দেশের অনেক ভাটি অঞ্চল যখন পুড়ছে তীব্র দাবদাহে, তখন সিলেট ভাসছে জলে। সেখানে বিরাজ করছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি।
এর আগে গত এপ্রিলে বন্যায় তলিয়ে যায় সিলেটসহ আশপাশের হাওর এলাকার ফসল। এর মাসখানেক না যেতেই সিলেটে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা।
এবার বন্যা এসেছে আরও ভয়ঙ্কর রূপে। তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো সিলেট। সুনামগঞ্জেরও বেশিরভাগ এলাকা জলমগ্ন।
বারবার কেন সিলেটে বন্যা হচ্ছে? বন্যা কেন এত তীব্র আকার ধারণ করছে?
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটে প্রধান নদীগুলো বিশেষত সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, নগর ও এর আশপাশের এলাকার বিভিন্ন জলাশয় ভরাট, দখল হওয়া এবং সিলেটের উজানে মেঘালয়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেই এই বন্যা।
বুধবার দুপরে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুল মোমেনও এসব কারণকে দায়ী করেছেন। বলেছেন, ‘সিলেটে এই মৌসুমে সব সময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ও এমনটি দেখেছি। তখন পানি আটকে থাকত না, চলে যেত। কারণ আমাদের শহরে অনেক পুকুর ছিল।
‘প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর-দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারতেছে না। যেকোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।’
নদীর তলদেশ ভরাট
সিলেটের প্রধানতম নদী সুরমার দুই রূপ। বর্ষায় দুকোল উপচে ডুবিয়ে দেয় জনবসতি। আর গ্রীষ্মে পানি শুকিয়ে পরিণত হয় মরা গাঙে। জেগে উঠে চড়।
প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘের সুরমা দেশের দীর্ঘতম নদী। ভারতের বরাক নদী থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে। এই নদী বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে পানিহীন, মৃতপ্রায়।
পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে নদীর তলদেশ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা হয়ে পড়ে বালুভূমি। অপরদিকে অল্প বৃষ্টিতেই নদী উপচে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল।
ভরাট হয়ে পড়েছে এ নদীর উৎসমুখও। নদীর উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে জেগেছে ৩৫টি চর। দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যৌথ নদী কমিশনে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আটকে আছে উৎসমুখ খননও।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সুরমা নদীর উৎসমুখ খননে ২০১২ সালে সিলেট থেকে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়।
সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেয়ার কথা ওই সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। এরপর এ বিষয়ে আর উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
পরে ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। ওই সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে নদী উপচে পড়ে পানি। ভরাট হয়ে গেছে সিলেটের অপর প্রধানতম নদী কুশিয়ারাও। এই দুই নদী খনন ছাড়া বন্যা থেকে উত্তোরণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে আছে। এ ছাড়া নাগরিক বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য সুরমা নদীর তলদেশে শক্তভাবে বসে আছে। এ কারণে নদী পানি ধারণ করতে পারছে না।
‘যৌথ নদী হওয়ায় নদীর উৎসমুখ ভরাট করতে দুই দেশের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তাই আমরা সিলেট মহানগরের অংশে সুরমা নদী খননের দাবি অসংখ্য বার জানিয়েছি। সেই দাবি আমলে নিলে নদীর পানি উপচে বন্যা হতো না, সিলেট নগরের ছড়া ও খালের পানিও অনায়াসে নেমে যেতে পারত।’
সুরমাসহ এই এলাকার নদীগুলো খননের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুরমাসহ এই এলাকার বেশির ভাগ নদীই নাব্য হারিয়েছে। এগুলো খনন করা প্রয়োজন। নদী খননের জন্য গত বছর আমরা ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সম্ভাব্যতা যাছাই শেষে এটি এখন মন্ত্রণালয়ের বিবেচনাধীন।’
আগামী বর্ষার আগেই নদী খনন করা হবে উল্লেখ করে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটের নদীগুলো খননের ব্যাপারে আমাদের সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে।’
নগরের জলাশয় ভরাট ও দখল
সাগরদিঘির পাড়, লালদিঘির পাড়, রামেরদিঘির পাড়সহ সিলেট নগরীর অন্তত ২০/২৫টি এলাকার নাম এমন। দিঘির নামে এলাকার নাম ঠিকই আছে, কিন্তু নেই দিঘিগুলো। ভরাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। গত তিন দশকে ভরাট হয়ে গেছে নগরীর অর্ধশতাধিক দিঘি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসেবে, ১৫/২০ বছর আগেও সিলেট নগরে অর্ধশতাধিক বৃহৎ দিঘি ছিল। অথচ এখন ঠিকে আছে মাত্র ১০/১১টি। বাকিগুলো ভরাট হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হিসাবে, সিলেটে পুকুর-দিঘি মিলিয়ে তিন শতাধিক জলাশয় ছিল। এর দুই তৃতীয়াংশই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক জলাশয় ভরাট করে সরকারি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।
এ ছাড়া সিলেটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি প্রাকৃতিক খাল। যা ‘ছড়া’ নামে পরিচিত। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়াগুলো গিয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। এসব ছড়া দিয়েই বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হতো। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না।
এখন অনেক স্থানে এসব ছড়ার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। ছড়াগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩টি বড় ছড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরেই এসব ছড়ার দু’পাশ দখল করে রেখেছে স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা।
এ ছাড়া নগরের উপশহর এলাকার হাওর ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। বাঘা এলাকার হাওর ভরাট করে হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট।
জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরের পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখন বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর ঢল নামলে বন্যা হয়ে যায়।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রায় ৩০ কিলোমিটার ছড়া উদ্ধার করেছি। এতে নগরীতে আগেরমতো আর জলাবদ্ধতা হয় না। বেশি বৃষ্টিতে নগরীর কিছু এলাকায় পানি জমলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা নেমে যায়।
‘আমরা নগরের জলাশয়গুলো রক্ষায়ও বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আর কোনো জলাশয় ভরাট করতে দেয়া হচ্ছে না।’
উজানে অতিবৃষ্টি
সিলেটে গত কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। এর চেয়েও বেশি বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে। এবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে চেরাপুঞ্জিতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১ হাজার ২৩৮ মিলিমিটিার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া সিলেটেও অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। এই পানি নদী ধারণ করতে পারছে না।’
বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. এনামুল হক সিলেটে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে এসেও একই তথ্য জানান। বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে। এক দিনেই প্রায় ১ হাজার ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টি ঢল হয়ে সিলেটের দিকে নামছে, ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে।’
পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘ভারতের উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের সঙ্গে প্রচুর মাটি আর বালুও আসছে। কারণ উত্তর-পূর্ব ভারতে বিশেষ করে মেঘালয় বৃক্ষশূন্য করার কারণেই এমন ভূমিক্ষয় হচ্ছে।
‘এতে সুরমাসহ সিলেটের অন্য নদ-নদীর তলদেশ আরও ভরাট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত সুরমা, কুশিয়ারাসহ সিলেটের অন্য নদ-নদীর খনন করা প্রয়োজন। তবেই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।’
গত এপ্রিলে সুনামগঞ্জের হাওরের পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলের নদীগুলো খননে উদ্যোগ নেয়া হবে। ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে।’
আরও পড়ুন:রং আর তুলির আঁচড়ে বর্ণিল হয়েছে কিশোরগঞ্জের হাওর। অলওয়েদার সড়কের ১৪ কিলোমিটারজুড়ে আঁকা হয়েছে আলপনা।
এর মধ্য দিয়ে অলওয়েদার সড়কের পর আরেকটি নতুন রেকর্ড হলো এ জনপদে।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে হাওরের আরেক উপজেলা অষ্টগ্রামের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ‘আলপনায় বৈশাখ ১৪৩১’ নামের ১৪ কিলোমিটারব্যাপী আলপনা আঁকা হয়েছে।
আয়োজকদের দাবি, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ আলপনা। একে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান দেয়ার প্রয়াস চালানো হবে।
মিঠামইন জিরো পয়েন্টে রোববার সকাল ১০টার দিকে তুলির শেষ আঁচড় দিয়ে আলপনা আঁকার সমাপ্তি ঘোষণা করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
ওই সময় হাওরের উন্নয়নের রূপকার হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমান, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাওরে যেভাবে পর্যটকরা আসেন, গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে যখন ১৪ কিলোমিটার আলপনা স্থান করে নিতে পারবে, তখন আন্তর্জাতিকভাবে স্থানটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে। এই বিশ্বরেকর্ড গড়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নববর্ষ উদযাপন ১ বৈশাখকে তুলে ধরতে পারছি।
‘যেভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা আমাদের মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ডকুমেন্টে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, একই রকমভাবে আজ গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকেও নতুন একটি রেকর্ড করতে যাচ্ছি ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আলপনা অংকনের মধ্য দিয়ে। এ অবস্থায় বিদেশি পর্যটকরাও হাওরে আসার জন্য আগ্রহী হবে।’
সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘একসময় হাওর ছিল অবহেলিত। মানুষকে দাওয়াত দিয়েও হাওরে আনা যেত না। আর এখন সারা বাংলাদেশ থেকেই মানুষ হাওরের উন্নয়ন দেখতে আসে।’
আলপনা উদ্বোধন শেষে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে নিয়ে মোটরসাইকেলে পুরো সড়ক ঘুরে বেড়ান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যময় সব উৎসব উদযাপনে বাংলালিংক গভীরভাবে দায়বদ্ধ। দেশের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব পহেলা বৈশাখ এ সকল উৎসবের মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
‘বাংলালিংকের এই আয়োজন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও দেশীয় উৎসবকে তুলে ধরার একটি প্রয়াস।’
বার্জার ও এশিয়াটিকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ১৪ কিলোমিটারজুড়ে আলপনা আঁকার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলালিংক। ৬৫০ জন শিল্পী অংকনে অংশ নেন।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে কিশোরগঞ্জের হাওরের মিঠামইন উপজেলার অলওয়েদার সড়কের জিরো পয়েন্টে এই আলপনা অংকনকাজের উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এমপি আসাদুজ্জামান নূর।
আরও পড়ুন:রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালের পন্টুনে দুই লঞ্চের মধ্যে ধাক্কা লেগে রশি ছিঁড়ে পাঁচ যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় হওয়ায় মামলায় গ্রেপ্তার পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
পাঁচজনের মধ্যে তিনজন এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের মাস্টার ও ম্যানেজার। বাকি দুজন এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের মাস্টার।
ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফা চৌধুরী হিমেল শুক্রবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এ আদেশ দেন।
ওই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আনোয়ারুল কবির বাবুল নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শুক্রবার সদরঘাট নৌ পুলিশের সদস্যরা আসামিদের আদালতে হাজির করেন। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাত দিনের পুলিশি রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সদরঘাট নৌ থানার উপপরিদর্শক নকীব অয়জুল হক। আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়।
শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেক আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।
রিমান্ড পাওয়া আসামিরা হলেন এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার (চালক) আবদুর রউফ হাওলাদার (৫৪), দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার (চালক) সেলিম হাওলাদার (৫৪), ম্যানেজার ফারুক খান (৭০), এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার (চালক) মিজানুর রহমান (৪৮) ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার (চালক) মনিরুজ্জামান (২৮)।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার এজহারে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ২টা ৫৫ মিনিটে সদরঘাট টার্মিনালের ১১ নম্বর পল্টুনে এমভি তাসরিফ-৪ নোঙর করা অবস্থায় এমভি ফারহান-৬-এর চালক বেপরোয়া গতিতে লঞ্চ চালিয়ে ১১ নম্বর পন্টুনে ঢোকার সময় তাসরিফ লঞ্চকে ধাক্কা দেয়। এতে তাসরিফ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। সেটি দ্রুত গতিতে এসে পন্টুনে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের আঘাত করলে তারা নদীতে পড়ে যায়। এতে এক পরিবারের তিনজনসহ পাঁচ যাত্রীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ফারহান এবং তাসরিফ লঞ্চের দায়িত্ব অবহেলা আছে।
লঞ্চ ট্র্যাজেডিতে প্রাণ হারিয়েছেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার মাটিচোরা গ্রামের প্রয়াত আবদুল মালেকের ছেলে বিল্লাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৬), তাদের মেয়ে সাইমা (৩)। প্রাণ হারানো বাকি দুজন হলেন পটুয়াখালী সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে রিপন হাওলাদার (৩৮) এবং ঠাকুরগাঁও সদরের নিশ্চিতপুর এলাকার আব্দুল্লাহ কাফীর ছেলে রবিউল (১৯)।
এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে মৃত প্রত্যেকের নমিনির কাছে দাফন-কাফন বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালের পন্টুনে বৃহস্পতিবার লঞ্চ দুর্ঘটনায় দুই লঞ্চের মাস্টার ও ম্যানেজারসহ পাঁচজনকে আটক করে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
আটক পাঁচজন হলেন এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের দুই মাস্টার ও একজন ম্যানেজার এবং এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের দুই মাস্টার।
রাতে তাদের আটক করা হয়েছে বলে নিউজবাংলাকে জানান নৌ পুলিশের ঢাকা জোনের পুলিশ সুপার (এসপি) গৌতম কুমার বিশ্বাস।
এসপি গৌতম জানান, আটককৃতদের ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ দুর্ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিআইডব্লিউটিএ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আটক পাঁচজন হলেন এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. মিজানুর রহমান (৪৮) ও দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. মনিরুজ্জামান (২৪) এবং এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার মো. আবদুর রউফ হাওলাদার (৫৪), দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. সেলিম হাওলাদার (৫৪) ও ম্যানেজার মো. ফারুক খাঁন (৭৬)।
যেভাবে দুর্ঘটনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদুল ফিতরের দিন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কোতোয়ালি থানাধীন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি টিপু নামে দুটি লঞ্চ রশি দিয়ে পন্টুনে নোঙর করা ছিল। লঞ্চ দুটির মাঝখান দিয়ে ফারহান নামের আরেকটি লঞ্চ প্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় এমভি ফারহান-৬ লঞ্চটি এমভি টিপু-১৩কে সজোরে ধাক্কা দেয়। পরবর্তী সময়ে এমভি টিপু-১৩ ধাক্কা দেয় এমভি তাসরিফ-৪-কে। ওই সময় এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়।
তারা আরও জানান, ছিঁড়ে যাওয়া সেই দড়িটিই পন্টুনের আশপাশে থাকা পাঁচজনকে সজোরে আঘাত করে। সেখানে গুরুতর আহত অবস্থায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে কর্মরত প্রধান ডোম মোহাম্মদ মিলন শেখ জানান, পাঁচজনেরই মৃত্যু হয়েছে মাথায় আঘাত লেগে।
এদিকে লঞ্চের দড়ির আঘাতে পাঁচজনের প্রাণ যাওয়ার পর ধুয়েমুছে স্বাভাবিক করা হয়েছে সদরঘাটের পন্টুন। এ দুর্ঘটনায় সদরঘাট সাময়িক থমকে গেলেও দেড় ঘণ্টা পরই শুরু হয় স্বাভাবিক কার্যক্রম। দুর্ঘটনায় জড়িত এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের যাত্রীদের এমভি কর্ণফুলী-১২ লঞ্চে তুলে দেয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটি
এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির ক্রয় ও সংরক্ষণ পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম কমিটির আহ্বায়ক, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. আজগর আলী এবং বন্দর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেন কমিটির সদস্য।
কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে প্রাণ হারানো প্রত্যেক ব্যক্তির স্বজনের কাছে দাফন-কাফন বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় বৃহস্পতিবার লঞ্চ দুর্ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে দুটি লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিউজবাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঈদুল ফিতরের দিন বিকেলে সদরঘাট টার্মিনালের পন্টুনে বাঁধা দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে আরেকটি লঞ্চ প্রবেশের সময় একটি লঞ্চের রশি ছিঁড়ে পাঁচ যাত্রীর প্রাণহানি হয়।
এ ঘটনায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজন এক পরিবারের সদস্য।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তদন্ত কমিটি
লঞ্চ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (ক্রয় ও সংরক্ষণ) রফিকুল ইসলাম কমিটির আহ্বায়ক। এ ছাড়া সংস্থাটির নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. আজগর আলী এবং বন্দর শাখার যুগ্ম পরিচালক মো. কবীর হোসেনকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিবেদন পেশ করতে বলা হয়েছে।
ঢাকার সদরঘাট নদীবন্দরের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন জানান, এমভি ফারহান-৬ লঞ্চটি জোরে পার্কিং করতে যাওয়ায় এমভি তাসরিফ-৪-এর রশি ছিঁড়ে গেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ দুর্ঘটনার পর এমভি ফারহান-৬ ও এমভি টিপুর যাত্রা বাতিল করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
রুট পারমিট বাতিল
বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘লঞ্চের রশি ছিঁড়ে ঘটা এ দুর্ঘটনার পর এমভি ফারহান-৬ ও এমভি তাসরিফ-৪-এর রুট পারমিট তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল করা হয়েছে।’
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর শোক
সদরঘাটে লঞ্চের ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতে পন্টুনে থাকা পাঁচ যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
প্রতিমন্ত্রী এক শোকবার্তায় নিহত যাত্রীর আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি আহত যাত্রীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে লঞ্চ দুর্ঘটনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে কোতোয়ালি থানাধীন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে ঢাকা থেকে ভোলাগামী এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি টিপু নামের দুটি লঞ্চ রশি দিয়ে পন্টুনে বাঁধা ছিল। লঞ্চ দুটির মাঝখান দিয়ে এমভি ফারহান-৬ নামের আরেকটি লঞ্চ প্রবেশের চেষ্টা চালায়। ওই সময় এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে গেলে পাঁচজন যাত্রী লঞ্চে ওঠার সময় গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে বাবা-মা ও সন্তান ছিল।
তারা আরও জানান, সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ব্যক্তিদের মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেয়ারী শিপিং লাইনস লিমিটেডের মালিকানাধীন এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চটি ঢাকা-চরফ্যাশন-বতুয়া রুটে চলাচল করে।
গুরুতর আহত পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (মিটফোর্ড) জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমাদ্রি শেখর।
তিনি বলেন, ‘হাসপাতালে নিয়ে আসার পর তাদের শরীরে পালস না পাওয়া যাওয়ায় তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হওয়ায় পাঁচজনের শরীর থেকেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
‘মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে, তবে এ ঘটনায় এখন কোনো রোগী হাসপাতালে ভর্তি নেই। এ ঘটনায় পুলিশ পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
সদরঘাট নৌ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, নিহত পাঁচজনের মধ্যে এক নারী, তিন পুরুষ ও এক শিশু আছে। তাদের মরদেহ মিটফোর্ড হাসপাতালে রাখা আছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এদিকে ঘটনার পরপরই অভিযুক্ত এমভি ফারহান-৬-এর চালক পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় প্রাণ হারানো যাত্রীরা হলেন পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার মাটিচোরা গ্রামের প্রয়াত আবদুল মালেকের ছেলে বিল্লাল (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা (২৬), তাদের মেয়ে সাইমা (৩)। তারা তিনজন একই পরিবারের সদস্য। বাকি দুজন হলেন পটুয়াখালী সদরের জয়নাল আবেদিনের ছেলে রিপন হাওলাদার (৩৮) ও ঠাকুরগাঁও সদরের নিশ্চিতপুর এলাকার আব্দুল্লাহ কাফীর ছেলে রবিউল (১৯)।
এ ঘটনায় নৌ পুলিশ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নৌ পুলিশের ঢাকা জোনের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
আরও পড়ুন:রাজধানীর ডেমরার ধার্মিকপাড়ায় আগুনে লন্ডন এক্সপ্রেস-এর ১৪টি বাস পুড়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল জানিয়েছে, তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিনকে। কমিটির সদস্য সচিব ডিএডি মো. শামসুজ্জোহা এবং সদস্য ডেমরা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার ওসমান গণি।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ডেমরার ধার্মিকপাড়া এলাকার কোনাপাড়ায় একটি গ্যারেজে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও গ্যারেজে থাকা ১৪টি বাস পুড়ে যায়।
আগুনের খবর পেয়ে রাত ৮টা ৫৯ মিনিটে ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রথমে ঘটনাস্থলে যায়। পরে সিদ্দিকবাজার স্টেশন থেকে আরও চারটি ইউনিট তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ছয়টি ইউনিটের সম্মিলিত চেষ্টায় রাত ৯টা ৪৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইনস্পেক্টর মো. আনোয়ারুল ইসলাম ওইদিন মিডিয়াকে জানান, গ্যারেজে দাঁড়ানো কয়েকটি ভলভো বাসে আগুন লেগেছে। তবে বাসে কীভাবে আগুন লেগেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ফয়সালুর রহমান জানান, গ্যারেজে থাকা লন্ডন পরিবহনের ১২ থেকে ১৪টি বাসে আগুন লাগে।
আরও পড়ুন:সাভারের হেমায়েতপুরে তানজিব কোয়েল ফ্যাক্টরির সামনে একটি তেলের লরি উল্টে গিয়ে পাঁচটি গাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় দগ্ধ আটজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে ঘটনাস্থলে মারা যান একজন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনিস্টিটিউটে মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় নজরুল ইসলামের মৃত্যু হয়। দগ্ধ বাকি সাতজন একই ইনিস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তারা হলেন মিম (১০), আল-আমিন (৩৫), নীড়াঞ্জন (৪৫), মিলন মোল্লা (২২), সাকিব (২৪), ট্রাকের হেলপার হেলাল (৩০) ও তরমুজ ব্যবসায়ী সালাম (২৪)। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোড়পুল এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহাসড়কে আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি তেলবাহী লরি উল্টে গিয়ে পেছনে থাকা প্রাইভেটকার ও ট্রাকসহ চারটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে আগুন লেগে যায়। এতে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়, দগ্ধ হন আটজন।
প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ সোলায়মান জানান, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হেমায়েতপুর এলাকায় তেলের ট্যাংকার আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে পাশের তরমুজের ট্রাকসহ অন্য চারটি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এই ঘটনায় ড্রাইভার, হেলপার ও তরমুজ ব্যবসায়ীসহ আট জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসলে নজরুলকে চিকিৎসক মৃত বলে জানান।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘হেমায়েতপুরে দগ্ধ হয়ে আমাদের এখানে আটজন এসেছে। তাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম নামে একজন মারা যায়, বাকি সাতজনকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। নিমিষেই ফ্ল্যাট জুড়ে ছড়িয়ে পড়া আগুনের লেলিহান শিখায় দুই সন্তানসহ দগ্ধ হন মা-বাবা। ২৬ মার্চ ধামরাই পৌরসভার মোকামটোলা এলাকায় ভাড়া বাসার নিচতলায় নুরুল ইসলামের ফ্ল্যাটে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দগ্ধ চারজনকে দ্রুত রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন।
তারা হলেন- সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক স্বাস্থ্য পরিদর্শক নুরুল ইসলাম, তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম ও ছেলে সাভার মডেল কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সোহাগ হোসেন। বেঁচে আছেন কেবল পরিবারের একমাত্র মেয়ে ইশরাত জাহান সাথী।
সোমবার সুফিয়া বেগমের ভাই জাহিদুল ইসলাম তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানান। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদাও বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) গভীর রাতে অচেনা নম্বরের ফোনে ঘুম ভাঙে আমার। তখন ধামরাই পৌরসভার মোকামটোলা আমার বোনের ভাড়া বাসায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে দ্রুত রওনা হই। আসার আগেই আমার বোন সুফিয়া, তার স্বামী নুরুল ইসলাম, ভাগ্নে সোহাগ ও ভাগ্নি ইশরাত জাহান সাথীকে হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয়রা। সবাই বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল (রোববার) দুপুরে আমার বোন সুফিয়া মারা যায়। আমাদের গ্রাম ধামরাইয়ের বাইশাকান্দা ইউনিয়নে পারিবারিক কবরস্থানে বোনকে দাফন করে আজ লাশ নিতে এসেছি বোনজামাই আর ভাগ্নের।
‘আজ (সোমবার) শেষ রাতে দুলাভাই নুরুল ইসলাম মারা গেছেন। আর দুপুরের দিকে ভাগ্নে সোহাগের মৃত্যু হয়। অথচ গতকালও সে অনেক ভালো ছিলো। আমাদের সঙ্গে কথাও বলেছে।’
স্বজনহারা এই ব্যক্তি বলেন, ‘ভাগ্নি সাথীর অবস্থা কিছুটা ভালো আছে। তবে পুরো পরিবারটা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই আমরা। জানতে চাই- কিভাবে কার অবহেলায় এই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ‘মারা যাওয়া নুরুল ইসলাম শিমুলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ছিলেন। তিনি ২৪ ফেব্রুয়ারি অবসর গ্রহণের পর থেকে তিনি ধামরাইয়ে বসবাস করতেন। আর আজ পরিবারটির তিনজন সদস্যই নেই।’
মন্তব্য