পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের চেষ্টা ছিল বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক যুগ ধরে আলোচনায় থাকা সেতুটি যখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়, সে সময় সরকারপ্রধান তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায় প্রসঙ্গটি তোলেন।
তার অভিযোগ, ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে হলে প্রতিহিংসা থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়। মাহফুজ আনামও সক্রিয়ভাবে এতে যোগ দেন। তারা সশরীরে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সে সময়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে ইমেইল করেন। আর হিলারি বিশ্বব্যাংকের সে সময়ের প্রেসিডেন্টকে দিয়ে সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে ছয় বছরের প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। সেই দিবসের স্মরণে বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সেখানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।
আগামী মাসে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে সেতু পারাপারে কোন যানবাহনের টোল কত হবে, সেটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার শুরু থেকেই তুমুল আলোচনা হচ্ছে। প্রথমে সেতুর অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ যোগাযোগ করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। পাশাপাশি আইডিবি, এডিবি ও জাইকারও কিছু সহযোগিতা থাকার কথা ছিল।
তবে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক নানা বক্তব্য দেয়ার পর ২০১৩ সালে এই সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।
শুরু থেকেই সরকার এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আসছিল। দাতারা সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর অভিযোগ করা হয়, সংস্থাটির এই সিদ্ধান্তের পেছনে ড. ইউনূসের হাত আছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদ ছাড়তে বলা হয় তার বয়স ৬০ অতিক্রম করায়। তবে তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ফোন করে ইউনূসের পক্ষে সুপারিশ করেন বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
সরকারের অভিযোগ, সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে তদবির করিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করানো হয়। এবার সরকারপ্রধান জানালেন, সেই প্রচেষ্টায় মাহফুজ আনামেরও ভূমিকা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।
‘ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারবে না ১০ বছর। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। বয়সটা কমাবে কীভাবে। মামলায় সে হেরে যায়।
‘কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে মাহফুজ আনামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না’।
সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে তার সঙ্গে কথোপকথনের সময়ও তিনি এ বিষয়ে কিছু শোনেননি বা তাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি বলে উল্লেখ করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক।
বিশ্বব্যাংক সে সময় বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি করেছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তা করতে রাজি হয়নি।
বিশ্বব্যাংক এ ঘটনায় একটি মামলা করে কানাডার একটি আদালতে। সেই মামলা বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়েছে।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আদেশ কানাডা থেকে আসার পর আর কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগই পায়নি।
রায়টি দেয়া হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তবে গণমাধ্যমে রায় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল এক মাস। আর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হয়।
রায়ে অন্টারিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ইয়ান নরডেইমার বলেন, বিশ্বব্যাংক যেসব তথ্য দিয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তে একেবারে অখুশি নন। তিনি বলেন, ‘একদিকে এটি শাপেবর হয়েছে। বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে, সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি।’
‘তাদের চোবানো উচিত’
আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে করা পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে কেউ উঠতে যাবেন না। উঠলে সেটি ভেঙে পড়বে- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এমন একটি বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।
‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’
পদ্মা রেল প্রকল্প ও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিরোধের জবাব
পদ্মা রেলসেতু প্রকল্প এবং রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে না বলে একজন অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণ নিয়েও কথা বলে তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি সেই অর্থনীতিবিদের নাম উল্লেখ করেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে যে রেললাইন হচ্ছে, ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। সেই ঋণ শোধ হবে কী করে- দক্ষিণবঙ্গের কোনো মানুষ তো রেলে চলবে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন। এই রেল ভায়াবল হবে না।
‘সেতুর কাজ হয়ে গেছে। সেতু নিয়ে কথা বলে আর পারছে না। এখন রেলের কাজ চলছে। রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলছে।
‘আমার মনে হয় সকলে ওনাকে চিনে রাখা উচিত। রেলগাড়ি যখন চালু হবে, ওনাকে রেলে চড়ানো উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানীগুণী এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলে কীভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।
‘মেগা প্রজেক্টগুলো করে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা... টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে, বিদ্যুৎ সরবরাহ করি, সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন চলে গেছে, স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। সেটা নিয়েও তো, এত টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কী হবে। এ প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে। কেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গালিটালি দিই না, ইচ্ছাও নাই, দেয়ার রুচিও নাই। কিন্তু একটু না বলেও পারি না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর নির্যাতন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, পোড়ামাটি নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, সেই পাকিস্তানিদের পদলেহনকারী সারমেয়র দল এখনও বাংলাদেশে জীবিত, এটা হচ্ছে দুঃখজনক।’
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না বলে একজন অর্থনীতিবিদ মূল্যায়ন করেছেন জানিয়ে তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ একটি হিসাব দেখালেন, তিনি কী জেনে বলেছেন, না জেনে বলেছেন? আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলব না, কারণ তিনি অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন।
‘কিন্তু বিদ্যুৎ পেয়ে একটি জাতির যে কত উন্নতি হতে পারে, সেটা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকও দেখে, কিন্তু তারা দেখে না চোখে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সব থেকে পরিবেশবান্ধব। তেলভিত্তিক, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যয়বহুল। যদি কোনোদিন গ্যাস শেষ হয়, তাহলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই বিদ্যুৎ দেবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ একটু বেশি হলেও যখন এর ব্যবহার হবে, তখন অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখবে।’
দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ
বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৮১ সালের ১৭ মে তার দেশে ফেরার দিনটি কেমন ছিল, সেটি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমি আমার নিকটাত্মীয়দের কাউকে পাইনি। কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার একমাত্র শক্তি এবং আমি এই শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’
আরও পড়ুন:তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। এ ধরনের উদ্যোগ সাংবাদিকদের পেশাগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। সোমবার (৮ই সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে গ্রুপ বিমা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসির সঙ্গে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির প্রায় দুই হাজার সদস্যের মধ্যে বিমা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে শুধু সরকারি উদ্যোগই যথেষ্ট নয়, বেসরকারি খাতকেও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বিমা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সাংবাদিকদের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের কল্যাণে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি তিন মাস পরপর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিককে কল্যাণ অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। উপদেষ্টা জানান, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কর্মপরিধি বাড়ানো হয়েছে।
মাহফুজ আলম বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষা-সংক্রান্ত অধ্যাদেশের খসড়া লেজিসলেটিভ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নেও সরকার কাজ করছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানে যাঁরা ত্যাগস্বীকার করেছেন, তাঁদের লড়াইয়ের গল্প জনগণের নিকট তুলে ধরতে হবে। তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের অবদান গণমাধ্যমে প্রচার করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ, ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজিম উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
ইলিশ মাছ রপ্তানি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
আজ সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তাণি ২ শাখার উপসচিব এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়,প্রতিবছরের ন্যায় চলতি ২০২৫ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১,২০০ (এক হাজার দুইশত) মে.টন ইলিশ ভারতে শর্তসাপেক্ষে রপ্তানির জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সে আলোকে আগ্রহী রপ্তানিকারকগণের নিকট হতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ অফিস চলাকালীন সময়ের মধ্যে (১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকাল ৫টা পর্যন্ত) হার্ড কপিতে আবেদন আহবান করা যাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ইআরসি, আয়কর সার্টিফিকেট, ভ্যাট সার্টিফিকেট, বিক্রয় চুক্তিপত্র, মৎস্য অধিদপ্তরের লাইসেন্সসহ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি দাখিল করতে হবে।
প্রতি কেজি ইলিশের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ১২.৫ মার্কিন ডলার সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে যারা আহবান ব্যতিরেকেই আবেদন করেছেন, তাদেরকেও নতুনভাবে আবেদন দাখিল করতে হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের গত এক বছরের কর্মকাণ্ডে এসেছে বহুমুখী সাফল্য। সংস্কার ও বিশেষ কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন, নৌ যোগাযোগ সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি রাজস্ব আয়েও হয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য অগ্রগতি। আজ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে নৌপরিবহন খাতে গত এক বছরের উল্লেখযোগ্য অর্জন, কার্যক্রম ও উন্নয়ন সম্পর্কে এসব তথ্য তুলে ধরেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী উদ্যোগের ফলে নৌপরিবহন খাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার মোট রাজস্ব আয় ৬৫৭৫.৯৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৯.৪০৮% বেশি। একই সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ২২২৩.৩৩ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২১.৮১% বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয় করেছে ৫২২৭.৫৫ কোটি টাকা, তন্মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে ১৭৬১.৯৭ কোটি টাকা । চট্টগ্রাম বন্দর গত অর্থ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ (৩২,৯৬,০৬৭টি) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৪% এবং কার্গো হ্যান্ডলিং ৬.০৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ২০ বছর যাবৎ পড়ে থাকা ৩৯৭টি গাড়ী অপসারণ করা হয়েছে এবং নিলামযোগ্য ১০ হাজার TEUs কন্টেইনার অপসারণের কার্যক্রম চলমান আছে। চট্টগ্রাম ড্রাইডক কর্তৃক নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল অপারেশনে যাওয়ার পর পূর্বের তুলনায় দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সময় এবং ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে আন্তর্জাতিক রুটে ৫টি জাহাজ পরিচালনা করে ৩০০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে যা বিএসসি’র ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন কর্তৃক শেয়ারহোল্ডারদের ২৫% লভ্যাংশ প্রদান করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থার সংস্কারমূলক কার্যক্রমে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই প্রথম বারের মতো জাইকার কারিগরি সহায়তায় ন্যাশনাল পোর্টস স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করা হচ্ছে। ২৮ আগস্ট, ২০২৫ তারিখ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অকার্যকর ৩টি স্থলবন্দর বন্ধ এবং ১টি স্থলবন্দর এর অপারেশনাল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ৩৬৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৯.৮০ একর জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে যার মূল্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা। এছাড়াও, কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী হতে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৬৩ একর জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নৌরুটে স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহনের জন্য কিলোমিটার প্রতি নৌরুটের ভাড়া সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সন্দ্বীপ ও হাতিয়াকে নতুন নদীবন্দর হিসেবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ১৫টি স্থাপনা এবং নৌযানের নতুন নামকরণ করা হয়েছে। দেশের বিচ্ছিন্ন জনপদ যেমন কুতুবদিয়া, ভাসানচর ইত্যাদি এলাকার সাথে নৌ যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। চর কুকরিমুকরি, কচ্ছপিয়া, ঢালচর, কলাতলী রুটে নৌ চলাচল চালু করা হয়েছে।
সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে উল্লেখ করে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে দুটি আধুনিক বাল্ক ক্যারিয়ার যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও তিনটি জাহাজ ক্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল, নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রায় ২৪৩৮১.৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে একনেক কর্তৃক মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য ৬৩৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
দেশীয় অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চালু করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দরসহ অন্যান্য স্থলবন্দর আধুনিকায়নের ফলে বন্দরের সক্ষমতা, নিরাপত্তা ও কার্যক্রমে গুণগত উন্নয়ন হয়েছে। মোংলায় এবং চট্টগ্রামের মাঝের চরে ফ্রি ইকোনমিক জোন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পায়রা বন্দরের অবকাঠামো ও টার্মিনাল নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে; ২০২৬ সালের জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ অপারেশন চালু হবে।
মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিআইডব্লিউটিএ’র মিঠামইন প্রকল্প, বিআইডব্লিউটিএ’র ৩৫ ড্রেজার প্রকল্প, মেরিন একাডেমির সিমুলেটর প্রকল্প, পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিং প্রকল্পসমূহ থেকে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ যাচাই-বাছাইপূর্বক ২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হয়েছে।
গত ৫৪ বছরে প্রথমবারের মতো নৌযানের ডাটাবেইজ তৈরির লক্ষ্যে নৌশুমারির জন্য বিবিএস এর সাথে এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০২৪ সালের UNCTAD রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাহাজ মালিকদের তালিকায় ৩৫তম স্থান অর্জন করে।
দেশের নৌকেন্দ্রীক পর্যটন সুবিধা বিকশিত করার লক্ষ্যে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পর্যটনের উদ্দেশ্যে ১২৫ বছরের পুরাতন স্টিমার পিএস মাহসুদ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৩৫ জলযান প্রকল্পের আওতায় সংগৃহীতব্য সী-ট্রাক/ক্রুজ শীপ চালু এবং শিমুলিয়াতে একটি গ্রীণ পোর্ট ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সেবা সম্প্রসারণে, বাঁশবাড়িয়া (সীতাকুন্ড)-সন্দ্বীপ (গুপ্তছড়া) রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছে, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌরুটে সী-ট্রাক সার্ভিস চালু করা হয়েছে এবং বিভিন্ন নদীপথে নাব্যতা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে গতি সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি, পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে বিশ্বমানের শিপিং কোম্পানি মেডিটেরিনিয়ান শিপিং কোম্পানি (MSC) বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা শিগগিরই দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) হিসেবে যুক্ত হবে।
বিশেষ চুক্তি ও সহযোগিতা ক্ষেত্রে গত এক বছরে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মেরিটাইম শিক্ষা ও সার্টিফিকেটের পারস্পরিক স্বীকৃতি চুক্তি এবং ফিলিপাইনের মেরিটাইম একাডেমির সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এছাড়া চীনের পরিবহন মন্ত্রণালয় মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে, এ সময় চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থায় হাজারেরও অধিক নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার নাবিকের সাইন অন সম্পন্ন হয়েছে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে মেরিন একাডেমি ও মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে জনবল নিয়োগ, অত্যাধুনিক সিমুলেটর সংগ্রহ ও পাঠ্যক্রম আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিমুলিয়ায় একটি ড্রেজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। ন্যাশনাল মেরিটাইম ইন্সটিটিউটি, মাদারীপুরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো নাবিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আফ্রিকান শিক্ষার্থীদের জন্য মেরিন একাডেমিগুলোতে স্কলারশিপ চালু করায় বাংলাদেশের সামুদ্রিক শিক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরও প্রসারিত হয়েছে।
বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ মেয়াদে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) কাউন্সিলের সি-ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনেও (২০২৬-২৭ মেয়াদ) সি-ক্যাটাগরিতে সদস্যপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে এবং আইএমওভুক্ত অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন চেয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
নৌপরিবহন খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার ধারাবাহিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং বন্দর ও শিপিং খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি—এসব কার্যক্রম আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে আশাবাদ ব্যক্ত করেদন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বনের গাছ চুরি ও অন্যান্য সম্পদের অবৈধ পাচার প্রতিরোধে বনকে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে স্যাটেলাইট ইমেজ, ড্রোন প্রযুক্তি ও আধুনিক তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে দেশের বন পর্যবেক্ষণের কার্যক্রম অচিরেই শুরু করা হবে।
আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনের অনলাইন মনিটরিং বিষয়ক সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন এসব কথা বলেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
তিনি জানান, রেমা-কালেঙ্গা, সাতছড়ি ও লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনের ২০১৫, ২০২০ ও ২০২৫ সালের স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে পরিবর্তন শনাক্তকরণের জন্য বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) এর সহায়তা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে হাই রেজুলেশন ইমেজ এবং সার্ভে অব বাংলাদেশ থেকে ড্রোন সহায়তা গ্রহণ করা হবে।
সভায় জানানো হয়, অচিরেই বন অধিদপ্তর রেমা-কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনের মাতৃগাছ জরিপ ও নম্বর প্রদানের কাজ শুরু করবে। সুফল প্রকল্পে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারীরা এ কাজে নিয়োজিত থাকবে। উপদেষ্টা জানান, দেশের সব বনাঞ্চলে মাতৃগাছ শনাক্তকরণ কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে এবং এজন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেওয়া হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় দায়িত্বে নিয়োজিত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, দেশের বনকে প্রযুক্তি নির্ভর নজরদারির আওতায় আনতে বন অধিদপ্তরের সমস্যা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সমাধান নেওয়া হবে। এ কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তা এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়োজিত করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, যুগ্মসচিব (বন) শামিমা বেগম, প্রধান বন সংরক্ষক মো: আমীর হোসাইন চৌধুরী, উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো: রকিবুল হাসান মুকুলসহ মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তর ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
গণ-অভ্যুত্থানকালে দেশব্যাপী চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাসমূহের মধ্যে কিছু মামলায় সম্প্রতি চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশীট দাখিলকৃত মামলাসমূহের (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ব্যতীত) প্রসিকিউশনের কার্যক্রম সুষ্ঠু ও গতিশীল করার লক্ষ্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যেগে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আইন ও বিচার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন:
(১) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নিম্নে নয়) (২) বাংলাদেশ পুলিশের একজন প্রতিনিধি (ডিআইজি পদমর্যাদার নিম্নে নয়) (৩) জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কর্তৃক মনোনীত শহীদ পরিবারের একজন সদস্য (৪) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত একজন মানবাধিকার কর্মী, (৫) জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন কর্তৃক মনোনীত একজন আইনজীবী এবং (৬) আইন ও বিচার বিভাগের জিপি-পিপি অধিশাখার উপ-সলিসিটর (কমিটির সদস্য-সচিব)।
কমিটির কর্মপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে: (ক) কমিটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে দেশব্যাপী চলমান ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংগ্রহ করবে (মামলার বর্তমান পর্যায় উল্লেখসহ)। (খ) এরুপ মামলার মধ্যে যেসব মামলার চার্জশীট দাখিল হয়েছে, সেসব মামলায় (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা ব্যতীত) প্রসিকিউশনের কার্যক্রম পরিচালনায় বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত করবে (যদি থাকে) এবং উক্ত সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ সরকারের নিকট প্রেরণ করবে। (গ) কমিটি এর কার্যক্রমের অগ্রগতি ভুক্তভোগী পরিবার ও দেশবাসীকে সময়ে সময়ে অবহিত করবে এবং (ঘ) মামলার ভিকটিম ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশ সরকারের নিকট প্রেরণ করবে।
এটি লক্ষ্যনীয় যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত হত্যার মামলার বিচার সুষ্ঠুভাবে চলমান রয়েছে। সরকার আশা করছে, নবগঠিত উপরোক্ত কমিটির কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রচলিত ফৌজদারি আদালতসমূহেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত হত্যাসহ অপরাপর গুরুতর অপরাধের বিচার কার্যক্রম সুষ্ঠু ও গতিশীল হবে।
সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশীদ বলেছেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা সত্যের মুখে দাঁড়িয়ে লড়তে পারে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত উশৃঙ্খলতা নিরসনে মাঠে নেমে পরলে এদেশের ছেলেমেয়েরা শুরু হতে লাগলো পরিবর্তনের হাওয়া। তিনি বলেন, আমাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ কেনো আমরা বড়রা এই উশৃঙ্খলতা নিরসন করতে পারিনি, যা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ছোট ছোট বাচ্চারা তা আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে। ওই গণঅভ্যুত্থানে ৭০% মেয়ে অংশ নিয়েছিল, তারা সাইবার বুলিং এর শিকার হচ্ছে। সাইবার স্পেসকে নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ করতে তরুণদের সহযোগিতা দরকার।
তিনি গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে ক্যাপিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন যথা সময়ে হবে। নির্বাচনের পথে যদি অতিরিক্ত সহিংসতা হয়, তাহলে নির্বাচন ভঙ্গুর হয়ে যাবে। ফলে সেটা যেনো না হয় সে কারণে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে জনগনকেও সরকারের পাশে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনী এলাকায় যেনো সহিংসতা না হয় সে খেয়াল রাখা আপনাদের দায়িত্ব, রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব। সবাই বসে আছি কবে নির্বাচন হবে, সবাই মিলে যদি আমরা সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে নির্বাচন সহজ হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার দেশ গঠনে কাজ করে যাচ্ছে। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের কাছে আমাদের দায়িত্ব অর্পণ করে যাবো, যাতে তারা সুনামের সঙ্গে মাথা উঁচু করে এদেশের মর্যদা রক্ষা করে কাজ করতে পারে।
বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লি. নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. মহসিন মিয়ার সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাইমা ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান, সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান, সোনারগাঁ ক্যাপিটাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি আক্তার হোসেন, পরিচালক খায়রুল ইসলাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরিক্ষায় অংশ নেওয়া ১৯৯ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
নির্বাচনের চলাকালীন ও পরে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার গুরুত্ব উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এ দায়িত্ব পালনে কোনো গণমাধ্যমকে বাধাঁ দেওয়া হবে না।
রোববার রাজধানীর তথ্য ভবনে ‘নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক মতবিনিময়সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভায় অংশ নেন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিকরা। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অতীতের দুঃসহ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তারা ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
বিশেষ করে নির্বাচনকালে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তারা।
এ সময় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে গণমাধ্যম আস্থা হারিয়েছে। সেই আস্থা পুনরুদ্ধারে নির্বাচনকালীন সময়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে।
জনগণ ভোট দিতে গিয়ে সহিংসতার শিকার হবে না, সরকার সেই চিন্তা প্রতিষ্ঠা করবে। গণমাধ্যমও যেন এ চিন্তার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখে।’
তিনি আরও আহ্বান জানান, যদি কোনো সহিংসতা ঘটে, তবে গণমাধ্যম যেন তার মূল কারণ ও দায়দায়িত্ব খুঁজে বের করে প্রকাশ করে।
মন্তব্য