বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় গত দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি। তার দলীয় সব পদের পাশাপাশি প্রাথমিক সদস্যপদও কেড়ে নেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিএনপি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়। এতে এখন থেকে দলের নেতাকর্মীদেরকে তার সঙ্গে কোনো ধরণের যোগাযোগ না রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তবে সাক্কু নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি ভোট করতে নিজেই দল থেকে নিজেই অব্যাহতি নিয়েছেন। দলের নেতা-কর্মীদের চাওয়ার কারণেই তিনি দলীয় সদস্যপদ ছেড়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু সাক্ষরিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কুকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।’
শৃঙ্খলাবিরোধী কী কাজ তিনি করেছেন, সেটি বিএনপির বিবৃতিতে জানানো হয়নি। তবে এটি যে সাক্কুর ভোটে দাঁড়ানো সংক্রান্ত, সেটি নিশ্চিত করেছেন দলটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা।
বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আছে বিএনপির। তবে কুমিল্লায় আগামী ১৫ জুন আওয়ামী লীগ বিএনপির লড়াই হতে যাচ্ছে ভিন্ন এক আমেজে।
গত জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লড়াই হয়েছিল পরোক্ষভাবে। দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র পরিচয়ে ভোটে লড়েন। বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাকে জেতাতে পারেননি। টানা তৃতীয় জয় পান আওয়ামী লীগের সেলিনা হায়াৎ আইভী।
কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে আরফানুল হক রিফাতকে। তিনি লড়বেন নৌকা নিয়ে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হতে যাচ্ছেন সাক্কু, যার মার্কা এখনও নির্দিষ্ট হয়নি।
বিএনপি ভোট বর্জন করায় দলটির মার্কা ধানের শীষ কেউ পাবেন না। ফলে সাক্কুকে এবার বেছে নিতে হবে অন্য মার্কা। এরই মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নিউজবাংলাকে সাক্কু বলেন, ‘আমি যে দলের রাজনীতি করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এই দলের একটা পোস্টে থাইক্যা নির্বাচন করছি, এহন আবার নির্বাচন করব। দল তো নির্বাচনে আইত না। আমার কিছু কাম বাহি আছে। এই কুমিল্লার মানুষ আমারে পছন্দ করে। আমি নির্বাচিত হইলে আমার যে আর কিছু কাজ বাকি আছে, হেইডি আমি শেষ করমু। আমার দলের নেতা-কর্মীরাও চাইতাছে আমি যেন নির্বাচনটা করি।’
সাক্কুর পদত্যাগপত্র
বিএনপি থেকে বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তি জারির দিনই দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি রাবেয়া চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান সাক্কু।
রাবেয়া চৌধুরী এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সাক্কুর পদত্যাগপত্রটির অনুলিপি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাক্কুর তিনে তিন
সাক্কুর মধ্যে বিশেষ কিছু যে আছে, তা এরই মধ্যে স্পষ্ট। তিনি ২০০৫ সালে যখন পৌরসভার মেয়র হিসেবে জেতেন, তখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় তার দল বিএনপি।
এই ভোটের চার বছরের মাথায় জাতীয় নির্বাচনে বিপর্যয় ঘটে যায় বিএনপির। কুমিল্লা সদর আসনে গো-হারা হেরে যান দলের প্রার্থী। ১৯৭৩ সালের পর প্রথমবারের মতো নৌকার প্রার্থী হিসেবে জয় পান আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন হয় কুমিল্লা। দল ক্ষমতায়, এই অবস্থায় ২০১২ সালে করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেবে- এমন আশা পূরণ হয়নি ক্ষমতাসীনদের জন্য। দলের ডাকসাইটে নেতা আফজল খান হেরে যান ৩৫ হাজার ভোটে।
পরের নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান আরও নড়বড়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচালের আন্দোলন ও পরের বছর সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে খালি হাতে ঘরে ফেরার পর জাতীয় রাজনীতিতে দাপট তৈরি হয় আওয়ামী লীগের। তবু সাক্কুর হাত থেকে কুমিল্লা দখলে নিতে ব্যর্থ হয় তারা।
২০১৭ সালে দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোটে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করে আফজল খানের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে। সীমা তার বাবার তুলনায় ভোট পেয়েছেন বেশি। ব্যবধান কমাতে পারেন অনেকটাই। সাক্কু জয় পান ১১ হাজারের কিছু বেশি ভোটে।
তবে এবার সাক্কুর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছেন বিএনপির সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানিতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হলেও সিন্ডিকেটের কারণে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী।
রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রুস্তম ফরাজী বলেন, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী স্পষ্ট করেই আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে জানালেন যে তারা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবেন। আমাদের মন্ত্রী ওখানে গেলেন। আলোচনা হলো। তখন মালয়েশিয়া বলল, আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানান। কিন্তু বারবার মালয়েশিয়া সফর করেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। সেটা শুধুই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কারণে।
‘কয়েকটি বিশেষ গোষ্ঠীকে আমরা যদি সুযোগ দিই তাহলে ব্যয় বেড়ে যাবে। এখন মালয়েশিয়ায় যাওয়া যায় ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। তখন লাগবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। দেশের নিম্নবিত্ত ও সাধারণ মানুষ কী করে এত টাকা সংগ্রহ করবে?’
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে রুস্তম ফরাজী বলেন, টালবাহানা না করে আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। সবাইকে ছেড়ে দিন, ওনাদের সঙ্গে আলোচনা করুন। মানুষ যাতে কর্মসংস্থানের জন্য অল্প টাকায় মালয়েশিয়ায় যেতে পারে সে ব্যবস্থা করুন।
সমস্যা আশু সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান রুস্তম ফরাজী। তিনি বলেন, ‘সাধারণ ঘরের সন্তানরা মালয়েশিয়ায় গেলে কর্মসংস্থান হবে, রেমিট্যান্স আসবে। দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।’
আরও পড়ুন:বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের বাসভবনে এসেছেন দুই নাতনি।
সূত্র জানায়, দাদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও তার স্বাস্থ্যগত খোঁজখবর নিতে আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাইফা রহমান রোববার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলাশনের বাসভবন ফিরোজায় আসেন। রাত সাড়ে ৭টার দিকেও তারা সেখানেই অবস্থান করছিলেন।
তবে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান দুই মেয়েকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। সম্প্রতি তারা দেশে আসেন।
খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মারা যান।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় বিএনপি খুশি হতে পারেনি বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। দেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ থেকে অভিনন্দন বার্তা এলেও বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো বার্তা না পাওয়ায় এই বিশ্বাস জন্মেছে মন্ত্রীর।
দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটিতে যান চলাচল শুরুর দিন রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাছান মাহমুদ। এ সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।
আগের দিন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও বিএনপির সাত নেতা তাতে যোগ দেননি। দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত এই সেতুটি নিয়ে সেদিন বিএনপির নেতারা পুরোপুরি চুপ।
এই সেতু নির্মাণের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ এই সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। আর জোড়াতালির সেতু নির্মাণ করলেও সেটি ভেঙে পড়ে যাবে।
সেতু নির্মাণকাজ শুরু করার আগে বিশ্বব্যাংক পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার যে অভিযোগ তুলেছিল, সেটিই এখনও বিএনপি নেতারা বলে যাচ্ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর জবাব দিয়ে বলেছেন, ২০১৭ সালে কানাডার আদালত এই অভিযোগকে বায়বীয় ও গালগপ্প বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এরপর আর কোনো কথা থাকতে পারে না। তবে বিএনপি নেতারা কানাডা আদালতের রায় নিয়ে কোনো কথা বলেন না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান অভিনন্দন জানালেও দুঃখজনক সত্য যে বিএনপি অভিনন্দন জানাতে পারেনি।
‘অর্থাৎ পদ্মা সেতু হওয়াতে দেশ ও বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত বাঙালি, বাংলাদেশিরা আনন্দিত হলেও বিএনপি নেতারা খুশি হতে পারেননি এবং অভিনন্দন জানাতে ব্যর্থ হয়ে তারা স্বীকার করে নিয়েছেন যে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
‘এরপরও এই পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী সবার জন্যই নির্মাণ করেছেন, যারা প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তারাও এই সেতু ব্যবহার করবেন।’
সাংবাদিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া করোনাকালীন বিশেষ সহায়তার অবশিষ্ট টাকা ঈদের আগেই বিতরণ করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, ‘এ বছর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে সাংবাদিকদের কল্যাণার্থে সাধারণ খাতে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল, তন্মধ্যে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ইতোমধ্যেই বিতরিত হয়েছে, বাকি অর্থ বিতরণে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
‘এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত করোনাকালীন বিশেষ সহায়তার ১০ কোটি টাকার তহবিলের প্রায় ৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে, আর ৪ কোটি টাকার সিংহভাগ আগামী কোরবানি ঈদের আগেই বিতরণ করার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন:সুন্দর, খোলামেলা ও স্বচ্ছ পরিবেশে বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায় অস্ট্রেলিয়া।
রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের কাছে এমন প্রত্যাশার কথা জানান দেশটির হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুআর।
অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুআর বলেন, ‘সিইসি ও আমার মধ্যে খুব সুন্দর আলোচনা হয়েছে। এটি খুব সময়োপযোগী আলোচনা হলো। নির্বাচনের কারিগরি ও অন্যান্য উপকরণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
কিছুদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ায় নির্বাচন হলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খুব সুন্দরভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অস্ট্রেলিয়ায় নেই, নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন অনেক সাদৃশ্য-বৈশাদৃশ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খুব সুন্দর ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার বলেন, ‘সুন্দর, খোলামেলা, স্বচ্ছ পরিবেশে নির্বাচন হতে হবে।’
এর আগে ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস সিইসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশে নির্বাচনে কে জিতবে না জিতবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে জানিয়েছিলেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তবে ভোট অংশগ্রহণমূলক হবে- এমন প্রত্যাশা ছিল তার।
আরও পড়ুন:বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আবারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শনিবার বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানিয়েছেন।
শায়রুল বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যারের কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ পরীক্ষায় পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। তিনি ডাক্তার রায়হান রাব্বানী সাহেবের তত্ত্বাবধানে আছেন।’
ছয় মাসের মধ্যে মির্জা ফখরুল এ নিয়ে দ্বিতীয়বার করোনা আক্রান্ত হলেন। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তিনি একবার করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন।
মির্জা ফখরুলের করোনা প্রতিরোধী তিনটি টিকা নেয়া আছে।
দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে বলেও জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির।
আগামীকাল রোববার বেলা ১১টায় জিয়াউর রহমানের কবরে নবগঠিত যুবদল কমিটির নেতাদের নিয়ে মির্জা ফখরুলের শ্রদ্ধা জানানোর কথা ছিল, সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে জনসভায় বক্তব্য দেয়ার সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশাল জনসভা মঞ্চে ওঠার আগে বক্তব্য দেন জাতীয় ও স্থানীয় নেতারা। মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, আজ ঈদের দিনের মতো খুশি লাগছে।
শনিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় বিভিন্ন স্তরের নেতারা বক্তব্য রাখেন। প্রত্যেক নেতার বক্তব্যে ছিল উচ্ছ্বসিত, উল্লসিত।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবাহান গোলাপ সভা পরিচালনা করেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল, মির্জা আজম, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল।
আব্দুর রহমান বলেন, এই বিজয় শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর বিজয় নয়, এটা পুরো বাংলাদেশের বিজয়। এই বিজয়ের মহানায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রী না হলে এ দেশে পদ্মা সেতু হতো না। আমরা নতুন করে আরেকটি বিজয় পেলাম।’
শাজাহান খান বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল পদ্মা সেতু। বিএনপি শুধু ফাঁকা বুলি দিয়ে গেছে, তারা কোনো কাজে আসেনি। শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব হয়েছে পদ্মা সেতুর মতো এত বড় কর্মযজ্ঞ শেষ করতে। আমাদের আজ বিজয় উল্লাসের দিন। দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জনসভার আয়োজক হিসেবে উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছাড়াও ছয় দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি।’
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম। আমাদের ঈদের দিনের মতো খুশি লাগছে। এই বিজয় পুরোটাই প্রধানমন্ত্রীকে উৎসর্গ করলাম। আমরা তার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’
মাদারীপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে উপস্থিত হন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ১টা ৮ মিনিট থেকে ১টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্য রাখেন।
আরও পড়ুন:পদ্মার ওপর সেতু হয়েছে কি না, তা দেখে যেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে সেতুর ফলক উন্মোচন শেষে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ীতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।
নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশ শেষে শনিবার দুপুর ১২টার একটু আগে পদ্মা সেতুর এক প্রান্তের ফলক উন্মোচন করেন সরকারপ্রধান। পরে গাড়িবহরে করে সেতু পাড়ি দিয়ে জাজিরা প্রান্তে যান তিনি। সেখানেও আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন।
দ্বিতীয় ফলক উন্মোচন শেষে মাদারীপুরে গিয়ে জনসভায় দেয়া বক্তব্যে সরকারপ্রধান পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয় সামনে আনেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে আবার কাজ শুরু করেছিলাম।
‘তখন তারা কী বলেছিল? বলেছিল আওয়ামী লীগ কখনও পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না। খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করি, আসুন; দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না।’
সরকারপ্রধানের বক্তব্যে উঠে আসে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টিও। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণী লোক বলেছিল নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয়। আজ নিজেদের টাকায় কীভাবে পদ্মা সেতু করতে পারলাম? আপনারা, এই বাংলাদেশের জনগণ, আপনারা আমাকে সমর্থন দিয়েছেন; পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের শক্তিই বড় শক্তি। এটা আমি বিশ্বাস করি।’
বক্তব্যে গত কয়েক দিনের মতো আবারও শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ টানেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে সরে যেতে হলো, তখন বিশ্বব্যাংক ও আমেরিকার সঙ্গে তদবির করে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল।
‘বলল দুর্নীতি হয়েছে। কে দুর্নীতি করেছে? যে সেতু আমার প্রাণের সেতু; এই সেতুর সঙ্গে আমার ও দক্ষিণ অঞ্চলের ভাগ্য জড়িত, সেই সেতু করতে গিয়ে কেন দুর্নীতি হবে? তারা টাকা দেয়নি, কিন্তু দুর্নীতি ও যড়যন্ত্রের কথা বলে টাকা বন্ধ করে দিয়েছে।’
সেতু নির্মাণে দৃঢ় সংকল্পের কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, টাকা বন্ধ হয়েছে কী হয়েছে? আমরা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। অনেকেই অনেকভাবে চেষ্টা করেছে; বলেছে এই সেতু আমরা করতেই পারব না। আমার একমাত্র শক্তি তো আপনারা। আমার একমাত্র শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। আপনাদের সহযোগিতায় আজ আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পরেছি।
‘আর এই অঞ্চলের মানুষের কষ্ট করতে হবে না। এই পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে কারও সন্তান হারাতে হবে না। বাবা, মাকে হারাতে হবে না। ভাই, বোনকে হারাতে হবে না। পদ্মা সেতুতে আপনারা নির্দ্বিধায় চলতে পারবেন। আর যারা বাধা দিয়েছে, তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে জবাব দিয়েছি যে, বাংলাদেশ পারে।’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনটি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি বিশেষ দিন। কিছু সময় আগে আপনাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে আসলাম, যা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করবে। বিশেষ করে ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।
‘বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিয়েছেন; নির্বাচিত হয়েছি। তারপর বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
‘আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করেছি।’
ওই সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় ৪ নেতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছিলেন। জাতির পিতা এ দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।
‘সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য