পাশেই গোয়ালঘর। গরুর মূত্র আর গোবরের গন্ধে ভেসে যাচ্ছে শ্রেণিকক্ষ। আর ফ্যান না থাকায় তীব্র গরমে নাভিশ্বাস ঘর্মাক্ত শিশু শিক্ষার্থীদের। তবু তারা এখানে পড়তে আসে নিয়মিত।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি বকচরপাড়ায় অবস্থিত একটি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি। তবে শুধু এই স্কুলই নয়, এ জেলায় এমনও কিছু উপানুষ্ঠানিক স্কুল রয়েছে যার মাথার ওপর নেই কোনো ছাদ। ওপরে তাকালে দেখা যায় নীল আকাশ। বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষে থইথই করে পানি। শিক্ষকদের নিয়মিত পাঠদানের বিষয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
সরেজমিন জেলার কয়েকটি উপানুষ্ঠানিক স্কুল ঘুরে এসব অনিয়ম দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ‘আউট অফ স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম’ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেলায় মোট ১৩৯টি উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন বাস্তবায়ন করছে ৬৯টি আর সৃষ্টি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার বাস্তবায়নে রয়েছে ৭০টি বিদ্যালয়।
চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে চুয়াডাঙ্গায় এসব বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ক্লাস হয় ছয় মাস করে। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয় বছরজুড়েই। এখানে লেখাপড়া করে সমাজের ঝরেপড়া শিশুরা। যাদের বয়স ৮ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন করে শিক্ষক। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে মাসে ১২০ টাকা করে বৃত্তিও দেয়া হয়। এ ছাড়া তারা খাতা, কলম, পেনসিল, আর্ট পেনসিল, রাবার, শার্পনার, বক্সসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিনা মূল্যে পায়।
এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য শুরুতেই ভাড়া নেয়া হয় ঘর। এর সমস্ত ব্যয় বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতেই এমন উদ্যোগ। কিন্তু সরকারিভাবে সব সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলেও নানা অনিয়মের মধ্য দিয়েই চলছে বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান প্রক্রিয়া।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি বকচরপাড়ার গোয়ালঘরসংলগ্ন ও ফ্যানবিহীন সেই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন রাফিয়া খাতুন। সুপারভাইজারের দায়িত্বে আনিছুর রহমান।
সুপারভাইজার বলেন, ‘ঘর ভাড়া নেয়ার সময় আমি ছিলাম না। ঘর পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। ফ্যানের বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
পৌর এলাকারই নুরনগর পুকুরপাড়ায় আরেকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও পাঠদানের জন্য নির্ধারিত ঘরটির বেহাল। ঘরের টিন ভেদ করে আকাশ দেখা যায়। তাই ঝড়-বৃষ্টিতে এ বিদ্যালয়টিতে অবস্থান নেয়াও কঠিন ব্যাপার। সেখানে শিক্ষক হিসেবে আছেন বেলি আক্তার। আর সুপারভাইজার শারমিন খাতুন।
শিক্ষক বেলি আক্তারের বিরুদ্ধে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা অভিযোগ। এর মধ্যে প্রধান অভিযোগই হলো- বেলি আক্তার ঠিকমতো ক্লাস করান না। বিদ্যালয়ে আসেন দেরিতে। আর বিনা মূল্যে ভর্তির ব্যবস্থা থাকলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
এ ছাড়া ক্লাস শেষে ওই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে বেলি আক্তার প্রাইভেট পড়ান বলেও জানা গেছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বেলি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমি আমার সাধ্যমতো শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাই। প্রতিদিন সময়মতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হই।’
এ বিষয়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আউট অফ স্কুল চিলড্রেন এডুকেশনের জেলা প্রকল্প ব্যবস্থাপক হুমায়ন কবীর বলেন, ‘কার্যক্রম সঠিকভাবে চালাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। বেলগাছির বিদ্যালয়টি গোয়ালঘরের পাশে সেটা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমি খোঁজ নেব। প্রয়োজন হলে ঘর পরিবর্তন করা হবে। অন্য অভিযোগগুলোও তদন্ত করে দেখা হবে।’
আরও পড়ুন:ভেজা কাপড় শুকাতে দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই ঘের কর্মচারীর মৃত্যু হয়েছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মাড়িয়ালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সাতক্ষীরা সদরের মোফাজ্জল হোসেনের ঘেরের বাসায় মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ৩৫ বছরের শামীম বয়স, তিনি আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বৈকরঝটি গ্রামের বাসিন্দা। ২৫ বছরের আলম গাজী, তিনি আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের গোসল শেষে কাপড় শুকাতে গিয়ে পাশে ঝুলে থাকা বৈদ্যুতিক আউট লাইনের তারে হাত লাগলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন শামীম। তাকে ছাড়াতে যান ঘেরের বাসায় থাকা কর্মচারী আলম গাজী। শামীমের গায়ে হাত দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন।
ঘেরের বাসায় থাকা অন্য একজন কর্মচারী স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে মরদেহ দুটি উদ্ধার করা হয়।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিউজ বাংলাকে নিশ্চিত করে জানান, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করেছে। পুলিশ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চেষ্টা করছে।
আরও পড়ুন:১০ বছর পর ময়মনসিংহের ত্রিশালের তাইজ উদ্দিন হত্যা মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
ময়মনসিংহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হেলাল উদ্দিন মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় দেন।
দণ্ডিতরা হলেন, অহিদ মিয়া, মোবারক হোসেন ও মজনু মিয়া। তারা ত্রিশাল উপজেলার কোনাবাড়ী ও সাখুয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিন জনের মধ্যে মোবারক পলাতক রয়েছেন।
নিউজবাংলাকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি মো. কবির উদ্দিন ভূইয়া।
তিনি জানান, ২০১২ সালের ১১ আগস্ট ত্রিশাল উপজেলার কোনাবাড়ী নদীরপাড় এলাকা থেকে তাইজ উদ্দিন নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরে তাইজের বাবা নূরুল ইসলাম ত্রিশাল থানায় হত্যা মামলা করেন।
অ্যাডভোকেট কবির বলেন, ওই মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা করে অর্থ দণ্ড দেয়। জরিমানা অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বিচারকের নির্দেশে অহিদ মিয়া ও মজনু মিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:বেড়েছে গরম। এর মধ্যেই দফায় দফায় লোডশেডিং। এ অবস্থায় রাতের বেলায় ঘুমানোই কঠিন হয়ে পড়েছে চাঁদপুরবাসীর। চাঁদপুর শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
গত কয়েক দিনের লোডশেডিংয়ে চাঁদপুরের জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়া ছাড়াও ব্যাহত হচ্ছে অফিস, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
চাঁদপুর শহরের মাদ্রসা রোড এলাকার শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার ও মাহিম বলেন, ‘দুদিন ধরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে আমরা পড়াশোনা করতে পারছি না। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। বিশেষ করে, রাতে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় ঘুমানোই যাচ্ছে না। আমরা এই সমস্যার নিরসন চাই।’
শহরের নাজির পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মামুন তালুকদার বলেন, ‘একবার বিদ্যুৎ গেলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেও আসে না। কিন্তু আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো সম্ভব না। লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছে।’
মামুন জানান, লোডশেডিংয়ে বাসা বাড়িতে বয়স্ক ও ছোট শিশুদেরই বেশি সমস্যা হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে তাদেরকে ঘরে আটকে রাখা কষ্ট হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরে অবস্থিত ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকাই এই অঞ্চলে লোডশেডিং বাড়ার অন্যতম কারণ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে এটি। যদিও ডাকাতিয়ার অপর প্রান্তে ইচলী এলাকার ‘চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড’ নামে একটি প্রাইভেট বিদ্যুৎকেন্দ্রে অল্প পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে তা সীমিত।
পর্যবেক্ষণ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সংকট এত প্রকট ছিল না চাঁদপুরে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাহিদার ৬০-৭০ ভাগ সরবরাহ পেলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাচ্ছে অর্ধেকের মতো। তাই গত তিন দিন ধরে বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়া লক্ষ্য করা গেলেও সহসা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘উৎপাদন সমস্যার কারণে সারা দেশেই বিদ্যুৎ সল্পতা আছে। চাঁদপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন দিনের বেলায় ১৮ মেগাওয়াট ও রাতে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে লোডশেডিং হচ্ছে। বর্তমানে দিনে ১২ মেগাওয়াট আর রাতে ১৪ মেগাওয়াট দেয়া হচ্ছে।’
গ্যাসের সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে বলে জানান মিজানুর রহমান।
আরও পড়ুন:ঢলে ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের বরাদ্দে অর্থ প্রথম ধাপেই পেয়েছে সিলেটের দলদলি চা বাগানের ৯ পরিবার।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত চা শ্রমিক পরিবারের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে বিতরণ করেন।
১৮ জুন ঢলে ঘর ভেঙে যায় দলদলি চা বাগানের ২০টি শ্রমিক পরিবারের। তবে অর্থাভাবে এতদিন ঘরগুলোও সংস্কার করতে পারেননি শ্রমিকরা।
এই বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে নিউজবাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর বদলে যায় চিত্র।
সরকারি সহায়তারও আগে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ পরিবারকে ‘দুর্যোগপীড়িতদের পাশে লেখক-শিল্পী- সাংবাদিক-প্রকাশক’-এর ব্যানারে ঘর তৈরির টিন দেয়া হয়। তাদেরকে খাবার দিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।
মঙ্গলবার অর্থ বিতরণের সময় জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সিলেটে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এ টাকা থেকেই প্রথম ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে দলদলি চা বাগানের ৯ পরিবারকে সহায়তা দেয়া হলো।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা এমনিতেই মানবেতর জীবন যাপন করেন। তাই প্রথম ধাপে তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে।
১৮ জুন পাহাড়ি ঢল ও টিলা ধসে পরিবারগুলোর ঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ২৫ হাজারের বেশি মানুষ
১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা শুরু হয়। মঙ্গলবার ২০ দিন পার হয়েছে। এখনও অনেক জায়গা থেকে নামেনি পানি। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারেনি অনেক মানুষ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটে এখনও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫ হাজার ৫৭৯ জন আশ্রিত আছেন। জেলায় ৩১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, এবারের বন্যায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। বানের পানিতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ঘরবাড়ির।
এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৬১২ টন চাল, ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং প্রায় আড়াই কোটি টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন:এক কিশোরীর এডিট করা অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করার মামলায় রাজশাহীর আদালত এক ব্যক্তিকে আট বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও আট লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান আলাদা দুটি ধারায় মঙ্গলবার দুপুরে আসামিকে এ দণ্ড দেন।
দণ্ডিত শাকিল মন্ডল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ১৬ বছর বয়সী কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা।
এজাহারে বলা হয়, আসামি শাকিল মন্ডল ওই কিশোরীর ছবি সংগ্রহ করে এডিট করেন। পরে অশ্লীল ছবি শাকিল তার ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে ওই কিশোরীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠান। কিশোরীর বাবাকে ফোন করে শাকিল ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে এসব ছবি নেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন।
আইনজীবী ইসমত আরা জানান, মামলার পর পুলিশ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর বিচার শুরু হয়। আদালত ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত একটি ধারায় আসামিকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এ অর্থ অনাদায়ে আরও ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
অন্য আরেকটি ধারায় আসামিকে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার এই অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে আসামিকে।
রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, সাজা একটার পর একটা কার্যকর হবে। জরিমানার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে ওই কিশোরী পাবে। মামলার আসামি পলাতক আছেন। তার অনুপস্থিতিতেই রায় দেয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে কৃষক হত্যা মামলায় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অতিরিক্ত দায়রা জজ আব্বাসের উদ্দিনের আদালত মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় দেয়।
দণ্ডিত আব্দুল হান্নান শেখের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামে।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী আইনজীবী শহিদুজ্জামান খান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, টুঙ্গিপাড়ার বালাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শেখ নুরুল ইসলাম খানের সঙ্গে হান্নান শেখের বিরোধ চলছিল। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাতে জমি থেকে বাড়ি ফেরার পথে হান্নান ও তার লোকজন নুরুলকে কুপিয়ে পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর নুরুলের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে যান নুরুলের স্ত্রী আফরোজা নাহার রানু। থানা মামলা না নিলে ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ছয়জনের নামে আদালতে মামলা করেন। পুলিশ হান্নান ও তার স্ত্রী মহুরোন নেছাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
আইনজীবী শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আদালত হান্নানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে। তার স্ত্রীকে খালাস দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বাঁধ ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে দ্বীপ মাঝিয়ালী চরের ১৭০টি পরিবারের সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই গ্রামের চারপাশ ঘিরে করোতোয়া, ধরধরিয়া এবং পাথরাজ নদী প্রবাহিত হচ্ছে। গত বন্যায় ধরধরিয়া খালের ওপর নির্মিত বাঁধ ভেঙে দেন সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান।
চলাচলের ব্যবস্থা না করেই হঠাৎ বাঁধ ভেঙে দেয়ায় চরটির চারপাশে থাকা গ্রামের কৃষকরাও যেতে পারছেন না দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামে। এতে হাজার হাজার মানুষ সংকটে পড়েছে।
ধরধরিয়া খালের উপর বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা। উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের মল্লিকাদহ ধোকরপাটি ও দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দাদের আয়োজনে করতোয়া নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় নারী ও পুরুষ অংশ নেয়।
স্থানীয়দের দাবি, ধরধরিয়া খালের ওপর ও ভাঙনের মুখে পড়া করতোয়া নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ হলে আবারও তাদের চলাচলের সুব্যবস্থা হবে।
স্থানীয়রা জানান, চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবারই বর্ষায় পানিবন্দি হয়ে থাকেন। বর্ষায় তাদের চলাচলের কোনো পথ না থাকায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। গ্রামটির শিক্ষার্থীদের বর্ষায় স্কুল কিংবা কলেজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কৃষকেরা তাদের জমিতে উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। এতে পুরো বর্ষা জুড়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
দিন দিন গ্রামটি করতোয়ার ভাঙনের মুখে পড়ছে। এ থেকে রেহাই পেতে ২০২০ সালে গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিজেদের চলাচলের জন্য ধরধরিয়া খালের উৎপত্তিমুখে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। করোতোয়া নদীর একটি প্রান্ত থেকে উৎপত্তি হওয়া ধরধরিয়া খালে বর্ষাকালে পানি প্রবাহিত হয়। প্রায় এক কিলোমিটার প্রবাহিত হচ্ছে এই খাল।
বাঁধ নির্মার্ণের পর গত দুই বছর ভালভাবে চলাচল করতে পারলেও ভাঙনের অজুহাতে এ বছরের বন্যায় ওই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতের অন্ধকারে বাঁধ কেটে দেন। এতে গ্রামের বাসিন্দারা আবারও পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েন।
দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের ৬০ বছরের রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। চলাচলের ব্যবস্থা না করেই তারা বাঁধটি ভেঙে দেয়। আমরা এখন খুব সমস্যায় আছি।’
তবে আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান বলেন, ‘দুই শ বছর থেকে ধরধরিয়া নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীতে বাঁধ দেয়ায় এপারের গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। তাই কেটে দিয়েছি।’
ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস।
তিনি জানান, অবৈধভাবে বাঁধ কেটে দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য