এ বছর হজে যেতে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন হয়েছে ঢাকা জেলা থেকে। আর পার্বত্য জেলা বান্দারবান থেকে হয়েছে সবচেয়ে কম নিবন্ধন। বান্দরাবানের ৩৬ জন আর ঢাকা জেলা থেকে ১১ হাজার ১৬ জন হজে যাবেন।
২৩ মে পর্যন্ত নিবন্ধিত যাত্রীদের তালিকা থেকে এ তথ্য জানা যায়। ওই দিন পর্যন্ত মোট নিবন্ধন করেছেন মোট ৫৪ হাজার ৭০০ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা ২ হাজার ৮৪৯ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫১ হাজার ৮৫১ জন
বান্দারবান ছাড়াও এবার একশ’র নিচে হজযাত্রীর নিবন্ধন হয়েছে আরও তিন জেলায়। এর মধ্যে বরগুনায় ৯৭, খাগড়াছড়িতে ৬১ এবং রাঙামাটিতে ৪১ জন নিবন্ধন করেছেন।
ঢাকা ছাড়া এবার হাজারের উপরে হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন আরও ১৪ জেলায়। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩ হাজার ৬০৮, কুমিল্লায় ২ হাজার ২০৭, দিনাজপুরে ১ হাজার ৩০৭, গাজীপুরে ১ হাজার ৩১৯, জামালপুরে ১ হাজার ১০২, ময়মনসিংহে ১ হাজার ৪০৪, নওগাঁয় ১ হাজার ৫৩৩, নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ২৬৫, পাবনায় ১ হাজার ৩৭২, রাজশাহীতে ১ হাজার ৮৮২, রংপুরে ১ হাজার ১৩৫, সিরাজগঞ্জে ১ হাজার ৬২১, বগুড়ায় ২ হাজার ২৬৩, এবং টাঙ্গাইল থেকে নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৩৪৫ জন।
এ ছাড়াও এ বছর বাগেরহাটে ২০২, বরিশালে ৫৬৫, ভোলায় ৩১৭, ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় ৭১৩, চাঁদপুরে ৭১৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬১৬, চুয়াডাঙ্গায় ৩১০, কক্সবাজারে ৩৪৯, ফরিদপুরে ৪৮১, ফেনীতে ৬৭৫, গাইবান্ধায় ৮১৩, গোপালগঞ্জ ২৪৮, হবিগঞ্জে ৩১৬, যশোরে ৭৯৪, ঝালকাঠিতে ১২৩, ঝিনাইদহে ৪০৯, জয়পুরহাটে ৬৬৬, খুলনায় ৭৫১, কিশোরগঞ্জে ৬২৪, কুড়িগ্রামে ৬৭৪, কুষ্টিয়ায় ৫১৯, লক্ষ্মীপুরে ৪১৪, লালমনিরহাটে ২৫৯, মাদারীপুর ৩৯৬, মাগুরায় ১৯৮, মানিকগঞ্জে ৩৭০, মৌলভিবাজারে ১২৫, মেহেরপুরে ১৫৭, মুন্সিগঞ্জে ৩৪৯, নড়াইলে ১৬৪, নরসিংদীতে ৬৮৬, নাটোরে ৮৬১, নেত্রকোনায় ৪৩৮, নীলফামারীতে ২৮৭, নোয়াখালিতে ৯৪২, পঞ্চগড়ে ২৮৯, পটুয়াখালিতে ৩৬৪, পিরোজপুরে ১৪৯, রাজবাড়ীতে ১৯৮, সাতক্ষীরায় ৫৬৭, শরীয়তপুরে ৩১২, শেরপুরে ৬৬৫, সুনামগঞ্জে ১৪৬, সিলেটে ৪৮৩ এবং ঠাকুরগাঁও থেকে নিবন্ধন করেছেন ৩৮৭।
প্রথমে ৩১ মে থেকে হজ ফ্লাইট শুরুর কথা থাকলেও সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি শেষ না হওয়া ঢাকা থেকে হজের প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে আগামী ৫ জুন থেকে। হজ যাত্রীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে মঙ্গলবার।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর সারা বিশ্বের ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৪ হাজার মুসল্লি। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। সর্বনিম্নটি ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকার।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে জনপ্রতি ন্যূনতম খরচ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছে হজ এজেন্সিস অফ বাংলাদেশ (হাব)।
এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক বহন করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অর্ধেক করবে সৌদি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান এ বছর ৭৫টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে ৩১ হাজার যাত্রী বহন করবে। যাত্রী পরিবহনে গত বছরগুলোর মতোই বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে।
আরও পড়ুন:
পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেতুটির রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক বানানোর ঘটনা আলোড়ন তুলেছে গোটা দেশে। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা, চলছে নাট টাইট দেয়ার কাজ।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েকটি নাট খোলার ঘটনাটি ঘটে পদ্মা সেতুর জাজিরাপ্রান্তের ভায়াডাক্ট অংশে। সময় স্বল্পতায় সেতুর রেলিংয়ের সব নাট পরিকল্পনা অনুযায়ী শক্তভাবে এঁটে দেয়া যায়নি, সেতু উদ্বোধনের পর সেই কাজটি এখন চলমান।
রোববার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সেতুতে নির্মাণ শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। রেঞ্জ দিয়ে নাট টাইট দিচ্ছিলেন তারা। সেই সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ ধরনের আঠা।
মেরামত কাজে জড়িত শ্রমিকরা জানান, সেতুতে রেলিং স্থাপনে বোল্টের ওপর প্রথমে একটি ওয়াসার বসানো হয়। তারপর বোল্টের নাটটি ঘুরিয়ে আটকে দেয়া হয়। এই নাট যাতে সহজে খোলা না যায় সেজন্য বোল্টের মধ্যে নাটটি কিছুদূর ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে বিশেষ এক ধরনের গ্লু (আঠা)।
টিকটকারদের ওপর কর্মকাণ্ডে সেতুর নির্মাণ শ্রমিকদেরও প্রচণ্ড বিরক্ত দেখা গেছে। বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভিকে তাদের একজন বলেন, ‘এই সাইড থেকে দুইটা ফেলাইছে, ওই সাইড থেকে দু্ইটা ফেলাইছে, এরম করে বহু নাট ফেলাই দিছে। এখন নতুন করে লাগাইতে হইতাছে। বাঙালিরা টিকটক করছে, আর মনে করেন নাট ফেলাই দিছে।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর নাট খোলায় বাইজীদের সঙ্গী কায়সার
এই শ্রমিক বলেন, ‘এখন পদ্মা সেতুর নাট নিয়ে টিকটক করা শুরু করছে। তারে (গ্রেপ্তার টিকটকার বাইজীদ) উচিত শিক্ষা দেয়া উচিত, যে এই ক্ষতি করছে।’
কেন খোলা গেল নাট?
ভায়াডাক্ট অংশে পদ্মা সেতুর রেলিংটি বানানো হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে। এসব ক্ষেত্রে বোল্টের সঙ্গে নাট টাইট করার সময়, সেখানে এক ধরনের গ্লু বা আঠা ব্যবহার করতে হয়। তবে সেতু উদ্বোধনের আগে গ্লু দিয়ে সব নাট আটকানো সম্ভব হয়নি বলে জানান পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই সেতুর রেলিংয়ে লোহা নয়, ব্যবহার করা হয়েছে স্টেইনলেস স্টিল। ফলে রেলিংয়ের বোল্টের সঙ্গে নাট টাইট দেয়ার সময় বিশেষ এক ধরনের গ্লু (আঠা) দিতে হয়। তাতে নাটটি শক্ত করে আটকে যায়। কিন্তু এখনও গ্লু দেয়া হয়নি।’
পদ্মা সেতুতে রেলিংয়ের নাট টাইট দেয়ার সময় শ্রমিকদের ‘লকটাইট ২৬৩’ নামের একটি থ্রেডলকার ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
এই সরঞ্জামটি সম্পর্কে ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, বোল্টের সঙ্গে নাট টাইট দেয়ার সময় এটি ব্যবহার করলে সংযোগটি শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হয়। কোনো আঘাত বা কম্পন তৈরি হলেও নাটটি আর ঢিলে হয় না। উচ্চতাপে কিংবা তেল প্রয়োগেও সংযোগকে দুর্বল করা যায় না।
বোল্ট, নাট এগুলো ঠিকঠাক ও মেরামত করাকে সেতু রক্ষণাবেক্ষণের চলমান প্রক্রিয়া বলেও মন্তব্য করেন দেওয়ার আব্দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘সেতুর ওপর আমাদের আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেতুতে যান চলাচলের মাঝেই সেই কাজগুলো চলতে থাকবে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ভায়াডাক্ট অংশের কাজ শেষ করতে সময় স্বল্পতা ছিল বলে যে দাবি শ্রমিকরা করেছেন তা স্বীকার করেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী।
দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৬ জুন পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট অংশের রেলিংয়ের নাট-বোল্টের প্রথম চালান আসে। তারপর শুরু হয় এগুলোর লাগানোর কাজ। দীর্ঘ সেতুতে ২৩ জুন পর্যন্ত সেগুলো সেট করার কাজ পুরোপুরি শেষ করা সম্ভব হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে ২৪ তারিখে নিরাপত্তাজনিত কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি।’
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুতে নাট খোলা বাইজীদ পটুয়াখালীর, করতেন ছাত্রদল
তবে এরপরেও পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘নাট খুলে যে ভিডিও ছাড়লো সে প্রথমে রেঞ্জ দিয়ে নাটের প্যাঁচ হালকা করে পরে হাত দিয়ে ঘুরিয়ে খুলেছে।’
সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো বাইজীদের গাড়ি থেকে রেঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান দেওয়ান মো. আবদুল কাদের।
চিন্তিত নন বিশেষজ্ঞরা
নাট খুলে ফেলার ঘটনায় বিচলিত নন সেতুটি নির্মাণে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম শামীম জেড বসুনিয়া।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় থাকে না, লোহা দিয়ে আটকে রাখা, সেগুলো। কিন্তু ব্রিজের কোনো কিছু খোলার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ব্রিজের কোনো কিছুতে হাত দেয়ার সুযোগই নেই।’
ভিডিওটি দেখেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখনও কিছু কিছু টেম্পরারি স্ট্রাকচার আছে। সেগুলো আমরাই রেখেছি। সেগুলো খুলছে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে আমি আর যুক্ত নই।’
সেতুর কোনো ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, না, না, এটি খুব সামান্য বিষয়।’
পদ্মা সেতুতে নাট খুলে ভাইরাল হওয়া মো. বাইজীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা আইনে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন যানবাহন চলাচলের জন্য রোববার সেতু খুলে দেয়ার পর সকাল ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে বাইজীদের নাট খোলার ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর এটি আপলোড করা হয় টিকটকে।
বাইজীদকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘বাইজীদ ও তার বন্ধু কায়সার প্রাইভেট কারে করে পদ্মা সেতুতে যান। বাইজীদ গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। জাজিরা প্রান্তের ৩০-৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যে নেমে তিনি ও তার বন্ধু কায়সার রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে ফেলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। ব্যঙ্গ করে মানুষের ফিলিংসে (অনুভূতি) আঘাত করেন। পরে বাইজীদ ও কায়সার দুটি ভিডিও নিজেদের টিকটক অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন।
‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এটা একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এটা স্যাবোটাজের মতো আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আমরা বাইজীদকে দ্রুত অ্যারেস্ট করি। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করি। তবে কায়সার এখনও পলাতক’
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তার (বাইজীদ) কাছ থেকে ডিভাইস উদ্ধার করেছি। তার আরও কিছু ডিভাইস, আরও কিছু ভিডিও, আগের অ্যাক্টিভিটিজ দেখে মনে হয়েছে এটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ।
‘এই জিনিসটা এভাবে খোলার কথা না। এতবড় স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলার কথা না। ভিডিওতে আমরা সবাই দেখছি ইজিলি খুলে যাচ্ছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় আমরা মনে করছি এই কাজটা সেই করেছে, তার একটা প্ল্যান ছিল। বাকিটা তদন্তে আসবে। আপনারা যে ভিডিও দেখেছেন তার বাইরেও কিছু ভিডিও আমরা পেয়েছি।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই নাট হাত দিয়ে কোনোভাবে খোলার কথা না। কোনোভাবে সম্ভব না। ধরেই নিতে হবে, এই কাজটা তারা করেছে, তাদের সহযোগী আছে, তাদের প্ল্যান আছে।
‘তিনটা বিষয় এ ক্ষেত্রে ঘটেছে। মানুষের ফিলিংস, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এই তিনটার মধ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কাজটা হয়েছে। এখানে তার গিল্টিমাইন্ড আছে। যে কারণে আমরা মামলা দিয়েছি।’
বাইজীদ অপরাধ মানসিকতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কাজটা করলাম, পোস্ট ডিলেট করলাম, আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করলাম, টিকটক.. এগুলো দেখে বোঝা যায় গিল্টিমাইন্ড।
‘আমরা ব্রিজ অথরিটির সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছে এটা এভাবে হাত দিয়ে খোলা সম্ভব না। হাত দিয়ে খোলা সম্ভব না মানে অবশ্যই সে ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করেছে।’ বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের যে ধারায় মামলা হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
কী আছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ও ২৫ ধারায়
বাইজীদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় সিআইডির পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (খ) ও ২৫ (ঘ) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (খ) ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ (স্যাবোটাজ) কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউস, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।
এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, যে কেউ এই আইনের (বিশেষ ক্ষমতা আইন) অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার চেষ্টা করেন বা ষড়যন্ত্র করেন বা প্রস্তুতি নেন বা করতে চান, তাহলে তিনি সেই অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট শাস্তিতে দণ্ডিত হবেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিআইডির সাইবার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘কোনো যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধু হাত দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট-বোল্ট খোলা সম্ভব নয়। এটি একটি অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। পদ্মা সেতুর যারা নাট-বোল্ট খুলেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ জানায়, শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন মো. বাইজীদ নামের এক যুবক।
সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আইনটির যে ধারায় তার নামে মামলা হবে বলে জানানো হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
সংস্থাটির এক কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেছেন, বাইজীদের এই কাজের পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতে পারে।
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন সেই যুবক। পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন সেতুর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে। এমন অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ মামলা প্রক্রিয়াধীন। থানা কর্তৃপক্ষই বাদী হবে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুকে জাতীয় সম্পদ ও দেশের অহংকার উল্লেখ করে উচ্চ আদালত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ জানিয়েছে, যারা এমন জাতীয় সম্পদের বিরোধিতা করবে তারা জাতির শত্রু।
সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘পদ্মা সেতু আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটা আমাদের অহংকার। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে যারা থাকেন, তারা জাতির শত্রু, দেশের শত্রু, তাদের চিহ্নিত করা দরকার।’
পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে জারি করা রুলের শুনানিকালে এ মন্তব্য করে হাইকোর্ট।
পরে আগামীকাল মঙ্গলবার এ রুলের ওপর আরও শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেয় হাইকোর্ট।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
শনিবার দুপুরে মাওয়া প্রান্তে নামফলক উন্মোচনের মাধ্যমে দেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:যানবাহনের প্রচলিত অ্যাসিড ব্যাটারির মেয়াদকাল ছয় মাস থেকে এক বছর। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অথচ একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চলে পাঁচ থেকে ছয় বছর। এটি যানবাহন চালানোর খরচ কমিয়ে দেয়। পরিবেশও বাঁচায়।
এমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির থ্রি হুইলার বাজারে আনছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাঘ মোটরস’। আগামী জুলাইয়ে উৎপাদনে যাবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি জানান, দেশে এটি হবে প্রথম ইকো থ্রি-হুইলার ট্যাক্সি। এর নাম রাখা হচ্ছে ‘বাঘ’। গাজীপুরের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের তেলের বিকল্প নিয়ে ভাবতেই হবে। শুধু থ্রি-হুইলারই নয়, আগামী তিন বছরে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনও যুক্ত হবে বাঘ মোটরসের বহরে।’
গত মার্চে এ বাহনটিকে চলাচলের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। উচ্চ নিরাপত্তা ফিচার, কম খরচ ও উন্নত প্রযুক্তির এই গাড়ির দাম ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাঘ মোটরস জানিয়েছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের থ্রি হুইলারে তেমন গরম অনুভূত হয় না।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ মোটরস প্রথম কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি নিজস্ব প্যাটেন্ট দিয়ে, নিজস্ব ডিজাইনে নিজস্ব প্রকৌশলে দেশে গাড়ি উৎপাদন করছে। বর্তমানে দেশে অন্যরা যেসব গাড়ি উৎপাদন করছে, সেগুলো প্রযুক্তিসহ সব কিছুই অন্য দেশের। এখানে শুধু উৎপাদন হচ্ছে। আর আমাদের পেটেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজস্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ পরিবহন শতভাগ পরিবেশবান্ধব, কোনো দূষণ নাই, সৌরশক্তিতে চলে, গ্রিন এনার্জি ব্যবহার হয়। এমন হাজারটা কারণ আছে, যাতে মানুষ আমাদের এই বাঘ ইকো মোটরসের ইকো ট্যাক্সি ব্যবহার করবে।’
অ্যাসিড ব্যাটারির কারণে দেশে প্রায় ২ কোটি লিটার অ্যাসিড নির্গত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। ফলে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন উৎসাহিত করার সময় এসেছে।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ইকো থ্রি-হুইলারের ডিজাইন-ড্রইং করে পেটেন্ট করেছি। এটা পৃথিবীর প্রথম সোলার ইকো থ্রি-হুইলার, যেটা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে চলে। এটির পারমিশন পেতে আমাদের প্রায় ৩০ মাস সময় লেগেছে।’
এটির দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটা সিএনজি অটোরিকশার দাম এখন প্রায় ১৮ লাখ টাকা, সেখানে আমরা একটা ইকো থ্রি-হুইলার ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় দিচ্ছি। আমাদের একটা ব্যাটারি ৬ বছর পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হয় না। প্রচলিত যেসব অ্যাসিড ব্যাটারি আছে, ছয় বছরে সেখানে ১২টি ব্যাটারি প্রয়োজন হয়।’
২০২০ সালের এপ্রিলে বাঘ মোটরস ১১টি যান তৈরি করে। ডুয়াল পাওয়ার-ব্যাটারি এবং সৌরচালিত এ থ্রি-হুইলারে যাত্রীর নিরাপত্তায় বেশ কিছু ফিচার যুক্ত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে যাত্রীর সিটের সঙ্গে ‘প্যানিক বাটন’ রাখা রয়েছে। এই বাটনে চাপ দিলে গাড়ির গতি মুহূর্তেই ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এরপর ২০ মিনিটের জন্য গাড়িটি অচল হয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সতর্কবার্তাও পাঠাবে। এতে কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সির কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় করতে পারবে।
এতে থাকবে নিরাপত্তা ক্যামেরা, যা একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে যুক্ত থাকবে। সব ধরনের ভিডিও রেকর্ড ও সংরক্ষণ থাকবে সার্ভারে। থাকবে এমবেড করা রিয়াল-টাইম জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, যা থ্রি-হুইলারের রিয়াল-টাইম অবস্থান দেখাবে। চুরি ঠেকাতে থাকবে আলাদা প্রযুক্তিও।
গাড়িগুলোতে উচ্চমানের ইস্পাত ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সাধারণত বাস-কারে ব্যবহৃত হয়।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গাড়ি শতভাগ মেটাল বডির তৈরি। পুরো বডিই মোটরগাড়ির মতো করে তৈরি, যা যাত্রীকে অধিক নিরাপত্তা দেবে। ব্রেক ও লাইট ছাড়া পুরো গাড়ির দুই বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি থাকবে। গাড়িতে ওয়াইফাই সিস্টেম থাকবে, মোবাইল চার্জিং সিস্টেম থাকবে, জিপিএস থাকবে, মনিটর থাকবে।’
২০২৫ সালের পর বিশ্বে কোনো ডিজেলচালিত গাড়ি তৈরি হবে না। ২০৩০ সাল থেকে তৈরি হবে না কোনো অকটেন গাড়িও। সব গাড়িই বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে পরিণত হবে।
নিজস্ব রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে একটি ট্যাক্সি সার্ভিস হিসেবে কাজ করবে এই ইকো ট্যাক্সি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও এটি কেনা যাবে।
সাধারণ সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার এবং হিউম্যান-হলারের চেয়ে বড় চাকা থাকবে বাঘ ইকো ট্যাক্সিতে। পাশাপাশি অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম (এবিএস)-সহ একটি হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমও থাকবে। গাড়ির ছাদে থাকবে সোলার প্যানেল। এতে ব্যবহৃত একটি ৪৮০ ওয়াটের সোলার প্যানেল দিনের বেলায় ৪০ শতাংশ চার্জ হবে ব্যাটারিতে। যার ফলে অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার যেতে পারবে গাড়িটি।
প্রতি কিলোমিটারে এটি চলার খরচ হতে পারে ১ দশমিক ৩৩ টাকার মতো। সম্পূর্ণ চার্জে ১৫০০ ওয়াটের গাড়িটি ৯০ কিলোমিটার চলতে পারে। এতে চালকের দিনে খরচ হবে ১২০ টাকা। ব্যাটারির চার্জ শেষ হলেও চিন্তা নেই। ৬০ ভোল্টের ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগবে।
বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব চার্জিং পয়েন্টও বসানো হবে। চার্জিং পোর্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-সহ একটি মাইক্রো চিপ ইনস্টল করা থাকবে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পোর্টটি খোলা হবে। গাড়ির মালিক নির্দেশ দিলেই চার্জ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালুর দিনে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের স্বাভাবিক ভিড় দেখা যায়নি। অনেকে পদ্মা সেতু দেখতে সড়কপথে রওনা দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন লঞ্চসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণের জেলাগুলোর যোগাযোগে এতদিন ব্যবহার হয়ে আসা প্রধান মাধ্যম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে রোববার রাত ৮টায় গিয়ে যাত্রীদের কোলাহল দেখা যায়নি। অন্যান্য দিন এমন সময়ে ডেকে যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ থাকলেও লঞ্চ অনেকখানি ফাঁকাই দেখা যায়। কেবিনেরও বেশির ভাগ ভাড়া হয়নি।
টিকিট কাউন্টারের কর্মীরা বলছেন, অধিকাংশ লঞ্চেই আশানুরূপ যাত্রী নেই। ডেকের ধারণক্ষমতার অর্ধেক ও পূর্ণ হচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, লঞ্চ কী করে চলবে আর তাদের চাকরিইবা থাকবে কি না এই নিয়ে শঙ্কা জেগেছে এরই মধ্যে। তবে কেউ কেউ বলছেন, বরিশালের মানুষ নৌপথে শুয়ে-বসে যাত্রা করে অভ্যস্ত। তারা সড়কপথে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া যাবে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় কিছুদিন এমন মন্দা থাকতে পারে লঞ্চে।
পারাবত লঞ্চের সুপারভাইজার মো. শাহজালাল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা লঞ্চে যাওয়ার তারা লঞ্চেই যাবে। প্রথম দিন হয়তো সেতু দেখতে গিয়েছে। সেতুর উদ্বোধন হবে তাই অনেক লঞ্চ ও বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে আসতে পারেনি।’
‘লঞ্চে ৩৫০-৪০০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকলেও আজ দেড় শতাধিক যাত্রী হয়েছে। ঢাকা থেকে সর্বশেষ ট্রিপেও আমরা তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম।’
রেডসন-৫, এমভি কুয়াকাটা-১ ও ২-এর সুপারভাইজার রফিকুল ইসলাম রাজু নিউজবাংলাকে জানান, ‘রমজানের ঈদের পর থেকেই যাত্রী কম। ইদানীং তো আরও কম। সেতু হয়েছে এখন যাত্রী কমই থাকবে।’
পটুয়াখালীগামী পূবালী-৫ লঞ্চের মালিক আলী আজগর বলেন, ‘আজ লঞ্চে যাত্রী নেই বললেই চলে। ডেক একদম ফাঁকা। কেবিন তো ভাড়াই হয়নি। ঘাটে লঞ্চ নেই তাই এই অবস্থা। লঞ্চ বেশি হলে যাত্রীসংকটে ভুগতে হতে পারে।’
এমভি পারাবত-১৮ লঞ্চের মালিক ও সমিতির মহাসচিব শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘যাত্রীর চাপ কমা-বাড়ার ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এটা ঈদের সময় বলা যাবে। সেতু চলাচলের আজ প্রথম দিন। অনেকে শখের বসেও হয়তো দেখতে গেছেন।’
লঞ্চে যাতায়াতের সুবিধাগুলো উল্লেখ করে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ পথে খাবার ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা শুধু লঞ্চেই রয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে বাসগুলো সরাসরি গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো সময় খাবার বা পানি পাওয়া সম্ভব না। লঞ্চে যাত্রীরা এ সুবিধা পাবেন।’
সড়কপথে ভাড়া বেশি পড়বে বলেও যাত্রীরা লঞ্চ বেছে নেবেন বলে বিশ্বাস করেন এই লঞ্চ মালিক। বলেন, ‘লঞ্চ ভাড়া ৩৫০ টাকা আর সেখানে বাস ভাড়া পাঁচ শতাধিক৷ এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে লঞ্চেই যাত্রীরা দক্ষিণাঞ্চলে যাবেন।’
সুন্দরবন লঞ্চের মালিক ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইদুর রহমান রিন্টু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়েছে এখন সবাই দৌড়ে হয়তো চলে যাবেন। কিন্তু সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে যাত্রীরা লঞ্চেই ফিরে আসবেন। কেননা লঞ্চে সড়কপথের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি।’
যাত্রী কম থাকলেও লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে বরিশাল পর্যন্ত ভাড়া ডেকে ৩৫০, ৩৭০; এমনকি কোনো কোনো লঞ্চে ৪০০ টাকাও রাখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-টরন্টো রুটে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হচ্ছে ২৭ জুলাই। টরন্টো ফ্লাইটে ভ্রমণে ইচ্ছুকরা এখন থেকেই অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।
রোববার প্রতিষ্ঠানটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশ-বিদেশে অবস্থিত বিমানের যে কোনো সেলস্ সেন্টার, বিমান অনুমোদিত যে কোনো ট্রাভেল এজেন্সি, বিমানের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট www.biman-airlines.com ও কল সেন্টার ০১৯৯০৯৯৭৯৯৭ থেকে এ রুটের টিকিট কেনা এবং আনুষঙ্গিক সেবাগুলো গ্রহণ করা যাবে।
তবে কানাডা থেকে আপাতত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেনা যাবে না। বিষয়টি এখনও অ্যাকটিভেশন পর্যায়ে রয়েছে।
বিমান বলছে, প্রাথমিকভাবে ঢাকা-টরন্টো রুটে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালিত হবে। ঢাকা থেকে প্রতি বুধবার ও রোববার বিমানের ফ্লাইট টরন্টোর উদ্দেশে যাত্রা করবে। একই দিন টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইট ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। রুটটিতে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বিমানের বহরে থাকা বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ফ্লাইটটি তুরস্কের ইস্তানবুলে এক ঘণ্টার জন্য টেকনিক্যাল ল্যান্ডিং করবে। তবে ফিরতি ফ্লাইটটি সরাসরি ঢাকায় অবতরণ করবে বলে জানিয়েছে বিমান।
বাংলাদেশ থেকে ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণে একমুখী যাত্রার জন্য ভাড়া ঠিক করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৯০ হাজার ৫১০ টাকা। আর রিটার্ন টিকিটের ভাড়া ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৭০ টাকা।
প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের একমুখী ভাড়া ১ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ টাকা আর রিটার্ন ভাড়া ২ লাখ ৩৪ হাজার ৩৫৫ টাকা।
আর বিজনেস ক্লাসের ক্লাসে ভ্রমণে একমুখী ভাড়া শুরু হবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ১০০ টাকা এবং রিটার্ন টিকিটের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করা হয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৩০২ টাকা।
টরন্টো থেকে যারা ঢাকায় আসবেন তাদের জন্য ইকোনমি ক্লাসে একমুখী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯০ কানাডিয়ান ডলার আর রিটার্ন টিকিটের দাম ১ হাজার ২৩৩ কানাডিয়ান ডলার।
প্রিমিয়াম ইকোনমি ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ভাড়া ১ হাজার ২৩০ কানাডিয়ান ডলার এবং রিটার্ন টিকিটের দাম ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৭৮ কানাডিয়ান ডলার। আর বিজনেস ক্লাসের ক্ষেত্রে একমুখী ভাড়া ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬০ কানাডিয়ান ডলার এবং রিটার্ন টিকিটের দাম ধরা হয়েছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার ৭৮ কানাডিয়ান ডলার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য