মায়াভরা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে চার বছর বয়সী অর্ণা বিশ্বাস। সে জানে না তার মা-বাবা আর নেই। কেউ জিজ্ঞেস করলে কখনও সে উত্তর দিচ্ছে তার মা-বাবা হাসপাতালে, আবার কখনও উত্তর দিচ্ছে না।
খুলনার ডুমুরিয়ার কুলটি গ্রামে নিজ ঘরে গত বুধবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একসঙ্গে মারা যান অর্ণার বাবা অভিজিত বিশ্বাস ও মা কেয়া বিশ্বাস। ওই সময় আহত হয় অর্ণাও।
সম্প্রতি অর্ণাদের বাড়িতে যান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আছেন অর্ণার দাদা অসীম বিশ্বাস ও দাদি সুন্দরী বিশ্বাস।
সেই উঠানে খেলা করছে অর্ণা। তার ডান হাত ও ডান পায়ে রয়েছে বিদ্যুৎস্পৃষ্টের ক্ষত। ব্যথায় হাত নাড়াতে না পারলেও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করছে অর্ণা।
ঘটনার দিন কী হয়েছিল জানতে চাইলে অর্ণার দাদি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সকাল থেকে ছেলে ও বউমা একসঙ্গে ধান মাড়াই করছিল। পরে গোসল করে এসে ভাত খেয়ে ছেলে, বউমা ও অর্ণা একত্রে ঘরে যায়। আমি ও আমার স্বামী তখন বাড়ির উঠানে ধান মাড়াই করছিলাম।
‘হঠাৎ বউমা আমাকে ডেকে একটা চিৎকার দেয়। পরে আর কোনো শব্দ করেনি। আমি ও আমার স্বামী তাৎক্ষণিক সেখানে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি ছেলে ঘরের বারান্দায় মাথা গুটিয়ে বসে টিনের বেড়া ধরে কাঁপছে। বউমা তার পাশে শুয়ে একইভাবে কাঁপছে। অর্ণা পড়ে আছে তার মায়ের কোলে।’
তিনি জানান, সন্তান ও বউমার এমন পরিস্থিতি দেখে নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি। আগে অর্ণাকে টেনে তাদের কাছ থেকে আলাদা করে পরে ছেলে ও বউমাকে ছাড়াতে গেলে বিদ্যুতের শক খেয়ে বাইরে ছিটকে পড়েন তিনি।
পরে প্রতিবেশীরা এসে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দেয়। ছেলে ও তার বউকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
অর্ণার দাদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল থেকে ছেলে ও বউমার মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। পরে রাত ৩টার দিকে শ্মশানঘাটে নিয়ে তাদের সৎকার করা হয়।’
‘বাবা হয়ে সন্তানের চিতায় আগুন দেয়া যে কত কষ্টের, তা যে বাবা দিয়েছে শুধু সেই জানে। আমার সেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ছেলে আমাদের কত আশা দেখাত। এর আগেই আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেল। তার মৃত্যুতে আমিও যেন মারা গেলাম।’
তিনি জানান, অভিজিত তার একমাত্র ছেলে। তার দুই মেয়ে আছে, তারা বিবাহিত।
তিনি বলেন, ‘একসময়ে আমাদের পরিবারে অনেক অভাব ছিল। এসএসসি পরীক্ষার ফি জমা না দিতে পেরে ছেলে অভিজিত লেখাপড়া ছেড়ে দেয়। পরে সে সংসারের হাল ধরে। ছেলের অনেক শখ ছিল তাদের মেয়ে অর্ণাকে অনেক লেখাপড়া শেখাবে।
‘এখন অর্ণাকে নিয়ে আমরা আছি। সে কিছু বুঝছে না, কাঁদছেও না। অর্ণাকে নিয়ে ছেলে যে স্বপ্ন দেখত, আমি যতদিন বেঁচে থাকি ছেলের স্বপ্ন পূরণ করব, অনেক লেখাপড়া শেখাব।’
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, ‘আমি অর্ণার কাছে গিয়েছিলাম। তার দাদা-দাদির সঙ্গেও দেখা করেছি। তখন ওই পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।’
যেভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন অর্ণার বাবা-মা
অর্ণার বাবা-মা টিনের ঘরে থাকতেন। ঘরের ভেতর মাঝামাঝি এক স্থানে একটি বিদ্যুতের সার্কিট রয়েছে। সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে বিদ্যুতের তার।
মৃত অভিজিতের ভগ্নিপতি দেবাশীষ বিশ্বাস বলেন, ‘ঘরের মাঝামাঝি যে সার্কিটটি আছে, সেখানে মেইন সুইচ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ এসেছে। সেই সার্কিটটি ভালো করে ফিটিং ছিল না।’
‘ওই সার্কিট থেকে একটি তার বের হয়ে টিনের বেড়ার সঙ্গে বিদুৎসংযোগ লেগে যায়। এতে পুরো ঘর বিদ্যুতায়িত হয়ে যায়। ’
তিনি বলেন, ‘দুপুরে খাবার খেয়ে অর্ণার বাবা-মা ঘরের ভেতরে খাটে ছিল। ওই খাটের পাশেও টিনের বেড়া আছে। সেই বেড়া থেকে তারা প্রথমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে সেখান থেকে ছিটকে বারান্দায় পড়ার পর আবারও টিনের বেড়ায় হাত লাগায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তারা।’
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ সদরে লাইলী আক্তার নামে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- মামলার ১ নম্বর আসামি খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাইলী আক্তারকে। ঘটনাটি পিবিআই এর অ্যাডিশনাল আইজিপি জানতে পেরে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে আমাদের টিম। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সহযোগী ৪ ও ৭ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও মামলার ১ নম্বর আসামি কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা সুচতুরভাবে আত্মগোপনে ছিলেন।’
গৌতম কুমার জানান, ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই ময়মনসিংহের টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও পিবিআই হেডকোয়ার্টারের এলআইসি টিমের সহযোগীতায় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। দুইজনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে গত ২৮ জুন রাতে নিহতের স্বামী আব্দুর রশিদ ৮ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওই দিন রাতেই ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মো. জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আছমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- খোকন মিয়া ওরফে কাজল, তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কনা, গোলাম মোস্তফার ছেলে কামাল মিয়া, বাবুল, কামাল মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার বৃষ্টি, বাবুলের স্ত্রী রোমান।
মামলার বরাতে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী খুকি আক্তারের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুই পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিল না।
গত ২৬ জুন পালিয়ে যান সিরাজুল ও খুকি। এতে ক্ষিপ্ত হয় খুকির পরিবারের লোকজন। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তারা ছেলের বাড়িতে এসে ছেলের মা লাইলীকে একা পেয়ে প্রথমে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পা তার দিয়ে বেঁধে লাইলীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা লাইলীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত ২৮ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাইলীর মৃত্যু হয়।
ফারুক হোসেন বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আজ হস্তান্তর করা হলে আজই অথবা আগামীকাল ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।’
এ ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক।
আরও পড়ুন:দিনাজপুরে তেলবাহী লরির ধাক্কায় মা ও বোনের মৃত্যুর পর ১৮ মাসের শিশুটিও মারা গেছে।
দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান আসাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে বুধবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে লরির ধাক্কায় মারা যান শিশু সাইফুলের মা ৩০ বছর বয়সী ফাইমা বেগম ও বোন ১৩ বছরের বিউটি।
গুরুতর আহত হন বাবা ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসাইন ও ১৮ মাস বয়সী শিশু সাইফুল ইসলাম নাসরুল্লাহ।
আহত মোহাম্মদ হোসাইন জেলার বিরল উপজেলার তেঘরা দারুল হাদীস সালাফিয়্যাহ মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার পাঁচটিকরি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পরিবার নিয়ে তেঘরা গ্রামে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিলেন তিনি।
হোসাইনের ভাই মোহাম্মদ হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুরে যখন আমরা ভাবি ও ভাতিজির মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিলাম, সে সময় শিশু সাইফুল মারা যায়। ভাই এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’
পরিদর্শক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘ঈদের ছুটি পাওয়ায় ভোরে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে একটি মোটরসাইকেলে গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে পেছন থেকে তেলবাহী একটি লরি মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়।
‘এতে রাস্তায় পড়ে মা ও মেয়ে ঘটনাস্থলে নিহত হন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। স্থানীয়রা গুরুতর অবস্থায় মোহাম্মদ হোসাইন ও শিশু ছেলে সাইফুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুর মৃত্যু হয়।’
এই ঘটনায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:নওগাঁর সদরে ট্রাকের চাপায় চার শিক্ষকসহ সিএনজিচালিত অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহতের ঘটনায় ট্রাকচালকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
চালক রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুধবার দুপুরে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে নিশ্চিত করেন র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরীয়ার।
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কর্নেল রিয়াজ শাহরীয়ার বলেন, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বাবলাতলী মোড় এলাকার ওই দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষকদের পরিবারের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা মামলা করা হয়। সবগুলো মামলায় মূল আসামি করা হয় রেজাউলকে। কিন্তু ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে তার বাড়ির পাশ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালানোর কথা শিকার করেছেন বলে দাবি এই র্যাব কর্মকর্তার।
গত ২৪ জুন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের বাবলাতলী এলাকায় যাত্রীবাহী অটোরিকশাকে চাপা দেয় ট্রাকটি। এ ঘটনায় ঘটনায় ৪ শিক্ষকসহ ৫ জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার নেহেন্দা গ্রামের ও পানিহারা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন, বিজলী গ্রামের বেলকাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুকবুল হোসেন, ভাদুরন্দ গ্রামের গোলাম নবীর স্ত্রী গুটিসর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জান্নাতুন খাতুন।
এ ছাড়া গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দুলালপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে ও আমকুড়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক লেলিন সরদার এবং সদরডাঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের ছেলে অটোরিকশার চালক সেলিম হোসেন সেদিন নিহত হয়।
এ ঘটনায় আহত হন নিয়ামতপুর উপজেলার কুড়িদহ গ্রামের আব্দুল গফুরের মেয়ে ও কুড়িদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরজাহান বেগম।
আরও পড়ুন:সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল ইসলাম জিতু হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক রাজিব হাসান আসামির জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বুধবার দুপুরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মতিয়ার রহমান মিঞা নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, ‘বুধবার রিমান্ড শেষে আসামি জিতুকে আদালতে তোলা হয়। শিক্ষককে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সে। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।’
শিক্ষক হত্যার ঘটনায় নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। এই মামলায় গেল বুধবার জিতুকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
যা ঘটেছিল
সাভারে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা ছেলেদের ফুটবল ও মেয়েদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছি। শনিবার (২৫ জুন) স্কুলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। এ সময় প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলা ভবনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিল ছেলে শিক্ষার্থীরা।
‘অভিযুক্ত ছাত্রও দ্বিতীয় তলায় ছিল। হঠাৎ সে নেমে মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষক উৎপলকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় উৎপলকে উদ্ধার করে এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই রোববার সকালে উৎপলের মৃত্যু হয়।’
অধ্যক্ষ জানান, উৎপলের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামে। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
তিনি আরও জানান, দায়িত্বের অংশ হিসেবেই উৎপল শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা নিয়ে কাউন্সেলিং করতেন এবং তাদের নানা অপরাধ বা নিয়মবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের বিচার করতেন।
আরও পড়ুন:জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার নিজের শরীরে আগুন দিয়ে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় সামনে এসেছে হেনোলাক্স কোম্পানির নাম।
মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এই নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।
এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নুরুল আমিনকে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক বলা হলেও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেড় যুগ আগেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নুরুল আমিন বর্তমানে আমিন পোল্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। এর আগে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেট প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেছেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে।
ফেসবুকে নিজেকে ডা. এন আমিন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাবসায়িক জীবন শুরু করার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন নুরুল আমিন। ১৯৮৪ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি শুরু করার পর তিনি আগের পেশা থেকে সরে এলেও নামের আগে ডা. ব্যবহার করছেন।
ফেসবুকে তিনি বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন, বাস্তবে সেগুলোর কার্যক্রম নেই। ঠিকানা হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরানা পল্টনের ‘হেনোলাক্স সেন্টার’-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর কদমতলী এলাকার একটি ঠিকানা রয়েছে।
নিউজবাংলা কদমতলী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, সেখানে নুরুল আমিনের একটি কারখানা থাকলেও প্রসাধনসামগ্রীর উৎপাদন বহু বছর ধরে বন্ধ। কারখানাটি ভাড়া দেয়া হয়েছে একটি সেমাই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে। প্রসাধনীর পরিবর্তে সেই কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে সেমাই।
কদমতলীতে নুরুল আমিনের আরেকটি ভবন রয়েছে। সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে আবাসিক ভবন হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এই ভবনের নিচতলায় কিছু দোকানও রয়েছে। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেশ কয়েক বছর ধরে নুরুল আমিনের কোনো প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।
কদমতলীর কারখানায় ভৌতিক পরিবেশ
রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একসময়ের বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে এখনও এক নামে হেনোলাক্স কারখানাকে চেনেন স্থানীয়রা। লোকমুখে কদমতলীর একটি অংশ হেনোলাক্স নামেই পরিচিত।
কদমতলীর মোহম্মদবাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথিত হেনোলাক্স কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর মূল কারখানা, এর পাশের আরও ১০ কাঠা জমিতে একতলা ভবন রয়েছে।
৯৮৭ মোহম্মদবাগ, কদমতলী- এই ঠিকানার মূল কারখানা ভবনটি তিনতলা। আলো নেভানো এবং ভেতর থেকে বন্ধ কারখানাটিতে ভূতুড়ে পরিবেশ দেখা গেছে। ভেতরে ছিলেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গেট খোলার অনুরোধ করলেও তিনি ঢুকতে দেননি।
ওই নিরাপত্তাকর্মী নিজের নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানার ভেতরে কেউ নেই। এটি এখন বন্ধ।’
কারখানা কবে বন্ধ হয়েছে এবং সেখানে কী উৎপাদন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সেমাই তৈরি করা হয়, তবে দুই-তিন দিন ধরে কারখানা বন্ধ।’
পাশের দোকানি আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই কারখানা দেখে আসছি। আগে এটা কদমতলীর মেরাজবাগে ছিল, পরে মোহম্মদবাগে আনছে। একসময় তো এই কারখানায় দিন-রাত কাজ চলত। ক্রিম-তেল এগুলা বানাইত। সারা এলাকায় কত সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যাইত।
‘কারখানার শ্রমিকও ছিল অনেক। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে কারখানার শ্রমিক আর কাজকর্ম কমতে থাকে। এখন তো দেখি এইখানে সেমাই বানায়া ভ্যানে কইরা নিয়া যায়।’
আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা শেষে আবারও কারখানার মূল ফটকের সামনে গিয়ে মিন্টু নামের এক কাভার্ড ভ্যানচালকের দেখা পাওয়া যায়। তিনি হেনোলাক্স গ্রুপের একমাত্র কাভার্ড ভ্যানের চালক।
কারখানা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘ব্যবসায় লসের কারণে নুরুল আমিন সাহেব এই কারখানার এক অংশ এখন সেমাই কারখানাকে ভাড়া দিয়েছেন। অন্য অংশে অনেক বছর ধরে হেনোলাক্সের মেশিন ও যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে।’
মিন্টু বলেন, ‘আরও ১০ থেকে ১২ বছর আগেও কসমেটিকসের নিয়মিত প্রোডাকশন হতো এখানে। কিন্তু লসের পর একে একে হেনোলাক্স, আমিন ফুড ও আমিন হারবালের সব প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেক দিন বন্ধই পড়েছিল কারখানাটি। গত দুই বছর ধরে একটি সেমাই প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
‘তবে ব্যবসা মন্দার কারণে গত কয়েক দিন ধরে এখানে সেমাই উৎপাদনও বন্ধ। সেমাই কারখানার মালিক-শ্রমিক কেউ দুই দিন ধরে এখানে আসছেন না।’
নুরুল আমিনের সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারি হয়েছে বলে জানান মিন্টু।
তিনি বলেন, ‘এ জন্য স্যার বেশ কিছুদিন ধরে এখানে আসেন না। কারখানা বন্ধ থাকলেও স্যার আগে কয়েক দিন পরপরই আসতেন। এখন মাঝেমধ্যে ম্যাডাম (নুরুল আমিনের স্ত্রী ফাতেমা আমিন) আসেন, গাড়ি নিয়ে আসেন একটু ঘুরে দেখে আবার চলে যান।’
গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় করা মামলায় নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
কদমতলীর ‘হেনোলাক্স ভবন’ দেয়া হয়েছে ভাড়া
ফেসবুকে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে কদমতলীর মেরাজনগরের একটি ঠিকানা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সেটি ‘হেনোলাক্স বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত।
মোহম্মদবাগের কারখানা থেকে অটোরিকশায় মেরাজনগর বাজারে পৌঁছান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই এলাকার অন্য নাম ‘হেনোলাক্স মোড়’। স্থানীয়রা জানান, বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’ নামের ভবনটির কারণেই লোকমুখে এলাকাটির এমন নামকরণ।
এই ভবনের ঠিকানা: ১০৭৬, মেরাজনগর, কদমতলী। এলাকাবাসী জানান, এই ভবনেই হেনোলাক্সের প্রথম কারখানা ছিল, পরে সেটি মোহম্মদবাগে স্থানান্তর করা হয়। এখানকার কারখানা থেকেই নুরুল আমিনের উত্থান।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮০ সালের পরে নুরুল আমিন সাহেব এই জায়গা কিনে কারখানা বানান। তখন উনি সারা দিন এখানে থাকত। অনেক শ্রমিক ছিল। হেনোলাক্স দিয়ে উনি খুব অল্প সময়ে নাম করে ফেলেন।
‘তখন তো এই এলাকায় বাড়িঘর তেমন হয়নি। আশপাশে ডোবা আর জঙ্গল ছিল। এখানে মানুষ খুব একটা যাতায়াত করত না। আমিন সাহেব এই কারখানা করার পর এখানে সারা দিন শ্রমিকের আনাগোনা থাকত। ওদের দেখাদেখি সাধারণ মানুষও এখানে যাতায়াত শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ শুরু থেকে হেনোলাক্সের কারখানা দিয়েই এই এলাকাকে চেনে। এরপর আমিন সাহেব এই এলাকায় প্রচুর জায়গা-সম্পত্তি কিনেছিলেন। এখন শুধু এই বাড়ি আর মোহম্মদবাগের কারখানাটার কথাই জানি। বাকি সম্পদ আছে কি না আমার জানা নাই।’
দেখা গেছে, পাঁচ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে চারতলা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’। এর নিচতলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ওপরের তিনতলা আবাসিক ফ্ল্যাট আকারে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নিচতলায় একপাশে বাজার, অন্যপাশে সেলুন, মুদি দোকান রয়েছে। আর ওপরের তিনতলায় দুটি করে মোট ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
প্রতিটি ফ্ল্যাট মাসিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন নুরুল আমিন। আর নিচের বাজার ও দোকান থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়।
একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আঞ্জুমান আরা নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে ভাড়া থাকেন। তিনি বাড়ির মালিক হিসেবে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর নাম জানেন, তবে কখনও দেখেননি। একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রতি মাসে ভাড়া তুলে নিয়ে যান এবং বাড়ির দেখাশোনা করেন।
হেনোলাক্সের কথিত প্রধান কার্যালয়ও জনশূন্য
ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ৩/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ উল্লেখ করেছেন নুরুল আমিন।
সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির নাম ‘স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার’। এর তৃতীয় তলায় কথিত হেনোলাক্সের প্রধান কার্যালয়। আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ঠিকানা হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে কক্ষটির বাইরের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। অফিসের ঠিকানার ফোন নম্বরে কল করা হলেও কেউ ধরেননি।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে হেনোলাক্সের এই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে কেউ আসেননি। এর আগে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নিয়মিত অফিসে আসতেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তাদের অফিসে আসতে দেখা গেছে।’
কাদের জানান, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির জমির মালিক নুরুল আমিন। তবে স্কাই ভিউ ডেভেলপার কোম্পানি এর ওপর ১১ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছে। ভবনের ৩৬টি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের ১৮টির মালিক নুরুল আমিন, বাকি অর্ধেক পেয়েছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান।
কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক রতন কুমারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পেরেছে নিউজবাংলা। তিনি মঙ্গলবার দাবি করেন, পাঁচ দিনের ছুটিতে তিনি গাজীপুর আছেন এবং অফিস বন্ধ থাকার কোনো তথ্য তিনি জানেন না। নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গেও সোমবার থেকে যোগাযোগ নেই রতনের।
গাজী আনিসের আত্মহত্যার বিষয়টি অবশ্য জানেন রতন কুমার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিউজে দেখেছি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি এই প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর ধরে কাজ করছি, আমি আনিস নামের ভদ্রলোককে কখনও আমাদের অফিসে দেখিনি৷ ওনার নাকি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এমনটা হলে তার তো অফিসে আসার কথা এবং পুলিশেরও আসার কথা।
‘আমি এমন কিছু কখনও দেখিনি এবং আমাদের স্যার-ম্যাডামও এ বিষয়ে কখনও কোনো কিছু বলেননি। বিষয়টি জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছি।’
রতন কুমার বলেন, ‘হেনোলাক্স ১৯৮৪ সালে প্রথমে ত্বক ফর্সা করা ও মুখের দাগ দূর করার কয়েকটি ক্রিম নিয়ে বাজারে ব্যবসা শুরু করে। এরপর এর জনপ্রিয়তার কারণে হেনোলাক্সের মোড়কে নকল ক্রিমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। মামলা মোকদ্দমা করেও নকল ক্রিমের বাজার বন্ধ করতে না পেরে ২০০৪ সালে এই ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হেনোলাক্স কর্তৃপক্ষ।
‘এরপর নুরুল আমিন হেনোলাক্স ফুড নামে লাইসেন্স নিয়ে রেডি টিসহ দুই-একটি খাদ্যপণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। নুরুল আমিন ২০১২ সালে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের লাইসেন্স নিয়ে এর অধীনে বেশ কিছু প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। তবে ২০১৯ সালের পর এই ব্যবসাতেও ধস নামে।’
রতন কুমার বলেন, ‘আমিন হারবালের উৎপাদনও বন্ধ, কোনো অর্ডার পাওয়া গেলে কেবল সেগুলো তৈরি করে সরবরাহ করা হয়।’
তিনি জানান, ব্যাবসায়িক মন্দার কারণে কদমতলীর কারখানাটি অন্য এক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন নুরুল আমিন। এখন পুরানা পল্টনের ফ্ল্যাট ও কারখানা ভাড়া ছাড়া হেনোলাক্স গ্রুপের আর কোনো দৃশ্যমান আয়ের উৎস নেই।
রতন কুমার বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কর্মকর্তা আছি, তারা পল্টনের অফিসে বসি। আমি মূলত পুরানা পল্টনের ভবনটির ও কারখানার ভাড়া তুলি। আর মো. তসলিম উদ্দীন নামে আমিন হারবালের একজন মার্কেটিং ম্যানেজার আছেন। তিনি দৌড়াদৌড়ি করে হারবালের কিছু অর্ডার নিয়ে আসেন, এভাবেই চলছে।’
আমিন হারবাল লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. তসলিম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই পদে আছেন। তিনি মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমিন হারবালের প্রসাধনীর প্রচার ও বিপণনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে সোমবারের পর থেকে তাকেও অফিসে দেখা যায়নি। তসলিমের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নুরুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে। শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাদিম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের সবাই তাকে হেনোলাক্সের কর্ণধার হিসেবে চেনেন।’
ঢাকায় হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পরই নুরুল আমিনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে উল্লেখ করে নাদিম সরকার বলেন, ‘নুরুল আমিন সাহেব আমাদের এলাকায় সহজ-সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার পরিবার অতটা সচ্ছল ছিল না। শুনেছি আগে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। তবে ঢাকায় গিয়ে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়।
‘বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কামান। ঢাকাসহ নরসিংদীতে অনেক জায়গাজমি কেনেন। তবে আবার এই হেনোলাক্স লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বলে আমরা শুনেছি। হেনোলাক্স ছাড়া তার আর কোনো ব্যবসা আছে বলে আমার জানা নেই।’
নুরুল আমিনের শ্বশুরবাড়িও একই এলাকায় জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনার কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। শুধু ঈদের সময় বছরে দুই-একবার গ্রামে আসেন।’
আরও পড়ুন:জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করা কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গাজী আনিসুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর পান্টিতে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে দাফন করা হয়।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করে পান্টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টায় আনিসের মরদেহ ফ্রিজিং ভ্যানে করে এলাকায় আনা হয়। এ সময় এত মানুষের সমাগম হয় যে ভিড় সামলানো কঠিন হচ্ছিল। গাজী আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে গাজী আনিসের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে পান্টিতে পৌঁছায়। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। একই সঙ্গে অভিযুক্ত হেনোলাক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের কঠোর শাস্তির দাবি করেন আনিসের বড় ভাইসহ এলাকাবাসী।
পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পান্টি মসজিদে জানাজা শেষে পান্টি ঈদগাহ গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় রাজনৈতিক নেতা, এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন।
এইচএসসি পরিক্ষার্থী আঁচল, এসএসসি পরিক্ষার্থী অহনা ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী অবনির বাবা গাজী আনিস কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি জীবনের উপার্জিত সর্বস্ব হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন বলে জানিয়ে গেছেন।
মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও নুরুল আমিন কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এ নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।
এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, আনিসের মুখমণ্ডলসহ শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এ ঘটনায় হেনোলাক্স গ্রুপের মালিক নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন আনিসের বড় ভাই নজরুল ইসলাম। মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী আনিসকে হারিয়ে তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শঙ্কায় স্ত্রী স্বপ্না খাতুন। অবিলম্বে পাওনা টাকা ফেরতসহ আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তিনি, তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
গাজী আনিসের বড় মেয়ে আঁচলের দাবি, কেউ তার বাবার শরীরে আগুন দিয়েছে নাকি তিনি নিজেই দিয়েছে এ বিষয়টিও তদন্তের।
আরও পড়ুন:সাত দিনের রিমান্ড শেষে পদ্মা সেতুর নাট খুলে টিকটক করা যুবক বাইজীদ তালহাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক সামসুল আলম বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার জামিন আবেদন নাকচ করে এ নির্দেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জজ আদালতে জামিনের আবেদন করব।’
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর জানান, ২৭ জুন বাইজীদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারক তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
২৬ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন এক যুবক।
পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
বাইজীদের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে। একসময়ের ছাত্রদলকর্মী বাইজীদ বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা ও পটুয়াখালী বিএনপিসংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাইজীদ অতীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য