আগেই টিকিট কেটেছে তারাই যাচ্ছে। গাড়ি সব সিডিউল টাইমেই যাচ্ছে। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় ট্রিপের সংখ্যা কমে গেছে। কারণ যাত্রীরা পদ্মা সেতু হয়েই যেতে আগ্রহী।’
সাড়ে তিন বছর পর দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন প্রবাসী বাংলাদেশী মনিরুল ইসলাম মিন্টু। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে নড়াইল ফিরছিলেন তিনি। মিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক ভালো লাগতেছে। ফ্যামিলির সবাইকে এক সঙ্গে পাইছি। এখন নড়াইল যাচ্ছি। গ্রামের বাড়ির সবাইকে নিয়ে ঈদ করব।’
ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে ঈদযাত্রার আলাদা কোনো চাপ নেই বলে জানান গাবতলী টার্মিনালের হানিফ কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মো. শামীম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কখনো ঈদযাত্রায় তেমন চাপ ছিল না এই রুটে। যাত্রী যখন এসে টিকিট চায় তখনই পায়।’
ঈদুল ফিতরের সময় ঈদযাত্রার প্রথম দিনে বেশ কয়েকটি বাসের সিট খালি গেলেও ঈদুল আযহার সময় সে তুলনায় ভিড় বেড়েছে গাবতলী বাস টার্মিনালে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের দিন ও আগে পরে সাতদিন মোটরসাইকেল বন্ধ করে দেয়ায় এই চাপ আরও বাড়তে পারে। টিকিটের হাহাকার এবং চাহিদা যোগান দিতে মহাসড়কে দুর্বল আনফিট বাস নেমে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর কসাই গলির একটি চাতলা ভবনের সেনেটারি ফিটিংসের কাজের সময় নিচে পড়ে নামের মিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া মিস্ত্রির নাম মো. ইমন। তার বয়স ২০ বছর।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বেলা পৌনে ১২টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘আমার ছেলে সেনেটারি ফিটিংসের কাজ করে। আজ সকালে কামরাঙ্গীরচর আবু সাঈদ বাজার কসাই গলির একটি চারতলা ভবনের সেনেটারি ফিটিংসের কাজ করার জন্য উপরে ওঠে।
‘সকালে বৃষ্টির পানি মেঝেতে জমে থাকায় চারতলা থেকে পা পিছলে নিচে পড়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানায় জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুন:স্বজনরা দেশের বাইরে, তিনি একাই থাকতেন দেশে। দুই সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার পর তাকে নিজ বাসায় পাওয়া যায় মৃত অবস্থায়। মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। পুলিশ যখন উদ্ধার করে তখন গায়ে পোকা কিলবিল করছিল।
তার নাম ইকবাল উদ্দিন আহমেদ। পেশায় চিকিৎসক। রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার একটি বাসা থেকে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জাতীয় জরুরি নম্বরে কল পেয়ে দরজা ভেঙে ঢুকে বাহিনীটি।
মঙ্গলবার রাতে ১২টার দিকে বড় মগবাজার ২২৭ নম্বর গ্র্যান্ড প্লাজা বাড়ির সাত তলার নিজ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে তার মরদেহটি উদ্ধার করার পর ময়নাতন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
সিদ্ধেশ্বরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মোফিজুর রহমান বলেন, ৭২ বছর বয়সী ইকবালের স্ত্রী-মেয়ে দেশের বাইরে থাকেন। তাদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনো যোগাযোগ হচ্ছিল না। ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে পেয়ে রাতে ওই বাসা থেকে ডা. ইকবাল উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, ‘অর্ধগলিত মরদেহে পোকা ধরা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’
ইকবাল উদ্দিনের মেয়ের জামাই আরিফুর রহমান সিদ্দীক বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি (হাবিবা বেগম) ও মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরব থাকতেন। তিনি দুইবার স্ট্রোক করেছেন। এজন্য গত ৫ থকে ৬ বছর আগে তিনি দেশে চলে আসেন। এরপর থেকে বড় মগবাজারের বাড়িটির নিজ ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ আগে স্ত্রী-মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে । এরপর থেকে ফোনের রিং হলেও আর যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।’
মঙ্গলবার ওই বাড়ির কেয়ারটেকার সার্ভিস চার্জের জন্য ওই বাসায় গিয়ে তাকে অনেক ডাকাডাকি করেন। ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে এরপর থানা পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। বাসার বাথরুমে উপুর হয়ে পড়েছিল মরদেহ।
পুলিশের ধারণা, অসুস্থতার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার।
আরও পড়ুন:ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনের পয়োবর্জ্য সরাসরি লাইনে ফেলা যাবে না বলে জানিয়েছেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, এসব অভিজাত এলাকায় প্রতিটি ভবনেই কার্যকর সেপটিক ট্যাংক ও সোক ওয়েল স্থাপন করতে হবে।
বুধবার দুপুরে ৩৯ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত নুরের চালায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শনে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘পয়োবর্জ্যের সংযোগ স্টর্ম সুয়ারেজে দেয়া যাবে না। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পয়োবর্জ্যের সংযোগ ড্রেনে পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
পর্যায়ক্রমে অন্য এলাকায়ও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক ছাড়া শুধু রাস্তা করলে হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য রাস্তা নির্মাণের পূর্বে ড্রেন নির্মাণ করতে হবে। নূরেরচালার সুতিভোলা খালের পাড় থেকে নূরেরচালা বাজার মসজিদ পর্যন্ত ১ হাজার ৪২২ মিটার ড্রেনেজের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। ড্রেনের কাজ শেষ হলেই রাস্তার কাজ করা হবে।’
সাংবাদিকের এক প্রশ্নে আতিকুল বলেন, ‘এই শহর শুধু মেয়রের নয়, এ শহর শুধু কাউন্সিলরের নয়, এই শহর সবার শহর। সিএস পর্চা অনুযায়ী খালের সীমানা নির্ধারণ করে আমরা খালগুলোকে উদ্ধার করব।
‘মহানগর জরিপ অনুযায়ী খাল উদ্ধার করলে ঢাকাকে বাঁচানো যাবে না, জলাবদ্ধতায় এই ঢাকা ডুবে যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর খালের সীমানা নির্ধারণের কাজ এগিয়ে চলেছে। খালগুলো উদ্ধারের পর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলব।’
সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আতিকুল বলেন, ‘আমরা জলাবদ্ধতা এবং যানজটের সমস্যার সমাধানের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই রাস্তার কার্যক্রম করছি। শহরের রাস্তাগুলো ২০ ফিট প্রশস্ততার কম হলে সেখানে সিটি করপোরেশন কোনো ধরনের অর্থায়ন করবে না, কোনো ধরনের রাস্তা নির্মাণ করবে না।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নবগঠিত ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তা, পানি নিষ্কাশন ও খাল খননের জন্য সরকার ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় নূরেরচালা মসজিদ থেকে সুতিভোলা খাল পর্যন্ত ১ হাজার ৪২২ মিটার পানি নিষ্কাশন নালা নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ২৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণ ১২ ঘণ্টায়
এবার ঈদে কোরবানির বর্জ্য ১২ ঘণ্টায় পরিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এ জন্য সব প্রস্তুতি আছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র বলেন, ‘কোরবানির বর্জ্য ১২ ঘণ্টায় পরিষ্কারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ১০ হাজার কর্মী বর্জ্য অপসারণে কাজ করবে।'
ঢাকা উত্তরের কয়েকটি অঞ্চলে কাউন্সিলরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোরবানির স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান আতিকুল ইসলাম।
আরও পড়ুন:প্রসাধনসামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানি হেনোলাক্সের মালিক নুরুল আমিনের দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ৪ জুন পাওনা টাকা না পেয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী গাজী আনিস।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
হেনোলাক্সে বিনিয়োগ করা অর্থের কিছু অংশ গাজী আনিসকে ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিন৷ এ জন্য জুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছিলেন আনিস।
ঘটনার দিন অর্থাৎ ৪ জুন আনিসের পাওনা টাকার আংশিক পরিশোধের জন্য চেক দেয়ার কথা ছিল নুরুল আমিনের। কিন্তু এদিন তাদের কাছ থেকে ওই চেক না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত আনিস প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
মঙ্গলবার রাতে আমিন-ফাতেমা দম্পতিকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ‘পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য গেল ২৬ জুন থেকে গাজী আনিস ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে একাধিকবার আলোচনার পর গাজী আনিসকে ৪ জুলাই আংশিক টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদান করার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন আমিন দম্পতি। সারা দিন অপেক্ষার পর তাদের কাছ কাঙ্ক্ষিত চেক না পেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গাজী আনিস।’
এদিকে নূরুল আমিন ও তার স্ত্রী র্যাবের কাছে জানান, আনিসের পাওনা মোট টাকার হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত ছিল তাদের। আনিস প্রাপ্য টাকার অনেক বেশি দাবি করেছিলেন। এটি সমাধান না হওয়ায় তারা সেদিন চেক দিতে পারেননি।
আনিসের আত্মহত্যার ঘটনা জানার পর ভয় পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলেই রাজধানীর কাকরাইলে নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে উত্তরায় গিয়ে আত্মগোপন করেন আমিন দম্পতি, জানান র্যাবের মুখপাত্র। পরবর্তীতে মামলা হওয়ার পর গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের দুজনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়।
আনিসের হেনোলাক্সে বিনিয়োগের বিষয়ে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘২০১৭ সালে হেনোলাক্স গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে গাজী আনিসের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সখ্য এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। আমিন দম্পতি ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য ভারতে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে একই সাথে অবস্থানকালে আসামিদ্বয় ভিকটিমকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। ভিকটিম প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরবর্তীতে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন।
‘পরবর্তীতে তাদের প্ররোচনায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়স্বজন বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা হয়নি। বিনিয়োগ-পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য ভিকটিম বারবার আসামিদ্বয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু আসামিদ্বয় গড়িমসি করতে থাকেন।
‘প্রথমে কয়েক মাস লভ্যাংশ বাবদ আনিসকে টাকা দিলেও একসময় সে টাকা দেয়াও বন্ধ করে দেন নুরুল আমিন। সবশেষ লভ্যাংশসহ আনিসের ন্যায্য পাওনা ৩ কোটি টাকার অধিক বলে সে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস ও সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। এর আগে কয়েক দফার চেষ্টায় ৭৪ লাখ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন আনিস। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য কুষ্টিয়ায় দুটি মামলার পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন আনিস।
খন্দকার আল মঈন জানান, আনিসের বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকা ধার করা ও পাওনাদারদের নিয়মিত লভ্যাংশ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি থাকায়, তারাও আনিসের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। এতে দিশাহারা আনিস গত ২৬ জুন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
ভিকটিম গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরবর্তীতে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। ভিকটিম সাহিত্য চর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানায় র্যাব।
গ্রেপ্তার নুরুল আমিনের উত্থান সম্পর্কে র্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘তিনি ঢাকা বাংলাদেশ হোমিও হল থেকে হোমিও ডিগ্রি (ডিএইচএমএস) অর্জন করেন। এরপর ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম কয়েক বছর বাজারে প্রসাধনী পণ্যের কোনো প্রতিযোগী না থাকায় একচেটিয়া ব্যবসা করে নুরুল আমিনের হেনোলাক্স।
পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরণ করেন তিনি। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে সে আমিন হারবাল নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান করে ব্যবসা শুরু করেন। ২০১৬ সালে হেনোলাক্স ও আমিন হারবালের সব কসমেটিকসের ব্যবসা বন্ধ করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন:বেপরোয়া গতির জন্য সমালোচিত এনা পরিবহনের ঈদযাত্রার বাসে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী যাত্রীদের কাছে দুই উপায়ে বিক্রি হচ্ছে এই টিকিট। কাউন্টারে ২৬৭ টাকার পথ ২৬০; তবে চুক্তিতে এই টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
বুধবার সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্যাহর মালিকানাধীন এনা পরিবহনের এ বাস কাউন্টারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সড়কে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে বেশ কয়েকজন যাত্রীর কাছ থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেয়েছে নিউজবাংলা।
যাত্রীরা বলছেন, ময়মনসিংহ রুটে যেহেতু ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় না, তাই টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীর চাপ ও যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি হওয়ায় বাসের সহকারীরা যাত্রীদের জিম্মি করে এই কন্ট্রাক্ট সিস্টেম (চুক্তির পদ্ধতি) চালু করছে।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, কাউন্টার থেকে ২৬০ টাকায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। যাত্রীরা বেশি টাকা দিয়ে গেলে তাদেরইবা কী করার আছে?
ময়মনসিংহের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সকাল ৯টার দিকে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টিকিট ছাড়া গেলে ৫০০ টাকায় যাওয়া যাইব। ওই যে হেলপার বলতেছে। লাইনে খাড়াইয়া কাটলে ২৬০ টাকা। কন্ট্রাকে ৫০০ টাকা।’
কারও কাছে অভিযোগ করেছেন কি না এমন প্রশ্নে নজরুল বলেন, ‘হেরা এহন আইবো না তো। হেরা এহন আইতো না। হেরার (বাস) লগে সরকারের ভালা খাতির। কাউন্টার লগে তো ইতা করছে হেরা দেখে না। তিন-চারজনে টিকিট দিলে তো এত সময় লাগে না। ইচ্ছা কইরা দেরি করছে। একটা টিকিট ১০ মিনিট, ২০ মিনিট পরে দেয়। কী কইয়াম কন? ’
নজরুল ইসলামের অভিযোগের সত্যতা মেলে ১০ মিনিট পরই। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২৬৭ টাকা হলেও এনা পরিবহনের কাউন্টার থেকে নেয়া হচ্ছে ২৬০ টাকা। তবে বাস সংকট এবং অধিক টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে কাউন্টার থেকে এক হাত সামনেই ২৬০ টাকার টিকিটের দাম ৫০০ করে চুক্তিতে যাত্রী তুলছিলেন পরিবহনের সহকারীরা।
সকাল ৯টা ২০ মিনিটে এনা পরিবহনের ঢাকা মেট্রো-ব ১৫৪২৩৮ গাড়িতে এমন দ্বিগুণ ভাড়ায় চুক্তিতে তিন যাত্রীকে তুলতে দেখা যায়। অথচ তখনও শতাধিক মানুষ বাড়ি ফেরার জন্য টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে।
সকাল পৌনে আটটায় এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট পেয়েছেন মাহমুদুল ইসলাম। তবে টিকিট হাতে অপেক্ষা করছিলেন ময়মনসিংহের এই যাত্রী। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্যামের জন্য অনেক বাস আসতে পারতেছে না৷ তবে ঈদে বাড়ি যাইতে পারতেছি এটাই আনন্দ হইতেছে।’
এসব বিষয়ে এনা পরিবহনের অ্যাকাউন্টিং ম্যানেজার রিয়াজউদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কাউন্টারে ২৬০ টাকা করেই ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীরা যদি বেশি ভাড়া দিয়ে যায়, আমাদের কী করার।’
দেরি করে টিকিট দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গাড়ি তো আসতেছে না। গাড়ি না থাকলে টিকিট দেয়া বন্ধ থাকে। সকাল ৯টা ২৫ পর্যন্ত ২৭টি গাড়ি ছেড়ে গেছ।’
ঢাকা-ময়মসিংহ রুটে ঈদে অগ্রিম টিকিট দেয়া হয় না বলে ঈদযাত্রার প্রথম দিনে এই কাউন্টারে ভিড় থাকলেও বিপরীত চিত্র একই টার্মিনালের অন্য কাউন্টারে।
ঢাকা-নাটোর-রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের একতা কাউন্টারে শুধু তারাই অপেক্ষা করছেন, যারা আগেই অগ্রিম টিকিট পেয়েছিলেন।
কাউন্টারটির বুকিং মাস্টার স্বপন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রীর ওইরকম চাপ নাই। আমরা তো ১৫ দিন আগেই অগ্রিম টিকিট দিই। এখন শুধু যাত্রী যাওয়ার পালা।
‘অগ্রিম টিকিটের জন্য কেউ আসছে না। যারা অগ্রিম টিকিট কেটেছে তাদেরকে পাঠাচ্ছি৷ ভাড়া বাড়ে নায়৷ চাঁপাইয়ের ভাড়া সাড়ে ৭০০ টাকা, তাই নিচ্ছি।’
জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন শুনানির জন্য ১১ আগস্ট ঠিক করেছে আদালত। সেই দিন মামলার অভিযোগ গঠন শুনানিরও দিন ঠিক করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালত এ দিন ঠিক করেন।
এদিন সম্রাটের জামিন শুনানি ও মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ঠিক ছিল। সম্রাট অসুস্থ থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে না পাঠিয়ে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) পাঠায়। এরপর বিচারক সম্রাটের জামিন শুনানি ও অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য তারিখ পিছিয়ে ১১ আগস্ট ঠিক করেন।
এর আগে দুদকের মামলায় জামিন বাতিল হওয়ায় আবারও কারাগারে যেতে হয়েছিল সম্রাটকে।
জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দিয়েছিল আদালত। ২৪ মে সে আদেশেই আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন তিনি।
গত ১১ মে সম্রাটকে জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। পরে বিচারিক আদালতের দেয়া জামিন বাতিল চেয়ে ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক।
১৮ মে দুদকের এই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজি মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
দুদকের মামলায় জামিন পাওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে থাকা আরও তিন মামলায় জামিন পান সম্রাট। চার মামলার সব কটিতেই জামিন পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) প্রিজন সেল থেকে কারামুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে সম্রাটের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য