আজ ১৭ মে। দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেশে ফেরার দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর স্বামী-সন্তানসহ ছয় বছর প্রবাসে কাটিয়ে ১৯৮১ সালের আজকের দিনটিতে দেশে ফিরতে সক্ষম হন তার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা।
১৯৮১ সালে প্রবাসে থাকতেই দলের নেতারা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ কন্যার হাতে।
বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বকে ভয় পেতে শুরু করে ঘাতক গোষ্ঠী। শেখ হাসিনা যেন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না পারেন সে জন্য নানামুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান। কিন্তু সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে স্বদেশভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ ৬ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে শিশুসন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়কে ছোট বোন শেখ রেহানার কাছে রেখে এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি। এ দেশে গণতন্ত্র আর প্রগতিশীলতার রাজনীতি ফেরাতে এবং একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে জীবনের ঝুঁকি নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
দিনটি ছিল রোববার। রাজনীতির অঙ্গনের মতোই প্রকৃতিও ছিল ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। কালবৈশাখীর হাওয়া বইছিল ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগও সেদিন রুখতে পারেনি গণতন্ত্রকামী লাখো মানুষের মিছিল। নগর-বন্দরের পাশাপাশি গ্রাম-গঞ্জ থেকেও মুক্তিপাগল জনতা ছুটে এসেছিল রাজধানী ঢাকায়। উদ্দেশ্য তাদের একমাত্র আশার প্রদীপ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে বরণ করে নেয়া। মুষলধারার বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে তারা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিল নেত্রীর আগমনের প্রতীক্ষায়।
দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশের মাটিতে পা রাখেন শেখ হাসিনা। বিকেল ৪টায় কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে অবতরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বহনকারী বিমান। তাকে এক নজর দেখা ও বরণ করে নিতে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত সড়ক পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
দেশের মাটিতে পা দিয়ে লাখো মানুষের সংবর্ধনার জবাবে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি; বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে আমার আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই।’
বঙ্গবন্ধুকন্যার আগমন উপলক্ষে স্বাধীনতার অমর স্লোগান ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্র নিনাদে ঘোষিত হয়, ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম- পিতৃহত্যার বদলা নেব।’ একই সঙ্গে যেন মুষল ধারার বর্ষণে ধুয়ে-মুছে যাচ্ছিল বাংলার মাটিতে পিতৃহত্যার জমাট বাঁধা পাপ আর কলঙ্ক চিহ্ন।
দেশে প্রত্যাবর্তনের পর নেতারা তার হাতে তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পতাকা। এরপর থেকে শেখ হাসিনা দলীয় কাউন্সিলে বারবার নির্বাচিত হয়ে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। চলছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারও।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে টলাতে পারেনি। শত প্রতিকূলতাতেও হতোদ্যম হননি তিনি।
বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন। আবির্ভূত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে। আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ ৪১ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তার নেতৃত্বে দেশে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে দেশ। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। তলাবিহীন ঝুঁড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
রাজনীতির পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি পুরোপুরি সফল একজন মা। ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আজ তথ্য-প্রযুক্তিবিদ। যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন তিনি। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ। দেশের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন।
কর্মসূচি : শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগ। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হবে। একই সঙ্গে দেশব্যাপী মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে হবে বিশেষ প্রার্থনা।
এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন রয়েছে। জাতীয় নেতারা ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা এই সবায় বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় দলীয় সভাপতির স্বদেশ ফেরার দিনটি উদযাপনের জন্য দলের সব স্তরের নেতা-কর্মী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে মহাসাগর, সাগর ও সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করতে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৪-এর সব লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পর্তুগালের লিসবনে দ্বিতীয় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার সময় তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘অবৈধ, অনবহিত এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাছ ধরা বন্ধ করতে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট প্রায় ৮ দশমিক ৮ ভাগ এলাকাকে সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং ২০১৯ সালে জাতীয় কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসান ও প্রতিনিধি দলের অন্যান্য কর্মকর্তারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
মোমেন বিবৃতিতে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় বাংলাদেশ তার দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান করেছে এবং যৌথভাবে সম্পদ কাজে লাগাতে প্রস্তুত।’
দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখা, বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ট দূষণ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদান ও পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মহাসাগর ও সাগরের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সমুদ্র বিজ্ঞানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন আব্দুল মোমেন।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার ‘বাংলাদেশ শিপ রিসাইকেল অ্যাক্ট ২০১৮’ সংশোধন করেছে এবং ২০২৩ সাল থেকে হংকং কনভেনশন মেনে চলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ ২০২৩ সাল থেকে নিরাপদে জাহাজ রিসাইক্লিং নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপেরও ঘোষণা দিয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ উৎপাদন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলেও বিশ্ব নেতাদের অবহিত করেন মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, ‘মহাসাগরের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং মানব সম্পদের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সক্ষমতার বৈষম্যগুলি অবশ্যই দূর করতে হবে।’
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিসবনের একটি পাবলিক পার্কে স্থাপন করা স্থায়ী শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন এবং ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানান।
আরও পড়ুন:মালদ্বীপে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশিদের বৈধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাই দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার অনুরোধ জানিয়েছে মালেতে বাংলাদেশে হাইকমিশন।
বৃহস্পতিবার এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশন।
এতে বলা হয়, মালদ্বীপে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের (ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি) আওতায় বৈধকরণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে।
যাদের বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট নেই তাদেরকে দ্রুততার সঙ্গে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে বৈধভাবে কাজ শুরু করারও অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈধকরণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যে প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছে, সেই প্রতিষ্ঠান মালিককে ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রিতে আবেদন করতে হবে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন দুর্ঘটনায় সব প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছে হাইকমিশন।
আরও পড়ুন:দেশের আরও তিনটি নিউজপোর্টাল ও ১৫টি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণকে নিবন্ধনের অনুমতি দিয়েছে সরকার।
বৃহস্পতিবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রেস-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত দুটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তি দুটিতে এসব সংবাদমাধ্যমকে সরকারি বিধি-বিধান অনুসরণ করে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।
তিনটি নিউজপোর্টাল হলো শীর্ষ সংবাদ ডটকম, এইচবিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং শেয়ারবাজার নিউজ ডটকম।
১৫টি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণগুলো হলো দৈনিক সকালের সময়, দৈনিক অগ্রসর, দৈনিক মাতৃভূমির খবর, দৈনিক বর্তমান কথা, দৈনিক আমাদের বাংলা, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ, সাপ্তাহিক অন্যধারা, দৈনিক করতোয়া, দৈনিক ফুলকি, দৈনিক জননেত্র, দৈনিক পল্লী বাংলা, দৈনিক আমাদের কক্সবাজার, দৈনিক আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দৈনিক মাধুকর ও দ্য নিউ নেশন।
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় শতবর্ষী বলাইশিমুল খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করার দাবি জানিয়েছে সে ইউনিয়নের বাসিন্দারা। তারা প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ করেছেন, শিশুদের সঠিক বিকাশে ভুমিকা রাখা বলাইশিমুল মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করে অন্য কোথাও সরিয়ে নেয়ার।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বলাইশিমুল ইউনিয়নবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত ‘শতবর্ষী প্রাচীন বলাইশিমুল খেলার মাঠ থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প অন্যত্র স্থাপনের দাবিতে’ মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।
বলাইশিমুল মাঠ রক্ষা আন্দোলনে এ সময় সংহতি জানান তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না।
তিনি বলেন, ‘মাঠ আন্দোলন যৌক্তিক ও মানবিক আন্দোলন। আগামী প্রজন্মের জন্য এই লড়াই, অন্য যেকোন আন্দোলন থেকে কম নয়। আপনাদের এই দাবি যদি প্রধানমন্ত্রী শোনেন, নিশ্চয় তিনি একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।’
রত্না বলেন, ‘যারা বলাইশিমুল মাঠ দখল করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়, তারা পক্ষান্তরে প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করছে। দেশে উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু প্রকৃতি ধ্বংস করে না।’
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘অতন্ত দুঃখ পাই যখন একটা মাঠ রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে লাগে, একটা নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীকে লাগে। একজন ব্যক্তির পক্ষে এক সঙ্গে সবদিক খেয়াল করা সম্ভব না। যারা মাঠ দখল করে প্রকল্প গ্রহণ করেছে তারা বলাইশিমুলবাসীকে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মাঠ আপনাদের মাঠ, মালিকানা আপনাদের। আপনারা এই মাঠ ছাড়বেন না। এইটা রূপক আন্দোলন, সারা দেশেই মাঠ রক্ষায় আমাদের আন্দোলন চালু থাকবে।’
বলাইশিমুল গ্রামের বাসিন্দা মশিউর জামান টিটু বলেন, ‘আমারা চাই সুন্দর জীবন, সুষ্ঠু জীবন৷ আমরা চাই আগামীর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বেড়ে উঠে। কিন্তু এই মাঠ দখল হলে স্থানীয় শিশু-কিশোররা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সুযোগ হারাবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করে প্রকল্প অন্যত্রে স্থানান্তর করা হোক।’
মানববন্ধনে অন্যরা বলেন, ‘শত বছরের পুরোনো ওই খেলার মাঠটি বলাইশিমুল গ্রামের ১ একর ৮৭ শতক সরকারি জায়গায় অবস্থিত। সেখানে এলাকার শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থীসহ তরুণ-যুবকেরা খেলাধুলা করেন। সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন মাঠের দুই পাশে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২৩টি ঘর নির্মাণ করছে। তাই ওই জায়গার পরিবর্তে মাঠের উত্তর পাশে কিছুটা নিচু জমিতে ঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’
এ ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন ব্রহ্মপুত্র সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আবুল কালাম আল আজাদ, কণ্ঠশিল্পী বীথি ঘোষসহ এলাকার ছাত্র ও যুবকরা।
নতুন অর্থবছরে বাজেটে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে আইনগতভাবে বৈধতা দেয়া হলেও সেটা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তবে এ সিদ্ধান্তকে ‘মন্দের ভালো’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
রাজধানীর এফডিসিতে শুক্রবার নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, আইনের বৈধতা দিয়েও তা পুরোপুরি ফেরত আনা সম্ভব নয়। চুরি করা টাকা ফেরানোর জন্য পাচার করেনি পাচারকারীরা। তাই পাচারকৃত অর্থের খুব সামান্যই দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশে একশ্রেণির মানুষের কাছে প্রচুর টাকা রয়েছে এবং তারা পাচার করছেন বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যেসব দেশে টাকা পাচার করা হয়, সেসব দেশের সরকার অর্থের বৈধতা যাচাই না করেই তা বিনিয়োগের সুযোগ করে দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দেশে কিছু টাকা ফেরত এলে অসুবিধা কোথায়? তাই পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত মন্দের ভালো।’
এ ক্ষেত্রে সরকার বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করছে না বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী।
প্রতিযোগিতায় সরকারি তিতুমীর কলেজকে পরাজিত করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ছায়া সংসদে বিচারক ছিলেন উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয় ও সাংবাদিক আরিফুর রহমান। ছায়া সংসদে মক স্পিকার হিসেবে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়।
আরও পড়ুন:গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে পদ্মা সেতু-মেট্রোরেল প্রজেক্টই বাস্তবায়ন হতো না বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
হোলি আর্টিজান হামলার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে শুক্রবার ‘দীপ্ত শপথ’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
হোলি আর্টিজান হামলায় তৎকালীন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রবিউল করিম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সালাউদ্দিন নিহত হন। তাদের স্মরণে গুলশান মডেল থানার সামনে ‘দীপ্ত শপথ’ নামে এই দুই অফিসারের ভাস্কর্য বানানো হয়। প্রতি বছর হোলি আর্টিজানের হামলার বার্ষিকীতে ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তাদের স্মরণে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হোলি আর্টিজানের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর আমরা যদি ঘুরে দাঁড়াতে না পারতাম, তবে আজ যে পদ্মা সেতু দেখছি, মেট্রোরেল দেখছি, তার কোনো প্রজেক্টই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। কোনো বিদেশি ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করতে আসত না। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছি বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘হরকাত-উল-জিহাদের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের উত্থান হয় ও জেএমবির উত্থান ঘটে। এরপর ইরাকে যখন আইএসের উৎপাত শুরু হয়, তখন বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য দেশের কিছু মানুষ তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে হোলি আর্টিজানে হামলা চালায়।’
তিনি বলেন, ‘হোলি আর্টিজানের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ পুলিশ জঙ্গি দমনে নতুন একটি ইউনিট খোলে। এই ইউনিটের অধিকাংশ সদস্যই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। এরপর দেশের যেসব জায়গায় জঙ্গিবাদ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে, সেখানেই জঙ্গিদের আস্তানা তছনছ করে দেয়া হয়েছে।’
জঙ্গি দমনে আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন না বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘এখনও জঙ্গি তৎপরতা মাঝে মাঝে চোখে পড়ছে। জঙ্গিদের সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভিটিসহ সব বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি।
‘এ ছাড়া বিভিন্ন সময় অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটসহ বিভিন্ন মেট্রো ও জেলা পুলিশ মিলে একটি করে ছোট ইউনিট করা হয়েছে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, হচ্ছে। জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক নস্যাৎ করে দেয়া হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) সব লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে দ্বিতীয় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তিনি দেশের এ অবস্থানের কথা জানান।
শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
মোমেন তার বক্তৃতায় উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, সমুদ্র এবং সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার করুন।’
সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অংশ নেন মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল খুরশেদ আলম, পর্তুগালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক আহসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমুদ্র ও সমুদ্রের টেকসই উন্নয়নকে বেগবান করতে সমুদ্রবিজ্ঞান চর্চার ওপর গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ প্রতিবেশী উভয় দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমার সমস্যা সমাধান করেছে এবং যৌথভাবে সম্পদ কাজে লাগাতে প্রস্তুত। অবৈধ, আনরিপোর্টেড এবং আনরেগুলেটেড মাছ ধরা দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার তার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের মোট প্রায় ৪.৪ শতাংশ এলাকাকে সামুদ্রিক সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং ২০১৯ সালে জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় তা বাস্তবায়ন করেছে।’
তিনি বলেন, সরকার বাংলাদেশ জাহাজ চলাচল আইনকে সংশোধন করেছে। সরকার রিসাইকেল অ্যাক্ট-২০১৮ মেনে চলছে। ২০২৩ সালের মধ্যে হংকং কনভেনশন মেনে চলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০২৩ সালের মধ্যে নিরাপদ জাহাজ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নতুন পদক্ষেপেরও ঘোষণা করেছে। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ উৎপাদন নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য