ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়। বৃষ্টিতে ডুবে গেছে বোরো ক্ষেত।
এতে পানিতে পচে নষ্ট হচ্ছে জমিতে কেটে রাখা ধান। আবার সেই ধান শুকনো জায়গায় এনে রাখলেও গজিয়ে যাচ্ছে চারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট। শ্রমিক পাওয়া গেলে তাদের দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত মজুরি।
ধান নিয়ে নানা দিক থেকে সংকটে জর্জরিত কৃষকরা। কেউ কেউ শ্রমিক না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই ধান কাটছেন।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার সকালে সূর্যের দেখা মিললেও দুপুরের পর শুরু হয় বৃষ্টি। শনিবারও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
এর মাঝে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাঁটু পানিতে নেমে ধান কাটছেন কৃষকরা। কেউ কেউ কেটে রাখা ধান পানি থেকে উঠিয়ে উঁচু কোথাও রাখছেন। অনেকে ভাসমান বিচুলি আঁটি করছেন। ভেজা ধানই মাড়াই চলছে কোথাও কোথাও।
দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে এক বিগি (বিঘা) ধান ঘরে তুলতি খরচ হতু পাঁচ থেকে ছয় হাজার টেকা। একুন পানির কারণে খরচ অনেক বেড়ি গিয়িচে। শুদু এক বিগি জমির ধান কাটতিই লাগচি ছয় হাজার টেকা।
‘জমিতে পানি থাকায় গরুর গাড়িতে করি ধান বাড়ি আনতি হচ্চি। গাড়ি ভাড়া দিতি হচ্চি ছয় হাজার টেকা। ধান ঝাড়তি একুনু খরচ লাগবি তিন হাজার টেকা।’
কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের চাষি সমেল উদ্দিন বলেন, ‘পাকা ধান পানির নিচে তলি রয়িচে। ধান পচি যাচ্চে। আবার ধান থেকি কল (চারা) বেরি পড়িচে। ধান কাটার জন্যি কোনো মুনিস (শ্রমিক) পাওয়া যাচ্চি না। ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দিয়িও মুনিস পাওয়া যাচ্চি না। তাই বউ আর ছেলিকে নিয়ি ধান কেটি বাড়ি নিয়ি যাচ্চি।’
জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার পর পানি শুরু হলু (হলো)। তিন বিগি জমির ধান একুনও ঘরে তুলতি পারিনি। পানির কারণে সব শেষ হয়ি গেল।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ১১ মে পর্যন্ত ৩১ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আসানির প্রভাবে বৃষ্টির কারণে অন্তত ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে কৃষকরা ৭০ ভাগ জমির ধান আগেই কেটে ঘরে তুলেছেন। বাকিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’
আরও পড়ুন:সিলেট নগরীর চালিবন্দর এলাকার কুন্তি দাসের ঘর চার দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। ঘরে-বাইরে চারদিক থইথই পানিতে। তবু খাওয়ার জন্য নেই এক ফোঁটাও। নেই বিদ্যুৎও।
১৫ মিনিট হেঁটে গিয়ে একটি কারখানা থেকে প্রতিদিন খাওয়ার পানি নিয়ে আসেন তিনি।
কুন্তি বলেন, ‘পানির কারণে না হয় বিছানার ওপরে উঠে বসে থাকা যায়। কষ্ট করে রান্নাবান্নাও করা যায়। কিন্তু পানি ছাড়া তো থাকা যায় না। চার দিন ধরে পানি পাচ্ছি না। টয়লেটও পানিতে তলিয়ে গেছে। সেটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’
তিনি জানান, যে কারখানা থেকে পানি আনা হয়, সেখানে গিয়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে ঘরের সবাইকে।
সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশনের সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎহীনতা। সব মিলিয়ে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ এখন চরমে। জেলার অর্ধেক এলাকাই এখন বিদ্যুৎহীন।
কুন্তির প্রতিবেশী দীপক রবি দাস বলেন, ‘আমাদের এলাকায় সিটি করপোরেশন থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বন্যায় সিটি করপোরেশনের পানির লাইন তলিয়ে গেছে। এখন পাইপ দিয়ে ময়লা পানি আসে। আর তাতে খুব দুর্গন্ধ। খাওয়া তো দূরের কথা হাতেই নেয়া যায় না।’
চালিবন্দরের পাশের উপশহরেও মিটার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চারদিন ধরে বন্ধৱ বিদ্যুৎ সরবরাহ।
উপশহরের বি ব্লকের নাজাত আহমদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচদিন ধরে ঘরে পানি। ঘর থেকে বের হওয়ারও উপায় নেই। চারদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। খাবার পানি নেই। টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ দিন কাটছে আমাদের।’
এসব সমস্যার কথা জানিয়ে সি ব্লকের আব্দুল আহাদ বলেন, ‘লজ্জায় আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারছি না। বাচ্চারা সেখানে থাকতেও পারবে না। আবার ঘরেও থাকতে পারছি না। বন্যায় আমাদের সংকট বলে বোঝানো যাবে না।’
কোমর পানি নগরীর তালতলা এলাকাতেও। সেখানে বাড়ি বেসরকারি চাকরিজীবী মিলন তালুকদারের।
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পানি বন্ধ। ফিল্টারে করে পানি বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এদিকে আসছে না বন্যার কারণে। তাই বোতলজাত পানি কিনে খেতে হচ্ছে। আমরা সামান্য আয়ের মানুষ। এভাবে কতদিন চলতে পারব। চাকরির কারণে গ্রামের বাড়িও যেতে পারছি না।’
নগরের ঝালোপাড়া এলাকায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সরবরাহ করা পানি সংগ্রহ করতে আসেন শাহেদ আহমদ।
তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিনে একবার আসে। এই পানিতে এলাকার অর্ধেক মানুষের এক বেলার চাহিদাও মেটে না।
‘আগে পাশের সুরমা নদীতে আমরা গোসল করতে পারতাম। কিন্তু এখন নদীর পানি এত ময়লা হয়েছে যে তাতে গোসল করারও উপায় নেই।’
নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার উত্তরা সেন পম্পা বলেন, ‘নোংরা পানিতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে। আজ বাধ্য হয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আরেকটি পরিবারের ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু এখানেও খাবার পানি নেই।’
ঘর ছেড়ে পরিবার নিয়ে নগরের একটি হোটেলে গিয়ে উঠেছেন শেখঘাট এলাকার কামরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘পানির সঙ্গে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনাও ঘরে ঢুকছে। এর মধ্যে থাকতে থাকতে আমার পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বাসায় খাবার পানি ও স্যানিটেশনের সমস্যা। তাই একটি হোটেলে উঠেছি।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে প্লাবিত এলাকায় বুধবার থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ সরবরাহের পাইপে কোনো ছিদ্র থাকলে তাতে বন্যার পানি মিশে রোগবালাই দেখা দিতে পারে।’
তবে এসব এলাকায় ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে আলিম বলেন, ‘যেসব এলাকা প্লাবিত হয়নি সেসব এলাকায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।’
নগরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে দুর্ভোগ আরও বেশি।
জেলা প্রশাসনের হিসেবে ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি সম্পূর্ণ ও ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি আছে ১৫ লাখ মানুষ।
জকিগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রী ইউনিয়নের সুপ্রাকিান্দি গ্রামের জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘বন্যায় এলাকার বেশির ভাগ টিউবওয়েল ডুবে গেছে। খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না। দূর-দূরান্ত থেকে পানি নিয়ে আসতে হচ্ছে। ঘরে পানি উনি উঠে যাওয়ায় রান্নাবান্নাও করা যাচ্ছে না।’
‘ঘরে অনেকগুলো গরু আছে। নিজেরা তবু কোনো রকমে খেতে পারছি। কিন্তু মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।’
নগরের দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর এলাকা প্লাবিত না হলেও বরইকান্দি এলাকায় বিদ্যুতের সাব-স্টেশন তলিয়ে যাওয়ায় তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই কোথাও।
গোটাটিকর এলাকার সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের এলাকায় বন্যা আসেনি এখনও। তবে আমরাও দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাচ্ছি না। তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। এতে পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।’
তবে বিশুদ্ধ পানির সংকটের তথ্য নেই জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলামের কাছে।
তিনি বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানি সংকটের তেমন কোনো তথ্য আমরা পাইনি। পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি অবশ্য বলেছেন, সিলেট জেলায় ১৩ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল কাদির জানিয়েছেন, দুটি উপকেন্দ্রে বন্যার পানি ঢুকেছে। সেখানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি উপকেন্দ্র সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আর শাহজালাল উপশহর এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে যারা অবস্থান করছেন, তাদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিটি মেয়র জানিয়েছেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও বন্যার্তদের সেবায় করপোরেশনের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
১৩ দিনের ব্যক্তিগত সফর শেষে বৃহস্পতিবার সিলেটে ফিরে নগরের একাধিক প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন শেষে মেয়র বলেন, ‘সিলেট মহানগরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নগরের নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। খাবার পানির সংকট, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
‘দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লাবিত এলাকার পানিবন্দি মানুষের দোরগোড়ায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাঠানো হয়েছে। খাবার পানির সংকট নিরসনে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। আরও আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো হবে।’
আরও পড়ুন:কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে ৬ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
কাগজপত্রে অসংগতি থাকায় ৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কুমিল্লা শিল্পকলা একাডেমিতে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী এ ঘোষণা দেন।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্রে বৈধতা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন কায়সার (বিএনপি), কামরুল আহসান বাবুল ও মাসুদ পারভেজ খান ইমরান এবং ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম।
নির্বাচন কমিশন থেকে জানা যায়, ১৭ মে মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে ১৬৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ৬ মেয়র প্রার্থী, ১২০ সাধারণ কাউন্সিলর এবং ৩৮ সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী।
মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা হলেন ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিল্লাল হোসেন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কবির আহমেদ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. এরশাদ হোসেন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দ রুমন আহমেদ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের জুয়েল, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. মিন্টু, জামাল হোসেন কাজল ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালাম আজাদ।
সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফারজানা আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী জানান, মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা প্রার্থীরা ২০ থেকে ২২ মের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
আরও পড়ুন:কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকারের মামলায় শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলার দাঁড়েরপাড়া কওমী এতিমখানা ও মাদ্রাসা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দৌলতপুর থানার ওসি জাবীদ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আসামির নাম রবিউল ইসলাম। তার বাড়ি রাজশাহী জেলায়। তিনি ওই মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষক।
ওসি জাবীদ হাসান বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে মাদ্রাসাটির চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের বাবা বলাৎকারের মামলা করেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক রবিউলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে দৌলতপুর আমলী আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
মামলার বরাতে ওসি জানান, রবিউল ছেলেটিকে কয়েকবার বলাৎকার করেছেন। সবশেষ গত ৯ এপ্রিল এ ঘটনা ঘটে।। এরপর ছেলেটি ভয়ে মাদ্রাসায় যেতে চাইতো না। গত বুধবার সে বলাৎকারের কথা বাবাকে জানায়। এরপরই মামলা করেন তার বাবা।
আরও পড়ুন:‘আমার বাজানটা আমার লগে ক্ষেতও গেছিল, বৃষ্টি আইয়া আমার ধান-বাদাম সব নিছে, এখন আমার জানের টুকরাটারে নিসে গি আল্লায়, আমি এখন বাঁচতাম কিলা।’
১২ বছরের মেয়ে রিপা বেগমকে বজ্রপাতে হারিয়ে বিলাপ করছেন বাবা ফজর রহমান। একই অবস্থা অন্য দুই পরিবারেও।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের সুন্দরপুর পাহাড়ি গ্রামে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বজ্রপাতে একসঙ্গে তিন শিশুর মৃত্যু হয়।
হঠাৎ আসা ঝড় থেকে রক্ষা পেতে শিশুরা কুঁড়েঘরে আশ্রয় নিয়েছিল, রেহাই মেলেনি। এ সময় আহত হন আরও আটজন। গোটা এলাকা শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
সুন্দরপুর পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মল্লিক চান বলেন, ‘এ এলাকার মানুষ বাদাম চাষের সঙ্গে ধানও রোপণ করেন। ছেলেমেয়েরা এই উঠানেই খেলাধুলা করত, এখন চারদিকে কান্নার আওয়াজ।
‘আমরা এই শোক কাটিয়ে উঠতে পারব কি না জানি না, তবে এটাই বলতে পারব পেটের দায়ে বেরিয়ে বজ্রপাতে সন্তানদের হারিয়েছেন তাদের বাবা-মা।’
আরেক প্রতিবেশী সত্তার মিয়া বলেন, ‘যখন বৃষ্টি আসে ছেলেমেয়েরা দৌড় দিয়া কুঁড়েঘরও আশ্রয় নিসিল। বজ্রপাতটা ওই জায়গাই হয়। তারারে যখন তুলার লাগি গেছি, গিয়া দেখি তিনটা বাচ্চা পড়িয়া রইছে। এইসব দেখিয়া কিতা কইতাম, আল্লাহ তারারে এই কষ্ট সহ্য করার তৌফিক দিতা।’
তিন শিশুর দাফনের জন্য ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা করে দিয়েছেন বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘খবর পাওয়ামাত্র ছুটে এসেছি। এ এলাকার মাটি বাদাম চাষের জন্য খুব ভালো। শিশুরাও বাবা-মাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করে আসছিল। সকালে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিন শিশু মারা যায়।’
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন শিশুর পরিবারকে সহযোগিতা করা হবে। প্রশাসন এই পরিবাগুলোর পাশে রয়েছে।’
আরও পড়ুন:জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বসতভিটাসহ নানা স্থাপনা।
কুলকান্দি হার্ড পয়েন্ট এলাকায় বুধবার বিকেলে এ ধস দেখা দেয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ।
তিনি জানান, ‘বাঁধ ধস রোধে জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করা হচ্ছে। আমরা এই জায়গাটি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে আরও জিও ব্যাগ ড্যাম্পিং করার ব্যবস্থা করব।’
স্থানীয় বাসিন্দা লাবিব আক্তার বলেন, ‘যমুনা নদীর বাম তীর প্রকল্পে বাঁধ নির্মাণের পর আমরা একটু ভালোভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এই বাঁধ ধসের কারণে এই স্বপ্ন বারবার ভেঙে যাচ্ছে। আমরা চাই এই ধস রোধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিক।’
আরেক বাসিন্দা আহসান আলী মণ্ডল বলেন, ‘আমার এই জীবনে ৮ বার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। এখন এই বাঁধ ধস হলে মরণ ছাড়া উপায় নাই।’
আরেক বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিকেল থেকে ধস দেখা দেয়। আমরা আতঙ্কে আছি। এই ধস দ্রুত না থামলে তাদের বাড়িঘর সব বিলীন হয়ে যাবে।’
এসব বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাঈদ জানান, ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির কারণে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া এই জায়গায় নদীর গতি-প্রকৃতি পরিবর্তন হয়েছে। নতুন একটি চ্যানেল হয়েছে। তাই এখানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের ফুটানি বাজার থেকে ইসলামপুরের কুলকান্দি পর্যন্ত ৮ দশমিক ১ কিলোমিটার এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে।
সিলেটে ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আউশ ধান চাষে মনোযোগী হয়ে ছিলেন সিলেটের গোয়াইনঘাটের পূর্ব জাফলং এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন।
দুই একর জমিতে আউশের বীজ রোপন করেছিলেন। বীজ থেকে চারাও গজিয়ে ছিল। কিছুদিনের মধ্যে এই চারা রোপনের পরিকল্পনা করছিলেন নিজাম। কিন্তু সেই পরিকল্পনায় গুড়েবালি। বন্যায় তলিয়ে গেছে নিজামের বীজতলা।
নিজাম উদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘৪ দিন ধরে বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। সব চারা পচে যাবে। গত মাসে বন্যায় বোরো ধান গেছে। এবার আউশও চলে গেলে আমাদের বছর চলবে কী করে? খাবো কী?
কেবল নিজাম উদ্দিন নন, এই আক্ষেপ এখন সিলেটের বেশিরভাগ কৃষকের। গত মার্চ-এপ্রিলের অসময়ের বন্যায় সিলেটের সুনামগঞ্জে বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারের বন্যায় বোরোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আউশও।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের হিসেবে, চলমান বন্যায় বুধবার পর্যন্ত আউশ ধানের বীজতলা এক হাজার ৩০১ হেক্টর, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি এক হাজার ৪ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে সিলেটে বৃহস্পতিবারও অব্যাহত রয়েছে পানি বৃদ্ধি। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। অব্যাহত রয়েছে বৃষ্টিও। জেলা প্রশাসনের হিসেবেই, সিলেটে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের সহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পাওয়া হিসেবে, সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত সিলেট জেলায় সুরমা-কুশিয়ারা নদীর ৩৪ বাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে বিভিন্ন এলাকায়।
বন্যায় সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার পর এবার বিয়ানীবাজার এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলারও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উঠেছে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলা কমপ্লেক্সে। এসব উপজেলার অনেক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রেও পানি উঠে গেছে। এতে আশ্রিতরা পড়েছেন বিপাকে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে এবং ১৫টি ইউনিয়ন আংশিকভাবে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানিতে সিলেট সদর ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নৌকাডুবিতে ৩ জন মারা গেছেন। গোলাপগঞ্জে পাহাড় ধসে একজন মারা গেছেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান বলেন, ‘জেলায় ২৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৭৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৬৪৭৫ জন আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশুর জন্য ২২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বন্যার্তদের মধ্যে এরই মধ্যে ৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ১৪৯ টন চাল, ১৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আশয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ পানি দেয়া হচ্ছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে আরও ২৫ লাখ টাকা, ২০০ টন চাল ও ৪০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে।’
আরও পড়ুন:বানের পানির তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের দোয়ালিয়ায় একটি সেতু ভেঙে গেছে। পানির স্রোতে তছনছ হয়ে গেছে সেতুর পিলার ও সংযোগ সড়ক। এতে জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জে বন্যার অবনতি হয়েছে। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বানের স্রোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার ও ছাতক।
স্থানীয়রা জানান, আট বছর আগে সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতক উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের জন্য এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এবারের ঢলের পানিতে এটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। সদরের সঙ্গে ছাতকের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
দোয়ালিয়া এলাকার আনিক রায় বলেন, দুই দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলের পানিতে কালভার্টটি ভেঙে গেছে। দোয়ারাবাজারবাসী বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বলেন, ‘এবারের বন্যায় আমার উপজেলায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। সীমান্তবর্তী হওয়ায় ঢলের পানির স্রোত ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। দোয়ালিয়া ইউনিয়ন এলাকার সেতুটি ভেঙে গেছে।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ কালভার্টটি দিয়ে চলাচল করতেন। এখন আমাদের একমাত্র বাহন নৌকা। বন্যার পানি কমলে পরে দেখব, এখানে কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
সুনামগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন্যায় পানির স্রোতে কালভার্টটি ভেঙে গেছে। তবে এখনই বলতে পারব না, এটা মেরামত করা হবে নাকি নতুন করে তৈরি করতে হবে। পানি কমার পর যা ব্যবস্থা নেয়া লাগে সেটিই করব।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য