রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় তেলের লরি বিকল হয়ে পড়লে তা সারানোর কাজ করছিলেন মোহাম্মদ হৃদয় নামের ১৮ বছরের এক তরুণ। তিনি লরির নিচে, চাকার পাশে কাজ করার সময় হঠাৎই লরি গড়িয়ে তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সোমবার রাত ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
রামপুরা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক(এসআই) ফারুক হোসেন জানান, তারা খবর পেয়ে বনশ্রী এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যান। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়।
নিহতের দাদা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হৃদয় মোটর মেকানিকের কাজ করত, রাতে রামপুরা বনশ্রী এলাকায় একটি তেলের লরির নিচে কাজ করার সময় ওই তেলের লরিতে চাপা পড়ে। ওইখানেই ও মারা গেছে বলে আমরা জানতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, নিহতের গ্রামের বাড়ি ভোলার তজুমুদ্দিন থানার গোশকপুর গ্রামে। তার বাবার নাম নীরব।
হৃদয় নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা থানার পাগলা ট্রাকস্ট্যান্ডে থাকতেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় হৃদয়।
হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন আগামী ১৬ আগস্ট ঠিক করেছে ঢাকার একটি আদালত।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এ বদলির আদেশ দেন এবং অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন তারিখ ঠিক করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, অমিতাভ অধিকারী, প্রীতিশ কুমার হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি, অনঙ্গ মোহন রায়, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, রাজিব সোম, সুব্রত দাস, অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা, অনিন্দিতা মৃধা এবং শংখ ব্যাপারী।
এদের মধ্যে শংখ ব্যাপারী, সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল, অনিন্দিতা মৃধা কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে ২৭ মার্চ এ মামলার পলাতক ১০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলা থেকে জানা যায়, দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার নামে-বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। এই টাকা আর ফেরত না আসায় ওই চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
প্রতিষ্ঠান চারটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)।
টাকা বের করার আগে শেয়ার কিনে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।
তিনি দেশ ছাড়েন ২০১৯ সালের শেষ দিকে। আর এই আর্থিক কেলেঙ্কারি জানাজানি হয় ২০২০ সালের শুরুতে।
পলাতক থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, পি কে হালদার নামে-বেনামে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ হাজার ৭৯০ শতাংশ জমি কিনেছেন।
বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এই সম্পদের মূল্য ৯৩৩ কোটি টাকা হলেও এই সম্পদের বাজারমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯১ কোটি ৭৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা।
এর মধ্যে নিজের নামে তিনি জমি কিনেছেন ৪ হাজার ১৭৪ শতাংশ। এর দাম দলিলে দেখানো হয়েছে ৬৭ কোটি ৯৪ লাখ ২০ হাজার ৯৩০ টাকা। অথচ এই সম্পদের বর্তমান মূল্য ২২৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, প্রশান্ত তার নিকটাত্মীয় পূর্ণিমা রানী হালদারের নামে উত্তরায় ১২ কোটি টাকা দামের একটি ভবন করেছেন।
আর পূর্ণিমার ভাই উত্তম কুমার মিস্ত্রির নামে তেজগাঁও, তেজতুরী বাজার ও গ্রিন রোডে ১০৯ শতাংশ জমি কেনেন।
যার বাজারমূল্য ২০০ কোটি টাকা। প্রশান্ত তার কাগুজে কোম্পানি ক্লিউইস্টোন ফুডসের নামে কক্সবাজারে দুই একর জমির ওপর আটতলা হোটেল তৈরি করেছেন।
যার আর্থিক মূল্য বর্তমানে ২৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া পি কের খালাতো ভাই অমিতাভ অধিকারী এবং অনঙ্গ মোহন রায়ের নামে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০৪ শতাংশ জমি কিনেছেন, যার দাম ১৬৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের বরাত দিয়ে দুদক প্রতিবেদনে বলেছে, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তার ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেন, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন:নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ওই ছাত্রীর বাবা মামলা করেন। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন সিদ্ধিরগঞ্জের বউবাজার এলাকার মোহাম্মদ নাঈম, মো. যুবরাজ, মো. দিপু ও মো. পিয়াস। তবে মামলার আরেক আসামি মোহাম্মদ রোহান পলাতক।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
এজাহারে বলা হয়েছে, ‘ওই কিশোরী স্থানীয় একটি মাধ্যমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। নাঈমের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল। গত ২৯ জুন নাঈম তাকে সিদ্ধিরগঞ্জে রোহানদের বাড়ির ছাদে ডেকে নেয়। এ সময় নাঈমসহ তার বাকি চার বন্ধু ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে।’
মামলায় আরও বলা হয়, ‘ঘটনার পর ভয় পেয়ে ওই কিশোরী ধর্ষণের বিষয়টি পরিবারের কাউকে জানায়নি। বুধবার মা-বাবাকে বিষয়টি জানালে তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রাতে অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর পরই সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকে আটক করা হয়।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আবু বকর সিদ্দিক জানান, পলাতক আসামি রোহানকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। বাকি আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার পর ওই ছাত্রীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় একটি ব্রিজের নিচ থেকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গঙ্গাচড়া বাজারসংলগ্ন ভুটকা ব্রিজের নিচের পানি থেকে বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
৮০ বছরের মাহের উদ্দিনের বাড়ি ওই একই উপজেলায়। স্থানীয় একটি বাজারে তার দোকান ছিল।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে স্থানীয়রা ব্রিজের নিচে মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করে।
পরিবারের বরাতে ওসি জানান, বুধবার বিকেলে তিনি বাড়ি থেকে দোকানে যান। রাত ১১টার দিকে দোকান বন্ধ করে আর বাড়ি ফেরেননি। সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।
আরও পড়ুন:১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় যমুনা ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক সওগাত আরমানকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
তিনি বলেন, ‘১২ কোটি ১৬ টাকা আত্মসাতের মামলায় আসামি সওগাত আরমানকে জামিন দেয়নি হাইকোর্ট। তার জামিন আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয় আদালত।’
তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. মুজাহিদুল ইসলাম।
মামলা থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ জুলাই সকালে দুদকের বগুড়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের কর্মকর্তারা ব্যবস্থাপক আরমানকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের হেফাজতে নেন।
সওগাত আরমান যমুনা ব্যাংকের বগুড়া শাখায় ম্যানেজার (ব্যবস্থাপক) হিসেবে কর্মরত থাকাকালে বিভিন্ন সময়ে জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যের অ্যাকাউন্টে ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকা সরিয়ে নেন। পরে সেই টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করেন তিনি। এ অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে সওগাত আরমানের নামে মামলা করে। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন একপাশে হেলে পড়ার ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইইডির এক নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভবনের কাজ শেষ না হতেই ভবনটি ৫-৬ ইঞ্চি হেলে পড়ে। বিষয়টি নজরে এলে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। কিছুদিন পর হেলে পড়া ভবনটি সোজা করার জন্য ‘অভিনব পদ্ধতি’তে আবার কাজ শুরু করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ভবনটি সোজা করতে যে পাশে হেলে গেছে তার বিপরীত পাশে খনন করা হচ্ছে ১৪ ফুট গভীর খাল। অন্য পাশে বাঁশের পাইলিং দিয়ে ১২ ফুট চওড়া ও ১৪ ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁধ, যা সম্পূর্ণ প্রকৌশল বিদ্যাবহিভূর্ত।
জানতে চাইলে ইইডির খুলনা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের কাজ চলছে। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৮ জুন স্কুলভবন হেলে পড়ার ঘটনায় ইইডির খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আ. ট. মারুফ আল ফারুকীর নেতৃত্বে তদন্তদল গঠন করা হয়। এ তদন্তদলে রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রধান কার্যালয়) মীর মুয়াজ্জেম হুসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী (খুলনা) মু. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) এস এম সাফিন হাসান ও সহকারী প্রকৌশলী রতিশ চন্দ্র সেন।
জানা যায়, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শাহ নাইমুল কাদের ইইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকাকালে এ প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। এখনও তিনি এ প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার প্রধান প্রকৌশলী শাহ নাইমুল কাদেরকে ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ইইডি থেকে জানা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) বাস্তবায়নাধীন ‘নির্বাচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারতলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয় ২০১৮-১৯ অর্থবছর। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:ফরিদপুর সদরে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতিকে প্রধান করে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত সবুজ মোল্যার বাবা শহীদ মোল্যা বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার সময় সোমবার রাত ১১টার দিকে শহরতলির বায়তুল আমান এলাকায় সবুজকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এ সময় তার বাম হাত কনুইয়ের নিচ থেকে আলাদা হয়ে যায়।
পরে সহযোগী ও স্থানীয়রা সবুজকে উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অস্ত্রোপচারের সময় রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
২৮ বছরের সবুজের বাড়ি সদরের ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের কাজের মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকায়। বায়তুল আমান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। বায়তুল আমান বাজারে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবস্যা করতেন।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই নিহত সবুজের বাবা শহীদ মোল্যা কোতয়ালী থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেন অনু, সিদ্দিক শেখ, আবির হোসেন রুমন মৃধা, শহীদ মোল্লা, মিরান, মো. জিকু, জুয়েল, সজিব, রাকিব মোল্লা, লিয়াকত হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সবুজ বায়তুল আমান বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করে আসছেন। সম্প্রতি সবুজ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ লাইনের ব্যবসা শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেন অনু এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে তাকে হুমকি ও বাধা দেন।
ব্যবসা বন্ধ না করলে গত কয়েক দিন আগে সবুজকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন অনু।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, এরই মধ্যে বুধবার রাতে সবুজ তার বন্ধু প্রত্যয় ও ফারুকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বিলমাহমুদপুর এলাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনুসহ তার সহযোগীরা সবুজকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন।
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়। সেখানে অস্ত্রোপাচারের সময় সবুজের মৃত্যু হয়।
সবুজের বাবা শহীদ মোল্যা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে হুমকি দেয়ার পর থেকে বার বার বলছি যে, তুই ব্যবসায় ছেড়ে দে, অনুরা ভাল না। তুই সাবধানে চলাফেরা কর। ওরা আমার ছেলেকে মেরেই ফেলল। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেন অনু পলাতক। ফলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে কথা হয় তার বড় ভাই স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আওয়াল হোসেন তনুর সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সবুজ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে সূত্র থেকেই এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে।’
তার ভাই অনু হত্যার সঙ্গে জরিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই সরকারবিরোধী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে ষড়যন্ত্রের শিকার বানানো হয়েছে। আমার ভাই এ হত্যায় জড়িত নয়।’
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে প্রতিবেশী যুবককে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় একই গ্রামের অভিযুক্ত ৪৫ বছরের মো. মাহফুজকে আটক করেছে পুলিশ।
উপজেলার পশ্চিম গেরাপচা গ্রামে বুধবার রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ২৬ বছরের আবু সাঈদের বাড়ি নালিতাবাড়ীর পশ্চিম গেরাপচা গ্রামে। তিনি বৈদ্যুতিক লাইন মেরামতের কাজ করতেন। অভিযুক্ত মাহফুজ দিনমজুরের কাজ করতেন।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল।
ওসি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মাহফুজ জানিয়েছেন, ১৮ থেকে ১৯ বছর আগে দিনাজপুরের মিনারার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিন বছর আগে মিনারা কাজ করতে ওমানে যান। দুই বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন। এর পর থেকেই সাঈদের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। সাঈদ প্রায়ই তাদের বাড়িতে আসতেন। এ বিষয় নিয়ে মিনারার সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হত।
পরে বনিবনা না হওয়ায় মিনারা ৯ মাস আগে তাকে তালাক দিয়ে চার সন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি দিনাজপুরে চলে যান। এরপর থেকেই সাঈদের উপর প্রতিশোধ নিতে চান তিনি। এ কারণে প্রতিবেশী সাঈদের সঙ্গে তিনি সখ্যতা গড়ে তোলেন।
পরিকল্পিতভাবে সাঈদকে হত্যা করতে বুধবার রাতে সাঈদকে মাছ ধরতে নিয়ে মাঠে যান মাহফুজ। ১১টার পর ফিরে একসঙ্গে স্থানীয় দোকানে দুজন চা খান ও ধূমপান করেন।
এর পরেই সাইদ স্থানীয় দোলোয়ার হোসেন বাচ্চুসহ দুই-তিনজনের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় দূর থেকে সাঈদকে ডেকে নিয়ে মাহফুজ আকস্মিক দা দিয়ে তার ঘাড়ে পরপর দুটি কোপ দেয়। এতে সাঈদের মাথা শরীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ওসি জানান, সাইদের চিৎকার শুনে আশপাশের মানুষ ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পর মাহফুজ পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের নয়ানিকান্দা এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়।
ওসি বছির আহমেদ বলেন, ‘মাহফুজ হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য