স্বাধীনতার পর ৪৬ বছরে দেশে কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এ সময় দেশ থেকে কমপক্ষে আট লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশের পেশাদার অর্থনীতিবিদদের সংগঠনের ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’। এই টাকা উদ্ধার করে তা দেশের জাতীয় বাজেটে খরচ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার রাজধানীর মগবাজারে অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৩: একটি জনগণতান্ত্রিক বাজেট প্রস্তাব’ অনুষ্ঠানে একথা বলেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থনীতি সমিতি ২০ লাখ ৫০ হাজার ৩৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করছে। বর্তমান সরকারের চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় ৩.৪ গুণ বেশি। এই বিশাল বাজেটের জন্য কোন বিদেশী ঋণ নিতে হবে না। দেশীয় উৎস থেকেই পুরো বাজেট ব্যয় মেটানো সম্ভব।’
বাজেটে আয় সম্পর্কে বারকাত বলেন, ‘বাজেট অর্থনৈতিক হলেও এর আয়ের সমাধান অনেকটাই রাজনৈতিক। এ বিশাল বাজেটের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে এমন উৎসে হাত দিতে হবে যেখানে অতীতে হাত দেয়া হয়নি। এ উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে সম্পদ কর, দেশের সম্পদ কর আইন আছে। অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর বসাতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যারা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে তাদের উপর কর বসানো হয়েছিল। বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর আদায় করা যায়। বিদ্যমান বিভিন্ন কর সর্বোচ্চ আহরণে জোর দিতে হবে। কালো টাকা ও পাচারকৃত টাকা থেকে উদ্ধারকৃত অর্থ বাজেটে ব্যয় করতে হবে।’
‘আমাদের কাছে ১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ সাল পর্যন্ত ৪৬ বছরের বাংলাদেশের পুঞ্জিভূত কালো টাকার পরিমাণ ৮৮ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। আমরা এই পুঞ্জিভূত কালো টাকা থেকে দুই শতাংশ উদ্ধারের প্রস্তাব করছি। এতে এক লাখ ৭৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা উদ্ধার হবে।’
‘একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে হওয়া অর্থ পাচারের পরিমাণ কমপক্ষে ৮ লাখ কোটি টাকা। আমরা তার ১০ শতাংশ উদ্ধার করে বাজেটে আনার কথা বলছি।
দুর্নীতি, কালোটাকা তথ্য পাচার বিষয়ে আমরা একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কথা বলছি। এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য কার্যপরিধি বিস্তারিত কিভাবে কি হবে তা আমরা সরকারকে ও জানিয়েছে।'
অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা।
মোট বাজেটের মধ্যে বিভিন্ন কর থেকে ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা আয় কথা বলা হয়েছে। এনবিআর আয় করবে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড এর বাহিরে কর আদায় হবে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা।
অর্থনীতি সমিতি বিভিন্ন খাতের বেশ কয়েকটি প্রস্তাব প্রস্তাব সরকারের কাছে তুলে ধরে।
আবুল বারকাত বলেন, ‘দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে আগামী কয়েক বছর সব ধরনের কর থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। তাদেরকে কর নেটের বাইরে রাখতে হবে। শিশুদের খেলার মাঠ ভেঙ্গে যে যেভাবে পারে, যা খুশি, তা করে। এবং বহু শিশু বিকাশে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ গঠন করতে হবে। ১৮ কোটি মানুষের দেশে সবকিছু ছোট্ট একটা শহর ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে তাদের কাজের ধরন অনুসারে বিভাগওয়ারী নিয়ে যেতে হবে।’
আরও পড়ুন:পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণের মানুষদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা, ঠিক বিপরীত চিত্র লঞ্চমালিক-শ্রমিকদের মধ্যে। তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ব্যাপক।
সেতু উদ্বোধন করার পর থেকে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চগুলো যাত্রীসংকটে পড়েছে। প্রথম এক-দুই দিন যাত্রী কম থাকার বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দেননি লঞ্চসংশ্লিষ্টরা। ভেবেছিলেন, সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর সেটি দেখার জন্য বুঝি স্রোত সেদিকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ফাঁকা যাওয়ার পর রীতিমতো আঁতকে উঠেছেন মালিক-শ্রমিকরা।
যাত্রীদের ফেরাতে ভাড়ায় ছাড় দিয়েও সুফল মিলছে না। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর ভাড়া ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। তখন লঞ্চমালিকরা দাবি করছিলেন, তাদের পোষাচ্ছে না, সেই তারাই এখন লঞ্চের ভাড়া কমিয়ে দিয়েছেন অনেকটাই।
কিন্তু সড়কপথে অর্ধেক সময়ে যেখানে ঢাকায়-আসা যাওয়া করা যাচ্ছে, সেখানে নৌপথে যাত্রীর চাপ কমবে- এটা আগেই ধারণা করা হচ্ছিল। হয়েছেও তা।
ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ রয়েছে ২৪টি, তবে নিয়মিত দুই ঘাট থেকে চলে ১২টি। বৃহস্পতি ও শুক্রবার এই রুটের লঞ্চের কেবিন থাকত ‘সোনার হরিণের মতো’। সেখানে এখন যাত্রী নিতে হচ্ছে অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করে।
সুন্দরবন-১১ লঞ্চের সুপারভাইজার সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে ডেকের ভাড়া নেয়া হচ্ছে ২০০, সিংগেল কেবিন ৯০০, সিঙ্গেল এসি কেবিন ১ হাজার, ডাবল কেবিন ১ হাজার ৪০০, ডাবল এসি কেবিন ১ হাজার ৮০০ টাকা।
আগে ডেকের ভাড়া ছিল ৩০০, সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার ১০০, সিঙ্গেল এসি কেবিন ১ হাজার ২০০, ডাবল কেবিন ২ হাজার আর এসি ডাবল কেবিন ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা।
তবে ভাড়ায় এই ছাড় দিয়ে লাভ হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে বৃহস্পতিবার যাত্রীচাপ বেশি থাকে, সেদিনও যাত্রী ছিল অর্ধেকের মতো। পদ্মা সেতু চালুর পর আমাদের লঞ্চগুলো ব্যাপক যাত্রীসংকটে পড়েছে।
একই চিত্র দক্ষিণের অন্য রুটেও
পদ্মা সেতু চালুর আগে ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে বিলাসবহুল ৯টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করত উভয় ঘাট থেকে। সেই সংখ্যা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের সুপারভাইজার মো. ইউনুস আশা করছেন, এই দুর্দিন থাকবে না। তিনি বলেন, ‘লঞ্চে যাত্রী কিছু কম, এটা সত্য। তবে তা বেশিদিন থাকবে না। এখন আনন্দ-উল্লাস করতে কিছু যাত্রী পদ্মা সেতু দেখতে সড়কপথে ঢাকা আসা-যাওয়া করছে। আশা করি, ঈদের সিজনেই লঞ্চে যাত্রী আগের মতো স্বাভাবিক হবে।
সুন্দরবন-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার মেহেদি হাসান সুমন বলেন, ‘ আগে ডেক ভাড়া ছিল ৫০০ টাকা, এখন নিচ্ছি ৩০০; কেবিন ছিল দেড় ও আড়াই হাজার টাকা, এখন নিচ্ছি ১ হাজার ও ২ হাজার টাকা। আগে কেবিন খালি থাকত না, এখন অনেক কেবিন খালি থাকছে। তবে ডেকের যাত্রী মোটামুটি ভালো আছে।’
আওলাদ-৭ লঞ্চের পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের ইনচার্জ আবদুল আজিজ বলেন, ‘লঞ্চের সংখ্যা কম, ভাড়াও কম।’
লঞ্চ চলাচলে সীমিত হয়েছে পিরোজপুরেও। আগে এ জেলা থেকে ঢাকার পথে প্রতিদিন তিন থেকে চারটি লঞ্চ চলত। এখন চলে একটি। মালিকপক্ষ বলছে, যাত্রী কম হওয়ায় ভাড়া দিয়ে জ্বালানির পয়সাও ওঠে না।
এই রুটের লঞ্চ রাজদূত-৮ লঞ্চের পরিচালক সোহাগ হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে তিনটা লঞ্চে প্রতিদিন যাত্রী হতো, এখন একটা লঞ্চ ভরতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসলে পদ্মা সেতু চালু হয়েছে তো তাই যাত্রী সড়কপথে বেশি যাচ্ছে। এ জন্য লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে।’
ঝালকাঠি-ঢাকা রুটে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিকেলে লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে ঘাটে ভিড় নেই।
লঞ্চঘাট ইজারাদার খান এন্টারপ্রাইজের হুমায়ুন কবির সাগর বলেন, ' শুক্রবার যে কয়টি ঘাট টিকিট বিক্রি করেছি, তাতে স্টাফের বেতন উঠবে না। পণ্য আনা-নেয়াও কমে গেছে।’
সুন্দরবন-১২ লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার হানিফ হাওলাদার জানালেন, শুক্রবার ঝালকাঠি থেকে ঢাকার পথে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চে মোট ৯৭টি কেবিন রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি কেবিন বুকিং হয়। এর সাতটি ডাবল এবং ১১টি সিঙ্গেল।
কোরবানি ঈদের আগে আগে এই সময়ে শুক্রবারে কেবিন খালি থাকত না বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘ডেক যাত্রী ছিল ১১৩ জন, যা আগের তুলনায় ৭০ ভাগ কম। ব্যাপক লোকসান আমাদের।’
বৃহস্পতিবার ঢাকার উদ্দেশে ঝালকাঠি ছাড়ে ফারহান-৭। ওই লঞ্চেও একই অবস্থা।
যারা নৌপথ ব্যবহার করছেন তারা বলছেন, বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে লঞ্চে যাতায়াত সুবিধা। তাই লঞ্চে যাচ্ছেন। বাকিরা যাচ্ছেন সড়কপথে।
বরগুনা থেকে ঢাকা রুটে আগে একেকটি লঞ্চ ৪০০-৫০০ যাত্রী পেত। এখন ১০০ যাত্রীও পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা-বরগুনা, ঢাকা-আমতলী নদীপথে আটটি বিলাসবহুল লঞ্চ চলছে। এর মধ্যে ঢাকা-বরগুনা পথে পাঁচটি ও ঢাকা-আমতলী রুটে তিনটি।
আমতলী লঞ্চঘাটের টোল আদায়কারী হানিফ গাজী বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন বেলা ২টার মধ্যে দেড় থেকে দুই শতাধিক যাত্রী ঘাটে টোল দিয়ে লঞ্চে উঠে বিছানা পেতে বসে থাকতেন। কিন্তু এখন ৭০-৮০ জন যাত্রী হয়। বৃহস্পতিবার এ ঘাট থেকে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে এমভি তরঙ্গ ঘাট ছাড়ে। শুক্রবার ইয়াদ লঞ্চও সমপরিমাণ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায়।’
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় বরগুনা নদীবন্দর থেকে এমভি পূবালী ও রাজহংস-৮ নামের দুটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শুক্রবার অবশ্য রাজারহাট-বি নামের একটি লঞ্চ ছেড়েছে।
এমকে শিপিং লাইনসের বরগুনা ঘাটের ব্যবস্থাপক এনায়েত মিয়া বলেন, ‘যাত্রী কম হওয়ায় আজ একটি লঞ্চ ছাড়া হয়েছে। লঞ্চটিতে ৮০-৯০ জন যাত্রী ছিল। এ লঞ্চে সিঙ্গেল ও ডাবল কেবিনের সংখ্যা ১২৬। এর মধ্যে মাত্র ৪০টি কেবিন বুকিং হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের লঞ্চ চলাচলেই লস হয়।’
এই রুটের লঞ্চ শাহরুখ-২-এর মাস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সেতু চালু হওয়ার পর থেকে লঞ্চে যাত্রীসংখ্যা কমে গেছে। এর প্রভাব বেশ কিছুদিন থাকবে। মাসখানেক পর যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। কারণ সবাই পদ্মা সেতু দেখার জন্য এখন গাড়িতে করে ঢাকায় যাচ্ছে।’
এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চার দিন লঞ্চ বন্ধ ছিল যাত্রী কম থাকায়। পদ্মা সেতুর প্রভাব নদীপথে পড়বে কি না তা এখনই বলা যাবে না। কিছুদিন গেলে বোঝা যাবে।’
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘আমাদের টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আশা করছি অবস্থা এমন থাকবে না। কয়েক মাস পর ঠিক হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:রাস্তাঘাট অথবা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এমন স্থানে পশুর হাট বসানো যাবে না। নির্ধারিত জায়গায় হাট বসাতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শুক্রবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা: দেশীয় পশুতে কোরবানি, খামারিদের সমস্যা ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী জানান, রাস্তাঘাট অথবা যেখানে যান চলাচলে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয়, সেখানে কোনো পশুর হাট বসতে পারবে না। নির্ধারিত জায়গায় হাট বসবে। প্রতিটি স্বীকৃত হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনা থাকবে, যাতে অস্বাস্থ্যকর ও রোগগ্রস্ত পশু কেউ যেন সামনে নিয়ে না আসে অথবা সেটা বিক্রি যেন না হয়। হাটে বিনা মূল্যে পশু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।
পদ্মা সেতুর ফলে এখন কোনো অপেক্ষা ছাড়াই কোরবানির পশু নিয়ে ঢাকায় আসা যাচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী রেজাউল করিম বলেন, ‘কোরবানির পশু নিয়ে একসময় ঘাটে এসে দুই-তিন দিনও অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে যারা ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তাদের জন্য পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
‘পথে অনেক সময় পশু ক্লান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে যেত, অনেক সময় মারাও যেত, সে অবস্থা থেকে পরিত্রাণ হয়েছে। এভাবে পদ্মা সেতু কোরবানির আয়োজনে অকল্পনীয় সুযোগ করে দিয়েছে। কোরবানির অর্থনীতিতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।’
পথে আসার সময় কোনো বাজারে মালিককে পশু নামাতে জোর করা যাবে না বলেও জানান মন্ত্রী।
বলেন, ‘এ বছর আমরা নিয়ম করে দিয়েছি, যিনি কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তিনি পশু ঢাকায় না সিলেটে কোথায় বিক্রি করবেন সেটা তার ব্যাপার। পথে কোনো বাজারে তাকে পশু নামাতে জোর করা যাবে না। খামারিদের আরেকটি সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, বাড়িতে বা রাস্তায় পশু বিক্রি করলে তাদের কোনো হাসিল দিতে হবে না। কেউ খামারিদের বাজারে এনে পশু বিক্রিতে বাধ্য করতে পারবে না।’
ক্রান্তিকালে খামারিরা যাতে টিকে থাকতে পারেন সে জন্য রাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, ‘করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এবার বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার একটি অংশে প্রাণিসম্পদ খাতে যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রণোদনা দিয়ে খামারিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে এবং এ খাত যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘পশুখাদ্য তৈরির অন্যতম উপাদান প্রোটিন, যা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ আমদানিতে উৎসে করসহ অন্যান্য কর সরকার শিথিল করে দিয়েছে। দেশে পশুখাদ্য উৎপাদনের জন্য সরকার এ কর অব্যাহতি দিয়েছে। গুঁড়া দুধ উৎপাদনে দেশে খামারিরা কারখানা স্থাপন করলে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য আমদানিতে কর মওকুফের ব্যবস্থা সরকার করবে।’
ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি এম এ জলিল মুন্না রায়হানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউল আহাদসহ আরও অনেকে।
আরও পড়ুন:চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৯৫ শতাংশই খেলাপিযোগ্য। এর পরিমাণ ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত পরিদর্শনে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর এটিকে সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা হবে।
মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হারের নড়বড়ে অবস্থার চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আসন্ন অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির।
এটি ছিল বর্তমান গভর্নরঘোষিত শেষ মুদ্রানীতি। কারণ ৩ জুলাই রোববার তার শেষ কর্মদিবস। নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বর্তমান অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী গভর্নর বলেন, ‘ঋণের সিংহভাগ খেলাপিযোগ্য হওয়ায় চতুর্থ প্রজন্মের বেসরকারি ইউনিয়ন ব্যাংকে সমস্যা রয়েছে, তবে যেখানে যে সমস্যা হবে, আমরা দেখব। সমাধানের পথও আমরা বের করব। আমরাই উদ্ধার করব।
‘শরিয়াহভিত্তিক নতুন ব্যাংকটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যাদি মনিটরিং করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৯৫ শতাংশই খেলাপিযোগ্য। এর পরিমাণ ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত পরিদর্শনে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
ইউনিয়ন ব্যাংক ২০১৩ সালে ব্যাংকিং কার্যক্রমে যুক্ত হয়। এই নয় বছরে ব্যাংকটিতে এমন অবস্থা কীভাবে তৈরি হয়েছে তা জানতে চাইলে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘ইউনিয়ন ব্যাংকে সমস্যা একটা হয়েছে। পত্রিকায় খবরও এসেছে। এটি আমাদের নিয়মিত তদারকির মধ্যে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সব ব্যাংক এক রকম নয়। ভালো, খারাপ, মন্দ সব ধরনের ব্যাংকই আছে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক এক রকম, ব্যক্তি খাতের ব্যাংক অন্য রকম। একইভাবে বিদেশি ব্যাংক এক রকম, শরিয়াহ ব্যাংক আরেক রকম। আমাদের ক্যামেলস রেটিংসে এসব বিষয় আসবে।’
ইউনিয়ন ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সাল শেষে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ১৮ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা পরে আরও বেড়েছে।
এর মধ্যে ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকাই ‘খেলাপিযোগ্য’ বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে এসেছে। এসব ঋণ সমন্বয় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমন্বয় করতে না পারলে এসব ঋণ খেলাপি করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই ১ জুলাই শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ২০২২-২৩ অর্থবছর। করোনাভাইরাস নতুন করে চোখ রাঙাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রের যুদ্ধের আঘাত তো লেগেই আছে। সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সব মিলিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েই শুরু হলো নতুন অর্থবছর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা। অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধি অর্থনীতিকে যে সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, সেই ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরাও আরেকটি চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু আমদানি কমার কোনো সুখবর দিতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। উল্টো উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, নতুন বছরে বাণিজ্য ঘাটতি ৩৭ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে। আর বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ঘাটতি ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, দেশে রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ৩৩ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ২৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল।
নতুন মুদ্রানীতিতে বাণিজ্য ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার।
বাণিজ্য ঘাটতির ১০ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তথ্য প্রকাশ করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে দেখা যায় এই ১০ মাসে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার।
এর মধ্যে অর্থবছরের বাকি দুই মাস (মে ও জুন) শেষ হয়ে গেছে। সেই দুই মাসের তথ্য যোগ করে বৃহস্পতিবার নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে ৩২ শতাংশ প্রবিৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ বিদায়ী অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় দেশে আসবে। অন্যদিকে আমদানি ব্যয় বাড়বে ৩৫ শতাংশ। প্রবাসীয়দের পাঠানো প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমবে ১৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ক্যারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টে) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার।
নতুন অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমে ১৩ শতাংশে নেমে আসবে। আমদানি ব্যয় বাড়বে ১২ শতাংশ। রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বমুখী হবে এবং ১৫ শতাংশ বাড়বে। ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১৬ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।
আমদানিতে জোয়ারের পাশাপাশি বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি চূড়ায় উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
এই অঙ্ক আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) চেয়েও ২১ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-এপ্রিল সময়ের চেয়ে বেশি প্রায় ৫৩ শতাংশ।
২০২০-২১ অর্থবছরের এই ১০ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক শূন্য ১ বিলিয়ন ডলার। আর পুরো অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে এত বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৬৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪১ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ১০ মাসে ৪৮ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল।
অন্যদিকে এই ১০ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবেই ১০ মাসের হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
এর ফলে ব্যালান্স অফ পেমেন্টেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে; অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক ১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে মাত্র ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি ছিল।
পণ্য আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ও লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে বাংলাদেশ এই মাইলফলক অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর।
নিউজববাংলাকে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই আমদানিতে জোয়ার বইছে। আর এতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান বা বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
‘আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে; তারপরও তেমন আমদানি কমছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় রপ্তানি আয় কমলেও আমদানি কমার কোনো লক্ষণ দেয়া যাচ্ছে না। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সও নিম্নমুখী। সব মিলিয়ে দিন যত যাচ্ছে, অর্থনীতিতে সংকট ততই বাড়ছে।
‘করোনা মহামারির ধাক্কা থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলাম। এরই মধ্যে যুদ্ধ নতুন সংকটে ফেলে দিয়েছে। বন্যায় বড় ক্ষতি হচ্ছে। এতো কিছুর মধ্যে নতুন করে আবার করোনা বাড়তে শুরু করেছে। এতে বোঝাই যাচ্ছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আতঙ্কের মধ্যেই কাটাতে হবে নতুন অর্থবছর।’
রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নিচে নামছে
আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলার আমদানি খরচ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে অর্থাৎ কয়েকদিনের মধ্যেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মেয়াদের ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল- প্রতি মাসেই ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। এ হিসাবেই বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১০ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৪ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মুদ্রা মজুত থাকতে হয়।
দুই মাস পর পর আকুর দেনা পরিশোধ করতে হয়।
আরও পড়ুন:মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হারের নড়বড়ে অবস্থার চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে মূল্যস্ফীতি ও টাকার বিনিময় হারের উর্ধ্বমূখী চাপ নিয়ন্ত্রণই বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানালেন বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবির।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আসন্ন অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ফজলে কবির। এটি ছিল বর্তমান গভর্নর ঘোষিত শেষ মুদ্রানীতি। কারণ ৩ জুলাই রোববার তার শেষ কর্মদিবস। নতুন গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বর্তমান অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।
করোনার অভিঘাতে নাকাল বিশ্ব অর্থনীতি। এর প্রভাবে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতির জাতাঁকলে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত কমছে টাকার মান। এই সংকটপূর্ণ অবস্থার মধ্যে দুই বছর পর আগামী অর্থবছরের জন্য সামনাসামনি মুদ্রানীতি ঘোষণা করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমিয়ে ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। তবে বাড়ানো হয়েছে সরকারকে ঋণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বাজারে মুদ্রার সরবরাহে লাগাম টানলেন গর্ভনর।
আসছে অর্থবছরে আমানতকারীদের জন্য সুদ হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছে, ঋণের একক ৯ শতাংশ সুদ হারেও কোনো চাপ নেই।
গর্ভনর হিসেবে এই শেষ মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন তার কাছে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্ন ছিলো, কতটুকু উপভোগ করেছেন এই পদ?
গভর্নর জানালেন, তার দায়িত্বকালীন এই ৬ বছরে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ করোনাসহ যেসব চাপ এসেছে তাতে তিনি খুব একটা স্বস্তি পাননি।
বিদায়ী গভর্নরের এই সময়কালে ঘুরে-ফিরে এসেছে ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য, একক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ দেয়া কিংবা রাজনৈতিক চাপের মতো বিষয়গুলো।
গর্ভনরের দাবি, সব চাপ উপেক্ষা করেই স্বাধীনভাবে চলেছে আর্থিক খাত।
নতুন মুদ্রানীতি
মুদ্রা সরবরাহে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ১ শতাংশ। এটা সরকারের কাঙ্ক্ষিত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির সিলিংয়ের সমষ্টির তুলনায় কিছুটা কম। আগের বছর অর্থ সরবরাহ নির্ধারণ করা হয় ১৫ শতাংশ।
মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ।
সরকারের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নীট ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ ঋণের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে।
বেসরকারি খাতে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ ঋণ বৃদ্ধির সংকুলান রাখা হয়েছে।
গভর্নর বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরের মতো ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ব্যাংকিং খাতে নীট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি কিছুটা ঋণাত্মক হতে পারে। এছাড়া দেশের রপ্তানি আয় ও আমদানি ব্যয় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা থাকলেও উচ্চ ভিত্তির কারণে এগুলোর প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের তুলনায় কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘২০২১-২২ অর্থবছরে জনশক্তি রপ্তানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
নীতি সুদহার বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাতগুলোতে ঋণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নীতি সুদহার হিসেবে বিবেচিত রেপো সুদ হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে।’
তাছাড়া আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বিকল্প পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালুর কথা জানান তিনি।
মুদ্রানীতিতে দুই চ্যালেঞ্জ
গভর্নর বলেন, ‘ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল চ্যালেঞ্জ হবে টাকার মান ধরে রাখা। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা। একইসঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে সমর্থন অব্যাহত রাখা। এজন্য সতর্কতামূলক মুদ্রানীতির ভঙ্গি অনুসরণ করা হয়েছে, যা কিছুটা সংকোচনমুখী।’
জাতীয় বাজেটে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য সরকারের কাঙ্ক্ষিত জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হলো ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
ফজলে কবির বলেন, ‘মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও রিজার্ভ ধরে রাখা। আর কর্মসংস্থানের জন্য আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধি চাই।’
বাংলাদেশ ব্যাংক স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সরকার বা মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করছে না। অর্থনীতির জন্য যা প্রয়োজন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বিবেচনায় নিয়েই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়, কারও চাপে পড়ে নয়।’
একক সুদ হারে চাপ নেই
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও আমানতের হার সত্ত্বেও ঋণের সুদ ৯ শতাংশ অব্যাহত থাকবে বলে জানান গভর্নর ফজলে কবির।
তিনি বলেন, ‘ঋণের ৯ শতাংশ সুদ হারে এখন পর্যন্ত কোনো চাপ দেখছি না। পুরো ব্যাংক খাতে ঋণের গড় সুদ বর্তমানে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ। সুদ হার নির্ধারণের আগে ঋণের সুদ শুধু ডাবল ডিজিট নয়, ১৭ থেকে ১৮ শতাংশে উঠে যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এখনো কোনো চাপ অনুভব করছি না।’
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সব ধরনের ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ করে।
গভর্নরের সময়ে কেমন ছিল ব্যাংক খাত
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘ব্যাংক খাতের অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমি জয়েন করেছিলাম। এসব চ্যালেঞ্জের কারণে স্বস্তি পাইনি। তবে আশা করছি আগামী রোববার থেকে সব ভালো জিনিস দেখব। ‘আমি ১১তম গভর্নর। আমলাদের মধ্যে সপ্তম গভর্নর আমি। এর বাইরে একজন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার, দুজন কমার্শিয়াল ব্যাংকার ও একজন ম্যাক্রো ইকোনমিস্ট ছিলেন। বাকি সবাই আমলা থেকেই গভর্নর হয়েছেন।’
আরও পড়ুন:ঈদুল আজহা সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের খেলাপি ঋণের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ নিয়মিত করতে পারবেন তারা। পাশাপাশি নতুন ঋণের জন্য আবেদনও করা যাবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বিশেষ এই সুবিধা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বহাল থাকবে।
সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই সার্কুলার পাঠানো হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়, কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য আগে বিতরণ করা কোনো ঋণের অংশবিশেষ খেলাপি হয়ে থাকলে ন্যূনতম ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতার গোডাউনে স্টক বা সহায়ক জামানত থাকতে হবে।
পরে ঋণগ্রহীতার সক্ষমতা যাচাই সাপেক্ষে ২০২২ সালে কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ঋণ বিতরণ করতে পারবে তফসিলি ব্যাংকগুলো। নতুন ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড অ্যামাউন্ট আদায় করা যাবে না।
কোরবানীকৃত পশুর কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে বরাদ্দকৃত ঋণের সুষ্ঠু বিতরণ নিশ্চিতকরণসহ তৃণমূল পর্যায়ে চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িতদের কাছে পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
শরিয়াহ্ভিত্তিক পরিচালিত ব্যাংক এসব নীতিমালা অনুসরণ করে এই খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক জোগান আসে প্রতি বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানীকৃত পশুর চামড়া থেকে। এ সময় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে চামড়াশিল্পের মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণের পাশাপাশি চামড়া ক্রয়-বিক্রয় কাজে সরাসরি জড়িত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা আবশ্যক।
চামড়াশিল্পে বিরাজমান সমস্যাসহ কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে আগের কোরবানির ঈদ মৌসুমে কাঁচা চামড়া কেনার উদ্দেশ্যে বিতরণকৃত বেশ কিছু ঋণ অনাদায়ী রয়ে গেছে।
নতুনভাবে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি, বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থা এবং সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি এলাকায় সংঘটিত আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে আগামী কোরবানির মৌসুমে প্রয়োজনীয় অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ায় আবারও চালের দাম বেড়েছে। চিকন চালের দাম বেড়েছে ১ টাকা। আর মোটা চালে ২ টাকা।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চালকল থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করছেন চালকল মালিকরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোথা থেকে বাড়ল খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মাসখানেক ধরে কুষ্টিয়ার বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা কেজি দরে। বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ার পৌর বাজারের কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা ৬৭ টাকা করে বিক্রি শুরু করেছেন।
মেসার্স মা ট্রেডার্সের আহমেদ মনজুরুল রিপন বলেন, ‘হঠাৎ করে খাজানগরের মিল থেকে দাম বাড়িয়ে দেয়ায় তাদেরও দাম বাড়াতে হয়েছে। মিল মালিকরা ৫০ কেজির বস্তার দামের তুলনায় ২৫ কেজির বস্তায় ১০ টাকা দাম বেশি ধরেন। এতে কেজি প্রতি ৪০ পয়সা বেড়ে যায়।’
এ হিসাবের বাইরেও দাম বাড়ানোর কথা বলেন রিপন। মিল থেকে ৫০ কেজির চালের বস্তা কিনতে হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ টাকায়। তিনি বলেন, ‘মিল থেকে এখনও তারা চাল পাচ্ছেন না। আজ অর্ডার দিলে কয়েক দিন পর চাল দেবে। তাই তাদের কিনতে হচ্ছে পাইকারদের আড়ত থেকে।’
সব মিলিয়ে দোকানে এনে প্রতি কেজি চাল পড়ছে ৬৫ টাকারও ওপরে। তাই ৬৭ টাকা বেচতে হচ্ছে। বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে অবশ্য আগের দাম ৬৬ টাকা কেজিতেই বেচতে দেখা গেছে।
শাপলা ট্রেডার্সের আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘মিলে দাম বেড়েছে শুনেছি। আমার দোকানে এখনও বেশি দামের চাল আসেনি। তাই আগের দামেই বেচতে হচ্ছে।’
একই কথা বলেন নিউ স্বপন স্টোরের মো. স্বপন। তিনি বলেন, ‘মোটা চালের দামও বাড়ানো হয়েছে বস্তায় ৬০ টাকা। এতে খুচরা পর্যায়ে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের মোটা চাল।’
এদিকে মিল মালিকরা দাম বাড়ানোর কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলছেন, ১০ দিন হলো তাদের বেচাকেনা ও অর্ডার কমে গেছে। আগের দামেই চাল বেচছেন তারা।
জেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, ‘মিল থেকে ৫০ কেজির বস্তা ৩ হাজার ২০০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে না। এতে খুচরা পর্যায়ে ৬৬ টাকায় বিক্রি করার কথা। কী কারণে কোথা থেকে ৬৭ টাকা হলো তা প্রশাসনের খতিয়ে দেখা দরকার।’
খাদ্য বিভাগও খতিয়ে দেখার কথাই বলছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ‘ পাঁচটি মনিটরিং টিম কাজ করছে। কোনো অসংগতি পেলে টাস্কফোর্সকে খবর দেবে। আর তখনই অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুষ্টিয়ার খাজানগরে আছে চার শতাধিক রাইস মিল। এর মধ্যে ৫২টি বৃহৎ অটোমেটিক রাইস মিল। এখানে দাম বাড়লে সারা দেশে তার প্রভাব পড়ে।
এবার বোরো মৌসুমের শুরুতে এক মাসের ব্যবধানে আট দফায় মিনিকেট চালের দাম বেড়েছিল কেজিতে ১১ টাকা। ওই সময় থেকেই মিল মালিকরা ধানের দাম বেশি থাকার কথা বলে আসছেন।
ওই সময় প্রশাসনের অভিযান জোরদার করা হলে এ মাসের ৫ তারিখে কেজিতে এক টাকা কমে দাম। সেই থেকে কুষ্টিয়ার খুচরা বাজারে ৬৬ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছিল মিনিকেট চাল। এর ২৫ দিন পর আবার এক টাকা বেড়ে গেল দাম।
দফায় দফায় দাম বাড়ানোতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ভোক্তারা। মো. রফিক নামে একজন বলেন, ‘অজুহাত পেলেই দাম বাড়াতে থাকেন চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।’ এদের সিন্ডিকেট দমন করতে তিনি সরকারকে চালকল দিয়ে নিজে উৎপাদনে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য