ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে মাস্ক কেনা সংক্রান্ত জালিয়াতির মামলায় প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সোমবার আসামির করা জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক।
মামলার অন্য আসামি ডেলটা লাইফের ডিএমডি ও সিওও মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামরুল হক, ইভিপি এম হাফিজুর রহমান খানের বিরুদ্ধে জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সমন জারি হলেও তারা আদালতে হাজির হননি।
মাস্ক কেনায় দুর্নীতি অভিযোগ এনে মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালক এবং অডিট কমিটির সদস্য জেয়াদ রহমান মামলাটি করেন। শুনানি শেষে আদালত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে পাঠায়।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রমজান আলী সরদার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিএমডি ও সিওও মনজুরে মাওলা, ইভিপি কামারুল হকের অনুমোদনে ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্ক ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেয়া হয়। প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ৫০ টাকা। যা ওই সময়ের বাজারমূল্য অপেক্ষা অনেক বেশি।
ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান লাজিম মিডিয়াকে কার্যাদেশ দিয়ে ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করা হয়। ক্রয় আদেশের ২ লাখ ১৫ হাজার পিস মাস্কের মধ্যে বিভিন্ন জোনাল অফিসে ১৯ হাজার মাস্ক বিতরণ করা হয়। বাকি ১ লাখ ৯৬ হাজার মাস্কের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
ডেলটা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নিউ পারচেজ অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড গেমেন্ট-এর বিধি অনুযায়ী ৮ লাখ টাকার ওপরে কোনো কিছু কিনতে হলে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। জাতীয় পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করতে হয়।
কিন্তু সাবেক প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা এর কোনোটিই না করে নিকটাত্মীয়কে কাজটা পাইয়ে দেন। এতে কোম্পানির পলিসিহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষতি হলেও তারা নিজেরা লাভবান হন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তেও ঘটনার সত্যতা উঠে আসে। আদালত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে।
আরও পড়ুন:শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে রাজধানীর বারিধারা এলাকা থেকে একটি বিলাসবহুল রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।
গাড়িটি রোলস রয়েস ২০২১ মডেলের অত্যাধুনিক এইউভি। গাড়িটি ৬৭৫০ সিসির, যার বাজার মূল্য ২৭ কোটি টাকা।
অবৈধভাবে এই গাড়িটি চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে বের করে ২৪ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহমেদুর রেজা চৌধুরী জানান, গত ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম ইপিজেডের মাধ্যমে আমদানি করা হয়েছিল। এরপর এর শুল্ক না পরিশোধ করেই অবৈধভাবে গাড়িটি গত ১৭ মে রাতে ইপিজেড থেকে বের করে ঢাকার বারিধারায় নিয়ে আসা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পারি গত ৪ জুলাই পর্যন্ত এই গাড়ির শুল্ক জমা হয়নি। গোয়েন্দা তৎপরতায় গাড়িটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের এমডির গুলশানের বারিধারার নিজ বাসভবনে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় জব্দ করা হয়েছে।’
জব্দ করা গাড়িটি শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পড়বে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেড অ্যান্ড জেড ইনটাইমস লিমিটেডের মাধ্যমে হংকং এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য এ গাড়িটি আনা হয়। কিন্তু আমদানিকারক বেআইনিভাবে কাস্টমস শুল্কায়ন সম্পন্ন এবং শুল্ক-কর পরিশোধ না করে তার ব্যক্তিগত গ্যারেজে গাড়িটি লুকিয়ে রাখেন।
কাস্টমস আইন অনুযায়ী গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কী কারণে আমদানি করা গাড়িটি ছাড় হওয়ার ৭০ দিন পরও শুল্কায়ন করা হয়নি, সে বিষয়ে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে সমঝোতার তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে নতুন একটি রিট করা হয়েছে।
রিটে এই পরিমাণ টাকা ফি নেয়া হয়েছে কি না বা হয়ে থাকলে তার আইনি বৈধতা কী, তা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ এ রিটটি করেন। এতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিব এবং আইনজীবী ইউসুফ আলীকে বিবাদী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি আক্তারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হবে বলেও জানান এ আইনজীবী।
তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী তার ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কী পরিমাণ ফি নেবেন, তার সঙ্গে কী আচরণ করবেন তা বার কাউন্সিল রুলসে বলা আছে। এ কারণে বিষয়টি তদন্ত চেয়ে রিটটি করেছি।’
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের আইনজীবী ইউসুফ আলী জানান, তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট, অসত্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তথাকথিত সামাজিক ব্যবসার ধ্বজাধারী সুদখোর ইউনূসকে চুবানি দিয়েই সুদে-আসলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বন্ধুদের প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিয়েছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কত পেয়েছি সেটা বলতে চাই না। এটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার গোপনীয় চুক্তি। আমার মক্কেল যেটা দিয়েছেন সেটাই আমি পেয়েছি।
‘আমাকে নিয়ে ১২ কোটি টাকার যে গল্প বানানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছু না।’
গ্রামীণ টেলিকমের চাকরিচ্যুতদের পক্ষের এই আইনজীবী বলেন, ‘লিখিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে ৪৩৭ কোটি টাকা প্রদান করার পর প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারী বিজ্ঞ তৃতীয় শ্রম আদালত, ঢাকাতে উপস্থিত হয়ে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে তাদের স্ব স্ব মামলা প্রত্যাহার করে নেন।
‘একইভাবে তাদের অনুরোধে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন সকল রিট মামলা, আদালত অবমাননার মামলা এবং গ্রামীণ টেলিকম অবসায়নের প্রার্থনায় আনীত আলোচিত কোম্পানি ম্যাটার নং ২৭১/২০২১ প্রত্যাহার করি।
‘মামলাগুলো প্রত্যাহার করার পর, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীরা সন্তুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে আমাদের ফি বাবদ ইউনিয়নের অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে আমাদের ফি দিয়েছেন।’
এর আগে বিবাদীদের আইনজীবীর সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের ১২ কোটি টাকায় সমঝোতার বিষয়টি সামনে আসার পর বিস্ময় প্রকাশ করে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালত বলেছে, ‘আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদেরকে মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।’
হাইকোর্ট বলে, ‘কোর্টকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেন কোনো প্রশ্ন না ওঠে।’
সেদিন আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন মোস্তাফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন ইউসুফ আলী।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে।
আবেদনে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াই শ কোটি টাকার বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছিল। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ ছাঁটাইয়ের পর নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকেও তলব করে হাইকোর্ট। পরে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়া হয়।
গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলাটি চলছে।
আরও পড়ুন:জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার নিজের শরীরে আগুন দিয়ে ব্যবসায়ী গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় সামনে এসেছে হেনোলাক্স কোম্পানির নাম।
মৃত্যুর আগে গাজী আনিস অভিযোগ করে গেছেন, হেনোলাক্স কোম্পানিতে তিনি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। লভ্যাংশসহ সেই টাকা ৩ কোটির ওপরে পৌঁছালেও কোম্পানির মালিক নুরুল আমিন কোনো অর্থ ফেরত দেননি। এই নিয়ে মামলা করেও লাভ হয়নি।
এই হতাশা থেকেই সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নিজের গায়ে আগুন দেন কুষ্টিয়ার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিস। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নুরুল আমিনকে হেনোলাক্স কোম্পানির মালিক বলা হলেও নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেড় যুগ আগেই পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নুরুল আমিন বর্তমানে আমিন পোল্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছেন। এর আগে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেট প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ করেছেন নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে।
ফেসবুকে নিজেকে ডা. এন আমিন হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যাবসায়িক জীবন শুরু করার আগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন নুরুল আমিন। ১৯৮৪ সালে হেনোলাক্স কোম্পানি শুরু করার পর তিনি আগের পেশা থেকে সরে এলেও নামের আগে ডা. ব্যবহার করছেন।
ফেসবুকে তিনি বর্তমানে যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন, বাস্তবে সেগুলোর কার্যক্রম নেই। ঠিকানা হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরানা পল্টনের ‘হেনোলাক্স সেন্টার’-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে রাজধানীর কদমতলী এলাকার একটি ঠিকানা রয়েছে।
নিউজবাংলা কদমতলী এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, সেখানে নুরুল আমিনের একটি কারখানা থাকলেও প্রসাধনসামগ্রীর উৎপাদন বহু বছর ধরে বন্ধ। কারখানাটি ভাড়া দেয়া হয়েছে একটি সেমাই উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে। প্রসাধনীর পরিবর্তে সেই কারখানায় উৎপাদন করা হচ্ছে সেমাই।
কদমতলীতে নুরুল আমিনের আরেকটি ভবন রয়েছে। সেখানে ফ্ল্যাট তৈরি করে আবাসিক ভবন হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে। এই ভবনের নিচতলায় কিছু দোকানও রয়েছে। নিউজবাংলার অনুসন্ধানে বেশ কয়েক বছর ধরে নুরুল আমিনের কোনো প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।
কদমতলীর কারখানায় ভৌতিক পরিবেশ
রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একসময়ের বিশাল কর্মযজ্ঞের কারণে এখনও এক নামে হেনোলাক্স কারখানাকে চেনেন স্থানীয়রা। লোকমুখে কদমতলীর একটি অংশ হেনোলাক্স নামেই পরিচিত।
কদমতলীর মোহম্মদবাগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কথিত হেনোলাক্স কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ কাঠা জায়গার ওপর মূল কারখানা, এর পাশের আরও ১০ কাঠা জমিতে একতলা ভবন রয়েছে।
৯৮৭ মোহম্মদবাগ, কদমতলী- এই ঠিকানার মূল কারখানা ভবনটি তিনতলা। আলো নেভানো এবং ভেতর থেকে বন্ধ কারখানাটিতে ভূতুড়ে পরিবেশ দেখা গেছে। ভেতরে ছিলেন একজন নিরাপত্তাকর্মী। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে গেট খোলার অনুরোধ করলেও তিনি ঢুকতে দেননি।
ওই নিরাপত্তাকর্মী নিজের নাম প্রকাশ না করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারখানার ভেতরে কেউ নেই। এটি এখন বন্ধ।’
কারখানা কবে বন্ধ হয়েছে এবং সেখানে কী উৎপাদন হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে সেমাই তৈরি করা হয়, তবে দুই-তিন দিন ধরে কারখানা বন্ধ।’
পাশের দোকানি আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকেই এই কারখানা দেখে আসছি। আগে এটা কদমতলীর মেরাজবাগে ছিল, পরে মোহম্মদবাগে আনছে। একসময় তো এই কারখানায় দিন-রাত কাজ চলত। ক্রিম-তেল এগুলা বানাইত। সারা এলাকায় কত সুন্দর ঘ্রাণ পাওয়া যাইত।
‘কারখানার শ্রমিকও ছিল অনেক। কিন্তু ২০০৫ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে কারখানার শ্রমিক আর কাজকর্ম কমতে থাকে। এখন তো দেখি এইখানে সেমাই বানায়া ভ্যানে কইরা নিয়া যায়।’
আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা শেষে আবারও কারখানার মূল ফটকের সামনে গিয়ে মিন্টু নামের এক কাভার্ড ভ্যানচালকের দেখা পাওয়া যায়। তিনি হেনোলাক্স গ্রুপের একমাত্র কাভার্ড ভ্যানের চালক।
কারখানা সম্পর্কে জানতে চাইলে মিন্টু বলেন, ‘ব্যবসায় লসের কারণে নুরুল আমিন সাহেব এই কারখানার এক অংশ এখন সেমাই কারখানাকে ভাড়া দিয়েছেন। অন্য অংশে অনেক বছর ধরে হেনোলাক্সের মেশিন ও যন্ত্রপাতি অকেজো পড়ে আছে।’
মিন্টু বলেন, ‘আরও ১০ থেকে ১২ বছর আগেও কসমেটিকসের নিয়মিত প্রোডাকশন হতো এখানে। কিন্তু লসের পর একে একে হেনোলাক্স, আমিন ফুড ও আমিন হারবালের সব প্রোডাকশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনেক দিন বন্ধই পড়েছিল কারখানাটি। গত দুই বছর ধরে একটি সেমাই প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
‘তবে ব্যবসা মন্দার কারণে গত কয়েক দিন ধরে এখানে সেমাই উৎপাদনও বন্ধ। সেমাই কারখানার মালিক-শ্রমিক কেউ দুই দিন ধরে এখানে আসছেন না।’
নুরুল আমিনের সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারি হয়েছে বলে জানান মিন্টু।
তিনি বলেন, ‘এ জন্য স্যার বেশ কিছুদিন ধরে এখানে আসেন না। কারখানা বন্ধ থাকলেও স্যার আগে কয়েক দিন পরপরই আসতেন। এখন মাঝেমধ্যে ম্যাডাম (নুরুল আমিনের স্ত্রী ফাতেমা আমিন) আসেন, গাড়ি নিয়ে আসেন একটু ঘুরে দেখে আবার চলে যান।’
গাজী আনিসের আত্মাহুতির ঘটনায় করা মামলায় নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
কদমতলীর ‘হেনোলাক্স ভবন’ দেয়া হয়েছে ভাড়া
ফেসবুকে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের ঠিকানা হিসেবে কদমতলীর মেরাজনগরের একটি ঠিকানা দেয়া হয়েছে। স্থানীয়ভাবে সেটি ‘হেনোলাক্স বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত।
মোহম্মদবাগের কারখানা থেকে অটোরিকশায় মেরাজনগর বাজারে পৌঁছান নিউজবাংলার প্রতিবেদক। এই এলাকার অন্য নাম ‘হেনোলাক্স মোড়’। স্থানীয়রা জানান, বাজারের তিন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’ নামের ভবনটির কারণেই লোকমুখে এলাকাটির এমন নামকরণ।
এই ভবনের ঠিকানা: ১০৭৬, মেরাজনগর, কদমতলী। এলাকাবাসী জানান, এই ভবনেই হেনোলাক্সের প্রথম কারখানা ছিল, পরে সেটি মোহম্মদবাগে স্থানান্তর করা হয়। এখানকার কারখানা থেকেই নুরুল আমিনের উত্থান।
স্থানীয় বাসিন্দা আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৯৮০ সালের পরে নুরুল আমিন সাহেব এই জায়গা কিনে কারখানা বানান। তখন উনি সারা দিন এখানে থাকত। অনেক শ্রমিক ছিল। হেনোলাক্স দিয়ে উনি খুব অল্প সময়ে নাম করে ফেলেন।
‘তখন তো এই এলাকায় বাড়িঘর তেমন হয়নি। আশপাশে ডোবা আর জঙ্গল ছিল। এখানে মানুষ খুব একটা যাতায়াত করত না। আমিন সাহেব এই কারখানা করার পর এখানে সারা দিন শ্রমিকের আনাগোনা থাকত। ওদের দেখাদেখি সাধারণ মানুষও এখানে যাতায়াত শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘মানুষ শুরু থেকে হেনোলাক্সের কারখানা দিয়েই এই এলাকাকে চেনে। এরপর আমিন সাহেব এই এলাকায় প্রচুর জায়গা-সম্পত্তি কিনেছিলেন। এখন শুধু এই বাড়ি আর মোহম্মদবাগের কারখানাটার কথাই জানি। বাকি সম্পদ আছে কি না আমার জানা নাই।’
দেখা গেছে, পাঁচ কাঠা জমির ওপর নির্মিত হয়েছে চারতলা ‘হেনোলাক্স ভবন-১’। এর নিচতলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ওপরের তিনতলা আবাসিক ফ্ল্যাট আকারে ভাড়া দেয়া হয়েছে। নিচতলায় একপাশে বাজার, অন্যপাশে সেলুন, মুদি দোকান রয়েছে। আর ওপরের তিনতলায় দুটি করে মোট ছয়টি ফ্ল্যাট রয়েছে।
প্রতিটি ফ্ল্যাট মাসিক ১৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন নুরুল আমিন। আর নিচের বাজার ও দোকান থেকে মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা ভাড়া আদায় হয়।
একটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া আঞ্জুমান আরা নিউজবাংলাকে জানান, তারা প্রায় পাঁচ বছর ধরে এখানে ভাড়া থাকেন। তিনি বাড়ির মালিক হিসেবে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর নাম জানেন, তবে কখনও দেখেননি। একজন তত্ত্বাবধায়ক প্রতি মাসে ভাড়া তুলে নিয়ে যান এবং বাড়ির দেখাশোনা করেন।
হেনোলাক্সের কথিত প্রধান কার্যালয়ও জনশূন্য
ফেসবুকসহ বিভিন্ন জায়গায় কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসেবে ৩/১ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ উল্লেখ করেছেন নুরুল আমিন।
সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির নাম ‘স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার’। এর তৃতীয় তলায় কথিত হেনোলাক্সের প্রধান কার্যালয়। আমিন ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ঠিকানা হিসেবেও এটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে কক্ষটির বাইরের কলাপসিবল গেটে তালা ঝুলতে দেখা যায়। অফিসের ঠিকানার ফোন নম্বরে কল করা হলেও কেউ ধরেননি।
ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী আবদুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার বিকেল থেকে হেনোলাক্সের এই কার্যালয় বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অফিসে কেউ আসেননি। এর আগে নুরুল আমিন ও তার স্ত্রী নিয়মিত অফিসে আসতেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার তাদের অফিসে আসতে দেখা গেছে।’
কাদের জানান, ১১ তলা বাণিজ্যিক ভবনটির জমির মালিক নুরুল আমিন। তবে স্কাই ভিউ ডেভেলপার কোম্পানি এর ওপর ১১ তলা ভবনটি নির্মাণ করেছে। ভবনের ৩৬টি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাটের ১৮টির মালিক নুরুল আমিন, বাকি অর্ধেক পেয়েছে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান।
কথিত হেনোলাক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপক রতন কুমারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পেরেছে নিউজবাংলা। তিনি মঙ্গলবার দাবি করেন, পাঁচ দিনের ছুটিতে তিনি গাজীপুর আছেন এবং অফিস বন্ধ থাকার কোনো তথ্য তিনি জানেন না। নুরুল আমিন ও তার স্ত্রীর ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের সঙ্গেও সোমবার থেকে যোগাযোগ নেই রতনের।
গাজী আনিসের আত্মহত্যার বিষয়টি অবশ্য জানেন রতন কুমার। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি নিউজে দেখেছি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি এই প্রতিষ্ঠানে ২৮ বছর ধরে কাজ করছি, আমি আনিস নামের ভদ্রলোককে কখনও আমাদের অফিসে দেখিনি৷ ওনার নাকি ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পাওনা ছিল। এমনটা হলে তার তো অফিসে আসার কথা এবং পুলিশেরও আসার কথা।
‘আমি এমন কিছু কখনও দেখিনি এবং আমাদের স্যার-ম্যাডামও এ বিষয়ে কখনও কোনো কিছু বলেননি। বিষয়টি জেনে আমি খুবই অবাক হয়েছি।’
রতন কুমার বলেন, ‘হেনোলাক্স ১৯৮৪ সালে প্রথমে ত্বক ফর্সা করা ও মুখের দাগ দূর করার কয়েকটি ক্রিম নিয়ে বাজারে ব্যবসা শুরু করে। এরপর এর জনপ্রিয়তার কারণে হেনোলাক্সের মোড়কে নকল ক্রিমে বাজার সয়লাব হয়ে যায়। মামলা মোকদ্দমা করেও নকল ক্রিমের বাজার বন্ধ করতে না পেরে ২০০৪ সালে এই ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হেনোলাক্স কর্তৃপক্ষ।
‘এরপর নুরুল আমিন হেনোলাক্স ফুড নামে লাইসেন্স নিয়ে রেডি টিসহ দুই-একটি খাদ্যপণ্য বাজারে নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে লোকসানের খাতায় নাম লিখিয়ে এটিও বন্ধ হয়ে যায়। নুরুল আমিন ২০১২ সালে আমিন হারবাল কোম্পানি লিমিডেটের লাইসেন্স নিয়ে এর অধীনে বেশ কিছু প্রসাধনসামগ্রী উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। তবে ২০১৯ সালের পর এই ব্যবসাতেও ধস নামে।’
রতন কুমার বলেন, ‘আমিন হারবালের উৎপাদনও বন্ধ, কোনো অর্ডার পাওয়া গেলে কেবল সেগুলো তৈরি করে সরবরাহ করা হয়।’
তিনি জানান, ব্যাবসায়িক মন্দার কারণে কদমতলীর কারখানাটি অন্য এক প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন নুরুল আমিন। এখন পুরানা পল্টনের ফ্ল্যাট ও কারখানা ভাড়া ছাড়া হেনোলাক্স গ্রুপের আর কোনো দৃশ্যমান আয়ের উৎস নেই।
রতন কুমার বলেন, ‘আমরা কয়েকজন কর্মকর্তা আছি, তারা পল্টনের অফিসে বসি। আমি মূলত পুরানা পল্টনের ভবনটির ও কারখানার ভাড়া তুলি। আর মো. তসলিম উদ্দীন নামে আমিন হারবালের একজন মার্কেটিং ম্যানেজার আছেন। তিনি দৌড়াদৌড়ি করে হারবালের কিছু অর্ডার নিয়ে আসেন, এভাবেই চলছে।’
আমিন হারবাল লিমিটেডের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. তসলিম উদ্দীনের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামে। ২০১৬ সাল থেকে তিনি এই পদে আছেন। তিনি মূলত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আমিন হারবালের প্রসাধনীর প্রচার ও বিপণনসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। তবে সোমবারের পর থেকে তাকেও অফিসে দেখা যায়নি। তসলিমের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নুরুল আমিনের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে। শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাদিম সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নুরুল আমিনের পরিবারের সদস্যরা অনেক আগে থেকেই ঢাকায় থাকেন। গ্রামের সবাই তাকে হেনোলাক্সের কর্ণধার হিসেবে চেনেন।’
ঢাকায় হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পরই নুরুল আমিনের পরিবারে সচ্ছলতা আসে উল্লেখ করে নাদিম সরকার বলেন, ‘নুরুল আমিন সাহেব আমাদের এলাকায় সহজ-সরল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার পরিবার অতটা সচ্ছল ছিল না। শুনেছি আগে তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। তবে ঢাকায় গিয়ে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে হেনোলাক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়।
‘বড় ব্যবসায়ী হিসেবে নাম কামান। ঢাকাসহ নরসিংদীতে অনেক জায়গাজমি কেনেন। তবে আবার এই হেনোলাক্স লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে যায় বলে আমরা শুনেছি। হেনোলাক্স ছাড়া তার আর কোনো ব্যবসা আছে বলে আমার জানা নেই।’
নুরুল আমিনের শ্বশুরবাড়িও একই এলাকায় জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওনার কোনো সন্তান নেই। স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। শুধু ঈদের সময় বছরে দুই-একবার গ্রামে আসেন।’
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে গলাকেটে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিচার না পেয়ে মানববন্ধন করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী।
এ ঘটনায় পুলিশ মামলা না নেয়ায় বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্ত্বরে এ মানববন্ধনে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার দাবি করেন তারা।
মুক্তিযোদ্ধা আজমত আলী বলেন, ‘গত ৩ জুলাই সকাল ৯টার দিকে তার ছেলে রওশন আলী শেখ সাওতা গ্রামের মাঠ থেকে নিজ বাড়ি ফিরছিল। এ সময় জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে প্রতিবেশি সাবদুল ও তার লোকজন এসে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে রওশনকে আহত করে ফেলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
‘এ ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নেয়নি কুমারখালী থানা পুলিশ। পুলিশ তাদেরকে জানিয়েছে সাবদুলের নাম বাদ দিলে মামলা নেয়া হবে। মানববন্ধনে রওশনের স্বজন ও এলাকাবাসী অংশ নেন।’
এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘মামলায় উল্টাপাল্টা নাম দেয়া হয়েছে। নাম সংশোধন করতে বলা হয়েছে, তা সংশোধন হলেই মামলা হবে। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।’
ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আব্দুস সামাদ নামে এক কিশোরকে হত্যার ঘটনায় দুই ভাইসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার বিকেলে তাদের ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে নিহত সামাদের বাবা শাহজাহান মিয়া সোমবার বিকেলে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার দাদরা এলাকার ১৯ বছরের রবিন মিয়া, তার বড় ভাই ২৪ বছরের রোহান মিয়া, ওই উপজেলার হাটপাড়া গ্রামের ১৯ বছরের মুস্তাফিজুর রহমান নাঈম ও পুঙ্গুয়াই গ্রামের ২২ বছরের শাহীনুর ইসলাম।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গ্রেপ্তার রবিন মিয়া নিহত রিকশাচালক সামাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এ সুবাদে প্রায়ই রবিনের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত সামাদ। এক সময় রবিনের ছোট বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সামাদের। বিষয়টি জানতে পারে রবিন। পরে তার বোনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেও ব্যর্থ হয়। পরে সামাদকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে রবিন ও তার ভাই রোহান।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে সামাদের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘোরাফেরা করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে যায় রবিন, রোহান ও নাঈম। সেখানে ঝোপের আড়ালে আগেই ওত পেতে ছিল শাহীনসহ আরও দুজন। সামাদকে সেখানে নেয়ার পর প্লাস্টিকের রসি ও জালের টুকরা গলায় প্যাঁচিয়ে হত্যা করে স্কুলের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে রাখে তারা।’
ওসি বলেন, ‘সামাদের মরদেহ পাওয়ার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযানে নামে জেলা ডিবি পুলিশের একাধিক টিম। জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিকেলে ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।’
১৪ বছর বয়সী নিহত সামাদ দাদরা গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে। সে রিকশা চালিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করত।
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের মামলার বরাতে বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৩টার দিকে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয় সামাদ। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাড়ি ফেরেনি। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন স্থানীয় বাজারসহ স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে সামাদের রিকশাটি পাওয়া গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
‘মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সামাদের স্বজনরা ওই স্কুলটিতে অনুসন্ধান চালালে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা ভাঙা দেখতে পায়। ঢাকনা সরানোর পর ভেতরে পাওয়া যায় সামাদের মরদেহ।’
ওসি বলেন, থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
বিকেলেই নিহত সামাদের বাবা শাহজাহান মিয়া অজ্ঞাত আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:সাত দিনের রিমান্ড শেষে পদ্মা সেতুর নাট খুলে টিকটক করা যুবক বাইজীদ তালহাকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক সামসুল আলম বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার জামিন আবেদন নাকচ করে এ নির্দেশ দেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচারের স্বার্থে জজ আদালতে জামিনের আবেদন করব।’
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর জানান, ২৭ জুন বাইজীদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারক তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
২৬ জুন পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন এক যুবক।
পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে পুলিশ।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
বাইজীদের বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে। একসময়ের ছাত্রদলকর্মী বাইজীদ বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা ও পটুয়াখালী বিএনপিসংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাইজীদ অতীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।
আরও পড়ুন:জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন শুনানির জন্য ১১ আগস্ট ঠিক করেছে আদালত। সেই দিন মামলার অভিযোগ গঠন শুনানিরও দিন ঠিক করা হয়েছে।
বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামানের আদালত এ দিন ঠিক করেন।
এদিন সম্রাটের জামিন শুনানি ও মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ঠিক ছিল। সম্রাট অসুস্থ থাকায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে আদালতে না পাঠিয়ে কাস্টডি ওয়ারেন্ট (হাজতি পরোয়ানা) পাঠায়। এরপর বিচারক সম্রাটের জামিন শুনানি ও অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য তারিখ পিছিয়ে ১১ আগস্ট ঠিক করেন।
এর আগে দুদকের মামলায় জামিন বাতিল হওয়ায় আবারও কারাগারে যেতে হয়েছিল সম্রাটকে।
জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে তাকে আত্মসমর্পণ করতে আদেশ দিয়েছিল আদালত। ২৪ মে সে আদেশেই আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছিলেন তিনি।
গত ১১ মে সম্রাটকে জামিন দিয়েছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান। পরে বিচারিক আদালতের দেয়া জামিন বাতিল চেয়ে ১৬ মে হাইকোর্টে আবেদন করে দুদক।
১৮ মে দুদকের এই মামলায় সম্রাটের জামিন বাতিল করে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজি মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে সাত দিনের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়।
দুদকের মামলায় জামিন পাওয়ার আগে তার বিরুদ্ধে থাকা আরও তিন মামলায় জামিন পান সম্রাট। চার মামলার সব কটিতেই জামিন পাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমইউ) প্রিজন সেল থেকে কারামুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
সারা দেশে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলায় ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।
অভিযোগপত্রে সম্রাটের বিরুদ্ধে ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকা জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য