ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে বিস্তারিত জানতে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বুধবার সকাল ১০টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহলের নানা ধরনের মত রয়েছে। সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি বরাবরই এই যন্ত্রের বিরোধিতা করে আসছে। এই ভোটযন্ত্র সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ১০০ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের, তবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নাই।’
ইভিএম চ্যালেঞ্জ ছোড়ার সময় এখনও হয়নি বলেও জানান তিনি।
ইভিএমের ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলারের ঘোষণাও উদ্ভট বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বুধবারের সভায় সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. জাফর ইকবাল, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম কায়কোবাদ, বুয়েটের মতিন সাদ আবদুল্লাহ, বুয়েটের ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অলোক কুমার সাহা, বিএমটিএফের পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর, আইডিয়া-২ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদেরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত রয়েছেন।
ইভিএম-সংশ্লিষ্ট ইসির আইটি দল, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সাবেক ও বর্তমান পরিচালক, এনআইডি উইংয়ের সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ নিয়ে প্রায় ৩০ জনকে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, বিশেষজ্ঞরা দেখবেন, মতামত রাখবেন। ইসির আইটি বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন। তারা এ বিষয়ে মত দেবেন। ইভিএমের ওপর কমিশন তাদের মতামত নেবে।
বৈঠকে ইভিএম প্রদর্শনীর পাশাপাশি সার্বিক কারিগরি দিক তুলে ধরা হবে। এরপর যন্ত্রটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেবে কমিশন।
দেশের নির্বাচনীব্যবস্থার দায়িত্ব পাওয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন এক মাসের মাথায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে। ২৩ মার্চ থেকে ১৮ এপ্রিল চার ধাপের সংলাপ হয়। সংলাপে ইভিএমের পক্ষে-বিপক্ষে বেশ কিছু মতামত আসে।
ইভিএমের বিষয়ে মঙ্গলবার সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচটি মিটিং করেছি। এখনও পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আরও মিটিং হবে। সেখানে পর্যালোচনা করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই। কালকেও কারিগরি মিটিং হবে।
‘আরও কয়েকটি বৈঠকে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গঠিত এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট চালু করে। সে সময় যে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেয়া হতো, তাতে ত্রুটি দেখা দেয়।
পরে রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে কমিশন নতুন আরেকটি যন্ত্র নিয়ে আসে। আর বর্তমান কমিশনের আমলে ব্যবহার করা হচ্ছে আরেক ধরনের যন্ত্র।
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ২ লাখ টাকা দামের বেশি উন্নত মেশিন তৈরি করে নিয়েছে এই কমিশন।
বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। এই যন্ত্রে দুটি ইউনিট। একটি নিয়ন্ত্রণ ইউনিট। আরেকটি ব্যালট ইউনিট। নিয়ন্ত্রণ ইউনিটে আঙুলের ছাপ মিললেই ব্যালট ইউনিটে সংশ্লিষ্ট ভোটারের ব্যালট পেপার ওপেন হয়।
যাদের আঙুলের ছাপ মেলে না, তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে ব্যালট ইউনিট ওপেন করে ভোট দিতে পারবেন, তবে মোট ভোটারের ১ শতাংশকে এই সুবিধা দিতে পারবেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে সুধী সমাবেশে যোগ দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। হুইল চেয়ারে করে তিনি সুধী সমাবেশে আসেন।
শনিবার সকাল ৮টার দিকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে ডা. জাফরুল্লাহকে দেখা যায়। এ সময় তার পড়নে ছিল সাদা-কালো রঙের শার্ট ও খাকি লুঙ্গি।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ১০টার দিকে তিনি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় যোগ দেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই সমাবেশে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
ফুরিয়ে এলো ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষার অবসান হলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন:আর কিছু মুহূর্ত। এরপরই বর্ণিল আয়োজনে ফলক উন্মোচিত হবে দেশের সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আয়োজনে যোগ দিতে রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রওনা হন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায়। ১০টায় যোগ দেন সেতুর মাওয়া প্রান্তের সুধী সমাবেশে। এরপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, সেতুর শুভ উদ্বোধন।
সকাল থেকেই সমাবেশে যোগ দিতে সুধীরা এসেছেন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ অতিথিরা সমাবেশস্থলে হাজির হয়েছেন। এখন সেখানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আগে থেকেই সেতু ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তার স্তর বাড়ানো হয়েছে। এরইমধ্যে সেতুর মাওয়া প্রান্তের সমাবেশস্থল থেকে ১ কি.মি. দূরত্ব পর্যন্ত আশপাশের এলাকায় সাধারণদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বন্ধ রয়েছে সকল দোকান পাট। আশপাশের অলিগলিতে উৎসুক সাধারণদের কিছু জটলা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টা থেকে কাউকেই সড়কে দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী সমাবেশস্থল ত্যাগ করার আগে সকল বাসিন্দাদের নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করার অনুরোধ জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি অনেক গণমাধ্যমকর্মীরাও নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।
মাওয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা গৌতম শীল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি বাজারে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় পুলিশ এসে বলল বাসায় চলে যান, এখানে বসা যাবে না। এই কথা শুনে বুঝেছি প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই ব্যবস্থা। এখন আমি বাসায় চলে যাচ্ছি।’
বাজার এলাকার পাশের একটি বাড়ির ফটক থেকে রাস্তার দিকে উৎসুক দৃষ্টি রাখা মনোয়ারা বলেন, বাসার কেউ বাইরে যাচ্ছে না, যারা বাইরে গিয়েছিল তারা এসে জানাল এখন সবার বাসায় থাকতে হবে। আমি একটু উঁকি দিয়ে দেখি আরকি কেমন অবস্থা। এইখান থেকেতো প্রধানমন্ত্রীকে দেখা যাবে না তাও দেখি আরকি।’
আরও পড়ুন:গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি এসে লাগছে পদ্মা সেতুতে। সেতু এলাকায় সকাল থেকে চলছে রোদ বৃষ্টির লুকোচুরি। এ নিয়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত দুই দফা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে।
শনিবার সেতু উদ্বোধনের দিন সকাল পৌনে ৯টার দিকে প্রথম দফা বৃষ্টি নামে। মিনিট না পেরোতেই তা থেমে যায়। আবারও রোদ হেসে ওঠে।
তবে পদ্মা সেতুর ঠিক ওপরে আকাশের রং এখন শরতের মতো। নীল আকাশে তুলার মতো উড়ছে সাদা মেঘ। মেঘের ওড়াউড়িতে কখনও পড়ছে ছায়া, কখনও কড়া রোদ্দুর।
নদীর পাড়ে বইছে শরীর জুড়ানো বাতাস। সকাল ঠিক ৯টা ২৯ মিনিটে আবারও নামে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। মিনিট দুয়েক স্থায়ী ছিল বৃষ্টি।
মাওয়াপ্রান্ত ছাড়াও বৃষ্টি হয়েছে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলেও। বৃষ্টির পানিতে ভিজেছে সভায় যোগ দিতে আসা অসংখ্য মানুষ।
পূর্বাভাস দিয়ে অবশ্য আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় সেতু এলাকায় বৃষ্টির শঙ্কা নেই, তবে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিকেলে বৃষ্টির পানি ছুঁয়ে যেতে পারে প্রমত্তা পদ্মার বুকে গড়ে ওঠা এই সেতুকে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘পদ্মা সেতু এলাকায় শনিবার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা খুবই কম। এই এলাকায় দিনে রৌদ্রোজ্জ্বল থাকার সম্ভাবনা বেশি। তবে বেলা ৩টার দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকতে পারে।’
আরও পড়ুন:বর্ণিল সাজে সেজেছে পদ্মার পাড়। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবে মেতেছে জনতা। পদ্মার দক্ষিণপ্রান্তে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগের জনসভাস্থলে এখন জনস্রোত। ভোর রাত থেকে দেশের নানা অঞ্চল থেকে মানুষ আসছে এই সভায় যোগ দিতে।
বাস, ট্রাক, লঞ্চ ও নৌকায় মানুষ দলে দলে জনসভায় হাজির হচ্ছে। জনসভাস্থল থেকে আশপাশের সব দিকেই মানুষ আর মানুষ। বিভিন্ন স্লোগান, বর্ণিল সাজে উপস্থিত হচ্ছেন সবাই।
সেতুর উত্তর প্রান্তে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর দক্ষিণ প্রান্তে কাঁঠালবাড়ী। শনিবার সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন। এরপর সেতুর ফলক ও ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনসভাস্থলে দেখা গেছে, সোয়া ৯টায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ দক্ষিণ অঞ্চল থেকে একের পর এক লঞ্চ এসে ভিড়ছে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে। মিছিলে মিছিলে মানুষের বিশাল সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে জনসভাস্থলে বৃষ্টি নেমেছে। আচমকা বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে দিকবিদিক ছুটছেন নেতাকর্মীরা। আশপাশে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার পর মাওয়ার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সকাল ১০টার দিকে তিনি মাওয়া প্রান্তে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় যোগ দিয়েছেন সুধী সমাবেশে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই সমাবেশে। ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
সমাবেশস্থল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায় নিরাপত্তাকর্মীদের। সমাবেশস্থলের কাছাকাছি আসতেই অতিথিদের পথ চেনাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা যায় তাদের।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গেই পাঠানো হয় গাড়িতে ব্যবহারের বিশেষ স্টিকার। লালরঙা বা সবুজরঙা স্টিকার দেখে নিরাপত্তাকর্মী অতিথিদের চিনিয়ে দিচ্ছিলেন সুধী সমাবেশস্থলে প্রবেশের মুখ। ওই সময় তৎপরতা দেখা গেছে পর্যটন করপোরেশনের কর্মীদেরও। আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়িতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সকালের খাবার।
সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়। তাদের মধ্যে আছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীসহ অনেকে।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান।
অন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন নেতাকে।
জমকালো এই আয়োজনের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসবেন না বলেই আগেই জানিয়েছেন।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আছেন বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আরও পড়ুন:ফুরিয়ে আসছে ক্ষণগণনার পালা। আর অল্প সময়ের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উচ্ছ্বাসে মুখর গোটা মাওয়া প্রান্ত। অপেক্ষা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনের।
দুর্নীতিচেষ্টার মিথ্যে অভিযোগ এনে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর নিজস্ব অর্থায়নের এই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার নেতৃত্বেই নির্মিত হয়েছে সেতুটি। আজ তার হাত ধরেই খুলে যাবে সেতুটি।
এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণাঞ্চল সরাসরি যুক্ত হচ্ছে রাজধানীর সঙ্গে। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের উদ্দেশে হেলিকপ্টারে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যোগ দেবেন সুধী সমাবেশে।
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাড়ে তিন হাজার নাগরিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এই সমাবেশে। এর মধ্যেই খুলে দেয়া হয়েছে সুধী সমাবেশ স্থল। আসতে শুরু করেছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা।
দূরদুরান্ত থেকে যারা অনুষ্ঠানস্থলে আসছেন, তারা একটু আগেই রওনা হয়েছেন। ফলে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হয় অতিথিদের আগমন।
সমাবেশস্থল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক বা এক্সপ্রেসওয়েজুড়ে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে নিরাপত্তাকর্মীদের। সমাবেশস্থলের কাছাকাছি আসতেই অতিথিদের পথ চেনাতে ব্যতিব্যস্ত দেখা গেছে তাদের।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গেই পাঠানো হয়েছে গাড়িতে ব্যবহারের বিশেষ স্টিকার। লালরঙা বা সবুজরঙা স্টিকার দেখে নিরাপত্তাকর্মী অতিথিদের চিনিয়ে দিচ্ছিলেন সুধী সমাবেশস্থলে প্রবেশের মুখ। ওই সময় তৎপরতা দেখা গেছে পর্যটন করপোরেশনের কর্মীদেরও। আমন্ত্রিত অতিথিদের গাড়িতে তারা তুলে দিচ্ছিলেন সকালের খাবার।
এখন পর্যন্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুষ্ঠানস্থলে দেখা গেছে। এদের মধ্যে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে আছেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান।
অন্য দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা গেছে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন নেতাকে।
জমকালো এই আয়োজনের বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সাত নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা আসবেন না বলেই আগেই জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধে অন্যতম অনুঘটক হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে দায়ী করা গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বাদ পড়েনি আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা থেকে। তিনি আসবেন কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছেন সংবাদমাধ্যমকর্মীরাও।
সুধী সমাবেশ শেষে বেলা ১১টার দিকে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন সরকারপ্রধান। পদ্মা সেতু নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেয়ার কথাও রয়েছে তার।
বেলা ১১টা ১২ মিনিটে টোল দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ওই সময় কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থেকে নেমে সেতুতে পায়চারি করতে পারেন তিনি।
বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেই পদ্মার সেতুর আরেকটি উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-২ উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাঁঠালবাড়ীর ইলিয়াছ আহমেদ চৌধুরী ফেরিঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় দলপ্রধান হিসেবে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার সময় পদ্মায় নৌ মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। ৩১টি বিমান ও হেলকপ্টার নিয়ে ফ্লাইং পাস্ট করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বিমানবাহিনী। এই বহরে আছে মিগ-২৯ এর মতো যুদ্ধবিমানও।
উদ্বোধনের পর রোববার ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু। এতে ফুরাবে ফেরি পারাপারের বিড়ম্বনা, বাঁচবে সময়। বদলে যাবে দৃশ্যপট, আরও সচল হবে দেশের অর্থনীতির চাকা।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এই বিশাল বিনিয়োগের প্রাপ্তি হিসাবের দুটি উপায় আছে। একটি হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বাড়তি প্রাপ্তি বিবেচনা, অন্যটি সেতু দিয়ে পারাপার হওয়া বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্দিষ্ট হারে টোল আদায়ের মাধ্যমে সরাসরি খরচ উঠিয়ে আনা।
কোন উপায়ে কত বছরে পদ্মা সেতুর ব্যয় উঠে আসতে পারে, সরকারিভাবে তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায় না। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সমীক্ষা এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নানা তথ্য-উপাত্ত থেকে এ বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়।
এই সেতু দিয়ে দেশের ২৩ জেলায় প্রতিদিন ২১ হাজার ৩০০ যানবাহন চলাচল করবে, যা ২০২৫ সাল নাগাদ বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৬০০। এদের সবার থেকে টোল বাবদ যে আয় হবে, শুধু তা দিয়ে সেতুর ব্যয় উঠে আসতে সময় লাগবে সাড়ে ৯ বছর।
অন্যদিকে সেতু চালু হওয়ার কারণে আগামী এক বছর বা ১২ মাসে অর্থনীতিতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বাড়তি প্রাপ্তি যোগ হবে চলতি বাজারমূল্যে ৪২ হাজার ৩৬২ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা, যা জিডিপির ১.২ শতাংশের সমান।
এই বিবেচনায় মাত্র ৯ মাসে উঠে আসবে ৩১ হাজার ৭৭১ কোটি ৬৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা, অর্থাৎ অর্থনীতিতে মাত্র এই ৯ মাসের প্রাপ্তি হবে পদ্মা সেতুর মোট ব্যয়ের সমান।
যে তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব
বিশাল বিনিয়োগের প্রকল্প শুরু করার আগে সেটি অর্থনৈতিকভাবে কতটা সুফল দেবে এবং তার প্রাপ্তি কতকাল ধরে অর্থনীতি পেতে থাকবে, তার আগাম সমীক্ষা করা হয়ে থাকে। প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে এ ধরনের সমীক্ষায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশি স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকার এ মূল্যায়নে সম্পৃক্ত করেছে বিশ্বব্যাংক ও জাইকাকে। জাতীয়ভাবে সরকারও প্রকল্পের সমীক্ষা চালায়।
সম্ভাব্যতা জরিপে বলা হয়, সেতুটি নির্মিত হলে দেশের জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এতে ওই অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়বে ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে ৭ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সমীক্ষাতেও বলা হয়, জিডিপি বাড়বে ১ দশমিক ২ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় বলা হয়, পদ্মা সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে ১ শতাংশ হারে।
সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক মন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতুর প্রভাবে জিডিপি ১ দশমিক ২ থেকে ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ার তথ্য দেন। এ ছাড়া দেশীয় একাধিক গবেষণা সংস্থার দাবি, জিডিপি বাড়বে দেড় থেকে দুই শতাংশ পর্যন্ত।
টোল থেকে ব্যয় তুলে আনার হিসাব
সেতু পারাপারে টোল হার কার্যকরের মাধ্যমে সরাসরি ব্যয় তুলে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) একটি নিজস্ব গণনা পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিকে যে এলাকায় সেতু নির্মিত হবে, ওই এলাকায় ফেরি পারাপার থেকে দৈনিক যে পরিমাণ টোল আদায় করা হয়, সেতু পারপারে তার দেড় থেকে দুই গুণ টোল ধার্য করার নিয়ম রয়েছে।
পদ্মা সেতুতেও টোল হার নির্ধারণ করার আগে ফেরিতে কী পরিমাণ টোল আদায় হয় এবং কী পরিমাণ যানবাহন পারাপার হয়, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) থেকে এ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই সংস্থার তথ্য মতে, ২০২০ সালের নভেম্বরে মাওয়া এবং জাজিরার মধ্যে ফেরিতে যানবাহন পারাপারে দৈনিক ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
সেতু বিভাগ (বিবিএ) এ পরিসংখ্যানকে ভিত্তি ধরে প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা টোল আদায়ের আশা করছে। অর্থাৎ বিআইডব্লিউটিএর আয়ের দেড় গুণের বেশি এবং দুই গুণের কম আয়ের একটি মধ্যবর্তী ভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে টোল হার যেটিই নির্ধারণ করা হোক না কেন, ব্যয় উঠে আসার সময়সীমার ক্ষেত্রে পরিষ্কার কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে নানা গণমাধ্যমে বিচ্ছিন্নভাবে খবর হয়েছে। এতে সেতু বিভাগের প্রাথমিক সমীক্ষায় বলা হয়, ৩৫ বছরে উঠে আসবে পদ্মা সেতুর ব্যয়। একই ইস্যুতে দায়িত্বশীলদের কেউ কেউ বলছেন, সময় লাগবে ২০ থেকে ২৫ বছর এবং কেউ আবার ১৭ বছরের কথা বলছেন।
নিউজবাংলা এসব তথ্যের সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে দেখেছে, টোল থেকে পাওয়া সমুদয় হিসাব বিবেচনায় নিলে সেতুর ব্যয় তুলে আনতে ৯ বছর ৫ মাস ৬ দিনের বেশি লাগবে না।
তবে এ হিসাবে সেতুর পরিচালন খরচ এবং এর সঙ্গে ১৪৭ কিস্তির ১ শতাংশ সুদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টোল হিসাবে যে রাজস্ব আসবে, সে হিসাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয় উঠে আসার কথা ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। সেতুটি নিয়ে যখন প্রজেক্ট ডিজাইন করা হয়েছে, তখন এমন সম্ভাব্যতার কথাই বলা হয়েছে। তবে আদায় পর্যায়ে টোল হার বিবেচনায় এই সময় আরও কমবেশি হতে পারে।’
অন্যদিকে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোরুল ইসলাম মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ১৭ বছরে উঠে আসতে পারে পদ্মা সেতুর ব্যয়।
তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হারে সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। ফিজিবিলিটি স্টাডিতে বলা হয়েছে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে, কারণ মোংলা পোর্ট যে এত শক্তিশালী হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে, সেগুলো কিন্তু ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি।’
জিডিপি বিবেচনায় সেতু থেকে বাড়তি প্রাপ্তির হিসাব
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সবশেষ পূর্ণাঙ্গ হিসাব আছে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের। সেখানে টাকার অঙ্কে মোট দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ১৮৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
আগামী বছর পদ্মা সেতুর প্রভাবে জিডিপি দেড় শতাংশ বাড়লে অর্থনীতিতে প্রথম বছর এর বাড়তি অর্থমূল্য দাঁড়াবে ৫২ হাজার ৯৫২ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। জিডিপি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়লে সার্বিক অর্থনীতিতে ৪৫ হাজার ৮৯২ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার টাকার বাড়তি স্ফীতি ঘটবে। আর জিডিপি ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়লে টাকার অঙ্কে জিডিপির বাড়তি প্রাপ্তি আসবে মোট ৪২ হাজার ৩৬২ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। জিডিপি সর্বনিম্ন ১ শতাংশ ধরা হলে আগামী বছর জিডিপির অতিরিক্ত প্রাপ্তি মিলবে মোট ৩৫ হাজার ৩০১ কোটি ৮৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, ‘আমরা সম্ভাব্যতার বড় জায়গাটায় না গেলাম, সর্বনিম্ন সমীক্ষাটিই যদি গ্রহণ করি, তাও তো জিডিপি বাড়ার হার ন্যূনতম ১ শতাংশ হবে। এটাই হলো আমাদের পদ্মা সেতু, যা বাংলাদেশের সক্ষমতা, সমৃদ্ধি, অহংকার ও সাহসের প্রতীক, যার স্বপ্ন দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘উত্তরবঙ্গে যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছিল, যার ধারাবাহিকতা এখনও আছে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে আগামীর অর্থনীতিতে তার চেয়েও বড় বিস্ফোরণ ঘটাতে যাচ্ছে।
সম্ভাব্যতার ভিত্তি যেখানে
পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দক্ষিণ-পর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৭টি জেলার কৃষি খাত বেগবান হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) খাতে বিপ্লব ঘটবে। এতে শিল্পোৎপাদন বাড়বে। দ্রুত পণ্য আনা-নেয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ার প্রভাবে সারা দেশের বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে শিক্ষা ব্যবস্থায়। এ ছাড়া কুয়াকাটা, সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন খাত বিকশিত হবে। ফলে হোটেল-মোটেল-রেস্তোরাঁ গড়ে উঠবে।
মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর ও এনার্জি হাব, ইপিজেড, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বরিশাল-পিরোজপুরে শিপ বিল্ডিং শিল্পসহ সার্বিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উল্লম্ফন দেখা যাবে কর্মসংস্থানে।
এখন জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের যেসব মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকামুখী হয়েছে, তারা এলাকায় ফিরে যাবে এবং সেখানেই উৎপাদন, সেবা ও বাণিজ্যমুখী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবে। এসবেরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জিডিপি এবং টোল আদায়ে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য