ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৫ জুন থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন ১০টি অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে করপোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের চতুর্দশ বোর্ড সভায় মেয়র এ তথ্য জানান।
তাপস বলেন, ‘আমাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। এজন্য আমরা মনে করি, আমাদের আরও করণীয় রয়েছে এবং সেভাবেই এবারের কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছি। কর্মপরিকল্পনার আলোকে ১৫ জুন থেকেই কার্যক্রম আমরা পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু করব। আমাদের ১০টি অঞ্চলে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য আমরা এরই মাঝে জানিয়েছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব। এছাড়াও আমাদের চিরুনি অভিযান পরিচালিত হবে।’
গতবারের তুলনায় এবার বেশি সময় ধরে চিরুনি অভিযান চালানো হবে জানিয়ে ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘গতবার আমরা এক মাস নিয়ন্ত্রণকক্ষ পরিচালনা করেছিলাম। এবার সেটা আমরা দুই মাস ধরে পরিচালনা করব। এই নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে আমরা চিরুনি অভিযানগুলো তদারকি করব।’
এ সময় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘আপনারা যারা বাসাবাড়ির মালিক এটা আপনাদেরই দায়িত্ব যে আপনার আঙিনা, ছাদে, টবে পরিত্যক্ত জায়গায় যাতে কোনো পানি না জমে সেটা খেয়াল রাখা। বৃষ্টি হলে কোথাও পানি জমেছে কিনা সেটা দেখবেন। পানি জমে থাকলে সেটা ফেলে দিন। তিন দিনের জন্য অপেক্ষা না করে নিয়মিত জমা পানি ফেলে দিন।’
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তুলনামূলক সফলতার জন্য মেয়র তাপস বোর্ড সভায় কাউন্সিলরদের ধন্যবাদ জানিয়ে এবার আরও বেশি সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বোর্ড সভায় করপোরেশনের কাউন্সিলররা ছাড়াও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর রায়েরবাজারে ছুরিকাঘাতে আহত ২৩ বছরের রবিন ওরফে বক্কর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহতের বোন সোমা আক্তার বলেন, ‘আমার ভাই মোহাম্মদপুর একটি জুসের কোম্পানিতে চাকরি করত। সে পরিবার ও একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে এলাকায় থাকতেন।
‘যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা এক সময় আমার ভাইয়ের সঙ্গে চলাফেরা করত। মেয়ে সংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে আমার ভাইকে খুন করা হয়েছে। বন্ধু আলামিন রায়েরবাজার বটতলা পুলপারে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে ৩/৪ জন মিলে আমার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে।’
সোমা বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার বাবা দেলোয়ার হোসেন মামলা করেন।’
এর আগে বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছুরিকাঘাতের এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় রবিনকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিলশাদ নামে সিএনজি চালকের মাধ্যমে বিকেলে সোয়া ৬টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে তার চিকিৎসা দেয়া হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রবিনের পেটে, পিঠে চার থেকে পাঁচটি ছুরিকাঘাতের জখম রয়েছে। তার অতিরিক্ত রক্তখন হয়েছে।
রবিনের বন্ধু বাবু জানান, রবিনসহ তারা তিনজন রায়েরবাজার বটতলা এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী মিঠুর ছেলেসহ ৫/৬ জন তাদের পথ রোধ করে। সেখান থেকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাশের রাস্তায়, সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
ঘটনার আগের দিন ওই এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। এর কারণেই এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তার বন্ধুরা জানিয়েছেন।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রবিন চিকিৎসা নেয়া অবস্থায় আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান।’
আরও পড়ুন:রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়কে পশুবাহী ট্রাকচাপায় এক পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. রতন হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। তিনি ঢাকা এসপিবিএন ১-এ কর্মরত ছিলেন।
আদাবর থানার উপপরিদর্শক মাধব চৌধুরী জানান, সকালে পশুবাহী একটি ট্রাক ওই কনস্টেবলের মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। আশপাশের মানুষ তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
তিনি জানান, পশুবাহী ট্রাকটি নিয়ে চালক পালিয়ে গেছেন। ট্রাকটি শনাক্ত ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
কোরবানির পশুর ক্রেতারা যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সে লক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে বৃহস্পতিবার এ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।
পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব হাটে কার্যক্রম চলবে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের। এর মাধ্যমে গরুকে ওষুধ খাইয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হবে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে কর্মকর্তাদের সঙ্গে একজন পশু চিকিৎসক থাকছেন। তিনি সন্দেহ হলেই যেকোনো পশুকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। ওই পশুর শরীরে ওষুধের উপস্থিতি পাওয়া গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট পরিদর্শন শেষে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই পশুর হাটে ক্রেতাদের ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত হোক। আগে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে, কোরবানির পশু কিনতে এসে ক্রেতারা প্রতারিত হয়েছেন। র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে হাটগুলো মনিটর করা শুরু করেছে।
‘আজ থেকে হাটে চাপ শুরু হচ্ছে। আর আজকেও অনেক পশু হাটে ঢুকছে। তাই কোনো অসুস্থ পশু বা ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা পশু বিক্রেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতিটি হাটে র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি হাটে র্যাবের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে জাল টাকা শনাক্ত করার মেশিন রয়েছে। কারও যদি কোনো টাকা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়, তাহলে সেখানে গিয়ে টাকা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারবেন। পাশাপাশি মহাসড়কে পশুর ট্রাকে চাঁদাবাজি, হাটে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি ও অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে র্যাবের টহল দল কাজ করছে।’
যেকোনো ধরনের সমস্যায় র্যাবের কন্ট্রোল নম্বরে ফোন করে সহযোগিতা চাওয়ারও অনুরোধ করেছেন খন্দকার আল মঈন।
আরও পড়ুন:ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ভিড় বেড়েছে ঘরমুখো মানুষের। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি যেতে উদগ্রিব তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক মানুষকে ট্রেনের ছাদে উঠে বসতে দেখা গেছে।
স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই প্রচুর মানুষের সমাগম, তবে গত ঈদের তুলনায় ভিড় তুলনামূলক কম।
এর আগের বিভিন্ন ঈদযাত্রার সময় দেখা যায়, ট্রেনে পা ফেলার জায়গা থাকছে না, কিন্তু এবার বেশ ফাঁকাই ছিল বগিগুলো।
সকালে নীলসাগর এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন ছাড়ার আগে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছিল। ওই সময় দেখা যায়, ট্রেনের ভেতরে ফাঁকা থাকলেও টিকিট নেই এমন মানুষজন চেপে বসেছেন ছাদে। জটলা বেঁধে একে অন্যের হাত ধরে টেনে তুলছেন। নিচে থেকে ঠেলে তুলে দিচ্ছেন অনেকেই।
ওই ট্রেনের ছাদে ওঠার চেষ্টায় ছিলেন নজরুল নামের এক ব্যক্তি। এমন সময় নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ঢাকায় দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন তিনি। টিকিট নেই। তাই ছাদে চড়ে যাবেন বাড়িতে।
বাড়ি কোথায়, জীবনের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও কেন ছাদে উঠে যাবেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি আর কথা বলেননি।
আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে নিউজবাংলা, তবে কেউই সংবাদমাধ্যমের পরিচয় পেয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের যে স্রোত, চাইলেও ছাদে ভ্রমণ বন্ধ করা যায় না অনেক সময়।’
এদিকে আগের কয়েক দিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ফাঁকা আসন নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়। কারণ অনেক যাত্রীই এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবেন।
বৃহস্পতিবার ফাঁকা সিট নিয়ে ট্রেন ছেড়ে যেতে দেখা যায়নি খুব একটা। যাদের টিকিট নেই বা স্ট্যান্ডিং টিকিট আছে, তারা ফাঁকা আসনগুলোতে চেপে বসেছেন।
ঈদ শেষে ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে। ফিরতি টিকিটের জন্য খুব বেশি লাইন দেখা যায়নি স্টেশন কাউন্টারে, তবে দীর্ঘ লাইন ছিল কমিউটার ট্রেনের কাউন্টারে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যে স্টেশন থেকে যাত্রা, সেই স্টেশন থেকেই দেয়া হবে ফিরতি টিকিট।
বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশন থেকে বেশিরভাগ ট্রেনই ছেড়ে যায় নির্ধারিত সময়ে, তবে কয়েকটি ট্রেন কিছুটা দেরিতে ছেড়েছে। সেটাও ১৫ বা ২০ মিনিটের বেশি নয়।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা তেমন কোনো দেরি নয়। স্বাভাবিক সময়েও যাত্রী ওঠানামা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে এতটুকু সময় লেগেই যায়।
আর ট্রেনে ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি নেই বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
আরও পড়ুন:সারা বিশ্বেই এখন বিদ্যুতের সংকট জানিয়ে এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুতের কী পরিস্থিতি ছিল, সেটিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘লজ্জা থাকলে বিএনপি লোডশেডিং নিয়ে কথা বলত না।’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্ত নবগঠিত ৭৫টি ইউনিট কমিটির পরিচিতি সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে জনগণকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সারা বিশ্বেই এখন বিদ্যুতের সংকট।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে জনগণকে বিদ্যুতের পরিবর্তে খাম্বা এবং পুলিশের গুলিতে লাশ উপহার দিয়েছিল। সেই বিএনপি নেতারা যখন বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলে, তখন তাদের শাসনামলের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের সেই দুঃসময়ের কথা মনে পড়ে। বিএনপি নেতাদের যদি লজ্জা-শরম থাকত, তাহলে তারা লোডশেডিং নিয়ে কথা বলত না।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার নিয়ে কাজ করেছে। এই সময়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্পের সুফলও পেয়েছে দেশ। এক যুগে বিদ্যুতের উৎপাদনক্ষমতা ছয় গুণের বেশি বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিদ্যুতের আরও কয়েকটি বড় প্রকল্প উৎপাদনে আসার অপেক্ষায়।
বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বরাবর গর্ব করে থাকেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তবে গত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির পর দেশে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে তরল গ্যাস বা এলএনজি আপাতত আমদানি করা হবে না। গ্যাসের ঘাটতিজনিত উৎপাদনের যে সংকট সেটি সমাধান করা হবে লোডশেডিংয়ের মাধ্যমে। দেশে এখন দুই হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ গত কয়েক বছরে লোডশেডিং শব্দটা ব্যবহার করত না। তারাই এখন লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আর না কেনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে জানিয়ে তিনি দুঃখও প্রকাশ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ পরিস্থিতির এই কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সবাই পাচ্ছিল। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে উপকরণগুলো, সেগুলোর দাম অত্যধিক বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। যেমন ডিজেলের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বেড়েছে, এলএনজির দামসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। কয়লা এখন প্রায় পাওয়াই যায় না।’
বিদ্যুতের এই যাওয়া-আসা শুরুর পর বিএনপি সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করছে। তারা বলছে, দুর্নীতির কারণে বিদ্যুতের এই পরিস্থিতি। দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আসলে যে কোনো উন্নয়ন হয়নি, এখন তার প্রমাণ মিলছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘প্রচণ্ড লোডশেডিং হচ্ছে- এটা ভয়াবহ। সরকারের শতভাগ বিদ্যুতের যে কথা, আজকের এই অবস্থা (লোডশেডিং) প্রমাণ করে যে আমরা যে কথাগুলো বলে আসছি, সেগুলো বাকসর্বস্ব কথা। এগুলো (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট) করার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি করা, এসব করে নিজেদের পকেট ভারী করা, বিদেশে গিয়ে বাড়িঘর তৈরি করা।’
দলের আরেক মুখপাত্র রুহুল কবির বিজভী বলেছেন, ‘উন্নয়নের এত যে ঢাকঢোল বাজানো হলো, তাহলে সারা দেশে লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতি কেন?’
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ছিল নাজুক। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের বড় পরাজয়ের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে ব্যর্থতা।
এই পাঁচ বছরে বিএনপি সরকার একটিও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে পারেনি, উল্টো এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কার্যাদেশ বাতিল করেছে। বিদ্যুতের দাবিতে এখানে সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে সেই সরকার। এমনকি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলিও হয়েছে।
সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলে কোনো মুখে? তাদের কি বড় কথা বলার কিছু আছে? মনে আছে ফখরুল সাহেব আপনাদের সময় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং, দিনের পর দিন লোডশেডিং। আপনাদের লজ্জা যদি থাকত লোডশেডিং নিয়ে কথা বলতেন না।’
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সরবরাহজনিত সমস্যার কারণে এখন উন্নত বিশ্বেও বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। সেই তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক ভালো বলে মনে করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার মতো সৎ ও দক্ষ নেতা ক্ষমতায় আছেন বলেই বাংলাদেশ এখনও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রেখেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে পরিচিতি সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলেরর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে পরিচালিত ‘ক্যাটল স্পেশাল’ ট্রেনে ঢাকায় এক হাজার গরু-ছাগল আনা হয়েছে।
রেলের পূর্বাঞ্চল জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে দুটি ট্রেন এবং পশ্চিমাঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে একটি ক্যাটল স্পেশাল ট্রেন ঢাকায় এসেছে বলে জানিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়।
রেল মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ক্যাটল স্পেশাল প্রথম ট্রেনটি প্রতি ওয়াগনে ১৬টি করে মোট ২৫টি ওয়াগনে ৪০০টি গরু নিয়ে বুধবার জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে দুপুর ২টায় রওনা হয়। পরে এটি ইসলামপুর বাজার হয়ে ঢাকা পৌঁছায় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে।
ক্যাটল স্পেশাল দ্বিতীয় ট্রেনটি দেওয়ানগঞ্জ বাজার থেকে ১৮টি ওয়াগনে ১৬টি করে ২৮৮টি গরু, ইসলামপুর বাজার থেকে সাতটি ওয়াগনে ১১২টি গরুসহ মোট ২৫টি ওয়াগনে ৪০০টি গরু নিয়ে ঢাকায় পৌঁছায় বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায়।
এ দুটি ট্রেনে মোট গরু আসে ৮০০টি এবং ভাড়া আদায় হয় মোট ৩ লাখ ৯৮ হাজার ১১০ টাকা।
এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও বড়াল ব্রিজ থেকে মোট ৩৬টি গরু ও ১৬০টি ছাগল নিয়ে বুধবার বিকেল ৪টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রওনা হয়ে ঢাকা স্টেশনে পৌঁছায় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায়।
এ ট্রেন থেকে মোট ভাড়া আদায় হয় ৪২ হাজার ১২০ টাকা।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী যাত্রীরা বাসের টিকিট কিনতে গাবতলীর পরিবর্তে বেশিসংখ্যক যাচ্ছেন গুলিস্তান ও সায়েদাবাদে। ঈদযাত্রায় তাই গাবতলীতে এই অঞ্চলের যাত্রীরা সহজেই পাচ্ছেন বাড়ি ফেরার টিকিট, তবে বেগ পেতে হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের।
পদ্মা সেতুর পর আরিচা ঘাটের ব্যবহারও ব্যাপকহারে কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এখানে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
সার্বিক পরিবহনের গোপালগঞ্জের যাত্রী নুরুল আমিন বলেন, ‘বাসা গাবতলী হওয়ায় আরিচা হয়ে যাচ্ছি। আর খুব সহজে টিকিট পেয়ে গেলাম তাই আর মাওয়া হয়ে গেলাম না। শুনলাম গুলিস্তান ও সায়েদাবাদে জ্যাম। তাই এই দিক দিয়ে চলে যাচ্ছি।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাস সুমন ডিলাক্সের টিকিট বিক্রেতা আখিল আলী বলেন, ‘সকাল থেকে ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করছি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাসে গাবতলীতে চাপ কম। এই এলাকার মানুষ এবার পদ্মা সেতু দিয়ে বাড়ি যাচ্ছে, তবে উত্তরাঞ্চলের গাড়িতে ভালোই চাপ আছে।
দক্ষিণাঞ্চলের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, এই যে দেখেন কত সিট ফাঁকা। যাত্রীরা আসলেই টিকিট পাবেন। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণের যাত্রীদের দিন বদলাইছে।’
কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীদের, তবে কোনো না কোনোভাবে বাড়ি ফেরার টিকিট তারা পাচ্ছেন।’
উত্তরাঞ্চলগামী হানিফ পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা দুলাল ঘোষ বলেন, ‘আমাদের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয় বেশি এখন। ঈদে সবাই অগ্রিম টিকিট নিয়ে রেখেছে। আমার কাউন্টারে আর টিকিট নাই। তবে অন্য বাসে যেতে পারবে।’
টিআর ট্রাভেলসে করে বগুড়ার যাত্রী আহসান হাবীব বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সকালে এসে শ্যামলী ও হানিফে টিকিট পাই নাই। খুব টেনশনে পড়ে গেছিলাম। পরে টিআর ট্রাভেলসে টিকিট পাই। উত্তরাঞ্চলের টিকিট পেতে একটু কষ্ট হলেও পাওয়া যাচ্ছে।’
অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়ে গেলেও উত্তরাঞ্চলের মানুষ কিভাবে বাড়ি যাচ্ছেন এর ব্যাখ্যা দিলেন শ্যামলী পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা রিপন ঘোষ।
তিনি বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ গাড়ির টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। তবে টিকিট এখনও পাওয়া যাচ্ছেন। এদিকে পরিবহনের অনেকে নিজ দায়িত্বে গাড়ি ভাড়া করে একটু বেশি ভাড়া আদায় করে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া লোকাল বাস থেকে শুরু করে কত রকমের পরিবহন আছে। বাড়ি যাওয়া কারো থেমে থাকছে না।’
আইনশৃঙ্খলা ও যান চলাচল স্বাভাবিক
গাবতলী পুলিশ কন্ট্রোল রুমের এএসআই মো. এমরান হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে ডিউটিতে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ঝামেলা হয়নি। পুলিশের পাশাপাশি অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন। ঈদযাত্রায় এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রিয়কর ঘটনা ঘটেনি গাবতলীতে।’
ট্রাফিক পুলিশ আব্দুল হামিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে গাবতলীতে কোনো যানজট নেই। সুন্দর মতো গাড়ি যাচ্ছে আর আসছে। পদ্মা সেতুর কারণে গাবতলীতে চাপ কমেছে এবার। এদিক দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কম যাচ্ছে, তাই চাপ কম।'
আরও পড়ুন:
মন্তব্য