১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে এমন পানি হয়েছিল। সিলেটে এবারের বন্যা পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিল সেই স্মৃতি। গত ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যা হয়েছে। উজানে বৃষ্টি না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
এমন মন্তব্য পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশার। পাউবোর এই কর্মকর্তার মন্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, সিলেটে এবারের বন্যার ভয়াবহতা।
থেমে থেমে পানি বেড়ে সিলেটের বেশির ভাগ এলাকাই এখন ভাসছে বন্যায়। জেলা প্রশাসনের হিসাবে সিলেটের ৬টি উপজেলা বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া পানি উঠে গেছে নগরের বেশির ভাগ এলাকায়ও।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত পাঁচ দিনে ১২৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। অবিরাম বৃষ্টি ঝরছে সিলেটেও। ফলে দ্রুত বাড়ছে নদনদীর পানি।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি অমলসীদ ও কানাইঘাট পয়েন্টে প্রায় ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সিলেট সদরে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানির তোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যেই ভেঙে গেছে ২০টি নদীরক্ষা বাঁধ। এ ছাড়া কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাউবো সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘পানি এত বেশি আসছে যে আমাদের বাঁধগুলো উপচে পড়ছে। কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি অতিরিক্ত থাকায় আমরা সংস্কারকাজও করতে পারছি না।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
মঙ্গলবার দিনভর সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি মিনিটেই বাড়ছে পানি। নগরের অন্তত ২০টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে এসব এলাকার সড়ক। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন সরকারি অফিসেও পানি উঠে গেছে।
দুপুরে নগরের তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই সড়কে হাঁটুর ওপরে পানি জমে গেছে। পানির কারণে সড়কজুড়ে ছিল দীর্ঘ যানজট। পানি ঢুকে কারও কারও গাড়িতে দেখা দিয়েছে ত্রুটি। সড়কের মাঝখানে নিজের সিএনজি অটোরিকশাটিকে ধাক্কাধাক্কি করছিলেন চালক মইনুল হক। তিনি বলেন, ‘সায়লেন্সারে পানি ঢুকে গেছে। এখন আর স্টার্ট হচ্ছে না। ধাক্কা ছাড়া উপায় নাই।’
সোবহানীঘাট এলাকার গৃহিণী আমিনা বেগম বলেন, ‘ঘরের ভেতর পানি ঢুকেছে গতকালই। তখন থেকে বিছানার ওপর আছি। এখন মনে হচ্ছে, বিছানায়ও পানি উঠে যাবে।’
এ অবস্থায় ঘরে রান্না বন্ধ, এমনকি বাথরুমও ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে জানান আমিনা।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এখনও তা চলমান। বুধবার থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যেতে শুরু করে। আর এখন বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
তলিয়ে গেছে জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়েছে। এই উপজেলার হেমু ভাটপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেন, ‘পানি ঘরে ঢুকে গেছে। এখন মাচাংয়ের ওপর দিন কাটছে। বিশুদ্ধ পানি আর শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জৈন্তাপুরে এবারের বন্যায় এ পর্যন্ত ৪০ একর বীজতলা পানির নিচে নিমজ্জিত এবং প্রায় ১০০ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
জৈন্তাপুরের ইউএনও আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এর আগে পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। একই সঙ্গে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটও বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা উপজেলা প্রশাসন পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় সার্বক্ষণিক কাজ করতে প্রস্তুত আছি।’
বন্যায় জকিগঞ্জ উপজেলার বারহাল, মানিকপুর, কাজলসার, বিরশ্রী ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বারহাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ জানান- তার ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম, উত্তর খিলোগ্রাম, চকবারাকুলি, শরীফাবাদ, শাহগলী বাজার ও কচুয়া এলাকা সুরমা নদীর ডাইক ভেঙে তলিয়ে গেছে।
বিরশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার জানান, সুপ্রাকান্দি ও বড়চালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ যেকোনো সময় ভেঙে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যেতে পারে।
বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জকিগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থাও ব্যাহত হচ্ছে।
এ ছাড়া বন্যায় তলিয়ে গেছে কানাইঘাট, সদর, গোয়াইনঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাই। এসব এলাকার বেশির ভাগ সড়কই তলিয়ে গেছে। পানি উঠে গেছে কানাইঘাট থানায়ও।
ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় নিজেদের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।
গোয়াইনঘাটের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা সাহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা না হয় কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিলাম। কিন্তু গরুগুলোকে কী করব?’
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য নগরে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া দুটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। নগরে শুকনো খাবার বিতরণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘প্লাবিত প্রতি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিতদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তাও দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রাকের চাপায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন।
সদর উপজেলার মহারাজপুর ঘোড়া স্ট্যান্ড এলাকায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাফফর হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত ২৬ বছরের পলাশ আলী মহারাজপুর ইউনিয়নের ডালিম শেখের ছেলে। আহত ২৮ বছরের শিমুলকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
ওসি মোজাফফর জানান, শিবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। একই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয় ট্রাকটি। এতে বাইকের দুই আরোহী গুরুতর আহত হন।
তাদের উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক পলাশকে মৃত ঘোষণা করেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য শিমুলকে পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
আরও পড়ুন:নওগাঁর রাণীনগরে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে সোহেল রানা নামে ৩৬ বছর বয়সী এক যুবকের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন। অভিযুক্ত সোহেল উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চাড়াপাড়া গ্রামের হানিফের ছেলে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার প্রতিবেশী মেয়েটি সোহেলের বাড়ির পাশের পুকুর থেকে হাঁস নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। পথে সোহেল রানা তাকে ডেকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান।
এক পর্যায়ে মেয়েটির মুখে কাপড় গোজে তাকে ধর্ষণ করেন সোহেল। পরে মেয়েটি কান্না করতে করতে বাড়িতে গিয়ে তার মাকে জানায়। প্রায় তিন দিন ধরে বিষয়টি স্থানীয় কিছু মোড়ল ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা সমঝোতায় রাজি না হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় সোহেল রানাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রাণীনগর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলার পর মেয়েটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকে সোহেল গা ঢাকা দেয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ বিষয়ে রাণীনগর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে। খুব তাড়াতাড়ি তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
পাকিস্তানিরাও তাদের দেশে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চায় বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকার ধামরাইয়ে শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রার রথটান উপলক্ষে আয়োজিত সভায় এ কথা বলেন তিনি।
শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাশের সভাপতিত্বে সভায় সঞ্চালনা করেন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সাহা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘ভারতের পার্লামেন্টে সুষমা স্বরাজ কয়েক বছর আগে বলেছেন, বাংলাদেশে গত এক দশকে ৮ শতাংশ হিন্দু বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ছিল ২ শতাংশ। এখন তা ১০ শতাংশ। এতে কি বোঝা যায়? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে সকলেই একসাথে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাস করতে পারে। সুষমা স্বরাজের বক্তব্য অনুযায়ীই হিন্দু বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ সকলের জন্য এখন নিরাপদ।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের এক রাজনীতিক পার্লামেন্টে বলেছেন, শেখ হাসিনাকে পাকিস্তানে এনে দাও। পাকিস্তানকে সে বাংলাদেশ বানিয়ে দিক এটাই আমাদের চাওয়া। কী বোঝায়? যে পাকি বাঙালিরা এখনো পাকিস্তানি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে রাজনীতি করে। অথচ পাকিস্তানিরা চায় শেখ হাসিনা সেখানে প্রধানমন্ত্রী হোক। তাদের পরিবর্তন হোক। আর কী চান আপনারা?’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানের নাগরিকদের আয় পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় ৭৫ গুণ বেশি ছিল। এখন তাদের তুলনায় বাংলাদেশিদের আয় ৫০ গুণ বেশি। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০২১ অর্থবছরে ছিল ২৫০০ ডলার, পাকিস্তানে ১৫৬০ ডলার। অর্থাৎ পাকিস্তানকে আমরা পেছনে ফেলেছি। শুধু তাই নয়। আমরা ভারতকেও গত ২-৩ বছরে মাথাপিছু আয়ে পেছনে ফেলেছি।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি, গড় আয়ু বেশি, মাতৃমৃত্যু সবচেয়ে কম, শিশু মৃত্যু সবচেয়ে কম।
শামসুল আলম বলেন, ‘গোপাল কৃষ্ণ হত্যাকাণ্ড, মানিক সাহা হত্যাকাণ্ড, আহসান উল্লাহ মাস্টার, এসএম কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট হামলা চালানো হয়েছে। তবুও শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একটা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্যই।’
এভাবে দেশ এগোলে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ হবে বলে দাবি করেন তিনি।
এ সময় রথযাত্রার প্রশংসা করে ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এটা একটি স্মরণীয় অনুষ্ঠান। একটা পরম আকাঙ্খিত অনুষ্ঠান। আজকের এই আয়োজন স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনারা পালন করতে পারছেন। নির্বিঘ্নে পালন করতে পারছেন। এটা সরকারের অবদানের কারণে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধামরাইয়ের কয়েকটি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বরাদ্দের দাবি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ। দাবিগুলো পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করার কথা জানান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সরদার, ধামরাই পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব গোলাম কবির মোল্লাসহ অনেকেই।
আরও পড়ুন:কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারী মানবাধিকারকর্মীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। নবীপুর (পশ্চিম) ইউনিয়নের কোম্পানিগঞ্জ বাজারে ইউপি চেয়ারম্যানের সামনে ২৮ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে।
ওই মানবাধিকার কর্মীর নাম মরিয়ম বেগম। তিনি ইন্টারন্যাশনাল লিগ্যাল এইড ফাউন্ডশনের কর্মী। বর্তমানে তিনি দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন।
মরিয়ম বেগম বলেন, ‘নবীপুর (পশ্চিম) ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেনের সামনে তার ভাতিজা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার দেলোয়ার হোসেন দলবল নিয়ে আমার ওপর চড়াও হয়। থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। তাই মামলা করা হয়নি।’
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, দোকানের সামনে কয়েকজন মানুষের জটলা। এর মধ্যে থেকে তিন ব্যক্তি বোরকা পরা এক নারীকে ধরার চেষ্টা করলে, তিনি ওই দোকানের ভেতর ঢুকে পড়েন। এ সময় দেলোয়ারের লোকজন তার বোরকা ধরে টানাটানি করতে থাকলে, তাদের বাধা দেন জাকির। এক পর্যায়ে দেলোয়ার ও তার লোকজন দোকান থেকে ওই নারীকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে যান।
মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ভিপি জাকির পরিকল্পিতভাবে আমাকে ডেকে নিয়ে সালিশে বসেন। সেখানে তার ভাতিজা দেলোয়ার এবং তার দলবল আমাকে নির্যাতন করে। দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তারা আমাকে ধরে এনে ফের মারধর করে। এক পর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়রা উদ্ধার করে দেবীদ্বার উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাকির হোসেনের চাপে থানায় মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমি এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ বিষয়ে মরিয়মের ছেলে আরিফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে দেলোয়ার আমাদের জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমার আম্মা আদালত থেকে স্টে অর্ডার আনে। এতে দেলোয়ার ও জাকির আমাদের জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করতে পারছিল না। এ নিয়ে আম্মাকে তারা হত্যার হুমকিও দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ৩১ জানুয়ারি এই ইউনিয়নে উপনির্বাচন হয়। নির্বাচনে আম্মা দেলোয়ার মেম্বারের হয়ে কাজ করেনি। তাই গত ২৮ জুন রাতে সালিশের কথা বলে আম্মাকে ডেকে নিয়ে মারধর করে তারা।’
অভিযোগ মেনে নিয়েছেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন। তার দাবি, গালাগালি করায় ওই নারীকে পিটিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ‘পুরোনো একটি বিরোধ নিয়ে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি।’
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাশিম বলেন, ‘এক নারী সাধারণ ডায়রি করতে এসেছিলেন। আমরা তাকে মামলা করার পরামর্শ দিই। তারপরও বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’
আরও পড়ুন:ফেনীর ফুলগাজীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
বিএনপির অভিযোগ, হামলায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ছাড়া আহতদের হাসাপাতলে নিয়ে যাওয়া হলে পুনরায় হামলা চালানো হয়। এতে আহতের ৩০ স্বজনও আহত হন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী বাজারে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ দলটির।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল জানান, ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বন্যার্ত অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি ছিল। সেখানে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের আশার কথা রয়েছে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ফুলগাজীর মুন্সিরহাটে আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়।
হামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ভিপি ফখরুল আলম স্বপন, সদস্য সচিব আবুল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল গোলাপ, নরুল হুদ শাহিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফুলগাজী উপজেলা যুবদল আকবর হোসেন, ফুলগাজী উপজেলা যুবদল সদস্য মোহাম্মদ দিদার, শিমুল, রবিউল হক বাবু, ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি রতন মুত্তরসহ ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
আলাল উদ্দিন আলাল জানান, চিকিৎসা নিতে নেতাকর্মীরা উপজেলা হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসাধীন নেতাকর্মীদের ওপর পুনরায় হামলা চালানো হয়। এতে নেতাকর্মীদের স্বজনসহ আরও প্রায় ৩০ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় হাসপাতালের আসবাবপত্র।
ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ মজুমদার বলেন, ‘বিএনপির নেতাকর্মীরা সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি নিজাম কোম্পানীর ওপর হামলা চালিয়ে ৫ জনকে আহত করেন। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সামান্য ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সামান্য হাতাহাতিও হয়েছে।’
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনা শুনে আমরা সেখানে গিয়েছি। কাউকে পাওয়া যায়নি।’
আরও পড়ুন:কক্সবাজারের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এলএও) সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে ২০ লাখ টাকাসহ ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, জব্দ করা ওই টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছিল।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগদ টাকাসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল আতিকুরকে আটক করে।
এর আগে শুক্রবার সকাল ৯টায় ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে তিনি কক্সবাজার থেকে ঢাকায় পৌঁছান বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সম্মিলিত কক্সবাজারের দুদুকের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারে দায়িত্বরত সার্ভেয়ার আতিককে নগদ ২০ লাখ টাকাসহ আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ পর্যন্ত ওই টাকার উৎস সম্পর্কে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদকে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা হেলিকপ্টারে করে গেলেন কনে আনতে। এ সময় শত শত লোক ভিড় জমান। উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে ছিল পুলিশও।
এ জমকালো বিয়ের বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি রিদওয়ান আনসারি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার আনসারি বাড়ির এ আর আনসারি বাবরু ও রোকসানা আনসারি পপির ছোট ছেলে তিনি।
পরিবারটি আগে থেকেই বেশ স্বচ্ছ্বল।
শুক্রবার দুপুরে শহরের অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বোর্ডিং এর মাঠ থেকে রিদওয়ান হেলিকপ্টারে যাত্রা শুরু করেন। সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর বাজারে তার আকাশযান অবতরণ করে। কনের বাড়ি সুহিলপুর গ্রামে।
কনে তামান্না খানম চাঁদনী সুহিলপুর গ্রামের আক্তার খানের মেয়ে। তিনি এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। বর ও কনে উভয়ের বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় এ ঘটনায় আজ সাড়া পড়ে গিয়েছে।
বিকেলে এই বিয়ের পর বর রিদওয়ান ফের হেলিকপ্টারে চড়ে কনে নিয়ে শহরের বোর্ডিং এর মাঠে অবতরণ করে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।
হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। কৌতূহলী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইব্রাহীম বলেন, ‘হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল। কৌতূহলী ও উৎসুক লোকজনের ভিড় সামলাতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।’
বরের বড় ভাই রাইয়ান আনসারি রিকি জানান, তাঁরা দুই ভাই, কোনো বোন নেই। রিদওয়ান সবার ছোট। আদরের ভাইয়ের বিয়েকে স্মরণীয় করে রাখতে হেলিকপ্টারে করে বরযাত্রা ও কনে নিয়ে আসার আয়োজন করা হয়। ঢাকা থেকে ভাড়া করে হেলিকপ্টার আনা হয়।
তিনি বলেন, ‘ছোট ভাইয়ের খুব ইচ্ছে ছিল বিয়ের দিন কনের বাড়িতে হেলিকপ্টারে যাবে। সেই আশায় আমরা পূরণ করেছি।’
কনের গ্রাম সুহিলপুরের বাসিন্দা ও সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ভূইয়া বলেন, ‘হেলিকপ্টারে চড়ে বিয়ের আয়োজনে গ্রামের উৎসুক লোকজন হেলিকপ্টার ও বর-কনেকে দেখতে ভিড় জমান। গ্রামবাসীর মধ্যে এ সময় আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছিল বলে স্থানীয় বিভিন্ন জানিয়েছেন। ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় আমি বিয়েতে যেতে পারিনি। তবে বিষয়টি শুনেছি।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য