এমপিওভুক্ত ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতি বের করাই তাদের কাজ। অথচ সেই সংস্থাতেই চর্চা হচ্ছে নানা অনিয়ম, উঠছে দুর্নীতির অভিযোগও। সংস্থাটি হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)।
নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা ৪ থেকে ১৪ বছর ধরে ঘুরেফিরে চাকরি করছেন এই অধিদপ্তরে। এদের কেউ কেউ পদোন্নতি পেলেও ‘ইনসিটু পদায়ন’ (আগের পদে পুনর্বহাল) নিয়ে নিচের পদে বহাল থেকে চাকরি করছেন। কেউ কেউ আবার চাকরি জীবনের বেশির ভাগ সময় ইতোমধ্যে পারও করে দিয়েছেন এই দপ্তরে।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) প্রধান কাজ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর বা সংস্থায় পরিদর্শন এবং নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়। এসবের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের প্রতি তিন বছর পর পর বদলি করতে হবে। অর্থাৎ একই দপ্তরে তিন বছরের বেশি সময় থাকা যাবে না। বিষয়টি নির্দিষ্ট করে সরকার প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এ ছাড়া সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি বা পদায়ন নীতিমালায়ও বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। একই সঙ্গে এক দপ্তর বা সংস্থা থেকে অন্য দপ্তর বা সংস্থায় সরাসরি বদলি না করার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। এই মধ্যবর্তী সময়ে তিন বছরের শিক্ষকতা করারও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে এ সরকারের বদলিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ও নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করেই চলছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর।
২০১৫ সালের ৮ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারীর সই করা ‘মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মচারীদের বদলি’ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘একই পদে তিন বছরের অধিককাল যাবৎ নিয়োজিত কর্মচারীকে বাস্তব অবস্থাভেদে অন্যত্র বদলি করতে হবে।’
এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজের শিক্ষক বদলি বা পদায়ন নীতিমালা-২০২০-এও বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। ২০২০ সালের ২ জুন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দের সই করা নীতিমালায় বলা হয়েছে: ‘কোনো কর্মকর্তা দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থায় একাধিক্রমে তিন বছরের বেশি কর্মরত থাকতে পারবেন না।’
নীতিমালায় আরও উল্লেখ রয়েছে ‘কোনো কর্মকর্তাকে একটি দপ্তর/ অধিদপ্তর/সংস্থা/প্রকল্প থেকে বদলি করে অন্য কোনো দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থা/প্রকল্পে সরাসরি বদলি করা যাবে না। মধ্যবর্তী সময়ে তাকে কোনো কলেজে ন্যূনতম তিন বছর শিক্ষকতা করতে হবে।’
এসবের চর্চা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে হয় না বললেই চলে। শিক্ষাসংশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন এ দপ্তরের কর্মকর্তারা চলছেন অনেকটা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো। তাদের যেন কেউ কিছু করতে পারবে না। খোঁজ নিয়েও তাই দেখা গেছে। বিধিমালা লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে থেকে যাচ্ছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
দীর্ঘ সময় আছেন যারা
শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার ২৯ কর্মকর্তা কর্মরত আছেন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা পরিদপ্তরে। আর অধ্যাপক পদমর্যাদার আছেন একজন, যিনি এ দপ্তরের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ১০ কর্মকর্তা ন্যূনতম ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১৪ বছর ধরে ঘুরেফিরে চাকরি করছেন এ দপ্তরে। এদের মধ্যে কেউ কেউ চাকরি জীবনের অর্ধেক সময় এরই মধ্যে পার করে ফেলেছেন।
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিপুল চন্দ্র সরকার। যদিও তার মূল পদ উপপরিচালক। ২১তম বিসিএসের এ কর্মকর্তা ২০১১ সালে শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন এ দপ্তরে। এরপর মাঝখানে খুবই স্বল্প সময়ের বিরতি দিয়ে ফিরে এসেছেন আলোচিত এ দপ্তরে। প্রায় ১১ বছর ঘুরেফিরে এ দপ্তরেই রয়েছেন এ কর্মকর্তা। এ সময়ের মধ্যে পরিচালকের পদ শূন্য থাকায় তিনি কিছুদিন এ দায়িত্বও পালন করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিআইএ-র এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি মাত্র ১৬ দিন পটুয়াখালী সরকারি কলেজে চাকরি করেন। এরপর আবার ফিরে আসেন ডিআইএতে।’
ডিআইএ-র এ কর্মকর্তা নিয়মবহির্ভূতভাবে দখল করে আছেন প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় শীর্ষ যুগ্ম পরিচালকের পদ। কারণ পদটি অধ্যাপক পদমর্যাদার। এ বিষয়ে অডিট আপত্তিও দিয়েছিল বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক অফিসের অডিট দল।
এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিসিএস শিক্ষক সমিতির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা। তারা বলেন, ‘ডিআইএর যুগ্ম পরিচালক পদটি অধ্যাপক পদমর্যাদার। অথচ সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার বিপুল চন্দ্র সরকার এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশে কি যোগ্য অধ্যাপক নেই যাকে এখানে পদায়ন দেয়া যায়?’
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক টুটুল কুমার নাগ সহকারী পরিদর্শক হিসেবে এ দপ্তরে যোগদান করেন ২০১২ সালে। এরপর ঘুরেফিরে আবার এসেছেন এ দপ্তরেই। দুই দফায় পদোন্নতি পেয়ে তিনি এখন উপপরিচালক। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ১০ বছর।
ড. এনামুল হক সহকারী পরিদর্শক পদে ডিআইএতে যোগদান করেন ২০০৮ সালে। এরপর তিনি দুই দফা থেকে পদোন্নতি পেয়েছেন। এখন দায়িত্ব পালন করছেন শিক্ষা পরিদর্শক হিসেবে। সবশেষ পদোন্নতি পাওয়ার পর এ কর্মকর্তাকে ‘ইনসিটু পদায়ন’ (আগের পদে পুনর্বহাল) দেয়া হয়। গত ১২ মে এ শিক্ষা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে যশোরের ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তদন্তে ডিআইএ কার্যালয়ে যায় দুদক।
মো. আলমগীর হাসান ডিআইএতে যোগদান করেন ২০১৮ সালে। কর্মরত আছেন শিক্ষা পরিদর্শক পদে। এরপর থেকে তিনি আছেন এ দপ্তরেই।
এ ছাড়া সহকারী শিক্ষা পরিদর্শক মনিরুজ্জামান ২০১২ সালে, একই পদে প্রলয় দাস, মুহাম্মদ মনিরুল আলম ২০১৬ সালে, মো. আবদুল্লাহ আল মামুন ২০১৫ সালে ডিআইএতে যোগ দেন। আর মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম ও মুকিব মিয়া ২০১৮ সালে যোগ দেন। এর পর থেকে তারা ঘুরেফিরে ডিআইএ-তেই আছেন।
বিষয়টি নিয়ে এসব কর্মকর্তাদের অন্তত ছয় জনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে নিউজবাংলা। তবে তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। প্রসঙ্গটি তুলতেই কেউ কেউ মুঠোফোন কেটে দেন, কিংবা পরে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু পরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কেউ সাড়া দেননি। এ ছাড়া বাকিদের মধ্যে কেউ আছেন বিদেশে, কেউ ছুটিতে। ফলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কী মধু ডিআইএতে?
বিসিএস শিক্ষা সমিতির একাধিক নেতা জানান, আর্থিক সুবিধা বিবেচনা করলে শিক্ষা প্রশাসনের সবচেয়ে লোভনীয় কর্মস্থল ডিআইএ। এখানে পদায়ন ‘বাগিয়ে নিতে পারলে’ বৈধ ও অবৈধ নানা পন্থায় কা২ড়ি কাঁড়ি অর্থ কামানোর সুযোগ থাকে। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বা তদন্তে গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সরকারিভাবে যেমন ভ্রমণভাতা পান, তেমনি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান থেকেও নানাভাবে অবৈধ সুবিধা আদায় করতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি একটি কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, ডিআইএর কয়েক কর্মকর্তা নিরীক্ষার নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে পরিদর্শনকৃত প্রতিষ্ঠান থেকেও অর্থ আদায় করে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ঘুরেফিরে একই কর্মকর্তারা এখানে (ডিআইএ) দায়িত্ব পালন করায় এ দপ্তরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এখানে মধু (অর্থ) আছে বলেই তো এরা বছরের পর বছর এখানে চাকরি করছেন।’
সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে ডিআইএ'র এক শিক্ষা পরিদর্শকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্তও গড়িয়েছে। অভিযোগটি এখন দুদকের তদন্তাধীন।
যা বলছে কর্তৃপক্ষ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন হলো এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দিয়েছি। বিষয়টি আমি অবশ্যই খোঁজ নেব।’
পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক অলিউল্লাহ্ মো. আজমতগীর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বদলি করার এখতিয়ার হলো মন্ত্রণালয়ের। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই।'
নিরীক্ষার নামে পরিদর্শনকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ধরণের কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি, পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
সাবেক আমলারা কী বলছেন
একই কর্মকর্তারা ঘুরেফিরে একই দপ্তরে দীর্ঘ সময় থাকা এবং বারবার ফিরে আসা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক আমলারা। তারা বলছেন, এটা রীতিমতো সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, কীসের জোরে তারা এত দিন একই দপ্তরের নিয়োজিত রয়েছেন? কেনই বা তাদের বদলি করা হচ্ছে না। কী এমন মধু আছে এ দপ্তরে?
জানতে চাইলে সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আপনিই খোঁজ নিন, কেন তারা একই দপ্তরে এত দিন আছে? ঘুরেফিরে একই কর্মকর্তা এত বছর একই দপ্তরে থাকবে কেন? এখানে কী মধু আছে? মনে রাখতে হবে বেশি দিন এক জায়গায় থাকলে অনৈতিক অনেক কিছু হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাসচিব থাকাকালে ডিআইএ-এর দুষ্টচক্রের বৃত্ত ভাঙার জন্য পিয়ার ইন্সপেকশন সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এখনকার সিস্টেমে ৩০ বছর লাগবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইন্সপেকশন করতে।’
বিষয়টি পরিষ্কার করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পিয়ার ইন্সপেকশনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা পাশ্ববর্তী প্রতিষ্ঠানে অডিট করবেন, সেই প্রতিবেদন আসবে ডিআইএ-তে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। কে কোন প্রতিষ্ঠান অডিট করবেন তাও কম্পিউটারের মাধ্যমে সংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হবে। ডিআইএ কর্মকর্তারা মাঠে পরিদর্শনে যেতে পারবেন না। তারা শুধু প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কাজ করবেন। শুধু ওই প্রতিবেদনের বিশেষ প্রয়োজনে তারা ইন্সপেকশনে যাবেন। তারা (ডিআইএ কর্মকর্তারা) খালি টাকাপয়সা নিয়ে ইন্সপেকশন করে। এদের নানা বদনাম আছে।’
দীর্ঘদিন একই দপ্তরে কর্মরত থাকাকে অনিয়ম হিসেবে উল্লেখ করেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা অনিয়ম এবং সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো। তাদের বদলি করা উচিত। সব সরকারি কর্মচারীর জন্য একই বিধান। তাদের (শিক্ষা ক্যাডার) ক্ষেত্রে কেন আলাদা হবে। যদি তার বা তাদের পরিবর্তে কাজ করার মতো কেউ না থাকে তাহলে বিষয়টি অন্যভাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। দেশে নিশ্চয়ই এ ধরনের কাজ (অডিট পরিচালনা) করার মতো অনেক লোক আছে।’
তদন্ত চায় টিআইবি
একই দপ্তরে একই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন চাকরি করলে ‘যোগসাজশ ও অনিয়ম’-এর সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। তারা এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছে।
টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন ‘বছরের পর বছর একই দপ্তরে থাকা- অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। কেন তারা দীর্ঘদিন একই দপ্তরে কর্মরত আছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। কেননা একই ব্যক্তি যদি একই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন থাকেন তাহলে যোগসাজশ ও অনিয়মের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ জন্য আমরা মনে করি এর পেছনে নিশ্চয়ই অন্তর্নিহিত কোনো কারণ আছে, যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।
‘যাদের কাজ জবাবদিহি নিশ্চিত করা, তারা যদি এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় তবে তা সত্যিই দুঃখজনক। এ জন্য বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) কাছে দাবি জানাচ্ছি’, বলেন ইফতেখারুজ্জামান।
আরও পড়ুন:বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউএফটি)-এর ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগের আয়োজনে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় ‘লেদার ক্রাফট এক্সিবিশন ২০২৫’। ৬৫ জন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীটি ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা চামড়াজাত পণ্য ডিজাইন ও কারুশিল্প বিষয়ক একটি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মশালার সফল পরিসমাপ্তির ফসল।
প্রদর্শনীতে শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি নানান রকমের সৃজনশীল ও ব্যবহারিক চামড়াজাত পণ্য স্থান পায়। এতে তাদের দক্ষতা, শৈল্পিকতা এবং বাস্তব জীবনের শিল্প জ্ঞান ফুটে ওঠে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিইউএফটি’র ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোঃ আলমগীর হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’র সহযোগী অধ্যাপক জনাব উত্তম কুমার রায় এবং বিইউএফটি’র জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ ইমতিয়াজ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী।
কর্মশালাটি আয়োজন ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন ফ্যাশন স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ফাহিমা আখতার। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিইউএফটি তার শিল্পভিত্তিক ও বাস্তবমুখী শিক্ষার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি, দেশের চামড়াশিল্পে উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার প্রসারেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। প্রদর্শনীটি তরুণ ডিজাইনারদের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে যা ভবিষ্যতে তাদের পেশাগত দক্ষতা গঠনে সহায়ক হবে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফুলার রোড অডিটোরিয়ামে মঙ্গলবার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, শিক্ষা খাতের অংশীজন, অ্যাকাডেমিক কমিউনিটি ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের (টিএনই) বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।
ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর স্যালভাডোর কারবাজাল লোপেজ গবেষণা প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন।
ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেন, ‘বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে টিএনইয়ের প্রসার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।
‘টিএনই মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে আমরা আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করে এ প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রচেষ্টার আমি সত্যিই প্রশংসা করি। এটি অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে।
‘এ সম্পর্ক জোরদার করা উভয় দেশের জন্যই উপকারী হবে, যা উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, জ্ঞান বিনিময় এবং এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, ‘ব্রিটিশ কাউন্সিলের ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন রিসার্চ রিপোর্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি আনন্দিত। ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে দারুণ সুযোগ তৈরি করছে।’
অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের সম্ভাবনা ও সামাজিক মূল্য’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সেশনটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের ডিরেক্টর প্রোগ্রামস ডেভিড নক্স।
প্যানেলিস্টদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ-এর সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আবেদিন এবং ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ।
ব্রিটিশ কাউন্সিল নিয়োজিত আন্তর্জাতিক যোগ্যতা মূল্যায়ন সংস্থা ইক্টিস গবেষণাটি পরিচালনা করেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা করেছে।
১. টিএনই প্রদানকারীদের জন্য নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা
২. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ব্রিজিং ল্যাঙ্গুয়েজ প্রোগ্রাম চালু করা
৩. রিমোট ও অনলাইন লার্নিংকে সহায়তা করতে ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করা
৪. মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াগুলোতে স্বচ্ছতা ও সমন্বয় বৃদ্ধি করা
৫. বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ
৬. মধ্যম আয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ
অনুষ্ঠানে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) ২০২৫ অনুদানের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নির্বাচিত ইউকে-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ তাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড করে অনুদান পাবে।
বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ, নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি–বাংলাদেশ।
এ ছাড়াও রয়্যাল হলোওয়ে, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে কাজ করবে, এবং কীল ইউনিভার্সিটি এফআইভিডিবির সঙ্গে অংশীদারত্ব করবে।
এ অনুদানগুলো ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন উদ্যোগের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক ও গবেষণামূলক সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালীর উদ্দেশে প্রদান করা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্বকে আরও শক্তিশালী করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।
সম্পূর্ণ রিপোর্টটি ব্রিটিশ কাউন্সিলের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
আরও পড়ুন:প্রাথমিক শিক্ষার জেলা ও বিভাগের টাস্কফোর্স কমিটি সংশোধন করে পুনর্গঠনের নির্দেশনা এবং এর কার্যপরিধি পুনর্নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বিভাগীয় কমিশনারকে সভাপতি ও প্রাথমিক শিক্ষার বিভাগীয় উপপরিচালককে সদস্য সচিব করে বিভাগীয় টাস্কফোর্স এবং জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে সদস্য সচিব করে জেলা টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার সার্বিক অবস্থা ও অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করবে বিভাগীয় টাস্কফোর্স।’
জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা টাস্কফোর্স কমিটিকে।
বিভাগীয় বা মহানগরের প্রাথমিক শিক্ষা টাস্কফোর্স কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন রেঞ্জ ডিআইজি, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অদিদপ্তরের প্রতিনিধি, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগভুক্ত সব জেলায় জেলা প্রশাসক এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
এ টাস্কফোর্স সরকারি, বেসরকারি, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত লার্নিং সেন্টার ও শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃক পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং টিম গঠন করবে।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে টাস্কফোর্স। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সব উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের যথাযথ বাস্তবায়নের তদারকি করবে এটি।
টাস্কফোর্স প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য নতুন নতুন ধারণা ও উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োগ করবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত ও উদ্বুদ্ধ করবে। এ ছাড়া বিদ্যালয়ে ঝরে পড়া রোধ, শিখন শেখানো কাজের উন্নয়ন, যথাযথ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিরূপণ ও দূরীকরণে কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন:মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুব আলমের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
ড. ইহতেসাম উল হক এ বি এম রেজাউল করীমের স্থলাভিষিক্ত হলেন।
আগের ডিজি অবসরে যাওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর এ পদে নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত ৪ জানুয়ারি চাকরি শেষ করে অবসরে যান মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক রেজাউল করীম।
এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ২১ আগস্ট মাউশির মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভাগনে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন।
ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
আরও পড়ুন:সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করেছে সরকার।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
তার পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নেত্রকোণার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নেত্রকোণা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে কিশোরগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে শুধু শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করেছে সরকার।
এ ছাড়া নওগাঁর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে মেহেরপুর বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি করা হয়েছে।
পাশাপাশি জামালপুরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং নারায়াণগঞ্জে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এখন থেকে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বলে ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়াও গোপালগঞ্জের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
আরও পড়ুন:রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও যশোর শিক্ষা বোর্ডে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মাহবুব আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বোর্ডে অধ্যাপক আ ন ম মোফাখখারুল ইসলাম, যশোর বোর্ডে অধ্যাপক খোন্দকার কামাল হাসান, সিলেট বোর্ডে অধ্যাপক শামছুল ইসলাম এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।
এর আগে গত ১ জানুয়ারি এ চার শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মর্জিনা আক্তার, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. নিজামুল করিম, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবু তাহের ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. অলিউর রহমান।
দেশের ১১ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।
বাকি দুটি বোর্ডের একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১ বোর্ডে কর্মীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার।
আরও পড়ুন:পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত করে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেছেন, ‘কাজটা যুদ্ধের মতো হয়েছে। ঠিক কবে নাগাদ সব বই ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া যাবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না।’
বুধবার ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন ১৫ জানুয়ারি আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেয়া যাবে। আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেবো না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলবো না।’
ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো- আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে। তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেক বই পরিমার্জন করতে হয়েছে।
‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না। দলীয় রাজনীতিনিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে। সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নত মানের ছাপা, উন্নত মানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন তাদের অনেককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণ শিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। বই একটু দেরিতে পেলেও শিক্ষার্থীরা ভালো বই পাবে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে যাবে না।’
পাঠ্যবই নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘গল্পের একেবারে শেষে গিয়ে ছাড়া যেমন ষড়যন্ত্রকারী কে তা বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে, যে কেউ হতে পারে।
‘তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনবো। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’
নতুন যে শিক্ষাক্রম আওয়ামী লীগ সরকার করেছিল, তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে সমালোচনা করছেন- কেন পেছনের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলাম আমরা। আমি মনে করি, যে শিক্ষাক্রম করা হয়েছিল নতুন করে, সেটাতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আরও পশ্চাৎপদে নিয়ে যাওয়া হতো।’
তিনি বলেন, ‘দুই বছর এ শিক্ষাক্রম চালিয়ে গেলে সেখান থেকে ফেরার উপায় ছিল না। সেটা সহজও হতো না। সেজন্য আমরা সাময়িকভাবে পেছনের শিক্ষাক্রমে গেছি। এটা আবার এগিয়ে নেয়ার কাজ করা হবে।
‘এবার কিছু পরিমার্জন হয়েছে। আগামীতে আরও পরিমার্জন করা হবে, যাতে শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিকতার কোনো ঘাটতি না থাকে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য