চলতি শতকের শুরুতে রাজধানীবাসীকে বায়ুদূষণ থেকে বাঁচাতে সড়ক থেকে টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনের সব যানবাহন তুলে দিয়ে চালু করা হয় ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিন বাহন। পাশাপাশি বাস বা ব্যক্তিগত গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে পেট্রল-ডিজেলের পরিবর্তে শুরু হয় কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস বা সিএনজির ব্যবহার। এতে নগরীর বায়ুদূষণ পরিস্থিতিতে রাতারাতি পরিবর্তন আসে।
২০০০ সালের আগের ঢাকার বাতাস ছিল গাড়ির কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। নাক-কান জ্বালা করা কিংবা শ্বাসজনিত নানা রোগ ছিল নিত্যসঙ্গী। জ্বালানি হিসেবে সিএনজির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এসব সমস্যা অনেকাংশে কমে আসে।
দুই দশক পর রাজধানীতে আবার ফিরে আসতে শুরু করেছে সেই কালো ধোঁয়া। কয়েক বছর ধরে বাস, ট্রাকসহ বেশকিছু যানবাহনের সিএনজি ছেড়ে ডিজেলে ফেরার প্রবণতাকে এ জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে।
পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জ্বালানি হিসেবে সিএনজি ব্যবহার করলে বায়ুদূষণ কমে আসে। তবে এতে গাড়ির ইঞ্জিনের আয়ুষ্কালও একই সঙ্গে কমে যায়। পাশাপাশি ডিজেল এবং সিএনজির দামে পার্থক্যও অনেক কম। এ কারণে বাণিজ্যিকভাবে যেগুলো বড় পরিবহন হিসেবে পরিচিত, যেমন: বাস বা ট্রাক, এ বাহনগুলোতে ডিজেল ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে।
জ্বালানি হিসেবে পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে সিএনজি ব্যবহার করলে কালো ধোঁয়ার পাশাপাশি বায়ুদূষণ কমে। ছবি: পিয়াস বিশ্বাস/ নিউজবাংলা
তেলচালিত এসব বাহন ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এগুলো বাতাসে ক্ষতিকর কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে সড়কে চলাচল করা বাস, ট্রাক, পিকআপ বা সরকারি মালিকানাধীন গাড়িগুলোই কালো ধোঁয়ার প্রধান উৎস।
২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর টু-স্ট্রোক বেবি ট্যাক্সিসহ পুরাতন যানবাহন বন্ধের পর এক দিনে ঢাকার বায়ুতে দূষণের মাত্রা কমে যায় প্রায় ৩০ শতাংশ। তবে ২০১৩ সাল থেকে তা আবারও বাড়তে থাকে। গত নয় বছরে সেই দূষণ বাড়তে বাড়তে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্তত ৪০ ভাগের জন্য দায়ী এই কালো ধোঁয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ও বায়ুদূষণ বিষয়ক গবেষক অধ্যাপক আবদুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বায়ুদূষণের একটি বিরাট অংশ যানবাহন থেকে আসে। আমরা যে তিনটি মেজর সোর্স ধরি বায়ুদূষণের তার মধ্যে কালো ধোঁয়া, একটি ব্রিক ফিল্ড এবং কনস্ট্রাকশন। গাড়ির কালো ধোঁয়া থেকে যেটা আসে এটা প্রায় ৪০ শতাংশ।’
কালো ধোঁয়া কী এবং কেন বের হয়?
গাড়ির ইঞ্জিন মূলত জ্বালানি তেল পুড়িয়ে শক্তি উৎপন্ন করে যেটি দিয়ে গাড়িটি চলে। কালো ধোঁয়া হলো এই জ্বালানির না পোড়া অংশ। সাধারণত গাড়ি পুরাতন হয়ে গেলে এবং এটিকে ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে এই কালো ধোঁয়া উৎপন্ন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মূলত দুই কারণে বের হয়। গাড়ি যত পুরাতন হতে থাকে এর কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে। গাড়িতে যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটা থেকে তার এনার্জি তৈরি হয়। কিন্তু গাড়ির কর্মক্ষমতা কমে গেলে এই তেলটা কমপ্লিট বার্ন হয় না বা কনভার্সন হয় না। যখনই এটা হয় না, তখনই তার একটি অংশ একজস্টের সাথে বের হয়ে আসে। এটাকে বলে ইনকমপ্লিট কনভার্সন।
‘গাড়ির একটি রেগুলার মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন। এর মধ্যে একটি হলে নিয়মিত প্রতি ৩ হাজার কিলোমিটার চলার পর মোবিল পরিবর্তন করা। এটা করা হয় না। এ কারণে গাড়ির যে লুব্রিকেটিং ফাংশন, এটা ঠিকভাবে কাজ করে না। সেখান থেকে পলিউশন হয়।’
অনেক সময় তেলের পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের গুণগত মান ঠিক না থাকলেও কালো ধোঁয়া তৈরি হতে পারে। অধ্যাপক সালাম বলেন, ‘আবার যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, সেটাও অনেক সময় ভালো মানের থাকে না। এটাও দূষণের কারণ। মুলত এই তিন কারনে কালো ধোয়াটা তৈরি হয়।
‘কালো ধোঁয়ার একটি বড় অংশ হলো টক্সিক কার্বন। এটা গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং মানুষের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। এতে থাকে অনেকগুলো ক্ষতিকর উপাদান যেমন হাইড্রো কার্বন, কাবন মনোঅক্সাইড এবং জ্বালানি তেলের আনবার্ন্ট কিছু অংশ। এগুলো প্রত্যেকটাই খুব ক্ষতিকর।’
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি রোধে বেশ কয়েকটি পরামর্শও দেন এই গবেষক। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন যেটা করতে হবে, গাড়ির জ্বালানিটি কোয়ালিটি ধরে রাখতে হবে এবং গাড়ি নিয়মিত মেইনটেন্যান্স করতে হবে। মূলত পুরাতন গাড়িই এর জন্য দায়ী।
‘আমাদের এখানে নিয়ম আছে যে ২০ বছরের পুরাতন গাড়ি রাস্তায় চলতে পারবে না। এখন এটা ঠিক মতো মেইনটেইন করা হয় কিনা জানি না। পাশাপাশি আইনের প্রয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে।’
কালো ধোঁয়া যে ক্ষতি
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও কালো ধোঁয়া মুলত মানুষের ফুসফুস ক্যান্সারের একটি বড় কারণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নারী ও পুরুষের বন্ধ্যাত্বের একটি বড় কারণ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালো ধোঁয়া মানেই হলো কার্বন মনোঅক্সাইড, ডাই-অক্সাইড এবং ধাতব পদার্থ– মূলত সিসা। এগুলো মানুষের শরীরে গেলে ফুসফুসের ক্ষতি হয়, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং এক ধরনের প্রদাহ তৈরি করে। এর ফলে আমাদের শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো বেড়ে যায়।
‘এর মধ্যে হাঁপানি কাশি ও কারও কারও অ্যাজমাটিক সমস্যাও হতে পারে। দীর্ঘদিন এটি গ্রহণে আমাদের ফুসফুসে ক্যান্সারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। কার্বন মনোক্সাইড শরীরে শোষিত হয়ে আমাদের লিভার ও কিডনিতে জটিলতা তৈরি করে এবং নারী পুরুষের বন্ধ্যাত্ব তৈরি করতে পারে। বায়ু দূষণের একটি বড় উপাদান এই কালো ধোঁয়া। শিশুদের জন্য এর প্রভাব মারাত্মক। এটি আমাদের বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ এফেক্ট বাড়িয়ে দেয়। এর কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ে, জলবায়ূ পরিবর্তনে প্রভাব রাখে।’
দায় এড়াচ্ছেন পরিবহন মালিক ও ট্রাফিক বিভাগ
কালো ধোঁয়ার ক্ষতি জানার পরেও এটি ছড়ানোর দায় নিতে চায় না পরিবহন মালিকরা। তাদের দাবি, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিতই সদস্যদের তাগাদা দেয়া হয়।
পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সতর্কতার কথা সব সময় বলা হয়। এটা তো মালিকের বিষয় না। পাম্পের তেলের সমস্যার কারণে অনেক সময় কালো ধোঁয়া হয়।
‘কালো ধোঁয়া পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও অনেক সময় ব্যবস্থা নেয়। বাসে কোনো কালো ধোঁয়া নেই। ম্যাক্সিমাম গাড়ি তো খারাপ অবস্থায় থাকতে পারে না। কয়েকটি গাড়ি দিয়ে তো সবগুলোকে মূল্যায়ন করা যায় না। আমরা সব সময় বলি গাড়ি ঠিক রাখার জন্য। যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেক। আমরা সব সময়ই বলে থাকি।’
দেশের মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হলে তা জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অবশ্য খালি চোখে কালো ধোঁয়ার সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্রের অপেক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না ট্রাফিক বিভাগ। তাদের দাবি, কালো ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র না থাকায় চাইলেও কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী কোনো যানকে জরিমানার আওতায় আনা যাচ্ছে না।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহনের কালো ধোঁয়ার কারণে অ্যাকশন নিতে হলে আমাদের ধোঁয়া পরিমাপক যন্ত্র লাগবে, সেটা আমাদের দেশের ট্রাফিক বিভাগের কাছে নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ধোঁয়ার নির্ণয়ক মান নির্ধারণ করে দেয়া আছে, কিন্তু আমরা তো খালি চোখে সেটা মাপতে পারব না।
‘তাই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আমরা এই ব্যাপারে একেবারেই নিরুপায়। তবে ধোঁয়া ডিটেকটরের জন্য ট্রাফিক বিভাগ ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে আবেদন করে রেখেছে। এটা পেলেই আমরা কালো ধোঁয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া শুরু করতে পারব।’
২০২১ সালের হিসাবে, দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে ৪৭ লাখ ২৯ হাজার ৩৯৩টি। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ১৬ লাখের বেশি গাড়ি।
আরও পড়ুন:
খাল-নদী সংস্কারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নিজস্ব অর্থায়নে শুরু করেছে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের খনন। নগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
নগরীর শহীদ নগর এলাকায় বুধবার বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেলের পুনর্খনন কাজের উদ্বোধন হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের খাল-নদীগুলো সংস্কার করতে হবে। সংস্কারে কারও ব্যক্তিগত ক্ষতি করা সরকারের উদ্দেশ্য নয়। তবে যারা খাল-নদী দখলের মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন, আমাদের কাজে তারা মনঃক্ষুণ্ন হতেই পারেন।
‘দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নগরী ঢাকা। এর পরিবেশ ঠিক করতে হবে আমাদের। ঢাকার পরিবেশ সুন্দর করার মাধ্যমে আমাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। ঢাকাকে উন্নত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য খাল এবং নদীগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।’
মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘সিএস ম্যাপ অনুযায়ী আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনর্খনন কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলের ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশের খনন হবে। নদীর সীমানা নির্ধারণ করে বেষ্টনী দেব।
‘আদি বুড়িগঙ্গা, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ, চকবাজার ও পুরান ঢাকা ঘিরে কীভাবে একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি করা যায়, সে চেষ্টা চলছে। নদীর প্রবাহ ও নদী পুনরুদ্ধার করে একটি বাসযোগ্য নগরী উপহার দেয়া হবে।’
দক্ষিণ সিটির নিজস্ব অর্থায়নে বুড়িগঙ্গায় খননকাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘সাড়ে ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী অর্থবছরে আরও বেশি বরাদ্দ রাখা হবে। আনন্দের বিষয় যে আমরা কাজটি শুরু করতে পেরেছি।’
পরে নগরীর ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন মেয়র। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ, সচিব আকরামুজ্জামান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকেরসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা।
আরও পড়ুন:প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ ও সক্ষমতা তৈরিসহ ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সুপারিশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। ওয়াশ খাতে বরাদ্দ না বাড়ালে ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাজ ধীরগতিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাজেট বরাদ্দ কম হলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হয়ে পড়বে। যদিও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
বাজেটে হাওর এবং পার্বত্য এলাকায় বরাদ্দ কিছুটা বেড়েছে, তবে চর এবং উপকূলীয় এলাকায় বরাদ্দ বাড়েনি। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। ওয়াশ খাতের আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বরাদ্দ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
নিরাপদ পানি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, পিপিআরসি, ইউনিসেফ বাংলাদেশ, ফানসা-বিডি, এফএসএন নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ওয়াটার ইনটিগ্রিটি নেটওয়ার্ক (বাউইন), স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, অ্যান্ড ওয়াটার পভার্টি, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম এবং ওয়াশ অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এতে উপস্থিত ছিলেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, ওয়াটার এইডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর হোসেন ইশরাত আদিবসহ ওয়াশ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন:রাজধানী ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি আর সিলেটে হতে পারে ভারি বৃষ্টি।
আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া নিয়ে মঙ্গলবার সকালে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঢাকা আবাহওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আর সিলেটেও বৃষ্টি হবে। ওই অঞ্চলে মোটামুটি ভারি বৃষ্টিই হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলে মূলত বেশি বৃষ্টি হবে। সেই তুলনায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কম থাকবে। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়বে।’
সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এতে বলা হয়, এ ছাড়া রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় সারা দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ীভাবে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৬ শতাংশ। সোমবার সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল তেঁতুলিয়ায় ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ২৪ ঘণ্টায় সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে মোংলায় ১৩১ মিলিমিটার।
যানবাহনের প্রচলিত অ্যাসিড ব্যাটারির মেয়াদকাল ছয় মাস থেকে এক বছর। এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অথচ একটি লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি চলে পাঁচ থেকে ছয় বছর। এটি যানবাহন চালানোর খরচ কমিয়ে দেয়। পরিবেশও বাঁচায়।
এমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারির থ্রি হুইলার বাজারে আনছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাঘ মোটরস’। আগামী জুলাইয়ে উৎপাদনে যাবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি জানান, দেশে এটি হবে প্রথম ইকো থ্রি-হুইলার ট্যাক্সি। এর নাম রাখা হচ্ছে ‘বাঘ’। গাজীপুরের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন শুরু হবে।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের তেলের বিকল্প নিয়ে ভাবতেই হবে। শুধু থ্রি-হুইলারই নয়, আগামী তিন বছরে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনও যুক্ত হবে বাঘ মোটরসের বহরে।’
গত মার্চে এ বাহনটিকে চলাচলের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। উচ্চ নিরাপত্তা ফিচার, কম খরচ ও উন্নত প্রযুক্তির এই গাড়ির দাম ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাঘ মোটরস জানিয়েছে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের থ্রি হুইলারে তেমন গরম অনুভূত হয় না।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘বাঘ মোটরস প্রথম কোনো বাংলাদেশি কোম্পানি নিজস্ব প্যাটেন্ট দিয়ে, নিজস্ব ডিজাইনে নিজস্ব প্রকৌশলে দেশে গাড়ি উৎপাদন করছে। বর্তমানে দেশে অন্যরা যেসব গাড়ি উৎপাদন করছে, সেগুলো প্রযুক্তিসহ সব কিছুই অন্য দেশের। এখানে শুধু উৎপাদন হচ্ছে। আর আমাদের পেটেন্ট থেকে শুরু করে সবকিছুই নিজস্ব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এ পরিবহন শতভাগ পরিবেশবান্ধব, কোনো দূষণ নাই, সৌরশক্তিতে চলে, গ্রিন এনার্জি ব্যবহার হয়। এমন হাজারটা কারণ আছে, যাতে মানুষ আমাদের এই বাঘ ইকো মোটরসের ইকো ট্যাক্সি ব্যবহার করবে।’
অ্যাসিড ব্যাটারির কারণে দেশে প্রায় ২ কোটি লিটার অ্যাসিড নির্গত হয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। ফলে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন উৎসাহিত করার সময় এসেছে।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই ইকো থ্রি-হুইলারের ডিজাইন-ড্রইং করে পেটেন্ট করেছি। এটা পৃথিবীর প্রথম সোলার ইকো থ্রি-হুইলার, যেটা লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারিতে চলে। এটির পারমিশন পেতে আমাদের প্রায় ৩০ মাস সময় লেগেছে।’
এটির দাম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘একটা সিএনজি অটোরিকশার দাম এখন প্রায় ১৮ লাখ টাকা, সেখানে আমরা একটা ইকো থ্রি-হুইলার ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায় দিচ্ছি। আমাদের একটা ব্যাটারি ৬ বছর পর্যন্ত পরিবর্তন করতে হয় না। প্রচলিত যেসব অ্যাসিড ব্যাটারি আছে, ছয় বছরে সেখানে ১২টি ব্যাটারি প্রয়োজন হয়।’
২০২০ সালের এপ্রিলে বাঘ মোটরস ১১টি যান তৈরি করে। ডুয়াল পাওয়ার-ব্যাটারি এবং সৌরচালিত এ থ্রি-হুইলারে যাত্রীর নিরাপত্তায় বেশ কিছু ফিচার যুক্ত হয়েছে। এর একটি হচ্ছে যাত্রীর সিটের সঙ্গে ‘প্যানিক বাটন’ রাখা রয়েছে। এই বাটনে চাপ দিলে গাড়ির গতি মুহূর্তেই ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারে নেমে আসবে। এরপর ২০ মিনিটের জন্য গাড়িটি অচল হয়ে যাবে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সতর্কবার্তাও পাঠাবে। এতে কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সির কার্যকারিতা নিষ্ক্রিয় করতে পারবে।
এতে থাকবে নিরাপত্তা ক্যামেরা, যা একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে যুক্ত থাকবে। সব ধরনের ভিডিও রেকর্ড ও সংরক্ষণ থাকবে সার্ভারে। থাকবে এমবেড করা রিয়াল-টাইম জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম, যা থ্রি-হুইলারের রিয়াল-টাইম অবস্থান দেখাবে। চুরি ঠেকাতে থাকবে আলাদা প্রযুক্তিও।
গাড়িগুলোতে উচ্চমানের ইস্পাত ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সাধারণত বাস-কারে ব্যবহৃত হয়।
জসিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের গাড়ি শতভাগ মেটাল বডির তৈরি। পুরো বডিই মোটরগাড়ির মতো করে তৈরি, যা যাত্রীকে অধিক নিরাপত্তা দেবে। ব্রেক ও লাইট ছাড়া পুরো গাড়ির দুই বছরের রিপ্লেসমেন্ট ওয়ারেন্টি থাকবে। গাড়িতে ওয়াইফাই সিস্টেম থাকবে, মোবাইল চার্জিং সিস্টেম থাকবে, জিপিএস থাকবে, মনিটর থাকবে।’
২০২৫ সালের পর বিশ্বে কোনো ডিজেলচালিত গাড়ি তৈরি হবে না। ২০৩০ সাল থেকে তৈরি হবে না কোনো অকটেন গাড়িও। সব গাড়িই বিদ্যুৎচালিত গাড়িতে পরিণত হবে।
নিজস্ব রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে একটি ট্যাক্সি সার্ভিস হিসেবে কাজ করবে এই ইকো ট্যাক্সি। এর বাইরে ব্যক্তিগতভাবেও এটি কেনা যাবে।
সাধারণ সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলার এবং হিউম্যান-হলারের চেয়ে বড় চাকা থাকবে বাঘ ইকো ট্যাক্সিতে। পাশাপাশি অ্যান্টি-লক ব্রেক সিস্টেম (এবিএস)-সহ একটি হাইড্রোলিক ব্রেক সিস্টেমও থাকবে। গাড়ির ছাদে থাকবে সোলার প্যানেল। এতে ব্যবহৃত একটি ৪৮০ ওয়াটের সোলার প্যানেল দিনের বেলায় ৪০ শতাংশ চার্জ হবে ব্যাটারিতে। যার ফলে অতিরিক্ত ৪০ কিলোমিটার যেতে পারবে গাড়িটি।
প্রতি কিলোমিটারে এটি চলার খরচ হতে পারে ১ দশমিক ৩৩ টাকার মতো। সম্পূর্ণ চার্জে ১৫০০ ওয়াটের গাড়িটি ৯০ কিলোমিটার চলতে পারে। এতে চালকের দিনে খরচ হবে ১২০ টাকা। ব্যাটারির চার্জ শেষ হলেও চিন্তা নেই। ৬০ ভোল্টের ব্যাটারি সম্পূর্ণ চার্জ হতে মাত্র ১৫ মিনিট সময় লাগবে।
বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব চার্জিং পয়েন্টও বসানো হবে। চার্জিং পোর্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-সহ একটি মাইক্রো চিপ ইনস্টল করা থাকবে। একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে পোর্টটি খোলা হবে। গাড়ির মালিক নির্দেশ দিলেই চার্জ শুরু হবে।
আরও পড়ুন:স্মরণকালের ভয়াবহ তাপদাহে ধুঁকছে ইউরোপ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে ঠেকছে যে ফ্রান্সের একটি অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের আয়োজন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের গিরন্ড জেলার বন্দর শহর বোর্দোতে আপাতত কনসার্ট এবং বড় জনসমাবেশ করা যাবে না।
গত সপ্তাহে ফ্রান্সের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কায় করছে দেশটির আবহাওয়া অফিস।
ফ্রান্সের আবহাওয়া অফিস বলছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যতীত স্থানগুলোতেও অভ্যন্তরীণ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ থাকবে। তবে ব্যক্তিগত উদযাপন যেমন বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হবে।
স্থানীয় কর্মকর্তা ফ্যাবিয়েন বুসিও ফ্রান্স ব্লু রেডিওকে বলেন, ‘প্রত্যেকই এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে তীব্র তাপের সময়কাল আরও বেশি এবং দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানায়, তারা জনগণকে সতর্ক করেছে। এই আবহাওয়ার যেন কেউ বাইরে না বের হয়।
গিরন্ডের আবহাওয়া কর্মকর্তা মেটিও ফ্রান্স বলেন, তীব্র গরমে ধুঁকছে ফ্রান্স। উত্তর আফ্রিকা উড়ে আসা গরম বাতাসের কারণে এমনটা ঘটেছে।
‘প্যারিসে তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে। এটি খরা দাবানলের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তুলুসের বাসিন্দা জ্যাকলিন বননড। তিনি বলেন, ‘আমি বয়স ৮৬। এখানেই আমার জন্ম। মনে হচ্ছে এটিই আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ তাপপ্রবাহ।’
গ্রিড অপারেটর আরটিই জানিয়েছে, এয়ার-কন্ডিশনার এবং ফ্যানের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ফ্রান্সকে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে বাধ্য করছে।
একই দশার মধ্যে আছে স্পেন, ইতালি এবং যুক্তরাজ্যও।
শতাব্দীর উষ্ণতম তাপদাহ অনুভূত হচ্ছে স্পেনে। সপ্তাহান্তে তাপমাত্রা সর্বোচ্চে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পৌঁছানোর পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া পরিষেবা-অ্যামেট। আঞ্চলিক সরকার জানিয়েছে, কাতালোনিয়ায় ২০ হাজার হেক্টর জমি দাবানলে পুড়ে গেছে।
ইতালির বৃহত্তম নদী পো-এর বিশাল অংশে পানি এতটাই কম যে, স্থানীয়রা বালির বিস্তৃতির মাঝখান দিয়ে হেঁটে যেতে পারছে। এমনকি যুদ্ধকালীন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পুনরুত্থিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ ইংল্যান্ডে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছবে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় লন্ডনে তৃতীয় স্তরের তাপ-স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি হয়েছে।
চরম তাপ ইউরোপে সীমাবদ্ধ না
গেল সপ্তাহে রেকর্ড তাপমাত্রার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশকে বাড়ির ভেতরে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ভারতের দিল্লিতে চলতি গ্রীষ্মের ২৫ দিনে সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে নির্গত হচ্ছে। এ ধরনের গ্যাস সূর্যের তাপকে আটকে রাখে, ফলে গ্রহটি উষ্ণ হয়ে ওঠছে।
বিএনপি বন্যার্তদের পাশে নেই, বরং বন্যা নিয়ে তারা অপরাজনীতি করছে বলে মনে করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।
রাজধানীর হাতিরঝিলে সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
হাতিরঝিলের প্লাটিনাম পার্কে যুবলীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শেখ পরশ।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য বিরাট হুমকি। আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই বাংলাদেশ রেখে যেতে বৃক্ষরোপণ তথা উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশের বিকল্প নেই। পরিবেশ সুরক্ষায় যুবলীগ সব সময় মাঠে থাকবে। যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।’
বন্যা নিয়ে রাজনীতির সমালোচনা করে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপি-জামাত বন্যার্তদের পাশে না থাকলেও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে অপরাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মন সঙ্কীর্ণ, তারা আত্মকেন্দ্রিক। এর আগে তারা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছে। এখন তারা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তির রাজনীতিতে ব্যস্ত। মানুষের পাশে দাঁড়াবার কোন কার্যকর উদ্যোগ তাদের দেখি না।
‘কিছু করার মুরোদ নেই কিন্তু ক্ষমতায় যেতে তারা মরিয়া। বিএনপির নেতারা ভোগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তারা পুরনো স্বভাব বদলাতে না পেরে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। আমাদের গর্বের পদ্মা সেতু নিয়ে তারা বিদেশিদের সাথে ষড়যন্ত্রে মেতেছিল। সেই চক্রান্ত পেছনে ফেলে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
বন্যার্ত মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে মারা যাওয়া সিলেট মহানগর যুবলীগ নেতা টিটু চৌধুরী ও নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা যুবলীগের নেতা আবির আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আলহাজ্ব এ কে এম রহমত উল্লাহ। তিনি পরিবেশ সুরক্ষায় রাজধানীর তিনটি থানা এলাকার জন্য ১০ হাজার গাছ উপহার দেয়ার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা।
আরও পড়ুন:বন্যাকবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জে দুর্ভোগ বাড়িয়েছে বৃষ্টির পানি; কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি কখনও বা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে ওইসব এলাকায়। শিগগিরই এ বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা নেই।
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় এ মাসজুড়ে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন ঢাকা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাত তেমন কমার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না সিলেটে। মঙ্গলবার সিলেটে বৃষ্টি কিছুটা কমতে পারে। এর পর আবার শুরু হবে। বিভাগজুড়ে অতি ভারি বর্ষণের আভাস রয়েছে।
‘আসাম, মেঘালয়েও বন্যা হচ্ছে। এ কারণ ও অতি ভারি বৃষ্টি মিলিয়ে, পরিস্থিতি খারাপ। সিলেটে ২৯ জুন পর্যন্ত মাঝামাঝি ধরনের ভারি বৃষ্টি থেকে অতিভারি বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।’
ঢাকায় বৃষ্টির পূর্বাভাস নিয়ে আবাহওয়াবিদ মনোয়ার বলেন, ‘ঢাকায় অতিভারি বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনিতে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হবে।’
সোমবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার, যা অস্থায়ীভাবে ঘন্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে বৃদ্ধি পেতে পারে।
সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার হিসেবে দেশে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ২৪২ মিলিমিটার। এ সময়ের মধ্যে সিলেটে বৃষ্টি হয়েছে ২২ মিলিমিটার।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য