যান চলাচলে খুলে দেয়ার অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু পারাপারে টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ফেরি পারাপারের বিদ্যমান হারের দেড় গুণ হিসাবে।
পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার এক মাসেরও বেশি সময় আগে ঘোষণা করা এই টোল হার নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে।
সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলের জন্য ১০০ টাকা আর বড় বাসের জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা দিতে হবে- সেতু বিভাগ এই সিদ্ধান্ত জানানোর পর এই হার বেশি কি না, সেই আলোচনা এখন সামাজিক মাধ্যমে।
পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে আট বছর আগে জারি করা টোল নীতিমালা অনুযায়ী। এই নীতিমালায় থাকা ফেরির মাশুলের তুলনায় দেড় গুণ টোল ঠিক করা হয়েছে।
এই নীতিমালায় সেতুর দৈর্ঘ্যের বিবেচনার কথাও বলা হয়েছে। সেই বিবেচনাতে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে তুলনা করা যায়।
পদ্মা সেতুর সঙ্গে প্রায় দুই যুগে আগে খুলে দেয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল হারের তুলনা করলে দেখা যায়, উত্তরের পথের সেতুটির তুলনায় দক্ষিণের পথের সেতুর টোল হার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ।
তবে দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয় আর দৈর্ঘ্যেও পার্থক্য আছে। ১৯৯৮ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া বঙ্গবন্ধু সেতুর মূল দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। সঙ্গে মূল সেতুতে উঠতে দুই পাশে ভায়াডাক্ট আছে ১২৮ মিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটারের কম।
তবে পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য আরও বেশি। এখানে মূল সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার। সেই হিসাবে সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৯ দশমিক ২৯৮ কিলোমিটার।
দুই সেতুর নির্মাণ ব্যয়েও আছে পার্থক্য। কংক্রিটের বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয় ৯৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। ডলারের সঙ্গে টাকার সে সময়ের বিনিময় হারে এই ব্যয় ছিল ৪ হাজার কোটি টাকার আশপাশে। তবে বর্তমান বিনিময় হারের সঙ্গে তুলনা করলে এটি দাঁড়ায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অন্যদিকে, চার লেনের পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে স্টিলের ওপরে, যাতে সড়কসেতুর নিচ দিয়ে রেল চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর নির্মাণে সবশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
যে ১২ ধরনের গাড়ির জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে, তা হিসাব করে দেখা যায়, ছয় ধরনের গাড়িতে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটার হিসাবে টোল বেশি। বাকি ছয় ধরনের গাড়িতে কম।
বাইকে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি টোল বঙ্গবন্ধুর তুলনায় ৬০ পয়সা বেশি। পিকআপ ভ্যানে পদ্মায় কিলোমিটারে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় টোল বেশি ৭ টাকা ৩১ পয়সা।
মাঝারি বাসে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল বেশি ১২ টাকা ১৭ পয়সা আর বড় বাসে বেশি ৫৫ টাকা ১৯ পয়সা।
ট্রাকের ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের গাড়ির মধ্যে পদ্মায় খরচ কম তিন আকারের গাড়িতে। অন্যদিকে বেশি ধরা হয়েছে দুই আকারের গাড়িতে।
বড় আকারের থ্রি এক্সেলের ট্রাকে যমুনার তুলনায় পদ্মা পাড়ি দিতে কিলোমিটারে বেশি খরচ হবে ১৮৫ টাকা ৬৮ পয়সা। ফোর এক্সেল ট্রাকে বেশি ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা।
অন্যদিকে প্রাইভেট কারে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল কম ৩০ টাকা ৯৫ পয়সা।
মাইক্রোবাসে বঙ্গবন্ধুর তুলনায় পদ্মায় কিলোমিটারে টোল কম ১২ টাকা ৩৭ পয়সা। ছোট বাসে এই ব্যয় কম হবে কিলোমিটারে ১ টাকা ৬২ পয়সা।
পাঁচ টনের ট্রাকে পদ্মা পাড়ি দিতে কিলোমিটারে খরচ কম পড়বে ৩০ টাকা ৮৫ পয়সা। ৮ টনের ট্রাকে এই খরচ ২৭ টাকা ৭৯ পয়সা আর ১১ টনের ট্রাকে কম ২৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
টোল নীতিমালায় কী বলা আছে
সড়ক ও সেতুর টোল নির্ধারণে ২০১৪ সালে জাতীয় টোল নীতিমালা করা হয়।
এই নীতিমালা অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য হিসাবে টোল নির্ধারণ হবে। আর যে পথে সেতু হয়েছে, সেখানে যদি আগে থেকে ফেরি থাকে, তাহলে ফেরির মাশুলের দেড় গুণ হবে সেতুর টোল।
পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে ঠিক তেমনটাই হয়েছে। তবে খুচরা টাকার ঝামেলা এড়াতে কিছুটা কম-বেশি হয়েছে।
যেমন মোটরসাইকেলে ফেরি পারাপারে ৭০ টাকা লাগে। দেড় গুণ হিসাবে সেতুর টোল হয় ১০৫ টাকা। কিন্তু পাঁচ টাকা খুচরা নিয়ে ঝামেলা এড়াতে তা করা হয়েছে ১০০ টাকা।
বড় বাসের ক্ষেত্রে ফেরির মাশুলের দেড় গুণ হিসাবে হয় ২ হাজার ৩৭৫ টাকা। কিন্তু ২৫ টাকা খুচরার ঝামেলা এড়াতে তা করা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
দেশের দুই প্রধান সেতুর টোলের হিসাব-নিকাশ
সেতু বিভাগের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে একটি মোটরসাইকেলকে দিতে হবে ১০০ টাকা। মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ফেরি পার হতে এই খরচ ৭০ টাকা।
পদ্মার তুলনায় দৈর্ঘ্যে অর্ধেক বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে মোটরসাইকেলের খরচ ৫০ টাকা।
দৈর্ঘ্যের হিসাবে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল দাঁড়াচ্ছে প্রতি কিলোমিটারে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার পরিমাণ ১০ টাকা ১৫ পয়সা।
সেই হিসাবে পদ্মা পাড়ি দিতে যমুনার তুলনায় মোটরসাইকেলকে প্রতি কিলোমিটারে বেশি দিতে হবে ৬০ পয়সা।
পদ্মা পাড়ি দিতে প্রাইভেট কার ও সাধারণ জিপে টোল ঠিক করা হয়েছে ৭৫০ টাকা। ফেরিতে বর্তমানে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা।
যমুনা পাড়ি দিতে পদ্মার তুলনায় অর্ধেক দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুর ক্ষেত্রে এই টোলের পরিমাণ ৫৫০ টাকা।
সে ক্ষেত্রে প্রাইভেট কারে যমুনা পাড়ি দিতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ১১১ টাকা ৬১ পয়সা। আর পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ ৮০ টাকা ৬৬ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে টোল প্রতি কিলোমিটারে কম ৩০ টাকা ৯৫ পয়সা।
পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপ পারাপারে ফেরিতে দিতে হচ্ছে ৮০০ টাকা। পদ্মা সেতু পার হতে সেই টোলের পরিমাণ ১ হাজার ২০০ টাকা।
পদ্মার তুলনায় অর্ধেক বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই টোল ৬০০ টাকা।
সেই হিসাবে এই ধরনের গাড়িতে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি টোল খরচ ১২৯ টাকা ৬ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তা ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা।
অর্থাৎ পিকআপ ও বিলাসবহুল জিপে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ৭ টাকা ৩১ পয়সা।
মাওয়া প্রান্তে মাইক্রোবাস পারাপারে ফেরিতে লাগে ৮৬০ টাকা। সেটি বাড়িয়ে পদ্মা সেতুতে করা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা।
অর্ধেক দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতুতে মাইক্রোবাসের খরচ লাগে ৭৫০ টাকা।
সেই হিসাবে পদ্মা সেতুতে মাইক্রোবাসে প্রতি কিলোমিটারে টোল ১৩৯ টাকা ৮২ পয়সা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে তার পরিমাণ ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা।
অর্থাৎ মাইক্রোবাসে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটার হিসাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় খরচ কমে আসবে ১২ টাকা ৩৭ পয়সা।
৩১ আসন বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য পদ্মা সেতুতে দিতে হবে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ফেরিতে এসব গাড়িকে দিতে হচ্ছে ৯৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের বাসকে দিতে হচ্ছে ৭৫০ টাকা।
তার মানে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩১ বা এর কম আসনের ছোট বাসের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোল আসে ১৫২ টাকা ১৯ পয়সা। আর পদ্মা সেতুতে আসে ১৫০.৫৭ টাকা।
এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারে খরচ কম পড়বে ১ টাকা ৬২ পয়সা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে মাঝারি বাসকে ফেরিতে দিতে হয় ১ হাজার ৩৫০ টাকা। সেতু দিয়ে পারাপারে তা লাগবে ২ হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের বাসকে দিতে হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে মাঝারি বাসের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২১৫ টাকা ১০ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই খরচ কিলোমিটারে ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মায় বাসমালিকদের খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ১২ টাকা ১৮ পয়সা।
মাওয়া প্রান্ত দিয়ে বড় বাসে ফেরিতে পদ্মা পারাপারে লাগছে ১ হাজার ৫৮০ টাকা। সেতুতে লাগবে ২ হাজার ৪০০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের বাসে খরচ পড়ে ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে বড় বাসের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২৫৮ টাকা ১২ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই খরচ ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মায় বড় বাসমালিকদের খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ৫৫ টাকা ১৯ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে ৫ টনের ট্রাক এ সেতু পাড়ি দিলে গুনতে হবে ১ হাজার ৬০০ টাকা। পাঁচ টন পর্যন্ত এই ট্রাক পারাপারে ফেরিতে দিতে হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের ট্রাক পারাপারে টোল দিতে হয় ১ হাজার টাকা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে পাঁচ টনের ট্রাকের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ১৭২ টাকা ৮ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই দূরত্বের খরচ ২০২ টাকা ৯৩ পয়সা।
ফলে পদ্মা সেতুতে ছোট ট্রাকে খরচ কমছে প্রতি কিলোমিটারে ৩০ টাকা ৮৫ পয়সা।
পাঁচ টন থেকে আট টনের মাঝারি ট্রাকের জন্য পদ্মা সেতুতে দিতে হবে ২ হাজার ১০০ টাকা, ফেরিতে লাগছে ১ হাজার ৪০০ টাকা।
একই আকারের ট্রাকের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুতে দিতে হয় ১ হাজার ২৫০ টাকা।
এই হিসাবে পদ্মা সেতুতে পাঁচ থেকে আট টনের ট্রাকে টোলের খরচ পড়বে কিলোমিটারে ২২৫ টাকা ৮৬ পয়সা। বঙ্গবন্ধুতে এই দূরত্বের খরচ ২৫৩ টাকা ৬৫ পয়সা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে এই ধরনের ট্রাতে কিলোমিটারপ্রতি কম নেয়া হচ্ছে ২৭ টাকা ৭৯ পয়সা।
পদ্মা সেতুতে আট টন থেকে ১১ টনের মাঝারি ট্রাকের টোল ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই গাড়িগুলোকে টোল হিসেবে দিতে হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে মাঝারি ট্রাকে প্রতি কিলোমিটারে পদ্মা সেতুর খরচ ৩০১ টাকা ১৪ পয়সা। বঙ্গবন্ধুর সেতুতে এই খরচ ৩২৪ টাকা ৬৮ পয়সা।
এই হিসাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর তুলনায় পদ্মা সেতুতে কিলোমিটারপ্রতি খরচ কমবে ২৩ টাকা ৫৪ পয়সা।
থ্রিএক্সেলের ট্রাক পারাপারে পদ্মা সেতুতে টোল ঠিক করা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগছে ৩ হাজার ৯৪০ টাকা।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে এই ধরনের ট্রাক পারাপারে লাগছে ২ হাজার টাকা।
কিলোমিটারপ্রতি খরচের হিসাবে দেখা যায় পদ্মা সেতুতে ৫৯১ টাকা ৫৩ পয়সা। যা বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪০৫ টাকা ৮৫ পয়সা।
এ ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে খরচ বাড়ছে প্রতি কিলোমিটারে ১৮৫ টাকা ৬৭ পয়সা।
মালবাহী ট্রেইলারের (ফোর এক্সেল) টোল পদ্মা সেতুতে ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। ফেরিতে এই ধরনের গাড়ি পারাপারে লাগে ৪ হাজার টাকা।
আর যমুনা পাড়ি দিতে এই ধরনের ট্রাককে দিতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।
দেখা যাচ্ছে মালবাহী ট্রেইলারে (ফোর এক্সেল) প্রতি কিলোমিটারে পদ্মা সেতুর খরচ ৬৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। বঙ্গবন্ধুর সেতুতে এই খরচ ৬০৮ টাকা ৭৭ পয়সা।
অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে খরচ বাড়ছে কিলোমিটারপ্রতি ৩৬ টাকা ৫৩ পয়সা।
চার এক্সেলের ওপরে মালবাহী ট্রেইলারের জন্য প্রতি এক্সেলে পদ্মা সেতুতে যোগ হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। আর বঙ্গবন্ধু সেতুতে যোগ হচ্ছে ১ হাজার টাকা।
আরও পড়ুন:বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে ডলার-টাকার বিনিময় হার এখন থেকে বাজারনির্ভরভাবে নির্ধারণের সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুবাই থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
এ সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বাংলাদেশ আগামী জুন মাসের মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের ঋণ কিস্তি পাবে বলেও জানান তিনি।
ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের দর-কষাকষি চলছিল। মূলত সে কারণে আইএমএফ ঋণের কিস্তি ছাড় করছিল না। এর মধ্যে গতকাল জানা যায়, বাংলাদেশ ডলারের বিনিময় আরও নমনীয় করতে রাজি হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারে ঋণের দুটি কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত ৯ মাসে রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার বিক্রি করা হয়নি, তবুও বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে এবং তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। এ অবস্থায় বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে ব্যাংকারদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, বাজারভিত্তিক করায় হঠাৎ করে ডলারের রেট অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন ধরে ডলারের রেট ১২২ টাকার আশপাশে রয়েছে এবং তা সেখানেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ডলারের রেট দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা-সরবরাহ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, বাইরের দেশের নির্দেশে নয়। বর্তমানে বাজারে ডলারের সরবরাহও পর্যাপ্ত রয়েছে।
তবে, তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দুবাইভিত্তিক কিছু সিন্ডিকেট বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক থাকবে এবং সার্বক্ষণিক নজরদারি করবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান, কবির আহমেদ, উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ এবং নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জুনের মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির জন্য নির্ধারিত ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার একত্রে ছাড় করবে।
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে সকল বিষয় সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে উভয়পক্ষ রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, মুদ্রা বিনিময় হারসহ অন্যান্য সংস্কার কাঠামো বিষয়ে সম্মত হয়েছে। রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বিষয়ে অধিকতর পর্যালোচনার লক্ষ্যে চতুর্থ রিভিউ সম্পন্ন হওয়ার পর উভয় রিভিউয়ের জন্য নির্ধারিত কিস্তির অর্থ একত্রে ছাড় করা হবে বলে বিগত তৃতীয় রিভিউয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চতুর্থ রিভিউয়ের সময় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ব্যাংক-ফান্ড সভায় এবিষয়ে আলোচনা চলমান ছিল।
এ ছাড়া বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা জুন মাসের মধ্যে পাবে বলে বাংলাদেশ প্রত্যাশা করছে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এ অর্থ পাওয়া গেলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও শক্তিশালী হবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয় যে, বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে যেসকল সংস্কার কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব বিবেচনায় পরিকল্পিত এবং জাতীয় স্বার্থে গৃহীত। এ সকল সংস্কার কর্মসূচির ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যক্রম শুধুমাত্র কারিগরি সহায়তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। পরস্পরের ওপর আরোপ করা পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য শুল্ক ৯০ দিনের জন্য ব্যাপক পরিসরে কমাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা কমাতেই এই চুক্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। খবর বিবিসির।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের আগে চীনের ওপর মার্কিন শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। পরে নতুন শুল্ক যখন ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন তখন তিনি বলেছিলেন তিন মাস সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় দুপক্ষের মধ্যে আলোচনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, গঠনমূলক ও দৃঢ় আলোচনার পর উভয় দেশ ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করতে রাজি হয়েছে। এর আওতায় দেশ দুটি পারস্পরিক শুল্ক ১১৫ শতাংশ কমাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত বর্তমান ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। অন্যদিকে চীন মার্কিন পণ্যের ওপর আরোপ করা ১২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে। উভয় দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, আগামী ১৪ মে থেকে শুল্কের এই কাঁটছাট কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে স্কট বেসেন্ট বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি যে, আমাদের অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে। দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলই একমত হয়েছে যে তারা বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। মার্কিন অর্থমন্ত্রী বলেন, উভয় দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্যের পথে অগ্রসর হওয়া এবং এটি তারই সূচনা।
প্রথম দফায় শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ববাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল এবং বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কাও জোরালো হয়েছিল। তবে এবার এই চুক্তির ঘোষণায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে তাৎক্ষণিক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
শুল্ক কমানোর চুক্তির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববাজারে চাঙাভাব দেখা দেখা গেছে। হংকংয়ের প্রধান সূচক ৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ স্টক ফিউচারের উত্থান হয়েছে। এছাড়া বাড়তি শুল্ক স্থগিতের খবরে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের দর বেড়ে ছয় মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলোও উচ্চমুখী প্রবণতায় লেনদেন শুরু করে এবং মার্কিন বাজারগুলোও ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে, এই সময়সীমার মধ্যে চীনের উচিত হবে ফেন্টানিল নামক ভয়াবহ মাদকের অবৈধ রপ্তানি বন্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া। এ বিষয়ে চীনের সদিচ্ছা দেখে ওয়াশিংটন আশাবাদ প্রকাশ করেছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলের প্রবেশ ঠেকাতে চীন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন।
টাকা পাচার ঠেকাতে বিশেষ ইউনিট গঠন করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মূলত বাণিজ্যের আড়ালে যে বিদেশে টাকা পাচার হয়, তা প্রতিরোধ করতেই এমন উদ্যোগ। দুই প্রক্রিয়ায় টাকা পাচার হয় বলে মনে করে এনবিআর। এগুলো হলো-আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং। এসব কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব লোকসান হয় বলে মনে করে এনবিআর।
সম্প্রতি এনবিআর মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি রাজস্ব কৌশল নামে ১০ বছরের একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। সেখানে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) উদ্ধৃতি দিয়ে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে (মিথ্যা ঘোষণা) ৭০ শতাংশ অর্থ পাচার হয়ে থাকে।
টাকার পাচার রোধে এনবিআর তিনটি উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছে। প্রথমত, আমদানি-রপ্তানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচার ঠেকাতে দক্ষ কর্মকর্তাদের দিয়ে বিশেষায়িত একটি ইউনিট গঠন করা যেতে পারে। এই ইউনিটের সদস্যরা প্রতারণা হয় বা হতে পারে- এমন বিল অব এন্ট্রিগুলো তদারকি ও তদন্ত করবেন। এই ইউনিট গঠন হলে একদিকে টাকা পাচার বন্ধের পাশাপাশি এনবিআরের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির সক্ষমতা বাড়বে।
সাধারণত আমদানিকালে তুলনামূলক বেশি দাম দেখিয়ে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়। মূলত মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এভাবে টাকা পাচার করা হয়। দুই বছর আগে এনবিআর পাচার টাকা ফেরত আনার সুযোগ দিলেও কেউ তা নেননি।
এনবিআরের দ্বিতীয় সুপারিশ হলো, বিদেশি কূটনীতিক মিশনে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টি করা। এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যের আড়ালে মিথ্যা ঘোষণা এবং ট্রান্সফার প্রাইসিং ইস্যুটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে। যেসব দেশ থেকে পণ্য আসে, সেখানে পণ্যের মূল্য কত, তা জানা সম্ভব হয় না। আবার নানাভাবে বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার হয়। এনবিআর বলছে, বিভিন্ন দূতাবাসে, বিশেষ করে বাংলাদেশে বড় বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোতে রাজস্ব খাতে কর্মকর্তাদের জন্য এটাশে পদ সৃষ্টির সুপারিশ করেছে এনবিআর। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, ভারতের মতো দেশ এমন পদ সৃষ্টি করেছে বলে এনবিআরের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এনবিআরের তৃতীয় সুপারিশ হলো, পাচার টাকা ফেরত আনতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যেমন দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়া; যেসব দেশে পাচার হয়, সেখানে তদারকি ও পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা। এসব করা হলে পাচার টাকা চিহ্নিত করে ফেরত আনা সহজ হবে। এ ছাড়া টাকা পাচারে সহায়তাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার কথাও বলেছে এনবিআর।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, টাকা পাচারের কারণে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারায় সরকার। টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে অর্থনীতি আরও চাঙা হবে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়বে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রতিবেদন তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল (ক্রীড়নক), আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি রিপোর্টস (জিএফআইআরএস) এবং কিছু নির্দিষ্ট পূর্বানুমানের ভিত্তিতে টাকা পাচারের হিসাব করেছে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।
দেশ থেকে কারা, কীভাবে, কোথায় টাকা পাচার হয়েছে- সেই চিত্র তুলে ধরে শ্বেতপত্রে বলা হয়, টাকা পাচারের জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের ক্রীড়নক, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের অনৈতিক চক্র গড়ে ওঠে। ঘুষ-দুর্নীতি, আর্থিক অপরাধ, মিথ্যা ঘোষণার আড়ালে বাণিজ্য, ব্যাংক থেকে চুরি করা টাকা, খেলাপি ঋণের অর্থ, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে দেখানো, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, কর ফাঁকি- এসব কর্মকাণ্ডের অর্থ পাচার করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ করের অভয়ারণ্য নামে পরিচিত ছোট ছোট দেশে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে। মূলত বাড়ি কিনে এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা পাচার করা হয়।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফরের তৃতীয় দিন শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও স্মারকগুলো স্বাক্ষর হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়, সমঝোতা স্মারকগুলোর মধ্যে রয়েছে দুই দেশের কালজয়ী সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনুবাদ ও সৃজন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও খবর আদান-প্রদান, গণমাধ্যম, ক্রীড়া এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিময় সহযোগিতা। এর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার দ্বিপক্ষীয় চীন সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ বিষয়ে সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়েছে।
এগুলো হলো বিনিয়োগ আলোচনা শুরু করা, চীনের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু, মোংলা বন্দরের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ, একটি রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং একটি কার্ডিয়াক সার্জারি গাড়ি অনুদান।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের উত্থাপিত বিষয়গুলো চীন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং।
স্থানীয় সময় শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এ কথা জানান।
ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্টের বৈঠককে অত্যন্ত সফল উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি বিষয় উত্থাপন করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশকে দেওয়া চীনা ঋণের সুদের হার কমানো ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দেশটির সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়টি ছিল।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকে আলোচনা অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ, গঠনমূলক ও ফলপ্রসূ হয়েছে।’
প্রেস সচিব বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও অধ্যাপক ইউনূসের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার এটি ছিল প্রথম দ্বিপক্ষীয় বিদেশ সফর। এখন পর্যন্ত এটি একটি বড় সফলতা।’
প্রেসিডেন্ট শির বক্তব্যের বরাতে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও কারখানা স্থাপনে চীন তার দেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করবে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট শি ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর থাকাকালীন দুইবার বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তিনি পড়াশোনা করেছেন। সে কথাও উল্লেখ করেছেন চীনের রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রেসিডেন্ট শির উদ্বৃতি দিয়ে শফিকুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশ আগামী মৌসুমে এ দুটি ফল চীনে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করবে।
চীনা প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টা চীনের পিপলস গ্রেট হলে করা বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তারা দুই দেশের সম্পর্ককে জোরদার করা ও ঢাকা-বেইজিংয়ের পারস্পরিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার উপায় নিয়েও আলোচনা করেন।
আরও পড়ুন:বাংলাদেশের বাজারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সি৩২ ইলেকট্রিক বাইক এনেছে বৈশ্বিক ব্র্যান্ড রিভো। অত্যাধুনিক ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার সম্পূর্ণ গ্রাফিন ব্যাটারি পরিচালিত এই ইলেকট্রিক বাইকের উদ্বোধন ঘোষণা করেন রিভো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ভেন নি।
ফিচার
সি৩২-এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য শক্তিশালী ১৮০০ ওয়াট মোটর, যা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। বাইকটির ইকো মোডে গতি ৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং একবার চার্জে এটি ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।
অন্যদিকে স্পোর্ট মোডে সর্বোচ্চ গতি ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা এবং এক চার্জে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারে।
সি৩২ ইলেকট্রিক বাইকে উন্নত ৭২ ভোল্ট ২৬ অ্যাম্পিয়ার গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাঁচ শতাধিক চার্জিং সাইকেল সাপোর্ট করে এবং প্রতিটি পূর্ণ চার্জে মাত্র ২.০৮ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে।
ব্যাটারিটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে ১০.৬ ঘণ্টা সময় নেয়, যা রাতে চার্জ দিয়ে দিনব্যাপী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
নিরাপত্তা এবং আরামকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে রিভো সি৩২। এতে রয়েছে সামনে ডিস্ক ব্রেক এবং পিছনে ড্রাম ব্রেক সিস্টেম, যা সর্বোচ্চ স্টপিং পাওয়ার নিশ্চিত করে।
ফ্রন্ট ও রিয়ার হাইড্রোলিক সাসপেনশন থাকার ফলে রাইডাররা মসৃণ ও আরামদায়ক রাইড উপভোগ করতে পারেন। এমনকি অপ্রশস্ত বা অসমান রাস্তাতেও।
রাতে নিরাপদ যাত্রার জন্য সি৩২-এ রয়েছে পূর্ণ এলইডি লাইটিং সিস্টেম, যার মধ্যে এলইডি হেডলাইট, টেইললাইট এবং টার্ন সিগন্যাল অন্তর্ভুক্ত।
রিভো সি৩২ শুধু শক্তিশালী পারফরম্যান্সই দেয় না, এটি ডিজাইনেও বেশ কার্যকর। ১৪০ কেজি ওজনের মজবুত অথচ হালকা ফ্রেম এবং সামনে ও পিছনে ৯০/৮০-১২'' ভ্যাকুয়াম টায়ার যুক্ত বাইকটি দুর্দান্ত গ্রিপ এবং স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
২০৫ এমএম পর্যন্ত গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স থাকায় এটি যেকোনো ধরনের রাস্তার জন্য উপযোগী। সিট বাকেটে ২৪ লিটার স্টোরেজ স্পেস রয়েছে, যা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বহনের জন্য আদর্শ।
ব্যবহারকারীবান্ধব ডিজাইন এবং আরামের সমন্বয়ে এটি শহরের যাতায়াতকারী এবং দূরপাল্লার রাইডারদের জন্য একটি পারফেক্ট পছন্দ।
এখন থেকে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যে বাংলাদেশের সব শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে।
সি৩২ যাতায়াতকে সহজ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব করতে উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স নিশ্চিত করছে, যা প্রতিদিনের যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবেশ সচেতন রাইডারদের জন্য আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন:আলু রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ স্থলবন্দর দিয়ে নতুন করে আরও ১০৫ টন আলু গিয়েছে নেপালে।
এ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ৫৫৪ টন আলু নেপালে রপ্তানি করা হলো।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কোয়ারিনটিন ইন্সপেক্টর উজ্জল হোসেন জানান, বুধবার বিকেলে স্থলবন্দর দিয়ে পাঁচটি ট্রাকে ১০৫ টন আলু নেপালে গেছে।
তিনি জানান, আলুগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এগুলো রপ্তানি করছে থিংকস টু সাপ্লাই ও ফাস্ট ডেলিভারি নামে দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে থিংকস টু সাপ্লাই ৪২ ও ফাস্ট ডেলিভারি ৬৩ টন রপ্তানি করে। এ ছাড়াও বন্দরটি দিয়ে হুসেন এন্টারপ্রাইজ, ক্রসেস এগ্রো, সুফলা মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড এবং লোয়েড বন্ড লজিস্টিক নামের কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানও নেপালে আলু রপ্তানি করছে।
উজ্জ্বল হোসেন বলেন, রপ্তানিকারকরা প্রয়োজনীয় নথিসহ অনলাইনে আবেদন করলে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফাইটোসেনেটারি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়। রপ্তানিকৃত আলুগুলো স্টারিজ এবং লেডিও রোজেটা জাতের।
মন্তব্য