রাজধানীর হাতিরঝিলে সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদসহ চার দফা নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে লেক মাছের অভয়ারণ্য করতে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়েছে আদালত।
সম্প্রতি হাতিরঝিল নিয়ে একটি রায় প্রকাশ করা হয়। ৫৫ পৃষ্ঠার রায়টি মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ৩০ জুন এ রায় দেয়।
হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রজেক্টে লে আউট প্ল্যানের নির্দেশনার বাইরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধে রাজউকের নিষ্ক্রিয় থাকার প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরে ওই রুলের শুনানি শেষে ২০২১ সালের ৩০ জুন রায় ঘোষণা করে আদালত।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী সঞ্জয় মন্ডল। আর রাজউকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস আল হারুনী ও আশেক মোমিন।
লিখিত রায়ে বলা হয়, ‘প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতিটি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।’
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নিয়ে আদালত বলে, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদকে কোনোভাবেই ধ্বংস করা যাবে না।
হাইকোর্টের চার দফা নির্দেশনা
১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা জনগণের সম্পত্তি।
২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি এবং অবৈধ।
৩. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো।
৪. এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।
হাতিরঝিল প্রকল্প বিষয়ে উচ্চ আদালতের পরামর্শ
হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীন গঠন করা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করতে হবে।
জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন ও নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে।
লেক মাছের অভয়ারণ্য করার জন্য ক্ষতিকর সব ধরনের যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি প্রকল্পটি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করার পরামর্শ এসেছে।
এ ছাড়া হাতিরঝিল এবং বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করার পরামর্শ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন:ইতালির উত্তরাঞ্চলের আল্পস পর্বতমালার মার্মোলাডা হিমবাহ ধসে অন্তত ৭ জন মারা গেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার হিমবাহ ধসের ঘটনায় ৭ জনের মৃত্যু ছাড়াও আরও ৮ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আহতদের আশপাশের হাসপাতালগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
উদ্ধার করা ৭ মৃতদেহের মধ্যে ৪ জনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন উদ্ধারকারীরা। যাদের মধ্যে তিনজন ইতালীয় এবং এর মধ্যে দুজন পর্বতের গাইড।
জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র মিশেলা ক্যানোভা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট পর্বতারোহীদের সংখ্যা এখনও নিশ্চিত জানা যায়নি।
ধারণা করা হচ্ছে, এখনও ১৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তবে হেলিকপ্টার ও ড্রোন দিয়ে চালানো উদ্ধার অভিযান খারাপ আবহাওয়ার কারণে স্থগিত করা হয়েছে।
যদিও সেরাক নামের হিমবাহের অংশটি ঠিক কী কারণে ভেঙে পড়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি বলেছেন, সন্দেহ নেই যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত জলবায়ু পরিবর্তন।
তিনি জানিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবে সরকার।
উদ্ধারকারী সংস্থার মুখপাত্র ওয়াল্টার মিলান দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এই অঞ্চলটি অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে। হিমবাহের চূড়ার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে।
তিনি বলেন, ‘এটি চরম তাপ। স্পষ্টতই এটা অস্বাভাবিক কিছু।’
গত ১৭০ বছরে আল্পস পর্বতের হিমবাহের অর্ধেক গলে গেছে। ১৯৮০ সালের পর থেকে এই গলে যাওয়ার গতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আল্পসে ঘন ঘন হিমবাহ ধসের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন:চলতি বছরে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সড়কে যে ক্ষতি হয়েছে তা কত দিনে কাটিয়ে ওঠা যাবে তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
‘সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন বন্যা: কারণ, পুনর্বাসন ও স্থায়ী সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এমন শঙ্কা প্রকাশ করেন।
অল ইউরোপিয়ান বাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় সোমবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই আলোচনার আয়োজন করে সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতি (সিবিসাস), ঢাকা।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এবারের বন্যায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতির তুলনায় জীবনহানি কম হয়েছে। তবে স্কুল-কলেজ ও পথঘাট যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা কত দিনে কাটিয়ে উঠতে পারব তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে।’
হাওরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সমালোচনার জবাবে এম এ মান্নান বলেন, ‘আপনারা বাউল গান শুনতে হাওরে যাবেন, বজরায় টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরবেন, নিজেরা ভালো থাকবেন আর হাওরের মানুষ গলাপানিতে ডুবে থাকবে তা কী করে হয়? তারাও তো ভালো জীবনের প্রত্যাশা করে।’
মন্ত্রী জানান, বন্যা উপদ্রুত অঞ্চলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। কৃষি পুনবার্সন প্রকল্পে কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের সার ও বীজ সরবরাহ করবে। হাওর অঞ্চলে সিলেটের খাসিয়াদের মতো বাঁশের মাচার ওপর ঘর নির্মাণ করা যায় কি না তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘বন্যা প্রতিরোধে দেশের খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর-বাওর, বিলসহ অন্যান্য জলাশয় খননে পদক্ষেপ নেয়া হবে। জলাশয়গুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে বন্যার তীব্রতা কমবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কমাতে পরিবেশ সংরক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। অবাধে বৃক্ষ নিধন, পাহাড়, টিলা কাটা বন্ধ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘এবারের বন্যায় সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। বলা যেতে পারে, যে প্রস্তুতি ছিল তা আপ টু মার্ক ছিল না। তবে এতে সরকারকে পুরোপুরি দোষারোপ করা যাবে না। কারণ এবার যে এমন বন্যা হবে তা ছিল ধারণার বাইরে।’
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘আমাদের ২৫টি আন্তঃসীমান্ত নদীর তথ্য রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি, আমাদের ৫৪টি নদীর তথ্যই লাগবে।
‘সিলেট অঞ্চলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেটে ১২০ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, সুনামগঞ্জে ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা, মৌলভীবাজারে ৯৯৬ কোটি টাকা ও হবিগঞ্জে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান।’
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্যানেল বিশেষজ্ঞ ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা জলাশয়গুলোকে ভরাট করে কৃষি জমি করে ফেলছি। আমরা মনে করি, কৃষি জমি হলে ব্যক্তি পর্যায়ে লাভবান হওয়া যায়। কিন্তু আমরা এটা জানি না যে জলাভূমির আউটপুট কোনো অংশে কম নয়। হাওর এলাকার যেসব রাস্তা পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে, সেগুলো সংকুচিত করে প্রয়োজনে ব্রিজগুলো ওপেন করে দিতে হবে।’
বাংলাদেশ পরিবেশন আইনবিদ সমিতি-বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আগামীতে কপ-২৭ সম্মেলনে বাংলাদেশে পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে।’
সভায় একাধিক আলোচক বলেন, ‘এবার নজিরবিহীন বন্যায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা উদ্বেগজনক। যথাযথ প্রদক্ষেপ না নিলে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি বার বার হতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত ব্যবস্থায় এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যাবে না।’
সিবিসাসের সভাপতি আজিজুল পারভেজের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মতীন উদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, ইনস্টিটিউট অফ প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইপিডির পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম এবং রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার-আরডিআরসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।
অনুষ্ঠানে দুর্গত এলাকার ত্রাণ বিতরণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি ও জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সৈয়দ জগলুল পাশা।
অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন গোলটেবিল আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক এহসানুল হক জসীম। স্বাগত বক্তব্য দেন সহ-সভাপতি নিজামুল হক বিপুল।
আরও পড়ুন:সাতক্ষীরার তালায় খাওয়ার জন্য বিল থেকে অর্ধ শতাধিক কোলা ব্যাঙ ধরায় দুই যুবককে অর্থদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত কুমার রোববার বিকেলে তাদের এই শাস্তি দেন।
দুই হাজার টাকা শাস্তি পাওয়ারা হলেন আশুতোষ দাশ ও সরজিৎ দাশ।
বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ-আস-সাদিক নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি দাবি করেন, দেশে ব্যাঙ হত্যার কারণে প্রথমবার দুই ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হলো।
তালার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ মিশনের সভাপতি জুলফিকার রায়হান জানান, রোববার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় শত শত ব্যাঙ ঢেঙ্গা বিলে ডিম পাড়ার জন্য জড়ো হয়। উপজেলার আটারই গ্রামের আশুতোষ ও সরজিৎ বিল থেকে ব্যাঙ ধরা শুরু করেন।
স্থানীয় কৃষকরা তাদের বাধা দিলে তারা দুজন গালিগালাজ করেন। এরপর ওয়াইল্ড লাইফ মিশনের সদস্যরা তাদের আটক করে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বিশ্বাস বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফশিল অনুযায়ী ব্যাঙ সংরক্ষিত প্রাণী। ব্যাঙ ধরা, মারা ও খাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। বর্ষা মৌসুম কোলা ব্যাঙের প্রজননের সময় হওয়ায় কিছু মানুষ ব্যাঙের পায়ের মাংস খাওয়ার জন্য খাল-বিল থেকে ধরে আনে। বিষয়টি পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।’
আব্দুল্লাহ-আস-সাদিক বলেন, ‘ব্যাঙ ধরায় শাস্তির বিষয়টি আমাদের গেজেটে আছে। দেশে এবারই প্রথম উভচর প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিষয়ক অপরাধ শনাক্ত করে শাস্তি দেয়া হলো।’
এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে থাকার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ইউএনও প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন:বন্যায় ফসলের ক্ষতি মেনে নিয়েই চলে রংপুর অঞ্চলের চাষাবাদ। ক্ষতি কমাতে কৃষকদের থাকে তাই এক ধরনের প্রস্তুতি। কিন্তু এ বছর আগাম বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। পানির নিচে তলিয়ে থাকা ফসল নিয়ে হতাশার পাশাপাশি চিন্তিত তারা পরের ধাপের চাষাবাদ নিয়ে।
কৃষিবিদসহ বিশ্লেষকরা রংপুর অঞ্চলের চলতি বন্যায় ক্ষতির শিকার কৃষকদের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সহায়তা বাড়ানোর কথা বলছেন। একই সঙ্গে তারা নদী, খাল সংস্কারসহ স্থায়ী সমাধানে জোর দিচ্ছেন। বন্যা ও জলাবদ্ধতায় এ বছর কয়েক দফায় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বন্দবের ইউনিয়নের বলদমারা এলাকার কৃষক আব্দুল বাতেন। তিনি দুই বিঘা জমিতে চিনাবাদাম এবং দুই বিঘা জমিতে তিল ও কাঁচা মরিচ আবাদ করেছিলেন। আগাম বন্যায় তার সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আগের বচর সাতবার বন্যা হইচে, এবার একবার হইল, আরও তো হইবে। একবারের বানোত কিছু কি আছে, সোউগ তো তলে গেইছে। বচরে বচরে (প্রতি বছর) এমন করি ফকির হয়া যাইতেছি। তিন মাস আবাদ করি, বন্যা-খরাত খাই, এবার বুঝি সেডাও হবান্নয়।’
অভিন্ন আক্ষেপ চরাঞ্চলের সব কৃষকের। তারা তিল, কাউন, চিনাবাদাম, কাঁচা মরিচ, ভুট্টা ও শাকসবজি চাষ করে সংসার চালান। একবার ফসল তুলতে পারলে সেটি দিয়েই সামাল দেন একাধিকবারের ক্ষতি। বন্যার সময় তাদের আগাম প্রস্তুতিও থাকে। কিন্তু আকস্মিক বন্যা তাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর ও চিলমারীর বহু চরে পানির নিচে কৃষকের ফসল। কিছু জায়গায় পানি কমলেও ফসল রক্ষার সুযোগ নেই। নষ্ট হয়েছে বীজতলাও।
চরশৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক আহাদ আলী বলেন, ‘সবজি চাষ করে বাজারে বিক্রি করি। যে টাকা হয়, তা দিয়ে চার সন্তানকে লেখাপড়া করাই। সব আবাদ পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সংসার চালাতে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছি।’
কৃষক আব্দুল করিম, সফুর আলী, নজিবর রহমানসহ কয়েকজন জানান, রংপুরে প্রতি বছর কয়েক দফায় বন্যা হয়। এবার আগাম বন্যায় এমন ক্ষতি হয়েছে, যার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব না।
শুধু কুড়িগ্রাম নয়, অভিন্ন পরিস্থিতি গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও রংপুর গঙ্গাচড়ার তিস্তা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের।
যে ক্ষতিতে বাড়ছে চিন্তা
রংপুরের আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৮ থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত রংপুর অঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে ৯ হাজার ৩৮২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলায় ফসল নষ্ট হয়েছে ৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমির। এর মধ্যে পাট ৩ হাজার ৮৫৬, আউশ ধান ২ হাজার ৫০৬ ও আমন বীজতলা ৩১২ হেক্টর। শাকসবজি ও অন্যান্য মিলে রয়েছে আরও ২ হাজার ১০১ হেক্টর।
গাইবান্ধা জেলায় ফসল নষ্ট হয়েছে ৪০৫ হেক্টর জমির। এর মধ্যে পাট ১৩৩, আউশ ধান ৫৬, আমন বীজতলা ৫৬ এবং শাকসবজি ও অন্যান্য মিলে ১৬০ হেক্টর জমির ফসল।
লালমনিরহাট জেলায় ফসল নষ্ট হয়েছে ২০২ হেক্টর জমির। এর মধ্যে পাট ১৭ হেক্টর, আউশ ধান ২০ হেক্টর, আমন বীজতলা ৭৯ হেক্টর এবং শাকসবজি ও অন্যান্য মিলে ৮৬ হেক্টর।
এসব এলাকায় তালিকার বাইরে আরও ১৮ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে আছে বলে দাবি করেছে কৃষি বিভাগ। সে হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি হবে।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক এমদাদ হোসেন সেখ বলেন, ‘কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে তাদের পুনর্বাসনের জন্য সিদ্ধান্ত আসেনি।’
সহায়তা ও সমাধান
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যে সহযোগিতা করা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম বলে মনে করেন কৃষকরা।
রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হয়। তাদের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এরপর প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমি আবাদ করার মতো প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়।’
রৌমারীর দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের ঝগড়ারচর গ্রামের কৃষক আফতাব হোসেন বলেন, ‘বন্যার পর ফের আবাদ করতে অনেক কষ্ট। সরকার যেটুকু সহযোগিতা করে, তাতে পোষায় না। আবার এসব সহযোগিতা সবার জোটেও না।’
কৃষক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে পুনর্বাসনে সরকার যে সহযোগিতা করে, তা যথেষ্ট হয়। সহজ শর্তে সুদমুক্ত ঋণ দিলে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য ৩৩ শতাংশ বেশি দরে সরকার কিনলে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।’
নদী গবেষক অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৪২টি ইউনিয়নে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ ক্ষতির শিকার।
‘অল্প বৃষ্টি বা পানিতেই বন্যা হচ্ছে এই অঞ্চলে। স্থায়ী পরিত্রাণের জন্য নদীগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। নদী খনন করতে হবে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকলে এমন বৃষ্টিতে বন্যা হবে না। আর কৃষি বিমা চালু করে সরকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের সহায়তা করতে পারে।’
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রণোদনার পরিমাণ বাড়াতে হবে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে তারা যখন আবাদ শুরু করবেন, তখন ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সার, কীটনাশক ও বীজ বিনা মূল্যে দিতে হবে। বন্যার কথা চিন্তা করে ফসল উৎপাদনের সময়ে পরিবর্তন আনতে হবে।
‘বন্যায় আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। সে জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আগেই উঁচু স্থান লিজ নিয়ে চারা রোপণ করতে পারে। পানি নেমে গেলে এসব বীজ ক্ষতিগ্রস্তদের বিতরণ করলে কৃষকের ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:সারা দেশে প্রতি বছর ১০ লাখ ৬ হাজার টন ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু মিনিপ্যাক বা স্যাশে বর্জ্য রয়েছে ১ লাখ ৯২ হাজার ১০৪ টন, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডো আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা এমন শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, প্লাস্টিক স্যাশে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় এই গোলটেবিল বৈঠকে ‘প্লাস্টিক স্যাশে: স্মল প্যাকেট উইথ হিউজ এনভায়রনমেন্ট ডেস্ট্রাকশন’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
দেশে কী পরিমাণ মিনিপ্যাক ব্যবহার হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা-তথ্যের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার বেশ কিছু এলাকা এবং উত্তরবঙ্গের জেলা রংপুরকে বেছে নেয়া হয়।
এসডোর গবেষণা অনুসারে, সমীক্ষাকৃত অঞ্চলের ৯৭ শতাংশ অংশেই মিনিপ্যাক বা স্যাশের ব্যবহার রয়েছে। আর মিনিপ্যাক মুক্ত আছে মাত্র ৩ শতাংশ এলাকা।
দেশে যে পরিমাণ মিনিপ্যাক বর্জ্য তৈরি হয় তার মধ্যে খাবারের স্যাশে ৪০, প্রসাধনী ২৪, ওষুধ ৮, গৃহসামগ্রী পরিষ্কারের পণ্য ৭, রান্নার মসলা ৭, পানীয় ৭ এবং অন্যান্য বর্জ্য ৭ শতাংশ।
খাবারের স্যাশের মধ্যে রয়েছে- চিপস, টমেটো সস, জুস, গুঁড়োদুধ, কফি ইত্যাদি। ওষুধের স্যাশের মধ্যে রয়েছে স্যালাইনের প্যাকেট ও মেডিসিন স্ট্রিপ। কসমেটিক স্যাশের মধ্যে আছে শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, টুথপেস্ট ও মাউথ ফ্রেশনার। রান্নার উপাদানকে মসলা প্যাকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সাবেক সচিব এবং এসডোর সভাপতি সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ বলেন, ‘প্লাস্টিকের মিনি প্যাকেট পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। আকারে ছোট হলেও পরিবেশে এর বিরূপ প্রভাব বিশাল।
‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে বিশেষ করে স্যাশে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে কার্যকর করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই।’
এসডোর উপদেষ্টা মোখলেসুর রহমান প্লাস্টিক স্যাশের ভয়াবহ দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মানুষ মিনি প্যাকেটের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাই জনগণের মধ্যে আরও সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই মিনি প্যাকেটগুলো ব্যবহার করা বন্ধ করে দেয়। উৎপাদকদেরও উচিত এসব স্যাশে উৎপাদন বন্ধ করে রিফিল সিস্টেমের দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমাদের সেই সময়ে ফিরে যেতে হবে যখন বাজারে স্যাশে ছিল না এবং মানুষ কেনাকাটার জন্য রিফিল সিস্টেম ব্যবহার করত। আর সে জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের কাঁচামাল, উৎপাদন ও বিপণনের ওপর অধিক শুল্ক আরোপ করতে হবে।’
এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা প্লাস্টিক স্যাশের পরিবর্তে সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প প্রচার করতে এবং একটি আইনি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেম্বলি (ইউনিয়া ৫.২) ইতোমধ্যে একটি আন্তঃসরকারি কমিটি গঠন এবং ২০২৪ সালের মধ্যে লিগ্যালি বাইন্ডিং প্লাস্টিক কনভেনশন নিয়ে আলোচনা ও চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
‘বাংলাদেশসহ ১৭৫টি দেশ এই বৈশ্বিক প্লাস্টিক চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। তাই আমাদের উচিত নিজেদেরকে এর জন্য প্রস্তুত করা এবং দেশব্যাপী একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া।’
আরও পড়ুন:খাল-নদী সংস্কারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করেছে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের খনন। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
নগরীর শহীদ নগর এলাকায় বুধবার বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের পুনর্খনন কাজের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের খাল-নদীগুলো সংস্কার করতে হবে। সংস্কারে কারও ব্যক্তিগত ক্ষতি করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। তবে যারা খাল-নদী দখলের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন, আমাদের কাজে তারা মনঃক্ষুণ্ন হতেই পারেন।
‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নগরী ঢাকা। এর পরিবেশ ঠিক করতে হবে আমাদের। ঢাকার পরিবেশ সুন্দর করার মাধ্যমে আমাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকাকে উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য খাল এবং নদীগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।’
মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সিএস ম্যাপ অনুযায়ী আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনর্খনন কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশের খনন হবে। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে বেষ্টনী দেব।
‘আদি বুড়িগঙ্গা, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ, চকবাজার ও পুরান ঢাকা ঘিরে কীভাবে একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করা যায়, সে চেষ্টা চলছে। নদীর প্রবাহ ও নদী পুনরুদ্ধার করে একটি বাসযোগ্য নগরী উপহার দেয়া হবে।’
দক্ষিণ সিটির নিজস্ব অর্থায়নে বুড়িগঙ্গায় খননকাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সাড়ে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী অর্থবছরে আরও বেশি বরাদ্দ রাখা হবে। আনন্দের বিষয় যে আমরা কাজটি শুরু করতে পেরেছি।’
পরে নগরীর ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মেয়র। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ ও সক্ষমতা তৈরিসহ ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সুপারিশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। ওয়াশ খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাজ ধীরগতিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজেট বরাদ্দ কম হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
বাজেটে হাওর এবং পার্বত্য এলাকায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে, তবে চর এবং উপকূলীয় এলাকায় বরাদ্দ বাড়েনি। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। ওয়াশ খাতের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
নিরাপদ পানি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইনটিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, অ্যান্ড ওয়াটার পভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াটার এইডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর হোসেন ইশরাত আদিবসহ ওয়াশ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য