দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেড্রো সানচেজ।
স্থানীয় সময় সোমবার সকালে মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্পেন ১৯৭২ সালের ১২ মে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশ এ বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে।
বার্তায় প্রেসিডেন্ট পেড্রো সানচেজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের অনন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল, সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে মাদ্রিদে ২০২০ সালে গৃহীত ‘টুগেদার ফর অ্যা রেইনফোর্সড মাল্টিলেটারালিজম’ শীর্ষক যৌথ ঘোষণাপত্রে থাকা বহুপাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থার নীতির প্রতি বাংলাদেশের অবিচল সমর্থন ও অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন স্পেনের প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে ঢাকায় স্পেনের আবাসিক দূতাবাস চালুর পর থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও বেগবান ও বহুধা বিস্তৃত হয়েছে।
‘স্পেন বর্তমানে বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য। স্পেনীয় উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে তাদের উপস্থিতি সম্প্রসারণে ক্রমবর্ধমানভাবে আগ্রহী।’
বাণিজ্যের পরিধি ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিবিধ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে স্পেন বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবে বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন পেড্রো সানচেজ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্পেনের প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।
বার্তায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালে মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনের (সিওপি ২৫) পার্শ্ববৈঠকে স্পেনীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি স্মরণ করেন।
শেখ হাসিনার আশা, সামনের দিনগুলোতে শিল্প ও প্রযুক্তি সহায়তা, ডিজিটাল কানেকটিভিটি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, লজিস্টিকস ও পরিবহন অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং গবেষণাক্ষেত্রে পারস্পরিক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণ করা হবে।
তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে স্পেনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান।
বার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্পেনের প্রেসিডেন্টকে পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় পাচ্ছে মেহেরপুর জেলা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এ লক্ষ্যে একটি বিল পাস হয়েছে।
অধিবেশনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ‘মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুর বিল-২০২৩’ উত্থাপন করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধী দলীয় সদস্যরা। তাদের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর বিলের ওপর আনীত সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করেন স্পিকার।
১০ জানুয়ারি সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আদেশ-১৯৭৩ এর বিধানাবঈ পরিপালন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য।
আচার্য নির্ধারিত শর্তে স্বনামধন্য একজন শিক্ষাবিদকে চার বছরের জন্য উপাচার্য পদে নিয়োগ দেবেন। কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে বা অন্য কোনোভাবে উপাচার্য হিসেবে দুই মেয়াদের বেশি নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। আচার্য যেকোনো সময় উপাচার্যের নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন।
বিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কর্মচারীদের চাকরির শর্তাবলী নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বেতনভোগী শিক্ষক ও কর্মচারী, সংসদ সদস্য বা স্থানীয় সরকারের কোনো পদে নির্বাচিত হতে প্রার্থী হতে চাইলে ওই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে ইস্তফা দেবেন।
বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনে আচার্যের অনুমোদন নিয়ে ‘বিজনেস ইনকিউবেটর’ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। বিজনেস ইনকিউবেটর হলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থাপিত বা পরিচালিত কোনো বিজনেস ইনকিউবেটর, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সব সহযোগিতা দেয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কর্তৃক কোনো উদ্ভাবন, মেধাস্বত্ব, আবিষ্কার বা প্রক্রিয়া, বাজারজাত এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য সহযোগিতা প্রদান।
আরও পড়ুন:বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনের ফল নিয়ে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম যে অভিযোগ করেছেন তার ভিত্তি নেই বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার (ইসি) রাশেদা সুলতানা নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে বুধবারের ওই ভোট নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘হিরো আলম অসেন্তাষ হয়েছে। ওনার অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে সকাল থেকে আমরা ডিসি সাহেবের সঙ্গে, জেলা নির্বাচন অফিসাদের সঙ্গে; সবার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, এ ধরনের কোনো বিষয় তাদের কাছে নাই। তদের রেজাল্ট শতভাগ ঠিক।’
বিএনপির ছেড়ে দেয়া ছয় আসনে ভোট হয় বুধবার। একতারা প্রতীক নিয়ে এই নির্বাচনে হিরো আলম বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বগুড়া-৪ আসনে উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি।
পরে রাতে বগুড়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে ভোটের ফল পাল্টে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হিরো আলম। ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, ভোট চুরি হয়নি, ফলাফল ছিনতাই হয়েছে। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন এই প্রার্থী।
ছয়টি আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট জানিয়ে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন,‘আমাদের কাছে যে রেজাল্ট শিটগুলো আসছে, আসলে কোথাও কোনো ব্যতয় নাই।’
হিরো আলমের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘একজন প্রার্থী যখন হেরে যায়, আমাদের দেশের সংস্কৃতিটা কিন্তু এরকমই। হেরে গেলে প্রশ্নবিদ্ধ করার নানান ধরনের প্রবণতা কিন্তু আছে আমাদের দেশে।
‘এটা শুধু হিরো আলম সাহেব নয়, যতগুলো ইলেকশন করলাম সব জায়গায়তে এ ধরনের প্রবণতা আমার লক্ষ্য করেছি।’
এজেন্টের হাতে ফলাফল দেয়া হয়নি- এমন প্রশ্নে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন,‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, নন্দীগ্রামে খুব একটা এজন্টে দেননি প্রার্থী। ডিসি সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন- আমি আর এসপি অনেকগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। আমরা ওখানে গিয়ে ওনার (হিরো আলমের) এজন্ট পাই নাই।’
কাহালু উপজেলায় হিরো আলমের কিছু এজেন্ট ছিল জানিয়ে তিনি বলেন,‘কাহালু ওনার নিজের এলাকা। এজন্টেই ছিল না। অন্যান্য প্রার্থীর কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ নাই। উনি হেরে গেছেন তাই এ ধরনের অভিযোগ করছেন।
‘উনি বরাবরই বলেছেন ভোট ভালো হয়েছে। উনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, হেরে গেলেও ফলাফল মেনে নেব। হেরে গেছে কষ্ট হইছে। কষ্ট উনি নানাভাবে প্রকাশ করছেন। এটা উনি করতে পারেন। একজন মানুষ বললে তো হয় না। প্রমাণ থাকতে হবে।’
হিরো আলমের আসনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল ওয়েবসাইটে দেবেন কি না- এমন প্রশ্নে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন,‘আমরা নিশ্চয়ই দেব। আমাদের ওয়েবসোইটে দিতে সমস্যা কোথায়? ফলাফল এখনো হয় নাই। যেটা পেয়েছি সেটা তো বেসরকারি। আসার পরে দিয়ে দেব।’
হিরো আলম আদালতে যাবেন, গেলে অসুবিধা তো নাই মন্তব্য করে এই কমিশনার বলেন,‘অভিযোগ দেয়া আর অভিযোগ এস্টাবলিশ করা দুটোর মধ্যে অনেক তফাৎ।’
ভোটের আগে আচরণবিধি খুব বেশি ভঙ্গ হয়েছে বলে মনে করেন না ইসি রাশেদা সুলতানা। বলেন, ‘কোনো প্রার্থী কোনো লিখিত অভিযোগ করে নাই। নির্বাচনের পূর্বের প্রস্তুতি সন্তোষজনক ছিল। ভোটের দিন ভোটের ভেতরে কোনো অনিয়ম হয় নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দু-একটা দেখতে পেরেছি। তবে ইভিএম নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নাই। পুরোপুরি ভোটটা সন্তোষজনক হয়েছে।’
আরও পড়ুন:এ বছর বেসরকারিভাবে হজে যেতে সর্বনিম্ন খরচ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা হবে বলে জানিয়েছে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (হাব)।
রাজধানীর নয়াপল্টনের হোটেল ভিক্টরিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে হাবের সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ঘোষণার সময় এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হজে গিয়ে কোরবানি দিতে হলে আলাদা টাকা খরচ করতে হবে।
প্যাকেজে ঘোষিত অর্থের মধ্যে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়ার জন্য গুনতে হবে ২ লাখ ৪ হাজার ৪৪৪ টাকা। সার্ভিস চার্জ হিসেবে নেয়া হবে ১ লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। বাকি টাকা অন্যান্য খাতের জন্য নেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বেসরকারিভাবে হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হবে।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন হজ হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার কথা রয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের।
এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন।
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার খরচ পড়বে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা।
আরও পড়ুন:সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশে উন্নয়ন হচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল সেক্টর-৪-এ বৃহস্পতিবার ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেলপথ নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে আমরা ক্ষমতায় আছি বলে, সরকারের ধারাবাহিকতা রয়েছে বলে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।
‘এ দেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন নিয়ে বাঁচতে পারে। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এ দেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ থামাতে পারবে না।’
নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের জনগণ যতদিন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে আছে, ততদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে কেউ সরকারের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। পাতাল রেল নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক স্থাপিত হল এবং পাতাল রেলে বাংলাদেশের নবযাত্রা শুরু হল।
‘বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, দেশ আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি আর কেউ রুখতে পারবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এটা সম্ভব হয়েছে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে বলে। এই গণতন্ত্র আছে বলেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা শুরু করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। ইনশাআল্লাহ ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগ নেতা সিরাজ হত্যার প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণের জন্য ১৯৯৪ সালে ঠিক একই স্থানে নৌকাযোগে এসেছিলেন। বৃহস্পতিবার তিনি সেই স্থানেই পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি এবং বাংলাদেশে জাইকা’র চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুছি তোমোহাইড।
বিএনপির ছেড়ে দেয়া সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের ভোট পাওয়ার কথা তুলে ধরে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি। এত বছর মানুষের জন্য কাজ করায় এবং উপকার করায় তারা আমাদেরকে ভোট দিচ্ছে। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আমরা পাচ্ছি। কাজের মধ্য দিয়ে জনগণের মন জয় করেই আমরা ভোট পাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেটা করতে সমর্থ হয়েছি। এ পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র ছিল। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। আমরা জনগণের সেবা করতে এসেছি, জনগণের সেবক। আমরা জনগণের ভাগ্য তৈরি করতে এসেছি, তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আসিনি। আমরা জনগণকে দিতে এসেছি, তাই এখানে দুর্নীতির প্রশ্ন আসে না।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দেশ দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলছে। আমাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকাকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে মেট্রোরেল চালু করা। আমরা সেটা করেছি। আওয়ামী লীগ কথা দিলে কথা রাখে।’
রাজধানীতে মোট ছয়টি মেট্রোরেল হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ লাইনগুলো করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে ফিজিবিলিটি স্টাডিও শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে তিনটি মেট্রোরেল লাইন করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জকে একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে অনেক কাজ হচ্ছে। তিনটি ফাস্ট ট্র্যাকসহ ৪৬টি ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নতুন শহর পূর্বাচল গড়ে তোলা হচ্ছে। পূর্বাচল একটি স্মার্ট সিটি হবে। সে সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ শহরকে আমরা স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
আরও পড়ুন:ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায় পাতাল রেলপথ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল সেক্টর-৪-এ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে নামফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি।
ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উড়াল মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এর এক মাস পর প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই বৃহস্পতিবার পাতাল রেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন হলো।
এই পাতাল রেলপথ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সাল নাগাদ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। তখন এটি দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।
এর নির্মাণ ব্যয়ের ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা দেবে জাইকা। আর বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।
প্রকল্পের নথি বলছে, এমআরটি লাইন-১ রেলপথ হবে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পাতাল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এ রুটে স্টেশন হবে ১২টি।
এগুলো হলো বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক বা নর্দা, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।
অন্যদিকে নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ হবে উড়ালপথ, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। এ অংশে স্টেশন থাকবে ৯টি, তবে এ রুটে নতুন বাজার ও যমুনা ফিউচার পার্ক বা নর্দা স্টেশন দুটি বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে পাতালে নির্মাণ হবে। আর ৭টি স্টেশন হবে উড়াল। এ স্টেশনগুলো হলো বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে ডিএমটিসিএলের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক বলেন, সকাল ১১টায় পূর্বাচল সেক্টর ৪-এ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। সেখানে এক লাখের বেশি লোকসমাগম হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলের লাইন-১-এর ডিপো নির্মাণ হবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পিতলগঞ্জে। এ কাজের জন্য জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে ডিএমটিসিএল। পুরো প্রকল্পটির কাজ ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।
প্যাকেজে সিপি-১-এর আওতায় ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়ন করার কাজটি শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর, যেখানে ডিপো নির্মাণ করা হবে, সেখানে অনেক উঁচু-নিচু জায়গা আছে। সেগুলো ভরাট করার কাজ শুরু হবে। তারপর সেখানেই ডিপো নির্মাণ করা হবে।
এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘এমআরটি লাইন-৬-এ আমরা যে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে পরিচালনা করছি, সেটা এখন সাড়ে ৩ মিনিট পরপর চলতে পারে। এটাকে আমরা কমিয়ে আনতে পারব। অন্যদিকে, এমআরটি লাইন-১-এ ১০০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করব। এটাকে হেডওয়ে বলে। ১০০ সেকেন্ডের মধ্যে একটার পর আরেকটা ট্রেনে আসবে, এটি আর কমানোর সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১-এর স্টেশনগুলো রাস্তার নিচে তিন তলা হবে। এটি নির্মাণে জনসাধারণের যাতে ভোগান্তি না হয়, সে কথা মাথায় রেখে এখানে আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।’
এর আগে ডিএমটিসিএল এমডি বলেছিলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মাটি খনন করার টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) আমাদের এখানেই প্রস্তুত করার। তাহলে আমাদের নিজেদের ক্যাপাবিলিটি বাড়বে। এই কাজটি কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মাটির নিচে ৩০ মিটার আবার কোথাও কোথাও ৭০ মিটার নিচে করা হবে।’
খননকাজের সময় জনসাধারণের চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘টিবিএম মেশিন যখন মাটির নিচে কাজ করবে, তখন রাস্তার ওপর বোঝা যাবে না যে, মাটির নিচে কাজ হচ্ছে। সমস্যা একটু হবে স্টেশন নির্মাণের সময়।
‘এই রুটের (পাতাল) যে ১২টি স্টেশন থাকবে, সেখানে আমরা ওপেন কাট পদ্ধতিতে কাজ করব। ওই স্টেশন এলাকায় সর্বোচ্চ ছয় মাস কাজ চলবে। এ সময় আমরা রাস্তার অর্ধেকটা অংশ চালু রেখে বাকি অর্ধেক অংশে কাজ শেষ করব। পরে এই অংশ মাটি ভরাট করে পরের অংশ ধরব। এই ছয় মাস এসব জায়গায় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। এ ছাড়া এই কাজে অন্য কোনো জায়গায় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে না। এমআরটি-৬ নির্মাণে দীর্ঘ সময় যে ভোগান্তি হয়েছিল, এমআরটি-১-এ সেটা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজ যেহেতু মাটির ৩০ মিটার নিচে করা হবে, সেহেতু এখানে ইউটিলিটি লাইন সরানোরও কোনো প্রয়োজন হবে না। আর স্টেশন এলাকায় আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব। এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্টেশন এলাকা দিয়ে সামান্য যেসব ইউটিলিটি গেছে, এই ইউটিলিটি যে অবস্থায়ই আছে তাকে সেই অবস্থায়ই রেখে মাটির নিচের দিকে চলে যাব এবং মাটি ভরাট করে দেব।’
এদিকে ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, এমআরটি-১-এর প্রথমিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর এমআরটি-১ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাপানের বহুজাতিক কনসোর্টিয়ামের নিপ্পন কোয়াই করপোরেশন কোম্পানি জেভির সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এই কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি আটটি প্রতিষ্ঠান। সেই চুক্তিতে সই করেন ডিএমটিসিএলের এমডি এম এ এন সিদ্দিক এবং নিপ্পন কোয়াই কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি নাও কি কুদো।
এরপর গত বছরের ২৩ নভেম্বর এমআরটি লাইন-১-এর ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়। তখন বলা হয় এর আওতায় নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী মৌজায় প্রায় ৯২ দশমিক ৯৭২৫ একর জমি অধিগ্রহণে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৯০ হেক্টর বা ৮৮ দশমিক ৭১ একর ভূমিতে উন্নয়নকাজ করা হবে। এ কাজের ঠিকাদারিতে রয়েছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে স্বস্তি দিতে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। এরই মধ্যে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬)-এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন হয়েছে। এবার কাজ শুরুর হচ্ছে এমআরটি-১।
২০৩০ সালের মধ্যে এই ছয়টি মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে শেষ হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪-এর নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
আরও পড়ুন:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উড়াল মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এর এক মাস পর প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই বৃহস্পতিবার পাতাল ট্রেনের যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।
এই পাতাল রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি-১) প্রকল্পের আওতায়। এটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
আজ পূর্বাচল সেক্টর ৪-এ এমআরটি লাইন-১-এর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওই সময় তিনি জনসমক্ষে উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন সরকারপ্রধান। সেখানে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে।
৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ ২০২৬ সাল নাগাদ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। তখন এটি দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে জানিয়েছে ডিএমটিসিএল।
এর নির্মাণ ব্যয়ের ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা দেবে জাইকা। আর বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে।
প্রকল্পের নথি বলছে, এমআরটি লাইন-১ রেলপথ হবে উড়াল ও পাতালের সমন্বয়ে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত পাতাল অংশের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এ রুটে স্টেশন হবে ১২টি।
এগুলো হলো বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক বা নর্দা, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর।
অন্যদিকে নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত নির্মাণ হবে উড়ালপথ, যার দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। এ অংশে স্টেশন থাকবে ৯টি, তবে এ রুটে নতুন বাজার ও যমুনা ফিউচার পার্ক বা নর্দা স্টেশন দুটি বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে পাতালে নির্মাণ হবে। আর ৭টি স্টেশন হবে উড়াল। এ স্টেশনগুলো হলো বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল ও পিতলগঞ্জ ডিপো।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে ডিএমটিসিএলের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক বলেন, সকাল ১১টায় পূর্বাচল সেক্টর ৪-এ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর সুধী সমাবেশে ভাষণ দেবেন। সেখানে এক লাখের বেশি লোকসমাগম হবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছে।
তিনি বলেন, মেট্রোরেলের লাইন-১-এর ডিপো নির্মাণ হবে নারায়ণগঞ্জ জেলার পিতলগঞ্জে। এ কাজের জন্য জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও দেশীয় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে ডিএমটিসিএল। পুরো প্রকল্পটির কাজ ১২টি প্যাকেজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে।
প্যাকেজে সিপি-১-এর আওতায় ডিপো এলাকায় ভূমি উন্নয়ন করার কাজটি শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর, যেখানে ডিপো নির্মাণ করা হবে, সেখানে অনেক উঁচু-নিচু জায়গা আছে। সেগুলো ভরাট করার কাজ শুরু হবে। তারপর সেখানেই ডিপো নির্মাণ করা হবে।
এমএএন ছিদ্দিক বলেন, ‘এমআরটি লাইন-৬-এ আমরা যে কন্ট্রোল সেন্টার থেকে পরিচালনা করছি, সেটা এখন সাড়ে ৩ মিনিট পরপর চলতে পারে। এটাকে আমরা কমিয়ে আনতে পারব। অন্যদিকে, এমআরটি লাইন-১-এ ১০০ সেকেন্ড দিয়ে শুরু করব। এটাকে হেডওয়ে বলে। ১০০ সেকেন্ডের মধ্যে একটার পর আরেকটা ট্রেনে আসবে, এটি আর কমানোর সুযোগ নেই।’
তিনি বলেন, ‘এমআরটি লাইন-১-এর স্টেশনগুলো রাস্তার নিচে তিন তলা হবে। এটি নির্মাণে জনসাধারণের যাতে ভোগান্তি না হয়, সে কথা মাথায় রেখে এখানে আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।’
এর আগে ডিএমটিসিএল এমডি বলেছিলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি মাটি খনন করার টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) আমাদের এখানেই প্রস্তুত করার। তাহলে আমাদের নিজেদের ক্যাপাবিলিটি বাড়বে। এই কাজটি কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত মাটির নিচে ৩০ মিটার আবার কোথাও কোথাও ৭০ মিটার নিচে করা হবে।’
খননকাজের সময় জনসাধারণের চলাচলে কোনো অসুবিধা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘টিবিএম মেশিন যখন মাটির নিচে কাজ করবে, তখন রাস্তার ওপর বোঝা যাবে না যে, মাটির নিচে কাজ হচ্ছে। সমস্যা একটু হবে স্টেশন নির্মাণের সময়।
‘এই রুটের (পাতাল) যে ১২টি স্টেশন থাকবে, সেখানে আমরা ওপেন কাট পদ্ধতিতে কাজ করব। ওই স্টেশন এলাকায় সর্বোচ্চ ছয় মাস কাজ চলবে। এ সময় আমরা রাস্তার অর্ধেকটা অংশ চালু রেখে বাকি অর্ধেক অংশে কাজ শেষ করব। পরে এই অংশ মাটি ভরাট করে পরের অংশ ধরব। এই ছয় মাস এসব জায়গায় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। এ ছাড়া এই কাজে অন্য কোনো জায়গায় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট করতে হবে না। এমআরটি-৬ নির্মাণে দীর্ঘ সময় যে ভোগান্তি হয়েছিল, এমআরটি-১-এ সেটা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই কাজ যেহেতু মাটির ৩০ মিটার নিচে করা হবে, সেহেতু এখানে ইউটিলিটি লাইন সরানোরও কোনো প্রয়োজন হবে না। আর স্টেশন এলাকায় আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করব। এই পদ্ধতির মাধ্যমে স্টেশন এলাকা দিয়ে সামান্য যেসব ইউটিলিটি গেছে, এই ইউটিলিটি যে অবস্থায়ই আছে তাকে সেই অবস্থায়ই রেখে মাটির নিচের দিকে চলে যাব এবং মাটি ভরাট করে দেব।’
এদিকে ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, এমআরটি-১-এর প্রথমিক কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এরপর ২০২২ সালের ২৩ অক্টোবর এমআরটি-১ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাপানের বহুজাতিক কনসোর্টিয়ামের নিপ্পন কোয়াই করপোরেশন কোম্পানি জেভির সঙ্গে চুক্তি সই হয়। এই কনসোর্টিয়ামে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দেশি-বিদেশি আটটি প্রতিষ্ঠান। সেই চুক্তিতে সই করেন ডিএমটিসিএলের এমডি এম এ এন সিদ্দিক এবং নিপ্পন কোয়াই কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিনিধি নাও কি কুদো।
এরপর গত বছরের ২৩ নভেম্বর এমআরটি লাইন-১-এর ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়নের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়। তখন বলা হয় এর আওতায় নারায়ণগঞ্জের পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী মৌজায় প্রায় ৯২ দশমিক ৯৭২৫ একর জমি অধিগ্রহণে গেজেট প্রকাশ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৯০ হেক্টর বা ৮৮ দশমিক ৭১ একর ভূমিতে উন্নয়নকাজ করা হবে। এ কাজের ঠিকাদারিতে রয়েছে জাপানের টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, রাজধানীবাসীকে যানজট থেকে স্বস্তি দিতে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছয়টি মেট্রোরেলের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। এরই মধ্যে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট-৬ (এমআরটি-৬)-এর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত উদ্বোধন হয়েছে। এবার কাজ শুরুর হচ্ছে এমআরটি-১।
২০৩০ সালের মধ্যে এই ছয়টি মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে শেষ হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫: সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪-এর নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
আরও পড়ুন:রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অমর একুশে বইমেলায় তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘আমার জীবননীতি, আমার রাজনীতি’-এর মোড়ক উন্মোচন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির অফিস কক্ষে প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতির সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য