কক্সবাজারের দুটি হোটেল থেকে দুই নারীর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় আলাদা হত্যা মামলা করেছে তাদের পরিবার।
বৃহস্পতিবার করা দুই মামলাতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
বিচ হলিডে
হোটেল বিচ হলিডেতে ১৯ বছরের লাবণী আকতারের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা মনির হোসেন কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে তরুণীর বাবা মামলাটি করেন। এতে চারজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর ২০ বছরের কামরুল আলম ও ২১ বছরের আরিফ রহমান নিলু আগে থেকেই আটক ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ওসি জানান, আসামিদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন শরীয়তপুরের নড়িয়ার ২১ বছরের যুবক তানজিল হাসান ও নারায়ণগঞ্জের ২০ বছরের মাহিম হাসান অনিক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ওই তরুণী এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বের হয়েছিলেন। অভিযুক্ত চারজন কৌশলে তাকে কক্সবাজারে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।
ওসি সেলিম জানান, চার বন্ধুসহ ১১ মে কক্সবাজার আসেন লাবণী। কলাতলীর বিচ হলিডে নামের আবাসিক হোটেলে অবস্থান নেন তারা। সেখানে ১৪ মে অসুস্থ হলে লাবণীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার অবনতি হলে ১৬ মে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ১৮ মে দুপুরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় তরুণীর সঙ্গে কক্সবাজারে আসা দুজনকে আটক করা হলেও অপর দুজন পালিয়ে যান। আটক দুজন জানিয়েছেন, তারা সবাই অতিরিক্ত মদ্যপান করেছিলেন।
রয়েল টিউলিপ
হোটেল রয়েল টিউলিপ থেকে বুধবার সন্ধ্যায় ২৯ বছরের মাফুয়া খানমের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার ভাই ছৈয়দুল ইসলাম কক্সবাজারের উখিয়া থানায় মামলা করেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেন উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) গাজী সালাউদ্দিন।
তিনি জানান, একজনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়, যাকে আটক করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার দুপুরে। সন্ধ্যায় মামলার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ওসি জানান, বুধবার সকালে গোপালগঞ্জের মাফুয়া খানম দিনাজপুরের নাছির উদ্দিন নামের যুবকের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেল রয়েল টিউলিপে ওঠেন। দুপুরে খাবার শেষে দুজনই নিজেদের কক্ষে অবস্থান নেন।
এর কিছুক্ষণ পর মাফুয়ার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কথা বলে তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেন নাছির। সেখানে চিকিৎসক মাফুয়াকে মৃত বলে জানান।
এজাহারে বলা হয়, প্রেমের সম্পর্কের জের ধরে মাফুয়াকে কক্সবাজার এনে হত্যা করা হয়েছে।
মামলা হয়নি সী গালের ঘটনায়
কক্সবাজারের হোটেল সী গালে বুধবার রাতে মনিরুল ইসলাম নামের এক পর্যটকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়নি। এ ঘটনায় তার স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে ওঠা ৩৫ বছরের লিজা রহমান ঊর্মিকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে।
নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন।
তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সী গাল হোটেলের ৭২৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেন। সেখানে রাত সাড়ে ১২টার দিকে অসুস্থতা বোধ করলে মনিরুলকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে রাত ১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় স্ত্রী পরিচয়ে সঙ্গে থাকা নারীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুল স্বামী নন বলে স্বীকার করেছেন ঊর্মি।
আরও পড়ুন:অবশেষে পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। রাজনৈতিক টানাপড়েনে একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগ ও এমপিদের সমর্থন হারানোর পর, পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন জনসন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন জনসন।
তিনি বলেন, ‘এটি কনজারভেটিভ এমপিদের ইচ্ছা। তারা একজন নতুন নেতা চাইছেন। ওয়েস্টমিনস্টারও এটি চাইছে। পার্টির নেতৃত্বে থাকার আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে তারা।’
ইতোমধ্যে জনসন একটি নতুন মন্ত্রিসভা নিয়োগ দিয়েছেন। এতে লেভেলিং আপ সেক্রেটারি গ্রেগ ক্লার্ক এবং ল্যাঙ্কাস্টারের ডাচির চ্যান্সেলর কিট মল্টহাউস।
আগামী সপ্তাহে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা হবে বলেও জানিয়েছেন জনসন।
তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম কারণ ব্যক্তিগতভাবে আমি ভোটারদের ম্যান্ডেট দিতে আগ্রহী।
‘কনজারভেটিভ পার্টির ১৯২২ কমিটির প্রধান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডির সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে বলেছি, নতুন নেতা খোঁজার প্রক্রিয়া এখনই শুরু করা উচিত। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে কাজ করার দিন-তারিখ ঠিক করা হবে।’
যেসব মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, সেসব মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ার কথাও জানিয়েছেন জনসন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে সেরা কাজটি ছেড়ে দেয়ায় আমি অত্যন্ত দুঃখিত। তবে বিষয়টি মেনে নিয়েছি।’
যৌন অসদাচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত এমপি ক্রিস পিঞ্চারকে কদিন আগে সরকারে নিয়োগ দিয়েছিলেন জনসন। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে শোরগোল দেখা দিলে গত সপ্তাহে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে এমপিত্ব হারান পিঞ্চার।
প্রধানমন্ত্রী জনসন নিজের ভুলও স্বীকার করেন। জানিয়েছিলেন, পিঞ্চার যে সরকারি চাকরির জন্য যোগ্য নন, তা বুঝতে তার দেরি হয়েছে।
তবে এতেও শেষ রক্ষা হলো না। অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
ওয়েলশ সেক্রেটারি সাইমন হার্ট বুধবার পদত্যাগ করেন। এদিন কেবিনেট সভায় বেশির ভাগ এমপি পদ ছাড়ার জন্য জনসনকে চাপ দেন। পরদিন নর্দান আয়ারল্যান্ডের সেক্রেটারি ব্র্যান্ডন লুইস সাইমনকে অনুসরণ করেন।
শুধু নিজ দলেই নয়, বিরোধী লেবার পার্টির তোপের মুখে ছিলেন ৫৮ বছরের এই ব্রিটিশ রাজনীতিক। লেবার পার্টি সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, জনসন প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকলে তারা পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব তুলবে।
আরও পড়ুন:ফরিদপুর সদরে ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সভাপতিকে প্রধান করে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত সবুজ মোল্যার বাবা শহীদ মোল্যা বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার সময় সোমবার রাত ১১টার দিকে শহরতলির বায়তুল আমান এলাকায় সবুজকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। এ সময় তার বাম হাত কনুইয়ের নিচ থেকে আলাদা হয়ে যায়।
পরে সহযোগী ও স্থানীয়রা সবুজকে উদ্ধার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অস্ত্রোপচারের সময় রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
২৮ বছরের সবুজের বাড়ি সদরের ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের কাজের মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকায়। বায়তুল আমান এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। বায়তুল আমান বাজারে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবস্যা করতেন।
এ ঘটনায় বুধবার রাতেই নিহত সবুজের বাবা শহীদ মোল্যা কোতয়ালী থানায় মামলা করেন।
আসামিরা হলেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেন অনু, সিদ্দিক শেখ, আবির হোসেন রুমন মৃধা, শহীদ মোল্লা, মিরান, মো. জিকু, জুয়েল, সজিব, রাকিব মোল্লা, লিয়াকত হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সবুজ বায়তুল আমান বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করে আসছেন। সম্প্রতি সবুজ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ লাইনের ব্যবসা শুরু করলে স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেন অনু এলাকায় আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারে তাকে হুমকি ও বাধা দেন।
ব্যবসা বন্ধ না করলে গত কয়েক দিন আগে সবুজকে মেরে ফেলার হুমকিও দেন অনু।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, এরই মধ্যে বুধবার রাতে সবুজ তার বন্ধু প্রত্যয় ও ফারুকের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বিলমাহমুদপুর এলাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে অনুসহ তার সহযোগীরা সবুজকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেন।
স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়। সেখানে অস্ত্রোপাচারের সময় সবুজের মৃত্যু হয়।
সবুজের বাবা শহীদ মোল্যা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে হুমকি দেয়ার পর থেকে বার বার বলছি যে, তুই ব্যবসায় ছেড়ে দে, অনুরা ভাল না। তুই সাবধানে চলাফেরা কর। ওরা আমার ছেলেকে মেরেই ফেলল। আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব। আমি হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত জেলা ছাত্রদল সভাপতি আদনান হোসেন অনু পলাতক। ফলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে কথা হয় তার বড় ভাই স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ আওয়াল হোসেন তনুর সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সবুজ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সে সূত্র থেকেই এ হত্যাকাণ্ড হতে পারে।’
তার ভাই অনু হত্যার সঙ্গে জরিত থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাই সরকারবিরোধী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাকে ষড়যন্ত্রের শিকার বানানো হয়েছে। আমার ভাই এ হত্যায় জড়িত নয়।’
আরও পড়ুন:চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে অর্থ লেনদেনসংক্রান্ত অডিও ক্লিপ ফাঁসের ঘটনায় গঠিত উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন উপস্থাপিত হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে বুধবার দুপুরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
কমিটির সদস্য ও সিন্ডিকেট মেম্বার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসিম হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন কিছু বলা যাবে না। সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হলে তারপর বলা যাবে। বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘আমরা তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন হবে কি না সেটা সেদিনই বলা যাবে। এজেন্ডায় এ বিষয় নেই। ইতিমধ্যে সিন্ডিকেটের এজেন্ডা হয়ে গেছে।’
শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে গত ৫ মার্চ নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে চবির ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে সিন্ডিকেট।
শিক্ষক নিয়োগে ‘দরকষাকষি’
চবির ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে নিয়োগের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের চেষ্টার কয়েকটি ফোনালাপের ক্লিপ ফাঁস হয়েছে।
ফোনালাপে একজন আবেদনকারীর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়। বলা হয়, তৃতীয় শ্রেণির একটা চাকরির জন্য এখন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাগে। মালি, প্রহরীর মতো চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য লাগে ৮ লাখ টাকা।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ‘ম্যানেজ’ করতেই অর্থের প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করা হয়।
চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন, তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য শিরীণ আখতারের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মোকাররম হোসেন রবীন, অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস শাখার কর্মচারী আহমদ হোসেন এবং ফার্সি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জসীম উদ্দিন বলে তথ্য মিলেছে।
তিনজনের ফোনালাপেই এই লেনদেনে উপাচার্য সম্পৃক্ত থাকবেন বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, উপাচার্য রাজি না থাকলে মন্ত্রী বা আরও বড় কেউ চাকরি দিতে পারবেন না।
তবে রবীন ও আহমদ হোসেন দাবি করেছেন, তারা কারও সঙ্গে এসব কথা বলেননি। এগুলো তাদের বিপদে ফেলার জন্য বানানো হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য পাওয়া যায়নি তিনি ফোন ধরেননি বলে।
তবে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মনিরুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, অডিও ক্লিপটির বিষয়ের পর তারা হাটহাজারী থানায় অভিযোগ করেছেন। উপাচার্যের পিএস পদ থেকে মোকাররম হোসেন রবীনকে প্রত্যাহার করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আর আহমদ হোসেনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এই নিয়োগ নিয়ে আগেও নানা অভিযোগ ছিল। এমনভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ১০ দিন সময় দেয়া হলেও নিয়োগপ্রার্থীরা কার্যত কেবল এক দিন সময় পেয়েছেন। অনলাইনে আবেদনপত্র ডাউনলোডের সুযোগও দেয়া হয়নি। পরে একজন প্রার্থী উচ্চ আদালতে গেলে তার আবেদনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় তা করেনি।
এখানেই শেষ নয়, মৌখিক পরীক্ষার জন্য সবাইকে ভাইভা কার্ড না পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। আবার কার্ড ছাড়াই পরীক্ষা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আবার নিয়োগ বোর্ডে কোনো ফার্সি বিশেষজ্ঞকে রাখা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, পছন্দের কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ দিতেই এতসব করা হয়।
আরও পড়ুন:নড়াইলে পুলিশের সামনে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরানো ও সহিংসতার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত এক শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (জনসংযোগ দপ্তর) মো. আতাউর রহমান বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানান।
সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল) কলেজের মো. রহমাতুল্লাহর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। তিনি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
অধ্যক্ষকে লাঞ্ছনার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত রহমাতুল্লাহকে গত ২৯ জুন গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত সোমবার তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার রিমান্ড শেষ হয় বুধবার।
ঘটনার সময় কালো জামা পরা ওই শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরাতে দেখা যায়।
ওই ঘটনার সময় নেতিবাচক ভূমিকা রাখায় মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ নেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, সে মর্মে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
ওই ঘটনায় নির্লিপ্ততার কারণে কলেজ গভর্নিং বডিকে শোকজ করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের শোকজের উত্তর দিতে বলা হয়েছে।
মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় গত ২৮ জুন তদন্ত কমিটি গঠন করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সিন্ডিকেট সভায় ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনের ওপর বিস্তর আলোচনা শেষে উল্লিখিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডিকেট।
তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন খুলনা বিএল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শরীফ আতিকুজ্জামান। কমিটির সদস্য ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন দপ্তরের পরিচালক এ এস এম রফিকুল আকবর। কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন খুলনা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আ স ম আবদুল হক।
প্রেক্ষাপট
ফেসবুকে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার সমর্থনে কলেজের এক হিন্দু শিক্ষার্থীর পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৮ জুন দিনভর নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সহিংসতা চলে। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় ওই শিক্ষার্থীর পক্ষ নিয়েছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।
এরপর পুলিশ পাহারায় বিকেল ৪টার দিকে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দাঁড় করিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় একদল ব্যক্তি। শিক্ষক স্বপন কুমার হাত উঁচিয়ে ক্ষমা চাইতে থাকেন। পরে তাকে তুলে নেয়া হয় পুলিশের গাড়িতে।
মোবাইল ফোনে ধারণ করা এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে জুতার মালা: ঘুম ভাঙল প্রশাসনের, হারাচ্ছেন না পদ
কী বেরিয়ে এসেছে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হেনস্তার পেছনে কলেজে অভ্যন্তরীণ বিরোধের বিষয়গুলোও অনুসন্ধান করছে এই তদন্ত কমিটি। কমিটির সদস্য নড়াইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দিনের ঘটনার সঙ্গে শিক্ষকদের কেউ জড়িত কি না আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বিষয়টি আমাদের এ রকম মনে হচ্ছে।
‘এত শিক্ষক থাকতে যখন ঘটনাটি অল্পের মধ্যে ছিল, তখন বিষয়টি সবাই মিলে চেষ্টা করলে সমাধান করা যেত। ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ বিষয়টি জটিল করার দিকে নিয়ে এটা করেছি কি না, সে বিষয়টি আমাদের অনুসন্ধানের মধ্যে আছে। আমি বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘তদন্তে এমন কিছু এখনও প্রমাণ করতে পারিনি। তবে যারা আমাদের সাক্ষাৎ দিয়েছেন, তারা বলছেন অভ্যন্তরীণ কোনো ঝামেলা থাকতে পারে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ‘কলেজে বেশ কয়েক বছর ধরে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা আছে। স্বপন কুমারের আগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন আক্তার হোসেন টিংকু নামের আরেক শিক্ষক। পরে তাকে সরিয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
‘আমরা শুনেছি, এদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোনো বিরোধ থাকতে পারে। তবে স্পষ্ট করে কেউ কিছু বলেনি। হয়তো তাদের অন্তরে বিরোধিতা ছিল। প্রকাশ্যে কিছু ছিল না।’
আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে স্বপন কুমার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন গত বছরের ২৭ এপ্রিল। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্তার হোসেন জুনিয়র ছিলেন, তার ওপরে ছিলেন স্বপন কুমার বিশ্বাস। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা আছে, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অন্যজন দায়িত্ব পালন করবেন। সে কারণে তাকে (আক্তার) সরিয়ে নতুন একজনকে অধ্যক্ষ করা হয়েছিল।’
আইনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) বেসরকারি কলেজ শাখার উপপরিচালক (কলেজ-২) মো. এনামুল হক হাওলাদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১১ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে বলা হয়, বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা অনুসরণ করতে হবে।’
আক্তার হোসেনের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিতে অনীহা ছিল স্বপন কুমারের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচীন চক্রবর্তী। তবে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণেই পদটি গ্রহণ করতে হয় স্বপন কুমারকে।
অচীন চক্রবর্তী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আক্তার হোসেনের আগে কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন রওশান আলী। তিনি দুর্নীতির দায়ে অব্যাহতি পেয়েছিলেন। তখন স্থানীয় সংসদ সদস্য (নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক) কলেজের সভাপতি ছিলেন, তিনি আক্তার হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। আক্তার কয়েক বছর দায়িত্বে ছিলেন।
‘পরে কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা সেলিম। তিনি পর্যালোচনা করে দেখেন, নীতিমালায় আছে অধ্যক্ষ না থাকলে টপ মোস্ট সিনিয়র শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাবেন। এরপর তিনি নীতিমালা অনুসারে স্বপনকে দায়িত্ব নিতে বলেন।
‘তিনি (স্বপন কুমার) রাজি ছিলেন না। তবে নীতিমালায় আছে, উপযুক্ত কারণ ছাড়া টপ মোস্ট সিনিয়র দায়িত্ব না নিতে চাইলে তার শাস্তি হবে। তাই তিনি দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন।’
আরও পড়ুন:ঢাকার সাভারে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হত্যার ঘটনায় তোলপাড়, সেটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানকে শোকজ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। অনুমতি ছাড়া নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করায় সাত কর্মদিবসের মধ্য সুষ্পষ্ট ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৩০ জুন আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কলেজের এক শিক্ষক মোবাইলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।’
কী বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুল শাখাটা বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে চালানো এটার বিষয়ে কীভাবে চালাচ্ছি সেটা জানতে চেয়েছেন। সাত কর্মদিবেসর মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে একটা তদন্ত টিম এসেছিলেন। তারাই প্রতিবেদন দিয়েছিলেন এই বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে উৎপল স্যারকে হত্যার বিচার অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটা বড় চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সব স্কুলগুলো স্কুল উপজেলার অনুমতি নিয়ে এভাবেই চলে। দেখেন, আমরা এতদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি, উপবৃত্তি পাচ্ছি। তাহলে এতদিন তো শিক্ষা বোর্ড আমাদের বলে নাই যে আপনারা বন্ধ করেন।’
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষকে আমরা শোকজ করেছি। ওনার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি কোথা থেকে কীভাবে পেয়েছেন এই বিষয়টার ব্যাখ্যা চেয়েছি আমরা।’
গত ২৫ জুন কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে।
পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উৎপলের। একই দিন নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার চার দিন পর ২৯ জুন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিন রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় জিতু।
৫ দিনের রিমান্ড শেষে ৬ জুলাই আদালতে শিক্ষক উৎপলকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন জিতু।
এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনুমোদন ছাড়াই প্রাক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আব্দুস সামাদ নামে এক কিশোরকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ভাইসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক ৬ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক একেএম রওশন জাহান বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
আদালত পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে দুই ভাইসহ চার আসামিকে আদালতে তোলে সাত দিনের রিমান্ড চায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিচারক বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
গ্রেপ্তাররা হলেন উপজেলার দাদরা এলাকার ১৯ বছরের রবিন মিয়া, তার বড় ভাই ২৪ বছরের রোহান মিয়া, ওই উপজেলার হাটপাড়া গ্রামের ১৯ বছরের মুস্তাফিজুর রহমান নাঈম ও পুঙ্গুয়াই গ্রামের ২২ বছরের শাহীনুর ইসলাম।
জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এর আগে নিহত সামাদের বাবা শাহজাহান মিয়া সোমবার বিকেলে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
নিহত ১৪ বছরের সামাদ দাদরা গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার রবিন মিয়া নিহত রিকশাচালক সামাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এ সুবাদে প্রায়ই রবিনের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত সামাদ। এক সময় রবিনের ছোট বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সামাদের। বিষয়টি জানতে পারে রবিন। পরে তার বোনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেও ব্যর্থ হয়। পরে সামাদকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে রবিন ও তার ভাই রোহান।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে সামাদের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘোরাফেরা করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে যায় রবিন, রোহান ও নাঈম। সেখানে ঝোপের আড়ালে আগেই ওৎ পেতে ছিল শাহীনসহ আরও দুজন। সামাদকে সেখানে নেয়ার পর প্লাস্টিকের দড়ি ও জাল গলায় প্যাঁচিয়ে হত্যা করে স্কুলের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে রাখে তারা।’
ওসি আরও বলেন, ‘সামাদের মরদেহ পাওয়ার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযানে নামে জেলা ডিবি পুলিশের একাধিক টিম। জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের মামলার বরাতে বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৩টার দিকে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয় সামাদ। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাড়ি ফেরেনি। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন স্থানীয় বাজারসহ স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে সামাদের রিকশাটি পাওয়া গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
‘মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সামাদের স্বজনরা ওই স্কুলটিতে অনুসন্ধান চালালে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা ভাঙা দেখতে পায়। ঢাকনা সরানোর পর ভেতরে পাওয়া যায় সামাদের মরদেহ।’
ওসি আরও বলেন, ‘থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।’
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ সদরে লাইলী আক্তার নামে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন মামলার ১ নম্বর আসামি খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাইলী আক্তারকে। ঘটনাটি পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপি জানতে পেরে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে আমাদের টিম। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সহযোগী ৪ ও ৭ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও মামলার ১ নম্বর আসামি কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা সুচতুরভাবে আত্মগোপনে ছিলেন।’
গৌতম কুমার জানান, ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই ময়মনসিংহের টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও পিবিআই হেডকোয়ার্টারের এলআইসি টিমের সহযোগিতায় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। দুজনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে গত ২৮ জুন রাতে নিহতের স্বামী আব্দুর রশিদ আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওইদিন রাতেই ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মো. জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আছমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন খোকন মিয়া ওরফে কাজল, তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কনা, গোলাম মোস্তফার ছেলে কামাল মিয়া, বাবুল, কামাল মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার বৃষ্টি, বাবুলের স্ত্রী রোমান।
মামলার বরাতে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী খুকি আক্তারের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুই পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিল না।
গত ২৬ জুন পালিয়ে যান সিরাজুল ও খুকি। এতে ক্ষিপ্ত হয় খুকির পরিবারের লোকজন। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তারা ছেলের বাড়িতে এসে ছেলের মা লাইলীকে একা পেয়ে প্রথমে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পা তার দিয়ে বেঁধে লাইলীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা লাইলীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত ২৮ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাইলীর মৃত্যু হয়।
ফারুক হোসেন বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আজ হস্তান্তর করা হলে আজই অথবা আগামীকাল ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।’
এ ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য