অসুস্থ হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খানকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার বিকেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে অল্প সময় পরেই তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘রোববার ড. মঈন খান তার নিজ এলাকা পলাশ উপজেলায় ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত জিন্দা পার্কে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করেন। কর্মশালায় তিনি দীর্ঘ সময় নিয়ে বক্তব্য দেন।
‘দুপুরে তিনি গরমে অসুস্থ বোধ করলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ পরেই চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করেন।’
মঈন খানের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়নি। তিনি হাসপাতালে ডা. আতিকুর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন।
বিএনপি নেতা মঈন খানের সুস্থতার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে বলে জানান শামসুদ্দিন দিদার।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে এবং তার মুক্তির দাবিতে রাজপথে পথযাত্রা করেছেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে থেকে রোববার আইনজীবীদের মোর্চা ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের (ইউএলএফ) ব্যনারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
পদযাত্রাটি সুপ্রিম কোর্টের মাজার গেট দিয়ে শিক্ষাভবন, কদম ফোয়ারা, জাতীয় ঈদগাহ ময়দান হয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেটের সামনে গিয়ে শেষ করে।
কয়েক শ আইনজীবীর অংশগ্রহণে এ পদযাত্রা থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়।
এ সময় বক্তব্য দেন ইউএলএফের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি এবং বার কাউন্সিলর সদস্য জয়নুল আবেদিন।
তিনি বলেন, ‘এই সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হত্যা করেছে। আমাদের বিচার বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার জন্য স্বাধীন হতে পারেনি। আজ প্রধানমন্ত্রী বলছেন স্যাংশনের ভয় পান না। কিন্তু আমরা দেশের মানুষ লজ্জা পাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক হয়েছে, এইদিন দিন না আরও দিন আছে। এইদিন নিয়ে যাবে আপনাদের পদত্যাগের কাছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এ আইনজীবী বলেন, ‘অক্টোবরের মধ্যে আপনাকে বিদায় নিতে হবে। আপনি যত তাড়াতাড়ি দেশে এসে পদত্যাগ করবেন ততই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই দেশে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। দয়া করে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। অন্যথায় আইনজীবী ও জনতা এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
আইনজীবী মহসিন রশিদ বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া হলে আমরা জনতার সাথে আন্দোলন করে উনাকে মুক্ত করে আনব।’
বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করার কথা বলে তামাশা করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে আপনাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করলে যে কোনো উপায়ে তা প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, জনগণের মতামতের ওপর ভিত্তি করেই এ দেশের গণতন্ত্রের পথরেখা নির্ধারিত হবে। অন্য কোনো দেশের ভিসানীতি বাংলাদেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্রে কোনো প্রভাব রাখতে পারবে না।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এ বিবৃতিটি পাঠান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রতি দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের উপর আস্থা রেখেই সরকার পরিচালনা করে আসছে। জনগণই আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার যে কোনো ধরনের অপতৎপরতাকে প্রতিহত করবে দেশের জনগণ। আওয়ামী লীগ কোনো ভিসানীতির প্রয়োগ বা নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না। আওয়ামী লীগ পরোয়া করে দেশের জনগণকে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা বরাবরের মতো তাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টা করছে। বিএনপি নেতৃবৃন্দের মনে রাখা উচিত, তারা কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারে নাই। বরং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উদার মানবিকতার কারণে খালেদা জিয়া একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হয়েও নিজ বাসায় বসবাস করছেন এবং নিজের পছন্দমতো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছেন। কিন্তু বিএনপি মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে; বিষয়টি নিয়ে আইনবিরোধী কথাবার্তা বলছে।
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা না রেখে গায়ের জোরে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দাবি আদায়ের জন্য তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কাদের।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ এ নেতা বিএনপিকে ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা থেকে সরে আসুন। জাতিকে বিভক্ত করার দুরভিসন্ধি থেকে বিএনপিকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক চেতনা ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করার দায় তাদের নিতে হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের তিন গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর আরও দুটি আবাসিক হলে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি। এ সময় রামদাসহ বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কেউ আটক হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হল ও স্যার এ এফ রহমান হলে রোববার বিকেল ৪টার দিকে অভিযান শুরু হয়। প্রক্টরিয়াল বডি, হল প্রভোস্ট ও পুলিশ সদস্যরা এই অভিযান চালান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নাজেমুল আলম বলেন, ‘আমরা পুলিশের সহযোগিতায় দুটি হলে তল্লাশি চালিয়েছি। এ সময় দুই হলের বেশ কয়েকটি কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। এ অবস্থায় দরোজায় লাগানো তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ৮টি রামদা, ১০টি লোহার রড, ১৬/১৭টি পাইপ, বিপুল পরিমাণে লাঠিসোঁটা ও পাথর উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করতে পারিনি। অনেকে কক্ষ ছেড়ে পালিয়ে গেছে।’
এর আগে শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ জালাল ও শাহ আমানত হলে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচ বহিরাগতকে আটক করা হয়। এ সময় দুই হল থেকে রড-রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার থেকে চবি শাখা ছাত্রলীগের তিন গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ভিন্ন ঘটনায় রোববার পর্যন্ত থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ। সংবাদ প্রকাশের জের ধরে রোববার ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিকের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে।
সবশেষ রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন:আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে বলে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রোববার বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে সমাবেশ থেকে এই আল্টিমেটাম দেন বিএনপি মহসাচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিন, শুধু আমেরিকা নয়, দেশের জনগণও আপনাদের স্যাংশন দিচ্ছে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। খালেদা জিয়া অন্তত অসুস্থ, অনেক অনেক বেশি অসুস্থ; চিকিৎসকরা বলেছেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। বাংলাদেশে আর তার চিকিৎসা নেই। তাকে বিদেশে না নেয়া গেলে বাঁচানো দুষ্কর হতে পারে।’
সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন দেখলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জিততে পারবে না, তখনই তারা সংসদে তা বাতিল করেছে। আজকে গায়ের মধ্যে আগুন লেগেছে।
‘বাইডেন সঙ্গে সপরিবারে ছবি তুলে খুব হেসেছিল। বলেছিলেন আর আমেরিকা যাবেন না, অথচ তিনি আমেরিকা থাকা অবস্থায় ভিসানীতি কার্যকর করা হলো। ভিসানীতি বাংলাদেশের মতো একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্য অপমানজনক, যা আমাদের দেখতে হলো।’
কিছু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা একটা বেআইনি সরকারকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দমন পীড়ন করছে বলেও অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তা আজকে আবার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। একটা গণবিরোধী সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনার জন্য আপনারা আর অবস্থান নেবেন না। কারণ, এখন দেশের মানুষ জেগে উঠেছে। যতই চেষ্টা করেন, এই দেশের মানুষকে আর ঘরে ফেরাতে পারবেন না।’
বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে থাকব। শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা প্রতিবাদ করে যাব। শান্তিপূর্ণ এই প্রতিবাদের কথা শুনে শেখ হাসিনার শুভবুদ্ধির উদয় হবে, এটাই আশা। দেশের মানুষ জানে কী করে দাবি আদায় করতে হয়।’
সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিভিন্ন কুঞ্জে কুঞ্জে আমলারা মিটিং করে বেড়াচ্ছেন। কারণ যে কোনো মূল্যে গুম-খুন করেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। গুম, খুন, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে এতোটা মরিয়া যে, যতটা আওয়ামী লীগও মরিয়া না।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শেখ হাসিনার ছেলের বিদেশে বাজেয়াপ্ত করা সম্পত্তি এদেশের জনগণের, এর জন্য আমাদের বহু কথা আছে। আপনি (শেখ হাসিনা) যেভাবে সহজে বলেছেন আর দেখছেন বিষয়টা এতো সহজ নয়।’
বিএনপির কয়েক হাজার নেতা–কর্মীর উপস্থিতির কারণে বেলা দুইটা থেকেই রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় দক্ষিণ পাশের সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আড়াইটার পর থেকে আরেক পাশের সড়কেও যান চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। আজকের কর্মসূচিতে পুলিশের উপস্থিতি তেমনটা দেখা যায়নি।
চাকরি দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার মামলায় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে রাজশাহীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১।
রোববার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মারুফ আল্লাম এই রায় ঘোষণা করেন। মামলার অপর দুই আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর আবু সাঈদ চাঁদকে কারাগারে পাঠানো হয়। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দেয়ার মামলায় তিনি আগে থেকেই রাজশাহী কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে আসামি আবু সাঈদ চাঁদ, আলিম উদ্দিন এবং ওয়াজনবী রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় বামনদীঘি চরঝিকড়া টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ওই স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে বাদী ও সাক্ষীদের কাছে চাঁদা দাবি করেন।
২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসের বিভিন্ন তারিখে তাদের কাছ থেকে আসামিরা মোট ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা নেন। পরে নিয়োগপত্রের ভিত্তিতে তারা ওই স্কুলে যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করলেও তাদের অনুকূলে কোনো বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। এমনকি শিক্ষার্থীদেরও কোনো নিবন্ধন হয়নি।
কিছুদিন পর তারা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, স্কুলটির কোনো অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও আসামিরা জেনেশুনে তাদের ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছেন। পরে ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই মাসুদ রানা নামে এক ভুক্তভোগী তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
আসামি পক্ষের আইনজীবী শামসাদ বেগম মিতালী বলেন, ‘মামলায় আবু সাঈদ চাঁদকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় বাকি দু’জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মামলার সঙ্গে আবু সাঈদ চাঁদ কোনোভাবেই জড়িত নন। এখানে তার কোনো সই-স্বাক্ষর কিছুই ছিল না। তিনি ওই সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর এটাই তার অপরাধ। এজন্যই তাকে সাজা দেয়া হয়েছে।’
এদিকে রায় ঘোষণার পর আবু সাঈদ চাঁদের ছেলে মো. অলিভ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি এই রায়কে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই রায় দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য, আমার বাবা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। তবে নির্বাচনে বাবা অংশগ্রহণ করতে না পারলে ওই আসনে বাবার পক্ষে আমি অংশগ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সুতরাং ভিসা নীতি নিয়ে কারো পুলকিত হওয়ার কিছু নেই।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ৯১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা এবং বহুমাত্রিক সম্পর্ক দিন দিন দৃঢ়তর হচ্ছে। সুতরাং কোনো একটা ভিসা নীতি বা কিছু নিয়ে কারও পুলকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই নীতি তাদের বিরুদ্ধেই প্রযোজ্য হবে, যারা নির্বাচনে বাধা দেবে।
‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ সেটিই প্রমাণ করে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু পরাশক্তি আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু সেইসব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমাদের পূর্বসূরী মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিলেন।
‘আজকেও অনেকেই চোখ রাঙ্গায়, অনেক দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনার ধমনীতে, শিরায় বঙ্গবন্ধুর রক্তস্রোত প্রবাহমান, যে রক্ত পরাভব মানে না, আপস জানে না। সমস্ত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, তাদেরই নতুন সংস্করণ হচ্ছে বিএনপি। তাদের সহযোগী হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, যারা দেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করেনি, স্বাধীনতা সংগ্রামে এদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ হয়ে অস্ত্রধারণ করেছিল। তাই এই বিএনপি-জামাত চক্র আজকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে, আগামী নির্বাচনকে ভন্ডুল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।’
আগামী নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সেই নির্বাচনে যদি বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসে আমরা স্বাগত জানাই। তবে কেউ না আসলেও কোনো অসুবিধা নাই।
‘এই নির্বাচন আমাদের, এই দেশ আমাদের, এখানে নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি আমরা ঠিক করবো। আমাদেরকে কারো গণতন্ত্র শেখাতে হবে না। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা আমরা জানি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।’
এর আগে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবিরোধীদের প্রতিরোধে প্রীতিলতা, সূর্যসেনের মতো বিপ্লবীরা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান বলেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার প্রথম বাঙালি শহীদ নারী যিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দিয়েছেন। ’
তিনি বলেন, ‘সূর্যসেনের বিপ্লবী দলের সদস্য অসীম সাহসী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যখন পুরুষের বেশে ইউরোপীয়ন ক্লাব সফলভাবে আক্রমণ করে ফিরে আসছিলেন, তখন তিনি গুলিবিদ্ধ হন। নির্যাতনের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ব্রিটিশ শত্রুপক্ষ বিদ্রোহের পরিকল্পনা যেন না জানতে পারে, সে জন্য তিনি পটাসিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন।’
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেভাবে দেশমাতৃকার জন্য জীবন দিয়েছে, উপমহাদেশের মুক্তিসংগ্রাম এবং আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাদের এই আত্মদান বাঙালিদের প্রেরণা যুগিয়েছে, ভবিষ্যতেও যোগাবে।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কার্যকরী সভাপতি স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের সংগীতশিল্পী মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য বলরাম পোদ্দার, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, একুশে পদকপ্রাপ্ত স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল ও ডা. অরূপ রতন চৌধুরী প্রমুখ সভায় বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন:দফায় দফায় সংঘর্ষের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
রোববার দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্তির কথা জানানো হয়।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই শাখা ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটিতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের রেজাউল হক রুবেলকে সভাপতি ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ইকবাল হোসেন টিপুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আড়াই বছর পর বিলুপ্ত করা হলো।
কমিটি গঠনের পর দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন, বগি রাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধ করে হল ভিত্তিক রাজনীতি চালু করা, অনুষদ কমিটি গঠনসহ নানা প্রতিশ্রুতি দেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক। তবে এসব প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পারলেও এ কমিটি বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে বছরজুড়ে।
নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সাড়ে তিন বছরে একটি বর্ধিত সভা করতে পারেনি এই কমিটি। হল ও অনুষদ কমিটির আশ্বাস দিয়ে পার করেছে বছরের পর বছর।
সর্বশেষ শুক্রবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিনটি গ্রুপের মধ্যে ভিন্ন ঘটনায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চারজন আহত হন।
পূর্বরোষের জেরে ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে সংঘর্ষে জড়ায় শাখা ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিক্সটি নাইন ও সিএফসি গ্রুপের একাংশের (সহ-সভাপতির অনুসারী) কর্মীরা। অন্যদিকে একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে নেতার লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ান বিজয় ও সিএফসি গ্রুপের আরেকাংশের (সভাপতির অনুসারী) কর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও প্রধান প্রকৌশলীকে মারধরসহ এসব ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ প্রচারের ঘটনায় রোববার মারধর করা হয়েছে প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে। মারধরের সময় তাকে ছাত্রলীগ নিয়ে সংবাদ না করার জন্য হুমকি দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য