দিনাজপুরের বিরলে ধানবোঝাই ট্রাকের চাপায় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ মোটরসাইকেলের তিন আরোহী নিহত হয়েছেন।
বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কাছে রঘুনাথপুর চেয়ারম্যান মোড়ে রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মঙ্গলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ৪৪ বছর বয়সী রাকিব হাসান চৌধুরী, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার ভাংবাড়ী গ্রামের ২৪ বছর বয়সী সাদ বিন ওসমান ও একই গ্রামের ২৫ বছর বয়সী তামিম ইসলাম।
বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রাতে একটি প্রাইভেটকারে দিনাজপুর শহর থেকে ভাংবাড়ী ফিরছিলেন সাদ, তার মা জরিনা বেগম ও তামিম। পথে গাড়ির তেল শেষ হয়ে গেলে সাদ ও তামিম দেড় কিলো দূরের একটি পাম্পে তেল কিনতে যান।
তেল কিনে ফেরার সময় কোনো যানবাহন না পেয়ে তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় মেম্বার রাকিব মোটরসাইকেলে মঙ্গলপুর বাজারের দিকে আসছিলেন। তিনি দুজনকে তার মোটরসাইকেলে তুলে নেন। এরপর ধানবোঝাই একটি ট্রাক তাদের চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়।
ওসি আরও জানান, পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে পুলিশ।
ঢাকার সাভারে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হত্যার ঘটনায় তোলপাড়, সেটির অধ্যক্ষ সাইফুল হাসানকে শোকজ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। অনুমতি ছাড়া নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদান করায় সাত কর্মদিবসের মধ্য সুষ্পষ্ট ব্যাখা চাওয়া হয়েছে।
বুধবার ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক আবু তালেব মো. মোয়াজ্জেম হোসেন নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
গত ৩০ জুন আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বরাবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে আমাকে কারণ দর্শানোর একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কলেজের এক শিক্ষক মোবাইলে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন।’
কী বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্কুল শাখাটা বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে চালানো এটার বিষয়ে কীভাবে চালাচ্ছি সেটা জানতে চেয়েছেন। সাত কর্মদিবেসর মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। এর আগে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড থেকে একটা তদন্ত টিম এসেছিলেন। তারাই প্রতিবেদন দিয়েছিলেন এই বিষয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আসলে উৎপল স্যারকে হত্যার বিচার অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটা বড় চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সব স্কুলগুলো স্কুল উপজেলার অনুমতি নিয়ে এভাবেই চলে। দেখেন, আমরা এতদিন ধরে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছি, উপবৃত্তি পাচ্ছি। তাহলে এতদিন তো শিক্ষা বোর্ড আমাদের বলে নাই যে আপনারা বন্ধ করেন।’
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘হাজী ইউনুছ আলী কলেজের অধ্যক্ষকে আমরা শোকজ করেছি। ওনার নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি কোথা থেকে কীভাবে পেয়েছেন এই বিষয়টার ব্যাখ্যা চেয়েছি আমরা।’
গত ২৫ জুন কলেজ প্রাঙ্গণে মেয়েদের ক্রিকেট খেলার সময় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জিতুর বিরুদ্ধে।
পরদিন সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় উৎপলের। একই দিন নিহতের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ঘটনার চার দিন পর ২৯ জুন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হোসেনকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একই দিন রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় জিতু।
৫ দিনের রিমান্ড শেষে ৬ জুলাই আদালতে শিক্ষক উৎপলকে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন জিতু।
এ নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে অনুমোদন ছাড়াই প্রাক প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ক্লাস নেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়।
আরও পড়ুন:কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করায় গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
বুধবার কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জেলা কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দুপুরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহীদ ময়েজউদ্দিন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেষ হয়।
পরে উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিলুপ্ত কমিটির কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. তানভীর মোল্লা।
সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদ হাসানের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পরিমল চন্দ্র ঘোষ, কামরুল ইলাম, মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন, জামালপুর ইউপি চেয়ামন্যান মো. খাইরুল আলম, যুবলীগ নেতা কাজী হারুণ-অর-রশিদ টিপু, বাদল হোসেন, রেজাউর রহমান আশরাফী খোকন, ছাত্রলীগ সাদমান সাকিব আলভী, এমআই লিকন প্রমুখ।
এ সময় বক্তারা গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে কঠোর সমালোচনা করেন। তারা জানান, কমিটি বিলুপ্ত করলেও জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ স্থানীয় সাংসদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকির সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
প্রতিবাদে উপজেলা ছাত্রলীগের সব ইউনিট গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগকে অবাঞ্চিত ঘোষাণা করে। পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে অর্থ দাবির অভিযোগও করেন বিলুপ্ত কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন। এ সংগঠনে একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কারো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। সাংগঠনিক নিয়মে আমরা কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় কমিটি বিলুপ্ত করেছি। স্থানীয় সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি আপার সাথেও কথা বলেছি। তবে তিনি চেয়েছেন এই কমিটি নির্বাচন পর্যন্ত বহাল থাকুক। কিন্তু তিনি বিলুপ্ত বা গঠনের কোনো সিদ্ধান্ত দিলেও তা আমাদের সাংগঠনিক নিয়মবহির্ভূত। কাজেই সিদ্ধান্ত দিলেও তা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেন, ‘পারস্পারিক শ্রদ্ধা আর সম্মানের ভিত্তিতেই আমরা সাধরণ মানুষের জন্য রাজনীতি করে আসছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গাজীপুর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ তো আর ভিন্ন কোনো গ্রহের বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কেউ না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রতৃপ্রতিম সংগঠন। তবে জেলা ছাত্রলীগ সেই পরিচয় দেয়নি। তারা কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার আগে আমার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ তো করেইনি, এমনকি কোনো সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন মনে করেনি।’
এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় তানভীর-ওয়াহিদ কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি আগামী ৩০ জুলাই গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের কার্যালয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি/সম্পাদক পদে আগ্রহীদের কাছ থেকে সিভি আহ্বান করা হয়।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহের তারাকান্দায় আব্দুস সামাদ নামে এক কিশোরকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই ভাইসহ চারজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক ৬ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক একেএম রওশন জাহান বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
আদালত পরিদর্শক প্রসূন কান্তি দাস নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিকেলে দুই ভাইসহ চার আসামিকে আদালতে তোলে সাত দিনের রিমান্ড চায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিচারক বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’
গ্রেপ্তাররা হলেন উপজেলার দাদরা এলাকার ১৯ বছরের রবিন মিয়া, তার বড় ভাই ২৪ বছরের রোহান মিয়া, ওই উপজেলার হাটপাড়া গ্রামের ১৯ বছরের মুস্তাফিজুর রহমান নাঈম ও পুঙ্গুয়াই গ্রামের ২২ বছরের শাহীনুর ইসলাম।
জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।
এর আগে নিহত সামাদের বাবা শাহজাহান মিয়া সোমবার বিকেলে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।
নিহত ১৪ বছরের সামাদ দাদরা গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গ্রেপ্তার রবিন মিয়া নিহত রিকশাচালক সামাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। এ সুবাদে প্রায়ই রবিনের বাড়িতে আসা-যাওয়া করত সামাদ। এক সময় রবিনের ছোট বোনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সামাদের। বিষয়টি জানতে পারে রবিন। পরে তার বোনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেও ব্যর্থ হয়। পরে সামাদকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে রবিন ও তার ভাই রোহান।
‘পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে সামাদের অটোরিকশা নিয়ে বিভিন্ন জায়গা ঘোরাফেরা করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে নিয়ে যায় রবিন, রোহান ও নাঈম। সেখানে ঝোপের আড়ালে আগেই ওৎ পেতে ছিল শাহীনসহ আরও দুজন। সামাদকে সেখানে নেয়ার পর প্লাস্টিকের দড়ি ও জাল গলায় প্যাঁচিয়ে হত্যা করে স্কুলের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে রাখে তারা।’
ওসি আরও বলেন, ‘সামাদের মরদেহ পাওয়ার পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অভিযানে নামে জেলা ডিবি পুলিশের একাধিক টিম। জেলার ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তারাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের মামলার বরাতে বলেন, ‘সোমবার বিকেল ৩টার দিকে খাবার খেয়ে বাড়ি থেকে রিকশা নিয়ে বের হয় সামাদ। কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও বাড়ি ফেরেনি। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন স্থানীয় বাজারসহ স্বজনদের বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। পরে রাত ১০টার দিকে স্থানীয় পঙ্গুয়াই উমেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের সড়কে সামাদের রিকশাটি পাওয়া গেলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
‘মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে সামাদের স্বজনরা ওই স্কুলটিতে অনুসন্ধান চালালে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা ভাঙা দেখতে পায়। ঢাকনা সরানোর পর ভেতরে পাওয়া যায় সামাদের মরদেহ।’
ওসি আরও বলেন, ‘থানায় খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।’
আরও পড়ুন:ঈদের আগে-পরে সাত দিন মোটর সাইকেলে করে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যাতায়াত নিষিদ্ধের পর এবার নৌপথে দুই চাকার যানটি বহন নিষিদ্ধ হয়ে গেল।
এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়ে গেছে। আগামী ১১ দিন এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। অর্থাৎ ঈদের পর আরও পাঁচ দিন লঞ্চে বা ফেরিতে করে বাইক পরিবহন করা যাবে না।
সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল গত ১২ জুন। আর সেটি কার্যকর হয়েছে ২৪ দিন পর।
বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম খান।
গত ৩ জুলাই মহাসড়কে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বাইক চলাচল সাত দিনের জন্য নিষেধ করার কথা জানানো হয়। ৭ থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।
এই আদেশের কারণে ঈদে এবার বাইকে করে বাড়ি ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গেল, যে সিদ্ধান্তটি বাইকারদেরকে তীব্রভাবে অসন্তুষ্ট করেছে।
গত ঈদে লাখো মানুষ বাইক নিয়ে বাড়ি ফেরে। ফলে বিভিন্ন সড়কে আগে যে দীর্ঘ যানজট দেখা যেত সেটি ছিল না। গণপরিবহনেও ছিল না বাড়তি ভিড়। প্রতি বছর বাসের টিকিটের জন্য যাত্রীদের যে হাপিত্যেস দেখা দেয়, সেটিও দেখা যায়নি। ফলে মানুষের ঈদ যাত্রা ছিল নির্বিঘ্ন।
এরপরই পরিবহন মালিকরা মহাসড়কে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে।
মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধের পেছনে দুই চাকার দ্রুতগামী এই যানের দুর্ঘটনাপ্রবণতাকে সামনে আনা হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে সড়কে দুর্ঘটনায় যত মৃত্যু হয় তার মধ্যে এককভাবে ৪০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি দায়ী বাইক। মহাসড়কে গতির লড়াইয়ে নেমে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারায় চালকরা। আর মহাসড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার খুবই বেশি।
তবে বাইক নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার ঈদ যাত্রায় আগের ভোগান্তি দেখা দেয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাইকাররা রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করেও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরের দিনই সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার নিষিদ্ধ করে কর্তৃপক্ষ। সেতু দিয়ে ঈদের আগে আর বাইক চলাচলের সুযোগ দেয়া হবে না বলেও জানানো হয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মাওয়া পর্যন্ত দিয়ে ফেরি দিয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে আবার বাইকে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছিল বাইকাররা। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তে এই সুযোগও বন্ধ হয়ে গেল।
আরও পড়ুন:ময়মনসিংহ সদরে লাইলী আক্তার নামে এক নারীকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন মামলার ১ নম্বর আসামি খোকন মিয়া ওরফে কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস।
তিনি বলেন, ‘আগুনে পুড়িয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় লাইলী আক্তারকে। ঘটনাটি পিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল আইজিপি জানতে পেরে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে আমাদের টিম। ইতোমধ্যে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সহযোগী ৪ ও ৭ নম্বর আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও মামলার ১ নম্বর আসামি কাজল ও তার স্ত্রী ২ নম্বর আসামি নাসিমা আক্তার কনা সুচতুরভাবে আত্মগোপনে ছিলেন।’
গৌতম কুমার জানান, ছায়া তদন্তের একপর্যায়ে পিবিআই ময়মনসিংহের টিম গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও পিবিআই হেডকোয়ার্টারের এলআইসি টিমের সহযোগিতায় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। দুজনকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে গত ২৮ জুন রাতে নিহতের স্বামী আব্দুর রশিদ আটজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। ওইদিন রাতেই ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে মো. জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী আছমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন খোকন মিয়া ওরফে কাজল, তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কনা, গোলাম মোস্তফার ছেলে কামাল মিয়া, বাবুল, কামাল মিয়ার স্ত্রী নাসিমা আক্তার বৃষ্টি, বাবুলের স্ত্রী রোমান।
মামলার বরাতে কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন জানান, সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিবেশী খুকি আক্তারের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু দুই পরিবার সেই সম্পর্ক মেনে নিচ্ছিল না।
গত ২৬ জুন পালিয়ে যান সিরাজুল ও খুকি। এতে ক্ষিপ্ত হয় খুকির পরিবারের লোকজন। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তারা ছেলের বাড়িতে এসে ছেলের মা লাইলীকে একা পেয়ে প্রথমে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে হাত-পা তার দিয়ে বেঁধে লাইলীর শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন তারা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় স্থানীয়রা লাইলীকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত ২৮ জুন সন্ধ্যা ৬টার দিকে লাইলীর মৃত্যু হয়।
ফারুক হোসেন বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে এখনও আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। আজ হস্তান্তর করা হলে আজই অথবা আগামীকাল ময়মনসিংহ মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হবে।’
এ ছাড়া মামলার বাকি আসামিরা বিভিন্ন জায়গায় পালিয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক।
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কুমিল্লার পশুর হাটগুলো জমে উঠেছে। ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হাটে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। বাজার জমে উঠেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে।
ক্রেতারা বলছেন, কুমিল্লায় এবার যেসব গরু এসেছে, বেশির ভাগই বড় সাইজের। কিন্তু হাটে চাহিদা বেশি মাঝারি সাইজের গরুর। আর এসব গরুর দামও বেশি।
বুধবার সকাল থেকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার, বাবুবাজার, ফকিরবাজার, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিরশ্বান্নী, নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের নেউরা হাট ঘুরে দেখা যায় প্রচুর গরু এসেছে। পছন্দের পশুটি কিনতে ঘুরে ঘুরে দেখছেন, বিক্রেতার সঙ্গে করছেন দরদাম।
নগরীর নেউরা পশুর হাটে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, হাটে বড় গরুর আধিক্য। এ হাটে ১৫টি গরু এনেছেন খামারি জুয়েল মিয়া। সবচেয়ে ছোট গরুটির দাম চাচ্ছেন আড়াই লাখ টাকা। তার কাছে সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকার গরু রয়েছে।
আদর্শ সদর উপজেলার জালুয়াপাড়া এলাকার হাটে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু ভারতীয় গরু আছে। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের গরু নিয়ে এসেছেন।
নগরীর বেশ কয়েকটি পশুর হাট ঘুরেছেন ক্রেতা মাহফুজুল হক। ৮০ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে গরু খুঁজেছেন তিনি। বাজেটের মধ্যে গরু কিনতে না পেরে বাসায় চলে যান। নিউজবাংলাকে মাহফুজুল হক বলেন, ‘মাঝারি আকারের গরুর অনেক দাম। আজ মনমতো গরু পাইনি। বৃহস্পতিবার না হয় শুক্রবার বাজার দেখে গরু কিনব।’
বুড়িচং উপজেলার ফকিরবাজারে বিক্রেতা আজিজুল হক মাঝারি সাইজের একটি লাল গরুর দাম হাঁকেন ১ লাখ ৩০ হাজার। ক্রেতা জানে আলম গরুটির দাম বলেন ৯০ হাজার। বিক্রেতা একদাম ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন। দরকষাকষি করে দামে না মেলায় একপর্যায়ে গরুটি কেনেননি।
বুধবার জানে আলমের মতো অনেক ক্রেতাকে গরু কিনতে না পেরে ফিরে যেতে দেখা যায়। তাদের আশা বৃহস্পতিববার বা শুক্রবার গরু কিনতে পারবেন।
মাঝারি সাইজের গরুর দাম বেশি চাওয়ার কথা বলছেন অন্যান্য হাঁটের ক্রেতারাও।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রামের মিরশ্বান্নী বাজারের গরু বেপারি আবুল খায়ের বলেন, ‘ভুসি, খইলসহ পশু খাবারের যে দাম বেড়েছে, তা গত ১০ বছরে সর্বোচ্চ। এভাবে গরুর খাদ্যের দাম বাড়লে খামারিরা সামনে গরু পালনে নিরুৎসাহিত হবেন।’
নওগাঁ থেকে আসা ব্যবসায়ী আবদুর রশীদ বলেন, ‘গত বছর দাম কমায় বিক্রি করিনি। এক বছরে মাঝারি গরুগুলো অনেক বড় হয়েছে। একটু দামের আশায় নগরীর চাঁনপুর গাউছিয়া পশুর হাটে ৩০টি গরু এনেছি।’
গরুর দেখভালের জন্য রশীদ ছাড়াও তার দুই ভাইসহ মোট ছয়জন এসেছেন এ হাটে। সব গরু সময়ের মধ্য বিক্রি হলে ভালো। না হলে ঈদের দিন পর্যন্ত থাকবেন এখানে।
টাঙ্গাইল থেকে আসা ব্যবসায়ী হারুন অর রশীদ বলেন, গত বছর শেষের দিকে দাম কমে যাওয়ায় ২৫টি গরু অবিক্রীত থাকে। এই এক বছর ধরে গরুগুলোকে লালনপালন করেছেন। তার গরু দেড় লাখ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকছেন।
তবে দাম যেমনই হোক, জেলায় পর্যাপ্ত পশু আছে বলে জানিয়েছেন, কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা জেলায় গত বছর ৩৬৩টি হাটে ২ লাখ ২৮ হাজার ৬৪২ কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। সে বছর উদ্বৃত্ত পশু ছিল ১১ হাজার ৬২৫টি। এ বছর পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ২ লাখ ৪৮ হাজার। তবে আমাদের হিসাবমতে এ বছর চাহিদা মিটিয়ে ১০ হাজার ৪৩২ কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য