সিলেটে ত্রাণ নিতে এসে পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ত্রাণ নিতে আসা বন্যাকবলিতরা।
কোম্পানীগঞ্জে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে শনিবার সকালে এমন ঘটনা ঘটে।
লাঠিপেটার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী।
বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণে মন্ত্রী সকালে নিজ নির্বাচনি এলাকায় আসেন। মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণের খবরে সকালে উপজেলা পরিষদের সামনে জড়ো হন হাজারও মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাত্র ২০০ প্যাকেট ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, সকালে ৪/৫ জনের হাতে প্যাকেট তুলে দিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এরপর তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। মন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে বন্যার্তদের মাঝে কাড়াকাড়ি ও হট্টগোল শুরু হয়। এস ময় পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ লাঠিপেটা করে।
ত্রাণ নিতে আসা কোম্পানীগঞ্জের বর্ণি এলাকার বাসিন্দা হাসমত আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘরে এক সপ্তাহ ধরে পানি, খাবার নেই। মন্ত্রী ত্রাণ নিয়ে এসেছেন শুনে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু ত্রাণ তো পাইনি, উল্টো পুলিশের মার খেলাম।’
তবে লাঠিপেটার কথা অস্বীকার করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘ত্রাণের প্যাকেট সীমিত সংখ্যক। এ সময় উপস্থিত মানুষের মধ্যে হট্টগোল ও হাতাহাতি হয়েছে। পুলিশ তাদের শান্ত করেছে। তবে কাউকে লাঠিপেটা বা মারধর করেনি।’
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রীর ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানের জন্য আগের দিনই ১২০ জনের তালিকা করা হয়েছিল। তাদের ত্রাণ নেয়ার জন্য সকালে উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু সকালেই হাজারখানেক মানুষ সেখানে জড়ো হওয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আজকে ত্রাণ বিতরণের জন্য ১২০ জনের তালিকা করেছিলাম। তবু ২০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী রাখা হয়েছিলে। কিন্তু তালিকার বাইরেও প্রচুর মানুষ এসে যাওয়ায় একটু ঝামেলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে মন্ত্রী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। যেহেতু মন্ত্রীর অনুষ্ঠান, তাই বেশি মানুষকে বলা হয়নি। কিন্তু আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণ আছে। পর্যায়ক্রমে বন্যাকবলিত সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে।’
এর আগে ত্রাণ বিতণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ত্রাণ আছে। ত্রাণ সামগ্রীর অভাব নেই। প্রশাসন ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে।’
বন্যার্তদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা নিশ্চিত থাকেন, আপনাদের কয়েকদিনের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে। আমরা চেষ্টা করব কীভাবে আপনাদের কষ্ট কমানো যায়। আর পানি নেমে যাওয়ার পর আপনাদের পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’
গত ১১ মে থেকে ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ বন্যা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর একটি। এই উপজেলার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। আর জেলায় মোট পানিবন্দি রয়েছেন ১৫ লাখ মানুষ।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাতে এখনও ১০০ টন চাল রয়েছে। আজকেও বিভিন্ন ইউনিয়নে ৮৫ টন চাল বরাদ্দ দিয়েছি। ইতোমধ্যে ৩০৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ অর্থও বিতরণ করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:ঈদের আগে ও পরে ৭ দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেলে চলাচল নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে গাজীপুরে মানববন্ধন করেছেন একদল বাইকার।
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বুধবার দুপুরে মাথায় হেলমেট পরে ও ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদর্শন করে মানববন্ধনে অংশ নেন শতাধিক বাইকচালক।
এ সময় মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের জন্য বাস মালিকদের দোষারোপ করেন তারা। এছাড়া ঈদের আগে ও পরে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান বাইকচালকরা।
মানবন্ধনে অংশ নেয়া বাইকার আশিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপত্তার ইস্যুতে আন্তমহাসড়কে বাইক চলাচল বন্ধ কার্যকরী সমাধান নয়। বরং মহাসড়কে আইনের প্রয়োগ করে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয়া হোক।’
এ নিষেধাজ্ঞার ফলে লাখো মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী এবারের ঈদে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন বলে মনে করেন তিনি।
বাইকার সবুজ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই সঠিক আইন প্রয়োগের মাধ্যমে মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচলে অনুমতি দেয়া হোক। তবে যারা আইন অমান্য করে হেলমেট, লাইসেন্স ও সেফটি গার্ড ব্যবহার করবে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি দেন মানববন্ধনে অংশ নেয়া বাইকচালকরা।
নির্দেশনা অনুযায়ী, ঈদের আগে তিন দিন, ঈদের দিন এবং ঈদের পরে তিন দিন অর্থাৎ মোট সাত দিন এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে মহাসড়কে রাইড শেয়ারিং করা যাবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিনুল্লাহ নুরি।
৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এই নির্দেশনা।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করছেন বাইকাররা।
পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতির দাবিতে বুধবার দুপুরেও পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার সামনে মানববন্ধন করেছে শরীয়তপুর বাইকারস নামের একটি সংগঠন।
মানববন্ধন থেকে ঈদের আগে পদ্মা সেতুসহ সব মহাসড়কে বাইক চলাচলের অনুমতির দাবি জানানো হয়।
বাইক নেয়া যাবে না নৌপথেও
মহাসড়কে বাইক চালানোর দাবিতে মানববন্ধন করলেও এরই মধ্যে দুই চাকার যানটি বহন নিষিদ্ধ হয়েছে নৌপথেও।
এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেছে। আগামী ১১ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঈদের পর আরও পাঁচ দিন লঞ্চে বা ফেরিতে করে বাইক পরিবহন করা যাবে না।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত ১২ জুন। আর সেটি কার্যকর হয়েছে ২৪ দিন পর।
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হত্যার ঘটনায় তোলপাড়, সেটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানকে শোকজ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। অনুমতি ছাড়া নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করায় সাত কর্মদিবসের মধ্য সুষ্পষ্ট ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৩০ জুন আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কলেজের এক শিক্ষক মোবাইলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।’
কী বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুল শাখাটা বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে চালানো এটার বিষয়ে কীভাবে চালাচ্ছি সেটা জানতে চেয়েছেন। সাত কর্মদিবেসর মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে একটা তদন্ত টিম এসেছিলেন। তারাই প্রতিবেদন দিয়েছিলেন এই বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে উৎপল স্যারকে হত্যার বিচার অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটা বড় চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সব স্কুলগুলো স্কুল উপজেলার অনুমতি নিয়ে এভাবেই চলে। দেখেন, আমরা এতদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি, উপবৃত্তি পাচ্ছি। তাহলে এতদিন তো শিক্ষা বোর্ড আমাদের বলে নাই যে আপনারা বন্ধ করেন।’
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষকে আমরা শোকজ করেছি। ওনার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি কোথা থেকে কীভাবে পেয়েছেন এই বিষয়টার ব্যাখ্যা চেয়েছি আমরা।’
গত ২৫ জুন কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে।
পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উৎপলের। একই দিন নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার চার দিন পর ২৯ জুন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিন রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় জিতু।
৫ দিনের রিমান্ড শেষে ৬ জুলাই আদালতে শিক্ষক উৎপলকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন জিতু।
এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনুমোদন ছাড়াই প্রাক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়।
আরও পড়ুন:কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করায় গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
বুধবার কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দুপুরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহীদ ময়েজউদ্দিন সড়ক ঘুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেষ হয়।
পরে উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিলুপ্ত কমিটির কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর মোল্লা।
সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ হাসানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পরিমল চন্দ্র ঘোষ, কামরুল ইলাম, মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন, জামালপুর ইউপি চেয়ামন্যান মো. খাইরুল আলম, যুবলীগ নেতা কাজী হারুণ-অর-রশিদ টিপু, বাদল হোসেন, রেজাউর রহমান আশরাফী খোকন, ছাত্রলীগ সাদমান সাকিব আলভী, এমআই লিকনসহ আরও অনেকে।
এ সময় বক্তারা গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে কঠোর সমালোচনা করেন। তারা জানান, কমিটি বিলুপ্ত করলেও জেলা ছাত্রলীগের নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকির সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রলীগের সব ইউনিট গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগকে অবাঞ্ছিত ঘোষাণা করে। পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ দাবির অভিযোগও করেন বিলুপ্ত কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন। এ সংগঠনে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কারো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। সাংগঠনিক নিয়মে আমরা কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করেছি। স্থানীয় সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি আপার সাথেও কথা বলেছি। তবে তিনি চেয়েছেন এই কমিটি নির্বাচন পর্যন্ত বহাল থাকুক। কিন্তু তিনি বিলুপ্ত বা গঠনের কোনো সিদ্ধান্ত দিলেও তা আমাদের সাংগঠনিক নিয়মবহির্ভূত। কাজেই সিদ্ধান্ত দিলেও তা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেন, ‘পারস্পারিক শ্রদ্ধা আর সম্মানের ভিত্তিতেই আমরা সাধরণ মানুষের জন্য রাজনীতি করে আসছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গাজীপুর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ তো আর ভিন্ন কোনো গ্রহের বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রতৃপ্রতিম সংগঠন। তবে জেলা ছাত্রলীগ সেই পরিচয় দেয়নি। তারা কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার আগে আমার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ তো করেইনি, এমনকি কোনো সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন মনে করেনি।’
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় তানভীর-ওয়াহিদ কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি আগামী ৩০ জুলাই গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদক পদে আগ্রহীদের কাছ থেকে সিভি আহ্বান করা হয়।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আব্দুস সামাদ নামে এক কিশোরকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ভাইসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক ৬ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক একেএম রওশন জাহান বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
আদালত পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে দুই ভাইসহ চার আসামিকে আদালতে তোলে সাত দিনের রিমান্ড চায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিচারক বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
গ্রেপ্তাররা হলেন উপজেলার দাদরা এলাকার ১৯ বছরের রবিন মিয়া, তার বড় ভাই ২৪ বছরের রোহান মিয়া, ওই উপজেলার হাটপাড়া গ্রামের ১৯ বছরের মুস্তাফিজুর রহমান নাঈম ও পুঙ্গুয়াই গ্রামের ২২ বছরের শাহীনুর ইসলাম।
জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এর আগে নিহত সামাদের বাবা শাহজাহান মিয়া সোমবার বিকেলে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
নিহত ১৪ বছরের সামাদ দাদরা গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার রবিন মিয়া নিহত রিকশাচালক সামাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এ সুবাদে প্রায়ই রবিনের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত সামাদ। এক সময় রবিনের ছোট বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সামাদের। বিষয়টি জানতে পারে রবিন। পরে তার বোনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেও ব্যর্থ হয়। পরে সামাদকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে রবিন ও তার ভাই রোহান।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে সামাদের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘোরাফেরা করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে যায় রবিন, রোহান ও নাঈম। সেখানে ঝোপের আড়ালে আগেই ওৎ পেতে ছিল শাহীনসহ আরও দুজন। সামাদকে সেখানে নেয়ার পর প্লাস্টিকের দড়ি ও জাল গলায় প্যাঁচিয়ে হত্যা করে স্কুলের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে রাখে তারা।’
ওসি আরও বলেন, ‘সামাদের মরদেহ পাওয়ার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযানে নামে জেলা ডিবি পুলিশের একাধিক টিম। জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের মামলার বরাতে বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৩টার দিকে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয় সামাদ। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাড়ি ফেরেনি। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন স্থানীয় বাজারসহ স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে সামাদের রিকশাটি পাওয়া গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
‘মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সামাদের স্বজনরা ওই স্কুলটিতে অনুসন্ধান চালালে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা ভাঙা দেখতে পায়। ঢাকনা সরানোর পর ভেতরে পাওয়া যায় সামাদের মরদেহ।’
ওসি আরও বলেন, ‘থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।’
আরও পড়ুন:ঈদের আগে-পরে সাত দিন মোটর সাইকেলে করে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত নিষিদ্ধের পর এবার নৌপথে দুই চাকার যানটি বহন নিষিদ্ধ হয়ে গেল।
এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেছে। আগামী ১১ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঈদের পর আরও পাঁচ দিন লঞ্চে বা ফেরিতে করে বাইক পরিবহন করা যাবে না।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত ১২ জুন। আর সেটি কার্যকর হয়েছে ২৪ দিন পর।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান।
গত ৩ জুলাই মহাসড়কে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বাইক চলাচল সাত দিনের জন্য নিষেধ করার কথা জানানো হয়। ৭ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
এই আদেশের কারণে ঈদে এবার বাইকে করে বাড়ি ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেল, যে সিদ্ধান্তটি বাইকারদেরকে তীব্রভাবে অসন্তুষ্ট করেছে।
গত ঈদে লাখো মানুষ বাইক নিয়ে বাড়ি ফেরে। ফলে বিভিন্ন সড়কে আগে যে দীর্ঘ যানজট দেখা যেত সেটি ছিল না। গণপরিবহনেও ছিল না বাড়তি ভিড়। প্রতি বছর বাসের টিকিটের জন্য যাত্রীদের যে হাপিত্যেস দেখা দেয়, সেটিও দেখা যায়নি। ফলে মানুষের ঈদ যাত্রা ছিল নির্বিঘ্ন।
এরপরই পরিবহন মালিকরা মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে।
মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধের পেছনে দুই চাকার দ্রুতগামী এই যানের দুর্ঘটনাপ্রবণতাকে সামনে আনা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে সড়কে দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয় তার মধ্যে এককভাবে ৪০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি দায়ী বাইক। মহাসড়কে গতির লড়াইয়ে নেমে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারায় চালকরা। আর মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার খুবই বেশি।
তবে বাইক নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার ঈদ যাত্রায় আগের ভোগান্তি দেখা দেয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাইকাররা রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করেও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিনই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। সেতু দিয়ে ঈদের আগে আর বাইক চলাচলের সুযোগ দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত দিয়ে ফেরি দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে আবার বাইকে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছিল বাইকাররা। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তে এই সুযোগও বন্ধ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ সদরে লাইলী আক্তার নামে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন মামলার ১ নম্বর আসামি খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাইলী আক্তারকে। ঘটনাটি পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপি জানতে পেরে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে আমাদের টিম। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সহযোগী ৪ ও ৭ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও মামলার ১ নম্বর আসামি কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা সুচতুরভাবে আত্মগোপনে ছিলেন।’
গৌতম কুমার জানান, ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই ময়মনসিংহের টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও পিবিআই হেডকোয়ার্টারের এলআইসি টিমের সহযোগিতায় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। দুজনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে গত ২৮ জুন রাতে নিহতের স্বামী আব্দুর রশিদ আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওইদিন রাতেই ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মো. জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আছমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন খোকন মিয়া ওরফে কাজল, তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কনা, গোলাম মোস্তফার ছেলে কামাল মিয়া, বাবুল, কামাল মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার বৃষ্টি, বাবুলের স্ত্রী রোমান।
মামলার বরাতে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী খুকি আক্তারের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুই পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিল না।
গত ২৬ জুন পালিয়ে যান সিরাজুল ও খুকি। এতে ক্ষিপ্ত হয় খুকির পরিবারের লোকজন। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তারা ছেলের বাড়িতে এসে ছেলের মা লাইলীকে একা পেয়ে প্রথমে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পা তার দিয়ে বেঁধে লাইলীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা লাইলীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত ২৮ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাইলীর মৃত্যু হয়।
ফারুক হোসেন বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আজ হস্তান্তর করা হলে আজই অথবা আগামীকাল ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।’
এ ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য