× হোম জাতীয় রাজধানী সারা দেশ অনুসন্ধান বিশেষ রাজনীতি আইন-অপরাধ ফলোআপ কৃষি বিজ্ঞান চাকরি-ক্যারিয়ার প্রযুক্তি উদ্যোগ আয়োজন ফোরাম অন্যান্য ঐতিহ্য বিনোদন সাহিত্য ইভেন্ট শিল্প উৎসব ধর্ম ট্রেন্ড রূপচর্চা টিপস ফুড অ্যান্ড ট্রাভেল সোশ্যাল মিডিয়া বিচিত্র সিটিজেন জার্নালিজম ব্যাংক পুঁজিবাজার বিমা বাজার অন্যান্য ট্রান্সজেন্ডার নারী পুরুষ নির্বাচন রেস অন্যান্য স্বপ্ন বাজেট আরব বিশ্ব পরিবেশ কী-কেন ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান বিশ্লেষণ ইন্টারভিউ মুজিব শতবর্ষ ভিডিও ক্রিকেট প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়া আমেরিকা ইউরোপ সিনেমা নাটক মিউজিক শোবিজ অন্যান্য ক্যাম্পাস পরীক্ষা শিক্ষক গবেষণা অন্যান্য কোভিড ১৯ শারীরিক স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য যৌনতা-প্রজনন অন্যান্য উদ্ভাবন আফ্রিকা ফুটবল ভাষান্তর অন্যান্য ব্লকচেইন অন্যান্য পডকাস্ট বাংলা কনভার্টার নামাজের সময়সূচি আমাদের সম্পর্কে যোগাযোগ প্রাইভেসি পলিসি

বাংলাদেশ
Decreased yield of hormones
google_news print-icon

হরমোনে কমেছে হাঁড়িভাঙার ফলন

আম
আমগাছে কীটনাশক দিচ্ছেন চাষি। ছবি: নিউজবাংলা
স্থানীয় আমবাগান মালিক ও চাষিদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেপারিরা বাগান কিনছেন। তাদের বাগানের আমের আকার বড়, দেখতেও সুন্দর। তাদের দেখে রংপুরের আমবাগান মালিক এবং বাগান কেনা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা গাছের গোড়ায় হরমোন দিয়েছেন।

রংপুরের অর্থনীতিতে যোগ হওয়া হাঁড়িভাঙা আমে এবার কম ফলন হয়েছে। চাষিরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে এত কম ফলন দেখেননি তারা।

কী কারণে গাছে আমের ফলন কম, তা সঠিকভাবে বলতে না পারলেও প্রতি বছর আমগাছে নিষিদ্ধ ‘কালটার্ন’ নামক হরমোন প্রয়োগে এমনটা হতে পারে বলে ধারণা কৃষিসংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের আখিরাহাট, লালপুর, রুপসি, গাছুয়াপাড়া, মাঠের হাট, লালপুকুর, পদাগঞ্জহাট, পাইকারহাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় সব আমগাছেই গুটি এসেছে। তবে প্রতিটি গাছে যে পরিমাণ আমের গুটি রয়েছে, তা অন্যান্য বছরের চেয়ে অর্ধেক।

স্থানীয় আমবাগান মালিক ও চাষিদের অভিযোগ, কয়েক বছর ধরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেপারিরা বাগান কিনছেন। তাদের বাগানের আমের আকার বড়, দেখতেও সুন্দর। তাদের দেখে রংপুরের আমবাগান মালিক এবং বাগান কেনা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা গাছের গোড়ায় হরমোন দিয়েছেন।

এ ছাড়া গাছে দিয়েছেন মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক। এর প্রভাবও পড়তে পারে।

একশ্রেণির কীটনাশক ব্যবসায়ী এই হরমোন গোপনে বিক্রি করছেন। চাষিরা দোকান থেকে কিনে তা গাছে প্রয়োগ করেছেন।

খোড়াগাছের জারুল্লাপুর গ্রামের আমবাগান মালিক মাহসিন আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেসব ব্যবসায়ী এক বা দুই বছরের জন্য আমবাগান ইজারা নেন, তাদের অনেকেই বেশি আম পাওয়ার লোভে গোপনে এই হরমোন ব্যবহার করছেন।

‘বছর দুয়েক আগে থেকে আমাদের এলাকার অনেকেই তাদের গাছে হরমোন ব্যবহার করেছেন। গাছের গোড়া খুঁড়ে ওষুধ দিয়েছেন। এতে আমের সাইজ বড় হয়েছে, কিন্তু এবার কম ধরেছে।’

মিঠাপুকুরের আখিরাহাটের আমবাগান মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বেপারিরা এসে বাগান লিজ নেয়, তারপর মেলা ওষুধ দেয়, হরমোন দেয়। তাতে গাছের ক্ষতি তো আসবে, অবশ্যই আসবে। এবার কম আসছে, দুই-চার বছর পর হয়তো আম নাও ধরতে পারে।’

হরমোনে কমেছে হাঁড়িভাঙার ফলন

খোড়াগাছের লালপুর গ্রামের নুর ইসলাম বলেন, ‘আমার ৫০ শতকের তিনটা বাগান আছে। ফলন কম হইছে। মানে, ফুল খুব আসছে কিন্তু আম টেকে নাই। আমরা বাগান মালিকরা ভয়ে আছি, ভবিষ্যতে বাগানের যে কী অবস্থা হবে, গাছের কী হবে, আম ধরবে কি না?’

লালপুর গ্রামের আমচাষি আবু বক্কর বলেন, ‘আমগাছের বৈশিষ্ট্য হলো এক বছর বেশি ফলন হলে পরের বছর তুলনামূলক কম হয়। গাছ তার স্বাভাবিক নিয়মে দীর্ঘমেয়াদে ফল দেয়। আমরা অনেকেই হরমোন দিই নাই। যারা দেই নাই, তাদের বাগানে আবার ভালো আম আছে।’

‘আমাদের এলাকায় অন্য আবাদ নাই। আমরা সর্বস্ব বিনিয়োগ করে আমের বাগান করি। আমবাগানের ওপর আমাদের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে। ব্যবসায়ীরা এসে সেই গাছের ওপর হরমোন প্রয়োগ করে অত্যাচার করছে। এতে আমরা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় আছি।’

খোড়াগাছ এলাকার জারুল্লাপুরে চারটি বাগান কিনেছেন রবিউল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রায় আট বছর থেকে আমি বাগান কিনি। এবারও কিনছি। প্রতিটি বাগানে যখন ফুল আসে, তখনই কেনা হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়।

‘যখন গাছে ফুল আসে তখন গাছের গোড়া খুঁড়ে একবার হরমোন দিছি। এরপর দুবার কীটনাশক দিছি। বছরে একবার করে হরমোন আর তিন থেকে চারবার করে কীটনাশক দিলে আম ভালো ধরে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসে হাঁড়িভাঙার বাগান কেনা শহিদুল্লাহ শহীদ বলেন, ‘আমরা কখনও হরমোন দিই না। যখন মকুল আসে তখন কীটনাশক এবং পরে ভিটামিন দিই। অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে ব্লেম (অভিযোগ) দিচ্ছে বলে শুনতেছি, এটা না জেনে বলা ঠিক না।’

তদারকির অভাব কৃষি বিভাগের

রংপুর মেট্রোপলিটনসহ জেলার আটটি উপজেলায় এবার হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে এবার আমের আবাদ হয়েছে।

এর মধ্যে মেট্রোপলিটন এলাকায় ২৫ হেক্টর, রংপুর সদর উপজেলায় ৬০, কাউনিয়া উপজেলায় ১০, গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৩৭, মিঠাপুকুর উপজেলায় ১ হাজার ২৭০, পীরগঞ্জ উপজেলায় ৬০, পীরগাছায় ১০, বদরগঞ্জে ৪০০ এবং তারাগঞ্জে ১৫ হেক্টর রয়েছে।

আমবাগান চাষি এবং মালিকদের অভিযোগ, আমচাষিদের এমন দুর্দিনে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। আমগাছের অবস্থা এবং পোকার ধরন দেখে দোকান থেকে ওষুধ এনে ছিটানো হচ্ছে।

রুপসি গাছুয়াপাড়া গ্রামের চাষি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এক বিঘা জমিত আমার বাগান আছে। যখন ফুল (মুকুল) আসছে, তখন একবার গাছোত হরমোন দিছি। তারপর কিছুদিন পর পোকার মতো ধরছে, পরে দোকান থাকি কীটনাশক আনি দিছি। একনা কমছে। ফের দেমো।’

এমন অন্তত ১০ চাষির সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। সবার প্রায় একই অভিযোগ, মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সময়মতো পাওয়া যায় না।

হরমোনে কমেছে হাঁড়িভাঙার ফলন

কীটনাশক দোকানই ভরসা চাষিদের

মাঠের হাটের সুলতান আলী নামে আমবাগানি বলেন, ‘গাছ এবার সকসকা (আম নাই)। যেলা মইল (মুকুল) আসিল খোকনের দোকান থাকি ওষুধ আনি দিল, কিছু হইল নে। যামরা যামরা (যারা যারা) সাদা ওষুধটা দিছে তার বাগানোত কিছু কিছু আম টেকছে (টিকছে)।

‘হামার গাছের ডাল একবারে সকসকা। কিছুই নাই। এত টেকা-পইসে খরচ করনো, সোউগ পানিত ভাসি গেইছে। আর বাগান বেইচপের নই। নিজে থাকি আবাদ করমো।’

মিঠাপুকুরের এরশাদ মোড় এলাকার কীটনাশক বিক্রেতা আখেরুজ্জাম রাজা বলেন, ‘বর্তমানে ফ্লোরা, বায়োফার্টি, কমপ্লেসান সুপার, পিজিআর এগুলাই বেশি ইউজ হচ্ছে। বোতলের গায়ে মাত্রা দেয়া আছে। যে নির্দেশনা দেয়া আছে, সে অনুযায়ী দিতে বলি। অনেক ক্ষেত্রে চাষিরা ওদের প্রয়োজন মতো নেয়। ওরা দিতে দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। জানে এই পরিমাণ দিতে হবে, সে অনুযায়ী নেয়।

‘এ ছাড়া মাঝে মাঝে কৃষি অফিসের বিএসরা (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা) আসে বসে, তারাও পরামর্শ দেয়। আমি হরমোন বিক্রি করি না। আমার দোকানে হরমোন নেই।’

আরেক কীটনাশক বিক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার বলেন, ‘হরমোন তো আমাদের কাছে নেই, আছে ভিটামিন। কৃষকরা এসে নাম ধরে চায় আমরা দিই। ওরা ওদের মতো করে ভিটামিন ও কীটনাশক ব্যবহার করে।’

কী বলছে কৃষি বিভাগ

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে সংবাদ এসেছে গোপনে আমে হরমোন ব্যবহার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কালটার্ন নামে হরমোন ব্যবহার করছেন আমের আকার বড় করার জন্য। তারা হয়তো তাৎক্ষণিক সুফল পাবেন, কিন্তু কালটার্ন হরমোন ব্যবহারে গাছের দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হয়।’

কৃষি কর্মকর্তাদের না পাওয়ার অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হাঁড়িভাঙা আমের মানসম্মত উৎপাদন নিশ্চিত করতে হরমোন প্রয়োগকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এই হরমোন যেন আম ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে উঠান বৈঠক, মাঠ বৈঠক করা হচ্ছে। তবে আমাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কোনো ওষুধের দোকানে এ হরমোন পাননি। শুনেছি এটি ভারত থেকে চোরাইপথে আসে। গোপনে বিক্রি হতে পারে। এ জন্য চাষিদের সজাগ থাকতে হবে।’

‘এই হরমোন নিয়ে আমাদের গবেষণা চলছে। আমরা খুব নিকট ভবিষ্যতে এই হরমোনের ফলাফলটা জানতে পারব’, যোগ করেন ওবায়দুর।

তিনি আরও বলেন, ‘কখনও কখনও গাছে একবার ভালো ফলন হলে অন্যবার কম হয়। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। সেটা এবার হয়েছে কি না সে জন্য আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

হরমোনে কমেছে হাঁড়িভাঙার ফলন

হরমোন নিয়ে কী বলছেন বিজ্ঞানীরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আট-দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই হরমোনের ব্যবহার হচ্ছে। এতে যেটা সমস্যা হয়, প্রচুর পরিমাণে মকুল আসে। প্রচুর আম হয়। পাতা কম বের হয় শুধু আমই চলে আসে।

‘কৃষকরা এটা গোপনে গোপনে ব্যবহার করেন। এরপর ধীরে ধীরে গাছের শক্তি কমে যায়। যে কারণে আমের উৎপাদন বা আম কম ধরে। এমনকি ঠিকমতো গাছকে খাবার না দিলে গাছ মরে যায়। আমরা গবেষণা করে দেখেছি, বিভিন্ন এলাকায় গাছ মরেও গেছে।’

ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জে খুব প্রেসারক্রিয়েট করেছি, যাতে এটা কেউ ব্যবহার না করে। রাতে এটা ব্যবহার করায় বহু চাপাচাপি করেও ঠেকানো যায় না। এখন এটা সরকারিভাবে অনুমোদ দেয়া হয়েছে। তবে মাত্রা ঠিকঠাক ব্যবহার করতে হবে। মাত্রা বেশি হলে সমস্যা হয়।

‘এই হরমোন ব্যবহার করলে গাছকে প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য খাবার দিতে হবে। একবার ব্যবহার করলে পরের তিন বছর ব্যবহার করা যায় না, যাবেও না।’

রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের সম্প্রসারক ও চাষি আব্দুস সালাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাগানে হরমোন ব্যবহারের অভিযোগ কিছুদিন ধরে শুনতেছি। আমি প্রশাসনকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে অনুরোধ করব। এই আম প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। অনেক সুনাম রয়েছে। ধীরে ধীরে এই আমকে নষ্ট করা যাবে না।’

আরও পড়ুন:
আমিরাতের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক
আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট আর নেই
শত বিঘার আমবাগানে জাদুঘর
রাজশাহীতে গুটি আম পাড়া শুরু আজ
বিলাস পণ্য আমদানি কমাতে আরও কড়াকড়ি

মন্তব্য

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ
The advice given by the expert to protect the mango pieces in the heat wave

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। ছবি: নিউজবাংলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

চলমান তাপপ্রবাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রধান অর্থকরী ফসল আমের গুটি ঝরে পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। এমনিতেই এ বছর মুকুল এসেছিল কম, গাছে যে কয়টা আমের গুটি টিকে আছে, তাপদাহের প্রভাবে সেগুলোর বৃদ্ধিও ঠিকমত হচ্ছে না বলে দাবি বাগান মালিকদের। এরই মধ্যে রোদের তাপে শুকিয়ে সেগুলো ঝরে পড়তে শুরু করেছে।

আমের গুটি যাতে শুকিয়ে না যায়, তার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, তাপদাহ থেকে আমের গুটি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে; প্রয়োজনে গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শও তাদের।

‘আমের রাজধানী’ খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার কিছুটা দেরিতেই এসেছিল মুকুল। পরিমাণেও ছিল অন্য বছরের তুলনায় বেশ কম। তারপরও শুরু থেকেই বাড়তি যত্নে বাগানগুলোতে মুকুল থেকে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে আম। তবে কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহ ভীষণ শঙ্কায় ফেলেছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের। গাছে থাকা আমের গুটির বৃদ্ধি ও টিকে থাকা নিয়ে তারা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

তাপপ্রবাহে আমের গুটি টেকাতে যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞ

ছবি: নিউজবাংলা

জেলার মহারাজপুর এলাকার আম বাগান মালিক রাজন ইসলাম বলেন, ‘খরার কারণে আমের গুটির বড় হচ্ছে না, বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। আকাশের পানি না হলে হয়? সেচ দিয়াও খুব বেশি কাজ হচ্ছে না, শ্যালো (সেচ পাম্প) যতক্ষণ চলছে ততক্ষন পানি থাকছে। বন্ধ করলেই সব তিলিকে (দ্রুত) শুষে লিছে (নিচ্ছে)।’

আম সংগঠনের নেতারাও বলছেন একই কথা। এ বছরের শুরু থেকেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে তারা আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। চলমান তাপপ্রবাহ তাদের সেই দুশ্চিন্তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের আম ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আহসান হাবিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর শীতের কারণে মুকুল আসতে দেরি হয়েছে, তার ওপর মার্চ মাসে অসময়ের বৃষ্টিতে একবার মুকুল ঝরে যায়।

‘তখন বৃষ্টির দরকার ছিলো না, তাই বৃষ্টির কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়েছিল, আর এখন বৃষ্টির অভাবে গাছে যে কয়টা আমের গুটি ছিল, তাও ঝরে যাচ্ছে। তাপপ্রবাহ আরও কিছুদিন চললে ব্যবসায়ীদের আরও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই এ বছর আম উৎপাদনের খরচ সব ক্ষেত্রেই বেড়ে গেছে। আবার এখন সেচ দেয়ার জন্য অনেকের খরচ আরও বাড়ছে। সবমিলিয়ে এ বছর খুব বেশি স্বস্তিতে নেই আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।’

তবে এখনই আশাহত না হয়ে বাগানের সঠিক পরিচর্যা চালিয়ে যাওয়া ও তাপপ্রবাহ যতদিন চলবে ততদিন পর্যন্ত বাগানে সেচ দেয়া, তাপমাত্রা আরও বাড়লে সকালে বা বিকেলে গাছে সরাসারি পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান।

বাগান মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের বড় গাছগুলোতে এবার মুকুল কম এসেছে, তবে ছোট গাছে ভালো মুকুল আছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে কৃষি বিভাগ যে সাড়ে চার লাখ টন আমের উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার কাছাকাছি অন্তত যাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।’

আরও পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড ৪২.৬ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা
দাবদাহে পুড়ছে ইউরোপ, মরছে মানুষ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি
ভারতে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে পাখিরা
৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চুয়াডাঙ্গায় হাসফাঁস

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Cultivation of Philippine foreign variety MD 2 pineapple started in Comilla

ফিলিপাইনের আনারস চাষ কুমিল্লায়

ফিলিপাইনের আনারস চাষ কুমিল্লায় কুমিল্লায় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ফিলিপাইনের আনারসের জাত এমডি-২ চাষ শুরু হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এমডি-২ জাতের আনারসের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক সুনাম আছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। এ জাতের আনারস দেশীয় আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি।’

কুমিল্লা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে জেলায় শুরু হয়েছে আনারসের ফিলিপাইনের একটি জাত।

এ উদ্যোগে ‍যুক্ত একজন কৃষি কর্মকর্তা জাতটির বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, এ বছর আনারস চাষ সফল হলে আগামী বছর আরও বড় পরিসরে এ জাতের চাষ করা হবে।

রোপণ করা চারা থেকে আগামী মাস ছয়েকের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভাষ্য, বিদেশি আনারসের এ জাতটির নাম এমডি-২। এটির আদি নিবাস ফিলিপাইন। এর আগে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় এ জাতের আনারস চাষ হয়েছে। এ আনারসের চামড়া পাতলা ও প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।

অধিদপ্তরের কুমিল্লা কার্যালয়ের উপপরিচালক আইয়ুব মাহমুদ বলেন, ‘এমডি-২ জাতের আনারসের আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক সুনাম আছে। বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় বেশ জনপ্রিয়। এ জাতের আনারস দেশীয় আনারসের তুলনায় অনেক বেশি মিষ্টি।

‘এ আনারস দ্রুত পচে না। প্রথমবারের মতো এ বছর আমরা পুরো কুমিল্লা জেলায় দেড় হাজার চারা বিতরণ করেছি। জেলায় আদর্শ সদর, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় বেশ কিছু টিলা ও পাহাড় রয়েছে। ছাড়াও লালমাই পাহাড়কে টার্গেট করে আমরা চারা বিতরণ করেছি। আশা করছি কুমিল্লার মাটি ও আবহাওয়া এমডি ২ জাতের আনারস চাষে বেশ উপযোগী হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ফলন ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর আমরা সফল হলে আমাদের আগামী বছরে আরও ব্যাপকভাবে এমডি-২ জাতের আনারস চাষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Harvesting of paddy started in Howar

হাওরে ধান কাটা শুরু

হাওরে ধান কাটা শুরু বৈশাখের শুরুতেই সুনামগঞ্জের হাওরে ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। ছবি: নিউজবাংলা
হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ ধানের গালিচায় সোনালী রং ধরে গেছে। আর সে সুবাদে বৈশাখের শুরুতেই কৃষকরা ধান কাটতে নেমে পড়েছেন হাওরে। প্রকৃতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার আগেই পুরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

হাওরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় আতঙ্ক অতিবৃষ্টি আর আকষ্মিক বন্যা। প্রতিবছর বৈশাখ আসার আগেই পাহাড়ি ঢল আর বন্যার আতঙ্কে থাকেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল রক্ষায় অনেক সময়ই অপরিপক্ব ধান গাছে কাস্তে চালাতে হয় তাদের।

চলতি মৌসুমে হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমিতে সবুজ ধানের গালিচায় সোনালী রং ধরে গেছে। আর সে সুবাদে বৈশাখের শুরুতেই কৃষকরা ধান কাটতে নেমে পড়েছেন হাওরে। প্রকৃতি প্রতিকূল হয়ে ওঠার আগেই পুরো ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলার ১৩৭টি হাওরে এক ফসলি বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন দেখে বেজায় খুশি কৃষকরা। তারা আশা করছেন, অনুকূল আবহাওয়ার সুবাদে এবার তারা শতভাগ ধান গোলায় তুলতে পারবেন।

কৃষি অফিস বলছে, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরে ১০ লাখ কৃষক বোরো ধানের আবাদ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার সুনামগঞ্জে ২৬২ হেক্টর বেশি জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে। ধানগুলো বর্তমানে হাওরে কাচা-পাকা অবস্থায় রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার বরদল গ্রামের কৃষক মন্তাজ মিয়া বলেন, ‘আমি বিআর-৯২ ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝামাঝি সময়ে কিছুটা পানির সংকট ছিল। তবে এতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ফলন ভালো হয়েছে। আর চার থেকে পাঁচ দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে আমার জমির ধান কাটা শেষ করতে পারব।’

সুনামগঞ্জ সদরের গৌরারং ইউনিয়নের কৃষক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ধানের ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে ধান এখন পাকা ও আধপাকা অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে শিলাবৃষ্টি হলে আমরা মারা পড়বো। আশা করছি আনন্দের সঙ্গেই আমরা সব ধান ঘরে তুলতে পারব।’

শাল্লা উপজেলার আঙ্গারুয়া গ্রামের কৃষক আজমান গণি বলেন, ‘সঠিক সময়ে হারভেস্টার মেশিন ও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া গেলে ফসল কাটা ও মাড়াই সহজ হবে। শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা না হলে খুশি মনে ধান কাটা যাবে। কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া সঠিক সময়ে ঘরে ধান উঠাতে পারাটা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী ৫ মে’র মধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরামর্শের জন্য কৃষকদের পাশে রয়েছেন। হারভেস্টার মেশিনগুলো প্রস্তুত রয়েছে।

‘সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রা ছিলো ২ লাখ ২৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪০৭ হেক্টর।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার ৯ লাখ ১৩ হাজার ৪০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৪ হাজার ১১০ কোটি টাকা।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
38 and a half thousand crores allocated for the purpose of 10 percent growth in agriculture

কৃষিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ

কৃষিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সাড়ে ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ
‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে কৃষি খাতে গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তিন বছরে কৃষি উন্নয়নে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে বাংলাদেশ সরকার।

‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি (২০২৩-২৪ থেকে ২০২৫-২৬)’ অনুসারে, এই বিনিয়োগ খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায়সঙ্গত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেয়। সূত্র: ইউএনবি

জিডিপিতে হ্রাস প্রবণতা সত্ত্বেও এটি বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিনির্ভর সংখ্যাগরিষ্ঠদের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উৎপাদন ও প্রতিকূলতা মোকাবিলায় সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের গৃহীত কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে- উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন, যান্ত্রিকীকরণ-সেচ সম্প্রসারণ এবং বীজ ও সারের মতো সাশ্রয়ী মূল্যের উপকরণের প্রাপ্যতা বাড়ানো।

নীতি নথিতে প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সেচের জন্য ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানো, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি সমাধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং ফসল পরিচর্যার জন্য রিমোট সেন্সিং নিয়োগ করা।

সরকার একটি টেকসই ও স্বনির্ভর কৃষি কাঠামো গড়ে তুলতে ভর্তুকি, আর্থিক প্রণোদনা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই খাতকে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপখাত থেকেও উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এটি কেবল জিডিপি যথাক্রমে ২ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ১ দশমিক ৯১ শতাংশই বৃদ্ধি করে না, বরং জনসংখ্যার ১২ শতাংশেরও বেশি মানুষের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জীবিকার সংস্থান করে। এই ক্ষেত্রগুলোর অর্জনের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য এসব খাত অত্যাবশ্যক।

ভবিষ্যতে এসব খাতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি গ্রহণ এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার জন্য বিশেষ করে ছোট ইলিশের (জাটকা) জন্য উন্নয়ন প্রকল্প চালু করতে প্রস্তুত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

টেকসই কৃষির গুরুত্ব বিবেচনায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা আরেকটি মৌলিক ক্ষেত্র। আন্তঃসীমান্ত নদী থেকে ন্যায়সঙ্গত পানির হিস্যা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলাশয় খনন ও উপকূলীয় বনায়ন বৃদ্ধির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা উন্নয়নের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকির মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপিতে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সরকার এই প্রভাবগুলো হ্রাস করার বিস্তৃত কৌশলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনাটি জলবায়ু সম্পর্কিত বাধাগুলোর বিরুদ্ধে সহনশীলতা এবং স্থিতিশীলতা বাড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাত ও সম্প্রদায়গুলোকে সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই বহুমুখী প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের কৃষি ঐতিহ্যকে কেবল সুরক্ষাই নয়, বরং এগিয়ে নিতেও সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে।

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Chia seed cultivation is popular in Magura

মাগুরায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ

মাগুরায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ কৃষক আক্কাস আলীর খেতে শোভা পাচ্ছে চিয়া সিড। ছবি: নিউজবাংলা
মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। এটির গুণাগুণ ও বাজারমূল্য প্রচুর। যে কারণে আমরা কৃষকদের এটি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

মাগুরা জেলায় জনপ্রিয় হচ্ছে চিয়া সিডের চাষ। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবার তালিকায় চিয়া সিড এখন বেশ জনপ্রিয়।

চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। মধ্য আমেরিকায় অনেক বেশি পাওয়া যায় এ শস্য। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজও বলা হয়।

চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো। পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। চিয়া সিডে আছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডম কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি ফসল হিসেবেও লাভজনক।

মাগুরা সদর উপজেলার নালিয়ারডাঙ্গি গ্রামের প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলী শুরু করেন চিয়া সিডের চাষ। গত বছর কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে চিয়া সিডের চাষ করেছিলেন তিনি। এ বছর তার কাছ থেকে বীজ নিয়ে আরও ১৪ জন কৃষক চাষ করেছেন। আগামীতে চিয়া সিড চাষের জন্য তার নিজ এলাকাসহ আশপাশের জেলার চাষিরাও তার কাছে বীজ চেয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমাদের এলাকার প্রতিবন্ধী কৃষক আক্কাস আলীর মাধ্যমেই নতুন নতুন পদ্ধতিতে চাষ শিখছি। পাশাপাশি নতুন ধরনের ফসলেরও চাষ হচ্ছে। তেমনি চিয়া সিড আমাদের কাছে নতুন একটি চাষ। চিয়া সিড খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের উপকার হয়। পাশাপাশি এর চাহিদা ও বাজার দর বেশি হওয়ায় কৃষকরা এটি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

কৃষক আক্কাস আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর অল্প পরিসরে চিয়া সিড চাষ করি। মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র আমাকে এ বীজ দেয়। এ বছর আমি ছাড়াও আমার এলাকার ১৪ জন চাষি চিয়া সিড করেছে।’

পুষ্টিকর ও দাম ভাল হওয়ায় আগামী বছর একশ’র উপরে চাষি চিয়া সিড চাষ করবেন বলে আশা তার।

মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘চিয়া সিড সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত। এটির গুণাগুণ ও বাজারমূল্য প্রচুর। যে কারণে আমরা কৃষকদের এটি চাষে উদ্বুদ্ধকরণের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Farmers are not getting the price of cucumber for 42 kg

৪২ কেজিতে এক মণ, তবু শসার ‘দাম পাচ্ছেন না’ কৃষক

৪২ কেজিতে এক মণ, তবু শসার ‘দাম পাচ্ছেন না’ কৃষক ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে প্রতি মণে ৪২ কেজি শসা বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ছবি: নিউজবাংলা
কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি বাজারে শসার পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা বলে, সে দামেই বিক্রি করতে হয়। তাদের নির্ধারিত দামে শসা বিক্রি না করলে শসা খেতে পচে নষ্ট হয়।

৪০ কেজিতে এক মণ হলেও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের হাট-বাজারগুলোতে এক মণ শসা বিক্রি করতে কৃষককে দিতে হচ্ছে ৪২ কেজি ৩০০ গ্রাম।

এতে কৃষকরা প্রতি কেজি হিসেবে পাঁচ টাকারও কম পাচ্ছে, তবে এ শসা বাজারে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করছে পাইকাররা।

অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের জাঁতাকলে পড়ে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে জানান ক্ষুদ্র কৃষকরা।

কৃষকরা জানান, তারা এ উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে শসা আবাদ করেন। এ সুযোগে পাইকারি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা কম দামে শসা কিনে বেশি দামে বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারী করেন। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর ২৬৫ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হলেও এ বছর ২২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। শসার দাম কম পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শসা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে প্রতি বছর শসার আবাদ কমার সম্ভবনা রয়েছে।

কৃষকরা জানান, উপজেলার প্রত্যেকটি বাজারে শসার পাইকাররা সিন্ডিকেট করে দাম নিয়ন্ত্রণ করে। তারা যখন যা বলে, সে দামেই বিক্রি করতে হয়। তাদের নির্ধারিত দামে শসা বিক্রি না করলে শসা খেতে পচে নষ্ট হয়। গত বছরও অসাধু পাইকারদের জন্য অনেক কৃষক লাভের মুখ দেখতে না পেরে শসা চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় শসা উৎপাদন একেবারেই কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেক কৃষকরা।

ধুরাইল ইউনিয়নের নাগলা বাজার এলাকার কৃষক জাহিদুর রহমান বলেন, ‘২৫ শতাংশ জমিতে শসার আবাদ করেছি। এতে সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। রমজানের শুরুতে ভালো দাম পেলেও দিন যত যাচ্ছে, পাইকাররা দামও কমিয়ে দিচ্ছেন। এখন ২০০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে।’

জুগলী ইউনিয়নের জুগলী এলাকার কৃষক আহম্মদ মিয়া বলেন, ‘৩০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছি। এক মণ ৪২ কেজি হিসেবে শসা কিনেন পাইকাররা। আমাদের কাছ থেকে একেবারেই কম দামে কিনে ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে আমরাও লাভবান হতে পারছি না, ক্রেতারাও প্রতারিত হচ্ছেন।’

পৌর বাজারে শসার পাইকার মনোয়ার হোসেন লিটন বলেন, ‘এ উপজেলার শসা দূরদূরান্তের পাইকাররা ঢাকাসহ ময়মনসিংহের বিভিন্ন বাজারে ট্রাক কিংবা পিকআপ ভর্তি করে নিয়ে আড়তে বিক্রি করেন৷ এরপর ছোট পাইকারসহ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। সড়কে গাড়ির খরচসহ কয়েকটি হাত ঘুরে ক্রেতা পর্যায়ে দাম বেড়ে যায়। আমাদের উপজেলার বাজারগুলোতে ক্রেতার চাহিদার উপর নির্ভর করে দাম উঠানামা করে।’

শসা ৪২ কেজিতে এক মণ নেয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর যাবৎ কৃষকদের কাছ থেকে সব পাইকাররা এভাবেই কিনছে। তাই আমিও এভাবেই কিনি।’

শসার দাম সম্পর্কে জানতে সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরতলীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে গিয়ে কথা হয় খুচরা শসা বিক্রেতা মোরশেদ মিয়ার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও খুচরা ব্যবসায়ীরা ৩০ থেকে ৪০ টাকা হিসেবে শসা বিক্রি করলেও এখন ২০ টাকা কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এই বাজারে ময়মনসিংহের চরাঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নসহ জেলার তারাকান্দা, ফুলপুর ও হালুয়াঘাট থেকেও শসা আসে।

‘পিকআপ ভর্তি করে পাইকাররা নিয়ে এসে আমাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। তারা আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি করায়, আমরাও কয়েক টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছি।’

হাকিমুল নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘কৃষক আর ক্রেতা সবসময় ঠকে। মূলত সিন্ডিকেট কারণেই এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর নিয়মিত অভিযান চালালে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে শসা কিনে নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ করে বিক্রি করতে হবে। অতিরিক্ত দামে কখনোই বিক্রি করা যাবে না। বাজারগুলোতে অভিযান চালানো হবে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর প্রমাণ মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আরও পড়ুন:
কাউকে এখন না খেয়ে থাকতে হয় না: কৃষিমন্ত্রী
বিএডিসির বীজ ধান ও গম এখন পাখির খাবার
পুকুরে বিলীন তিন ফসলি জমি
পাথরে ফুটেছে ফুল
মাটি ভরাটে বন্ধ সেচযন্ত্র, মুন্সীগঞ্জে ধান চাষ ব্যাহতের শঙ্কা

মন্তব্য

বাংলাদেশ
Farmers interest in high yielding wheat blast resistant in Meherpur

শঙ্কা কাটিয়ে গমের বাম্পার ফলন মেহেরপুরে, দামও ভালো

শঙ্কা কাটিয়ে গমের বাম্পার ফলন মেহেরপুরে, দামও ভালো মেহেরপুরের তিনটি উপজেলায় এবার গমের বাম্পার ফলন হয়। ছবি: নিউজবাংলা
গম ব‍্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আড়তে সপ্তাহখানেকের বেশি হবে স্থানীয় গম আসতে শুরু করেছে। এ বছর কৃষকদের গমের ফলন বেশ ভালো। সে হিসাবে আড়তে গমের আমদানি হচ্ছে ভালো। আমরা বতর্মানে আকারভেদে প্রতি মণ গম সংগ্রহ করছি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’

বীজের বাড়তি দাম, আবাদের মাঝ সময়ে শিষ মরা রোগের সঙ্গে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মেহেরপুরের অনেক গমচাষি। কাঙ্ক্ষিত ফসল উৎপাদন নিয়ে তাদের মধ্যে ছিল শঙ্কা, তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে গমের বাম্পার ফলন হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

জেলায় এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে গম ৪.১ টন উৎপাদন হয়েছে। মণ প্রতি গম বিক্রি করছেন ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পযর্ন্ত। গমের মাঠের অধিকাংশ গমের দানাও মোটা তাই কৃষকদের ফলন বেড়েছে।

মেহেরপুর জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে গম চাষ হয়েছে, যা আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভূমিকা রাখবে। তা ছাড়া অনুকূল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় স্বল্প খরচে সঠিক সময়ে কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল তুলতে পেরেছেন। এবার গমের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই আগ্রহ বেড়েছে গম চাষে।

জেলার তিনটি উপজেলা গাংনী, মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলার ফসলি মাঠ পরিদর্শন করে দেখা যায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর গমের আবাদ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মাঠ থেকে পাকা গম এখন সোনালি বর্ণ ধারণ করেছে। ফসলের মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পাকা গম কেটে মাড়াইয়ের কাজে ব‍্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

অধিকাংশ গম ঘরে উঠলেও এখনও মাঠেই রয়েছে অনেক গম। চৈত্রের মাঝামাঝি সময়ে মেঘের চোখ রাঙানি থাকলেও আধুনিক কৃষি পদ্ধতির কারণে গম মাড়াইয়ের কাজ অনেকটা সহজতর হয়েছে।

কৃষি বিভাগের ভাষ্য, চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে গম চাষের লক্ষ‍্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে, যেখানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৬৬ টন। আর এবার প্রতি হেক্টর জমিতে চার দশমিক এক টন উৎপাদন হচ্ছে।

ব‍্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর গমের দানা বেশ বড় বড় হয়েছে। গমের বাজার মূল‍্যও ভালো। মণপ্রতি গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা পযর্ন্ত।

জেলার গাংনী উপজেলার নিশিপুর গ্রামের গমচাষি আনোয়ার বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমিতে আমি গম কেটে মাড়াই শেষে ২০ মণ গম পেয়েছি, যা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড। আর আমার নিজের জমি হওয়ায় সব মিলিয়ে ছয় হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর বতর্মানে প্রতি মণ গম বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’

আরেক চাষি তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি দেড় বিঘা জমিতে গম চাষ করেছি। শুরুতে গম ভালো হয়েছিল, মাঝখানে যখন শিষে গমের দানা বাদতে শুরু করে, ঠিক তখনই শিষ মরা রোগ শুরু হয়।

‘ভয় হয়েছিল ভালো ফলন পাব কি না, তবে আল্লাহর রহমতে শেষমেশ ভালো ফলন পেয়েছি। আবার এ বছর গমের দাম বেশ ভালো।’

একই এলাকার গমচাষি ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আমাদের মাঠে এবার ব‍্যাপক গমের আবাদ হয়েছে। আমি দুই বিঘা জমিতে গম আবাদ করেছি। আজ সপ্তাহখানেক হবে গম কেটে মাড়াই শেষে ফসল ঘরে তুলেছি।’

‘আমার এক বিঘা জমিতে ফলন পেয়েছি ১৭ মণ, আরেকটিতে পেয়েছি ২০ মণ হারে। যেখানে কম ফলন হয়, সেই গমটিতে শিষ মরা রোগ হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম ফলন একেবারে পাব না, তবে আল্লাহ খুব ভালো ফসল দিয়েছেন।’

গম ব‍্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আড়তে সপ্তাহখানেকের বেশি হবে স্থানীয় গম আসতে শুরু করেছে। এ বছর কৃষকদের গমের ফলন বেশ ভালো। সে হিসাবে আড়তে গমের আমদানি হচ্ছে ভালো। আমরা বতর্মানে আকারভেদে প্রতি মণ গম সংগ্রহ করছি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে।’

আরেক ব‍্যবসায়ী শিপন বলেন, ‘আমরা প্রত‍্যন্ত অঞ্চল থেকে গম সংগ্রহ করে থাকি। আজ ১০ দিনের মতো হবে গম সংগ্রহ শুরু করেছি। এবার মাঠের অধিকাংশ গমের দানা বেশ মোটা, যার ফলে কৃষকদের ফলন বেড়েছে। তা ছাড়া গত বছরের চেয়ে এ বছর মাঠে গমের আবাদ বেশি।’

মেহেরপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কৃষ্ণকুমার হালদার বলেন, ‘মেহেরপুরে ব্লাস্ট প্রতিরোধী উচ্চফলনশীল গমের জাত বারি-৩৩ ও ডব্লিউএমআইআর গম-৩ নামের দুটি গমের জাত উদ্ভাবনের ফলে এ অঞ্চলে গম চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।

‘আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিতে চাষিদের আগ্রহ বাড়ায় গম চাষাবাদ থেকে মাড়াইয়ের পদ্ধতি অনেক সহজতর হয়েছে। তা ছাড়া গমের বতর্মান বাজারদর ও চাহিদাও বেশ ভালো, যার ফলে চলতি মৌসুমে গম উৎপাদন লক্ষ‍্যমাত্রা ছাড়িয়েছে।’

মন্তব্য

p
উপরে