উপশহর থেকে তেররতণের দূরত্ব বড়জোর এক কিলোমিটার। আগে এটুকু পথ যেতে রিকশা ভাড়া লাগত সর্বোচ্চ ২০ টাকা। তবে পাঁচ-ছয় দিন ধরে ১০০ টাকার কমে যেতে চাচ্ছেন না কোনো চালকই। আর অটোরিকশার এই দূরত্ব পাড়ি দিতে চাইছেন অন্তত দেড় শ টাকা!
বন্যায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সিলেট নগরের প্লাবিত কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। তাদের এই দুর্ভোগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে যানবাহনের ভাড়া। বন্যায় সড়ক তলিয়ে যাওয়াকে পুঁজি করে ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন অটোরিকশা ও রিকশাচালকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।
নগরের উপশহর এলাকার এ-ব্লকের বাসিন্দা সুদীপ্ত চৌধুরী গ্রামীণফোনে চাকরি করেন। ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘উপশহর মোড় থেকে আগে আমার বাসায় যেতে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাগত। কিন্তু এখন ১০০ টাকার নিচে কোনো রিকশা যায় না। আর অফিসে যেতে লাগে দেড় থেকে ২০০ টাকা।’
সুদীপ্ত জানান, তার বাসায় বিদ্যুৎ নেই। গ্যাসও নেই। ফলে হোটেল থেকে খাবার এনে খেতে হয়। অবস্থা এমন যে, তিন দিন ধরে তিনি গোসলও করেননি। এর মধ্যে রিকশা ভাড়া বেড়ে যাওয়া আরেক দুর্ভোগ।
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেতন তো বাড়েনি। কিন্তু খরচ অনেক বেড়ে গেছে।’
শনিবার দুপুরে উপশহরে রোজভিউ হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো রিকশা ও অটেরিকশা। উপশহরের ভেতরের সবগুলো সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এসব বাহন ছাড়া চলাচলের আর কোনো উপায় নেই।
এই মোড় থেকে শিবগঞ্জ মোড়ে যেতে রিকশাচালকদের সঙ্গে দরদাম করছিলেন গৃহিণী তানজিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘বন্যাকে পুঁজি করে রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা ভাড়া চার-পাঁচ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমাদের জিম্মি করে ফেলেছেন তারা।’
তানজিনা আরও বলেন, ‘এখন রিকশায় উঠলেই ১০০ টাকা দিতে হয়। এর কমে কোথাও যেতে চান না চালকরা।’
শনিবার নগরের প্লাবিত অন্য কয়েকটি এলাকা ঘুরে এই একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক জায়গায় ভাড়া নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বিবাদ লেগে যেতেও দেখা গেছে।
তবে ভাড়া বাড়ানোর যুক্তি দেখিয়ে উপশহর মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালক জাবের উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানির মধ্য দিয়ে আমরা রিকশা চালাই। পানি যে জায়গায় বেশি সেখানে রিকশা চালানো যায় না। ধাক্কা দিয়ে নিতে হয়। আবার পানির নিচে সড়কের ভাঙাচোরা বোঝা যায় না। এ কারণে চাকার রিংও যখন-তখন ভাঙছে। এসব কারণে আমরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছি।’
নগরের কালিঘাট থেকে বাজার নিয়ে অটোরিকশায় চড়ে মাছিমপুর বাসায় আসেন উদয়ন সিংহ। তিনি বলেন, ‘আগে ৫০ টাকায় এই পথটুকু আসতাম। আজকে ২০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। এর নিচে কোনো অটোরিকশা আসতে চায় না।’
উদয়নকে নিয়ে আসা অটোরিকশাচালক মক্তার আহমদ বলেন, ‘পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে আমরা গাড়ি চালাচ্ছি। পানি ঢুকে অনেক সময় ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই কিছুটা বেশি ভাড়া তো দিতেই হবে।’
নগরের একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর নগরের রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া প্রায় দিগুণ বাড়িয়ে দেন চালকরা। এবার বন্যার সুযোগে তারা ভাড়া কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।
নগরের শেখঘাট এলাকার বাসিন্দা আজমল আলী বলেন, ‘আমার বাসা থেকে শেখঘাট পয়েন্ট পায়ে হাঁটা দূরত্ব। আগে হেঁটেই চলাচল করতাম। এখন পানির কারণে হেঁটে যেতে পারি না। কিন্তু এইটুকু পথ ৭০-৮০ টাকার নিচে কোনো চালকই যেতে চাচ্ছেন না।’
ভাড়া বাড়ার বিষয়ে সিলেট জেলা সিএনজিচালতি অটোরিকশা শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাকারিয়া আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যার কারণে চালকরা ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এ ছাড়া সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এখন চলাচলে সময় বেশি লাগছে। গ্যাস বেশি লাগছে। গাড়ি নষ্টও হচ্ছে। এসব হিসাব করলে ভাড়া একটু বাড়তেই পারে।’
২০১৬ সালে সিলেট নগরের রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছিল সিটি করপোরেশন। তবে শুরু থেকেই ভাড়ার এই হার প্রত্যাখ্যান করে আসছেন চালকরা। ফলে সিসিক নির্ধারিত ভাড়া কখনই কার্যকর হয়নি। পরে সিসিকের পক্ষ থেকে ভাড়া পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হলেও তা আর করা হয়নি।
এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের বলেন, ‘ভাড়া নির্ধারণ বা তদারকির দায়িত্ব পুলিশের নয়। তবে মানুষের দুর্ভোগকে পুঁজি করে তাদের জিম্মি করে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় থেকে চালকদের বিরত থাকা উচিত। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও এ বিষয়ে নজর রাখবে।’
আরও পড়ুন:বেড়েছে গরম। এর মধ্যেই দফায় দফায় লোডশেডিং। এ অবস্থায় রাতের বেলায় ঘুমানোই কঠিন হয়ে পড়েছে চাঁদপুরবাসীর। চাঁদপুর শহর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন পরিস্থিতির কথা জানা গেছে।
গত কয়েক দিনের লোডশেডিংয়ে চাঁদপুরের জনজীবন অতিষ্ঠ হওয়া ছাড়াও ব্যাহত হচ্ছে অফিস, ব্যাংক-বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
চাঁদপুর শহরের মাদ্রসা রোড এলাকার শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার ও মাহিম বলেন, ‘দুদিন ধরে ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে আমরা পড়াশোনা করতে পারছি না। প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরেও বসে থাকা যাচ্ছে না। বিশেষ করে, রাতে লোডশেডিং বেশি হওয়ায় ঘুমানোই যাচ্ছে না। আমরা এই সমস্যার নিরসন চাই।’
শহরের নাজির পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী মামুন তালুকদার বলেন, ‘একবার বিদ্যুৎ গেলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেও আসে না। কিন্তু আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিদ্যুৎ ছাড়া চালানো সম্ভব না। লোকজন এসে ফিরে যাচ্ছে।’
মামুন জানান, লোডশেডিংয়ে বাসা বাড়িতে বয়স্ক ও ছোট শিশুদেরই বেশি সমস্যা হচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে তাদেরকে ঘরে আটকে রাখা কষ্ট হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরে অবস্থিত ১৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকাই এই অঞ্চলে লোডশেডিং বাড়ার অন্যতম কারণ। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে এটি। যদিও ডাকাতিয়ার অপর প্রান্তে ইচলী এলাকার ‘চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড’ নামে একটি প্রাইভেট বিদ্যুৎকেন্দ্রে অল্প পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে তা সীমিত।
পর্যবেক্ষণ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদ্যুৎ সংকট এত প্রকট ছিল না চাঁদপুরে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাহিদার ৬০-৭০ ভাগ সরবরাহ পেলেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি পাচ্ছে অর্ধেকের মতো। তাই গত তিন দিন ধরে বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়া লক্ষ্য করা গেলেও সহসা এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ।
চাঁদপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘উৎপাদন সমস্যার কারণে সারা দেশেই বিদ্যুৎ সল্পতা আছে। চাঁদপুরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিন দিনের বেলায় ১৮ মেগাওয়াট ও রাতে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে লোডশেডিং হচ্ছে। বর্তমানে দিনে ১২ মেগাওয়াট আর রাতে ১৪ মেগাওয়াট দেয়া হচ্ছে।’
গ্যাসের সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকবে বলে জানান মিজানুর রহমান।
আরও পড়ুন:ঢলে ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের বরাদ্দে অর্থ প্রথম ধাপেই পেয়েছে সিলেটের দলদলি চা বাগানের ৯ পরিবার।
মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান ক্ষতিগ্রস্ত চা শ্রমিক পরিবারের মাঝে ১০ হাজার টাকা করে বিতরণ করেন।
১৮ জুন ঢলে ঘর ভেঙে যায় দলদলি চা বাগানের ২০টি শ্রমিক পরিবারের। তবে অর্থাভাবে এতদিন ঘরগুলোও সংস্কার করতে পারেননি শ্রমিকরা।
এই বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে নিউজবাংলায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর বদলে যায় চিত্র।
সরকারি সহায়তারও আগে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ পরিবারকে ‘দুর্যোগপীড়িতদের পাশে লেখক-শিল্পী- সাংবাদিক-প্রকাশক’-এর ব্যানারে ঘর তৈরির টিন দেয়া হয়। তাদেরকে খাবার দিয়েছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন।
মঙ্গলবার অর্থ বিতরণের সময় জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সিলেটে ৫ কোটি টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এ টাকা থেকেই প্রথম ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে দলদলি চা বাগানের ৯ পরিবারকে সহায়তা দেয়া হলো।
তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা এমনিতেই মানবেতর জীবন যাপন করেন। তাই প্রথম ধাপে তাদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে পুনর্বাসন করা হবে।
১৮ জুন পাহাড়ি ঢল ও টিলা ধসে পরিবারগুলোর ঘর ধ্বংস হয়ে যায়।
আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ২৫ হাজারের বেশি মানুষ
১৫ জুন থেকে সিলেটে বন্যা শুরু হয়। মঙ্গলবার ২০ দিন পার হয়েছে। এখনও অনেক জায়গা থেকে নামেনি পানি। এ কারণে আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারেনি অনেক মানুষ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটে এখনও বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ২৫ হাজার ৫৭৯ জন আশ্রিত আছেন। জেলায় ৩১৭টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু রয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, এবারের বন্যায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৮৩টি, ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। বানের পানিতে ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ঘরবাড়ির।
এ পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৬১২ টন চাল, ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং প্রায় আড়াই কোটি টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
আরও পড়ুন:এক কিশোরীর এডিট করা অশ্লীল ছবি ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করার মামলায় রাজশাহীর আদালত এক ব্যক্তিকে আট বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও আট লাখ টাকা জরিমানা করেছে।
রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান আলাদা দুটি ধারায় মঙ্গলবার দুপুরে আসামিকে এ দণ্ড দেন।
দণ্ডিত শাকিল মন্ডল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা। ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে বগুড়া সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। ১৬ বছর বয়সী কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা।
এজাহারে বলা হয়, আসামি শাকিল মন্ডল ওই কিশোরীর ছবি সংগ্রহ করে এডিট করেন। পরে অশ্লীল ছবি শাকিল তার ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে ওই কিশোরীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে পাঠান। কিশোরীর বাবাকে ফোন করে শাকিল ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে এসব ছবি নেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেন।
আইনজীবী ইসমত আরা জানান, মামলার পর পুলিশ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর বিচার শুরু হয়। আদালত ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত একটি ধারায় আসামিকে ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানার এ অর্থ অনাদায়ে আরও ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়।
অন্য আরেকটি ধারায় আসামিকে ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার এই অর্থ অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে আসামিকে।
রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, সাজা একটার পর একটা কার্যকর হবে। জরিমানার অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে ওই কিশোরী পাবে। মামলার আসামি পলাতক আছেন। তার অনুপস্থিতিতেই রায় দেয়া হয়েছে।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে কৃষক হত্যা মামলায় একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
অতিরিক্ত দায়রা জজ আব্বাসের উদ্দিনের আদালত মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় দেয়।
দণ্ডিত আব্দুল হান্নান শেখের বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাঁচকাহনিয়া গ্রামে।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী আইনজীবী শহিদুজ্জামান খান নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, টুঙ্গিপাড়ার বালাডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শেখ নুরুল ইসলাম খানের সঙ্গে হান্নান শেখের বিরোধ চলছিল। ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাতে জমি থেকে বাড়ি ফেরার পথে হান্নান ও তার লোকজন নুরুলকে কুপিয়ে পালিয়ে যান।
স্থানীয়রা তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর নুরুলের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে যান নুরুলের স্ত্রী আফরোজা নাহার রানু। থানা মামলা না নিলে ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ছয়জনের নামে আদালতে মামলা করেন। পুলিশ হান্নান ও তার স্ত্রী মহুরোন নেছাকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
আইনজীবী শহিদুজ্জামান বলেন, ‘আদালত হান্নানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে। তার স্ত্রীকে খালাস দেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে বাঁধ ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে দ্বীপ মাঝিয়ালী চরের ১৭০টি পরিবারের সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
ওই গ্রামের চারপাশ ঘিরে করোতোয়া, ধরধরিয়া এবং পাথরাজ নদী প্রবাহিত হচ্ছে। গত বন্যায় ধরধরিয়া খালের ওপর নির্মিত বাঁধ ভেঙে দেন সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান।
চলাচলের ব্যবস্থা না করেই হঠাৎ বাঁধ ভেঙে দেয়ায় চরটির চারপাশে থাকা গ্রামের কৃষকরাও যেতে পারছেন না দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামে। এতে হাজার হাজার মানুষ সংকটে পড়েছে।
ধরধরিয়া খালের উপর বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুরে মানববন্ধনও করেছে স্থানীয়রা। উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের মল্লিকাদহ ধোকরপাটি ও দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দাদের আয়োজনে করতোয়া নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় নারী ও পুরুষ অংশ নেয়।
স্থানীয়দের দাবি, ধরধরিয়া খালের ওপর ও ভাঙনের মুখে পড়া করতোয়া নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ হলে আবারও তাদের চলাচলের সুব্যবস্থা হবে।
স্থানীয়রা জানান, চারদিকে নদীবেষ্টিত দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিবারই বর্ষায় পানিবন্দি হয়ে থাকেন। বর্ষায় তাদের চলাচলের কোনো পথ না থাকায় নৌকায় চলাচল করতে হয়। গ্রামটির শিক্ষার্থীদের বর্ষায় স্কুল কিংবা কলেজে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কৃষকেরা তাদের জমিতে উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। এতে পুরো বর্ষা জুড়ে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
দিন দিন গ্রামটি করতোয়ার ভাঙনের মুখে পড়ছে। এ থেকে রেহাই পেতে ২০২০ সালে গ্রামের বাসিন্দারা প্রায় ৩ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিজেদের চলাচলের জন্য ধরধরিয়া খালের উৎপত্তিমুখে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করেন। করোতোয়া নদীর একটি প্রান্ত থেকে উৎপত্তি হওয়া ধরধরিয়া খালে বর্ষাকালে পানি প্রবাহিত হয়। প্রায় এক কিলোমিটার প্রবাহিত হচ্ছে এই খাল।
বাঁধ নির্মার্ণের পর গত দুই বছর ভালভাবে চলাচল করতে পারলেও ভাঙনের অজুহাতে এ বছরের বন্যায় ওই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতের অন্ধকারে বাঁধ কেটে দেন। এতে গ্রামের বাসিন্দারা আবারও পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েন।
দ্বীপ মাঝিয়ালী গ্রামের ৬০ বছরের রহিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে পারছে না। চলাচলের ব্যবস্থা না করেই তারা বাঁধটি ভেঙে দেয়। আমরা এখন খুব সমস্যায় আছি।’
তবে আওয়ামী লীগ নেতা শাহিনুর রহমান বলেন, ‘দুই শ বছর থেকে ধরধরিয়া নদী প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীতে বাঁধ দেয়ায় এপারের গ্রামগুলো ভাঙনের মুখে পড়েছে। তাই কেটে দিয়েছি।’
ইতোমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম ফেরদৌস।
তিনি জানান, অবৈধভাবে বাঁধ কেটে দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন:রাজশাহী নগরীতে কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা মামলার এক আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
মহানগর হাকিম আদালত-১-এর বিচারক রেজাউল করিমের আদালতের মাধ্যমে মঙ্গলবার দুপুরে আনিম ওরফে আনিন ইসলামকে কারাগারে পাঠানো হয়।
২২ বছর বয়সী আনিমের বাড়ি নগরীর বোয়ালিয়া থানার মিরের চক সাধুর মোড়ে।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম জানান, রোববার রাতে হেতেমখাঁ এলাকায় ১৭ বছরের মো. সনি হত্যার ঘটনায় সোমবার বোয়ালিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন সনির বাবা রফিকুল ইসলাম পাখি।
নয়জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে তিনি এই মামলা করেন। মামলার পর সোমবার রাত ১টার দিকে বালিয়াপুকুর এলাকা থেকে আনিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক আবুল হাশেম জানান, দুপুরের পর আনিমকে আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আনিমকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদনের প্রক্রিয়া চলছে।
অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল বলেন, ‘এই হত্যার পেছনে কিশোরদের দুটি গ্যাংয়ের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। নিহত সনির নামে মারামারির দুটি মামলা আছে। এগুলো চলতি বছরের ঘটনা।
‘আসামিদের বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। দুই গ্রুপের মধ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিরোধ ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। শিগগিরই সব আসামি ধরা পড়বে।’
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে রোববার রাত ৯টার দিকে তৈয়বুর ও সনিকে তুলে নিয়ে যান কয়েকজন যুবক। হেতেমখাঁ এলাকায় তারা দুজনকে কুপিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক সনিকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন:টাঙ্গাইলে যৌতুক না পাওয়ায় স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন মঙ্গলবার দুপুরে আসামির উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ বছরের সুজন মিয়ার বাড়ি টাঙ্গাইল পৌর শহরের আদি টাঙ্গাইল এলাকায়।
নিউজবাংলাকে তথ্য নিশ্চিত করেন টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী আইনজীবী মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস।
এজাহারের বরাতে তিনি জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে সুজন মিয়ার সঙ্গে আদি টাঙ্গাইল দাসপাড়ার (মাঝিপাড়া) ২৭ বছরের শিউলী আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর দেড় লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে সুজন বিভিন্ন সময় শিউলীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন।
এর জেরে ২০১৪ সালের ১৭ জুন বেলা ১১টার দিকে সুজন ঘরের দরজা বন্ধ করে শিউলীকে মারধর করেন। পরে পরিকল্পিতভাবে সেভেন আপের বোতল ভর্তি কেরোসিন তেল স্ত্রীর শরীরে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন সুজন।
এ সময় ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে শিউলীকে উদ্ধার করে প্রথমে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পরের দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিউলী আক্তারের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় শিউলীর ভাই শিবলু মিয়া ১৮ জুন টাঙ্গাইল সদর থানায় সুজনকে আসামি করে মামলা করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল রায় দেয়।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য