চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গৃহপরিচারিকার এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে এক নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত গৃহপরিচারিকাকে আটক করেছে পুলিশ।
উপজেলার চিকনদণ্ডী ইউনিয়নে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গৃহকর্ত্রী মর্জিনা বেগমকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করেন গৃহকর্মী সঞ্চিতা চাকমা। দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মর্জিনা সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার শহিদুল হকের স্ত্রী। হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী এলাকায় ভাড়ায় থাকতেন এ দম্পতি। আটক সঞ্চিতা রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর এলাকার বাসিন্দা।
ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মর্জিনা বেগম শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন। সকালে শিক্ষক স্বামী শহিদুল হক স্কুলে যাওয়ার পর সঞ্চিতাকে কাঁঠাল কেটে দিতে বলেন মর্জিনা। এ সময় সঞ্চিতা তা না করে রুটি তৈরি করছিলেন।
‘এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক বাধলে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে গৃহকর্মী সঞ্চিতা গৃহকর্ত্রী মর্জিনাকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন। তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করলে দুপুর ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।’
এ ঘটনায় মর্জিনাকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’
বাড়ির মালিক মো. বাহাদুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে চিৎকার শুনে জানালা দিয়ে দেখি, মর্জিনা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আর সঞ্চিতা দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তখন মর্জিনার স্বামীকে মোবাইলে বিষয়টি জানাই।’
সঞ্চিতা ওই পরিবারে ঈদের কয়েক দিন পর থেকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন:শুদ্ধাচার পুরস্কার পেলেন পুলিশের প্রধান বেনজীর আহমেদ। এই পুরস্কারের অর্থ সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
সোমবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইজিপির হাতে পুরস্কার তুলে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। পুরস্কার হিসেবে একটি সার্টিফিকেট, একটি ক্রেস্ট এবং এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আইজিপি এই পুরস্কারকে পুলিশ বাহিনীর অর্জন হিসেবে দেখছেন। তিনি তার সব সহকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান। বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের অর্জনের লক্ষ্যে সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনীর সব সদস্য জনকল্যাণে অধিকতর কর্মনিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) বাস্তবায়নে ২০২০-২১ অর্থবছরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান হয়েছে পুলিশ।
একই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে আওতাধীন দপ্তর/সংস্থার বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিও সই হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর নাট খুলে টিকটক করা যুবক বাইজীদকে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
শরীয়তপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক মো. সালেহুজ্জামান সোমবার বিকেলে তাকে রিমান্ডে পাঠান।
আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন এক যুবক। পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
আইনটির যে ধারায় তার নামে মামলা হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
কী আছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায়
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ (স্যাবোটাজ) কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
এই আইনের ১৫(খ) ধারায় বলা হয়, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউস, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।
এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুতে নাট খোলা বাইজীদ পটুয়াখালীর, করতেন ছাত্রদল
বাইজীদ তালহার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার তেলীখালী গ্রামে। একসময়ের ছাত্রদলকর্মী বাইজীদ বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও পটুয়াখালী বিএনপিসংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, বাইজীদ অতীতে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লবের সময়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আল-হেলাল নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ আগে পটুয়াখালীতে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে তিনি অনেক দিন ধরে এলাকায় নেই। এখন ঢাকায় রাজনীতি করেন কি না তা জানি না। ব্যক্তির অন্যায় অপরাধ দল কখনই দায় নেবে না।’
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে হত্যা মামলায় দুই সহোদরসহ চারজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
রায়ে খালাস দেয়া হয়েছে ১১ আসামিকে। দণ্ডিত প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম সোমবার দুপুরে এ রায় দেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম।
তিনি জানান, দণ্ডিতরা হলেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার রামজীবনপুর গ্রামের সেজনু মিয়া ও তার ভাই মিজানুর রহমান, একই গ্রামের মনছুর আলী এবং গঙ্গাবর গ্রামের জামাল ফকির। দণ্ডিতদের মধ্যে আসামি সেজনু মিয়া পলাতক।
এজাহারে জানা যায়, ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর জেলার ধনবাড়ীর রামজীবনপুর গ্রামের একটি জমির দখল নেয়ার চেষ্টা করে আসামিরা। এ সময় আব্দুর রহিম বাধা দিলে তাকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে তার ছেলে ও এলাকাবাসী রহিমকে উদ্ধার করে প্রথমে মধুপুর হাসপাতালে, পরে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে নিয়ে যায়। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুর রহিম মারা যান। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সুলতান বাদী হয়ে মামলা করেন।
২০০৫ সালের জুলাইয়ের ২৫ তারিখ এ মামলায় চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত।
আরও পড়ুন:কুমিল্লায় প্রবাসী হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
হত্যার ১৪ বছর পর দেয়া রায়ে পাঁচ আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ আদালত অতিরিক্ত-২-এর বিচারক নাছরিন জাহান সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ রায় দেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোর্ট পরিদর্শক মজিবুর রহমান।
তিনি জানান, মামলার ১ নম্বর আসামি ফজলুল হককে যাবজ্জীবন, ৩ নম্বর আসামি আবিদ আলীকে যাবজ্জীবন ও অতিরিক্ত এক বছরের কারাদণ্ড, ৪ নম্বর আসামি আবুল খায়েরকে যাবজ্জীবন ও অতিরিক্ত ৫ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার দক্ষিণ শিলমুড়ি ইউনিয়নের শিয়ালোড়া গ্রামের আবদুল খালেকের ছেলে মো. আলম। ২০০৮ সালের ২০ মার্চ আলম ও তার বড় ভাই আলী নেওয়াজকে জায়গা-জমির বিরোধে আসামিরা মারধর করেন।
গুরুতর আহত আলম ও আলীকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য আলমকে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। ২২ মার্চ সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আলমের মা মাছুমা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। বাদী জানান, তার ছেলে দেশের বাইরে থাকতেন। ঘটনার ৬ মাস আগে দেশে ফেরেন। তিনি এ রায়ে সন্তুষ্ট নন। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাবেন।
কোর্ট পরিদর্শক মজিবুর রহমান জানান, রায় ঘোষণার সময় ৮ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। পরে যাদের শাস্তি দেয়া হয় তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুতে নাট খুলে ভাইরাল হওয়া মো. বাইজীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা আইনে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন যানবাহন চলাচলের জন্য রোববার সেতু খুলে দেয়ার পর সকাল ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে বাইজীদের নাট খোলার ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর এটি আপলোড করা হয় টিকটকে।
বাইজীদকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সোমবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘বাইজীদ ও তার বন্ধু কায়সার প্রাইভেট কারে করে পদ্মা সেতুতে যান। বাইজীদ গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। জাজিরা প্রান্তের ৩০-৩৫ নম্বর পিলারের মধ্যে নেমে তিনি ও তার বন্ধু কায়সার রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলে ফেলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। ব্যঙ্গ করে মানুষের ফিলিংসে (অনুভূতি) আঘাত করেন। পরে বাইজীদ ও কায়সার দুটি ভিডিও নিজেদের টিকটক অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন।
‘প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, এটা একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এটা স্যাবোটাজের মতো আমাদের কাছে মনে হয়েছে। আমরা বাইজীদকে দ্রুত অ্যারেস্ট করি। ভিডিওটি আপলোড হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করি। তবে কায়সার এখনও পলাতক’
রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘আমরা তার (বাইজীদ) কাছ থেকে ডিভাইস উদ্ধার করেছি। তার আরও কিছু ডিভাইস, আরও কিছু ভিডিও, আগের অ্যাক্টিভিটিজ দেখে মনে হয়েছে এটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ।
‘এই জিনিসটা এভাবে খোলার কথা না। এতবড় স্থাপনার নাট-বল্টু হাত দিয়ে খোলার কথা না। ভিডিওতে আমরা সবাই দেখছি ইজিলি খুলে যাচ্ছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিবেচনায় আমরা মনে করছি এই কাজটা সেই করেছে, তার একটা প্ল্যান ছিল। বাকিটা তদন্তে আসবে। আপনারা যে ভিডিও দেখেছেন তার বাইরেও কিছু ভিডিও আমরা পেয়েছি।’
সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই নাট হাত দিয়ে কোনোভাবে খোলার কথা না। কোনোভাবে সম্ভব না। ধরেই নিতে হবে, এই কাজটা তারা করেছে, তাদের সহযোগী আছে, তাদের প্ল্যান আছে।
‘তিনটা বিষয় এ ক্ষেত্রে ঘটেছে। মানুষের ফিলিংস, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। এই তিনটার মধ্যে অন্তর্ঘাতমূলক কাজটা হয়েছে। এখানে তার গিল্টিমাইন্ড আছে। যে কারণে আমরা মামলা দিয়েছি।’
বাইজীদ অপরাধ মানসিকতার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই কাজটা করলাম, পোস্ট ডিলেট করলাম, আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করলাম, টিকটক.. এগুলো দেখে বোঝা যায় গিল্টিমাইন্ড।
‘আমরা ব্রিজ অথরিটির সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছে এটা এভাবে হাত দিয়ে খোলা সম্ভব না। হাত দিয়ে খোলা সম্ভব না মানে অবশ্যই সে ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করেছে।’ বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের যে ধারায় মামলা হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
কী আছে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ও ২৫ ধারায়
বাইজীদের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় সিআইডির পক্ষ থেকে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (খ) ও ২৫ (ঘ) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ (খ) ধারায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক’ (স্যাবোটাজ) কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা ও শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
এই ধারায় বলা হয়, কোনো রেলপথ, রোপওয়ে, রাস্তা, খাল, সেতু, কালভার্ট, বন্দর, ডকইয়ার্ড, লাইটহাউস, বিমানবন্দর, টেলিগ্রাফ বা টেলিফোনের লাইন অথবা টেলিভিশন বা বেতার স্থাপনার দক্ষতা বিনষ্ট বা ক্ষতিসাধনের মতো কাজ করা যাবে না।
এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া যাবজ্জীবন বা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (ঘ) ধারায় বলা হয়েছে, যে কেউ এই আইনের (বিশেষ ক্ষমতা আইন) অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার চেষ্টা করেন বা ষড়যন্ত্র করেন বা প্রস্তুতি নেন বা করতে চান, তাহলে তিনি সেই অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট শাস্তিতে দণ্ডিত হবেন।
আরও পড়ুন:লক্ষ্মীপুর সদরে নির্মাণশ্রমিক হত্যার দায়ে এক আসামির যাবজ্জীবন দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আসামির অনুপস্থিতিতে এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) জসিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বরাতে পিপি জানান, ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে বিদেশ যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন রাসেল। এই টাকা রাসেলের খালা শাশুড়িকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল তার। টাকা নিয়ে বসুদৌহিতা এলাকায় পৌঁছলে আসামি বাহার উদ্দিনের নেতৃত্বে ৭-৮ জনের একটি দল রাসেলের পথরোধ করে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে টাকা ছিনিয়ে নেন তারা।
এদিন সকালে সেখানকার একটি ধানক্ষেত থেকে রাসেলকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্বজনদের খবর দেন স্থানীয়রা। পরে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে প্রথমে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ দিন পর মারা যান রাসেল।
এ ঘটনায় ৩০ জানুয়ারি বাহার উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৮ জনের নামে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের মা আমেনা বেগম। ২০১৬ সালের ২২ আগস্ট বাহারকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
গ্রেপ্তারের পর জামিনে বের হয়ে পালিয়ে যান বাহার। দীর্ঘ শুনানির পর সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সোমবার আসামির অনুপস্থিতিতে আদালত তাকে যাবজ্জীবন দেয়।
রায়ে নিহতের স্বজন ও রাষ্ট্রপক্ষ খুশি বলে জানিয়েছেন পিপি।
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট হাত দিয়ে খোলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিআইডির সাইবার পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘কোনো যন্ত্রাংশ ছাড়া শুধু হাত দিয়ে পদ্মা সেতুর নাট-বোল্ট খোলা সম্ভব নয়। এটি একটি অন্তর্ঘাতমূলক কাজ। পদ্মা সেতুর যারা নাট-বোল্ট খুলেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ জানায়, শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর বিপুলসংখ্যক মানুষ উঠে পড়েন মূল সেতুতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরে তাদের সরিয়ে দেন। পরদিন সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার পর দিনের বিভিন্ন সময়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। এরই ফাঁকে আলোচিত ভিডিওটি করেন মো. বাইজীদ নামের এক যুবক।
সেতুর রেলিংয়ের নাট খুলে টিকটক ভিডিও বানানো বাইজীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আইনটির যে ধারায় তার নামে মামলা হবে বলে জানানো হয়েছে, সে ধারায় এ ধরনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মনে করছে, সেতুর ওপরের রেলিংয়ের ইস্পাতের পাতের সংযোগস্থলের নাট খোলা নিছক খেয়ালের ছলে হয়নি; এটা পরিকল্পিত।
সংস্থাটির এক কর্মকর্তা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেছেন, বাইজীদের এই কাজের পেছনে নাশকতার চেষ্টা থাকতে পারে।
পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার রেলিংয়ের নাট খোলার ভিডিও টিকটকে ছড়িয়ে সন্ধ্যায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হন সেই যুবক। পরে জানা যায়, তিনি বায়েজিদ তালহা নামে পরিচিত, তবে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম মো. বাইজীদ।
সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইজীদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নাট খুলেছিলেন সেতুর ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে। এমন অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এ মামলা প্রক্রিয়াধীন। থানা কর্তৃপক্ষই বাদী হবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য